প্রেমে পড়া বারণ

প্রেমে পড়া বারণ ( সিজন-2 ) Part- 05

এই হচ্ছে রেহান। দিনে তিন বার আমার সাথে ঝগড়া করবে, কিন্তু ২৪ ঘন্টার আগেই সে নিজে এসে কথা বলবে আর সাথে আমার প্রিয় আইসক্রিম!!
আইসক্রিম টা সব সময় না।
আইসক্রিম নিয়ে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, আমার আইসক্রিম অনেক পছন্দ, কিন্তু টনসিল প্রব্লেমের জন্য বাসায় আমাকে আইসক্রিম খেতে দেয় না। সামান্য বৃষ্টির ফোঁটা অথবা ঠান্ডা কিছু খেলেই গলা বসে যায়, নয়তো সর্দি-জ্বর বেধে যায়।
বাইরে এসে আইসক্রিম খাবো তারও উপায় নেই। রেহান, তাহসিন ওরা খেতে দেয় না, কিন্তু যখন রেহানের সাথে বড় সড় ঝামেলা হয়ে যায়, তখন রেহান একটা আইসক্রিম খাওয়ায়!!
আইসক্রিম হাতে নিয়ে বললাম
– আইসক্রিম খেলে গলা বসে যাবে, জ্বর আসবে জেনেও তুই আইসক্রিম এনেছিস!?তুই তো শত্রুর চেয়ে কম না!
– আমি কবে তোর বন্ধু ছিলাম?? আর আইসক্রিম খেয়ে মরে গেলে মরে যা…
– শকুনের দোয়ার গরু মরে না। বুঝছিস?
– বুঝছি।
বলে রেহান মিটিমিটি হাসছে।
– হাসছিস কেন?
– দেখ আমাকে দোষ দিতে পারবি না। আমি কিন্তু কিছু বলিনি।
এবার খুশবু, অনিও হাসা শুরু করছে,পাছে আমি রেগে যাই তাই জোরে হাসতে পারছে না।
– কি বলিসনি?
– তুই যে গরু সেটা কিন্তু আমি বলিনি।সবাই সাক্ষী আছে তুই বলেছিস।।
– আর তুই যে শকুন। শকুন কই যায় জানিস? ভাগাড়ে!
– পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে আসবি না।
তুই গরু হলে আমি না হয় শকুন ই!!
তোর আইসক্রিম খেলে গলা বসে যায়, বৃষ্টির ফোঁটা পড়লে জ্বর বেঁধে যায়!
দুই ঘন্টা শাওয়ার নিস কিভাবে?
রেহান আমার ছেলেবেলার বন্ধু। বাসায় কত বকা খেয়েছি এই শাওয়ার নিতে গিয়ে। এসব রেহান ভালো করে জানে।
– এটার একটা সিক্রেট টিপস আছে। কাউকে বলি না।
– টিপস টা পাবলিক কর আমরাও শিখি।
– নো ওয়ে… সিক্রেট।।
এমন টুকটাক আড্ডা চলে সারাদিন।
রেহানের সাথে আমার ঝগড়া হয় ছোট ছোট বিষয় নিয়ে। এমন সব বিষয় নিয়ে ঝগড়া হবে যেগুলোর কোনো প্রয়োজন নেই, যেসব কথা হিসাবেও ধরা হয় না।
সন্ধ্যায় সাদিক আঙ্কেল আর ফুপি আসলো।
আম্মু আঙ্কেলকে সব খুলে বললেন। উনি গম্ভীর হয়ে গেছেন।
কিছুক্ষণ পরে আমাকে ডেকে নিয়ে আনিষার বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞেস করলেন।
আনিষা সম্পর্কে যতটুকু জানতাম উনাকে বললাম।
আম্মু বোঝানোর পরে আঙ্কেল বললেন
– ভাবি, সব বুঝতে পারছি। কিন্তু মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, এখন কিভাবে ওর ফ্যামিলির সাথে কথা বলি?।
– সাদিক ভাই, আনিষার বাবাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। দুটি ছেলে মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাক সেটা তো কেউ চাইবে না।
