প্রেমের পাঁচফোড়ন

প্রেমের পাঁচফোড়ন !! Part- 68

কাল আহানার জন্মদিন,সে আজ পর্যন্ত তার জন্মদিন কখনও পালন করেনি,নিজেরই মনে থাকে না তার,তবে মাঝে মাঝে নিজের ডাইরিটা খুললেই মনে পড়ে যায়,কারণ প্রথম পৃষ্ঠায় সুন্দর করে লিখা আছে তার জন্মদিন আর জন্মসাল
আজ সকালে ভার্সিটিতে আসার সময় যখন বইখাতা গুছাচ্ছিলো সে তখন তার হাত থেকে সব পড়ে গিয়েছিল,সে যখন সব গুছিয়ে রাখতেসিলো তখন চোখে পড়লো খোলা ডাইরিটা,যেখানে স্পষ্ট তার জন্মদিন কবে তা লিখা ছিল
শান্তকে বললে সে নিশ্চয় আহানার জন্মদিনটা অনেক বড় করে সেলিব্রেট করবে??
হুম করবে,কিন্তু আমি চাই না সেটা,আমি জন্ম হয়ে কোনো হাইফাই কাজ করিনি যে ঢাক ঢোল পিটিয়ে জানাতে হবে সবাইকে আমার জন্মদিন! আমার জন্মদিন!
.
আহানা!!কি ভাবো এতো?অফিস এসে গেসে
.
হুম

আজ অফিসে হয়ে গেসে এক তুমুলকান্ড,আর সেটা হলো নিহাল বিয়ে করেছে তাও কাকে?ববিকে😂
শান্ত হাসতে হাসতে একবার এক কোণায় যাচ্ছে
আহানা শান্তর হাসি দেখে সেও হাসতেসে,তবে তারা দুজনে কেন হাসতেসে কে জানে??
অফিস শেষ করে সন্ধাবেলায় শান্ত আহানাকে নিয়ে সেই লেকটায় আসলো,ফুচকা আর ঝালমুড়ি খাওয়ালো ওকে
ওমা এবার তার আরেক বাহানা,সে আইস্ক্রিম খাবে
শান্ত একজন আদর্শ স্বামীর মতন তার স্ত্রীর সব ইচ্ছা পূরন করে যাচ্ছে
এত এত খাওয়া দাওয়ার পর আহানা ঘুমিয়ে পড়েছে শান্তর পিঠে মাথা রেখেই
ও ঘুমিয়ে গেসে বুঝতে পেরে শান্ত ওকে আগলে রেখে ছিল এক হাতে আর আরেক হাতে বাইক চালিয়েছে
আহানা গভীর ঘুমে,মেয়েটার কি হলো কে জানে!!হাবিজাবি খাচ্ছে আর শুধু ঘুমাচ্ছে
এসব ভাবতে ভাবতে আহানাকে কোলে নিয়েই সে তার বাসায় ঢুকলো,আহানা জেগে গেসে ততক্ষণে,ঘুম ঘুম চোখে বলতেসে”শান্ত আমি আচার খাবো”

এটা শুনে শান্ত এমন ধমক দিয়েছে যে এখন সে শান্তর বুকে মুখ লুকিয়ে চোখের পানি মুছতেসে
শান্ত ওকে বিছানায় নামিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো
আহানা গাল ফুলিয়ে বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে,শান্তর বাসায় অনেকদিন পরে আসলো সে
শান্ত আপেল,কমলা আর আঙ্গুর নিয়ে আহানার হাতে ধরিয়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে চললো
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে আপেল খাচ্ছে,তারপর অর্ধেক খাওয়া আপেলটা বিছানায় রেখেই রান্নাঘরের দিকে গেলো,সারা রান্নাঘর খুঁজেও আচার পেলো না,শেষে মন খারাপ করে আবার রুমে ফিরে আসলো,বিছানায় বসতেই ওর মনে হলো বমি আসতেসে
পাগলের মত ছুটে বাথরুমে ঢুকে বমি করে দিলো ভেসিনে
শান্ত গায়ে সাবান লাগিয়ে স্টেচুর মত দাঁড়িয়ে আছে,দরজা লাগায় নি কারন আহানা কখনও না বলে বাথরুমে আসে না আর আজ কিনা সে রেকর্ড ভাঙ্গলো
আহানা মুখ ধুয়ে পিছনে চেয়ে দেখলো শান্ত রোবট হয়ে মুখটা গম্ভীর করে চেয়ে আছে
.
কি?
.
কি?
.
হলো তো!!আরও খাও উল্টা পাল্টা খাবার,এসব খেয়ে এখন বমি করতেসো,আর খেতে চাইলে চড় মেরে দিব,যাও বিছানায় গিয়ে বসো
.
আহানা ব্রু কুঁচকে চলে গেলো
শান্ত গোসল করে বেরিয়ে দেখলো আহানা নেই,চিন্তায় রুম থেকে বের হতেই দেখলো আহানা ডাইনিংয়ে বসে ভাত খাচ্ছে রাক্ষসের মত
শান্ত ওর পাশে চেয়ার টেনে বসে ওর গাল টিপে ধরে নাড়িয়ে চাড়িয়ে দেখলো
না সব তো ঠিক আছে তাহলে এমন অদ্ভুত আচরন করতেসে কেন??
খাওয়া শেষ এবার সে দুম করে উঠে শান্তর কোলে বসে পড়লো
শান্ত রীতিমত অবাক
.
আচ্ছা তোমার হলো কি বলোতো??

কিছুই না,বরকে আদর করা যায় না নাকি??
আহানা শান্তর খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে হাত ঘষতেসে যেন পাতিল মাজতেসে
শান্ত কোনো রকম ভাত খেয়ে আহানাকে টেনে রুমে নিয়ে গেলো,বাসায় আপাতত সূর্য আর রিয়াজ আছে,ওরা টিভি দেখতেসে ওদের রুমে,আর নওশাদ রুপাদের বাসায় গেসো
আহানাকে এনে জোর করে বিছানায় শুইয়ে দিলো সে
আহানাও ভালো মেয়ের মতন ঘুমিয়ে গেলো,চাইসিলো একটু রোমান্স করবে কিন্তু তার অনেক ক্লান্তি লাগতেসিলো বলে আর জেগে থাকলো না,ঘুমিয়েই গেলো
শান্ত সিগারেট খেতে খেতে ল্যাপটপে মুভি দেখতেসে,হরর মুভি
সেটা দেখা শেষে আহানাকে জড়িয়ে ধরে সেও ঘুমিয়ে পড়লো

রাত ১২টা বাজে বরাবর
শান্ত আহানাকে হ্যাচকা টান দিয়ে উঠিয়ে ফেললো
আহানা চোখ ডলতে ডলতে বললো”একটু ঘুমাতেও দিবেন না”?
.
শুভ জন্মদিন আমার পাতানো+রিয়েল বউ😎
.
আহানা চমকে চেয়ে আছে শান্তর মুখের দিকে
“উনি জানলেন কি করে”
শান্ত উঠে গিয়ে একটা কেক নিয়ে আসলো,ছোট একটা কেক
কেক বিছানায় রেখে আহানার দিকে তাকিয়ে বললো”তুমি বলা ছাড়া আর কোনো ওয়ে নাই নাকি যে আমি জানবো না এ ব্যাপারে??
.
কি করে জানলেন
.
তোমার ডাইরি পড়সি
.
আপনি সেটা পেলেন কই?

তুমি যত কিছু আমার থেকে লুকিয়ে রাখসো তার সব আমার দেখা হয়ে গেছে
.
😒তার মানে
.
হ্যাঁ,ছোটখাটো জামাকাপড় ও😁😎
.
আপনি একটা অসভ্য লোক!!
.
আচ্ছা ওসব বাদ দাও এখন,কেক কাটো
.
আহানা কেক কেটে শান্তকে খাইয়ে দিয়ে বাকি পুরো কেকটা গাপুসগুপুস করে সাবাড় করে দিলো
তারপর চোখ বড় করে বললো”” রিয়াজ,সূর্য ভাইয়ার জন্য তো রাখলাম না””
.
কাল কেক আরও একটা আনবো বড় দেখে,তখন খাবে ওরা
এখন হাত বাড়াও তো দেখি
.
কেন😒
.
বাড়াও না
.
আহানা হাত বাড়িয়ে ধরলো
শান্ত তার প্যান্টের পকেট থেকে এক জোড়া চুড়ি বের করে আহানার হাতে পরিয়ে দিলো
.
বাহহ,এটা কি সোনার??
.
জি
.
আপনি এমন কেন বলেন তো,এমনিতেও মাসে কত খরচ যায় আমাদের এর ভিতরে এত দামী গিফটের কি দরকার ছিল??
.
এইটা বাবার টাকায় কিনেছি,বাবা কাল টাকা পাঠিয়েছিলো,আমি আমার বেতনের টাকা জমিয়ে সেই টাকা শোধ করে দিব আস্তে ধীরে
.
তাও এত দাম দিয়ে এটা কিনা ঠিক হয়নি
.
চুপ!তোমার হাতে চুড়ি ছিল না বলেই আনছি আমি
.
এমিটিশনের ও আনা যেতো না?
.
তুমি অফিস যাও যে আমি কিছু বলছি?তোমার ইচ্ছা অনিচ্ছায় আমি নাক গলাই না
তুমিও আমার ব্যাপারে নাক গলাবা না ব্যস!
.
আপনার সাথে কথা পাগলে বলে
.
হ্যাঁ আর তুমি মহাপাগল কারণ তুমি তো আমাকে সোজা বিয়েই করে নিসো
.
হুহ!
.
যাও ঘুমাও,সকাল সকাল উঠে কত কাজ আছে সেটা করতে হবে
.
আহানা সাথে সাথে চাদর মুড়িয়ে দুম করে শুয়ে পড়লো

