তোকে চাই

তোকে চাই – Season 2 ! Part- 63

সাহেল ভাইয়ার কন্ঠে ঘাড় ফিরিয়ে দরজার দিকে ফিরে তাকালাম আমি। আমি তাকাতেই মুচকি হাসলেন উনি। উনার পেছন থেকে বেরিয়ে এলেন একটি মেয়ে। নিঃসন্দেহে অসম্ভব সুন্দরী একটি মেয়ে। মেয়েটির সাথে চেহারায় কোনো মিল নেই আমার কিন্তু কোথায় একটা খুব মিল। আমি অবাক চোখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। মেয়েটি ধীর পায়ে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েই বলে উঠলো,
— রোদ! রাইট?
আমি মাথা নাড়লাম। মেয়েটি মিষ্টি করে হাসলো। মাথা দুলিয়ে বলে উঠলো,
— সাহেল না বললেও আমি চিনে ফেলতাম তোমায়। এই কয়েকমাস সাহেলের থেকে তোমার এতো ডেসক্রিপশন শুনেছি যে “রোদ” নামক মানুষটা এখন পুরো মুখস্ত আমার। এর পরেও যদি না চিনতে পারি তাহলে সেটা আমার ব্যার্থতা। (একটু থেমে) তুমি আসলেই অনেক কিউট। সাহেল যেমনটা বলেছিলো তার থেকেও বেশি কিউট!
আমি হাসলাম। হাসিমুখেই বলে উঠলাম,
— আপনি আমার থেকে আরো বেশি কিউট আপু।
আমার কথায় আবারও হাসলেন উনি। শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
— শুভ্র? তোর বউয়ের কথাগুলোও কি মিষ্টি রে।
শুভ্রকে “তুই” করে সম্বোধন করায় অবাক হলাম আমি। চোখ বড় বড় করে শুভ্রর দিকে তাকাতেই মুচকি হাসলেন উনি। হাসিমুখেই বলে উঠলেন,
— আমি কিন্তু খুব অবাক হয়েছি। তুই এতোদিন পর? হঠাৎ হারিয়ে গিয়েছিলি আবার হঠাৎই উদয় হলি। তাও এক্কেবারে এই ছাগলটার বউ হয়ে। তারমানে তুই আমার ভাবি? ওহ মাই গড।
আবারও হাসলো মেয়েটি।৷ এই মেয়ে কি হাসি ছাড়া কথা বলতে পারে না নাকি? মেয়েটা হাসিমুখেই বলে উঠলেন,
— হুট করে বাবার পোষ্টিং হয় কোলকাতায় তাই হুট করেই ওখানে চলে যাই। কাউকে বলার সুযোগ হয়ে ওঠে নি। এতোবছর পর দেখা হবে ভাবতেও পারি নি। একদিন হঠাৎ করেই এয়ারপোর্টে এই হিরোর সাথে দেখা হলো। বিয়ের বয়সটাও হয়ে গেছে ছেলেও মাশআল্লাহ ফিট খাওয়ার মতো তাই ভাবলাম বিয়েটা করেই নিই।
ওদের কথা শুনে বুঝতে পারলাম উনাদের পুরোনো পরিচিতি। শুভ্র হয়তো আরো কিছু বলতেন তার আগেই সাহেল ভাইয়া আপুটাকে এক হাতে জড়িয়ে নিয়ে বলে উঠলেন,,
— হয়েছে ম্যাডাম। বাকি গল্প করার জন্য অনেক সময় আছে এখন ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিন। শরীরের নাই ঠিক আর এসেই গল্প শুরু করে দিয়েছে।সানশাইন? আমাদের জন্য কোন রুম? আসলে এতো লম্বা জার্নি করে এসেছি।৷আমারটা বাদ দিলেও নাবিলার রেস্ট দরকার খুব।
— জি ভাইয়া। ওপরের তলায় আমাদের পাশের রুমটায়।
— ওহ থেংক্স। কিন্তু বাকি সবাই কোথায়?