– তাহলে এই দায়িত্ব আপনি নিবেন। আপনার উপর ছেড়ে দিলাম। আপনি উনার সাথে যোগাযোগ করুন। তারপর তারা যদি আগ্রহী থাকে তখন না হয় আমিও যাবো।
আঙ্কেল আম্মুকে দায়িত্ব দিলেন।
ঠিক হলো আম্মুর সাথে আমাকে আর রেহানকে নিয়ে যাবে। আম্মু এখানে রেহানকে ছাড়া যাবে না।
আমার আম্মুর আমার থেকে বেশি রেহানের উপর আস্থা।
আম্মু রেহানদের বাসায় গিয়ে কথা বললেন।
ফাইজা আন্টি মানে রেহানের আম্মুর সাথে আমার আম্মুর অনেক ভালো সম্পর্ক। প্রতিবেশী হলেও উনারা দুই বোনের মতো চলেন। দুই পরিবারের মধ্যেও অনেক ঘনিষ্ঠতা।
পরদিন শুক্রবার, সকাল দশটার দিকে আমি,আম্মু, রেহান, ফাইজা আন্টি গেলাম আনিষাদের বাসায়।
আম্মু আগেই ফোনে কথা বলেছে আনিষার বাবার সাথে।
আমাদের খুব আপ্যায়ন করলো।
তারপর আনিষার বাবা শফিক সাহেব বললেন
– আনিষার বিয়ের কথাবার্তা সব ঠিক হয়ে গেছে। আজ সন্ধ্যায় রিং পড়িয়ে বিয়ের ডেইট ফিক্সড করা হবে।
আপনার যে বিষয়ে কথা বলতে এসেছেন, এখন আপনাদের আমি কি বলতে পারি? বুঝতেই পারছেন।
– ভাই সাহেব… ছেলে মেয়ে দুজনের মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে। এখন অন্য যায়গায় ওর বিয়ে দিলে ও কি সুখী হবে?
আমার অনুরোধ আপনি আরেকটা বার ভেবে দেখুন। রিং তো পড়ানো হয়নি।আর বিয়ের আসরেও কত বিয়ে ভেঙে যায়। খুব দেরি হয়নি এখনো।
আম্মু আনিষার বাবাকে বুঝাতে চেষ্টা করলো।
ফাইজা আন্টি বললেন
– কিছু মনে করবেন না শফিক সাহেব, আমি এমনিতে ওদের রক্তের কোনো আত্নীয় না।তারপরও ওরা আমার স্বজন। সে হিসাবে তাহসিনকে আমি চিনি।আর এ আমার ছেলে রেহান।রেহানেরও বন্ধু তাহসিন। ছেলে হিসেবে তাহসিনকে অপছন্দ করার মতো কোনো কারণ নেই।
কিন্তু আপনার ভাবনার বিষয় আমি বুঝতে পারছি।
দেখুন আর মাত্র ৫-৬ মাস পরেই তাহসিনের পড়াশোনা শেষ হয়ে যাবে। তারপর সে হয় ওর বাবার বিজনেস দেখবে নয়তো যেকোনো একটা চাকরি পেয়ে যাবে। আর আনিষা মাত্র সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে।
আপনি যদি ওকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার সুযোগ দিন, এদিকে তাহসিন ও নিজের ক্যারিয়ার গড়ে নেবার সময় পাবে।
আমরা তো সব কিছু ছেলে মেয়ের জন্য করছি তাই না? তাহলে ওদের চাওয়া, ভালো লাগা- মন্দ লাগা এ বিষয় গুলো যদি আমরা গার্জিয়ান, পরিবার বুঝতে না পারি তাহলে ওরা কোথায় যাবে?
আন্টি অনেক গুছিয়ে কথাগুলো বোঝালেন।
– আপনার কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু আমি যে কথা দিয়ে দিয়েছি।আমার কথার তো একটা মূল্য আছে। তাই না?
আমি চুপচাপ বসে আছি। রেহানও চুপচাপ বসে কথা শুনছে। গুরুজনেরা কথা বলছে সেখানে আমাদের কিছু বলা সাজে না।
কিন্তু আনিষার বাবা কিছুতেই বুঝতে চাইছে না।
রেহান আর চুপ করে থাকতে পারেনি।
– আঙ্কেল… বেয়াদবি না নিলে আমি কি কিছু বলতে পারি?
