পাথরের বুকে ফুল

পাথরের বুকে ফুল !! Part- 26

:
আজ সকালটা সুন্দর কথাটা আসলে ঠিক মনে হয় না।পৃথিবীর সব সকালই সুন্দর হয়।সকালের প্রথম কিরণ মোহনিয় করে মানুষের জীবনকে।রাঙায় নতুন স্বপ্নের আলোতে।নতুন একটি কিরণ মানে নতুন স্বপ্ন বুনার শুরু।আজকের সকালও কারো নতুন জীবনের স্বপ্ন বুনার শুরু।সকালের মিষ্টি হালকা রোদে অরিএানের ঘুম ভাঙে।ঘুম ঘুম চোখে তার মনে হচ্ছে সে নরম কিছুতে খুব যত্নে শুয়ে আছে।ব্যাপারটা আসলে কি তা দেখার জন্যে মাথা তুলতেই সে এক অপরূপ দৃশ্য আবিষ্কৃত করলো।সে এক নজরে তার নতুন আবিষ্কার দেখছে।ওয়াসেনাতের লম্বা চুল গুলে এলোমেলো হয়ে মুখের সামনে পরে আছে।ঠোঁট গুলোর উপরের ঠোঁট উল্টে মেয়েটি ঘুমিয়ে আছে।ইশশশ এতো ঘুমপরী!! কত নাম যে দিয়েছে সে এই মেয়ের ভেবেই পাচ্ছে না।হালকা রোদের সোনালি কিরণ ওয়াসেনাতের চুলে, মুখ পড়ছে।চুলগুলো চিকচিক করছে।রোদের কারনে ওয়াসেনাতের মুখে বিরক্তি ভাবও দেখা যাচ্ছে। অরিএান নিজের হাত দিয়ে ওয়াসেনাতের চুল পিছনে সরাতে চেয়েও আবার হাত নামিয়ে নেয়।তার এই মেয়েকে এভাবে দেখতেই ভালো লাগছে।অরিএান ওয়াসেনাতের মুখের সামনে হাত দিয়ে আছে যাতে রোদ তার ওয়াসুকে ছুঁতেও না পারে।
:
:
ঘণ্টা খানেক পরে ওয়াসেনাত হালকা নোড়ে চোড়ে উঠে পরে।চোখ খুলতেই সে অবাক। অরিএান এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে আর এক হাতের তালু ওয়াসেনাতের মুখের উপড়ে দিয়ে আছে।ওয়াসেনাত বলে উঠে…..
__এই আপনি কখন ঘুম থেকে উঠেছেন? আর আমাকে ডাকেন নি কেন?আর এভাবে হাবার মত কি দেখছেন?
__তোমাকে(আগের মত তাকিয়ে থাকতে থাকতে বলে উঠে)
__এই আপনি সব সময় এত কি দেখেন আমার মাঝে?এমন একটা ভাব মনে হয় আমি মানুষ না এলিয়েন।যত সব সরেন।
:
:
:
বলেই সরিয়ে উঠে বসে।তারপর দাড়াতে যাবে তার আগেই অরিএান ওয়াসেনাতের দুগালে হাত রেখে কপালে চুমু খেয়ে ওয়াসেনাতকে কোলে তুলে নেয়।আকর্ষীক ঘটনায় ওয়াসেনাত প্রচণ্ড রকম অবাক হয়ে হাবার মত তাকিয়ে থাকে।অরিএান মুচকি হাসতে হাসতে নিচে নেমে আসে।নিচে আসতেই রিমিকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ওয়াসেনাত প্রচণ্ড রূপে লজ্জা পায়। কিন্তু অরিএান আগের মতই তাকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।রিমি হাসতে হাসতে বলে উঠে……
__আরে ভাইয়া রোম্যান্সত জমে খির।একটু তো লজ্জা করেন?আফটার অল আমি আপনার শালিকা।
__আরে শালি আধে ঘার ওয়ালি সো তাকেও তো দেখাতে হবে রোম্যান্স। কি বল বউ(ওয়াসেনাতকে চোখ টিপ মেরে বলে উঠে)
__না বাবা দেখাতে হবে না।এমনেতেই আমি বেচারি সিঙ্গেল। কোথায় আমার জন্যে আপনারা শোক নিবেদন করবেন তা না করে কাটাঁ গায়ে নুনেরছিটে দিচ্ছেন।ইটস্ নট ফ্যার।(কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে উঠে)
