প্রেমে পড়া বারণ

প্রেমে পড়া বারণ ( সিজন-2 ) Part- 12

দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ থমকে দাঁড়াই।ঘুরে সেই জমিদার বাড়িতে চলে এসেছি!!!
এইতো সেই বট গাছ! এই গাছেই কাঞ্চন গলায় দড়ি দিয়েছিলো!!
বাগানের শেষ প্রান্তে জমিদার বাড়ি। এখানে দিনের বেলায়ও মানুষের চলাচল চোখে পড়ে না।আর এখন রাত হয়ে গেছে!
কিছুতেই এ বাড়িতে ঢুকা যাবে না। আরেকটা রাস্তা চোখে পড়তেই সে দিকে ছুটতে থাকি। এখানে ডাকলেও কেউ শুনতে পাবে না,উল্টো কাঞ্চন বুঝে যাবে আমি কোথায়!
গলা শুকিয়ে কলিজা ফেটে যাচ্ছে। কাঞ্চনের হাত থেকে বাঁচতে হবে। ও একবার পেলে মেরে ফেলবে।
মৃত্যুর মুখে এসে বুঝতে পারছি মানুষের বাঁচার আকুতি কত!
কিন্তু এ রাস্তা কোথায় গেছে? দুদিকে মোড় নিয়েছে… কোন রাস্তায় যাবো!? কোন রাস্তায় গেলে কোনো লোকালয় দেখতে পারবো! এসব ভাবার মতো সময় নেই। দুই সেকেন্ডের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে এক রাস্তা ধরে দৌড়াচ্ছি।
দূরে একটা আলো দেখা যাচ্ছে।
মনে হয় কোনো বাড়ি। সেখানেই যেতে হবে। এই বাগানে এলোপাতাড়ি ছুটে লাভ হবে না। অন্যদিনের মতো জোছনা নেই আজ। চাঁদ আছে, আলো আছে, তবে অনেক হালকা আলো।।
এ আলোয় পথঘাট মোটামুটি দেখা যাচ্ছে।
এ কোন বিপদে পড়লাম! কেউ কি আমাকে খুঁজতেও বের হয়নি??
রেহান,তাহসিন… ওরা কোথায়??
দিয়া.. রিফাত… তোরা কোথায়? আমাকে বাঁচা….
রেহান…… আমাকে বাঁচা… ও মেরে ফেলবে আমাকে।
কাঞ্চন এখন কোথায় আছে? ও কি আমার পিছনে?
পিছনে ফিরে দেখবো?
না… দেখবো না… কিচ্ছু দেখবো। চোখ বন্ধ করে দৌড়াবো।
এসব ভাবতে ভাবতে… সামনের রাস্তায় তাকালাম। কেউ নেই।
কাঞ্চন মনে হয় বুঝতে পারেনি আমি কোথায়।
পিছনে ফিরে দেখবো? একটু ভয়ে ভয়ে পিছনে ফিরলাম – নাহ! কাঞ্চন পিছনে নেই।যে আলো দেখেছি সেদিকেই যাবো ঠিক করে সামনের দিকে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে
– হিয়া… হিয়া… তুই কোথায়?
– আপু…. আপু……
অইতো রেহানের গলা শোনা যাচ্ছে… সাথে দিয়ার…
– দিয়া… রেহান…… আমি এখানে…… এখানে
– হিয়া…
ওরা আমার কথা শুনতে পাচ্ছে না। আমার গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছে না! এতো চেঁচিয়ে ডাকছি,কিন্তু ওদের কানে পৌছাচ্ছে না।
আমি কয়েকটা টর্চের আলো দেখতে পাচ্ছি।
একি! ওরা অন্য দিকে যাচ্ছে কেন?
এক মুহূর্ত দেরি না করে রেহানদের দিকে ছুটছি। কিন্তু আর পারছি না। হাত পা ভেঙে আসছে।
কোনো রকমে একবার ওদের কানে একটা আওয়াজ পৌঁছাতে পারতাম!
ছুটতে ছুটতে কত বার পড়ে গেছি, আবার উঠে টলতে টলতে ছুটছি।কেবল মনে হচ্ছে কাঞ্চন আমার পিছনে!
আলো একটু যায়গার মধ্যে নড়াচড়া করছে,আমি দেখতে পাচ্ছি।
নিশ্চয়ই ওরা ওখানে আমাকে খুঁজছে। প্রাণপণ চেষ্টা করে পৌঁছে দেখি ওরা নেই!!
চলে গেছে!!
কিন্তু একি!! কোথায় এলাম আমি? সেই পদ্ম পুকুর পাড়???
যে রাস্তায় এসেছি সে রাস্তায় না গিয়ে পুকুরের পাশে আরেকটা রাস্তা ধরে দৌড়াচ্ছি।
এ কোন চক্রের মধ্যে আটকে গেছি!
আমি জমিদার বাড়ির সামনের বটতলার নিচে এসে বুঝতে পারলাম এ চক্র কাঞ্চনের তৈরি! এ রাস্তা সোজা জমিদার বাড়ি পৌঁছে দিলো!!!
আমাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই যায়গায় নিয়ে আসলো!
না পারছি চোখ বন্ধ করে রাখতে, না পারছি খুলে রাখতে…
কারণ আমার সামনে গাছে ঝুলন্ত একটা মেয়ের লাশ!