শান্ত সকাল সকাল চোখ খুলে দেখলো আহানা এখনও ঘুমাচ্ছে,কাল রাতে এত তাড়াতাড়ি ঘুমাতে গেলো সে
তার উপর সকাল ৯টা বেজে গেসে সে কিনা এখনও ঘুমাচ্ছে
না ওকে ডাক্তার দেখাতেই হবে,কিছু তো হয়েছে ওর
.
শান্ত গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো আহানা বালিশ কোলে নিয়ে আরামসে ঘুমায়
.
আহানা উঠো,ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করো,বুয়া নাস্তা বানায় দিসে,উঠো!
.
উহু
.
ভার্সিটিতে যাবা না??অফিস যাবা না?,উঠো!
.
হুম,উঠতেসি
আহানা আর শান্ত নাস্তা করে সোজা ভার্সিটিতে আসলো
আহানার হাবভাব দেখে রুপা বললো ডাক্তার দেখাতে
আহানার ও মনে হচ্ছে সে মা হতে চলেছে,শান্তকে সারপ্রাইজ দিবে বলে চুপিচুপি ক্লাস মিস দিয়ে হসপিটালে গেলো সে,প্রেগনেন্সি কিট দিয়েও পরীক্ষা করা যেতো কিন্তু আহানার মনে হলো তার রক্তশূন্যতার কারণে হয়ত সে বমি করছে মাথা ঘুরাচ্ছে,তাই একেবারে হসপিটালে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে শিউর হয়ে বাসায় ফিরবে সে
শান্তর আজ পরীক্ষা চলে,সে পরীক্ষা দিচ্ছে আর আহানা তার রিপোর্টের জন্য বসে আছে,ডাক্তার দেখে বললেন আহানা প্রেগন্যান্ট আর রিপোর্টেও সেটাই আসছে
আহানা খুশিতে এক লাফ দিলো তারপর হেসে বাড়ি ফিরতে যেতেই পিছন থেজে কেউ একজন ওকে ডাক দিলো
আহানা থেমে সেদিকে তাকিয়ে দেখলো ডাঃ রোস্তম
আহানা উনাকে সালাম করে জিজ্ঞেস করলো কেমন আছে আর আমেরিকা থেকে কবে এসেছেন
উনি আহানার দিকে চেয়ে মুখটা ফ্যাকাসে করে বললেন তার কেবিনে আসতে
আহানার মনে পড়লো ডাক্তার এক মাস আগে তাকে আর শান্তকে কিছু বলতে চেয়েছিলেন
তাই সে গেলো উনার সাথে
.
তো আপনার শরীর কেমন এখন?
.
এখন বেশ ভালো আছি
.
তাহলে ভালো,আসলে সেদিন আমি একটা কথা বলতে চেয়েছিলাম নেটের সমস্যার কারণে বলা হয়ে ওঠেনি,তো কথা হলো আপনার প্রেগনেন্সি নিয়ে
.
মানে?
.
আপনার রিপোর্ট দেখে বুঝলাম আপনার শরীরে নিজ থেকে রক্ত উৎপন্ন হয় না,যার কারণে আপনাকে ঔষুধের একটা কোর্স করতে হবে,কারণ প্রতি বছরের একবার একজনের রক্ত দেওয়া মোটেই ভালো কথা নয়
আপনার শরীর কোর্সটার সাথে মানিয়ে নিতে পারলে সময় লাগবে ১/২বছর,আর না মানলে ৩/৪বছরের উর্ধে সময় লাগবে
.
তাহলে?
.
এসময়ে আপনি যদি বাই চান্স মা হয়ে যান তাহলে আপনার এবং আপনার সন্তানের লাইফ রিস্ক আছে,আমি জাস্ট বলতে চাচ্ছি কোর্স শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনি বাচ্চা নিবেন না
.
মানে কি!!
আহানা কপালের ঘাম মুছে টেবিলে থাকা পানি এক গ্লাস খেয়ে শান্ত হয়ে বললো”লাইফ রিস্ক কেন হতে যাবে?”
.
কারণ বাচ্চা প্রসবের সময় আপনার প্রচুর রক্ত ক্ষয় হবে,নরমাল করলেও,সিজার করলেও
আর সেখানে অনেক নরমাল পেশেন্টের ক্ষেত্রে দেখা যায় রক্ত ৩/৪ব্যাগ লাগে
আর আপনার তো তখন কি অবস্থা হতে পারে তা বলার বাইরে!!
রক্ত জোগাড় করলেও এক ব্যাগ দিতে সময় লাগবে ৮/৯ঘন্টা আর আপনাকে তখন অনেক রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হবে তাও জলদি
তাই আমি বলতেসি আপনারা রিস্ক নিবেন না
.
আহানা ঢোক গিলে আবারও কপালের ঘাম মুছলো,তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো “বাচ্চাকে বাঁচানো যাবে তো??”
.
আপনি এটা কি বলতেসেন??আপনি রিস্ক না নিলেই তো হয়

