পূর্ব রোদ

পূর্ব রোদ !! Part- 03

সিঁড়ির উপর দাঁড়িয়ে পূর্ব সব কথা শুনছিলো।পূর্ব ভয়ে ভয়ে ছিলো না জানি ঐ মেয়ে কীভাবে প্রতিশোধ নেয়।কিন্তু এখন তার মায়ের ডিসিশন শুনে নিশ্চিন্ত হলো!যাক তাহলে আপদটা বিদায় হবে।এর চেয়ে খুশির খবর পূর্বের কাছে আর কিছুই হয় না।

“মামুনিইইইই..ও মামুনিইইই!”
বাড়ির দরজা খুলা পেয়ে রোদ ঢোকা মাত্রই চেচিয়ে তার মামুনিকে ডাকতে লাগলো।ছাঁদযুক্ত চার রুমের একটি ইটের দালানে রোদের ফ্যামেলির বসবাস।ফ্যামেলি বলতে রোদের মামুনি “মিসেস ছায়া” আর তার ছোট বোন “আলো” আছে।রোদের বাবা তিন বছর আগে মারা যায়।মূলত তার বাবাকে দেওয়া কথার জন্য রোদ পূর্বের বাড়িতে এখনো আছে।নয়তো অনেক আগেই বাবার বাড়ি চলে আসতো।
“কী রে তুই একা এলি?জামাই আসেনি?” (ছায়া)
তার মামুনির কথায় রোদ ধূলাপড়া স্মৃতি থেকে বেরিয়ে এলো।মামুনির কথা খেয়াল করতেই ভিষণ রেগে বললো,
“প্রায় তিন মাস পর তোমার সাথে দেখা হলো আমার আর তুমি কি’না হরিচন্দনের কথা জিজ্ঞেস করো?মামুনি তুমি সত্যি করে বলোতো আমি তোমার মেয়ে নাকি ঐ কান কাটা হরিচন্দন তোমার ছেলে?”
শেষের কথাটি রোদ দাঁতে দাত চেপে বললো।এমনিতে প্রতিশোধ নিতে না পেরে জীবনটাকে হ্যাল মনে হচ্ছে..তারপর মামুনির ন টাংকি!
“ভদ্রভাবে কথা বল।পূর্ব তোর বর হয়।”
“বর!বর!বর!আমার মাথা খারাপ করে রেখে এই একটি শব্দ।”
“টাস করে চড় বসিয়ে দিবো।ফাজিল মেয়ে!”
মামুনির কথা শুনে রোদের নিজেকে অসহায় মনে হলো।উপরে ছাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আল্লাহ দুনিয়ার এতো মানুষ উঠাই নাও তুমি। আমাকে কী চোখে পড়ে না?”
“উফফ আপি!আসতে না আসতেই বাজে কথা বলতে শুরু করেছো?”
নাকের ঢগার উপর থাকা চশমা ঠিক করে রোদের ছোট বোন আলো ধমকের সুরে বললো।
“বাজে কথা মামুনি শুরু করেছে।মামুনি আমি আসছি বলে তুমি খুশি হওনি?তাই না?পূর্ব’কে লাগবে তোমার?”
“আহা!রাগ করিস না।তুই এসেছিস আমি খুব খুশি হয়েছি।মন দিয়ে পড়াশোনা করবি এখন।ঠিক আছে?”(মামুনি)
“হুম।”
“আপি তুই একা এসেছিস?আই মিন এতো দূর একা আসলি?”
“বাবাই অফিসে যাওয়ার সময় নামিয়ে দিয়ে গেলো।তাড়া আছে তাই তোদের সাথে দেখা করেনি।”
“ওহ।জি…”
“খবরদার হরিচন্দনরে জিজু বলবি না।নাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না।”
আর এক সেকেন্ডও অপেক্ষা না করে গমগমিয়ে রোদ উপরে উঠে গেলো।আলো চোখের চশমা ঠিক করে বিড়বিড় করতে করতে বললো,”জিজু কখন বললাম আমি?’জিরিয়ে নে’ এইটা বলছিলাম।আজব!আজ কাল কারো ভালো করতে নেই।”

দুপুরের সময় পূর্ব জায়নামাজ থেকে উঠে দাঁড়াতেই তার কানে মায়ের কন্ঠ ভেসে আসলো।
“পূর্ব তুই নামাজ পড়েছিস?”
“হ্যা মা!তুমি ভাবতেও পারবে না আল্লাহ আজকে আমার কত্তো বড় হেল্প করেছে।থ্যাংকিউ আল্লাহ!”
চাঁদনির বুঝতে বাকি রইলো না যে পূর্ব কোন হেল্পের কথা বলছে।শান্ত স্বরে পূর্বের উদ্দেশ্য বললেন,
“খু-ব খুশি হয়েছিস রোদ চলে যাওয়ায়?”
“ভি-ষ-ণ!এসএসসি পরিক্ষায় গোল্ডেন এ+ পেয়েও আমি অতো খুশি হয়নি।যাক বাবা!আপদ বিদায় হয়েছে।”
“তুই রোদ’কে আপদ বলছিস?”
“হ্যা।আপদই তো।সারাক্ষণ ঝগড়া করে।দু সেকেন্ডও শান্তি পাই না।”
“পূর্ব সত্যি করে একটা কথা বলবি?”
পূর্বের মনে হলো তার মা সিরিয়াস কিছু নিয়ে কথা বলবে।তাই সে জিজ্ঞেসো দৃষ্টিতে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো।মাতা তার পুত্রের দৃষ্টি বুঝতে পেরে বললেন,
“এই যে রোদ’কে এতো ঘৃণা করিস,দু চোখে দেখতে পারিস না।তার আসল কারণটা ঠিক কী?”

তার মায়ের প্রশ্ন শুনে পূর্ব থতমত হয়ে গেলো।সে কোনো দিন নিজের মনকে প্রশ্ন করেনি ‘কেন রোদকে দু’চোখে দেখতে পারে না?’কিন্তু আজ তার মায়ের কথা শুনে খুব জানতে ইচ্ছে করছে এতো ঘৃণা কেনো?মনেমনে উত্তর তৈরি করে তার মাকে বললো,
“আসল নকল কিছু নেই।ছোট বেলায় তুমি ও কে আমার থেকে বেশি আদর করতে,যে জিনিসটা দুজনের পছন্দ হতো সেটা তুমি আমাকে না দিয়ে ও কে দিয়ে দিতে।সব কিছুতে তুমি আর বাবা অলওয়েজ ও কে ইম্পর্ট্যান্টস দিতে।তাই হয়তো ছোট বেলা থেকে ওর সাথে আমার সাপ-বেঁজি’র সম্পর্ক।আর এমন ঝগড়া করতে করতে বড় হয়েছি যে এখন আর ও কে ভালোর দৃষ্টিতে দেখতে পারি না।”
“তোর মতো একই কথা রোদ বলেছে।আমরা চাই তোরা যেনো অলওয়েজ হ্যাপি থাক।বিয়েটা কোনো ছেলে খেলা নই!ইসলামিক বিধানে তোমাদের বিয়ে হয়েছে…”
“কেনো মা?ওর সাথে আমার বিয়েটা কেনো দিলে?”
“কারণ রোদ যথেষ্ট লক্ষী একটা মেয়ে!খু-ব ভালো!তুই আড়ালে ওর স্বভাব দেখিস নিজেই মুগ্ধ হয়ে যাবি।”
“দরকার নেই।জাদুমন্ত্রীকে আমার চেয়ে ভালো আর কেউ চিনে না।হুহু!”
“আজকে খুব বেশি বাড়াবাড়ি করেছিস।রোদের চেহারা লাল হয়ে গেছে।খুব কাঁদছিলো মেয়েটা!কষ্ট দিয়েছিস বেশি।”
কথাটি বলে পূর্বের মা রুম ত্যাগ করলো।শেষের কথাটি পূর্বের কানে বাজছে।”খুব কাঁদছিলো মেয়েটা!কষ্ট দিয়েছিস বেশি!”কথাটি ভাবতে ভাবতে নিজের পায়ের দিকে দৃষ্টি পড়লো।মুহুর্তেই রোদের জন্য যে আফসোস হচ্ছিলো তা উবে গেলো।বিড়বিড় করে বললো,
“খুব ভালো করেছি।আমার পায়ের নাজেহাল অবস্থা আর মা কি’না জাদুমন্ত্রীর কথা বলে?আসলেই ঐ বেঁজি’টা কালো জাদু জানে।”

“রোওওওওদ!”
“আরে আস্তে চিল্লাস কেন রাফিয়া?”
“রোদ শেষমেশ তুই শ্বশুরবাড়ি থেকে এলি।ইয়াহুওওও!”
“পরিক্ষা শেষ হলে চলে যাবো।তোর কী অবস্থা?”
“আমি তো জোশ আছি।রোদ জানিস পাশের বাসা ভাড়াটিয়া যে আসলো গত মাসে..উফ কী কিউট!”
রোদ আড়চোখে রাফিয়ার দিকে তাকালো।রাফিয়া চোখ বন্ধ করে যেনো ছেলেটার সাথে কল্পনা জগতে ভাসছে।রাফিয়া হলো রোদের ক্লাসমেট।তাঁর সাথে রোদের পাশের বাড়িতে থাকে।তাই রোদ এসেছে খবর পাওয়া মাত্র ছুটে এসেছে।রাফিয়া’র বন্ধ চোখের সামনে থুড়ি বাজিয়ে রোদ বললো,
“তোর মতো বারোবাতারি আমি আর দোখি নাই।আজ এর উপর ক্রাশ তো কাল আরেক জনের উপর।ছিঃ!”
“এইটা আমার দোষ না।যাদের উপর ক্রাশ খাই ওদের যদি গার্লফ্রেন্ড,বউ থাকে তাহলে তো ক্রাশ খাওয়া বেকার।তোর বরের উপরও তো আমি ক্রাশ খাইছি।আফসোস তুই জুটে গেছিস ওর কপালে!”
রাফিয়া আফসোস করে কথাটি বললেও মুহুর্তের মধ্যে রোদ রেগেমেগে বললো,
“তোকে আমি হাজার বার বলছি হরিচন্দন’কে আমার বর বলবি না।আর এতোই যখন ক্রাশ খাইছিস তখন বিয়ে করে নেয় না।এ্যট লিস্ট আমি তো উদ্ধার হবো।কোত্থেকে আসে এই পাগল ছাগল?”
রাফিয়া’কে এড়িয়ে রোদ সোফায় বসলো।গুটিগুটি হেঁটে রাফিয়া রোদের পাশে বসলো।এবারে রোদকে ভালোভাবে লক্ষ্য করে বললো,
“তোর মুখ-হাত এমন কেনো?লাল লাল,ফোলা?”
“সকালবেলা চুনকানি পাতা লাগিয়ে দিয়েছে।এই জন্য আম্মি আমাকে এবাড়িতে পাঠিয়ে দিলো।প্রতিশোধই নিতে পারলাম না।”
রোদের কথা শুনে রাফিয়া কিঞ্চিৎ রেগে গেলো।পূর্ব তার ক্রাশ হলেও রোদ তার বেস্ট ফ্রেন্ড।রোদ তাকে নিজের দোষ আড়াল করে পূর্বের দোষটা বললো শুধু।তাই রাফিয়া রেগে গিয়ে বললো,

“চুলকানি পাতা তুইও লাগিয়ে দিবি।আমি এনে দিবো তোকে।”
“নাহ রে!চুলকানি পাতা লাগিয়ে দিলে আমার শান্তি হবে না।এরচেয়ে বড় কিছু করতে হবে।”
দু’জনে কিছুক্ষণ ভাবার পর রোদ বললো,
“তোর বাইকটা এখনো আছে?”
“হ্যা।বাইক দিয়ে কী হবে?”
“আমার মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে।শুন….”
রাফিয়া’কে পুরা বিষয়টা রোদ বুঝিয়ে দিলো।প্ল্যান শুনে রাফিয়া বললো,
“না না রাতে না!তুই জানিস আমার ভূতে ভয় করে।”
“চুপ।ভূত তোর মতো পেত্নী দেখলে দৌড়ে পালাবে।হরিচন্দনে’র কর্মের পাল্টা জবাব না দিলে রাতে আমার ঘুম হবে না।”

রাত বারোটা বাজতেই দেয়াল ঘড়িতে “টাং” শব্দ হলো।ঘড়ি’র আওয়াজে পড়াশোনা থেকে রোদের ধ্যান উঠে গেলো।রোদ মেবাইল নিয়ে রাফিয়া’কে মেসেজ দিলো।চুপিচুপি ড্রয়ার খুলে চারকোনা একটি বক্স বের করলো।বিছানায় দিকে তাকিয়ে দেখলো “আলো” নাক ঢেকে ঘুমাচ্ছে।হঠাৎ রোদের মোবাইলে মেসেজ আসলে দেখলো রাফিয়া “ডান!” লিখেছে।চুলগুলা উঁচু করে বেঁধে ফেললো।জানালার পাশে গিয়ে দেখলো রাফিয়া ‘মই’ আটকে দিয়েছে জানালর সাথে।চুপিচুপি রোদ মই বেয়ে নেমে পড়লো।নিচে গিয়ে দেখলো রাফিয়া দাঁড়িয়ে আছে।
“বাইক কোথায়?”
“গেইটের বাইরে।মই কী লাগিয়ে রাখবো?”
“নাহ সরিয়ে ফেল।”
মই সরিয়ে রোদ আর রাফিয়া বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।আধঘন্টা বাইক চালানোর পর রাফিয়া বললো,
“বাইক কী পূর্বের বাড়ির সামনেই রাখবো নাকি একটু দূরে?”
“দাঁড়া দাঁড়া!”

রোদের কথা শুনে রাফিয়া বাইক দাঁড় করালো।সামনে “মোহাম্মদ মঞ্জিল” দেখা যাচ্ছে।বাড়ির গেইট খোলা পাওয়ায় রাফিয়া আর রোদ বাড়ির উঠানে প্রবেশ করে রোদ মই নিয়ে আসলো।মই বেয়ে পূর্বের রুমের জানালার সামনে দাঁড়ালো।জানালা দিয়ে রোদ দেখলো পূর্বের রুমে ওর কয়েকজন বন্ধু আছে।সবাই মিলে খুব মনোযোগ দিয়ে কার্ড খেলছে।মোট চারজন আছে ওরা।রোদ বাকা হাসি দিয়ে মনেমনে বললো,”আমি চলে যাওয়ার খুশিতে বন্ধুদের নিয়ে কার্ড খেলা হচ্ছে?বাট সরি হরিচন্দন!একটু পরে তোর সব হাসি হাওয়ায় মিলে যাবে!”আবার মই দিয়ে নিচে নেমে রাফিয়া’কে বললো,
“রাফিয়া তুই এখানে দাঁড়া।আমি কারেন্ট সার্কিটের মেইন সুইচ অফ করে আসি।”
“রোদ ভয় কর..করছে!”
“ভূত দেখলো ওর সাথে সেল্ফি তুলে রাখিস!”
রোদ মেইন সুইচ অফ করতেই বাড়ির ভিতর হালকা হইচই শুরু হলো।চুপিচুপি পূর্বের জানলার সামনে মই বেয়ে উঠে বক্সে করে আনা “তেলেপোকা” ছেড়ে দিলো।মুহুর্তেই পূর্বের রুম থেকে চেচামেচি শুনা গেলো।রোদ শয়তানি হাসি দিলো।রোদের হাসি বেশিক্ষন স্থায়ী হলো না কারণ এর মধ্যে রাফিয়া’র চিৎকার শুনা গেলো।
(চলবে)
বি.দ্রঃভূলক্রটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি❤