পাথরের বুকে ফুল

পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 41

___________________________
সকাল থেকেই ঝুম বৃষ্টি।বৃষ্টির সাথে যোগ হয়েছে বাতাস।বর্ষার ঋতু যায় যায়।এই সময় বৃষ্টি নামে আপন মনে।কাল রাত থেকেই এই ঝপাং ঝপাং বৃষ্টি পড়ছে।মাতাল করা ভিজা গন্ধ ছড়িয়ে আছে চারদিকে।ঘুম ঘুম একটা পরিবেশ।ওয়াসেনাতের চোখে এখনো তীব্র ঘুম।ঘুমের কারনে চোখ খুলতে পারছে না সে।কিন্তু মাথার উপরের জানালাটা হঠাৎ কোন কারন ছাড়া খুলে গেছে।বিনা নোটিশে এভাবে জানালা খুলে যাওয়ার কোন কারণ জানা নেই ওয়াসেনাতের।সকালের ঘুমটা কড়া হয়।জানালা খোলা থাকায় বৃষ্টির অবাধ্য ফোঁটা গুলো বিন্দু বিন্দু মুক্তদানার মত ঝাপিয়ে পড়ছে ওয়াসেনাতের চোখে মুখে।মুখের বেশির ভাগ অংশ ভিজে গেছে বৃষ্টির পানিতে।চোখের উপরে এমন পানির ঝাপটায় প্রচন্ড বিরক্ত ওয়াসেনাত।এতো মজার ঘুম ভাঙার অপরাধে প্রিয় বৃষ্টিকেও বকে দিতে ইচ্ছে করছে ওয়াসেনাতের।কিন্তু বৃষ্টি তো অবাধ্য।শাসনের সুর তুলে কিছু বললেও সে শুনবে না।ওয়াসেনাত মুখ ভর্তি বিন্দু বিন্দু পানি কণা নিয়ে উঠে বসেছে।পিটপিট করে চোখ খুলে সামনে তাকায়।রুম অন্ধকার হয়ে আছে।আকাশে কালো মেঘ।সেই মেঘের ছাঁয়া যেন রুমের কোণায় কোণায় এসে মিশেছে।একঝাঁক বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে তাকালো ওয়াসেনাত।কপালে তার পানির ছিটে।ভাজ পরেছে কয়কটা।দু’হাতে মুখটা মুছে নিয়ে পিছনের দিকে ফিরে তাকায় ওয়াসেনাত।বাহিরের বৃষ্টি এখন ভালো লাগলেও ঘুমটা বেশি চোখে।এই কয়েক দিনে তার ভালো ঘুম হয়নি।মায়ের সেবা আর পরীক্ষা মিলিয়ে অনেক পরিশ্রম হয়েছে তার।ভাগ্যিস রিমির বিয়ে পিছিয়ে নেওয়া হয়েছে তা না হলে যে কি হতো ওয়াসেনাত ভেবে পায় না।ধপ করে জানালা বন্ধ করে দিয়েছে ওয়াসেনাত।বালিশে মুখ গুঁজে আবার শুয়ে পরেছে সে।আজ অনেক ঘুমাবে।তার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে।মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানেই কলিং বেলের বেরসিক শব্দ কানে আসে ওয়াসেনাতের।বিরক্তির সাথে রাগ মিলিয়ে বাজে একটা অনুভুতি হচ্ছে ওয়াসেনাতের।বেশ রেগেই চোখ খুলে সে।কলিং বেলও খুবই বাজে ভাবে বেজেই চলেছে।কেউ খুলছেও না।সবাই যে কই এটাই বুঝতে পারছে না ওয়াসেনাত।তাকে আজ কিছুতেই ঘুমাতে দিবে না এটাই যেন সবার পরিকল্পনা।চুপসানো মুখ নিয়ে ওয়াসেনাত বিছানায় উঠে বসে।অলস লাগছে খুব।তুবও নিজেকে টেনে তুলে রুমের বাহিরে আসে সে।সামনের রুমেই মেইন দরজা।হাই তুলতে তুলতে এলোমেলো শরীরে ওয়াসেনাত দরজাটা খুলে দেয়। ঘুমের ঝোকে সে ঢুলে পরছে যেন।দরজা খুলে কে এসেছে না দেখেই সরে যেতে চায় ওয়াসেনাত।তার জীবন যেন আজ ঘুম।এই ঘুমের জন্য আজ সে সব করতে পারবে।গলার কাছের চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে সামনে হাটা দেয় ওয়াসেনাত।ঠিক সেই সময়ে হঠাৎ কেউ জাপ্টে ধরে তাকে।প্রথমে প্রচন্ড ভয়ে ওয়াসেনাত অবাক হয়ে চোখ খুলে তাকায়।সামনের মানুষ গুলোকে দেখে ঘুম যেন দৌড়ে পালালো।চমকের সাথে ওয়াসেনাত অবাকও হলো।ঘুম ভুলে ওয়াসেনাত দ্রুত বললো,
—-“ ফুফি তোমরা???”

