বজ্জাত বস রোমান্টিক হাজবেন্ড

বজ্জাত বস রোমান্টিক হাজবেন্ড !! Season -3 !! Part- 22

আবির তিথি আজ দুইজনে কষ্ট পাচ্ছে,,, কেউ কারো সাথে নাই কিন্তু আছে পুরানো সৃতি,,,যা ঘুরে বেড়ায় আবির তিথির মনে,,,
সম্পর্ক এমন একটা জিনিস যেখানে একটু ভুল ও শেষ করে দেয়,,,,রিতুর সাথে সম্পর্ক টা তিন বছর আগে ভেঙ্গে চলে আসে তিথি,,,,খুব কষ্ট হয় কাছের মানুষ গুলো ধোকা দিলে,,, এমন কিছু হয়েছে যা পালটে দেয় সব কিছু,,,,, তিথির এখন কোনো ফ্রেন্ড নাই হুম একজন আছে নিরব যে তিথিকে পছন্দ তো করে কিন্ত কখনো বলার সাহস টুকু পায় নাই,,,,
ফোনের বেল সে কখন থেকে বেজে যাচ্ছে এতে তিথির খবর নাই কারণ সে তো রুমে নাই,,,রেডি হয়ে মামার রুমে যায় মামা বিছানায় গিয়ে বসে,,মামার হাতটি ধরে বলে
তিথিঃ মামা আজ অফিসের প্রথম দিন দোয়া করিও,,,,আজ তোমার এই সব এর জন্য শুধু আমি দায়ী(চোখের কোণায় পানি এসে জমে যায়)সব কিছু শেষ হয়ে গেছে মামা,,,আমার সব থেকে কাছের মানুষ গুলো হারিয়ে ফেললাম,,,,,মামা আমি তো এমন চাই নাই তাহলে এমন কেন হলো,,,, আচ্ছা মামা আমি কি খুব খারাপ যার জন্য আমার সাথে এমন হয়,,,কেন মামা কেন বলবে প্লিজ (কান্না করে করে)
মামা আজকে চাইলে ও কিছু বলতে পারছে না,,,পারছে তিথির মাথায় হাত রেখে বলতে সব ঠিক হয়ে যাবে,,,চোখ দিয়ে শুধু বেয়ে যাচ্ছে নোনা জল,,তিন বছর আগে মামা এক্সিডেন্ট করে তারপর আবার হার্ট এ্যাটাক যার জন্য মামা প্যারালাইসিস হয়ে যায়,,,,শুধু কথা শুনে কিন্তু কিছু বলতে পারে না আর না হাত নাড়াতে পারে,,,,,মামার বুকটা ফেটে যাচ্ছে আজ কষ্টে তার আদরের ভাগনী টাকে এমন কষ্টে দেখে,,,,
তিথি চোখের পানি মুছে বলে
তিথিঃ মামা আসি প্রথম দিন লেট করতে চাই না,,,আর শুনো আমি ঠিক আছি,,তোমার তিথি বলে কথা হুম(মামার চোখের পানি টুকু মুছে দিয়ে)
তিথি মামার সাথে কিছু ক্ষন সময় কাটিয়ে বের হয়ে যায় অফিস এর জন্য,,,এই দিকে নিরব কখন থেকে অপেক্ষা করছে তিথির জন্য,,,তিথি নিচে নেমে দেখে নিরব
তিথিঃ আরে তুমি??

নিরবঃ কখন থেকে কল দিচ্ছি কই ছিলে?আজ প্রথম দিন লেট করবে নাকি?
তিথিঃ মামার সাথে একটু সময় কাটালাম তাই,,,আচ্ছা চলো
নিরব এর বাইকে উঠে বসে তিথি,,,নিরবের খুব ভালো লাগে যখন তিথি তার বাইকে উঠে বসে তার পিঠে হাত রাখে,,,,তিথি যখন চট্টগ্রামে আসে তখন নিরব তার সাহায্য করে আর পাশে ছিলো,,, নিরব তার দূর সম্পর্কে কাজিন লাগতো,,,,অফিসে জব ও নিরব অনেক কষ্টে মেনেজ করে দেয়,,,,তিথি নিরব কে খুব সম্মান করে,,,
অফিস এসে যায় তিথি,,,চারপাশ টা অনেক সুন্দর,,,,অফিস এর পরিবার সব কিছু অনেক ভালো,,,তিথি একটা সিটে গিয়ে বসে প্রথম দিন তাই তেমন একটা কাজ তাকে করতে হয় নাই,,,,কিছু ক্ষন পর মেনেজার এসে বলে
মেনেজারঃ সবাই কে একটা কথা বলি কাল অফিসে নতুন ক্লাইন্ট আসবে,,,,যার সাথে অনেক বড় ডিল হয়ছে অফিস এর,,,যদি এই ডিল টা হয় তাহলে এই কোম্পানির অনেক লাভ হবে,,,তাই সবাই কে বলছি একটু ভালো করে মন দিয়ে কাজ করবেন,,,আর এই তুমি (তিথিকে ইশারা করে)তুমি তো বড় স্যার এর পিএ তুমি স্যার এর কেবিনে যাও আর জিজ্ঞেস করো স্যার কে তোমার কাজ কি?ওকে
তিথি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে,,,স্যার কে সে টা ও সে জানে না,,,কেবিনে নক করে,,, একটা আওয়াজ শুনতে পায়,,,
স্যারঃ ইয়েস কামিন
তিথি কেবিনে ডুকে দেখে চেয়ারে একটা ছেলে বসে আছে দেখতে অনেক টা সুন্দর,,,, চোখে মোটা কালো চশমা,,,,তিথি মুখে হাসি রেখে বলে
তিথিঃ স্যার আমি আপনার নতুন পিএ আমার কাজ টা কি বলবেন স্যার
লোক টা উপরে তাকিয়ে হা হয়ে যায়,,এতো সুন্দর মেয়ে হয়তো সে কখনো দেখে নাই,,,মায়াবী চেহারা তার মধ্যে মুখে মুচকি হাসি,,,,, উফস সরি পরিচয় দেই এনি হলেন রনি খান,,,এই কোম্পানির মালিক,,,,রনি কিছু ক্ষন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে এমন সুন্দর সে কাউকে দেখে নাই,,,,আর আওয়াজ টা এতো মধুর যে রনি তিথির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,, তিথির কিছু টা বিরক্তি লাগে,,,,,
তিথিঃ স্যার
রনিঃ অহ সরি,,,নাম কি তোমার?
তিথিঃ তিথি
রনিঃ তোমার মত তোমার নাম টা সুন্দর,,,,
তিথিঃকি?
রনিঃ কিছু না,,,এই খানে কিছু ফাইল আছে ওই গুলো দেখে আমায় দিবে,,আর হ্যাঁ কাল একটা বড় ডিল ফাইনাল করতে একজন ব্যবসায়ী ঢাকা থেকে আসবে সো তার আগে সব কিছু ঠিক করে দেখে নাও
তিথিঃ জ্বি অবশ্যই
তিথি ফাইল গুলো নিয়ে চলে যায়,,,,
এই দিকে,,,
আবির ব্যাগ গুছিয়ে নেয় ঢাকার জন্য,,,,তিথির কয়েকটা ছবি আছে যা দেখে কাটিয়ে দিয়েছে তিনটি বছর,,,, তিথির ছবি গুলো হাতে নিয়ে বসে আছে,,,,সাদা শার্ট,,,কালো সু,,,,হাতে কালো বেল্টের ঘড়ি,,,,চোখে কিছু টা পানি জমে থাকা,,,,
আবিরঃ আজও জানলাম না কেন আমায় ছেড়ে গেলে? কোথায় আছো কি করছো ভালো আছো তো?? আচ্ছা তিথি তুমি ও কি আমার জন্য অপেক্ষা করছো?তুমি ও কি আমায় খুজছো?কেন আমায় একা রেখে গেলে কেন তিথি
আবির ছবি গুলো নিয়ে কিছু ক্ষন একা থাকে,,,,চোখের পানি তার যেন আজও বাঁধা মানছে না,,,,কিছু সময় পর কোর্ট টা হাতে নিয়ে ব্যাগ টা নিয়ে বের হয়ে যায়,,,,এয়ারপোর্টের জন্য,,,
এই দিকে,,,
ফাইল গুলো চেক করতে করতে অনেক সময় পার হয়ে যায়,,,,,ফোন করে যে মামানিকে জিজ্ঞেস করবে মামাকে ওষুধ দিয়েছে সে সময় টুকু আজ সে পায় নাই,,,,,সন্ধ্যা হয়ে আসে অফিস টাইম ও শেষ,, তিথি ব্যাগটা নিয়ে বের হয়ে দেখে নিরব দাঁড়িয়ে আছে,,
তিথিঃ চলে গেলে না যে?