– হে বাবা.. বলো।
– আঙ্কেল.. আনিষা আপনার মেয়ে। আপনি ওর ভালো চান। আজকে আপনি যদি ওর বিয়ে টা অন্য যায়গায় দিন তাতে আনিষার মন ভেঙে যাবে। হয়তো আপনার কথা রাখতে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে করবে। কিন্তু বিয়ে তো দু’এক বছরের ব্যাপার না,সারাজীবনের। হয়তো ভালো ছেলে, সুখে রাখবে , কিন্তু সারাজীবন আনিষা মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাবে।
আর এমন ও হতে পারে যে বিয়ে না করে উল্টোপাল্টা কিছু করে বসে??
তখন?
তখন কি হবে সব কিছু দিয়ে? যদি আপনার মেয়েই না থাকে?
আপনার একটা মাত্র মেয়ে, ও যদি কষ্টে থাকে নিশ্চয়ই আপনারাও ভালো থাকবেন না।
প্লিজ আঙ্কেল… একটু ভেবে দেখুন।
রেহানের কথা শুনে আনিষার বাবার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। কিছু সময় মাথা নিচু করে গম্ভীর হয়ে ভাবলেন।
তারপর বললেন
– তুমি ঠিক বলেছো বাবা।আমার মেয়ের সুখ আমার কাছে বড়।
তারপর উনি আমাদের সামনে বসে ফোন করে বিয়ে ভেঙে দিলেন।
সাদিক আঙ্কেল আর ফুপিকে আম্মু ফোন করে আসতে বললেন।
উনারা আসার পরে আনিষাকে রিং পড়ালেন।
বিয়ে হবে আনিষার গ্রাজুয়েশন করার পর।
তাহসিনের ঝামেলা এতো তাড়াতাড়ি এতো সুন্দর ভাবে মিটে যাওয়ায় সবাই খুব খুশি।।
রেহানের জন্য সম্ভব হয়েছে। ও এতো সুন্দর ভাবে বুঝানোর জন্য শফিক আঙ্কেল রাজি হয়ে গেছেন।
তাহসিন তো রেহানকে জড়িয়ে ধরে পারলে মাথায় তুলে নাচে!!
অনেক দিন কোথাও যাওয়া হয় না। ঘুরতে যাওয়ার জন্য মন আকুপাকু করছিলো। এর মধ্যে একদিন খুশবু বললো
– দুর.. ভাল্লাগেনা।। দুস্ত চল না কোথাও ঘুরে আসি। কতদিন কোথাও যাইনি।
আমরা এখানে সবগুলো নাচনি বুড়ি,খুশবুর কথায় পেলাম ঢুলে বাড়ি!
– এবার ট্যুরে গেলে ইউনিক কিছু একটা চিন্তা করতে হবে।
ইউনিভার্সিটি লাইফের বেস্ট ট্যুর হবে।(অনি)
রেহান বললো – কই যাওয়া যায় বল তো।
– এবার ট্যুর সিলেট করা যায়।
তাহসিন সাজেস্ট করলো।
– আরে সিলেট তো সেই কবেই ঘুরে আসলাম। এক যায়গায় কতবার যাবি? ( খুশবু)
আমি বললাম
– সিলেট ঘুরেছি ঠিক,কিন্তু চা বাগানে ঘুরে মন ভরেনি। কিছু দিন চা বাগানে থাকতে পারলে ভালো হতো।
অনি লাফিয়ে উঠে বলে – আইডিয়া!
সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে অনির দিকে তাকিয়ে আছি।
– আমার ছোট মামা সেখানে একটা বাগানের ম্যানেজার। মামা প্রায়ই যেতে বলে, কিন্তু যাওয়া হয়না।
মামার বাংলো আছে। আমরা সেখানে থাকবে পারবো যতদিন খুশি।
– বাংলো!! চা বাগানের বাংলো মানেই ভৌতিক ব্যাপার স্যাপার।
ওরে বাবা… আমি যাবো না।
নাম শুনেই খুশবুর গলা শুকিয়ে গেছে।
চলবে….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *