পাথরের বুকে ফুল

পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 36

________________________________________
পিনপিনে নীরবতা।কেউ কথা বলছেনা।সবাই স্তব্দ হয়ে তাকিয়ে আছে।তৌফিকের চোখ ছোট হয়ে এসেছে।অরিত্রানকে এই প্রথম দেখছে না সে।আরো অনেকবার দেখেছে।সে নিশ্চিত শুধু নাচার মত হলে সে অন্য মেয়ে রেখে তার মেয়ের কাছে আসতো না।তৌফিকের বস চোখ ফাটা ফাটা করে অরিত্রানকে একবার তৌফিককে একবার দেখছে।তৌফিক এখনো কিছুই করলো না।সে তাকিয়ে আছে।মুখ গম্ভীর।সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।ওয়াসেনাতের হাত পা কাঁপছে।বাবা কি করবে সেটাও বুঝতে পারছে না।আর অরিত্রান কি করবে তাও বুঝতে পারছেনা।তার ভয় লাগছে অরিত্রানকে তার বাবা উল্টাপাল্টা কিছু করবে এটা সে জানে।কিন্তু এর পরে অরিত্রান কি করবে সেটা ভেবেই তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।তৌফিকের বস তৌফিকের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
—-“ এটা তোমার মেয়ে??মাশআল্লাহ্!!যাই হোক অনুমতি চেয়েছে!!চিন্তা করো অরিত্রান খান তোমার কাছে অনুমতি চাইছে!!দিয়ে দেও।নাচ করতেই তো বলছে বিয়ে তো আর না।”

কথাটা শুনেই তৌফিক চোখ গরম করে পাশ ফিরে তাকায়।বস হয়েও তিনি ভয় পায়।তৌফিকের এটেটিউড মারাত্নক।শুধু সাংবাদিক বলে না।মানুষ হিসেবেও সে অন্যায়কে মেনে নেয় না।এটাও মানবে বলে মনে হচ্ছে না।অরিত্রান পকেটে হাত গুঁজে দাড়িঁয়ে আছে।ওয়াসেনাত চোখ নাচিয়ে ইশারায় যেতে বলছে।অরিত্রান শুনছেই না।না দেখার ভান করছে।তৌফিক অনেক সময় নিয়ে নিশ্চুপ থেকে বললো,
—-“ এসব ছোঁয়া ছুঁই স্টাইলের নাচ আমার পছন্দ না।স্যরি।আমার মেয়ে আপনার সাথে নাচতে পারবে না।এখানে অনেকেই আছে ওদের সাথে নাচতে পারেন।”
সবাই আবার স্তব্দ হয়ে গেছে।অরিত্রান খানকে না বলেছে!!ফিসফিস করে সবাই এটাই বলাবলি করছে।একটু চুপ থেকে আবার ফিসফিস শুরু করছে!!রিমি রিমনের কানের কাছে আস্তে করে বললো,
—-“ অরিত্রান জানু তুমি তো আজ শেষ!!”
রিমন চমকে বললো,
—-“ কেন??”
—-“ আরে কেন আবার আঙ্কেলকে চিননা তোমরা!!বহুত ডেয়ারিং মানুষ।যত সহজ সরল দেখতে ততটা না।আর অরিত্রান পেয়ারি তো আরো আগুন!!আজ ব্ল্যান্ডার হবেই!!”
—-“ সেটা সত্যি বলেছ।অরিত্রান তো রেগে আগুন হবে।ওকে সবার সামনে নিষেধ করেছে।হায় আল্লাহ্ কি যে হবে।বাই দ্যা ওয়ে এত জানু জানু করো কা।”রিমনের রাগি কন্ঠ।
রিমি দুলে দুলে হেসে বললো,
—-“ অরিত্রান আমার ক্রাশ আইকন তাই জানু বলে ডাকি।তোমার সমস্যা??”
রিমন মুখ বাকিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিতে বললো,
—-“ না সমস্যা নাই।”
—-“ তাহলে মুখটা এমন করে রাখছো কেন??”
—-“ এমনেই!!”
রিমনের মুখদেখে রিমি হাসলো।গলায় জড়িয়ে রাখা হাতটা আরো জড়িয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
—-“ তুমি তো কলিজা।”
রিমন ফিক করে হেসে ফেলে।

_________________________________
অরিত্রান শব্দ করে হাসছে।সেই হাসি দেখে তৌফিক ভ্রু কুঁচকে তাকায়।এই হাসির কোন কারন খুঁজে পাচ্ছে না তিনি।অরিত্রান হাত দিয়ে ইশারা করে দু’আঙ্গুল উচুঁ করে।সাথে সাথে দু’জন লোক দুটি চেয়ার নিয়ে আসে।অরিত্রান ব্লেজারের দু’পাশ উড়িয়ে বসে পরে।হাত দিয়ে ইশারা করে তৌফিককে বসতে বলে।ওয়াসেনাত মনে মনে দোয়া করছে,যাতে উল্টাপাল্টা কিছু না হয়।তৌফিক বসলো।অরিত্রান ভ্রুতে হাত বুলিয়ে বললো,
—-“ ছোঁয়াতে প্রবলেম??তাই তো??”
তৌফিক কিছু বললো না।মুখে গম্ভীর ভাব নিয়ে বসে থাকলো।অরিত্রান নিজেই হালকা হেসে বললো,
—-“ ছুঁয়ে দিলাম না।তাহলে তো নাচতে দিবেন??”
তৌফিক চকিতেই তাকায়।চোখা করে দৃষ্টি দিয়ে বললো,
—-“ আমি বুঝতে পারছিনা আপনি আমার মেয়ের সাথে নাচতে চাচ্ছেন কেন??এখানে অনেকেই আছে আপনি তাদের নিয়ে নাচ করুন??”
অরিত্রান মৃদু হেসে তৌফিকের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“ সবাইকে তো আমার পছন্দ না।আপনার মেয়েকে পছন্দ।তাই তো অনুমতি চাচ্ছি।আসা করি আপনি অরিত্রানের সম্পর্কে যানেন।সে তো সবার অনুমতি চায় না।আপনার মেয়ে স্পেশাল।সবার সাথে তার তুলনা করা কি উচিঁত???”
তৌফিক হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।চোয়াল তার শক্ত।অরিত্রান সেটা দেখেও মুচকি হাসলো।তৌফিক টুপ ফেলার মত বললো,
—-“ না ছুঁয়ে নাচতে পারবেন???”
অরিত্রান হো হো করে হেসে এক আঙ্গুল দিয়ে লাল ঠোঁটজোড়া ঘোঁষে বললো,
—-“ অরিত্রান যা বলে তাই করে।ওয়াসেনাত বিনতে তৌফিকের গায়ে হাত না দিয়েই তাকে নিয়ে নাচ শেষ করবে অরিত্রান খান।”
তৌফিক বিস্মিত গলায় বললো,
—-“ আপনি আমার মেয়ের নাম জানলেন কিভাবে??”
—-“ অরিত্রান খান যানেনা এমন জিনিস আপনার জীবনে কম আছে জার্নালিস্টি সাহেব।তাহলে অনুমতি পেলাম?
তৌফিক কিছু বললো না মাথা হালকা দুলিয়ে বললো,
—-“ আমার মেয়ের গায়ে হাত যাতে না লাগে মিষ্টার অরিত্রান খান।রিমির দিকে তাকিয়ে আমি এগুলো এলাউ করছি।তা না হলে এখনি চলে যেতাম।”
অরিত্রান হাসলো।চেঁচিয়ে বললো,
—-“ মিউজিক!!!”
অরিত্রানের উচ্চ গলায় মিউজিক ছাড়া হয়েছে।তৌফিককে একে একে অনেকেই প্রশ্ন করছে মেয়েটা কি তার??অরিত্রান যে কি করতে চাচ্ছে এটাই তিনি বুঝতে পারছে না।কিন্তু প্রচন্ড রেগে আছেন তিনি।এই অরিত্রানের জন্য সবাই তার মেয়েকে চিনেছে।বিশেষ করে ঈমান!!!অরিত্রান যেন এটাই চেয়েছে।সে হাসছে মিটমিট করে।চেয়ার ঠেলে উঠে দাড়ায় সে।যত জনের মুখেই রাগ আছে তাদের সবার চাইতে রাগ বেশি হচ্ছে মাদৌলির।সে রাগে ফঁস ফঁস করছে।অরিত্রান ওয়াসেনাতের সামনে হাত বাড়িয়ে দেয়।আজকের সবার আকর্ষণ যেন তারাই।ওয়াসেনাত অবাক হওয়া গলায় বললো,
—-“ আপনাকে না ছুঁয়ে কিভাবে নাচবো???”
—-“ হাত উল্টো করো।”

ওয়াসেনাত হাত মেলে উল্টো করে।অরিত্রান না ছুঁয়ে সে হাতের নিচে হাত রাখে।ওয়াসেনাত নিজের বাবার দিকে একবার তাকায়।তিনি কৌতুহলি খুব।চোখ মেলে তাকিয়ে আছে।আসলে সে ভাবছে না ছুঁয়ে কাপল ডান্স??আবার ভাবছে অরিত্রান খান কি সত্যি তার মেয়েকে পছন্দ করে??তাহলে তার নিজের কি করা উঁচিত??গান চলছে লাউডলি!!