নিরবঃ তোমায় একা রেখে যাবো ভাবলে কি ভাবে হুম,,,
তিথি আর কিছু না বলে উঠে পড়ে বাইকে,,,,তিথি যে দুষ্টুমিতে মেতে থাকতো সে এখন মন খুলে হাসে না পর্যন্ত,,,অনেক টা শান্ত মেজাজের হয়ে গেছে,,উল্টো জবাব এখন আর সে দেয় না,,,,নিরব তিথিকে তার বাসার সামনে নামিয়ে দেয়,,,তিথি নিরবের দিকে একটু ও না তাকিয়ে চলে যায়,,,,নিরব কিছু টা মন খারাপ করে কারণ তিথি আজ পর্যন্ত নিরবের দিকে ঠিক করে তাকায় নাই,,,আবার সে খুশি হয় তিথি তার পাশে তো থাকে,,,
এই দিকে,,, চট্টগ্রামে এসে যায় আবির,,একটা বড় হোটেলে উঠে,,,,প্রচুর ক্লান্ত লাগায় ফ্রেশ হয়ে শুয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়ে,,,
সকালে,,,

তিথি আজ কালো একটা থ্রি পিছ পড়ে,,হিজাব বাঁধে,,,,,অনেক কিউট লাগছে তাকে,,মুখ কোনো সাজ নাই আর না আজকে লিপস্টিক,,,,অফিসে এসে দেখে সবাই আজ অনেক ব্যস্ত নতুন ক্লাইন্ট আসবে,,আজ রনি স্যার ও অনেক ব্যস্ত,,,এতো বড় ব্যবসায়ী তার সাথে কাজ করবে এই ভেবে সে আজ অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়ে যাতে নতুন গেস্টের সমস্যা না হয়,,,
রনিঃ মিস তিথি ফুল গুলো নিয়ে সামনে দাঁড়ান এখন এসে যাবে হয়তো,,আর হ্যাঁ কোনো রকম যাতে ঘাটতি না থাকে উনার ওয়েলকাম এর,,
তিথিঃ জ্বি স্যার
তিথি বিরক্তি ভাব নিয়ে ফুল গুলো নিয়ে দাঁড়ায় আর মনে মনে বলে
তিথিঃ (মারে মা যে রকম করতেছে মনে হচ্ছে কোনো রাজা মহারাজা আসছে হু,,,ইচ্ছে তো করছে লাথি মেরে আফ্রিকায় পাঠাই তেলাপোকার আচার বিক্রি করতে হু)
আজ হঠাৎ এমন কথা নিজে নিজে বলে নিজে চুপ হয়ে গেলে,,,হঠাৎ এমন টাইপের কথা মাথায় আসলো কেন নিজে ও জানে না,,,,
একটা বড় সাদা গাড়ি থেকে নামে,,,কালো কোর্ট পড়া চোখে কালো সানগ্লাস,,,,হাতে দামি ঘড়ি,,,আর সে খোচা খোচা দাঁড়ি,,চুল গুলো সামনে এসে পড়ছে,,সে তো আর কেউ নয় আমাদের আবির,,,,,,আবির গাড়ি থেকে নামে আর অফিস এর ভিতরে ডুকার সাথে সাথে সব মেয়েরা হা করে তাকিয়ে আছে, রনি স্যার থেকে ও হ্যান্ডসাম কেউ ভাবতে পারে নাই,,,,,তিথি আনমনে তাকিয়ে আছে অন্য দিকে,,, মেনেজার তিথিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে
মেনেজারঃ মিস তিথি নতুন গেস্ট এসে গেছে ফুল হাতে না দিয়ে কি ভাবছেন হুম
তিথিঃ অহ সরি সরি,,,
তিথি ফুল গুলো নিয়ে সামনে আসে আর ফুল গুলো দিয়ে বলে
তিথিঃ ওয়েলকাম স্যার
এই বলে তিথি শকড,,,যাকে দেখেছে মোটে ও তৈরি ছিলো না দেখার জন্য,,,,,তার সামনে আবির দাঁড়িয়ে আছে,,ফুল গুলো হাত থেকে নিচে পড়ে যায়,,,,,আবিরকে দেখে তিথি একটু পিছনে যায়,,,আবির তিথিকে দেখে চশমা খুলে নেয়,,,তার কি যে আনন্দ লাগছে সে নিজে ও জানে না,,,,যাকে এতো বছর খুজেছে সে কিনা এখানে,,মুখে মুচকি হাসি রেখে তিথিকে কিছু বলতে যাবে তার আগে তিথি দৌড়ে চলে যায়,,,
তিথি ওয়াশরুমে ডুকে দরজা লাগিয়ে কেঁদে দেয়,,,
তিথিঃ কে,,,ন এসেছে সে এখা,,নে,,,তা,,কে আমি দেখতে চাই না (কান্না করে করে)
আবির মেনজার কে জিজ্ঞেস করে
আবিরঃ ওহ এই খানে?
মেনেজারঃ নতুন স্যার কাল জয়েন করছে,,,স্যার এর পিএ,,সরি স্যার এই ভাবে ফুল ফেলে দিয়ে চলে গেছে,,,আজকে ওকে জব থেকে বের করে দিবো
আবিরঃ ওকে বের করে দিলে আপনার জব ও চলে যাবে,,,,ওকে কিছু বলার সাহস টুকু করবেন না,,,,ভুল মানুষ করে তাই বলে জব থেকে বের করে দাও ইটস নোট গুড ওকে,,অই মেয়েকে আমার কেবিনে পাঠাতে পারবেন এসে যাতে আমায় সরি বলে,,ওকে
মেনেজারঃ জ্বি স্যার এখন পাঠাছি আমি
মেনেজার আর কিছু না বলে চলে যায়,,আবির একটা কেবিনে গিয়ে বসে,তার মনটা শুধু চটপট করছে তিথিকে দেখার জন্য তার সাথে কথা বলার জন্য,,,তিথি মুখ ধুয়ে বের হয়ে আসে ভাবে দে আর জব করবে না আবার মনে পড়ে অভাবের সংসার এখন জব ছেড়ে দিলে কষ্ট আরো বেরে যাবে,, তাই কিছু না বলে কাজে মন ফেয় তখন মেনেজার এসে বলে
মেনেজারঃ আমার চাকরি খাওয়ার বুদ্ধি বুজি??কেন যে জবে রাখছি আল্লাহ জানে,,,স্যার এর সামনে এমন কেন করলে হুম,
তিথি চুপ করে আছে,,

মেনেজারঃ যাও স্যার এর কাছে গিয়ে সরি বলো যাও
তিথিঃ আমি দোষ করি নাই যে সরি বলবো?
মেনেজারঃ জব টা মনে হয় তোমার লাগবে না তাই না?ওকে ব্যাগ গুছিয়ে যেতে পারো তাহলে
তিথি আর কিছু না বলে আবিরের কেবিনের দিকে যায়,,তার ভালো লাগছে না আবিরের সামনে যেতে কিন্তু কি করবে জব টা যে তার খুব দরকার,,
কেবিনের দরজা টুকা দেওয়ার সাথে সাথে আবির বলে উঠে
আবিরঃ ইয়েস কামিন
তিথি কেবিনে গিয়ে মাথা নিচু করে বলে
তিথিঃ সরি স্যার
এই বলে চলে যেতে লাগে আবির উঠে দূরে এসে তিথিকে জড়িয়ে ধরে আর শক্ত করে ধরে কেঁদে দেয়,,,আবিরের আজ কত যে খুশি লাগছে তার তোতাপাখিকে দেখে সে নিজে ও জানে না,,,
আবিরঃ কোথায় ছিলে তুমি? কত খুজেছি কোথায় পাই নাই,,এই তিন বছরের এমন কোনো দিন যায় নাই যে তোনায় খুজি নাই আমি,,কেন আমায় একা রেখে আসলে তোতাপাখি,,,(চোখের পানি বেয়ে পড়ে)
চলবে,,,,,,