পাথরের বুকে ফুল

পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 42

___________________________
মাঠের সব প্রান্ত ভেজা।সবুজ সতেজ গাছপালায় শিশির কণার মত জমেছে বৃষ্টি কণা।অরিত্রান ভেজা ঘাসে দাড়িয়ে আছে।নিজের রুমের সাদা পর্দা ঠেলে তাকিয়ে আছে ওয়াসেনাত।বিকেল এখন।অরিত্রান আর বাড়ি যায় নি।এত সকালে শপিংয়েও যেতে দেয়নি ওয়াসিকা।অরিত্রান নিজের রাগটা কমাতেই বাহিরে এসেছিলো।তারপরে আর সে ভেতরে যানি।ওয়াসেনাত,রিমি,রিমন,ওয়াসিকা প্রায় সবাই তাকে ডাকতে এসেছিলো।কিন্তু সে গেলো না।তখন বৃষ্টিও ছিলো তুমুল।সেই বৃষ্টিতে গাঁ ভিজিয়ে দাড়িয়ে ছিলো অরিত্রান।তৌফিক লোকটা যে এত ঘাড় তেড়া তার যানা ছিলো না।অরিত্রানের পায়ে জুতো নেই।সে খালি পায়েই বেরিয়ে এসেছে।প্যান্টের নিচের অংশ পায়ের পাতা থেকে অনেকটা উপরে তার।সাদা পা জোড়া ভিজে আছে।গায়ের লেমন কালার শার্ট ভিজে সবুজ রঙ ধারন করেছে।মাথার চুল বেয়ে ঝুপ ঝুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।বৃষ্টি যখন আবার গুমুট আকাশ ভেদ করে অরিত্রানের গায়ে ঝাপিয়ে পড়া শুরু করে তখনই মাথার উপরে কিছু একটা এসে সেই বৃষ্টিকে অরিত্রানের গায়ে পড়া বাচিঁয়ে দেয়।ওয়াসেনাত খালি পা জোড়া উঁচু করে ছাতা ধরেছে অরিত্রানের মাথায়।মুখটা তার একদম পান্ষুট হয়ে আছে।অরিত্রান নিজের শরীরে বৃষ্টির স্পর্শ না পেয়ে একটু চমকিত হয়ে পাশ ফিরে তাকালো।ওয়াসেনাত বিরক্ত গলায় বললো,

—-“ এত লম্বা কেন আপনি???আর একটু খাটো হতে পারতেন।আপনার সব কিছুই বেশি বেশি।”
কথা শেষ করে ওয়াসেনাত ঠোঁট উল্টে নিলো।অরিত্রান হাসলো।ওয়াসেনাতের মাথার উড়না ভিজে চোখে মুখে গড়িয়ে পড়ছে পানি।নিজে ভিজে অরিত্রানকে পানির হাত থেকে বাচাঁচ্ছে সে।অরিত্রান সব কিছুকে ঠেকরে বললো,
—-“ তোমার হিটলার বাবা নিশ্চুই বাসায় নেই??”
ওয়াসেনাত যেন আরো বিরক্ত হলো।মেজাজ দেখিয়ে বললো,
—-“ বাবাকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না কয়বার বলেছি??”
—-“ তো কি করবো??তোমার বাবা এতো ঘাড় তেড়া লোক??ও মাই গোড!!”অরিত্রানের হতাশ গলা।
নিজের পা আর একটু উঁচিয়ে দাড়াঁলো ওয়াসেনাত।পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুলের উপরে সে ভর দিয়ে দাড়িয়ে আছে।নরম মাটিতে নখ ডেবে আছে তার।ফিসফিস করা গলায় ওয়াসেনাত বললো,
—-“ বাবার একটা টপ সিক্রেট হচ্ছে তিনি মানুষের কাছে নিজেকে কঠিন প্রানী হিসেবে প্রমান করতে চায়।আসলে কিন্তু তিনি মোটেও তেমন নন।আপনি চেষ্টা করে যান।দেখবেন একসময় বাবা আমার চেয়ে আপনাকে বেশি ভালোবাসবে।”
ওয়াসেনাতের মিষ্টি কথাটাও তেতো লাগছে অরিত্রানের কাছে।তাচ্ছিল্যের একটা হাসি হাসলো অরিত্রান।পকেটে হাত গুঁজে বললো,
—-“ তোমার বাবা আর আমি দুই মেরুর ।আর যাই হোক তিনি আমাকে ভালোবাসবে এটা এই জীবনে পসিবল না।থালতু কথা রাখো।”
বেঁকে তেড়ে পরে যাচ্ছে ওয়াসেনাত।অরিত্রানের ঘাড়ের কাছেও সে যায় না।বুক অবদী তার ঠিকানা।ওয়াসেনাত একটু বেঁকে পড়তেই অরিত্রান হাত টেনে ধরে।ছাতা নিজের হাতে নিয়ে ওয়াসেনাতকে দাড় করিয়ে দেয়।ওয়াসেনাত দাড়াতে দাড়াতে বললো,
—-“ বাপরে বাপ আপনি কি লম্বু।একদম খাম্বার মত।”
—-“ এখানেও বাপ??বাবা ছাড়া কিছু বুঝনা??তুমি তোমার বাবার কথা আমার সামনে একদম বলবে না।জাস্ট ডিজগাষ্টিং ম্যান।”অরিত্রানের রাগি গলা।
ঠোঁট টিপে ওয়াসেনাত হাসে।অরিত্রান তিক্ত নজরে তাকায়।ওয়াসেনাত ভেজা ঘাসে পা ফেলে হাঁটে।অরিত্রান ছাতা ধরে আছে দুজনের মাথায়।ওয়াসেনাত বাচ্চাদের মত লাফিয়ে হাটছে।পানির ছিটে অরিত্রানের পায়ে এসে পড়ছে।অরিত্রানের উদাসিন দৃষ্টি বৃষ্টির দিকে।কখনো হার যাকে ছুঁয়ে যেতে পারেনি সে কি পৃথিবীর সবচাইতে বড় হারের সাথে পরিচিত হতে চলেছে??যাকে বলে ভালোবাসার হার!!!ওয়াসেনাত দুষ্টু ভঙ্গিতে অরিত্রানের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“ আপনি কি আমার বাবাকে ভয় পান???”
বেশ রাগ নিয়ে অরিত্রান গলা উঁচিয়ে বললো,

—-“ মোটেও না।সবাই অরিত্রান খানকে ভয় পায়।আর সে কিনা তোমার ওই জার্নালিষ্ট বাবাকে ভয় পাবে!!ইম্পসিবল।”
বুক ফুলিয়ে অরিত্রান নিঃশ্বাস ফেলে।ওয়াসেনাত ভীতু গলায় উত্তেজিত হয়ে বললো,
—-“ বাবা তুমি এখানে??না মানে ইয়ে আমি আসলে!!!”
—-“ কোথায় তোমার বাবা??অরিত্রানের চঞ্চল চোখ!