__এই চুপ যা ত আর আপনি এভাবে এখনও কোলে নিয়ে কেন আছেন নামান বলছি?
__ ওয়াসু কি কপাল তোর কোলে উঠতে পারছস তাও আবার নামার জন্যে পারাপারি করস।
__ফাউল মাইয়া চুপ যা আর আপনি নামান। চলদি
__ওকে ওকে এভাবে রেগে কেন যাও জান যানো কত কিউট লাগে? মন তো চায় জাস্ট….
__আবার..
__ওকে ওকে
:
:
:
ওয়াসেনাত ওয়াসরুমে ডুকে একটু অবাক হয়। এটা আবার কেমন ওয়াসরুম যেখানে দুই দিকে দুটি দরজা?একটা দরজা প্রবেশের এটা সে বুঝতে পেরেছে কিন্তু অন্যটা কিসের।কেমন যেন রহস্য রহস্য গন্ধ।ওয়াসেনাত নিজের রহস্য ভাবকে দমিয়ে রাখতে পারলো না তাই অপর পাশের দরজাটার ভিতরে ডুকে পরে।এমা এটা কি?ওয়াসেনাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে বিশাল রুমটির দিকে। রুম বললে ভুল হবে এটাকে ওয়াসেনাতের ছোটো খাটো শপিং মল মনে হচ্ছে। এখানে মেয়েদের হিজাব পিন থেকে শুরু করে শাড়ি সবই আছে।ওয়াসেনাত ঘুড়ে ঘুড়ে দেখছে।হঠাৎ একটা জায়গায় একটা টেবিলের উপড় খুব সুন্দর করে সাজানো ওই দিনের কাঁচের চুড়ি গুলো।আর চুড়িগুলোর নিচে একটা চিরকুট আছে।ওয়াসেনাত এগিয়ে গিয়ে চিরকুটি হাতে নেয়।তাতে লেখা আছে
:চুড়িগুলোকে তোমার কোমল হাতের ছোঁয়া দিও:

ওয়াসেনাত মুচকি হাসে আর এটাও বুঝতে পারে এই সবই ওয়াসেনাতের জন্যে কিনা।মনে মনে অরিএানকে পাগল বলে সম্মদন করে হেসে উঠে ওয়াসেনাত। ওয়াসেনাত একটা হলুদ গাউন নিয়ে পরে নেয়। আর সাথে কাঁচের হলুদ চুড়ি।অরিএানের ওই দিনের কিনা চুড়িই পরেছে সে।ওয়াসেনাত শাড়ি পরতে পারে না।তাই সে জামাই পরে নেয়।
:
:
অরিএান ওয়াসেনাতকে দেখে তার খুব মন খারাপ হয়।ওয়াসেনাত আজ শাড়ি কেন পরে নি? পরলে কি হত?আবার চুড়ি হাতে দিয়েছে দেখে তার খুব ভালোও লাগছে?ইশশশ কি সুন্দর রিমিঝিমি সাউন্ড করছে চুড়িগুলো ?আর ওয়াসেনাত আয়নার সামনে দাড়িয়ে বিরক্তি ভঙিতে তোয়ালে দিয়ে তার লম্বা চুল মুছার চেস্টা করছে।অরিএান ওয়াসেনাতের হাতের তোয়ালে নিয়ে তার পিছনে দাঁড়িয়ে মনোযোগ সহকারে খুব যত্নে ওয়াসেনাতের চুল মুছে দিচ্ছে আর মুখ ভার করে আছে।ওয়াসেনাত আয়নায় অরিএানের এমন মুখ দেখে বলে উঠে……
__কি হয়েছে আপনার?
__তুমি শাড়ি কেন পরলে না?তুমি যানো আমি তোমাকে শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখার জন্যে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। আর তুমি!!
__আসলে আমি শাড়ি পড়তে পারি না।আর জীবনে কখনো পড়িও নি তাই….
__ওও সমস্যা নেই সাত দিন পরে আমাদের অনুষ্ঠান তারপর তো তুমি আমার সাথেই থাকবে আমি তোমাকে পরিয়ে দিবো।কি বল?(ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠে)
__আপনি শাড়ি পড়াতে পারেন?(অবাক হয়ে পিছনে ঘুড়ে বলে উঠে)
__না। কিন্তু শিখে নিবো। (ওয়াসেনাতকে পিছনে ঘুড়িয়ে চুলে মুখ গুঁজে)
অরিএানের ছোঁয়ায় ওয়াসেনাত কেঁপেকেঁপে উঠছে।অরিএানের হাতগুলো ওয়াসেনাতের কোমড় জোড়িয়ে আছে আর মাঝে মাঝে হালকা স্লাইড করছে। তার ঠোঁট জোড়া ওয়াসেনাতের ঘাড়ে বিচরণ করছে।ওয়াসেনাত লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।অরিএান নিজের চোখজোড়া দিয়ে একবার আয়নায় তাকিয়ে হালকা হেসে আবার আগের মত ঠোঁট বুলাতে শুরু করে।কিছুক্ষণ পরে ছেড়ে দিয়ে বলে উঠে….
__তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার ভালো লাগে না।কেমন যেনো দম বন্ধ দম বন্ধ ভাব হয়।নিজেকে পাগল পাগল লাগে।তুমি ছাড়া আমি কেমন যেন শূন্যে শূন্যে। ভালোবাসি খুব করে।প্লিজ জীবনে চলার পথে আমার সঙ্গ দিবে?