— ভাইয়া আর মামু অফিসে। আপু রুমে রেস্ট নিচ্ছে। দিদা আর মামানি একটু বাইরে গেছেন।(এক নিঃশ্বাস)
আমার কথা শেষ হতেই হেসে উঠলেন সবাই। শুভ্র আমার দু’কাঁধে হাত রেখে মুখে হাসি টেনে বলে উঠলেন,
— একটু নিঃশ্বাস নাও মহারানী। দম ফুরিয়ে যাবে তো। এই সাহেল? তোরা যা…রেস্ট নে।
— ওকে।
🍁
রুমে বসে টিভি দেখছিলাম। ঠিক তখনই ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলেন শুভ্র। হাত থেকে রিমোটটা ছিনিয়ে নিয়ে টিভিটা অফ করে দিলেন উনি। আমি রাগী চোখে তাকাতেই মিষ্টি হেসে বিছানায় শুয়ে পড়লেন । ডানহাতে আমাকে টেনে বুকের উপর ফেলে শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলেন,
— টিভিতে কি দেখো? এতো সুন্দর একটা হাজবেন্ড থাকতে কেউ টিভি দেখে? তার থেকে আমাকে দেখো।
আমি নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা চালালাম। উনি আমাকে আরো জোড়ে শক্ত করে চেপে ধরলেন। কিছুক্ষণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে চুপ করে শুয়ে রইলাম আমি। ধীর কন্ঠে বলে উঠলাম,
— সাহেল ভাইয়ার বউকে কেমন লাগলো আপনার?
— ভালো।

— শুধু ভালো? আর কিছু না?
— বলার মতো আর কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। তবে তুমি আর নাবিলা একদম বিপরীত দুটো ক্যারেক্টার তবুও অদ্ভুতভাবে তোমাদের দু’জনের মধ্যে বেশ মিল আছে।
উনার কথায় ভ্রু কুঁচকালাম আমি।
— যেমন?
— তোমাদের স্কিনটোন সেইম। গায়ের রঙের সাথে আরেকটা জিনিস মিলে তা হলো গলায় ওই তিল। আর সবচেয়ে মিল যে জায়গাটা তা হলো হাসি। একদম একরকমভাবে হাসো তোমরা দু’জন। চেহারা মিল না থাকলেও হাসলে কেমন যেন একরকম লাগে দু’জনকে।
— আর অমিল কোনগুলো?
— নাবিলা আমার রোদপাখির মতো এতো রাগী না। একদমই চুপচাপ। আমার বউয়ের মতো এতো বকবক আর শয়তানী বুদ্ধি ওর মাথায় নেই। আমার জানা মতে, আজ যেটুকু কথা বললো সেটাই ওর জন্য সবচেয়ে বেশি কথা বলা। আর আমার বউয়ের ক্ষেত্রে আজকেই তার সর্বনিম্ন কথা বলা। নাবিলা খুবই বুদ্ধিমতি একজন মেয়ে। ভাবনা-চিন্তা এবং ঠান্ডা মাথার মানুষ সে। আর তুমি তো…
— থাক! আর বলতে হবে না। দিন দিন আপনার ঝুলিতে আমাকে নিয়ে প্রবলেমগুলো বেড়ে যাচ্ছে। আমি সত্যিই ফাউল একটা মেয়ে। সেদিক এক্সিডেন্টলি বিয়েটা হওয়ার ফলে লাইফটায় নষ্ট হয়ে গেছে আপনার। ছাড়ুন প্লিজ…!
— কি বলছো এসব রোদ?
— ছাড়ুন আমায়।
— আরে বাবা! হঠাৎ করে কি হলো বলবে তো।
— কিছুই হয় নি। ছাড়ুন আমায়। আসলেই আপনার নাবিলা আপুর মতো বউ দরকার ছিলো। ব্যাপার না, আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি সেটা গ্রেন্টেড বলে আমার পর ওমন গোছালো টাইপ মেয়ে বিয়ে করে নিয়েন। এবার আমি তাড়াতাড়ি মরে…
এটুকু বলতেই আবারও গালে পড়লো শক্ত হাতের এক চড়। আমাকে বুক থেকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে পাশের টেবিল ল্যাম্পটা ছুঁড়ে মারলেন দেয়ালে। মুহূর্তেই ঝনঝন শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে গেলো আমার। আমি স্তব্ধ হয়ে বসে আছি। ল্যাম্পের পাশে রাখা কাঁচের জগটাও ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেললেন উনি। ঠিক তখনই দরজার ওপাশ থেকে সাহেল ভাইয়ার কন্ঠ ভেসে এলো,
— শুভ্র? কি হয়েছে?
সাহেল ভাইয়ার কন্ঠ কানে আসতেই জোড়ে নিঃশ্বাস ফেললেন শুভ্র। নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলে উঠলেন,
— নাথিং ইয়ার। হাত লেগে ল্যাম্পটা পড়ে গেছে। তোরা রেস্ট নে।
— সিউর?
— ইয়াহ!
সাহেল ভাইয়া দরজা থেকে সরে যেতেই আমার দিকে ফিরে তাকালো শুভ্র। আমি মাথা নিচু করে বসে আছি চুপচাপ। উনি আবারও আমার কাছে এসে বসলেন। হাত টেনে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বললেন,
— মেরেছি বলে রাগ করেছো?
আমি মাথা নাড়লাম। যার অর্থ, আমি রাগ করি নি। উনি অবাক হয়ে বললেন,
— তবে কি মন খারাপ করেছো?
— উহুম।
— সত্যি রাগ করো নি? কেন রাগ করো নি?কতো জোড়ে মারলাম তোমায়। সরি!
— ইটস ওকে। আমি রাগ করি নি তবে গালে ব্যাথা লাগছে খুব। এতো জোড়ে কেউ মারে? একটু আস্তে মারলেই তো হতো।
আমার কথায় হেসে উঠলেন শুভ্র। হাসি মুখটা হঠাৎই গম্ভীর করে বলে উঠলেন,
— এমন কথা কেনো বলো যে কথায় হার্ট হই আমি। এই কথাটা যদি আমি বলতাম তাহলে কি তোমার ভালো লাগতো বলো? তুমি জানো আমি তোমায় কতোটা ভালোবাসি। তারপরও এমন কথা কেন বলো। তোমার চঞ্চলতা, রাগ,অভিমান এই সব মিলিয়েই তুমি আর এই তুমিটাকেই ভালোবাসি আমি রোদপাখি । আমার ভালোবাসায় কোনো সেকেন্ড অপশন নেই । ফাস্ট এন্ড লাস্ট অপশন দুটোই তুমি। আর আসছে নাবিলার কথা আমি তো জাস্ট তোমাদের মধ্যেকার পার্থক্যটা বলছিলাম রোদপাখি। আর কিছুই না। এখন গাল দেখি…ইশশ একদম লাল হয়ে গেছে। সো সরি! আর হবে না।
কথাটা বলে আমার গালে চুমু দিতে নিতেই সরে গেলাম আমি। শুভ্র অবাক চোখে তাকিয়ে বললেন,
— কি হলো?
— আমি আপনার সাথে রেগে আছি।
— কিন্তু মাত্রই তো বললে যে রেগে নেই।
— এই রাগ চড়ের জন্য নয়। ওটা তো চাইলে আবারও মারতে পারেন। আমাকে চড় মারার অধিকার আপনারই সবচেয়ে বেশি বাট রাগ আমার সে জায়গায় নয় অন্য জায়গায়। সো দূরে থাকুন। আপনার সাথে কথা বন্ধ।
— আরেহ্! কারণটা তো বলবে। নয়তো বুঝবো কিভাবে?
— বুঝতে হবে না।
কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম আমি। পেছন থেকে শুভ্রর কন্ঠ কানে এলো,
— রোদ? এই রোদ? শুনো না….
রুম থেকে বেরুতেই সাহেল ভাইয়ার সাথে দেখা। আমাকে দেখেই মুচকি হাসলেন উনি। হাসিমুখেই বললেন,
— শুভ্র কোথায়? ওকে একটু দরকা…
এটুকু বলতেই হুড়মুড় করে বেরিয়ে এলেন শুভ্র। দরজার সামনে সাহেল ভাইয়াকে দেখে খানিকটা অপ্রস্তুত হলেন উনি। জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বলে উঠলেন,
— আরে, সাহেল? তুই এখানে?
— তোর কাছেই এসেছিলাম। চল বাইরে যাবো। সাব্বিররা ক্যাম্পাসে এসেছে দেখা করে আসি।
— আচ্ছা বাট…
— কোনো কিন্তু নয় চল (আমার দিকে তাকিয়ে) আর সানশাইন? নাবিলার দিকে একটু খেয়াল রেখো প্লিজ। এসেও দু’বার বমি করেছে শরীরটা খুবই দুর্বল। রুমে একা আছে অপরিচিত জায়গা একটু চেইক করো, কেমন?
— ওকে ভাইয়া। চিন্তা করবেন না। খেয়াল রাখবো।
সাহেল ভাইয়া শুভ্রকে টেনেটুনে বের করে নিয়ে যেতেই নাবিলা আপুর ঘরে উঁকি দিলাম আমি। আপু বই পড়ছিলেন। আমাকে উঁকি দিতে দেখেই বলে উঠলেন,
— ভেতরে চলে এসো রোদ।
আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হলাম। মুখ কাঁচুমাচু করে ভেতরে ঢুকে গেলাম আমি। আমার দৃষ্টি উনার গলায়। শুভ্র উনার গলার তিলটাও খেয়াল করেছে? কথাটা ভেবেই শুভ্রর সবকটা চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে আমার। নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বিছানায় গিয়ে বসলাম আমি। আপু বইটা পাশে রেখে সোজা হয়ে বসলেন। বালিশটা কোলে নিয়ে হাসিমুখে বলে উঠলেন,
— এসেছো বেশ করেছো। একা একা বোর হচ্ছিলাম খুব। সাহেল বলেছিলো তুমি নাকি খুব বেশি কথা বলো। কই আমার সাথে তো বলছো না। আমাকে পছন্দ হয় নি তোমার?

— ছি ছি। কি বলছেন আপু? পছন্দ হবে না কেন? আপনি তো অনেক কিউট।
আমার কথায় হাসলেন উনি। আমি আমতা আমতা করে বলে উঠলাম,
— আপু? আপনি প্রেগনেন্ট? কতদিন হলো?
— প্রায় চারমাস।
— ওহ! গ্রেট। আমার মনে হয় মেয়ে হবে। আপনার কি মনে হয় আপু?
— জানি না। তবে আমি আর সাহেল চাই ছেলে হোক। তাহলে তোমার মেয়েকে নিয়ে যেতে পারবো আমাদের বাসায়।
কথাটা শুনেই হেসে উঠলাম আমি।
— আমার যদি ছেলে হয় তখন?
— তাহলে এক বালতি আফসোস তবে আমার মনে হয় তোমার মেয়েই হবে।
কথাটা বলেই থামলেন উনি। কিছুক্ষণ চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলেন,
— শুভ্রকে কতোটুকু ভালোবাসো রোদ?
উনার প্রশ্নে খানিকটা অপ্রস্তুত হলাম আমি।
— জানি না। তবে এটুকু জানি উনাকে ছাড়া শ্বাস নিতে পারবো না।
আমার কথায় হালকা হাসলেন নাবিলা আপু। আমার ডান হাতটা নিজের হাতে নিয়ে একটু চাপ দিয়ে ধরে বলে উঠলেন,
— শুভ্রকে ভালোবাসার জন্য থেংক্স রোদ।
আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম।বিস্মিত গলায় বললাম,
— মানে?
