প্রেমে পড়া বারণ

প্রেমে পড়া বারণ ( সিজন-2 ) Part- 16

দিয়া হুজুরের সামনে রাখা ছুরি নিয়ে একটা আঙুলের মাথায় টান দিয়ে কেটে দেয়।
টপটপ করে কয়েক ফোঁটা রক্ত পড়ে সাদা কাপড়ে পড়লো।
কালো রক্ত!
হুজুর কাপড়টা যত্ন করে তুলে রাখলেন।
তারপর বললেন – আপনারা কিভাবে প্রমাণ দিবেন, দিন।
এরপরও যদি না যায়, তবে এই রক্ত মাখা কাপড়টা আগুনে পুড়িয়ে দেবার সঙ্গে সঙ্গে ও শক্তি হারিয়ে শেষ হয়ে যাবে।
– ঠিক আছে, হুজুর।
– আমি পাশের গ্রামে একটা কাজে যাবো।ফেরার সময় এদিকে এসে আবার দেখে যাবো। যা করার তাড়াতাড়ি করবেন। আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে ফোন করে জানাবেন।
এ কথা বলে হুজুর চলে গেলেন।
দিয়ার শরীরে এখন কাঞ্চন রয়ে গেছে।
কিন্তু আমাদের ভয় পেলে চলবে না। ঠিকঠাক প্রমাণ করতে হবে।
রেহান সামনে গিয়ে বললো – আপনি যদি আমাদের সাহায্য করেন তবে তাড়াতাড়ি প্রমাণ করতে পারবো।
আমরা দেবাশীষ বাবু মানে আপনার ছোট বাবুর আত্মাকে আহবান করবো। কিন্তু তার আগে আপনাকে আহবান করবো, যাতে আপনার বিশ্বাস হয় যে আত্মাকে ডেকে আনা যায়।
এরপর আপনি আবার দিয়ার শরীরে প্রবেশ করবেন। কিন্তু মনে রাখবেন প্রমাণ পাবার পরই ওকে ছেড়ে চিরদিনের মতো চলে যাবেন।
– ঠিক আছে! তাড়াতাড়ি আহবান কর।আমি জানতে চাই। তাড়াতাড়ি।
– আপনি যায়গায় বসে থাকবেন।
এ কথা বলে রেহান তাহসিনের দিকে ইশারা করার সঙ্গে সঙ্গে অনি আর তাহসিন গিয়ে প্ল্যানচেটের বোর্ড নিয়ে আসলো।
দিয়া থেকে সামান্য দূরে একটা তেপায়া টেবিলে রাখা হলো বোর্ড।
একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখা হলো বোর্ডের
এক কোনে।
তারপর চারজন বসলো বোর্ডের চারপাশে। রেহান, তাহসিন, আমি আর অনি।
পলাশ মামা বসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু একজন মানুষ দরকার যাতে বাকিরা সাহস পায়।তাই মামাকে আনিষা,খুশবু,রিফাতের সাথেই থাকতে বললাম।।
উনারা রুমের বাইরে চলে গেলেন।
রেহান আগেই আমাদের সবকিছু বুঝিয়ে দিয়েছে।
কোনো গোলমাল হলেই যে কেউ একজন তাড়াতাড়ি যেন রুমের লাইট অন করে দিই।
ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে মোমবাতি জ্বালানো হলো।
মিডিয়াম করা হলো রেহানকে।
বোর্ডের উপর একটা সাদা কাগজ রেখে তার উপর ত্রিভুজ আকৃতির একটা কৌটার মুখ ছিদ্র করে পেন্সিল ঢুকানো হলো।
রেহান আলতো করে পেন্সিল ধরে আছে।
আমার পরস্পরের হাতে ধরে রাখলাম। আর
এক হাতের তর্জনি আঙুলে বোর্ড ছুঁয়ে আছি।
এবার এক মনে সবাই কাঞ্চনের আত্মাকে আহবান করছি।
কিছুক্ষন পরেই রেহানের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো।।
পেন্সিল ঢুকানো টিনের কৌটার মুখ নড়ে উঠলো।।
রেহান জিজ্ঞেস করলো – কাঞ্চন, আপনি এসেছেন?
কলমে খচখচ করে লেখা হচ্ছে –
” হা, এসেছি।”
– আপনার বিশ্বাস হয়েছে? যদি হয় তাহলে ফিরে যান।
কলমে আবার কাগজের উপর লিখা হচ্ছে-
” ঠিক আছে, আমি মেয়েটির শরীরে ফিরে যাচ্ছি! ”
দপ করে আলো নিভে গেলো।
রেহান শুধু কলম আলতো করে ধরে আছে, আর কলমেই লিখা হয়ে যাচ্ছে।।
তাহসিন আবার আলো জ্বালিয়ে দিলো।
এবার দেবাশীষ বাবুর আত্নাকে আহবান করলাম আমরা।
আবার রেহানের মুখ কঠিন হয়ে উঠলো।
নড়ে উঠলো কলম!
– কেউ এসেছেন?
রেহান জিজ্ঞেস করলো।
কাগজের মধ্যে লেখা হয়ে যায় সব উত্তর।
– হা।এসেছি।
– আপনি কি দেবাশীষ বাবু?
– হা।। কেন ডেকেছেন?
– আপনার কাছে কিছু জানতে চাই।
আপনার কাঞ্চন সবাইকে মেরে ফেলতে চাইছে। আপনার উপর প্রতিশোধ নিতে। কিন্তু আপনি কেন এমন করেছিলেন। আর কেনইবা সুইসাইড করেছেন?
– সেদিন কাঞ্চনকে এভাবে অপমান করার পর আর এক মুহূর্ত থাকিনি বাগানে। বাসায় ফিরে গেলাম। আর এসব করতে বাধ্য হয়েছিলাম। কারণ আমার বাবা, মা দুজনেই সুইসাইড করবে বলে বিষের শিশি হাতে নিয়ে বসে ছিলো।। আমি এটা না করলে উনার বিষ খেতেন।
কিন্তু আমি জানতাম না জয়িতা আত্নহত্যা করেছে!!
আমাকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়। আমার মা অনেক নিষ্ঠুর আচরণ করলেন আমার সাথে। আমাকে বিয়ের পরে বাগানেই পাঠালেন বউকে বাগান দেখানোর নাম করে। কিন্তু পরের দিন ই আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়!
আমি ডিপ্রেশনে চলে যাই।জয়িতাকে এভাবে অপমান করায় ও আত্নহত্যা করেছে। তাই নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনি। তাই আত্মহত্যা করেছি।।
– ধন্যবাদ দেবাশীষ বাবু। আপনি এখন ফিরে যেতে পারেন।
আলো আবারও নিভে গেলো।
তার মানে উনি চলে গেছেন। তাহসিন লাইট অন করলো।
দিয়া স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।
– কাঞ্চন, আপনি সব দেখলেন নিজের চোখে?
এবার কাঞ্চন হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।অনেক চিৎকার করে কাঁদলো।
তারপর বললো
– আমি চলে যাচ্ছি।
কাঞ্চন যাবার পরে আমরা বুঝতে পারলাম। কারণ দিয়া ঢলে পড়ে যায়।
তারপর হুজুর এসেও নিশ্চিত করেন যে আর আসবে না কাঞ্চন।
রাতটা কেটে গেলো। কাঞ্চনের সমাপ্তির দিয়ে।
পরদিন সকালেই আমরা ঢাকায় রওনা হলাম।
চলবে….