ওয়াসেনাতের ফুফি দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে যে ওয়াসেনাতকে জড়িয়ে আছে সে হচ্ছে তার মেয়ে লামিয়া।লাল লাল দাঁতে হেসে ফেললো ওয়াসেনাতের ফুফি।ঠোঁট বাঁকিয়ে বাঁকিয়ে বললো,
—-“ আরে মরা মানুষ কেমতে জীবিত হয় দেখতে আইলাম।”
কথাটা শুনেই ওয়াসেনাত বিরক্তিতে মুখ কুঁচকালো।নাকটা কিঞ্চিত উঁচিয়ে প্রতি উত্তরে ওয়াসেনাত বললো,
—-“ ফুফি ভেতরে এসো।আর প্লিজ আম্মুর সামনে এসব কথা বলবে না।আমার সামনেও না।আমি এসব পছন্দ করিনা।”
ওয়াসেনাতের ফুফি মুখটা আরো বাঁকিয়ে নিলো।লামিয়া হেসে হেসে ওয়াসেনাতের গায়ে ঢুলে পরছে।ওয়াসেনাত একটু নড়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছু বলছে না।লামিয়া নিজের বড় ব্যাগটা নিয়ে এসে বললো,
—-“ মামি বেঁচে আছে শুনেই আমি অজ্ঞান হয়েগেছিলাম।তুই তো দেখিসনি।মা দেখেছে।কত পানি দিতে হয়েছে মাথায় আল্লাহ্ আল্লাহ্!!আমি তো মনে করছি ভুত টুত হইবো।”
লামিয়া রুমের ভিতরে চলে গেছে।ওয়াসেনাত বেশ আড়ষ্ট মুখে দাড়িয়ে আছে।তার এই ফুফি খুব একটা সুবিধার মানুষ না।উঠতে বসতে ঠেস দিয়ে কথা বলে যা তার একদম ভালো লাগে না।ঘুমটা তো আর হলোই না।সাথে বিরক্তিও যোগ হয়েছে।তবুও ওয়াসেনাত নিজের রুমে চলে যায়।বিছানায় আবার ধপ করে শুনে পরে।ঠিক সেই সময়ে আবার বেসুরা কলিং বেলটা বেজে উঠেছে।ওয়াসেনাতের অবস্থা খুবই খারাপ।রেগে মেগে আগুন হয়ে ওয়াসেনাত রুমের দরজা খুলতে যায়।দরজা খুলতেই আবার কেউ তাকে জড়িয়ে নিয়েছে।আর সে হচ্ছে রিমি।রিমিকে দেখে ওয়াসেনাতের মন কিছুটা হলেও ভালো হলো।তবে রিমির প্রতিও আজ সে বিরক্ত।সবাই আজ ওয়াসেনাতের ঘুমের পিছনে কেন পড়লো কে জানে।সবচাইতে বড় কথা ওয়াসেনাতের আজকের দিন খুব একটা ভালো যাবে বলে তার মনে হচ্ছে না।সকাল থেকেই আজে বাজে ঘটনা শুরু হয়েছে বলে কথা।
___________________________
অরিত্রান আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের শার্টের বোতাম
ঠিক করছিল।তখনই তার চোখটা ঘুরে ঘুরে বাদামি পেটেকে আটকা পরে।বেশ অনেক দিন আগে ওয়াসেনাতের দেওয়া পেকেটের দিকে চোখ পরে তার।অরিত্রান তো ভুলেই গেছে পেকেটের কথা।সে এতোটাই বিজি ছিলো।কিন্তু কাল পর্যন্তও ওয়াসেনাতকে দেখার একটা বাহানা তার কাছে ছিলো আর তা হচ্ছে হসপিটাল।কালই বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে ওয়াসেনাতের মাকে।এদিকে আজ ওয়াসেনাত ভার্সিটিতেও যাবে না।দেখা হওয়ার সুযোগই নেই।ওই দিকে এই মেয়েকে না দেখলে তার যে কি হয় সে নিজেও জানে না!!!বড্ড বেয়ারা হয়ে পরছে সে।এতো বেশি প্রেমে কবে যে পড়লো সে নিজেই জানে না।কয়েক কদম পিছিয়ে অরিত্রান পেকেট হাতে নেয়।রিমন ব্যস্ত পায়ে হেঁটে এসেছে অরিত্রানের রুমে।পাশে লেগে দাড়াঁতেই ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-“ এটা কি??”

কৌতুহলি গলায় অরিত্রান বললো,
—-“ আমি নিজেই জানি না।”
—-“ যানছ না মানে কি???তোর হাতেই তো পেকেট।”
—-“ ওয়াসেনাত দিয়েছে।খুলে দেখা হয়নি।”
পেকেট খুলে অরিত্রান অবাক হয়ে গেলো।সাদা কিছু একটা দেখা যাচ্ছে।কি হতে পারে ভাবতে ভাবতেই কিছু সময় পার করে দিয়েছে অরিত্রান।রিমন বেশ উৎফুল্ল হয়ে তাকিয়ে আছে।সাদা পাঞ্জাবির উপরে লাল কাজ।অরিত্রান চমকে তাকিয়ে আছে পাঞ্জাবির দিকে।রিমন ওওও করে চেচিঁয়ে উঠে।এতে অরিত্রানের মুখ গম্ভীর হয়।হাসি থামিয়ে রিমন বিছানায় বসে পরে।অরিত্রান পাঞ্জাবি খুলে দেখে।ভাজ খুলতেই হলুদ কাগজ গড়িয়ে পরে পাঞ্জাবির ভেতর থেকে।ছোট ছোট চোখে অরিত্রান সেই কাগজের দিকে তাকায়।বেশ সুন্দর করে যত্ন নিয়ে ভাজ করেছে সেই চিরকুট।অরিত্রান যেন একপলকে বুঝতে পেরেছে।রিমনের সব কিছুতেই আগ্রহ বেশি।সেই লাফিয়ে আগে হাত বাড়ায়।কিন্তু অরিত্রান সেই হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় চিরকুট।রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রিমনের দিকে।রিমন জোড় পূর্বক হেসে নিজেকে অরিত্রানের কড়া চোখের আড়াল করে।হাতের লম্বা আঙ্গুলের ভাজে চিরকুট রেখে অরিত্রান সেই পাঞ্জাবি দেখে।না দেখেই যেন সে বুঝতে পেরেছে কত যত্ন দিয়ে তৈরি করা এই পাঞ্জাবি।ওয়াসেনাতের হাতে সুচও ফুটেছে হয় তো!!অরিত্রানের বুকে ব্যথা হয়!কেমন যেন অদেখা অনুভুতিতে ব্যথিত হয় হৃৎপিণ্ড।হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেয় লাল কাজে।কাঁপে তার বুকের বাঁ পাশ।নিজের এমন অনুভুতি অনুভব করে অরিত্রান ঠোঁট কামড়ে হাসে।পাঞ্জাবি এক হাতের ভাজে রেখে চিরকুটের ভাজ খুলে।হলুদ চিরটুকের ভাজ খুলছে খুব যত্নে।রিমন এতে বিরক্ত হলো।এতো আস্তে খোলার কি আছে??যেন ছিড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।চিরকুটের ভাজে কালো কালিতে লেখা,
“ পাঞ্জাবি পড়লে আপনাকে দারুন লাগে।আপনি যখন হাতা গুঁটিয়ে ভাজ করে রাখেন তখন আপনার ফর্সা হাতের কালো, হালকা সোনালি লোমগুলো নিখুঁত ভঙিতে লেপ্টে থাকে।তখন আপনার হাত গুলোকেও রূপবতী খেতাব দিতে ইচ্ছে হয়।সব কথা মিলিয়ে ,গুঁছিয়ে আপনাকে পাঞ্জাবিতে খুব সুন্দর লাগে।এটা আপনার।”
ইতি…….