— তুমি শুভ্রকে ভালোবাসো বলেই সাহেলকে পেয়েছি আমি। তুমি হয়তো জানো না সাহেল তোমাকে কতোটা ভালোবাসে । হয়তো এখনও বাসে। এতে কোনো অভিযোগ নেই আমার কারণ আমি জানি ও আমাকেও প্রচন্ডরকম ভালোবাসে। একটা ছেলে তখনই কাউকে হারানোর ভয় পায় যখন সে কাউকে প্রচন্ডরকম ভালোবাসে আর সাহেলের মনে আমাকে হারানোর ভয়টা প্রবল। তবু আমার কষ্ট হয়,ভীষণ কষ্ট হয়। এই কষ্টটা আমার জন্য নয় কষ্টটা সাহেলের জন্য।আমাদের বিয়ের আগের দিন ওর বলা প্রতিটি কথায় আমার কানে বাজে রোদ। ও বলেছিলো,
” নাবু? পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কষ্টটা কি জানো? পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কষ্টটা হলো কাঁদতে না পারার কষ্ট। আর এই কষ্টটাকে হাসির পেছনে ঢেকে রাখাটা আরো বেশি কষ্টের। এই পৃথিবীতে তারাই সবচেয়ে বেশি অসহায় যারা কাঁদতে পারে না আর আমার তো কাঁদার অধিকারটুকুও নেই নাবু। কিভাবে কাঁদবো বলো? নিজের বেস্টফ্রেন্ডের সুখের পরিবর্তে কি কাঁদা যায়? ওর সামনে ভেজা চোখে কিভাবে দাঁড়াবো আমি? কিন্তু বিশ্বাস করো নাবু, আমারও কাঁদতে ইচ্ছে করে, চিৎকার করে কেঁদে পুরো পৃথিবীকে বলতে ইচ্ছে করে আমারও কষ্ট হচ্ছে, আমিও পুড়ছি, জ্বলছি,শেষ হয়ে যাচ্ছি। জানো নাবু? সানশাইন আর শুভ্রকে একসাথে দেখলে মাঝেমাঝে সানশাইনকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করতো। নয়তো নিজে মরে যেতে ইচ্ছে করতো। কিন্তু তা কি সম্ভব বলো? নিজেকে শেষ করার ক্ষমতা আমার নেই আর সানশাইনকে শেষ করার ক্ষমতা আমার আরো নেই। যে মেয়ের চোখের একফোঁটা জলেই শরীর অস্থির করে আসে তাকে কি করে মারা যায় বলো? আমি তোমাকে ভালোবাসি এই কথাটা যেমন সত্য ঠিক তেমনই সত্য হলো আমি সানশাইনকেও ভালোবাসি। তোমাদের দুজনকে এক পাল্লায় মাপতে পারবো না আমি। তুমি তো তুমিই নাবু। আমার সবটা জুড়েই আছো কিন্তু ওকেই ভুলে যেতে পারছি না আমি। ভুলে যাওয়া কি এতো সহজ বলো? আমি চেষ্টা করছি নাবু, আমাকে একটু সময় দাও। জানি না পারবো কিনা তবু… চেষ্টা করছি। জীবনের প্রথম ভালোবাসা ছিলো ও।প্রথম অনুভূতি। সে যদি আমার স্মৃতি হিসেবে থেকে যায় তোমার কি খুব কষ্ট হবে নাবু? আমার সবটা তো তোমারই….তবু…”
সেদিন আমি বলেছিলাম, না, হবে না। ও আমাকে ভালোবাসে এটাই আমার জন্য বেশি ইম্পোর্টেন্ট। মানুষ যে বলে,ভুল বলে রোদ। সত্যিটা হলো, ভালোবাসা ভুলা যায় না। মনের কোথাও না কোথাও থেকেই যায় সেই অনুভূতি। আমি হ্যাপি যে সাহেল তার জীবনটাকেই আমার সামনে তুলে ধরেছে। কিচ্ছু লুকাইনি। কিচ্ছু না।
নাবিলা আপুর কথায় আমি চরম অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। আমার অস্বস্তি হয়তো বুঝতে পারছিলেন উনি। তাই একটু হালকা হেসে বলে উঠলেন,
— এই যা, তোমাকে অস্বস্তিতে ফেলে দিলাম। সরি বোন। তবে তোমার সাথে কিন্তু আমার বেশ মিল আছে। সেটা কি খেয়াল করেছো?