Zara si Dil Mein De jagah tu
Zara sa apna le Bana
Zara sa khawbon Mein saja tu
Zara sa yaadhon Mein Basa
Mein chahun Tujhko
Meri jaan Bepaanah
Fida hoon Tujhpe
Meri jaan Bepaanah
Wooow,wooow,
অরিত্রান সত্যি না ছুঁয়ে নাচছে।ওয়াসেনাতের কোমড়েও হাত রাখছে না ছুঁয়ে।না ছুঁয়েই ওয়াসেনাতকে ঘুরাচ্ছে।ওয়াসেনাতের বিশাল জমা তার তালে তালে ঘুরছে।চারপাশের সব লাইট তাদের উপরে।ওয়াসেনাত হাসার চেষ্টা করছে।কিন্তু ভয়ে তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে।সে চারদিকে তাকিয়ে শুধু নিজের বাবার মুখভঙ্গি দেখছে।বুকের ভেতরে হাতুরি পিটা হচ্ছে ক্রমাগত।অরিত্রান না ছুঁয়েও অনুভব করতে পারছে ওয়াসেনাত কাঁপছে।প্রচন্ড শিতে মানুষ যেভাবে কাঁপে একদম সেই ভাবে।কোনো স্টেপ সে ঠিক। করে করছে না।অরিত্রান হাসলো।অরিত্রানের কাঁধের উপরে হাত রাখতে গিয়ে সে সত্যি অরিত্রানকে ছুঁয়ে দিলো।অরিত্রান বললো,
—-“ ভয় করছে??”
—-“ তো করবে না? আপনি পুরা কেইস খাওয়ায় দিলেন তো!!বাবা সত্যি কি না কি ভাববে!!টেনশনে আমার মাথা কাজ করছে না।”
অরিত্রান ওয়াসেনাতের হাতের কাছে হাত এনে বললো,
—-“ ভয় আমার পাওয়ার কথা।যানি আজকের পরে হয় পজেটিভ কিছু করবে তোমার বাবা আর তা না হলে একদম নেগেটিভ।তাই ভয় আমার পাওয়া উঁচিত তোমার না।”
—-“ আপনি তো চুপই থাকেন।একদম ফাসিঁয়ে দিলেন।এতো নাচতে ইচ্ছে করার কারন কি??”
—-“ অবশ্যই কারন আছে।কারণ ছাড়া অরিত্রান কিছুই করে না।”
—-“ কি কারন।”
—-“ অরূপ !!”
ওয়াসেনাত অবাক হয়ে ঘুরতে ঘুরতে বললো,
—-“ অরূপ ভাই আবার কি করলো??”
—-“ কি আর করবে,নাচটা সেই করতো তোমার সাথে।যেটা আমার মোটেও পছন্দ হতো না।তখন আরো অনেক কিছু হয়ে যেত।তাই আমার সাথেই নাচা ভালো।”
অরিত্রান হাত উঁচু করে।ওয়াসেনাত না ছুঁয়ে নিজের হাত উঁচিয়ে গোল করে ঘুরে।অরূপ রাগ দমন করতে পারলো না।এই অরিত্রানের সাহস তো খুব বেশ??একটা গ্লাস ছুঁড়ে ভেঙ্গে দিলো সে।উচ্চ শব্দের কারনে তা কারো কানে এলো না।অরূপের থাকার কথা ছিলো অরিত্রানের জায়গায়।সেই জায়গা অরিত্রান খান নিয়ে নিবে এটা সে মানতে পারছে না।অরূপ ওয়াসেনাত আর অরিত্রানকে ঘুরে ঘুরে দেখছে।তাদের মাঝে কথা বলা,হাসি,চোখের অনুভুতি।সব ধরতে চাচ্ছে।ছবি তোলা বা ভিডিও করা নিষেধ।তবুও রিমি লুকিয়ে ছবি তুলে নিলো।ওয়াসেনাত মিইয়ে যাওয়া গলায় প্রশ্ন করলো,
—-“ অরূপ ভাইকে আপনি এতো অপছন্দ করেন কেন বলেন তো??”
অরিত্রান চোখ মুখ কঠিন করে বললো,
—-“ ওর চোখ আমার পছন্দ না।”
—-“ কেন??ওয়াসেনাতের দ্রুত প্রশ্ন।

—-“ ওর চোখে আমি তোমার জন্য ভালোবাসা দেখি।যা আমি দেখতে চাই না।”
অরিত্রান আর নাচলো না।গান শেষ হওয়ার আগেই সে নিচে নেমে আসে।ওয়াসেনাত অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।সবাই তালিও বাজিয়েছে।সেদিকে ওয়াসেনাতের দৃষ্টি নেই।সে অরিত্রানের রাগে লাল হওয়া মুখ দেখে বিস্মিত।তাকে অনেকেই পছন্দ করে।অরিত্রানও জানে।কিন্তু সবাইকে ছাড়িয়ে অরূপকেই কেন অরিত্রানের এত অপছন্দ??
তৌফিকের পাশ ঘেঁষে যেওয়ার সময় অরিত্রান বললো,
—-“ একবারি ছুয়েঁছে।তাও আপনার মেয়ে।আমি কিন্তু না ছুঁয়েই নেচেছি।”
তৌফিক পাশ ফিরে তাকায়।তারপর বলে,
—-“ আমার মেয়ে আপনার টাইপের না।ওর থেকে দূরে থাকাই আপনার জন্য ভালো হবে।মেয়ের ব্যাপারে আমি কিন্তু আপনার পাওয়ার কেও ভয় পাইনা।”
অরিত্রান মুচকি হাসলো।মজার ভঙিতে বললো,
—-“ এটার জন্যেইত আপনাকে এবং আপনার মেয়েকে অরিত্রান খানের খুব পছন্দ।I really like your honesty .”
অরিত্রান ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুঁলিয়ে সামনে এগিয়ে যায়।তৌফিক রিমির কাছে এসে বললো,
—-“ আমাকে খুবই গুরুত্বপূর্ন্য কাজে যেতে হবে।একদম সময় নেই।তা না হলে ওয়াসেনাতকে বাসায় দিয়ে আসতাম।তুমি যাওয়ার সময় ওকে নিয়ে যাবে ??”
রিমি বিনয়ের সাথে বললো,
—-“ অবশ্যই আঙ্কেল।অ..
অরিত্রান বলতে চেয়েও থেমে বললো,
—-“ আপনি চিন্তা করবেন না একসাথেই যাবো।”
তৌফিক ওয়াসেনাতকে কড়া গলায় বললো,
—-“ অরিত্রান ডেঞ্জারাস।তুমি রিমির কাছেই থাকবে।ওর সাথেই যাবে।ঠিক আছে??”
ওয়াসেনাত মাথা নাচালো।যার অর্থ ঠিক। আছে।
তৌফিক বেরিয়ে যেতেই রিমি দম ছেড়ে বললো,
—-“ ভাই পরের কাহিনী কি হবে জানছ??”
রিমির কথা শুনে জুসের গ্লাসে চুমুক দিয়েই কপাল কুচঁকে প্রশ্ন করলো ওয়াসেনাত,
—-“ কিসের কাহিনী??”
রিমি চোখেমুখে আতঙ্ক নিয়ে বললো,
—-“ আঙ্কেল তো অরিত্রান জানে জিজুরে একটুও পছন্দ করে না।তোদের মেনে নিবে দোস্ত??”
ওয়াসেনাত আতঁকে উঠলো।খঁক খঁক করে কেশে উঠে সে।রিমি মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
—-“ এমনটা হলে তুই চিন্তা করিস না আমি আছিনা।তোদের পালাতে সাহায্য করবো।আরে অরিত্রানকি বেকার প্রেমিক না কি !!কোথায় রাখবে কি খাওয়াবে চিন্তা করতে করতেই তোর বিয়ে হয়ে যাবে?উনি তো তোকে নিয়ে অন্য দেশে পালিয়ে যাবে।ব্যাপারটা কত মজার ইয়ার!!
রিমি হি হি করে হেসে উঠলো।ওয়াসেনাতের মুখে বিষন্ন ছাপ।বুক ছিড়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কঠিন কন্ঠে সে বললো,
—-“ বাবা আর উনার মাঝে বেছে নেওয়ার প্রশ্নই আশে না।আর যদিও আসে আমি বাবাকেই বেছে নিবো।”
অরিত্রান পাশেই ছিলো।হাতে তার কাঁচের গ্লাস ছিলো।সেটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিল সে।ওয়াসেনাতের কথায় তার দিকে তাকালো।ওয়াসেনাতও তাকালো।দু’জনের চোখা চোখি হলো।কাঁটা হাতে কাঁচের গ্লাস চেপে ধরে অরিত্রান।প্রচন্ড শক্তি ব্যয় করে চেপে ধরায় ঠাস করে গ্লাস ফেটে যায়।ওয়াসেনাত অরিত্রানের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।সবুজ চোখ লাল হলে মারাত্নক লাগে।রিমি আর্তনাদ করে ওয়াসেনাতের হাত চেপে ধরে।ওয়াসেনাত চমকে অরিত্রানের দিকে তাকায়।চোখ থেকে চোখ সরিয়ে অরিত্রানের কাটাঁ হাত দেখে আতঁকে উঠে।অরিত্রান আর বসে থাকলো না।ভাঙা গ্লাস ছুঁড়ে উঠে দাড়ালো।ওয়াসেনাত এগিয়ে গেলো।পিছনে পিছনে যেতে চাইলো।তার আগেই মাদৌলি ওয়াসেনাতের সামনে এসে দাড়ালো।ওয়াসেনাত পাশ কেঁটে যেতে চাইলে সেও সেই জায়গায় পথ আগলে দাড়ায়।ওয়াসেনাত একপাশ হয়ে বললো,
—-“ আপনি আগে যেতে পারেন।”
মাদৌলি আঙ্গুলে চুল পেচাঁতে পেচাঁতে বললো,
—-“ আমি তো যেতে চাই না।”
ওয়াসেনাত তাড়া দেখিয়ে বললো,

—-“ তাহলে আপু একটু সরেন আমি যাবো।”
মাদৌলি ওয়াসেনাতের পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে ঠেস দিয়ে বললো,
—-“ অরিত্রান খানের পিছনে পিছনে??”
ওয়াসেনাতের একদম মাদৌলির কথাগুলো ভালো লাগছে না।তবুও হেসে বললো,
—-“ আমি সাথে সাথে চলতে পছন্দ করি পিছনে পিছনে না।”
মাদৌলি কন্ঠে অহংকার ভাব নিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিতে বললো,
—-“ তোমার কি মনে হয় অরিত্রান খানের মত লোক তোমাকে পছন্দ করে??আ’র ইউ ক্রেজি!!”
বলেই সে হাসতে শুরু করলো।ওয়াসেনাত হতবাক হয়ে সে হাসি দেখলো।তারপর বললো,
—-“ আমি কারো পছন্দের পাত্রী হতে চাই না।পছন্দ তো মানুষ জামা কাপড় কেও করে।কিন্তু পুরোনো হয়েগেলে ফেলে দেয়।মানুষ পছন্দের জিনিস না।হয় সম্মানের,নয় আদরের,কিংবা ভালোবাসার প্রানী।”
মাদৌলি আবার পরখ করে ওয়াসেনাতকে।মনে মনে বিড়বিড় করে,বেহেনজি টাইপের দেখতে হলেও বেহেনজি না।কথায় তো আগুন!!!মাদৌলি দমার মেয়ে না।হালকা হেসে বললো,
—-“ আমার বাবার কত টাকা আছে জানো??তোমার বাবার মত হাজার খানেক জার্নালিষ্ট তিনি কিনতে পারে তুরি বাজিয়ে।আর রূপ??তোমার চাইতেও আমারই বেশি।শুধু এই চোখটা বেশি পরেছে তোমার ভাগ্যে।লেন্স লাগালে সেটাও পাওয়া যাবে।দেখ দেখ আমি কত স্টাইলিশ।”
মাদৌলি হঠাৎ করেই হিংস্র হয়ে উঠে।ওয়াসেনাত ভড়কে যায়।পিছনে সরে দাড়ায়।ঢোক গিলে চারপাশে তাকায়।মাদৌলি এবার হুট করেই কান্না শুরু করে।টিশু দিয়ে চোখের কালি মুছতে মুছতে বলে,
—-“ আমি তোমার চাইতে সুন্দর।হ্যা হ্যা আমি সুন্দর।অনেক অনেক সুন্দর।স্টাইলিস।ফিট।আমার ফিগার দেখলে সব ছেলের মাথা নষ্ট হয়ে যায়।এমন কি আমার কাজেন ইহান চৌধুরিরও।ও কি বলে যানো আমাকে যদি বোনের চোখে না দেখতো তাহলে না কি আমার সাথে প্রেম করতো।তবে ও বোকা বুঝলা।পৃথিবীর সবাই যদি বোন হয় তাহলে বউ কে হবে।যদিও আমি নিজেই ওর বোন হতে চাই।আমি তো অরিত্রানের তাই না।”
ওয়াসেনাতের মনে হচ্ছে মাদৌলি পাগল হয়ে গেছে।কেমন পাগলের মত বিহেভ করছে।ওয়াসেনাতকে ঘামাচ্ছে।হাতের উল্টা পিঠ দিয়ে নিজের ঘাম মুছে নেয় সে।চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কাউকে খুঁজছে।মাদৌলি হো হো করে হেসে উঠে।আবার রাগেফঁস ফঁস করে বলে,
—-“ আমি তোমার চাইতেও সব দিক দিয়ে এগিয়ে।টাকা বাড়ি গাড়ি,রূপ,কি নেই আমার।সব আছে।তোমার নিজের কি আছে??কিছু না।তাই অরিত্রান আমার।অনলি মাই।গট ইট।”
ওয়াসেনাত পাশ কাটিয়ে দেয় এক দৌড়।দৌড়াতে গিয়ে আবার কারো সাথে ঠাস করে ধাক্কা খায়।ওয়াসেনাত সরে এসে বুকে হাত দিয়ে হাঁপাতে হাপাতে না তাকিয়ে বললো,
—-“ স্যরি!!”

—-“ স্যরি কেন??”
ওয়াসেনাত বিরক্তির সুরে বললো,
—-“ কেন আবার আপনার সাথে ধাক্কা লাগলো তাই।”
ওয়াসেনাত মুখ তুলে তাকায়।ইহান বাকাঁ হেসে বুকের পাশটায় হাত রেখে বললো,
—-“ ওহ্ হুসনেপারী!আমার জানপাখি!!তোমার সাথে ধাক্কা লেগেছে মানে তো আমার বুকে আগুন জ্বলেছে।এই আগুনে জ্বলেও আনন্দ আছে।”
ইহানকে দেখেই ওয়াসেনাতের মাথা বিগড়ে গেলে।একের পর এক পাগলের সামনে পরছে সে।নিজের প্রতিই সে বিরক্ত।রাগে ফুঁসফুস করে বললো,
—-“ অসভ্য লোক একটা।”
ইহান তাতেও হাসলো।একটু ঝুঁকে বললো,
—-“ তোমার দেওয়া নাম বুঝি??ওয়াওও আমি বরং নিজের ইহান নাম পরিবর্তন করে আজ থেকে নিজের নাম অসভ্য রাখবো।কি বলো??ভালো হবে না??”
—-“ আপনি কি পাগল???”ওয়াসেনাতের ঝাঁঝালো গলা।
ইহান একটু হেলে দুলে বললো,
—-“ তোমার প্রেমে!আসলে তোমার চোখের প্রেমে পাগল আমি।প্রথম দেখেই হয়েছি।আমি বরাবরই নিজের পছন্দের জিনিস নিয়ে পাগল থাকি।তবে এই পাগলামি ভিন্ন মেরে জান।”
ইহান চোখ মেরে বুক ঘঁষে।ওয়াসেনাত রেগে মেগে ফঁস করে উঠে।গলা উঁচু করে বলে,
—-“ আপনি কত বড় বেয়াদপ আপনি জানেন??প্রথম দেখায় আপনার সম্পর্কে জানা হয়ে গেছে আমার।অসভ্য বললেও কম হবে।সামনে থেকে সরেন।”
ইহান হাসলো।ওয়াসেনাতের মুখের উপরে হাত ঘুরিয়ে বললো,
—-“ রাগলে তোমাকে আরো মারাত্নক লাগে।এই এই তোমার নাকটা কি সুন্দর লাল আপেলের মত দেখায় যানো??আর এই গাল গুলো!!”
—-“ শেট আপ।সরবেন না কি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিবো??”
ইহান নিজের দু’হাত মেলে বললো,
—-“ ধাক্কা দেও।”
ওয়াসেনাত চোখ রাঙ্গিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
—-“ অসভ্য!!”
ওয়াসেনাত ঘুরে যেতে চায়।ইহান হাত টেনে ধরে।রাগে শরীর জ্বলে উঠে ওয়াসেনাতের।রাগি লাল চোখে তাকায়।ইহান সাথে সাথে হাত ছেড়ে দেয়।একটু ঝুঁকে বলে,
—-“ অরিত্রানের ছোঁয়ায় কি জাদু আছে?যা আমার ছোঁয়ায় নেই।না মানে ছুঁয়ে দেখলেও কিছু বলো না।উল্টা লজ্জায় লাল হও।কাহিনী কি বলো তো??দরকার হলে আমিও সেই জাদু গায়ে মাখিয়ে নিবো।তোমাকে একটু ছোঁয়ার লোভ তো আমারও হয় না কি??”
ওয়াসেনাত দু’হাতে নিজের জামা উঁচিয়ে হিল পড়া পা দিয়ে ইহানের পায়ে পাড়া দেয়।ইহান ব্যথায় চোখমুখ শক্ত করে।ওয়াসেনাত গলা উঁচু করে মাথা উঠিয়ে বললো,
—-“ উনার ছোঁয়ার পবিত্রতার জাদু আছে।সবাই আপনার মত শরীর ছুঁয়ে দিতে চায় না।কেউ কেউ মন ছুঁয়ে দেখতে চায়।আর আমার জীবনে উনিই সেই কেউ।আপনার মত অসভ্য মানুষ আমি আর একটাও দেখিনি।ছিঃ।”
ওয়াসেনাত সামনে হেঁটে যায়।ইহান চেঁচিয়ে বললো,
—-“ তোমার দেওয়া প্রথম ব্যথাও আমার কাছে দামি।তোমার মনের গন্ধে আমি ঘুরি ইদানিং শরীরে চাহিদায় নয়।”
ওয়াসেনাত দু’হাতে কান চেপে পিছনে ঘুরে একবার চোখ রাঙিয়ে তাকায়।মুখ কটমট করে আবার পায়ের দিকে দেখায়।ইহান হেসে নিজের পায়ের জুতো ছুঁয়ে বুকে হাত রাখে।ওয়াসেনাত জামা তুলে দৌড় লাগায়।এদের চক্করে আসল মানুষের কাছেই যেতে পারলো না সে।

____________________________
চাঁদটা একদম অরিত্রানের মুখের উপরে আছে।ব্যান্ডেজের উপর দিয়ে গড়িয়ে পরছে রক্ত।অরিত্রান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চাঁদের দিকে।সেই চাঁদেও যেন ওয়াসেনাতকে দেখছে সে।সত্যি কি ভালোবাসা হয়??সত্যি কি কাউকে জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসা যায়??সত্যি কি ভয়ংকর ভালোবাসা হয়??এই প্রশ্ন গুলো অরিত্রানের মাথায় আগে কখনো আসতো না।কিন্তু আজ কাল সে সত্যি ভালোবাসায় মাখামাখি হয়ে আছে।অফিসের কাজের বাহিরে যার আর কিছুতেই মন বসতো না সেই অরিত্রান এখন অবসর সময় খুঁজে বেড়ায়।সাদা কালো জীবনও তার রঙ্গিন লাগে।সব যেন অদ্ভুত লাগে।নিজের আটাশ বছরের জীবনকে আঠারো বছরের কিশোরের মত লাগছে।যে তার প্রেমিকার জন্য সব করতে পারবে।তার নিজেকে আঠারো বছরের প্রেমিক মনে হচ্ছে।যে প্রেমিকার বায়না শুনতে ভালোবাসে।তার ইচ্ছাকে সবার আগে প্রাধান্য দিতে চায়।তার ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র ব্যথায় ব্যথা অনুভব করে।যাকে জীবনের অংশ নয় জীবন বানিয়ে নিয়েছে সেই আটাশের অরিত্রান।অরিত্রান এখনো ভাবতে পারছে না সে কি করে এতোটা ভালোবাসতে পারছে??সে কিভাবে এতো গভীরে তলিয়ে যাচ্ছে??কিভাবে সে ভালোবাসার মায়া জালে এতোটা জড়িয়ে গেলো?এখন কি হবে??
অরিত্রানের পিঠে কেউ হাত রাখে।হালকা চমকে তাকায় অরিত্রান।ওয়াসেনাত হেসে বললো,
—-“ ভয় পেয়েছেন না??”
সামনের সচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে অরিত্রান বললো,
—-“ তুমি যদি মনে করো তবে তাই।”
ওয়াসেনাত বুঝতে পারছে অরিত্রানের মন খারাপ।তাই আর হাসলো না।অরিত্রানের মতো সামনে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকে।বাতাস হচ্ছে সেই বাতাসে ওয়াসেনাতের উড়না উড়ে আসছে অরিত্রানের চোখে মুখে।অরিত্রান বাধাঁ দেয় না।একটা আলাদা গন্ধ আছে সেই উড়নায়।অদ্ভুত একটা অনুভুতি হয় অরিত্রানের সেই গন্ধে।অরিত্রান অনুভুতিকে নিজেদের মত উড়তে প্রশ্রয় দেয়।বুকের শব্দকে নিজেদের মত বাড়তে দেয়।ওয়াসেনাত অরিত্রানের দিকে তাকিয়ে নিজের উড়না টেনে নিতে নিতে বললো,
—-“ আমার পা ব্যথা করে।অনেক সময় নিয়ে দাড়িঁয়ে আছি তো।বসেন না?”
অরিত্রান সামনে তাকিয়েই বললো,
—-“ তোমার জামা ভিঁজে যাবে পুলের পানিতে।”
ওয়াসেনাত নাঁখছ করে বললো,
—-“ যাক গা।বসেন তো।”
ওয়াসেনাতের কথায় অরিত্রান হাসলো।প্যান্টের খানিকটা উঠিয়ে সে বসলো।দু’হাতে ওয়াসেনাতের জামা গুঁছিয়ে নিজের হাঁটুতে নিয়ে বললো,
—-“ অল্প ভিজঁবে এখন।বসো।”
ওয়াসেনাত বসলো।অরিত্রানের কাঁটা হাত নিজের কোলে নিয়ে দেখতে লাগলো।অরিত্রানের দৃষ্টি তীক্ষ্ন।ওয়াসেনাতের গায়ে হাওয়া লাগছে।সেই হাওয়ায় জামা উড়না উড়ছে।ওয়াসেনাত ব্যান্ডেজ খুলে দেয়।অরিত্রান সবুজ চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে।পুলের পানিতে হাত চুবিয়ে দেয়।অরিত্রান হালকা ঠোঁট নাড়ায়।জ্বলছে।ওয়াসেনাত দুঃখি দুঃখি মুখ করে বললো,
—-“ জ্বলছে না??”
অরিত্রান হাসলো।ওয়াসেনাত সে হাসিকে পাত্তা না দিয়ে বললো,
—-“ ভালো হয়েছে।আচ্ছা আপনি কি মানুষ না??এতো কিভাবে হাত কাটেঁন??একটুও মায়া হয় না হাতের জন্য??মনে হচ্ছে নিজের না সৎ মায়ের মত সৎ হাত??”
অরিত্রান দীর্ঘশ্বাস নিয়ে সামনে তাকিয়ে বললো,
—-“ তুমি ছাড়া অন্য কিছুতেই আমার দয়ামায়া কাজ করে না।”
ওয়াসেনাত বিরক্ত একটা দৃষ্টি ফেলে বললো,
—-“ আজ দুই পাগল না শুধু তিন পাগলের সাথে আমার দেখা হয়েছে তাও পর পর।”
অরিত্রান হাসলো।বললো,
—-“ ইহানের পায়ে যে হিল দিয়ে মেরেছো আমি ১০কোটি টাকার বিনিময়ে কিনতে চাই।যদিও তুমি আরো বেশি চাইতে পারো।আমি দিতে রাজি।তবুও আমি কিনতে চাই।”
ওয়াসেনাতের ঠোঁটজোড়া নিজেদের গতিতে আলাদা হয়ে গেলো।বিড়বিড় করে বললো,
—-“ আপনি আমার সব খবর কিভাবে পান বলুন তো?সে যাই হোক আমি কোটি কোটি টাকার বিনিময়েও আমার জুতো দিবো না।যানেন কত দিয়ে কিনেছি???পুরা ১৫০০টাকা দিয়ে।আপনাকে কেন দিবো??কত খুঁজে বের করতে হয়েছে এই জুতো!!হুহ্ টাকা কি গাছে ধরে।
অরিত্রান একটু অবাক হলো।তারপর হাসলো।কিছুই বললো না।ওয়াসেনাত নিজের উড়না টেনে ছিড়ে ফেলে ।অরিত্রান দ্রুত বললো,
—-“ এই কি করছো??উড়না ছিড়ছো কেন??”
—-“ আমার না নায়িকা হতে ইচ্ছে করছে।বড্ড ইচ্ছে।নায়িকারা যেভাবে নায়কের হাত বেধেঁ দেয় শাড়ির আঁচল ছিড়ে আমিও তাই করছি।কিন্তু ভিন্নতা আছে।আমি তো শাড়ি পড়িনা তাই উড়না দিয়ে বেধেঁ দিচ্ছি।”ওয়াসেনাত হেসে চোখ নাচালো।
অরিত্রান মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে।পাশের মাঠে দাড়িয়ে এই দৃশ্য দেখে কেউ জ্বলছে।খুব জ্বলছে।চোখ উত্তপ্ত তার।ওয়াসেনাত যত্নের সাথে অরিত্রানের হাত বেধেঁ দিচ্ছে।একের পর এক বকবকও করছে অরিত্রানের সেদিকে খেয়াল নেই।সে ওয়াসেনাতের হাত নাচানি দেখছে।ঠোঁট নাচানো দেখছে।হাসিতে মুগ্ধ হচ্ছে।গায়ের মাতাল করা গন্ধে পাগল হচ্ছে।ওয়াসেনাত হাত বাঁধা শেষ করে সেই হাতে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
—-“ আমার ডাক্তার হওয়া উচিঁত ছিলো।”

অরিত্রান চোখ বাঁকিয়ে বললো,
—-“ আমি হাত বেশি কাটি তাই??”
—-“ হুম।” বলেই লাজুক হাসে ওয়াসেনাত।
অরিত্রান ওয়াসেনাতের হাত চেপে ধরে।আকাশের দিকে একবার তাকিয়ে ওয়াসেনাতের চোখের দিকে তায়।শুকনো করে একটা ঢোক গিলে বললো,
—-“ জীবনে কোনো একটা মুহূর্তে তোমার বাবা আর আমার মাঝে যে কাউকে বেছে নেওয়ার হলে তুমি কাকে নিবে??”
অরিত্রানের প্রশ্নে কেঁপে উঠে ওয়াসেনাত।হাত সরিয়ে নেয়।চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নেয়।অরিত্রান কঠিন হয়ে চোয়াল শক্ত করে।হাতটা আবার টেনে নিজের হাতে নেয়।শ্বাস ফেলে বলে,
—-“ চোখের দিকে তাকাও পরীজা।তোমার ওই চোখ লুকিয়ে রাখার জন্য নয়।চোখে চোখ রাখার জন্য।আমি প্রশ্নের উত্তর চাই।”
ওয়াসেনাত না তাকিয়ে বললো,
—-“ এমন প্রশ্ন কেন করছেন??আমি কাউকেই আলাদা চোখে দেখি না।বাবা সম্মানের সাথে ভালোবাসার।আপনিও আমার একুই জায়গা জুড়ে।সম্পর্কের কারনে ভিন্নতা আছে।তাছাড়া দুজনেই একুই।”
—-“ তোমার বাবা আমাকে মোটেও পছন্দ করেনা।সেটা আজ প্রমানিত।আমি জানতে চাই তুমি কাকে বেছে নিবে।বাবাকে না কি আমাকে??”
—-“ আমি বাবাকে বুঝিয়ে বলবো।বাবা বুঝবেন।”
—-“ আমার প্রশ্ন এটা না।যেটা করেছি জবাব চাই।”অরিত্রানের কঠিন গলা।
ওয়াসেনাত দীর্ঘশ্বাস নেয়।চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
—-“ আমি বাবাকে বেছে নিবো।”
অরিত্রান হাত ছেড়ে দেয়।চোখ সরিয়ে নিয়ে।চোয়াল শক্ত করে চোখ বুজে নেয়।হাত মুষ্টি বদ্ধ করে।তার বুক কাঁপছে।নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে।কলিজায় টান পড়ছে।প্রচন্ড যন্ত্রনা হচ্ছে।প্রচন্ড প্রচন্ড বেশি!!!
#চলবে__________
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।
@হাফসা____