চারদিকে চোখ দৌড়িয়ে অরিত্রান কাউকেই দেখতে পেলো না।হাপঁ ছেড়ে বাঁচার মত একটা শ্বাস নিলো সে।ওয়াসেনাত খিলখিল করে হেসে উঠে।ভ্রু-কুঁচকে তাকায় অরিত্রান।ওয়াসেনাত ঠোঁট টিপে হেসে বললো,
—-“ আপনি বাবাকে ভয় পান।এই যে আপনার চোখে মুখে আঁতঙ্ক দেখেই সব বুঝা যাচ্ছে।”হিহি ওয়াসেনাত মুখ টিপে আবার হাসে।বাড়ির পিছনের দিকে দোলনা দুলছে।ওয়াসেনাতের দোলনা খুব পছন্দ তাই তার বাবা ছাদে এবং বাগানে দোলনার ব্যবস্থা করেছে।ধপ করে ওয়াসেনাত দোলনায় বসে।অরিত্রান ছাতা এগিয়ে তার মাথায় ধরে।হাত টেনে অরিত্রানকে নিজের পাশে বসিয়ে দেয় ওয়াসানাত।অরিত্রান বৃষ্টির দিকে একবার তাকিয়ে চোখ তুলে ওয়াসেনাতকে দেখে।ওয়াসেনাতের দিকে তাকায়।মুখের কোণায় কোণায় বিন্দু বিন্দু পানি জমেছে।মুক্তর মত যেন জ্বলজ্বল করছে সে পানি।মাথায় নীল উড়না পেচিঁয়ে রেখেছে সে।অরিত্রান চারপাশে একবার তাকায়।এই দিক থেকে কিছুই দেখা যায় না।ছাদ থেকেও দেখা যাবে না।এই দিকে ওয়াসেনাতের রুম আর উপরে তাদের ছাদ।অরিত্রান ভয় পায় না।কিন্তু ওয়াসেনাতকে সে বিপদে ফেলতে চায় না।অরিত্রানের চার পাশে তাকানো দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায় ওয়াসেনাত।অরিত্রান ছাতা এক হাতে রেখে আর এক হাত ওয়াসেনাতের গালে রাখে।দু’গালের পানি মুছে দিতে শুরু করে।আর একটু কাছে এসে ঝুঁকে বসে।বলে,
—-“ ভালোবাসায় শর্ত হয় না আমি জানি।
তবুও আমার শর্ত দিতে ইচ্ছে করছে।
বলতে ইচ্ছে করছে আমি শতরূপে শতবার

তোমাকেই চাই।ঠোঁটের ছাঁয়া থেকে বহু দূরে চোখে চোখ রেখে দু’হাতে দু’হাত জড়িয়ে হলেও আমি তোমাকে চাই।
আমি তোমার মত নয় শুধু তোমাকেই চাই।তোমাকে ভালোবেসে আমার পৃথিবী রাঙাতে চাই।শুধু তোমাকে ভালোবেসে।”
ওয়াসেনাতের দৃষ্টি স্থির হয়ে আছে।পানি কণা চিকচিক করছে চোখে।দু’হাতে অরিত্রানের হাত গালের সাথে আকঁড়ে ধরে বললো,
—-“ আমি শুধু আপনারি হতে চাই রুডি সাহেব।আপনি একটু বেশিই ভালোবেসে ফেলেছেন।আমার বুক জুড়ে ভয়ের খেলা চলছে।বাবা যদি না মানে??এত ভালোবাসা রেখেও আমাকে হারতে হবে।তখন কি হবে?তাই বলছি এতো ভালোবাসবেন না আমাকে।আমি যে আপনার ভালোবাসায় অপরাধী হয়ে যাবো।”
অরিত্রানের বুক ধক করে উঠে।ওয়াসেনাতের গালে হাত বুলিয়ে বললো,
—-“ তোমার বাবা মানবে না মানে কি??হারতে হবে মানে কি??তুমি যেমন তোমার কোমল হৃদয় দিয়ে আমার হৃদয় জ্বালিয়েছো আমি ও তোমার বাবার মনে জায়গা করতে পারবো।আমার সারাজীবনের জন্য নয় শুধু পরের সব কালের জন্যও তোমাকেই চাই।”
ওয়াসেনাত ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।কান্নামাখা গলায় বলে,
—-“ বাবার সাথে আপনার কথাগুলো আমি শুনেছি।আমার বড্ড ভয় করছে।বাবা মেনে নিবে না।তাহলে কি হবে??হারানোর ভয়ে আমার বুকটা বড্ড কাঁপছে।”
অরিত্রান দীর্ঘশ্বাস নেয়।হাত সরিয়ে সোজা হয়ে বসে।কঠিন গলায় বলে,
—-“ না মানলে দেশ ছাড়বো তোমাকে নিয়েই।”
আতঙ্কিত গলায় ওয়াসেনাত বলে,
—-“ বাবাকে ধোঁকা দিবো??”