চিরকুটে ইতি হিসেবে আর কিছুই লেখা হলো না।রিমন গলা উচিয়ে বললো,
—-“ ইতি ওয়াসেনাত লেখা উঁচিত ছিলো!!বা তোমার জান!!”
চোখ রাঙিয়ে পাশে তাকায় অরিত্রান।কঠিন মুখে রিমনের দিকে তাকাতেই ভীতু হয়ে রিমন লাফিয়ে সরে দাঁড়ায়।একটুখানি হাসার চেষ্টা করে বলে,
—-“ সব পড়িনি শুধু ইতিটাই পড়েছি।”
—-“ গেট লস্ট রিমন!”অরিত্রানের কন্ঠে রাগ।
দ্রুত পা বাড়িয়ে রুম ত্যাগ

করে।শেষ পা বাড়ানোর আগেই অরিত্রান হাক লাগিয়ে ডাক দেয়,
—-“ রিমন!!”
রিমন পিছনে ফিরে তাকায়।অরিত্রান ব্যস্ত গলায় বললো,
—-“ চল আজ তোর বিয়ের শপিং করতে যাবো।”
রিমন যেন আকাশ থেকে পড়লো।মুখের ভাবটা ভারী অদ্ভুত করে বললো,
—-“ আমার বিয়ের শপিং তো আগেই করা শেষ।তোকে না বলেছি আগের সাপ্তাহে।”
অরিত্রান কিছু মুহূর্ত চুপ থেকে বললো,
—-“ তো কি হয়েছে আবার করবি।চল।”
—-“ কি বলছ ভাই আমার লাখ লাখ টাকা খরচ হয়েগেছে এই শপিং টপিং করতে করতে।বাপরে বাপ মাইয়াগো পুরা একটা শপিংমল দিলেও কি বলবে যানছ!!!”জানু আমার আরো তিনটে শপিংমল চাই।”আল্লাহ আল্লাহ।কি যে প্যারা।তুই একবার যা নিজের জনকে নিয়া তারপর বুঝবি।তখন মনে হবে অরিত্রানের বিলিয়ন বিলিয়ন টাকাও কম।আরো লাগবে।আমারে দিয়া কি যে খাটাইছে??তোরে কি বলবো!!তুই তো শুনতেই চাস না।একবার শুনলেই বিয়ের আশা মাটি মাটি হয়ে যাবে।বউ মানে বউ না শুধু ওটা একটা আস্ত জম।সারা শপিংমলে আমাকে ঘুরিয়েছে।ব্যাগ গুলো পর্যন্ত হাতে নিয়ে ঘুরতে হয়েছে।বিয়ে তো নয় যেন ফাঁসির ফান্দা।আমি তো সারা সময় জুড়ে একটা কথায় ভেবেছি হে আল্লার যুগ যুগ ধরে এই মহিলা জাতিকে কিভাবে আমাদের মত মাসুম পুরুষ জাতি সামলায়।”
অরিত্রান নিঃশব্দে হাসছে।রিমন বলেই চলেছে।তার জীবন যে এখন ঝুঁকিতে আছে তার অরিত্রান বেশ বুঝতে পেরেছে।মেয়ে জাতির প্রতি বড্ড বিরক্ত সে।পারছে না এই জাতির নামটাই পৃথিবী থেকে বিলিন করে দিতে।ইশশ্ যদি সে পারতো।মনে মনে যেন এটাই বলছে।অরিত্রান ঠোঁটে হাত বুলিয়ে হাসছে।ধরা পড়তে চায় না সে।একজন দুঃখি মানুষের দুঃখি দুঃখি কথা শুনে হাসা মোটেও উঁচিত না।রিমন হাপিয়ে উঠেছে।বেশ করুন একটা চেহারা নিয়ে রিমন বললো,
—-“ ভাই সব মিলিয়ে আমি শেষ।”
—-“ তাহলে বিয়ে ক্যান্সেল করে দি??”অরিত্রানের গভীর কন্ঠ।
—-“ না না নানানাাাাাাা!!!!!!!!”আর্তনাদ ভরা গলা রিমনের।
অরিত্রান হাসলো।বললো,
—-“ কেন??তুই তো শেষ হয়ে যাচ্ছিলি।তোকে বাঁচাতে বিয়ে বাদ দেওয়াই ভালো।”
—-“ মোটেও না।আমি তো ওর প্যারায় হাপিয়ে উঠেছি বলেছি।কিন্তু ভালোবাসি অনেক।সেই প্যারা গুলোও ভালো লাগে।যখন ও সামনে থাকে।এই সামান্য কারনে আমার বিয়ের কিছু করিছ না ভাই।আর ওর নামে কিছু বলবো না।ও তো এতো ভালো বলে বুঝাতে পারবো না।মিথ্যা বলছিনা।আমার অনেক কেয়ার করে।খাওয়ার কথা নিয়ে খুবই চিন্তিত থাকে।দিনে কয়েকবার কল করে।রাতে তো আমার সাথে একবার কথা না বললে সে ঘুমায় না।”
—-“ হয়েছে।এবার চুপ কর।চল শপিং করতে যাবো।তুই রিমিকে কল কর।”
—-“ ভাই আজ কি সূর্য উঠে নি??”ভারী অবাক গলা রিমনের।
—-“ উঠেছে কিন্তু আকাশ ভর্তি মেঘ তাই দেখা যাচ্ছে না।এবার চল।”
—-“ তুই ও যাবি??”অবাক হয়ে বললো রিমন।
—-“ হুম।”
—-“ আবার কতগুলো টাকা নষ্ট করতে হবে।কেন???শপিং সব তো করা শেষ আর কি করবি।”
—-“ ওগুলো বাদ ।টাকার চিন্তা করতে হবে না।আমি সব টাকা দিবো।তোর বিয়ের শপিং আমার টাকায় হবে।ওয়াসোনাতও তো তোদের বিয়ের শপিং করতে যায় নি।তাই ওটা বাদ।”কঠিন গলায় কথা গুলো বললো অরিত্রান।
মিনমিন গলায় রিমন বললো,
—-“ বাংলাদেশের অনেক অনেক মানুষের বিয়ের শপিং করতেও তো ভাবী যায়নি।এখন তুই কি সবার বিয়ের শপিং আবার করাবি??”
—-“ শেট আপ রিমন।যাবি কি না???”
—-“ আচ্ছা যাবো।রিমি ও না মানে ভাবীর বাসায়।”
অরিত্রানের মুখের রাগ ঠেলে হাসি যেন ফুস করেই ফুটে উঠেছে।রিমনের চোখ এড়ালো না সেই হাসি।মূল কাহিনী এবার তার মাথায় এসেছে।সে নিজেই হেসে উঠে।বাজে ভাবে শব্দ করে হাসছে রিমন।অরিত্রান ভ্রু কঁচকে তাকায়।রিমন দেখেও না দেখার ভান করে নিজের হাসি চালিয়ে যায়।
______________________

____________
সকালটা বিষন্ন মেঘে ডেকে থাকলেও তৌফিক সাহেবের আহমেদ ভিলা রমরম করছে মানুষের ব্যস্ত পায়ের শব্দে।ওয়াসেনাত কাত হয়ে মাথায় এক হাত দিয়ে সোফার কোণ ঘেঁসে বসে আছে।তার পাশে রিমি।এই বাড়িতে আগে কখনো এতো মানুষের পদচারন দেখেনি রিমি।সে একটু না অনেকটুকু কৌতুহলি চোখে তাকিয়ে দেখছে।বাড়ির প্রান যে মা নামক প্রানিটা তা যেন আজ হারে হারে বুঝতে পারছে সে।ওয়াসেনাতদের এই সুন্দর পরিবেশের বাড়িটি এতো দিন তার কাছে কেমন যেন ঠান্ডা ঠান্ডা লাগতো।কিন্তু আজ পরিবেশ কত পরিবর্তন হয়েছে দেখেই সে চমকিত।তৌফিক সাহেব চোখে মুখে গাম্ভীর্যতা নিয়ে বেশ মনোযোগ দিয়ে খবরের কাগজে চোখ বুলিয়ে চলেছেন।নাকের ডগায় এসে থেমেছে চমশাটা।এভাবেই তিনি চমশা পড়েন।তার মুখটা দেখে মনে হচ্ছে খুব গুরুত্বপূর্ন কিছু খুঁজে চলেছেন তিনি।ওয়াসেনাত বেশ অনেক দিন থেকেই এই জিনিসটা খেয়াল করছে তার বাবা কিছু একটা খুঁজে চলেছে খবরের কাগজে।কিন্তু এই কিছুটা কি???তৌফিক সাহেব বেশ হতাশ হলেন মনে হয়।মুখে তার একটু রাগ খেলে গেলো।ওয়াসেনাত দেখলো কিছুই বললো না।রিমি ওয়াসেনাতের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
—-“ জাজু কি কল করেছে???”
ভারি অবাক গলায় ওয়াসেনাত বললো,
—-“ জিজুটা কে???”
—-“ আরে ওয়াসু বেবি তুমি এতো বোকা কেন??আমার তো একটাই জিজু অরিত্রান জানু জিজু।তার কথাই বলছি।”রিমির কন্ঠে রসিকতা।
উত্তরে একটা লাজুক হাসি হাসলো ওয়াসেনাত।অরিত্রান সকালে কল করে না।ওয়াসেনাত ঘুমিয়ে থাকে তাই।আজ এখনো কল করেনি।হঠাৎ ওয়াসেনাতের মনে পড়ে সকাল তো ১০টা বাজে ,এখনো কল করেনি কেন???এতো দেরি তো করে না??অরিত্রান খুবই সময় মানা ছেলে।সময় মেনেই সে সব করে।তাহলে আজ সময়ের এদিক সেদিক কেন হলো???ওয়াসেনাতের ভাবনার মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠেছে।ওয়াসেনাতের রাগ লাগছে খুব করে।কি বিরক্ত সকাল থেকে শুধু এই বাজে সুর বেজেই চলেছে।ওয়াসেনাত উঠে দরজা খুলে দিলো।বাহিরে আর একজন খবরের কাগজ নিয়ে দাড়িঁয়ে আছে।তার বাবার যে কি হয়েছে কে যানে??কিছুক্ষণ পর পর বিভিন্ন পত্রিকার খবরের কাগজ নিয়ে বসছেন তিনি।ওয়াসেনাত কাগজ হাতে নিয়ে বাবাকে দেয়।আজকের সকালের খাবার একটু দেরিতেই খেতে হচ্ছে তাদের।ফুফিরা এসেছে।ফুফির দুনিয়ার হাবিজাবি কথা।তার মেয়ে কি কি পারে।মেয়ের জন্য কত কত ছেলে প্রস্তাব পাঠাচ্ছে,তারা এক একজন কত বড় লোক ইত্যাদি ইত্যাদি কথা নিয়ে তিনি ব্যস্ত।এসব করতে করতেই সকালের খাবার খেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে।সবাই একসাথেই খেতে বসেছে।রিমি আজ ওয়াসেনাতের আম্মুর হাতের খাবার খাবে তাই সেও সকাল সকাল হাজির হয়েছে।খাবার টেবিলে তেমন কথা হচ্ছে না।তৌফিক সাহেব খাবার টেবিলে কথা বলা একদম পছন্দ করেন না।সবাই নিশ্চুপ হয়ে খাচ্ছে।থমথমে গুমুট একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে ঘরময়।রিমি আর ওয়াসেনাত দু’একটা কথা বলছে।তাতেই রাগি চোখে তাকাচ্ছে তোফিক।এতে চুপ হয়ে যায় আবার তারা।থমথমে পরিবেশকে ঠেকরে বেজে উঠে আবার কলিং বেল।ওয়াসেনাতের মুখ দেখার মতো।সে উঠবে না আর।কিছুতেই না।তৌফিক সাহেব নিজেই উঠে দাড়াঁলেন।দরজা খুলে দিলেন।সামনের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলেন তিনি।তীর্যক চোখে তাকিয়ে বললেন,
—-“ তুমি এখানে???”
অরিত্রান চোখের সানগ্লাস নামিয়ে নিতে নিতে বললো,
—-“ কেন আসতে পারিনা বুঝি??”
—-“ এটা হসপিটাল নয় যে তুমি যে কোন সময় চলে আসবে।এটা আমার বাসা।”
তৌফিকের কথায় রাগটা প্রকাশ পেলেও অরিত্রান পাত্তা দিলো না।মৃদু একটা হাসি দিয়ে সে বললো,
—-“ আপনি কি অতিথিদের সাথে এমন অদ্ভুত ব্যবহার করেন তৌফিক সাহেব???”শেষের কথাটা টেনে বললো অরিত্রান।
থতমত খেয়ে কয়েক মুহূর্ত চুপ থাকলো তৌফিক সাহেব।অরিত্রান ,এবং তার আশেপাশের গার্ডস আর রিমনকে দেখে তিনি বিচলিত হয়ে পরেছেন।চোখে মুখে আতঙ্ক নিয়ে তিনি অরিত্রানের চোখে চোখ রাখে।বলে,
—-“ কি চাই এখানে এতো সকাল সকাল??”
—-“ আপনার মেয়েকে!!!”
ছেঁৎ করে তৌফিকের চোখ জ্বলে উঠেছে।গরম চোখে তাকায় সে অরিত্রানের দিকে।অরিত্রানের একটুও হেলদুল হলো না।সে সটাং হয়ে দাড়িয়ে আছে।রিমন দাঁত বের করে হাসছে।তৌফিক চেঁচিয়ে বললো,
—-“ কি বললে তুমি???”
—-“ আরে শুধু আপনার মেয়ে না রিমনের হবু বউকেও লাগবে।আচ্ছা আপনার সমস্যা কি বলেন তো???মেয়ের কথা শুনলেই লাফিয়ে উঠেন কেন???”
অরিত্রানের কন্ঠ মুখস্থ হয়ে

গেছে ওয়াসিকার।যেন অরিত্রান বাসা থেকে কথা বললেও তিনি শুনে।তার চোখে খুবই প্রিয় একজন ছেলে এখন অরিত্রান।অরিত্রানের কন্ঠ শুনেই বেরিয়ে আসলেন তিনি।মুখে একরাশ হাসি মাখিয়ে বললেন,
—-“ আরে অরিত্রান যে???তুমি আমাদের বাসা চিনো??”
—-“ না চিনলে এসেছি কিভাবে বলুন তো??”অরিত্রান হেসে বললো।
ওয়াসিকা উত্তেজিত গলায় তৌফিকের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“ এই তুমি কি গো??অতিথি এসেছে তাদের এভাবে বাহিরে দাড় করিয়ে রেখেছো???এই তোমরা ভিতরে চলো তো।”
অরিত্রান পকেটে হাত গুঁজে তৌফিকের দিকে তাকিয়ে বাঁকা ঠোঁটে বললো,
—-“ তৌফিক সাহেব মনে হয় চায় না আমরা ভিতরে যাই।কি তৌফিক সাহেব ভুল বলেছি কি???”
তৌফিক চোখ রাঙিয়ে তাকালো।অরিত্রান পুরো দমে তা উপেক্ষা করে হাসলো।ওয়াসিকা তৌফিককে কড়া চোখ রাঙানি দিয়ে বললো,
—-“ এভাবে তাকিয়ে আছো কেন???ভেতরে ডুকতে দিবে না নাকি???”
পৃথিবীর সব বাঘের মত পুরুষ বউয়ের কাছে বিড়াল কথাটা আজ সত্যি মনে হচ্ছে রিমনের।তৌফিক সাহেব দরজা থেকে সরে দাড়াঁলো।অরিত্রান বাংলাদেশের নিয়মকানুন কম জানে।রিমনই তাকে বলেছে কারো বাসায় যাওয়ার সময় কিছু নিতে হয়ে।বিশেষ করে খাবারের জিনিস।কি নিবে এটা চিন্তা করতে করতেই অরিত্রান হাপিয়ে উঠেছিল।বিজনেস সামলানোর চেয়ে বাঙ্গালী কালচার সামলানো বেশি কঠিন বলেই তার মনে হয়েছে।পরে না পারতে দোকানের সব জিনিস কিনে নিয়ে এসেছে সে।গার্ডস একের পরে এক যখন ঘরের ভেতরে ঢুকাচ্ছিলো তৌফিক সহ বাড়ির সবার চোখ তখন কপালে।অরিত্রান নিজেও ভাবছে এতো জিনিস সে এনেছে???এটা মোটেও উচিঁত হয় নি।ঘরে এতো জায়গা তো নেই।তাই বাকি গুলো ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বলেছে সে।তৌফিক সাহেব রাগে ফঁসফঁস করছে।কিন্তু কিছু বলছে না।সোফায় বসেছে অরিত্রান।আর তার সামনে বসেছে তৌফিক।বাঘের মত হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছেন তিনি।অরিত্রান ভেবে পায় না এই লোক তাকে এতো অপছন্দ করে কেন???রিমনের পাশ ঘেঁষে অরিত্রান বললো,
—-“ রিমির কাছে যেতে পারিস।”
রিমন যেন এটাই চেয়েছে দ্রুত উঠে পরে সে।এই রুমে এখন অরিত্রান আর তৌফিক বসে আছে।তৌফিক রাগি একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,
—-“ এখানে কেন এসেছ???জানতে পারি???”
সামনের কাগজ অরিত্রান হাতে তুলে নেয়।ভাজ খুলতে খুলতে বলে,
—-“ আমাকে বলছেন???”
রাগে তৌফিকের শরীর জ্বলে উঠেছে।হসপিটালেও এই ছেলেকে সহ্য করতে হয়েছে এখন বাসায়ও!!!না এটা তিনি মেনে নিবে না।দাঁতে দাঁত চেপে তিনি বললেন,
—-“ আশেপাশে তুমি ছাড়া তো আর কেউ নেই।তাই অবশ্যই তোমাকে বলছি।”
—-“ ও বুঝতে একটু দেরি হয়েছে।আমি এসেছি কেন এটা জানার জন্য আপনি এতো বেশি আগ্রহী কেন ???”
—-“ আমি প্রশ্ন করেছি তার উত্তর বলো।”
—-“ বিয়ের শপিং করতে।মানে আপনার মেয়ে এবং তার বান্ধবীকে নিয়ে বিয়ের শপিং করতে যাবো।”
—-“ হোয়াট!!!” তৌফিক দাড়িয়ে পরেছে।অরিত্রান এবার একটুখানি ভড়কালো।তৌফিক রেগে তেড়ে আসার ভঙ্গিতে বললো,
—-“ তোমার সাহসতো কম নয় আমাকে না বলে না জিজ্ঞেস করে না অনুমতি নিয়ে আমার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য শপিং করতে যাওয়ার সাহস হলো কি করে???”
অরিত্রান শব্দ করে হাসলো।ঠোঁট কামড়ে সে হাসি থামিয়ে বললো,
—-“ কুল তৌফিক সাহেব এতো হাইপার হচ্ছেন কেন??আপনার যে মেয়ে !!!আপনার অনুমতি ছাড়া সে বিয়ের দিকে এক চুলও এগিয়ে যাবে না।নো চিন্তা।আমি তো রিমনের বিয়ের শপিং করতে যাবো বলেছি।”
তৌফিক সাহেব বোকা বনে গেলো।মুখটা থমথমে করে তিনি বসে পড়লো।অরিত্রান পিছনের দিকে হেলে বললো,
—-“ আচ্ছা একটা কথা জানার ছিলো ইহানকে এতো আদরের সাথে আপনি বাচিঁয়েছেন কেন???”
—-“ আমি সাংবাদিক এবং বয়স্ক।সে হিসেবে তোমার মতো বোকা বা মাথা গরম মানুষ আমি নই।আমি চোখ পড়তে পারি।ওর চোখের মাঝে নিজের বাবার কাজের জন্য অনুতপ্ত বোধ কাজ করছিলো।যে বাবার কাজে অনুতপ্ত সে নিজের কাজেও অনুতপ্ত হয়।কিন্তু তোমার মাঝে আমি কোন অনুতাপ দেখতে পাচ্ছি না।ইমানের মৃত্যুর খবর কোনো কাগজে কেন ছাপানো হয়নি???তুমি তাকেও লাপাত্তা করেছো না???”
তৌফিকের কঠিন গলার কথায় অরিত্রান হাসলো।কিছু সময় নিরব থেকে বললো,
—-“ আমার মাঝে এমন কিসের কম আছে যে আপনি আমাকে এতো অপছন্দ করেন???টাকার বা সম্মানের কোনোটিরই কমতি নেই।উল্টো সব বেশিই আছে।সবচাইতে বড় কথা আমি এই শহরের সবচাইতে ধনী মানুষ।একজন বাবা হিসেবে মেয়ের জন্য আপনার যা যা চাই সবই আমার আছে।তবুও এতো অপছন্দ কেন???”
—-“ তোমার মত সব আছে এমন অনেকেই আমার মেয়েকে চায় আমি কি সবার সাথে নিজের মেয়েকে বিয়ে দিবো???”
—-“ না আমি সেটা বলিনি।আপনি আপনার মেয়ের জন্য বিবেচনা করুন কে সেরা।তার হাতেই তাকে তুলে দিন।”
—-“ আমি সেরা চাই না ভালো চাই।সেরা তো সবাই চেষ্টা করলেই হতে পারে কিন্তু ভালো কয়জনে হয়।”
—-“ আপনার মতে আমি খারাপ???”অরিত্রানের কঠিন গলা।
অরিত্রানের কথা এড়িয়ে তৌফিক সাহেব বললো,
—-“ আমার মেয়েকে কেন তুমি বিয়ে করতে চাও???”
—-“ এটা কেমন প্রশ্ন??আমি ওকে পছন্দ করি তাই বিয়ে করতে চাই।এটা কি আপনি বুঝতে পারছেন না???”
অরিত্রানের কন্ঠ শুনেই তৌফিক বুঝতে পারছে অরিত্রান রেগে যাচ্ছে।নিজেকে সামলে নিয়ে অরিত্রান স্বাভাবিক হয়ে বসে।তৌফিক সাহেব বলে যাচ্ছেন,
—-“ দেখো তোমার দুনিয়া আমার মেয়ের দুনিয়া থেকে একদম ভিন্ন।তুমি রক্ত নিয়ে খেলতে পছন্দ করো আমার মেয়ে রক্ত দিয়ে মানুষ বাঁচাতে ভালোবাসে।আমার মেয়ে ফুলের মতো কোমল হৃদয়ের আর তুমি পাথরের নেয় কঠিন হৃদয়ের।তুমি নিজের নিয়মে চলতে পছন্দ করো আমার মেয়ে অন্যের নিয়মে চলতে পছন্দ করে না।আমি বাবা হয়ে কখনো তাকে খাঁচায় বেধে রাখিনি।তাকে উড়তে দিয়েছি।সবচাইতে বড় কথা আমার মেয়ে নিজেকে যতটা সাহসি দেখায় সে ততটা নয়।আমরা মিডেল ক্লাস।তোমাদের মত হাইক্লাসের সাথে আমার মেয়ে পেরে উঠবে না।এর চাইতেও বড় কথা আমি আমার মেয়েকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিতে পারিনা।তুমি নিজেও নিজের রাগের উপরে নিয়ন্ত্রণ করতে পারো না।খুন করতে হাত কাঁপে না তোমার।হাজারো শত্রু তোমার।বাবা হয়ে আমি আমার মেয়েকে তোমার মত বিপদের হাতে তুলে দিতে পারি না।তাই আমার মেয়ের থেকে দূরে থাকো প্লিজ।”আকুতি ভরা কন্ঠে বললো তৌফিক।
অরিত্রান দীর্ঘশ্বাস নিয়ে তৌফিকের দিকে তাকালো।তার চোখ লাল হয়ে উঠেছে।কয়েক সেকেন্ড এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তৌফিকের দিকে।তৌফিক সাহেব চোখ সরিয়ে নেয় নিচের দিকে।অরিত্রান বললো,
—-“ আপনার মেয়ে যদি আমাকে ভালোবেসে থাকে তবে আপনার সমস্যা কোথায়???সে যদি আমার মত ভয়ংকর মানুষের সাথে মানিয়ে নিতে পারে আপনার এতো প্রবলেম কেন???”
তৌফিক হাসলো।এই হাসির কারণ ধরতে পারলো না অরিত্রান।তিনি চোখ তুলে তাকায়।বলে,
—-“ এটা মায়া।হয় তো সে তোমাকে পছন্দ করে।কিন্তু ভালোবাসে বলে আমার মনে হয় না।যদিও বাসে আমি তোবুও আমার মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দিবো না।এমন অনেক প্রেমের কাহিনী আছে ভালোবাসা থেকেই বিয়ে হয়েছে কিন্তু তারা কষ্টেও আছে।মেয়েরা আবেগি হয়।আমার মেয়ের দ্বারা আমি এই ভুল হতে দিবো না।তুমি যদি অরিত্রান খান না হতে আমি আমার মেয়ের ভালোবাসা মেনে নিতাম।কিন্তু তুমি মানুষটা কেমন এটা তুমিও জানো মিষ্টার অরিত্রান খান।” তৌফিকের শক্ত কন্ঠ।
—-“ আপনার মেয়েকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমি নিচ্ছি।সে কখনো আমার সাথে থেকে কষ্ট পাবে না।আমার কোনো কিছুর অভাব নেই।আমি চাই আপনার মেয়ের হাতটা ধরতে।শুধু আপনার অনুমতি প্রয়োজন।আমি চাইলেই আপনার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যেতে পারি।কিন্তু আপনার মেয়ে তাতে নারাজ।সে আপনাকে খুবই ভালোবাসে।সে চায় আমি আপনার মন জয় করে তাকে নিজের করি।কিন্তু সে কি জানে আপনি তার কথাটা ভাবছেনই না।আপনি তার ভালোবাসাকে মেনে নিবেন না!এসব যেনে তার কতটা খারাপ লাগবে আপনি জানেন??হ্যা আমি খুন করি।রাগি!মেজাজি!সবই আপনার মেয়েও যানে।তাহলে আপনার এতো সমস্যা কোথায়।আপনার মেয়ের জন্য আমি সব করতে পারবো তবুও আপনি মেয়েকে আমার হতে দিবেন না???”
রাগে অরিত্রান মুখ লাল হয়ে আছে।তৌফিক বললো,
—-“ দেখ তুমি যা যা করতে পারবে আমার মেয়ের জন্য এটা অনেকেই করতে পারবে।অনেকেই আমার মেয়েকে পছন্দ করে।নানা দিক থেকে প্রস্তাব আসে।কেউই কিন্তু কম টাকার মালিক নয়।তাদেরও সব আছে।তোমার মত বেশি না হলেও অনেক আছে।কিন্তু তারা তোমার মত নয় অরিত্রান খান।তারা মানুষ খুন করে বেরায় না।তাদেরও সব আছে।তোমার চেয়ে একধাপ এগিয়ে তারা।তুমি আমার মেয়ের রূপের প্রেমে পড়েছ!ওর ওই চোখ সবার থেকে আলাদা।তোমার সবুজ চোখ ওর চোখ দেখেছে।তুমি রূপের রঙের প্রেমে ডুবে আছো।ঘোড়ের মাঝে আছো তুমি।এমন অনেকেই আছে।আমি কি সবার কথা মাথায় রাখতে পাড়ি???তা তো সম্ভব নয়।এসব মায়া কেটে গেলে তুমিও আমার মেয়েকে ভুলে যাবে।তাই বলবো ভুলার চেষ্টা করো।”
তৌফিকের কথায় আহত হয় অরিত্রান।চোখ জোড়া জ্বলজ্বল করে উঠেছে তার।রাগ আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলো না সে।কঠিন স্বরে সে বললো,
—-“ আপনার কি মাথা খারাপ??আমি আপনার মেয়েকে ভালোবাসি।ভুলার জন্য বাসিনি।আর রূপ দেখে নয় ওর মনের সৌন্দর্যের প্রেমে আমি পাগল।সবার সাথে আমার তুলনা করতে পারেন না আপনি!!আমি আপনার মেয়েকে বাকিদের মত পছন্দের তালিকায় রাখিনি ভালোবেসেছি।ভালোবাসা মানে বুঝেন??? আমি গভীর প্রেমে পড়েছি আপনার মেয়ের।সে প্রেম এখন ভালোবাসায় রূপ নিয়ে আরো গভীর হয়েছে।আপনি বলছেন ভুলে যেতে!!এতো সহজ!!আর রূপ??ওর ওই রূপ সারা জীবন তো থাকবে না।তখনো আমি একুই ভাবে ভালোবাসবো তাকে।সব রূপ রঙে হয় না।আসল রূপ হয় চোখের।সেই রূপে আমি পাগল হয়েছি।আপনি জানেন কয়েক মাসে আপনার মেয়ে আমার নিঃশ্বাস হয়ে উঠেছে!!!আমি পাগলের মত প্রেমে পড়েছি তার।ওই চোখের নীল রঙের প্রেমে পড়িনি আমি ।নীলের সচ্ছতার প্রেমে পড়েছি।আমি পাগলের মত ভালোবাসতে পারবো আপনার মেয়েকে সেটা কি সব ছেলেই পারবে???সবার সাথে কেন আমার ভালোবাসাকে গুলিয়ে ফেলছেন আপনি??কেন??
অরিত্রানের চিৎকারে ভেতরের সবাই দৌড়ে আসে।লাল হয়ে আছে তার চোখ।তৌফিক নিজেই ভয়ে মিইয়ে যায়।গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে অরিত্রান নিচের দিকে।চোখ হঠাৎ করেই জলজল করছে।তৌফিক সাহেব স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে অরিত্রানের নত দৃষ্টির দিকে।কি বলবেন তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না।ভালোবাসায় তিনি নিজেও বিশ্বাসী।এই ভালোবাসা কত শক্তিশালী হয় তাও তিনি জানেন।ভালোবাসাকে কি বাঁধা দিয়ে জোড় খাটিয়ে আটঁকে রাখা যায়???কিন্তু তিনি তো নিজের মেয়েকে ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিতে পারে না!তিনিও নিজের মেয়েকে ভালোবাসে।অরিত্রানের কথায় তার সব অস্তিত্ব যেন নড়ে বসেছে।আবার নতুন করে সব ভাবাচ্ছে তাকে।কে ভালো রাখবে তার মেয়েকে???কিভাবে তিনি নিজের মেয়ের ভবিষ্যৎ সুন্দর করবেন??মেয়েকে তিনি বড্ড বেশি ভালোবাসেন।অরিত্রান কি তার মেয়ের জন্য সঠিক হবে না কি একটা মস্ত বড় ভুল??যদি ভুল হয়??তার মেয়ের সম্পূর্ন্য জীবনের কি হবে???তৌফিক সাহেব বিচলিত হয়ে পরেছে।তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।আজ তার মনে হচ্ছে বাবা হওয়া সহজ কথা নয়।বড্ড কঠিন এই ছোট শব্দের অর্থ।বাবাদের আসলেই খুব সাবধানী হতে হয়।বিশেষ করে মেয়ের বাবাদেরকে।”
তৌফিক আর বসলেন না।দ্রুত পায়ে উঠে রুম ত্যাগ করলেন।অরিত্রান চোখ তুলে একবার তৌফিকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।মনটা আজ তার আহত হয়ে আছে।যতটা সহজ সে ভেবেছিলো ততটা সহজ সবকিছু না।তৌফিক সাহেব কখনই তাকে মেনে নিবে না।কখনই না।কি করবে সে???পরীজা তার কাছে কোন জিনিস না অস্ত একটা জীবন তার।এই মেয়েকে ছাড়া তার বেঁচে থাকতে কষ্ট হবে।শুধু কষ্ট হলেও চলতো সে তো বাঁচবেই না।এখন এই মুহূর্তে তার এটাই মনে হচ্ছে!কে বলেছে ,তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না কথাটা শুধু শুটিংয়ের ডায়লগ!!তার তো এখনই দম বন্ধ হয়ে আসছে।বাকিটা তো সে ভাবতেই পারছে না।অরিত্রানের মুখের সামনে গ্লাস ভর্তি পানি নিয়ে দাড়িঁয়ে আছে ওয়াসেনাত।অরিত্রানের দৃষ্টি স্থির।ওয়াসেনাতের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে সে।দূর্বল চোখ আহত দৃষ্টি!!মনের আহত ভাব যেন তার সবুজ চোখে ভর করেছে খুব করুন ভাবে।ওয়াসেনাত অবাক হয় সেই চোখের জলজল করা ভাব দেখে।অরিত্রানের চোখ কি কাঁদছে???কান্নারা কি চোখ বেয়ে নামতে চাচ্ছে??হয় তো চাচ্ছে!কিন্তু নামতে পারছে না।অরিত্রান তো কাঁদতে জানে না।কঠিক হৃদয়ের এই এক সমস্যা।কান্নারা আসেনা চোখ বেয়ে!!!!
#চলবে..