দু’হাতে চোখ বন্ধ করে ফেলেছি!
কাঞ্চন কি অন্যকাউকে মেরে ফেললো?!!
জানি না এতো সাহস কোথা থেকে আসলো আমার!
এখন তো মরতেই হবে।
কিন্তু মরার আগ পর্যন্ত বাঁচার চেষ্টা করবো।
ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি লাশ এখনো আছে! তার মানে অন্যকাউকেই মেরে ফেলেছে!!
কিন্তু পোশাক দেখে তো মনে হচ্ছে পরিচিত পোশাক, এবার আরেকটু ভালো করে তাকিয়ে চাঁদের হালকা আলোয় দেখি
হঠাৎ লাশ টা মাথা সোজা করে আমার দিকে দুটো জ্বলজ্বল চোখ তুলে তাকালো!
একি! আমার লাশ গাছে ঝুলছে!!
আ……
চিৎকার করে সরে গেলাম পিছনে।
নিজের ঝুলন্ত লাশ দেখে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ছুটে জমিদার বাড়িতে ঢুকে একটা ঘরের কোনায় আশ্রয় নিলাম।
কাঁদতে কাঁদতে আমি আর পারছিনা।
– অইতো আসছে…. ও আসছে!!
পায়ের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। দু’হাতে নিজের মুখ চেপে ধরে আছি,যাতে আমার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে না পায়।
– হিয়া….. হি……য়া…..
ও আমার নাম ধরে সুর করে ডাকছে!
ভয়ে সবকিছু ভুলে গেছি। কতকিছু পড়ছি,আল্লাহকে ডাকছি।
– হিয়া………. হি….য়া…… লুকোচুরি খেলবে?? এ বাড়িতে ছোট বাবুর সাথে লুকোচুরি খেলেছি। আমি লুকিয়ে থাকতাম আর ছোট বাবু…. আমাকে…… খুঁজে বের করে…….. বলতেন……… ” টুকি”
‘টুকি’ বলে কাঞ্চন আমি যে ঘরে লুকিয়ে আছি সেই ঘরের জানালা দিয়ে গলা বাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে!!
– বাঁচাও…. বাঁচাও….
কেউ আছো???
অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে আরেকটা ঘরে ঢুকে লুকানো চাইলাম, কিন্তু…
অই ঘরে ঢুকতে যাবো তখনই দেখি….
কাঞ্চনের মুখ উল্টে ঠিক আমার সামনে!.
ওর শরীর উপরে কোথাও… মাথা নিচে ঝুলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে!!
এই ঘরে যাবার প্রশ্নই আসেনা।। ছুটতে ছুটতে সিঁড়ির নিচের যায়গায় আশ্রয় নিলাম। জানালার ভাঙা একটা রডের টুকরো পেয়ে এটাই হাতে নিয়ে চুপটি করে লুকিয়ে আছি।এখন যদি কাঞ্চন আমাকে পায় নির্ঘাত মৃত্যু! হালকা চাঁদের আলো আসছে সামনের বারান্দায়। এখানে সাপখোপ থাকার সম্ভাবনা ছিলো, কিন্তু সেদিন দেখেছি এখানে তেমন একটা ঝোপঝাড় নেই।সাপ থাকা অসম্ভব কিছু না, বরং স্বাভাবিক।
কিন্তু এখন ভয়ংকর মৃত্যুর চেয়ে সাপের ছোবল খেয়ে মরা বেটার মনে হচ্ছে!
– হিয়া… হিয়া…. তুই কোথায়??
রেহানের গলা শুনতে পাচ্ছি!!
রেহান এসেছে!
আস্তে আস্তে বাইরে উঁকি দিয়ে দেখি রেহান! বেরিয়ে আসলাম। বারান্দায় এসে রেহান এদিকে সেদিকে সব যায়গা উঁকি দিয়ে খুঁজছে আমাকে !
– রেহান!
আমি এগিয়ে গেলাম
– হিয়া! তুমি এখানে কি করছো?? এদিকে আসো! কখন থেকে খুঁজছি!
এ রেহান নয়!! এটা বুঝতে এক মুহূর্ত দেরি হলো না। পাশের একটা টিনের ভাঙা কৌটা ছিলো সেটা ছুড়ে দৌড়াতে শুরু করলাম।।
নাহ,এ বাড়ি থেকে বের হতে হবে। এখানে থাকলে মারা পড়বো,বাঁচার কোনো আশা থাকবে না।।
জমিদার বাড়ি থেকে বেরিয়েই হোচট খেয়ে রেহানের উপরে পড়ে গেলাম।
রেহান ঠিকই এসেছে। দিয়া রেহান সাথেকে আরও কয়েকজন।
রেহানের আওয়াজ পেয়েই কাঞ্চন রেহানের রূপ ধারণ করেছিলো!!
– হিয়া…..
কি হয়েছে তোর? তুই এখানে কি করছিস!
– আপু…! এখানে কি করছিস তুই? কি হয়েছে আপু??
– ও আমাকে মেরে ফেলবে! বাঁচাও!!
আমি ওদের ফেলে পালাতে চেষ্টা করছি। কিন্তু দিয়া আর রেহান জোর করে আটকে রেখেছে!.
চলবে…