পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 40
শান্ত একটা সুর তুলে অরিত্রান বললো,
—-“ ইহানের মুখের কাপড় বের করে দে।”
যেমন কথা তেমন কাজ।খুলে দেওয়া হয়েছে ইহানের মুখের কাপড়।ইহান কিছুক্ষণ হাপাঁলো।শরীর ঘেমেছে অনেকক্ষানি।টেবিলের উপরে রাখা গ্লাস ভর্তি পানি অরিত্রান ছুড়ে দিলো ইহানের মুখে।চোখে মুখে পানির ঝাপটাতে ইহানের দম বন্ধ অবস্থা।কাশতে শুরু করেছে সে।অরিত্রান ঘাড় কাত করে ইমানের দিকে তাকায়।ইমান চুপ করে আছে।চোখ তার নিচের দিকে।এদের সবার মাঝে সবচাইতে উদ্বিগ্ন তৌফিক।সে জানতে চায় পুরো অতিত।যদিও সে একটু আকটু জানে।তবুও তার জানার ইচ্ছের শেষ নেই।কৌতুহলি হয়ে তিনি বললো,
—-“ তারপর বলছেন না কেন??চুপ করে না থেকে বলুন।”
অরিত্রান হাত উঁচিয়ে তৌফিককে বললো,
—-“ আরে আপনার দেখি সবাইকে আপনি আপনি করার গুন আছে!!আমাকেও আপনি আপনি করেন।এখন এই কুত্তা কেও করছেন।ভালো খুবই ভালো।আমাকে আর আপনি আপনি করবেন না।”
বিস্মিত হয়ে তৌফিক কিছু মুহূর্ত তাকিয়ে ছিলো অরিত্রানের দিকে।বিচলিত কন্ঠে বলে,
—-“ তাহলে আপনাকে কি বলবো??তুই তো বলাই যাবে না।”
—-“ আবার আপনি!!প্রথম ভুল ক্ষমা করলাম।আপনি আমাকে তুমি বলবেন।তুইটা কেমন যেন শুনায়।”
কিছুই বললোনা তৌফিক।চোখ সরিয়ে ইমানের দিকে তাকালো।ইমানের চোখে মুখে ভয়।সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিজের আঙ্গুলের দিকে।কি নির্মম ভাবে পরে আছে ফ্লোরে।রক্ত এখনো ঝড়ছে হাত থেকে।ফোঁটা ফোঁটা বিন্দু জমা হচ্ছে নিচের ফ্লোরে।বিশ্রী দেখাচ্ছে।নিচের দিকে তাকাতে তাকাতেই সে আবার চেঁচিয়ে উঠলো।নিচে তার ২য় আঙ্গুল পরে আছে।অরিত্রান আর একটা আঙ্গুল ফেলে দিয়েছে।তৌফিক চোখ বুজে নিয়েছে।মনে মনে ভাবছে লোকে সত্যি বলে।এই ছেলের দয়ামায়া অনুভুতি আসলেই নেই।অরিত্রান এতো স্বাভাবিক ভাবে বসে আছে যেন কই কিছুই তো হয়নি!!টাইপের!!ইমান চিৎকার করে যাচ্ছে।অরিত্রান ছুরিটা টুক টুক করে শব্দ করে বললো,
—-“ আর গুলোও কি এখন কেঁটে ফেলবো!আঙ্কেল??”
গলার সর্বোচ্চ জোড় দিয়ে চিৎকার করে উঠেছে ইমান।চিৎকারের ধরন শুনে মনে হচ্ছে তার গলা ছিঁড়ে গরগর করে রক্ত বেড়িয়ে আসবে।ইমান চিৎকার করে কাঁদছে।সেই কান্নায় বুক কেঁপে উঠছে তৌফিকের নিজের।সেখানে অরিত্রান নির্বিকার হয়ে বসে আছ।ছুঁরিটা পাশে রেখে টেবিলের দু’পাশে দু’হাত রেখে অরিত্রান শীশ বাজানো শুরু করে।মানুষ চরম বিরক্ত কিভাবে হয় তৌফিক আজ তা বুঝতে পারছে।অরিত্রানের এমন ভয়ংকর কান্ড গুলো তাকে সত্যি ভীতু সাথে বিরক্ত করে তুলছে।ইমান ফরফর করে বলার ভঙ্গিতে বললো,
—-“ আমি তো বলছি।তারপরেও কেন এমন করছো??”
শিশ থামিয়ে পূর্নদৃষ্টি মেলে তাকায় অরিত্রান।ইমানের শার্টের কলার ধরতেই তৌফিক চেচিঁয়ে বললো,
—-“ ওকে সব কথা বলতে তো আগে দেও!তারপরে শাস্তির ব্যাপারে দেখা যাবে।”
—-“ রিলেক্স তৌফিক সাহেব আমি তো শুধু উঁচিয়ে থাকা এলোমেলো কলার গুঁছিয়ে দিচ্ছে।সব কিছুতে এতো সিরিয়েস কেন হয়ে পরছেন??আপনার মেয়ে কিন্তু একদম সিরিয়েস না কোনো কিছুতে।কেয়ার লেস ভাব সবসময় থাকে তার মাঝে।”
কলার ঠিক। করতে করতে বললো অরিত্রান।রাগে দাঁতে দাঁত চাপলো তৌফিক।ক্ষুদ্ধ গলায় বললো,
—-“ আমার মেয়ের কথা আসছে কেন??তোমাকে আগেই বলেছি আমার মেয়েকে নিয়ে ভাবা ভাবি বন্ধ করতে।ওর থেকে দুরে থাকতে বলেছি।”
হাসিতে ফেটে পরলো অরিত্রান।লাফিয়ে টেবিলে বসতে বসতে বললো,
—-“ আপনার মেয়ের কাছে কখন গেলাম যে দূরে যাবো??আর আপনার মেয়ে এখন কয়েক শত কিলোমিটার দূরে আছে।আমি তো স্পাইডারম্যান না যে উড়ে উড়ে ওর কাছে চলে যাবো।যাওয়ার হলে আপনি নিজেও আটকে রাখতে পারবেন না তৌফিক সাহেব।এতো হাইপার কেন হচ্ছেন।আপনি দুর্বল দিল মানে হার্টের অধিকারী।পরে উল্টাপাল্টা কিছু হলে আপনার মেয়ে আমাকে ছাড়বে না।তাই কুলডাউন।আরাম করে বসে থাকুন।আর তুই!!তোরে কি ইনভাইটেশন কার্ড দিতে হবে না কি???”
দু’দিকে মাথা কাত করে ইমান না বুঝালো।রিমন লাফিয়ে রুমে ঢুকেছে।তার ভাবটা এমন যেন মাত্র মহা মূল্যবান কিছু মিস করতে করতে সে করলো না।সবাইকে দেখে খুশিতে ফেটে পড়া গলায় সে বললো,
—-“ যাক আগেই এসেছি।শুরু কর ইমাইন্নাইর বাচ্চা।”
ইহানের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“ তোরে কিন্তু বলি নাই।তুই তোর বাপের পোলা কিনা এটা নিয়া আমার বহুত সন্দেহ আছে।”
—-“ রিমন!!!”ইহানের রাগি কন্ঠ।
রিমন মশা তাড়ানোর মতো করে হাত নাড়ালো।ইমান বলতে শুরু করলো।সে জানে আজ সে আর বাঁচবে না।মৃত্যুটা সহজ ভাবে চায় সে।অলরেডি দু’টি আঙ্গুল হারিয়েছে।আর না।,
—-“ আশিকের সাথে যখন নতুন নতুন আলাপ হয় তখনই যানতে পারি তার বউ তুর্কি পলাতক।বাপ মা ছেড়ে পালিয়েছে।তুর্কি মেয়েরা সুন্দরী হয় সবারই জানা আছে।তাই দেখার আগ্রহ জাগে মনে।অনেক দিন পরেই আশিক তার বাড়িতে নেয় আমাকে।তখন তো অমিতাকে দেখেই আমার মাথা নষ্ট।মেয়েরা সুন্দর হয় জানা আছে সবার।কিন্তু সে ছিলো স্বর্গীয় হুর।বা তার চেয়েও সুন্দর।গাঢ় সবুজ দুটি চোখ।এই চোখের প্রেমেই পড়েছি।নিজের বউকে তখন আমার বিষাক্ত মনে হচ্ছিলো।সব পাগল পাগল লাগছিলো।তার সব কথায় আমি বিরক্ত হয়ে পরেছিলাম।রাগের বসে একদিন মুখে বালিশ চেপে মেরে ফেলি।ঘুমের মাঝে ছিলো তাই তেমন টের পায়নি সে।ইহান তখন ১১ বছরের ।হেনতেন বুঝিয়ে দিয়েছিলাম তাকে।সেও মেনে নিয়েছিলো।আমি নতুন প্ল্যান কসি।অমিতাকে আমার চাই সাথে আশিকের বিজনেস।বিজনেস যেভাবে বাড়ছিলো চারদিকেই আশিকের নাম ছড়িয়ে পরছিলো।পথের কাঁটা আশিক আর অরিত্রান।এদের সরিয়ে দিলেই হয়।এই প্ল্যান শেষ করতে দু’বছর লেগে যায় আমার।সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম।তার আগে আমি একটা বোকামি করেছিলাম।অমিতাকে অফার করে বসেছিলাম।তাকে বলে দিয়েছিলাম মনের কথা।ব্যস সে তো পুরাই আশিক দিওয়ানা।আশিক বলতে পাগল।আমার দু’গালে চড় বসিয়ে দিয়েছিলো সেদিন।এতেও থেমে যায়নি।আশিককে বলেছে।আশিক আমার থেকে পার্টনারশিপ কেড়ে নেয়।শেয়ার কিনে নেয়।আমাকে বের করে দেয়।ব্যস রাগ আরো বাড়ে।ঈদের দিনই ছিলো সুযোগ।এই দিনে অমিতা সব কাজের লোককে ছুটি দেয়।এমন কি বাড়ির গার্ডসদেরও।সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছি আমি।”
কথার মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে অরিত্রান বললো,
—-“ আমার কুকুরটাকে কি করেছিস??”
—-“ ওকে আগেই মেরেছি।যানতাম কুকুর মনিব ভক্ত হয়।তাই দুদিন আগেই সরিয়ে গিয়েছি।আমি যখন ঘরে ঢুকি তখন ঘরে আশিক আর অমিতাই ছিলো।আমার লোকেরা তাদের বেঁধে রাখে।আমি দলিল পত্রে সই করিয়ে নি।আশিককে মেরেছি আগেই।অমিতাকে সুযোগ দিতে চেয়েছিলাম।কিন্তু সে রাজি হলো না।উল্টা আমাকে মারার চেষ্টা করলো।শেষবার তার রূপের সাগরে ভাসতে চেয়েছিলাম তাও হলো না ক্যামেরা ম্যানের জন্য।কেউ গোপনে এই সবই ভিডিও করেছে।টের পেতেই অমিতাকে মেরে তাকে খুঁজতে শুরু করি।কিন্তু হাত থেকে পালিয়ে যায়।সে তোমাদের বাড়িরই গার্ড ছিলো।কি করে সে এসে পরেছে কে জানে।তবে সেই সব গোলমাল করেছে।তা না হলে অরিত্রান খানকে শেষ করেই আসতাম।অরিত্রানকে খুঁজতে শুরু করি আমি।অনেক খুঁজে পেয়েও যাই।বাসায় নিয়ে আসি।মারার জন্য।ব্যাগ ভর্তি গহনা আর দলিল দেখে ইহান যখন আমাকে বলে তখন আমিই ইহানকে বলেছি ও সব চুরি করে এনেছে।আমার কাছে এনে দিতে যাতে আমি পুলিশের কাছে ওগুলো জমা দিতে পারি।ইহান অন্ধের মতো আমাকে বিশ্বাস করে।সেও কথা মত সব নিয়ে এলো।সেখানে বাগান বাড়ির সব দলিল ছিলো।ইহান এই জন্যই অরিত্রানকে পছন্দ করেনা।পরে অবশ্য সে যেনেছে আমি অরিত্রানের নামে মিথ্যা বলেছি।তাই সে অরিত্রানকে আলাদা ভয়ও পায়।ভাবে অরিত্রান তাকে ছাড়বে না।কিন্তু অরিত্রান তো ভুলেই গেলো সে সব।মনে রাখলো আমাকে।অরিত্রাকে তখনই মেরে ফেলতাম কিন্তু ইহানের চোখে খারাপ হতে চাইনি।তাছাড়া আশেপাশের কিছু লোক যেনেগেছে আমি একটা ছেলেকে আশ্রয় দিয়েছি।তাই অপেক্ষায় ছিলাম কখনো অরিত্রানকে বাহিরে নিয়ে যেতে পারলেই হবে।কিন্তু তার আগেই অরিত্রানের দাদা এসে হাজির।দিতে চাইনি তবুও সে নাছড় বান্দা।তখনই ভুল হয়ছিলো।দুজনকেই মেরে দিলে আজকের এই দিন দেখতে হতো না।পরের ভুলটা বহু বছর পরে হয়েছে।আশিকদের বাড়ির সেই গার্ডকে আর খুঁজে পাইনি।সে কোথায় গেলো কে যানে।আমি নিজের নামে সব করে বেশ ভালোই ছিলাম।বিজনেস ছিলো চট্টগ্রামে।ঢাকায়ও বিজনেস শুরু করতে চাইলাম।তাই ঢাকা চলে এলাম।বেশ কিছুদিন পরে আমি মারুপকে মানে ও গার্ডকে দেখতে পেলাম।তার পিছু নিয়ে যানতে পেরেছি সে একটা অফিসে গার্ডের কাজ করে।তাও সাংবাদিকদের অফিসে।আমি কৌশলে একদিন মারুপের সাথে কথা বলছিলাম ভিডিও নিয়ে কিন্তু তখনই নতুন সমস্যা হয়ে সামনে আসে ওয়াসিকা।সে আমাদের দেখে নেয়।আমি তো নিজেকে লুকিয়ে পালাতে ব্যস্ত।এটাই বড় ভুল ছিলো।মারুপ ভিডিও ওয়াসিকাকে দিয়ে দেয়।মারুপকে আমি পরে মেরে ফেলি।কিন্তু ভিডিও পাইনা।আর ভিডিও না পেলে আমার সব ফাঁস হয়ে যাবে কোন না কোন দিন।আমার দরকার ভিডিও।তাই ওয়াসিকাকে তুলে নিয়ে আসি।আসল বিপদটা তখনই হয়।সে ভিডিও লুকিয়ে রেখেছে।এখন ভিডিও না পেলে তাকে খুন করা যাবে না।কারন যার কাছেই দিয়েছে সে আজ না হয় কাল পুলিশের কাছে সব দেখিয়ে দিবে।তার উপর ওয়াসিকা সাংবাদিক।আমি ঝামেলায় পরে গেলাম।ছাড়তেও পারবো না।মারতেও পারবো না।অন্যদিকে আমার ড্রাগ ব্যবসায় আমি ধরা পরেছি।তাই চাইলেও এতো কম সময়ে কিছুই করতে পারবো না।তাই ওয়াসিকার বদলে অন্য মেয়েকে মেরে গাড়ির নিচে ফেলে দি।মুখটা থেতলে দি যাতে তাকে চিনতে না পারে।জামা কাপড় সব মিলিয়ে মিলিয়ে দি।বাকি post mortem report বা অন্যসব ব্যাপার ইহান সামলে নেয়।যদিও সে যানে না এসব কেন করা হয়ে বা করছি।সে তো আমাকে অন্ধের মত বিশ্বাস করে।ওয়াসিকাকে আটঁকে রাখা হয়েছে গোপনে।কিন্তু অরিত্রান পার্টির নাম করে সবাইকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়।সবাই অসচেতন হয়ে পরি।ভুলেই যাই ওয়াসিকার কথা।এটাকেই কাজে লাগায় অরিত্রান।এর মাঝে ওয়াসিকাকে অরিত্রান বাঁচিয়ে নেয়।আমি জানি না কিভাবে অরিত্রান ওয়াসিকার খবর পেয়েছে!ওকে যাতে না খুঁজে কেউ তাই তো মরার কাহিনী সাজিয়েছি।কিন্তু অরিত্রান কোথা থেকে এসে,সব এলোমেলো করে দিলো।”
ইমান কেঁদে উঠেছে।ছেলেদের কান্না দেখতে বড্ড বাজে লাগে।তা আজ অরিত্রান বুঝতে পেরেছে।তাই নাক ছিটকে চোখ সরিয়ে নেয়।লাফিয়ে টেবিল থেকে নেমে ছুরি আঘাতে দু’হাতের কব্জি ফেলে দেয়।আঁতকে উঠে তৌফিক।ইহান চোখ বুজে নেয়।আর্তনাদ করে উঠে ইমান।চিৎকার করতে করতেই ইমান জ্ঞান হারায়।অরিত্রান সেই দৃশ্য দেখে হাসলো।চোখ দিয়ে ইশারা করতেই বালতি ভর্তি পানি নিয়ে এসে ছুঁড়ে মারা হলো ইমানের মুখে।তৌফিক উঠে দাড়িঁয়ে আবার ধপাস করে বসে পরে।ইমান চোখ পিটপিট করে মেলে তাকালো।অরিত্রানের দিকে তাকিয়ে করুন গলায় বললো,
—-“ আমাকে পুলিশে দেও ফাঁসিতে ঝুলাও তারপরেও তুমি ছেড়ে দেও।তোমার বাবার বন্ধু ছিলাম সে হিসেবে হলেও ছেড়ে দেও।সব তো বলেছি।একটু দয়া করো।”
অরিত্রানের চেহারায় কোনো দয়া দেখা গেলো না।হিংস্র চেহারা শান্ত করে সে বসে আছে।অরিত্রানের এমন ভাবলেশহীন চেহারা দেখে অনেকটা ভরকালো তৌফিক।নিজেকে সামলে তৌফিক বললো,
—-“ ওকে পুলিশে দিয়ে দিলেই হবে।আমি বরং কমিশনারকে কল করছি।”
পকেট থেকে ফোন বের করতে শুরু করলো তৌফিক।ইমান আকুঁতি মিনতি করছে।অরিত্রান বেশ শান্ত গলায় বললো,
—-“ তৌফিক সাহেব!!আপনার ভুল হচ্ছে তো!!!আপনাকে আমি সাংবাদিকতা করতে এখানে রেখেছি বলে তো আমার মনে হয় না।আপনার কি এমন মনে হচ্ছে???আমি তো আপনাকে বাংলায় কি যেন বলে না!”
কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করে অরিত্রান একটা হাসি দিয়ে বললো,
—-“ স্বামী!! একজেক্টলি!!আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে এখানে রেখেছি।স্বামীর মতো কোথায় উড়া ধূনা পিটাবেন ,আপনার বউকে এতো বছর আটকে রেখেছে সেই প্রতিশোধ নিবেন তা না দেশের রিয়েল হিরো সেজে সাংবাদিক হয়ে পুলিশকে কল করছেন।আর আপনি কি ভুলে গেলেন নাকি এটা ভিলেন টু ভিলেনের মিটিং।এখানে জাত শক্রু পুলিশ নট এলাউ।বিশেষ করে অরিত্রান ডোন্ট লাইক পুলিশ।সো বসে পড়ুন জার্নালিষ্ট সাহেব।”
তৌফিক বসলো না।তিনি খুবই বিচলিত।অরিত্রান ছুঁরি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ইমানের আশে পাশে ঘুরলো কিছুক্ষণ।তারপর ইহানের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
—-“ তোর বাবার সম্পর্কে তোর কি মতামত?? opinion জানতে চাচ্ছি তোর! বলে দে!!শত হোক তোর বাপ।”
ইহান হাত ঝাড়াতে লাগলো।চেঁচিয়ে উঠে বললো,
—-“ যে আমার মাকে খুন করেছে তাকে নিয়ে আমি কিছুই বলতে চাই না।আমার ঘৃন্না হচ্ছে এই লোককে নিজের বাবা হিসেবে পরিচয় দিতে।”
অরিত্রান হাসলো।ঘুরে গিয়ে দাড়াঁলো ইমানের সামনে।ইমান ভীতু চোখে তাকালো।হা করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অরিত্রান মুখ থেকে টেনে জিহ্বা বের করে কেঁটে দিলো।ইমানের মুখ থেকে গড়গড় করে রক্ত পরতে শুরু করেছে।সবাই আঁতকে উঠেছে এবার।অরিত্রান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নেয়।রুম জুড়ে রক্তের ভেপসা গন্ধে ভারী হলো পরিবেশ।তৌফিক চোখ বড় বড় করে শুধু তাকিয়ে আছে।আর দেখছে অরিত্রানের নৃশংসতা।কি ভয়ংকর সেই দৃশ্য!!ইমান আবার জ্ঞান হারালো।পানি ঢেলে আবার জ্ঞান ফিরিয়ে আনা হলো।অরিত্রান হুট করেই হিংস্র হয়ে উঠলো।ভয়ংকর থেকে ভয়ংকর লাগছে তাকে।ইমানকে সে ক্ষতবিক্ষত করছে।চিৎকার করে বলছে,
—-“ আমার বাবাকে মেরেছিস ভালো কথা তার জন্য তোকে একটা কি দু’টো গুলি খেতে হতো কিন্তু আমার মায়ের দিকে হাত বাড়িয়ে জীবনের সবচাইতে বড় ভুলটা করেছিলি ।রূপ না রূপ!!তোর চেহারা এমন করবো যে কবরে যেয়েও নিজের চেহারা দেখে আঁতকে উঠবি।বাবার মতো ভালো নই আমি।আমি বাবার মত হইনি।নিজের মত হয়েছি।আর বন্ধু!!!বন্ধু মাই ফুট!!আমি ভয়ংকর।আমি আতঙ্ক।ক্ষমা নেই আমার কাছে।আমার আদালতে ক্ষমা নেই!
অরিত্রান চিৎকার করছে।সেই চিৎকার সত্যি মারাত্নক ঠেকছে তৌফিকের কাছে।
তৌফিক অনেক সময় নিয়ে এসব দেখছে এবার উঠে এসে অরিত্রানের হাত ধরে বললো,
—-“ সে মারা গেছে অরিত্রান।সরে এসো।”
অরিত্রান সরলো না।ইমানের শরীর ছিঁড়ে দিয়েছে ছুঁড়ির আঘাতে আঘাতে।রিমন চোখ বুজে আছে তার নিজেরই ভয় করছে খুব।অরিত্রান হিংস্র সে জানে কিন্তু এতোটা!!!জানা ছিলো না।তৌফিক ছুঁরি টেনে নিয়ে নেয়।অরিত্রান লাল চোখে তাকায়।এবার ইহানের দিকে এগিয়ে যায়।সামনে দাড়িঁয়ে বলে,
—-“ তোরও তো বাবার মত অন্যের জিনিসে চোখ যায় তোরও তার মতই অবস্থা করা লাগবে।”
এটুকু বলেই অরিত্রান ইহানের গায়ে ঘুষি বসিয়ে দেয়।প্রচন্ড ঘুষিতে ইহান চেয়ার ভেঙে লুটিয়ে পরে।নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে তার।তৌফিক অরিত্রানের হিংস্রতা দেখে স্তব্ধ!!সে ভেবে পাচ্ছে না কি করবে!!অরিত্রান হুংকার করে উঠছে।চিৎকার করে বলছে,
—-“ ওয়াসেনাতের হাত ধরার সাহস কিভাবে হলো তোর??ওর দিকে বাজে নজর দিলি কেন???তোকে বহু বার বলেছি ওর থেকে দূরে থাকতে কিন্তু তুই!!!তোকে তো আজ উপরে পাঠিয়েই ছাড়বো।”
তৌফিক ছুটে যায় অরিত্রানের কাছে।হাত টেনে সরাতে চায় কিন্তু অরিত্রানের সাথে পারছে না।কেউ এগিয়েও আসছে না।রিমন নিজেও দূরে দাড়িয়ে।তৌফিক শান্ত গলায় বললো,
—-“ ইমান তোমার বাবা মাকে মেরেছে তাই তাকে মেরেছো কিন্তু ইহান চৌধুরী তো কিছুই করেনি তাহলে কেন মারছো??ছেড়ে দেও।মরে যাবে তো!!”
অরিত্রান হাত ঝাড়িয়ে নেয়।চেচিঁয়ে বলে,
—-“ ও আপনার মেয়েকে বাজে ভাবে ছুঁয়েছে।তার বিনিময়ে তো একে মারতেই হয় !”
তৌফিক অরিত্রানকে সর্বোশক্তি দিয়ে ঝাকিয়ে তুলে।ইহান জ্ঞান হারিয়েছে।ঠাসসস করে অরিত্রানের গালে চড় বসিয়ে দেয় তৌফিক।চড়ের শব্দ রুমে ছড়িয়ে বিকট শব্দে রূপ নিয়েছে।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।রিমন নিজেও অবাক।ঝাঁঝালো গলায় তৌফিক বললো,
—-“ তুমি আসলেই বেয়াদপ আর বেপরোয়া ছেলে।নিষেধ করলেও সেই জিনিস করই!আরে শুধু খুন করতে পারলেই হয় না।দোষ বিচার করে শাস্তি দিতে হয় জানো না??ইহান তার বাবার মতো কি তোমার বাবা মাকে খুন করেছে??না তো তাহলে কেন তাকে মারতে চাচ্ছো??আসলে তুমি অসভ্যে পরিণত হয়েছ।বেয়াদপ ছেলে বড়দের কথা শুনতে হয় যানো না??কেউ শিক্ষা দেয়নি তাই তো??এই যে চড়টা দিলাম এটা শিক্ষা।খুন খারাবি করে বেরানো বন্ধ করো।”
চোখ বাকিয়ে তাকিয়ে আছে অরিত্রান।সবুজ চোখ স্থির।তার গালে চড় পরেছে!!চড়!!তার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।চড়!!!রিমন দৌড়ে এসে বললো,
—-“ আঙ্কেল আপনার এটা করা ঠিক হয় নি।অরিত্রানকে আপনি মারতে পারেন না।যেখানে সবাই তাকে এতো ভয় পায়।”
কথার মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে তৌফিক বললো,
—-“ আমার ছেলে হলে আরো কয়েক শত চড় বসিয়ে দিতাম গালে।ছোট থেকে কেউ একে কিছু বলেনি তো তাই নিজের ইচ্ছে মত সব করেছে।কেউ যদি আরো আগে কয়েকটা চড় বসিয়ে দিতো তাহলে ও সোজা হয়ে যেতো।বেয়াদপ একটা।এই ছেলেকে হসপিটালে নিওয়ার ব্যবস্থা করো।দ্রুত।”
কেউ নড়ছে না।অরিত্রানের দিকে তাকিয়ে আছে।রিমন তো কাঁপছে।ওয়াসেনাতের বাবাকে এই মুহূর্তে অরিত্রান না জানি কি করবে???আজ পর্যন্ত তার সাথে গলা মিলিয়ে যারা উচ্চ গলায় কথা বলেছে তাদের কাউকেই ছেড়ে দেয় নি অরিত্রান।জীবনে প্রথম কেউ চড় বসিয়েছে তার গালে !!কি যে করবে কে জানে??তৌফিক ভীতি হীন চোখে অরিত্রানের দিকে তাকায়।অরিত্রান পূর্ন দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে।তৌফিক নিজেই ইহানের হাত খুলে দেয়।তার অবস্থা খুবই খারাপ।অরিত্রানের এমন নিশংসতায় তিনি প্রচন্ড বিরক্ত।ইহান ভারী!তোলা যাচ্ছে না তাকে।অরিত্রান তৌফিকের দিকে এগিয়ে যেতেই রিমন হাত চেপে ধরে।ছোট করে বলে,
—-“ ওয়াসেনাতের বাবা উনি!!কিছু করিস না প্লিজজজজ।”
অরিত্রান হাত ছারিয়ে নেয়।ইহানের শরীর তুলতে সাহায্য করে তৌফিককে।সবাই হতবাক চোখে তাকিয়ে আছে।তৌফিক নিজেও বেশ অবাক!!অরিত্রান তার লোকেদের গিকে তাকিয়ে বললো,
—-“ ভালো হসপিটানে নিয়ে যা।”
রাগি একটা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তৌফিক।বেরিয়ে যেতে নেয়।অরিত্রান মৃদু হেসে বললো,
—-“ তৌফিক সাহেব কনগ্রাচুলেশন।আই লাইক ইউর এটিটিউট মিষ্টার জার্নালিষ্ট।”
তৌফিক চোখ ঘুরিয়ে বললো,
—-“ লাভ নেই।আমার মেয়েকে আমি বেঁচে থাকতে তোমার মত ইডিয়েট,বেয়াদপ টাইপের হিংস্র প্রানির কাছে দিবো না।”
নিঃশব্দে হেসে তৌফিকের সামনে দাঁড়ালো অরিত্রান।সামনের চুল পিছনে নিতে নিতে বললো,
—-“ সেটাতো পরের কথা।তবে আপনি যে আমার বাবার দায়িত্ব পালন করে গেলেন তার জন্য আপনাকে কিছু তো দেওয়া প্রয়োজন।”
—-“ বাবা!!তোমার!!তোমার মত ছেলের বাবা হতেও চাই না আমি।আর হলেও থাপড়ে সোজা করে ফেলতাম।”
নিজের গাল তৌফিকের দিকে এগিয়ে দিয়ে অরিত্রান হাসি মুখে বললো,
—-“ আরে গাল এগিয়ে দিলাম সোজা করতে পারলে করেদিন।বিনিময়ে আপনার মেয়েকে চাই।সোজা কথায় আপনার জামাতা হতে চাই।সবাই তো মেয়ের অনুমতি চায় আমি না হয় আপনার মানে তার বাবার অনুমতি চাইছি।ভয়ংকর হলেও কিছু করার নেই।এই রূপেই আপনার মেয়েকে চাই।আমি বিয়ে করতে চাই ওয়াসেনাত বিনতে তৌফিকে।”
তৌফিকের আর একটা চড় বসিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।নিজের ভেতরে রাগ পুঁষে রেখে পাশে থাকা চেয়ার ঠেলে হনহনিয়ে বরিয়ে গেলো সে।অরিত্রান হাসলো পিছন থেকে চেচিঁয়ে বললো,
—-“ নিরবতা কি সম্মতির লক্ষণ???”
তৌফিক থেমে গেলো।পিছনের দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বললো,
—-“ জীবনেও না।আমি বেঁচে থাকতে তো একদম না।”
#চলবে..