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই সাহেল ভাইয়া রুমে ঢুকলেন। হাসিমুখে বলে উঠলেন,
— হেই গার্লস, কি করা হয়?
আমরা দু’জনেই মুচকি হাসলাম। নাবিলা আপু বললেন,
— গল্প করা হয়।
সাহেল ভাইয়া হেসে নাবিলা আপুর কপালে হাত রেখে জ্বর চেক করতে করতে বলে উঠলেন,
— বাহ! এখানে এসে সানশাইনের হাওয়া লেগেছে তোমার। বোবার মুখে কথা ফুটেছে।
উনার কথায় হেসে উঠলাম আমি। নাবিলা আপু রাগী চোখে তাকালেন। সাহেল ভাইয়া সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বললেন,
— বমি হয়েছে আরো? শরীর খারাপ লাগছে?
— উহুম। রোদের সাথে গল্প করতে করতে শরীর খারাপের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। এনিওয়ে, তুমি এতো তাড়াতাড়ি ফিরলে যে?
— বউয়ের আদেশ শিরধার্য। বউ যখন বলেছে দশটার আগে রুমে থাকা চাই তো বাইরে কি করে থাকি? এনিওয়ে থেংক্স সানশাইন, নাবিলার…
সাহেল ভাইয়ার কথার মাঝেই দরজায় টোকা পড়লো। তিনজনেই ঘাড় ঘুরিয়ে দরজায় তাকাতেই শুভ্রকে চোখে পড়লো।উনার মুখে মিষ্টি হাসি। আমরা তাকাতেই বলে উঠলেন,
— আসতে পারি?
— আয়। তুই জীবনে নক দিয়ে রুমে ঢুকেছিলি?
— তখন আর এখনের মাঝে পার্থক্য আছে না? এখন আমাদের নাব্বু বেবি আমার ভাবি বলে কথা…প্রাইভেসি আছে না?
শুভ্রর কথায় চোখ গরম করে তাকালেন নাবিলা আপু। রাগী গলায় বললেন,
— চড় না খেতে চাইলে চুপ কর। তুই আমার দেবর সো সাবধানে কথা বল নয়তো কান মলা।
উনার কথার মাঝেই উঠে দাঁড়ালাম আমি। দরজার দিকে হাঁটা দিতেই আমার হাত ধরে ফেললেন শুভ্র। অবাক হয়ে বললেন,
— কোথায় যাও?

আমি হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে নিলে আবারও হাত চেপে ধরলেন উনি। সাহেল ভাইয়াদের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলে উঠলেন,
— তোরা রেস্ট নে। পিচ্চিটা রাগ করেছে আগে রাগ ভাঙাই। বাই গাইস।
কথাটা বলে উনাদের সামনেই কোলে তুলে নিলেন আমায়। পাশাপাশি রুম হওয়ায় দ্রুত ঢুকে গেলেন রুমে। বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললেন,
— এখনো রেগে আছো?
আমি কিছু না বলে বিছানা থেকে বালিশটা নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লাম চুপচাপ। উনি অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন। কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বলে উঠলেন,
— আজব! এটা কি হলো? আরে এতো রাগ কেনো? কি করেছি আমি? না বললে বুঝবো কিভাবে?
#চলবে…