—-“ দরকার পড়লে দিবা।যে বাবা মেয়ের ভালোবাসার কথা ভাবে না তার কথা তুমি কেন ভাবতে যাবে।মেয়ে হয়েছো বলে কি তাদের সব কথা শুনতে হবে।মোটেও না।নেভাব।তোমার বাবা রাজি না হলে পালিয়ে যাবো।এটা তো তুমি নতুন করছো না??এমন অনেক মেয়েই করেছে।আমার তো মনে হচ্ছে বেষ্ট সিদ্ধান্ত ছিলো।বাবারা এমন হলে মেয়েদেরও এমন হওয়া উঁচিত।”
ওয়াসেনাত নীরব হয়ে বসে আছে।অরিত্রানের কঠিন মুখের দিকে সে তাকাচ্ছে না।তার মনে হচ্ছে মন নামক অবাধ্য জিনিসকে নিয়ে সে পারছে না।তার মন দুই সত্তায় রূপ নিয়েছে।কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে ওয়াসেনাত বললো,
—-“ বাবা বাবাই হয়।আমি যেমন নিজের মনকে আপনার ভালোবাসায় আবদ্ধ হওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি।বাবাকেও ধোঁকা দিতে পারবো না।কিছুতেই না।পাগল হলেও সে বাবা ভালো হলেও সে বাবা।”
অরিত্রান দাঁতে দাঁত চেপে তাকালো।রাগে যে তার মুখ লাল হচ্ছে ওয়াসেনাত তা বুঝতে পেরেছে।ওয়াসেনাতের কলিজায় টান পড়ছে।কাঁদছে খুব করে।এমন ভালোবাসা অরিত্রান ছাড়া কারো থেকে পাবে না সে।এই মূল্যবান ভালোবাসা হারাতে চায় না সে কিছুতেই না।অরিত্রানের হাত নিজের মুঠোয় নেয়।নাক টেনে শ্বাস নেয়।কান্নায় জড়িয়ে আসা গলায় সে বললো,
—-“ বাবাকে মানিয়ে নিতে পারবেন না???আমার জন্য??
—-“ তোমার জন্য আমি সব করতে পারবো।সব।”
ওয়াসোনাতের হাত চেপে ধরে অরিত্রান।কথাটা বললেও অরিত্রানের মুখে চিন্তার ছাপ পরে।বলে তো দিলো সে সব পারবে।কিন্তু যে নিজে থেকে পরিবর্তন হতে চায় না তাকে কিভাবে করবে সে??এত কিছু সে জানে না।তৌফিক সাহেব না রাজি হলে ওয়াসেনাতকে সে তুলে নিয়ে যাবে।কি আর হবে??কয়েক দিন রাগা রাগি চলবে।এর বিনিময়ে ওয়াসেনাত তার হলে আর কিছুই লাগবে না তার।

_____________________
অরূপকে গেটের সামনে গাড়ি নিয়ে দাড়িঁয়ে থাকতে দেখে অরিত্রানের মাথা গরম হয়ে যায়।ওয়াসেনাত চমকিত চোখে তাকিয়ে আছে।রিমিও চমকালো।অরূপ অরিত্রানকে আশা করে নি।এমন মুখ করে তাকিয়ে অরিত্রানকে দেখছে সে।অরিত্রান কথা বাড়ালো না।দ্রুত গাড়িতে উঠে বসে সে।পাশের দরজা খোলা রেখেছে।লামিয়ার বায়না সেও যাবে তাই তাকেও নেওয়া হচ্ছে।রিমন গোঁফা মাহির থেকে গোঁফা ভাইয়া হয়ে উঠেছে।ওয়াসেনাতের সাথে এই কয়েক ঘন্টায় তার দারুন সখ্যতা হয়েছে।লামিয়া অরূপের দিকে তাকিয়ে একটু চিন্তিত গলায় ওয়াসেনাতের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
—-“ কারে নিবো বুঝতে পারছিনা।তুই বলতো কে বেশি সুন্দর???”
ওয়াসেনাত কপাল কুঁচকে তাকায়।লামিয়া নিজেই লাফিয়ে বললো,
—-“ অরিত্রান খান বেশি স্মার্ট।ওরেই নিবো।প্রথম দেখায় ভালো লাগছে বেশি।কি বলছ??”
ওয়াসেনাত অবাক হয়ে হাবার মত তাকিয়ে আছে।লামিয়া নিজের মত বলে উঠে,
—-“ অরিত্রানের বডি জোসসসস্!!”
—-“ আপু এগুলো কেমন কথা??”রাগি গলা ওয়াসেনাতের।লামিয়া চোখ রাঙিয়ে বললো,
—-“ এই আপু বলছ কা??আমি তোর থেকে বেশি বড় না।মাত্র ৩বছরের বড়।নাম ধরে ডাক।বিশেষ করে ওই অরিত্রানের সামনে।ভুলেও আপু ডাকবি না।”
ওয়াসেনাতকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অরিত্রানের পাশে বসতে নেয় লামিয়া।অরিত্রান চোখে কঠিন ভাব নিয়ে বললো,
—-“ এটা তোমার জায়গা না।এখানে বসবে না।”
লামিয়া অপমানিত হয়ে পিছনে বসে।ওয়াসেনাতের সামনে দু’টি গাড়ি।দুটির দরজাই তার জন্য খোলা।ওয়াসেনাত ভেবে পাচ্ছে না কি করবে??অরিত্রানের পাশেই বসবে সে।সেদিকে যেতেই অরূপ বললো,
—-“ তুমি ওই গাড়ির দিকে কেন যাচ্ছো??এদিকে এসো ওয়াসু।”
ওয়াসেনাত ভীতু চোখে অরিত্রানের দিকে তাকায়।অরিত্রানের চোখ কঠিন।চোয়াল শক্ত।ঠাস করে দরজা খুলে বেরিয়ে সে বললো,
—-“ ও কোন গাড়িতে বসবে সেটা ওকেই ডিসাইড করতে দিলে ভালো হয়।”
—-“ আপনার গাড়িতে এতো মানুষের জায়গা হবে না।ওয়াসু আমার গাড়িতেই আসুক।রিমি যে কি??ওর যে কেন আবার শপিং করতে ইচ্ছে হলো কে জানে??যাই হোক ওয়াসু আমার গাড়িতে এসো।”দরজা খুলে দিয়ে বললো অরূপ।
—-“ গাড়িতে বসো পরীজা!!!”অরিত্রানের ঝাঁঝালো কন্ঠ।
অরূপ রেগে তাকালো।ক্ষুদ্ধ গলায় বললো,
—-“ সমস্যাটা কি আপনার??আমি বলেছি না ও আমার গাড়িতে যাবে।”
—-“ তুমি বলার কে??হু আ’র ইউ???”
—-“ আপনি কে তাহলে??”
—-“ অরূপ তোমার সাহসতো খুব বেশি দেখছি।আমি কে যানো না???”
ওয়াসেনাত বুঝতে পেরেছে মামলা এবার গুরুতর।কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিমন গাড়ির হর্ন চাপলো।জানালা দিয়ে মাথা বের করে বললো,
—-“ ভাবীসাহেবা আপনি কি আমার গাড়িতে করে যাবেন,??”
ওয়াসেনাত দ্রুত উঠে বসে।অরিত্রান আর অরূপ তাকিয়ে থাকতে থাকতেই রিমন ওয়াসেনাতকে নিয়ে ফুসসসস্।

________________
শপিংমলে ছুঁটাছুটি হচ্ছে তুমুল হারে।ওয়াসেনাত এই ব্যাপারে খুবই বিরক্ত।শপিংমল সম্পূর্ন খালি করা হয়েছে।দোকানের লোক বাদে তেমন কেউই নেই।রিমি মহা খুশি।নতুন করে আবার শপিং করতে পারবে সে।মনে মনে কত লেহেঙ্গা পছন্দ হয়েছিলো তার।কিন্তু আগেই শপিং করে ফেলেছে তাই আর সুযোগ ছিলো না।কিন্তু আজ তো মেঘনা চাইতেই জল এসে হাজিত।সব পছন্দের মধ্যে কিনছে সে।লামিয়াও কিনছে।শত হোক আজ বড় অফার।অরূপ যেন ওয়াসেনাতের পিছনে পিছনে ঘুরবে বলেই এসেছে।ওয়াসেনাত যেদিকে যায় অরূপ তার পিছন পিছন যায়।অরিত্রান গোল বলের সোফায় বসে সাপের মত ফসফস করছে।বাঘের মত ফুলছেসে।অরূপকে মেরে ফেলতে পারলেই যেন তার ভালো লাগলো।অরিত্রান চোখ ঘুরিয়ে চারপাশ দেখে।সাদা জামদানী ঝুলে আছে একটা দোকানে।অরিত্রান উঠে দাড়ায়।দোকানের গ্লাস ঠেলে ভিতরে যায়।জামদানি দেখিয়ে বলে,
—-“ এটা দেও।”
সাথে সাথে নামিয়ে দেওয়া হলো।অরিত্রান মনোযোগী হয়ে ভাবে।লালের কথা মনে পড়ে।কিন্তু শাড়িতো সাদা।লালের কাজ তো নেই।পাশ দিয়ে এক মহিলাকে যেতে দেখে অরিত্রান চোখ তুলে তাকায়।ব্লাউজের কথা মনে পরে।লাল ব্লাউজ নেয় সে।শাড়ি ব্লাউজ হাতে ওয়াসেনাতের সামনে দাড়িয়ে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
—-“ এটা তোমার জন্য।”
অরূপও কোথেকে নীল শাড়ি নিয়ে সামনে দাড়ায়।অরিত্রানের হাতে সাদা শাড়িটা দেখেই কপাল কুঁচকে নেই।অরিত্রানের চোখে রাগ।চোয়াল শক্ত কাঠ বানিয়ে তাকিয়ে আছে।আবার কিছু একটা হবে তাই ওয়াসেনাতে বললো ,
—-“ আমি শাড়ি সামলে চলতে পারি না।আমি জামাই কিনবো।”
ওয়াসেনাত সামনে থেকে সরে যায়।অরিত্রান শাড়ি ছুঁড়ে দিয়ে অরূপের দিকে ঝাঁঝালো চোখে তাকিয়ে থাকে।অরূপ সরে যায়।অরিত্রানের চোখ দেখলেই তার ভয় লাগে।
অরিত্রান শুধু বসেই ছিলো সবাই যে যার মত কিনেছে।মাঝে একবার উঠে অরিত্রান ওয়াসেনাতের পায়ের জন্য নুপুর কিনেছে।ওয়াসেনাত কালো জামা কিনেছে একটা নিজের টাকায়।অরিত্রান কিছুই বললো না।তবে জামাটা অরিত্রানের পছন্দের।চোখের ভাষা ভয়ংকর হয়।সেই ভাষা সবাই বুঝে না।অরিত্রান বুঝিয়ে দিয়েছে।
সবাই আর একটু পরেই বেড়িয়ে যাবে।ওয়াসেনাত ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে আসতেই হাতে টান পরে তার।হেচকা টান খেয়ে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নেয়ে সে।ভয়ে চিৎকার করতে যাবে তার আগেই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে কেউ।চোখ বড় বড় করে তাকায় ওয়াসেনাত।ভয়ে হাত পা কাঁপছে।অন্ধাকার জায়গা হওয়ায় কিছুই দেখতে পাচ্ছে না সে।হাত কচলাচ্ছে।নড়াচড়া করতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না।
#চলবে…
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।
@হাফসা_______