প্রেমে পড়া বারণ

প্রেমে পড়া বারণ ( সিজন-2 ) Part- 06

চা বাগানের বাংলো মানেই ভৌতিক ব্যাপার স্যাপার।
ওরে বাবা… আমি যাবো না।
নাম শুনেই খুশবুর গলা শুকিয়ে গেছে।
রেহান ধমক দিয়ে বললো – ধুর… ভূত বলে কিছু আছে নাকি? আর যদি থাকে তবে তোকে দিয়ে আসবো।
– না ভাই… আমি যাচ্ছি না।তোরা যা।
– তুই যাবি না, তোর ঘাড় যাবে। ( তাহসিন)
– আরে ওসব কিছু নেই রে খুশবু। মামাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তো।
ভয়ের কিছু থাকলে মামা থাকতেন নাকি ওখানে? ( অনি)
– সত্যি নেই তো?
– নেই।
– তাহলে যেতে পারি।
কয়েকদিনের মধ্যেই আমাদের যাওয়ার পারমিশন পেয়ে গেলাম। অনির মামার সাথে আব্বু কথা বলার পরে যাবার অনুমতি পেয়েছি।তবে দিয়া আর রিফাতও যাবে আমাদের সঙ্গে।
অবশেষে আমরা সিলেটের উদ্দেশ্য রওনা হলাম। আমি, রেহান,খুশবু,অনি, দিয়া,রিফাত, তাহসিন,আনিষা।আমরা সবাই যাচ্ছি তাই আম্মুকে দিয়ে আনিষার বাবার অনুমতি নিয়েছি।
আমরা ট্রেনে যাচ্ছি।সবাই মিলে অনেক মজা করতে করতে অবশেষে সিলেট যখন পৌঁছালাম, তখন প্রায় শেষ বিকেল।
স্টেশনে নামার পরে অনির মামার পাঠানো গাড়ি পেয়ে গেলাম।
বাগানে যখন ঢুকলো আমাদের গাড়ি তখন অলরেডি সন্ধ্যা নেমে গেছে। অন্ধকার বাগানের রাস্তায় গাড়ি ছুটছে। বেশ ভেতরে বাংলোটা।
রাত সাড়ে নয়টায় বাংলোয় পৌঁছালাম।
পলাশ মামা আমাদের সবাইকে ওয়েলকাম করলেন।
সারাদিনের জার্নিতে আমরা খুব টায়ার্ড ছিলাম। প্রচন্ড খিদে পেটে। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে সবাই খাওয়াদাওয়া করলাম ।
রান্না + মেন্যু দুটোই জাস্ট অসাধারণ ছিলো, তার সাথে প্রচন্ড খিদে।।
সবাই মোটামুটি রাক্ষসের মতো খাবার পর্ব শেষ করলাম।
তারপর যে যার রুমে চলে গেলাম রেস্ট নিতে।
বাংলোটা অনেক বড় হলেও আমাদের প্রত্যেককে আলাদা রুম দেয়ার মতো এতোগুলো রুম নেই।
তাই দিয়া- আনিষা নিলো এক রুম।আনিষা দিয়ার সাথেই কমম্ফোর্ট। অনি আর রিফাত এক রুমে, রেহান আর তাহসিন, আমি আর খুশবু এক রুমে।
এভাবেই আমাদের থাকার ব্যবস্থা হলো।
ঘন্টা খানেক রেস্ট নিয়ে আমরা বাংলোটা ভেতরে আর সামনে একটু ঘুরে দেখলাম। যেহেতু অনেক রাত হয়ে গেছে, তাই আর কোথাও বের হইনি।
এমনিতেই আমাদের ঘুম প্রয়োজন। তাছাড়া দিনের বেলায় ঘুরাঘুরি করার জন্যও এনার্জি থাকা প্রয়োজন।
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে সব আনন্দ মাটি হয়ে যাবে।তাই সবাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম।
– আপু.. উঠ না।আম্মু ডাকছে।
অই হিয়া… হিয়া… উঠ না… হিয়া…অই…
– উফফ.. কি হয়েছে? ঘুমাতে দাও না।
আম্মু আর দিয়া ডাকাডাকি করছে। এতো মজার ঘুম রেখে উঠতে ইচ্ছে করছে না।
ও মাগো….. ইসস।।
কে হাতে এভাবে চিমটি কাটলো? আম্মু?
– এখানে তোর আম্মু কোথা থেকে আসছে?
– খুশবু?? তুই এখানে? এতো রাতে? আমার রুমে? আমাদের বাসায়?!!
খুশবু দু’হাতে ধরে আমাকে জোরে একটা ঝাকি দিলো।
– আর একটা উল্টো পাল্টা কথা বললে তোর নাক ফাঁটিয়ে দিবো বদমাশ মেয়ে।
এতো ক্ষনে আমার খেয়াল হলো খুশবু আমাদের বাসায় না,পলাশ মামার বাংলোয় আছি আমরা।
– কি হয়েছে রে? এভাবে ঝাকি দিলি কেন?
– তো কি করবো? সেই কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি আর তুই আবুল তাবুল বকে যাচ্ছিস!!
এখন বুঝতে পারছি আম্মু আর দিয়া ডাকেনি।খুশবুর ডাকে ঘুম হালকা হওয়ায় স্বপ্ন দেখছিলাম।
– আচ্ছা ঠিক আছে, ঠিক আছে। কি হয়েছে বল..
– অই শোন না… আমার খুব ভয় করছে।
– কিসের ভয়?
– চুপ করে শুন… কিসের একটা শব্দ হচ্ছে অনেক সময় থেকে।
– কই কিসের শব্দ?
– চুপ করে শুন নাহ!!
দুজনেই চুপ করে আছি।একটু পরেই শব্দ টা শুনতে পেলাম।
– ওইতো… শুনেছিস???!
– হা… তো?
– তো মানে?!… এতো রাতে কি এভাবে একটু পরপর…
খুশবুর কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে।।
– তুই পেঁচার ডাক শোনার জন্য মাঝরাতে ঘুম থেকে টেনে তুলেছিস?!
– ওটা পেঁচা?!!!
– জি মেডাম!
– ওহহ… আমি ভেবেছিলাম…
খুশবু দাঁত বের করে হাসার চেষ্টা করে।
– কি ভেবেছিলি..?… ভূত?
খুশবুর দাঁত এবার ভেতরে ঢুকে গেছে। শুকনো মুখ করে মাথা আস্তে আস্তে ঝাকিয়ে বললো
– হুম।
– উফফফ! তুই পড়াশোনা করছিস কিসের জন্য? সাধু বাবার কাছ থেকে তাবিজ নিয়ে গলায় ঝুলিয়ে রাখ।ভূতেও ধরবে না… পেত্নিও না।
– ওরে বাবারে.. আবার পেত্নি!
খুশবু আমাকে ঝাপটে ধরলো।
– কিহ? কি হয়েছে.? খুশবু..
খুশবু আমার কাধে মুখ গুজিয়ে হাত তুলে জানালার দিকে দেখায়।
ওকে জোর করে সোজা করে বসিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে প্রথমে আমিও চমকে উঠলাম।
– পেত্নি দেখেছিস?
খুশবু আমার দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাকায়।
– আমিও দেখেছি।
– ওরে বাবারে..
ও আবার জাপ্টে ধরে।
– লাত্থি খাবার আগে ছাড় আমাকে। দেখ তোর পেত্নী..!
আমার রাগ দেখে খুশবু আমাকে ছাড়লো।
– দেখ.. ভালো করে তাকিয়ে দেখ।
জোর করে ওকে জানালার দিকে ঘুরালাম।
খুশবু আর আমার দুজনেরই ক্রোয়েল চুল।
ঘুম থেকে উঠলে চুল আর চুল থাকে না, বাবুই পাখির বাসা হয়ে যায়।
আমার যা মোটামুটি একটা সাইজে আছে, কিন্তু .. খুশবুর চুল দেখলেই ঝাকড়া চুলের বাবড়ি দুলানো কবি নজরুলের কথাই সবার আগে মনে আসবে।
খুশবু সাদা টিশার্ট পড়ে ছিলো।
জানালার পর্দা ফ্যানের বাতাসে সরে গিয়ে গ্লাস দেখা যাচ্ছে। আর ড্রীম লাইটের হালকা নীল আলোয় গ্লাসে নিজেকে দেখেই চিনতে পারেনি!!
খুশবু বুঝতে পারলো ওর বোকামি।
তাই আমি আর বেশি কিছু বললাম না।
শুধু কটমট করে বললাম
– ভালো চাস তো চুপচাপ শুয়ে পড়!
খুশবু বাধ্য মেয়ের মতো গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লো।
ঘুমে চোখ জ্বলে যাচ্ছে আমার। দ্রুত ঘুম নেমে এসেছে চোখে।।
– অই হিয়া… বইন উঠ। হিয়া.. হিয়া…
সোজা উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম।
– তোর প্রব্লেম টা কি? বল।
– ওয়াশরুমে যাবো।একটু দাঁড়াবি?
– চল।
আমি দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম।
খুশবু চেঁচিয়ে বললো
– ওই দিকে কই যাচ্ছিস?
– কেন? ওয়াশরুমে যাবি না?
– আরে বুদ্ধু… এটাস্টড ওয়াশরুম তো।
– ওওঅঅঅঅঅঅ…. আচ্ছা আচ্ছা। না আমি ভাবলাম ওয়াশরুম টা বাংলোর বাহিরে।তাই দাঁড়িয়ে থাকতে হবে বাইরে!!
খুশবু বুঝতে পারলো আমার মেজাজ কোন লেভেলে উঠে গেছে।
– প্লিজ রাগ করিস না। আমার ভীষণ ভয় করছে।
– কিসের ভয়?
– ওয়াশরুম যাবার পরে যদি লাইট অফ হয়ে যায়?
-উফফ… খুশবু…. এবার কিন্তু সত্যিই বাড়াবাড়ি হচ্ছে।
আমি আছি এখানে… যা.. ওয়াশরুমে যা…
– যদি লাইট অফ…
আমার রাগে নিজের মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে!! ফুস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম
– এবার যদি আর একটা কথা বলিস,তবে ভূত – পেত্নী না আমি তো মাথা ভেঙে ফেলবো!!
চলবে…

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *