পাথরের বুকে ফুল !! Part- 21
ওয়াসেনাতের চোখ ঝিম ঝিম করছে তবুও কেন যেন সামনের দৃশ্য দেখার ইচ্ছে জেগেছে তাই অতি কষ্টে চোখজোড়া খুলে সামনের দিকে তাকানোর চেস্টা করছে।ওয়াসেনাত সামনে তাকিয়ে তেমন অবাক না হলেও তার দুইপাশে তাকিয়ে হতবাক। ওয়াসেনাত হস্পিটালের বেডে শুয়ে আছে।তার চারিপাশে ডাক্তার আর নার্সের অভাব নাই বলেই চলে।আর তার দূই পাশে দুজনে হাত ধরে আছে।একপাশে রিমি ওয়াসেনাতের হাত ধরে হেবার মত শব্দ করে কেদেই চলেছে।আর অন্যপাশে অরিএান চোখমুখ লাল করে পেলেছে কেঁদে কেঁদে। তবে তার কান্নার তেমন শব্দ হয় না।ওয়াসেনাত চরম ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলে উঠে…….
__আশ্চর্য্য ব্যক্তি তো আপনি?কখনো দাতঁ কেলিয়ে হাসেন কখনো আবার ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদেন। সরি ভুল বললাম.. এখন আপনি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাদঁছেন সমস্যা কি বলবেন??অশহ্যকর।নোন স্টোপ ক্রাইং বেবিদের মত কেদেই চলেছেন কেন??
__আমি বলি ওয়াসু।আসলে ওনার মন জুড়ে ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাংগেলে শুধু তুই ঘুড়োস তো আর টানা সারে তিন ঘন্টা তুই সেন্সলেস ছিলি এই কষ্টে ওনি এমন বেবির মত কান্নাজুড়ে দিয়েছে।(নাক টানতে টানতে বলে উঠে)
__হোয়াট রাবিশ 😒আর তুই কেন কান্নাজুড়ে দিলি??
__আরে বুঝছ না কি লাই?? ওনার মনের মত তুই আমার মস্তিষ্কে ঘুড়িস আর তোর বাবা যদি যানে তোর এমন হাল হয়েছে ওনিতো সব দোষ আমারই দিবো।তাই আমার এই কান্না।
:
:
ওয়াসেনাতের কি বলবে বুঝতে পারছে না।সে অরিএানের দিকে মুখ ঘুড়িয়ে তাকাতেই চমকে গেল।অরিএান ঠুসস করে ওয়াসেনাতের হাত ধরা অবস্থায় তার পাশে ডুলে পরলো।ওয়াসেনাত প্রচণ্ড বিশ্ময় ভাবে তাকিয়ে আছে।কি সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার??এভাবে পরে যওয়ার মানে কি? লোকটা কি অসুস্থ?? ওয়াসেনাত ডাক্তারকে ডেকে উঠে।ডাক্তার পাশেই ছিল। রিমি হতবম্ভ হয়ে ভাবছে অরিএান সেন্সলেস হল কেন??
:
:
:
ওয়াসেনাত মায়া মায়া চোখে অরিএানের দিকে তাকিয়ে আছে।ইশশশ ঘুমন্ত চেহারাটা কি কিউট লাগছে। কেমন নিষ্পাপ নিষ্পাপ লাগছে।লোকটা তো বোরিং +ভয়ংকর ছিল কিন্তু এখন কেমন যেন হয়ে গেছে? আসলেই কি লোকটা তাকে এত ভালোবাসে?? কথাগুলো ভাবছে আর নিজের বেডে শুয়ে অরিএানকে দেখছে।অরিএান সেন্সলেস হয়ে গেছে।ডাক্তার বলেছে অরিএান অতিরিক্ত টেনশন নিতে পারে না।তার ধারন ক্ষমতা কমে গেলেই সে সেন্সলেস হয়ে যায়।আর অরিএান খাওয়াদাওয়া করে না ঠিকমত আর ঘুমও যায় না ইদানীং তাই দূর্বলতাও আছে তাই এমন হয়েছে।কিছুক্ষণ পরেই তার সেন্স ফিরবে বলে তাদের ধারনা।
__ওয়াসু তুই কিভাবে এমন ফালতু মেয়ে হতে পারছ বলত??এত বড় ধামরি মেয়ে কিনা হাটতে গিয়েই ধারাম করে পরে গেলি ভাবা যায়??তুই জীবনেও ঠিক করে হাটতে পারবি না??সব সময় ঠাস ঠুস পরবি না হয় ব্যথা পাবি। তুই যানছ দুলাভাই 😛সরি ভুলে বলে ফেলছি তুই এভাবে তাকাচ্ছিস কেন??আমি এমনেই বলছি।আরে তুই তো যানছ না তুই যখন সেন্সলেস হয়ে গেছিলি ওনি তখন পাগলের মত হয়ে গেছিল আমি তো ভয়ই পাইছি।তারপর তোকে ওটিতে ডুকাতে দেয় নি কেবিনে এনে সব ডাক্তারকে জড়ো করেছে। একটা ডাক্তার শুধু বলেছে ওটিতে নিলে ভাল হবে এটা শুনে ওনি কি ধোলাই টা না দিল।পরে ওই ডাক্তারকেই ওটিতে নিয়ে যাওয়া লাগছে। ওনার কথা তোকে ওনার সামনেই ড্রেসিং করতে হবে ব্যস।আমি তো ভয়ে শেষ কি ভয়ংকরই না দেখতে লাগছিল ওনাকে তোকে কি বলমু।তুই দেখলে সেন্সলেস হয়ে যেতি।তারপর তোকে ইনজেকশন দিতে গেছিল ডাক্তার ওনি বলছে যাতে তুই ব্যথা না পাশ এভাবে যাতে দেয়।ইশশশ ভাই ওনি তোকে সেই লেভেলের ভালোবাসে।শুধু শুধু প্যারা দেস কা??
:
:
:
ওয়াসেনাত মনোযোগ দিকে কথাগুলো শুনলো কিন্তু কিছু বলল না।সে অরিএানের মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
:
:
:
ওয়াসেনাতের বাবা কলিং বেলের শব্দে দরজাটা খুলেই ভয়াত্নক দৃষ্টিতে বাহিরে তাকিয়ে আছে।যে কোন বাবাই তার মেয়েকে একটা ছেলের কোলে এভাবে দেখলে এমন দৃষ্টিই নিক্ষেপ করবে এটা সাভাবিক নয় কি??হুম অরিএান ওয়াসেনাতকে কোলে নিয়ে তার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।হস্পিটাল থেকে বাসার সামনে এসেই অরিএান ওয়াসেনাতকে কোলে তুলে নেয় কারন ওয়াসেনাত ভালো করে হাটতে পারছে না।ওয়াসেনাত অনেক বার নিষেধ করেছে কিন্তু অরিএান শুনে নি। রিমিও তাদের সাথে আছে।
__আসলে ও পায়ে ব্যথা পেয়েছে তাই এভাবে আনতে হয়েছে।
:
:
:
অরিএান ওয়াসেনাতের বাবাকে এভাবে তাকাতে দেখে ইতস্তবোদ করে কথাটা বলে উঠে।ওয়াসেনাতের বাবার কানে কোনো কথাই যাচ্ছে না। ওনি আসলে ওয়াসেনাতকে অরিএানের কোলে দেখে যতটা না সক্ট হয়েছে এর চাইতে বেশি অরিএানকে দেখে হয়েছে।তিনি এটাই ভুলে গেছে অরিএান তার বস আর বসকে দেখলে যে তার পিছন পিছন বস বস বলে ঘুড়তে হয় এটা তো তিনি ভুলে গেছেনই সাথে তাকে বাসায় ডুকাতে বলতেই ভুলে গেছে।রিমির ডাকে তার হুশশশ কিছুটা হলেও আসে…….
__আঙ্কেল আর কত সময় এভাবে দাড়িয়ে থালবো।ওয়াসেনাতকে শুয়ে দিতে হবে তো।ও বেশ ব্যথা পেয়েছে।ডুকতে দিবেন না??
__ওয়াসেনাত ব্যথা পেয়েছে? কোথায় দেখি? ভিতরে নিয়ে এসো?(হকচটা টাইপের করে বলে উঠলেন)
:
:
:
অরিএান ওয়াসেনাতকে নিয়ে তার রুমের দিকে গেল রিমিই দেখিয়ে দিয়েছে।অরিএান দেওয়াল টপকে এসেছে বটে কিন্তু সামনা সামনি এই প্রথম।অরিএান ওয়াসেনাতকে শুইয়ে দিতে দিতে ওয়াসেনাতের গালে টুপুস করে একটা চুমু খায় আর বলে……
__জানেমান নিজের খেয়াল রেখ। আর কল রিসিভ করবে তা না হলে আমি কিন্তু বারান্দা দিয়ে এসে পরবো।আশা করি এটা তোমার জন্যে ভালো হবে না।
:
:
:
ওয়াসেনাত অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এই লোকটাকে সে ভাজা মাছটা উল্টে খেতে যানে না টাইপের ছেলে মনে করেছিল আর এত এখন শুধু মাছ না রোস্টও উল্টে খেতে পারা টাইপের ছেলে। জাস্ট অশহ্য। ওয়াসেনাতের প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে তার ইচ্ছে করছে ছেলেটার সব তর্কি স্টাইলের চুল গুলো ছিড়ে বাংলা টাকলা স্টাইল করে দিতে।ওয়াসেনাত এটা ভেবেই ভয় পাচ্ছে তার বাবা না জানি কি বলবে??
:
:
:
অরিএান রুম থেকে বাহিরে আসতেই ওয়াসেনাতের বাবা তাকে বলে উঠে…….
__স্যার আপনি ওয়াসেনাতকে কোথায় পেয়েছেন??
__রাস্তায়। আসলে আমি যাচ্ছিলাম রাস্তার পাশ দিয়ে তখনই দেখেছি।
__স্যার আমি কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারছি না?আসলে…
__ধন্যবাদ বলতে হবে না।এটা তো আমার কাজই ছিল।যাই হক ওর পায়ের দিকে খেয়াল রাখবেন।কিছুতেই যাতে ইনফেকশন না হয় আর মেডিসিন গুলোও ঠিকমত দিবেন।ও মনে হয় খাওয়াদাওয়া কম করে সে দিকেও খেয়াল রাখবেন।বেশি হাটা চলা করতে দিবেন না। একদিন পর পর আমার ডাক্তার এসে ওর ড্রেসিং করে দিয়ে যাবে। পা ভাল না হওয়া পর্যন্ত বাহিরে যাওয়া নিষেধ।
:
:
:
কথাগুলো বলেই দরজা দিয়ে বাহিরে চলে যায়।এদিকে ওয়াসেনাতের বাবা হা করে তাকিয়ে আছে।সে এটা যানে তার বস প্রচণ্ড রাগি আর কম কথার মানুষ।সাধারনত ওনার সাথে কোন স্টাফের তেমন দেখা হয় না আর এখানে ওনি নিজে তার বাড়িতে এসেছে ব্যাপারটা সম্পূর্ন্য তার মাথার উপড় দিয়ে যাচ্ছে। ওয়াসেনাতের ফুফু ব্যাপারটা নিয়ে নানান কথা বলেই চলেছে আর তার মেয়ে তো অরিএানকে দেখেই হা।
:
:
:
ওয়াসেনাতের নবীন বরণে যাওয়া ক্যান্সেল হয়ে গেছে।সে এখন সারা দিন বাসায় থাকে আর অরিএানের সাথে কথা বলে।সখে না বাদ্ধ হয়ে। ওয়াসেনাত একদিন কল রিসিভ করে নাই তাই অরিএান তার রুমে চলে এসেছে সে থেকে ওয়াসেনাতে অরিএানের কল রিসিভ করে আর ঘন্টার পর ঘন্টা বকবক করে আসলে সে না অরিএানই করে সে শুধু শুনে।অরিএানের সাথে কথা বলতে এখন তারো ভালো লাগে। কিন্তু এটা কখনো প্রকাশ করা হয় নি।ওয়াসেনাত বলুক বা নাবলুক তার মনে যে অরিএানের জন্যে অসংখ্য ভালোবাসা লুকাইত আছে এটা রিমি বেশ বুঝতে পেরেছে।কারন এখন সে ওয়াসেনাতের সামনেই অরিএানকে দুলাভাই বলে ডাকে আর ওয়াসেনাত মিটিমিটি হাসে।
:
:
:
:
আজ ওয়াসেনাতের ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে। তাই সে সম্পূর্ন্য বাসা হেটে বেড়াছে। ওয়াসেনাত দরজা খুলতেই অবাক তার সামনে ইহান এবং তার মা,বাবা,দাঁড়িয়ে আছে।ওয়াসেনাতকে দেখেই ইহান বলে উঠে……..
__আজ কত গুলো মাস পরে তোমাকে দেখছি??কেমন আছ তুমি?ভিতরে আসতে বলবে না?আর হ্যাঁ তোমাকে ধন্যবাদ। কেনো দিয়েছি?এটাই ভাবছ তাই তো আসলে তোমার কারনেই আমি আজ সুস্থ। তোমার ভালোবাসার টানে আজ আমি এখানে।
__ওয়াসেনাত কে এসেছে??(ওয়াসেনাতের মা বলতে বলতে আসে)
__কি হল মা ভিতরে আসতে বলবে না?(ইহানের মা)
:
:
:
ওয়াসেনাত জবাবে কিছু বলল না শুধু দরজা থেকে সরে গেল।ইহান তার বাবা মাকে নিয়ে ভিতরে সোফায় বসে পরে আর ওয়াসেনাতের বাবা মার সাথে কথা বলবে বলে তাদের ডাকতে বলে। ওয়াসেনাতের মা এখানেই ছিল কিন্তু তার বাবা ভিতরে ছিল। তিনি খবরের কাগজ হাতে নিয়ে এসেই এদের দেখে থমেরে দাঁড়িয়ে পড়ে……….
:
:
:
__কি বলছিস?
__হুম । আজ ইহান তার মা বাবা নিয়ে ভাবির বাসায় গেছে। বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।তোর কি মনে হয় এখন কি করার প্রয়োজন??
__কুত্তার বাচ্চাকে শুধু কোমায় না মাটিতে পুতে ফেলার প্রয়োজন ছিল।আমি কিভাবে এই ভুল করতে পারলাম (বলেই হাতের কাঁচের গ্লাসটা মুঠ করে গুড়িগুড়ি করে ফেলে)
__অরিএান এভাবে মাথা গরম করে বা নিজের ক্ষতি করে লাভ নেই। দেখ কত রক্ত জড়ছে।কিভাবে পারছ নিজেকে এত কস্ট দিতে।(অরিএানের হাতের রক্ত বন্ধ করার চেস্টা করতে করতে বলে উঠে)
__অনেক হয়েছে আর না এবার বুঝাতে হবে অরিএান কি জিনিস।আমার ফুলে হাত দিয়েছে বলে ওর হাত ভেঙ্গেছি কিন্তু এবার জানটাই নিয়ে নিবো।সাহস হয় কিভাবে আমার জিনিসে এভাবে নিজের অধিকার ফলানো। আমি সব মেনে নিলেও ওয়াসেনাতের সাথে নো কম্পোমাইজ। নেভার।(বলেই সামনের কাঁচের টেবিলটা উপড়ে তুলে ছুড়ে মারে আর রক্তাক্ত হাত নিয়েই ওয়াসেনাতের বাসার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে)
:
:
রিমনের প্রচণ্ড ভয় করছে না জানি কি হয়। অরিএান তো মনে হয় ইহানকে মাটিতেই পুতে দিবে।রিমন এত দিনে এটা বুঝেছে অরিএানের জীবন এখন ওয়াসেনাত। ওয়াসেনাত অরিএানের অক্সিজেন। আর জীবন বাঁচাতে মানুষ কি কি করতে পারে এটা বলা দুষ্কর….ব্যাপারটা ভাবতেই রিমনের ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।………
#চলব____________🍁