আসলে আমি তো এতসব জানতাম না,আমি অলরেডি কনসিভ করসি,আজকে পরীক্ষা করলাম
.
হোয়াট!!!!
আমার উচিত ছিল যে করেই হোক আপনাদের বিষয়টা জানানোর
.
এখন কি করবো আমি??
.
আই থিংক আপনার এবোরশান করানো উচিত
.
আহানা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো,ডাক্তারের সাথে কোনো কথা না বলেই সে বাসায় ফিরে আসলো
রুমের এক কোণায় ফ্লোরে বসে আছে সে
শান্ত পরীক্ষা শেষ করে তার বাসায় এসে ডেকোরেশনের সব ঠিকঠাক করলো,আহানার জন্মদিন এখানে পালন করবে সে,আহানা তো মনে হয় তার বাসায়
“যাই একবার দেখে আসি ওকে”
শান্ত আহানার বাসায় এসে দরজায় নক করলো
দরজার ওপার থেকে শান্তর গলা শুনতে পেয়ে আহানা ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো,চোখ মুখ মুছতেসে সে
শান্ত আর দেরি না করে পকেট থেকে চাবি নিয়ে বাসায় ঢুকলো
.
আহানা কোথায় তুমি?
.
সোফার সামনে টেবিলের উপর রিপোর্ট, দেখে নতুন রিপোর্ট মনে হচ্ছে,আহানার সব রিপোর্ট চেনে শান্ত,তাই এটা ঠিক চিনতে পারলো না সে
তাই হাতে নিয়ে খুলে দেখতে লাগলো
আহানা মুখটা ধুয়ে মুছে নরমাল হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে দেখলো শান্তর হাতে রিপোর্টটা
শান্ত রিপোর্ট থেকে চোখ উঠে দৌড়ে এসে আহানাকে জড়িয়ে ধরলো,খুশিতে তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না
আহানাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুরতে লাগলো সে
আহানা শান্তর চোখেমুখে এত খুশি দেখে কি বলবে বুঝতেসে না সে
শান্ত হাসতে হাসতে আহানাকে সোফায় বসিয়ে হাঁটু গেড়ে ওর সামনে বসলো
দুহাত দিয়ে ওর মুখ ধরে ছলছল চোখে তাকিয়ে থেকে আহানার কপালে চুমু খেলো সে
.
আহানা তুমি জানো না তুমি আমাকে কি খুশি দিয়েছো

আহানা থ হয়ে বসে আছে,মুখ দিয়ে তার এক ওয়ার্ড ও বের হচ্ছে না
.
কি হলো আহানা?তুমি এমন চুপ করে আছো কেন?
.
শান্ত নিশ্চয় এবোরশনের জন্য রাজি হয়ে যাবে,কিন্তু আমি আমার বাচ্চাকে কি করে….
না আমার মা বাবা আমার সাথে যা করেছে আমি আমার সন্তানের সাথে কখনও এমন করবো না,কারন তার তো কোনো দোষ নেই
কিন্তু শান্তর তো এটা জানা উচিত!
শান্ত আহানা উত্তর না পেয়ে উঠে নওশাদ রুপাকে, বাবাকে খুশির খবর জানিয়ে দোকানে গেলো মিষ্টি কিনতে
আহানা বারান্দা দিয়ে শান্তর খুশি দেখতেসে
সে দাদাকে জড়িয়ে ধরে বলতেসে খুশির খবর আর মিষ্টি খাওয়াচ্ছে
চলবে♥