অদৃশ্য ভালোবাসা অনুভূতি

© অদৃশ্য ভালোবাসা অনুভূতি– পর্বঃ- ৫

লেখাঃ শার‌মিন আক্তার ( সাথী )
–আয়াতঃ আচ্ছা নিশী তোমার কি একবারও ম‌নে হয়‌নি তুমি তনয়ার আর আমার মাঝখা‌নে তৃতীয় ব্য‌ক্তি হিসা‌বে ডুক‌ছো? ব‌লো? ব‌লো———? (ধমক দি‌য়ে)
আয়া‌তের আচরন দে‌খে নিশীর খুব ভয় কর‌তে ছি‌লো। কারন এমন উদ্ভট এর মত আচরন আয়াত নি‌জে থে‌কে কখ‌নো কর‌তে পা‌রে না। কারন আয়াত খুব শান্তশিষ্ট ছে‌লে। নিশী ভাব‌ছে তাহ‌লে কি আয়া‌তের সব কিছু ম‌নে প‌ড়ে গে‌ছে? না‌কি প্রথম থে‌কে ম‌নে ছি‌লো? তাহ‌লে আমা‌কে কেন বি‌য়ে কর‌লো? আর ক‌বে থে‌কে ম‌নে পড়‌ছে? আচ্ছা ওর কি সে‌দি‌নের কথাও ম‌নে পড়‌ছে? নিশী খুব সাহস জু‌গি‌য়ে তুত‌লি‌য়ে বল‌লো
‌নিশীঃ দ্যা দ্যা দে‌খে‌া আয়াত আমি নি‌জে থে‌কে তোমা‌দের মা‌ঝে আসি নি। তু‌মি আমায় বি‌য়ে কর‌ছো। আমা‌দের দু প‌রিবা‌রের সম্ম‌তি‌তেই বি‌য়ে হ‌য়ে‌ছে।
আয়াতঃ সেটাপ (অনেক জোড়ে চিৎকার দি‌য়ে)
(‌নিশী ভ‌য়ে কেঁ‌পে উঠ‌ছে) আমাকে বি‌য়ে করার জন্য তু‌মিই আত্নহত্যা করার নাটক কর‌ছি‌লে। ফালতু সিমপ্যা‌থি দে‌খি‌য়ে আমার প‌রিবারকে ইমোশোনাল‌লি ব্ল্যাক‌মেইল কর‌ছো। আর আমার বাবা মা এটা ভে‌বে রা‌জি হ‌য়ে‌ছে যে তু‌মি আমা‌র খুব খেয়াল রাখ‌বে, আমায় আবার স্বাভা‌বিক ক‌রে তুল‌বে। আর আমি প্রথমত এটা ভে‌বে রা‌জি হ‌য়ে‌ছিলাম কারন তখন তনয়ার স্মৃ‌তি গু‌লো আমার ম‌নে কুয়াশার আবরনে ঢাকা ছি‌লো। আমার স্মৃ‌তির উপর তখন মরুভূ‌মির ধূসর মেরুর উপর যেমন বা‌লির প্র‌লেপ প‌ড়ে ঠিক তেম‌নি প্র‌লেপ পড়‌ছি‌লো । আর দ্বিতীয়ত বাবা মাও তোমা‌কে বি‌য়ে করার জন্য অনেক প্রেসার দি‌তে ছি‌লো তাই।
‌কিন্তু তোমার সবাই আমার সা‌থে ধোকা ক‌রে‌ছো। সত্যটা জে‌নেও আমায় জানাও নি। আর আমার বাবা মা যাও আমায় স‌ত্যি জানা‌তো তাদের মুখও তু‌মি বন্ধ ক‌রে দি‌ছো এটা ব‌লে যে স‌ত্যি জান‌লে আমার ক্ষ‌তি হ‌বে। আর তারা তোমার কথা চোখ বন্ধ ক‌রে বিশ্বাস ক‌রে‌ছি‌লো। কেন জা‌নো কারন তু‌মি ডাক্তার। আর মানুষ ডাক্তার‌দের কথা চোখ বন্ধ ক‌রে বিশ্বাস ক‌রে। কিন্তু তারা‌তো তোমার ছল চাতু‌রি বুঝ‌তে পা‌রে‌নি।
‌নিশীঃ অায়াত বিশ্বাস ক‌রো আমি যা কর‌ছি তোমার ভা‌লোর জন্যই কর‌ছি।
আয়াতঃ চুপ একদম চ‌ুপ। বিশ্বাস আর তোমা‌কে? হুমম! হা হা হা হা! যে বিশ্বাস শ‌ব্দের মা‌নেই বো‌ঝে না। তাকে কর‌বো ‌বিশ্বাস? যে নিজের ছোট বো‌নের স্বামী‌কে বি‌য়ে ক‌রে তা‌কে কর‌বো বিশ্বাস! হুমম ভিষন মজার কথা ব‌লো তো? জা‌নো ছোট বো‌নের স্বামী তো ছোট ভাইয়ের মত হয়? মানলাম আমি তোমার ক্লাসমেট ছিলাম আগে কিন্তু প‌ড়ে তো তোমার ছোট বো‌নের স্বামী হ‌য়ে‌ছি।
‌নিশীঃ ওহ জাস্ট সেটাপ আয়াত! তনয়া আমার আপন বোন না মামাতো বোন ছি‌লো।
আয়াতঃ তো? বোন তো বোনই হয় তাই না? হোক সে চাচা‌তো, ফুপা‌তো, বা মামা‌তো! তাতে কি আসে যায়?
‌নিশীঃ আয়াত প্লিজ আমায় ছে‌ড়ে দাও! আমার মাথা প্রচন্ড ব্যাথা কর‌ছে! আর তাছাড়া এসব পাগলামী বন্ধ ক‌রো। আমার ম‌নে হয় তু‌মি ঐ বইটা পড়‌তে গি‌য়ে বইটার সা‌থে নি‌জের পার‌সোনাল লাইফ মি‌লি‌য়ে ফে‌লো‌ছো। তু‌মি এখন একটা হ্যা‌লো‌সে‌নেস‌নের ম‌ধ্যে আছো।
আয়াতঃ নো মাই ডিয়ার ! হ্যা‌লো‌সে‌নো‌সনের ম‌ধ্যে তো এত দিন ছিলাম। এখন রিয়া‌লি‌টি জান‌তে পে‌রে‌ছি। আর তু‌মি বইটা কথা ম‌নে ক‌রে ভা‌লো ক‌রে‌ছো। চ‌লো প‌রের টুকু প‌ড়ে নেয়া যাক!
এটা ব‌লে আয়াত বইটা মে‌লে আবার পড়া শুরু কর‌লো
——-‌বি‌য়ের পর থে‌কে আয়াত আর আমার ভা‌লোবাসার কোন কম‌তি ছি‌লো না। এক কথায় সারা ঘরময় ভা‌লোবাসার ছড়াছ‌ড়ি ছি‌লো। এত সুন্দর মুহূর্ত গু‌লো কিভা‌বে যে কে‌টে যেতো তার খেয়ালই করতাম না। বি‌য়ের প‌নেরো দিন পর পর্যন্ত আমা‌দের বাবা মা আমা‌দের সা‌থে ছি‌লো। প‌রে যখন তারা দে‌শে ফেরার কথা বল‌লো তখন আমি আয়াত‌কে বললাম
তনয়াঃ আয়াত আমরাও কি বাবা মা‌য়ের সা‌থে দে‌শে যা‌বো?
আয়াতঃ জ্বি না ম্যাডাম।
তনয়াঃ কে‌নো? (মুখ ফু‌লি‌য়ে)
আয়াতঃ আর দ‌ুমাস পর ‌তোমার পরীক্ষা শুরু ভু‌লে গেলা সেটা! আজব! এ মুহূ‌র্তে দে‌শে গে‌লে লেখা পড়ার কি হ‌বে?
তনয়াঃ আমার লেখা পড়ার দরকার নাই।
আয়াতঃ এ্যাঁ। কেন?
তনয়াঃ আমার সবসময় একটা স্বপ্ন ছি‌লো বি‌য়ের পর আমি শ্বশুর শ্বাশু‌রির আর সংসা‌রের দেখাশুনা কর‌বো আর আমার বর কাজ কর‌বে। সে সকাল বেলা অফিস যা‌বে আমি সংসার সামলা‌বো আর সন্ধ্যা বেলা বা‌ড়ি আস‌লে তা‌কে সামলা‌বো।
তনয়ার কথা শু‌নে আয়াত হা‌সি দি‌য়ে তনয়া‌তে পিছন দি‌য়ে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে ব‌লে
আয়াতঃ ওরে আমার মি‌ষ্টি সাংসা‌রিক বৌ‌রে! আই লাভ ইউ।
তনয়াঃ তাহ‌লে আমরাও বাংলা‌দে‌শে যাই। চ‌লো। কত দিন হ‌লো নিজের দেশ দে‌খি না, সেখা‌নের মা‌টির ঘ্রান নেই না।
আয়াতঃ হ্যা যা‌বে‌া। কিন্তু ম্যাডাম আমা‌রো যে আপনা‌কে নি‌য়ে মা‌নে আমার স্ত্রী‌কে নি‌য়ে কিছু স্বপ্ন ছি‌লো।
তনয়াঃ আচ্ছা! কি স্বপ্ন?
আয়াতঃ আমার স্ত্রী পড়াশুনা ক‌রে নি‌জের পা‌য়ে দা‌ড়ি‌য়ে সাবলম্বী হ‌বে। আর তা‌কে নি‌জের পা‌য়ে দাড়া‌নোর জন্য আমি সবসময় তার পা‌শে থাক‌বো।
তনয়াঃ কিন্তু——-?
আয়াতঃ হুসসস । কোন কিন্তু না? হ্যা আমরা মা‌ঝে মা‌ঝে বেড়া‌তে দে‌শে যা‌বো কিন্তু তা কেবল তোমার ক‌লেজ ছ‌ু‌টির সময়!
তনয়াঃ আর বাবা মা?
আয়াতঃ এসব কর‌তে বাবা মা ই আমা‌কে বল‌ছে। কারন তোমা‌কে এখানে একা রে‌খে তো আর আমি যে‌তে পার‌বো না। তাই দুজ‌নেই এখা‌নে থাক‌বো। তোমার কোর্স শেষ হ‌লে একেব‌া‌রে দে‌শে চ‌লে যা‌বো। আর মা‌ঝে মা‌ঝে তো বেড়া‌তে যা‌বোই, বাবা মাও মা‌ঝে মা‌ঝে এখা‌নে এসে থে‌কে যা‌বে। হ্যা‌পি!
তনয়াঃ (ভেং‌চি কে‌টে) ওকে।
আয়াতঃ তনয়া জা‌নো এরকম ভেং‌চি কাট‌লে তোমা‌কে অনেক মি‌ষ্টি লা‌গে।
তনয়াঃ আমি মি‌ষ্টি না তিতা তু‌মি কিভা‌বে জান‌লে?
আয়াতঃ তাহ‌লে আর কে জান‌বে। দুষ্ট‌মি ক‌রে
তনয়াঃ যাহ! (লজ্জা পে‌য়ে)
আয়া‌তের সা‌থে দিন গু‌লো এত সুন্দর আর রোমাঞ্চকর কাট‌ছি‌লো যা চিন্তা কর‌তেও অদ্ভুত ভা‌লোলাগা কাজ ক‌রে। মানুষ নিজের স্ব‌প্নে নি‌জের ঠিক যেমন জীবন কল্পনা ক‌রে ঠিক স্বপ্নের মত সুন্দর চল‌ছি‌লো আমাদের টোনাটু‌নির সংসার।
ছয় মাস পর—–
তনয়াঃ আয়াত !
আয়াতঃ হুমম ব‌লো!
তনয়াঃ একটা কথা ব‌লি রাগ কর‌বে না‌তো?
আয়াতঃ তোমার কোন কথায় আমি রাগ ক‌রি কখ‌নো?
তনয়াঃ আয়াত আমা‌দের বি‌য়ের তো প্রায় ছয় মাস হ‌য়ে গে‌লো। তাই না?
আয়াতঃ হ্যা কেন?
তনয়াঃ আমা‌দের একটা ছোট্ট কিউট বে‌বি হ‌লে কেমন হ‌বে?
আয়াতঃ একদম না!
তনয়াঃ কেনো?
আয়াতঃ তোমার পড়াশুনা শেষ না ক‌রে বে‌বির কথা মাথায় আন‌বে না। আর তাছাড়া ডাক্তার বল‌ছে তু‌মি ফি‌জিক্যাল‌লি এখন মা হবার জন্য তৈরী না। আমি তোমা‌কে নি‌য়ে কোন রিক্স নিতে চাই না।
তনয়াঃ তু‌মি আর তোমার ডাক্তার দুজ‌নেই পাগল।
আয়াতঃ তোমার সা‌থে ছয় মাস ধ‌রে আছি তোমার রোগগু‌লো কি মো‌টেও আমার হ‌বে না।
তনয়াঃ কি? তার মা‌নে আমি পাগল? দাড়াও তোমার হ‌চ্ছে!
আয়াতঃ আরে আরে শোন রাগ ক‌রো কেন! তু‌মি তো আমার পাগ‌লী। আমার দুষ্ট মি‌ষ্টি ভালোবাসার পাগলী।
‌দেখতে দেখতে একটা বছর যে কিভা‌কে কে‌টে গে‌লো বুঝ‌তেই পার‌ছিলাম না। সু‌খের সময় গু‌লো এত দ্রুত কা‌টে যা বলার মত না। ১ম বিবাহ বা‌র্ষি‌কি‌তে আমা‌রা দুজন দে‌শে গি‌য়ে পালন ক‌রে‌ছিলাম। অনেক সুন্দর ভা‌বে। প্রায় প‌নে‌রো দিন তখন দে‌শে ছিলাম।
আয়াত বে‌বির জন্য প্রস্তুত ছি‌লো না কিন্তু আমার একটা বে‌বির খুব শখ হ‌তো। কিন্তু এসব বিষয় তো আর স্বামী স্ত্রী একে অপ‌রের ম‌তের বিরু‌দ্ধে গি‌য়ে হ‌তে পা‌রে না। দুজ‌নেরই সম্ম‌তি দরকার। কিন্তু কথায় আছে না উপর ওয়ালা চাই‌লে সেখা‌নে আমা‌দের ম‌র্জি চ‌লে না। দেশ থে‌কে আসার পরই শরীরটা কেমন যে‌নো লাগ‌ছি‌লো। তারপর ডাক্তার কাছে গিয়ে টেস্ট করাই। আজ সকা‌লেই আমি টেস্ট রি‌পো‌র্টে জান‌তে পারলাম আমি কন‌সিভ কর‌ছি। অনাকা‌ঙ্খিত ভা‌বে বাচ্চাটা চ‌লে আস‌লো। আয়াত শুন‌লে কি রাগ কর‌বে না‌ কি—-? সেটা ভে‌বে ভিষন টেনশন হ‌চ্ছে। আয়াত বা‌ড়ি আস‌লো ফ্রেস হ‌য়ে ‌সোফায় বস‌লো। আমি খুব খুব ভ‌য়ে ভ‌য়ে আয়া‌তের কা‌ছে গেলাম, ওর পা‌শে বসলাম। আয়াত আমার কো‌লে মাথা দি‌য়ে শু‌য়ে পর‌লো। তারপর বল‌লো
আয়াতঃ কিছু বলবা?
তনয়াঃ তুমি কিভা‌বে বুঝলা?
আয়াতঃ কামওন তনয়া। আমরা একে অপ‌রের প্র‌তি এতটা অভ্যস্ত হ‌য়ে গে‌ছি যে আমরা একে অপ‌রের নিঃশ্বা‌সের ভাষাও বুঝ‌তে পা‌রি। নির্ভয় হ‌য়ে সবটা ব‌লো। আই ট্রাস্ট ইউ।
তনয়াঃ আয়াত ধরো আমা‌দের মা‌ঝে অনাকা‌ঙ্খিত ভা‌বে কেউ চ‌লে আস‌লো কিন্তু তু‌মি তা‌কে এখন চাই‌ছো না তখন তু‌মি কি কর‌বে?
আয়াতঃ তনয়া এত ঘু‌রি‌য়ে পে‌চি‌য়ে না ব‌লে সরাস‌রি ব‌লো না।
তনয়াঃ না মা‌নে আয়াত। আমি স‌ত্যিই বুঝ‌তে পারছি না কিভা‌বে কি হ‌লো? মানে? কিভা‌বে কি?
আয়াতঃ ওয়েট। আমি বল‌ছি? তারপর তনয়ার পে‌টে একটা ভা‌লোবাসার পরশ দি‌য়ে বল‌লো
আমা‌দের মা‌ঝে নতুন অতী‌থি আস‌তে চল‌ছে এই তো বলবা? তো এটা বলার জন্য এত টেনশন কেন কর‌ছো?
তনয়াঃ (বড় চোখ চোখ ক‌রে তা‌কি‌য়ে) তু‌মি কিভা‌বে জান‌লে?
আয়াতঃ কাল যে ডাক্তা‌রে কা‌ছে গি‌য়ে‌ছি‌লে মা‌নে ডাঃ জে‌নি তি‌নি আমাদের খুব প‌রি‌চি‌তো কিনা?
তনয়াঃ হ্যা।
আয়াতঃ সেই দুপু‌রের পর আমা‌কে ফোন দি‌য়ে জা‌নি‌য়ে‌ছে। আমি ভাব‌ছিলাম তু‌মি আমায় জা‌নি‌য়ে সারপ্রাইজ দি‌বে। কিন্তু তু‌মি তো উল্টা মুখ গোমরা ক‌রে গোল‌ গোল ঘু‌রি‌য়ে বল‌ছো। কেন তু‌মি কি বে‌বি চাও না?
তনয়াঃ আরে আজব তো! আমি কেন বে‌বি চাই‌বো না। আমি তো তোমার কথা ভে‌বে ভয় পা‌চ্ছিলাম।
আয়াতঃ কেন আমি কি বাঘ না ভাল্লুক যে ভয় পে‌তে হ‌বে?
তনয়াঃ আরে তু‌মিই তো বললা আমার পড়াশুনা শেষ হবার আগে বে‌বি না। তাহ‌লে ?
আয়াতঃ মাই ডিয়ার লাভ‌লি ওয়াফ। আমি সে কথা এ জন্য বল‌ছি কারন পেগ‌নেন্ট অবস্থায় তোমার খুব কষ্ট হ‌বে। কারন ঘর, লেখাপড়া, বাচ্চা সব মি‌লি‌য়ে তোমা‌কে খুব চাপে পড়‌তে হ‌বে। কিন্তু আল্লাহ যখন খু‌শি হ‌য়ে দি‌ছে তখন আমরা কেন নি‌বো না? আর তু‌মি আমায় বল‌তে কেন ভয় পা‌চ্ছি‌লে? এটা কি তোমার একার ভু‌লে হই‌ছে? না‌কি তু‌মি কোন পাপ কর‌ছো? ও আমা‌দের দ‌ুজনার ভা‌লোবাসার অংশ। তাই ওকে ভা‌লোবে‌সেই পৃ‌থিবী‌তে আন‌বো। কত মানুষ আছে বাচ্চার জন্য কাঁ‌দে। সন্তান আল্লাহর প্রদত্য শ্রেষ্ঠ নেয়াম‌তের ম‌ধ্যে অন্যতম নেয়ামত। আর আমাদের আল্লাহ খু‌শি হ‌য়ে দি‌ছে তাও নি‌বো না।
তনয়া চোখ দু‌টো খু‌শি‌তে ছল ছল ক‌রে উঠ‌লো। আয়াত‌কে শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বল‌লো।
তনয়াঃ স‌ত্যিই আমার মত ভাগ্যবতী মে‌য়ে আর তোমার মত এত ভা‌লো স্বামী পৃ‌থিবী‌তে খুব কম
আছে। আই লাভ ইউ।
আয়াতঃ লাভ ইউ টু । কিন্তু এখন তোমা‌কে আমার কথা মত চল‌তে হ‌বে। দে‌খো বা‌ড়ি আসার সময় ডাক্তা‌রের সা‌থে কথা ব‌লে আস‌ছি। তু‌মি এখন থে‌কে কি কি খাবে, কিভা‌বে চল‌বে, ‌কি কি ডা‌য়েট ম্যনে‌টেন করা লাগ‌বে তা সব জে‌নে এসে‌ছি।
তনয়াঃ তার মা‌নে আমা‌কে অত্যাচার করার পুরা মেন্যু তৈরী ক‌রে আস‌ছো।
আয়াতঃ ম্যাডাম বাবা মা হ‌তে গে‌লে একটু অত্যাচার তো সহ্য কর‌তেই হ‌বে। তাই এখন থে‌কে তু‌মি আমার কথামত চল‌বে! বুঝলা?
তনয়াঃ (মাথা না‌ড়ি‌য়ে) হুমমম।
আয়াত ঠিকই বল‌ছি‌লো পেগ‌নে‌ন্সির টাই‌মে লেখা পড়া করা, ঘর সামলা‌নো খুব কষ্ট দায়ক। কিন্তু আয়াত আমার সব কষ্ট গু‌লো‌কে নি‌মি‌ষেই ছু মন্তর ক‌রে ভা‌গি‌য়ে দেয়। আয়াত আগের থে‌কে তিনগুন বে‌শি কেয়ার ক‌রে আমার। ম‌নে হয় আমি নি‌জেই একটা বাচ্চা। রোজ ক‌লে‌জে দি‌য়ে আসা, নি‌য়ে আসা, খাবার খাওয়া‌নো, পা‌র্কে বেড়া‌তে নি‌য়ে যাওয়া প্র‌তিটা কাজ খুব যত্নের সা‌থে ক‌রে।
এমনকি আমার পড়াশুনায়ও অনেক হেল্প ক‌রে। আমার প্র‌জেক্ট এর কাজ গু‌লো ক‌রে দেয়। বই পড়‌তে বো‌রিং লাগ‌লে ও প‌ড়ে প‌ড়ে আমা‌কে শুনায়। শুধু পাঠ্য বই না, বি‌য়ের পর থে‌কেই আয়াত গ‌ল্পের বই পড়‌তো আর আমি ওর কাঁ‌ধে মাথা রে‌খে গল্প শুনতাম। বে‌শির ভাগ টাইমই পড়া বা গল্প শুন‌তে শুন‌তে ওর কাঁ‌ধে ঘু‌মি‌য়ে পড়তাম কিন্তু যখন ঘুম ভাঙ‌তো তখন নি‌জে‌কে হয় আয়া‌তের বু‌কে নয়‌তো বিছানায় পেতাম। আস‌লে আয়াত পরম ভা‌লোবাসায় আমা‌কে কো‌লে তু‌লে বেডরু‌মে নি‌য়ে আস‌তো। কখনো কখ‌নো ঘুমা‌নোর ভান ধ‌রে থাকতাম তখন দেখতাম মা‌নে অনুভব করতাম আয়াত আমার কপা‌লে ভা‌লোবাসার পরশ দি‌য়ে আমা‌কে কো‌লে তু‌লে বেড রু‌মে নি‌য়ে আস‌তো। রা‌তে ঘু‌মের মা‌ঝে ওর বুক থে‌কে স‌রে গে‌লে ঘু‌মের মা‌ঝেই আমাকে ওর বু‌কে টে‌নে নি‌তো। কখ‌নো কখ‌নো জে‌গে উঠ‌লে দেখতাম আয়াত অপলক দৃ‌ষ্টিতে আমার দি‌কে তা‌কি‌য়ে আছে। জি‌গেস কর‌লে বল‌তো তোমায় যতই দে‌খি মন ভ‌রে না।
‌মোট কথা ভা‌লোবাসার সু‌খের সাগ‌রে ভাস‌ছিলাম আমরা দুজন। আমা‌দের অনাগত সন্তান আমাদের খু‌শি আ‌রো ডাবল ক‌রে দি‌লো। কিন্তু কথায় আছে না বে‌শি সুখ কখ‌নোই কা‌রো কপা‌লে সয় না। সু‌খের মূল্য দুঃখ দি‌য়ে দি‌তেই হ‌বে। কারন জীবনটা নদীর মত যার এর পাড় সুখের আর এক পাড় দুঃ‌খের। আর দুপাড় ছাড়া কখ‌নো নদী হয় না। কোথাও না কোথাও নদীর মোড় মিল‌বেই সা‌থে সুখ দুঃখও।
আমার পেগ‌নে‌ন্সির প্রায় ছয় মাস হ‌তে চল‌লো। আমরা দুজনই অধির আগ্র‌হে বে‌বিটার জন্য অপেক্ষা কর‌ছিলাম। সে‌দিন আয়াত অফি‌সে যাবার পর ঘ‌রের মেইড এর কিছু জরু‌রি কাজ প‌ড়ে তার না গে‌লেই না। আমি ভাবলাম আয়াতো দুপু‌রে এসেই পড়‌বে থাক ওনা‌কে ছু‌টি দি‌য়ে দি। মেইড চ‌লে যাবা পর সি‌ড়ি দি‌য়ে নাম‌তে গি‌য়ে পা পিছ‌লে প‌ড়ে যাই। পে‌টে প্রচন্ড আঘাত লা‌গে। ম‌নে হয় কলিজাটা ছি‌ড়ে যা‌চ্ছে। প্রচুর ব্লা‌ডিং হচ্ছে দেখ‌তে পা‌চ্ছি। এখ‌নো আমার জ্ঞান আছে। কোন রকম ফো‌নের কা‌ছে পৌ‌ছে ফোনটা হা‌তে নি‌য়ে আয়াতকে ফোন দি‌য়ে শুধু একবার ওর নাম ডাক দিলাম। তারপর আর কিছু ম‌নে নাই।
চল‌বে———-
ভুলত্রু‌টি ক্ষমার চো‌খে দেখ‌বেন।
আজ অনেক বড় ক‌রে দি‌ছি। আজ য‌দি কেউ ব‌লেন এত ছোট কেন? তাহ‌লে খবর আছে। কান্না কর‌বে‌া কিন্তু ব‌লে দিলাম।