__হুম(চোখ বুজে বলে উঠে)
__আমি তো বাবাকে বলেছি কালকেই অনুষ্ঠান করতে কিন্তু তা নাকি সম্ভব না।তুমি বল এটা কেমন বিচার?নিরিহ প্রানি পেয়েছে।জানে তো বউ ছাড়া থাকতে ভিষন কষ্ট তাই জব্দ করার প্রক্রিয়া বুঝলে ওয়াসু।
__হুম বেশ বুঝেছি এবার আমি নিচে যাই?
__চলে যাবে?(করুন সুরে বলে উঠে)
__আরে যেতে তো হবে নাকি?
__হুম
:
:
:
ওয়াসেনাত নিজের রুমে উপুত হয়ে শুয়ে ভাবছে কত কি হয়ে গেছে অল্প কিছু সময়ের মধ্যে। সে নিজে এখন অরিএানের।অরিএানের মুখে বউ ডাক শুনতে তার ধারুন লাগে।এ যেনো অন্যরকম ফিলিংস। ইশশশ কি লজ্জার ব্যাপার।ওয়াসেনাত লজ্জায় লাল হয়ে বালিশে মুখ গুঁজে। হঠাৎ পাশে মোবাইল বেজে উঠে। ওয়াসেনাত ভেবেছে অরিএান তাই তাড়াতাড়ি কানে ধরে। অপর পাশ থেকে কেউ বলে উঠে………
__কি ভেবে ছিলে অরিএান? হা হা হা।তুমি কিন্তু আমার ওয়াসেনাত।মনে থাকে যেনো।ওই অরিএানের থেকে কেড়ে নিতে আমার বেশি টাইম লাগবে না।
__ইহান আপনি হয় তো ওই লোকের মৃত্যু ভালো ভাবে দেখেনি। দেখলে আমার সাথে এমন কথা বলতে পাড়তেন না। আর অরিএান তার ওয়াসেনাতের দিকে কেউ তাকালেও তার চোখ তুলে নিবে আর আপনি তো ওনার থেকে কেড়ে নিবেন বলছেন।ওনি কি ছেড়ে দিবে ভেবেছেন?খুন করে দিবে আপনাকে।নিজেকে বাঁচাতে চাইলে দূরে থাকেন আমাদের জীবন থেকে।(রেগে চিৎকার করে বলে উঠে)
__জান ওই লোকের কথা বলছ?ওর সাথে অরিএান খানের রক্তের সম্পর্ক ছিল না তাই খুন করতে হাত কাঁপে নাই কিন্তু আমি তো তেমন না।আর আমার শক্তিও কম না। বুঝলে জান?ও নিজেই পেরে উঠবে না।(শয়তানি হাসি দিয়ে)
__কি হন আপনি ওনার(অবাক হয়ে বলে উঠে)
__যদি বলি একুই মায়ের পেটের ভাই? কেমন লাগবে শুনতে?হুম জান বল?
__কিকককককককককি(চিৎকার করে বলে উঠে)
__কুল জান কুল।এত চিৎকার করার মানে কি বল?আস্থে কথা বল?আর যদিও তোমার সাথে আমার অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করে তবুও এখন বলতে পারছি না আমি প্রচণ্ড বিজি বুঝলে। এখন শুধু এটা বলার জন্যে কল করেছি মানুসিক ভাবে তৈরি হয়ে নেও আমার কাছে আশার জন্যে আমি আমার জিনিস ওই অরিএানের হতে দিবো এটা হতে পারে না।আর তুমি তো আমার জান তোমাকে নিজের কাছে রাখতে যা যা করতে হয় আমি করবো।সো বেবী রেডি থেকো।
:
:
কথাগুলো বলেই বিকট হাসি দিয়ে কল কেটেঁ দেয়।ওয়াসেনাত স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।তবে কি ইহান আর অরিএান সত্যেই ভাই?কিন্তু অরিএান, ইহানকে বা ইহান অরিএানকে কেউ কারোকে মোটেও পছন্দ করে না।যদি তারা সত্যিই ভাই হয় তবে অমিতা চৌধুরী কে?ওনিই কি ওদের মা?তবে কেন ওনি অরিএানের সম্পর্কে ওই দিন এত বাজে কথা বললেন?কোনো মা কি তার সন্তানের সম্পর্কে এত বাজে কথা বলতে পারে?আর অরিএান তো বলেছে তার বাবা মা দুজনি মারা গেছে। তবে ইহান কেন এটা বলল?ওয়াসেনাতের মাথা ঘুড়ছে।কিছুই তার মাথায় আসছে না।সে কিছুই মিলাতে পাড়ছে না।অরিএানকে জিগ্যেস করবে কি না ভাবছে আবার ভাবছে এতে যদি অরিএান রেগে যায় বা কষ্ট পায়।আর এটা শুলেই সে অনেক রেগে যাবে তবে কাকে বলবে?কে জানাবে তাকে এত প্রশ্নের উওর।ওয়াসেনাত নিজের মাথা চেপে বসে আছে তার মাথা ব্যথা করছে।কিছু মিলাতে পারছে না।সব কিছু ধোয়াঁশার মনে হচ্ছে। কত কত প্রশ্ন মাথায় ঘুড় পাক খাচ্ছে তবে একটাও উওর মিলছে না……..এ যেনো গোলকধাঁধা…………

#চলবে……….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *