ঘৃণার মেরিন

ঘৃণার মেরিন Season 2 !! Part- 11

নীড় মেরিনের ঠোট জোরা দখল করে নিলো। মেরিন অবাক হলেও আর কিছু না ভেবে নীড়ের সাথে তাল মেলাতে লাগলো।
.
একটুপর…
নীড় মেরিনকে ছারলো। মেরিন এখনও চোখ বন্ধ করে আছে। চোখ দিয়ে পানি পরছে। নাকটা লাল হয়ে গেছে। পাপড়ি গুলোও ভিজে আছে। ঠোট ২টাও কাপছে। খুব কষ্ট হচ্ছে মেরিনের চোখে পানি দেখে।
নীড় হাত দিয়ে মেরিনের চোখের পানি মুছে দিলো।
নীড় : মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি ঘুমিয়ে পরো।
মেরিন চোখ মেলল। হাত দিয়ে পানি মোছাটা মেরিনের পছন্দ হয়নি।
মেরিন উঠে বসলো।
নীড় : কি হলো?
মেরিন : না কিছুনা। আপনি ঘুমান।
বলেই মেরিন washroom এ গেলো। fresh হয়ে change করে এলো।

নীড় : change করলে যে?
মেরিন: হ্যা একটু কাজ আছে।
বলেই গাড়ির চাবিটা হাতে নিলো।
নীড় : এতো রাতে কিসের কাজ? চাবি রাখো। আর চুপচাপ ঘুমাও।
মেরিন : আরে ঘুমালে হবেনা। আমার যেতে হবে ।
নীড় : না। কোথাও যাবোনা। না মানে না।
মেরিন : আজব তো…
দেখি সরুন তো…
নীড় :মেজাজ খারাপ কোরো না তো।
মেরিন নীড়ের গলা জরিয়ে বলল: কেন গো জান ? যেতে দিতে চান না কেন হামম? মতলব টা কি? 😏।
নীড় : অনেক কিছু। চাবি রাখো। কিছু হলেই চাবি নিয়ে বের হও কেন?
মেরিন: ভাগ্য পরীক্ষা করতে।
নীড়: মানে?
মেরিন: কিছুনা। সরুন।
নীড়: না মানে না।
মেরিন : আমি যখন বলেছি যে আমি যাবো তখন তো যাবোই ।
নীড় : আমিও যখন বলেছি যে যেতে দিবো না তখন দিবোনা।
মেরিন : আচ্ছা আপনার কি আমার কোনো কথাই ভালো লাগেনা?
নীড় : না।
বলেই নীড় মেরিনের হাত থেকে চাবিটা নিয়ে ছুরে মারলো।
এরপর কোলে তুলে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসলো।
নীড় : দেখো ওই সাগরটা কে ঢেউয়ের পর ঢেউ আসতেই থাকে সাগরের বুকে। কিন্তু ১বার না ১বার তাকেও স্থির হতে হয়… মানুষের জীবনটাও এমন উথাল পাতাল যতোই থাকুক না কেন স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করেই। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। তুমি আমি আমরা কেউই প্রকৃতির বাইরে না।
মেরিন ওর সেই হাসি দিয়েই
বলল: কখনো কি দেখেছেন যে বন্যা হয়েছে অথচ কোনো ক্ষতিই হয়নি? চুল পরিমান ক্ষতি হলেও হয়। আমি বন্যা। স্থিরতা আমার বৈশিষ্ট্য না। ধংব্স করাই আমার বৈশিষ্ট্য। নোংরা আবর্জনায় আমি ভরপুর। যদি লাগাতার মাত্র ২টা বন্যাতেই কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয় তবে ৩য় বছরেই বন্যা আর আতংক থাকবেনা। কিন্তু কথাটা সেটা না…
মেরিন বন্যার আতংকটা কমে গেলে খান সম্রাজ্ঞ হেলে পরবে।
তবে কথাটা হলো এই যে আপনি আমাকে এই উপদেশ বানী শোনাচ্ছেন কেন?
নীড় : বাস্তবতাকে এরিয়ে যেতে চাইছো?
মেরিন : বাস্তবতাকে এরিয়ে চললে এই পর্যন্ত আসতে পারতাম না….
বলুন তো, যদি দুর্বল হতাম আপনাকে পেতাম? কতোবার ভালোমতো বলেছি ভালোবাসতে? বেসেছেন? request করেছি …. accept করেছেন?
নীড় : দেখো তুমি যে সময় আমাকে propose করেছো তখন তোমাকে accept কিভাবে করতাম বলো তো? আমি অন্যকারো ছিলাম। ভালোবাসতাম নীরাকে। ভীষন…

মেরিন: আর আমাকে ঘৃণা….
আচ্ছা নীড় বুকে হাত রেখে ১টা কথা বলবেন?
নীড় : পারবোনা।
মেরিন নীড়ের হাত নীড়ের বুকে রেখে
বলল : সত্যি করে বলুন তো যদি আমি মরে যাই আপনি আমাকে কাধে করে গোরস্থানে নিয়ে যাবেন তো? আমাকে আপনার হাতের মাটি দিবেন তো? কান্না করে নাই দিলেন…. হাসতে হাসতে দিবেন তো?
কথাটা শুনে নীড়ের বুক কেপে উঠলো। নীড় মেরিনকে বসিয়ে উঠে গেলো।
.
নীড় : তোমার ফালতু কথা গুলো শুনলে না আমার গা জ্বলে যায়। রাত দুপুরে ঢং করতে আসছে।
মেরিন পেছন থেকে নীড়ের কলার ধরে সামনে এনে
বলল : আমি বলেছিলাম আমার ঢং দেখতে আসুন? গিয়ে ঘুমিয়ে পরুন। আর নীরার স্বপ্ন দেখুন।।বলেই নীড়ের কানে ১টা কামড় দিলো। এরপর ঘাড়ে ১টা কিস করে ছেরে দিলো।
মেরিন : জান…. যান গিয়ে ঘুমিয়ে পরুন… আর আমার কথা ভাবতে হবেনা। আমি আমার খেয়াল রাখতে পারি। আর ঘুম? ১দিন না ঘুমালে আমি মরবো না। কই মাছের জান আমার । যান….
নীড় চোখ ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে আছে।
মেরিন : দেখুন বাইরেও যেতে দিলেন না আবার বারান্দায়ও থাকতে দিবেন না। কাহিনি কি বলুন তো?
নীড় : কাহিনি হলো এই যে আমি দুর্বল মেরিনকে দেখতে চাই… মেরিনের কান্না দেখতে চাই… happy ? 😒…
মেরিন হা হা করে হেসে উঠলো।
মেরিন : sorry গো। আপনার এই wish টা পূরন করতে পারলাম না। bye….
মেরিন নীড়কে ঠেলেঠুলে রুমে পাঠালো।
.
মেরিন : যখন কল্পনা আর বাস্তবতার দেয়াল ভেঙে যায় তখন সেটাই হয় নিখুত অভিনয় না হয় প্রকৃত ভালোবাসা। আপনার কোনটা?
রবি ঠাকুর মানবের মাঝে বাচিতে চান। আর আমি? 😏।
মরিতে চাইনা আমি সুন্দর ভুবনে …
ঘৃণার মাঝে আমি বাচিবার চাই…
কবিতাটার ২লাইন বলেই মেরিন হা হা করে হাসতে লাগলো।
ওর অট্ট হাসির আড়ালে থাকা হৃদয় ভাঙা চিৎকার নীড় ঠিকই শুনতে পেলো। নীড় এসে ওর কাধে হাত রাখলো। মেরিন ঘুড়ে নীড়কে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।
ধরে কাদতে লাগলো।
মেরিন : নীড় আমাকে কখনো ছেরে যাবেন না please ….
আমি পারবোনা আপনাকে ছারতে। কখনো পারবোনা।
বলেই নীড়ের সারা মুখে পাগলের মতো কিস করতে লাগলো। এরপর আবার নীড়কে জরিয়ে ধরে কাদতে লাগলো। নীড় মেরিনের মাথাটা তুলে কপালে চুমু দিলো। মেরিন নীড়ের চোখের দিকে তাকালো। মেরিনের চোখ-নাক লাল হয়ে আছে। মুখ বুজে নিরবে কান্না করছে। যার জন্য ঠোটটাও কাপছে। মেরিনের চোখ ২টা অস্বাভাবিক সুন্দর। গভীর। ওই চোখে নীড়ের জন্য যেমন অঢেল ভালোবাসা আছে তেমনি আছে হাহাকার। যেমন মায়া ভরা তেমন আছে কষ্ট।
এই প্রথম নীড় মেরিনকে এতো গভীরভাবে দেখছে। মেরিন আসলেই অনেক সুন্দরি।
মেরিন : ছছছারুন…
বলেই মেরিন নীড়কে ছেরে দিলো। কিন্তু মেরিন খেয়াল করলো যে নীড় ওকে ধরে রেখেছে । নীড় মেরিনের চোখের পানি ঠোট দিয়ে শুষে নিলো। মেরিন তো মহাঅবাক। নীড় মেরিনকে কোলে তুলে নিলো।
মেরিন সাংঘাতিক অবাক হলো।
মেরিন : নননীড়, ন…
নীড় মেরিনকে কথা বলতে না দিয়ে নীড় মেরিনের ঠোট দখল করে নিলো।

সকালে….
নীড়ের ঘুম ভাঙলো। ঘুম ভাঙতেই নীড় মেরিনকে পেলো। মেরিনের গালে, চোখের কোনে পানির নিশান রয়ে গেছে। নীড় মেরিনের কপালে কিস করলো। তখনই ওর রাতের কথা মনে পরলো। কি করে ফেলেছে ও? মেরিনকে বুক থেকে নামিয়ে লাফ দিয়ে উঠে বসলো। মেরিনের ঘুম ভেঙে গেলো। নীড় খেয়াল করলো না।
নীড় : ছিঃ ছিঃ ,,, নিজের ভালোবাসার সাথে এতো বড় বিশ্বাসঘাতকতা কিভাবে করলাম?
মেরিন নীড়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বেশ বুঝতে পারলো যে নীড়ের মধ্যে অনুতাপ-অপরাধবোধ কাজ করছে। মেরিন জানতো এমনই কিছু হবে। তাই ও নীড়কে বাধা দিচ্ছিলো ।
মেরিন মুচকি হাসি দিয়ে নীড়কে টেনে ওর বুকে আবার শুয়ে পরলো। নীড়ের নিজের ওপর রাগ হচ্ছে।
নীড় : কি করছো টা কি?
মেরিন : ঘুমাচ্ছি। আজকে ১টা জিনিসের প্রমান পেলাম।
নীড়: …
মেরিন : মেয়েদের চোখের পানিতে ছেলেরা দুর্বল হয়।
নীড় : মানে?
মেরিন : একটু চোখের জ্বল আর কথা emotional … ব্যাস নীড় পেয়ে গেলাম…
নীড় : !!!!
মেরিন কিছু না বলে washroomএ গেলো । নীড় কিছুই বুঝলোনা।
.
একটুপর…
মেরিন বের হলো। নীড় মেরিনের দিকে তাকালো । ভীষন সুন্দর লাগছে।
মেরিন : এই যে hello…. আমায় নিয়ে অতো গবেষনা না করে যান fresh হয়ে নিন। আমি breakfast বানিয়ে নিচ্ছি।
নীড় : তুমি তখন কি বললে?
মেরিন: ভীষন ক্ষুধা লেগেছে খেয়ে তারপর বলবো ।
নীড় fresh হতে গেলো।
.
মেরিন: এই মুহুর্তে আমার আপনার ঘৃণার ভীষন প্রয়োজন। কারন এখন আপনি আমাকে ঘৃণা না করলে নীরাকে ভালোবাসতে পারবেননা। আর আপনি নীরাকে ভালোনাবাসলে নীরার plan successfull হবে কি করে? আমি নীরার game plan জানবো কি করে….
তাই আপাদত আমার ঘৃণাটাই আমি চাই…..

নাস্তা করার পর….
নীড় : এখন তো বলবা?
মেরিন : কি?
নীড় : তখন ওই কথাটা বললা কেন?
মেরিন: ও…. ওই কথা? আসলে আপনি ভীষন ভালো মানুষ। এতো ভালো মানুষ বলেই বারবার ঠকে যান। নীরা ঠকায়, সবাই ঠকায় । তাই এবার আমিও ঠকালাম। you are such an emotional fool…
নীড়: মানে?
মেরিন গিয়ে নীড়ের কোলে বসলো। নীড়ের চুল ঠিক করতে করতে
বলল : তারআগে বলুন কালকে যখন ভালোভাবে ভালোবাসতে বললাম বাসলেন না কেন? হামম?
নীড় : তোমার কথা কিছু বুঝিনা।
মেরিন : হাহাহাহাহা…. কালকে যদি একবার বলাতেই রাজী হতেন তাহলে আমার আর এতো কষ্ট করে অশ্রুবিসর্জন দিতে হতো না। আপনাকে emotional blackmail করতে হতো না।
নীড় : clearly বলবা?
মেরিন : মানে খুব সহজ…. আপনার ভালোগিরির একটু সুযোগ আমিও নিলাম।
emotion টা কমান। মেরিন বন্যার নীড় এতো দুর্বল হৃদয়ের হলে চলে?
নীড় : তুমি কি পাগল? কি বলো কি?
মেরিন : হামম। only for you…
মেরিন নীড়ের কোল থেকে উঠে কাজ করতে করতে
বলল: একটু অশ্রুবিসর্জন যদি নীড় আহমেদ চৌধুরী বর্ষন অর্জন হয় আর ক…..
মেরিন কথা শেষ করার আগেই নীড় ঠাস করে মেরিনকে থাপ্পর মারলে।
নীড় : তুমি আসলেই ঘৃণার যোগ্য। তোমাকে ভালোবাসা যায়না।
বলেই নীড় চলে গেলো। গেলো।
.
নীড় : ফাজিল মেয়ে…. কি মনে করে নিজেকে? আমি আসল নকল বুঝিনা? মনে করে সবার সামনে যেমন নিজের emotion লুকিয়ে রাখে মনে করে আমার কাছেও তেমনি পারবে… ১টা থাপ্পর দেয়া ঠিক হয়নি। ১০-১২টা দিলে ভালো হতো। বেয়াদব। মেজাজটাই খারাপ করে দিলো।
.
রাতে…
নীড় বাসায় ফিরলো। দেখলো বাসা অন্ধকার।
নীড় : মেরিন…. মেরিন…
কোনো সারা পেলোনা। লাইট অন করলো। দেখলো মেরিনকে যখন থাপ্পর মেরেছিলো তখন যেভাবে যেই পসিশনে ছিলো এখনও ওই একইভাবে আছে। নীড় অনেক অবাক হলো।
নীড় আগে বারতে লাগলো। তখন দেখলো মেঝেতে রক্ত ভরা। নীড়ের বুকটা কেপে উঠলো।
নীড় ধীর পায়ে মেরিনের কাছে এগিয়ে গেলো। মেরিনকে ছুতে ওর সাহস হচ্ছেনা। কাপা কাপা হাতে মেরিনের গায়ে হাত দিলো। ঠান্ডা হয়ে গেছে।
নীড় : মমমেরিন…. মমমমেরিন.. এই মমমেরিন… ঘোরো…
নীড় মেরিনকে নিজের দিকে ঘোরালো।
দেখলো কপাল কেটে রক্ত বের হতে হতে থেমে গেছে।
নীড় ; মমমেরিন… মেরিন…. মেরিন… 🔊🔊🔊

হসপিটালে…
নীড় মেরিনের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছে। ওর শরীরে রক্ত দেয়া হচ্ছে। ডক্টর বলেছে যদি ১২ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফেরে তাহলে মেরিন কোমায় চলে যাবে।
নীড়ের চোখ দিয়ে পানি পরছে। আর আল্লাহর কাছে দোয়া করছে মেরিনের জন্য। নীড় কখনো ভাবেনি যে ও মেরিনের জন্য দোয়া করবে। কিছুক্ষন পরে মেরিনের জ্ঞান ফিরলো। আর জ্ঞান ফেরার পরই মেরিন নীড়ের নাম নিলো। নীড় কিছুতেই ভেবে পায়না যে মেয়েটা ওকে এতো ভালোবাসে কেন?
.
২দিনপর…
নীড় ফোনে কথা বলে ভেতরে এসে দেখে মেরিন রেডি হচ্ছে। নীড় অবাক হলো।
নীড় : কোথায় যাচ্ছো?
মেরিন : ব্যাংকক….
নীড় : what? এই শরীরে?
মেরিন : হামম। আপনার সমস্যা?
.
চলবে…