পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 31
__________________
একটা যুক্তিহীন অসমাপ্ত খারাপ স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে জেগে উঠেছে ওয়াসেনাত।এমন ভয়ংকর,খারাপ স্বপ্ন সে আগে কখনো দেখেনি।একজন মহিলা।যার গলা কাঁটা।ঠিক যেমনটা সে শুনেছে অরিত্রানের মুখ থেকে।এমন খারাপ স্বপ্ন দেখবেই বা না কেন??বাসায় আসার পর থেকে ঘুমতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত সে ওইসব কথাই ভেবেছে।
চোখ মেলার সাথে সাথে মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তার।ঘুটঘুটে অন্ধকার রুম।ওয়াসেনাতের বেশ ভয় লাগছে।অন্ধকার ঘরের সিলিং এর দিকে তাকিয়ে অনেকক্ষণ পরে বুঝতে পারলো এটা একটা স্বপ্ন ছিলো।ওয়াসেনাত যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।এমন উদ্ভট স্বপ্ন দেখে সে রিতি মত ঘামে ভিঁজে গেছে।বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে যানতে পারলো বাবা বাসায় আসে নি।ফ্রেশ হওয়ার কিছু সময় পরেই সে আবিষ্কার করলো তার প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে।তাই বাবাকে রেখেই খেতে বসে পরে সে।বাবা তখনি বাসায় ঢুকে।ওয়াসেনাতের জন্য ফোন কিনেছে সে।এর জন্যই এতো দেরি হয়েছে।একরাতের ঘুম আর ক্লান্তিতে ওয়াসেনাতের শরীর অসাড় হয়ে এলো।বাবাকে কোন মতে বুঝিয়ে নিজের রুমে চলে আসে সে।মাথায় তখনো অরিত্রান ঘুরছিলো।কিন্তু এত এত ক্লান্তি নিয়ে সে আর থাকতে পারলো না।বিছানায় ঝাঁপিয়ে পড়ল সে।
নিজের গায়ের উপরের সাদা চাদরটা ঢেলে সরিয়ে দেয় ওয়াসেনাত।বিছানায় পা গুটিয়ে ঝিম মেরে বসে থাকে কিছু সময়।মাথার চুলের ভাজে হাত ঢুকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে স্বপ্নের কথা ভাবে।ক্লান্ত শরীর টেনে তুলে উঠে দাড়াঁয় সে।
ফোনের টর্চলাইট জ্বালালো ওয়াসেনাত।তারপর ধীর পায়ে হেঁটে বারান্দাটায় এসে দাড়ালো সে।বাড়ির সামনের দিকেই এই বারান্দাটা।সামের বিশাল বিশাল গাছগুলোর মাথা দেখা যায় বারান্দা থেকে।ঘরময় অন্ধকার হলেও বাহিরটা একদম আলোয় আলোকিত।আকাশে শুক্লপক্ষের একাদশী থালার মত চাঁদটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে।গাছের কোনায় কোনায় সবুজ বাতির মত থোকা থোকা জোনাকি জ্বল জ্বল করে জ্বলছে।ঝিঁঝিঁ করে ডাকছে ঝিঁঝিঁ পোকা।নীরব একটা বাতাস হচ্ছে।এই বারান্দাটা অনেক বড়।অনের লম্বা প্রন্ত নিয়ে করা হয়েছে।ওই প্রান্তে দাড়ালেই দুরের গলিটা চোখে পরে।ওয়াসেনাতের চোখের দৃষ্টি দুর দুর যাচ্ছে।চারদিকে তাকিয়ে সে নিজের ভীতি দূর করতে চাচ্ছে।।অরিত্রানের কথা গুলো ভেবে তার খুব খারাপ লাগছে। ছোট একটা ছেলে ।বাবা মা ছাড়া ছেলে মেয়েরা কতটা অসহায়!তার কুঞ্জবাড়িতে এমন অনেক প্রমান আছে।কত এতিম বাচ্চারা আছে।অরিত্রানের গল্প শুনে তার আরো বেশি করে তাদের জন্য খারাপ লাগছে।এক অসহনীয় কষ্টে তার বুকে ব্যথা হচ্ছে।চোখের কোনায় জমছে জল।অরিত্রানের জীবনের এই গল্প যেন তার প্রতি ভালোবাসা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।মায়া হচ্ছে বড্ড।কষ্টে বুকের পাশটা চিনচিন করছে।ওয়াসেনাত শূন্যে তাকিয়ে থাকে কিছু সময়।তারপর চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখে।ঠিক সেই সময় তার চোখ গলির দিকে যায়।ভালো করে লক্ষ্য করে সে দেখে কেউ দাড়িয়ে আছে।অনেক দূরত্বে থাকায় আর অন্ধকার হওয়ায় ভালো করে বুঝা যাচ্ছে না কিন্তু অবয়বটা বোঝা যাচ্ছে।ওয়াসেনাত মুহূর্তে চমকে উঠে।এতো রাতে কে ওইদিকে।তার কেমন যেন চেনা অবয়ব মনে হচ্ছে।হঠাৎ তার নতুন ফোনটা টুং টুং শব্দ করে উঠলো।ওয়াসেনাত ভয়ে পেয়ে আবার চমকালো।এই শব্দে কিন্তু তার চমকানোর কথা না।তবুও চমকে উঠলো সে।ওয়াসেনাতের এতো ভয় কেন করছে সে জানে না।ফোনের এই শব্দ তার মোটেও পছন্দ হচ্ছে না।ওয়াসেনাতের ফোনে পুরোনো সিম।তাই অনেকেই কল করতে পারে বলে তার মনে হয়ে।কিন্তু নাম্বার দেখে সে একটু অবাক হলো।নাম নেই নাম্বারের উপরে।ওয়াসেনাত ধরলো না।বাজতে বাজতে শব্দ থেমে গেলো।আবার বাজতে লাগল।ওয়াসেনাত এবার কল কানে ধরলো।কিছু বলার আগেই একটা চেনা কন্ঠ কানে এলো।ওপাশ থেকে কেউ বলছে,
—-“ পরীজা বারান্দায় দাড়িয়ে এতো রাতে কি করছ??”
ওয়াসেনাত আশ্চর্য হয়ে বললো,
—-“ অপনি কি ভাবে যানলেন আমি বারান্দায়।”
সে কেমন প্রতিক্রিয়া করলো ওয়াসেনাত বোঝতে পাড়ল না।সে বললো,
—-“ ম্যাজিক!!”
ওয়াসেনাত চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে।বারান্দার এদিক সেদিক পাইচারী করে বললো,
—-“ আপনি আশেপাশেই আছেন।কোথায় বলুন তো??”
এবার তার হাসির শব্দ কানে এলো ওয়াসেনাতের।সে বিরক্ত হয়ে চারপাশে উত্তেজিত চোখে তাকাচ্ছে।খুঁজছে।অনেক খুঁজে না পেয়ে ব্যর্থ সুরে বললো,
—-“ কোথায় আপনি বলবেন প্লিজজ??”
হাসির শব্দ জোড়ে এলো।তারপর বললো,
—-“ এতো খুঁজে লাভ নেই।আমি আমার জ্বালাময় বুক নিয়ে সেই আগের জায়গায় দাড়িয়ে আছি।”
ওয়াসেনাত চমকের উপর চমকিত হয়ে বললো,
—-“ বলেন কি!!সত্যি আপনি সেখানেই দাড়িয়ে আছেন??”
—-“ ইয়েস ম্যাম!!”
ওয়াসেনাত হতভম্ব হয়ে বললো,
—-“ এই আপনি কি পাগল না কি!
কথাটা বলে একটু থেমে ফোন চোখের সামনে ধরে টাইম দেখে সে আরো অবাক হয়ে বললো,
—-“ রাত ২টো বাজে!আর আপনি এখনো ওখানে দাড়িয়ে আছেন??”
অরিত্রান এবার নিজের পা টা একটু ঝেড়ে বললো,
—-“ তোমার কথা শুনে এত সময়ে এখন আমার ক্লান্ত লাগছে।আর পাগল!!সেটা তো তুমি করে গেলে।কে বলেছিলো ঝাঁপিয়ে পরে আমার বুকের সব হাড় নাড়িয়ে দিতে??”
ওয়াসেনাত এতক্ষনে লজ্জিত হয়ে ভাবে আসলেই সে তখন এমন কেনো করেছে?ছিঃ!!নিজেরই লজ্জা লাগছে এখন!ওয়াসেনাতকে চুপ থাকতে দেখে অরিত্রান বললো,
—-“ লজ্জায় লাল হওয়াটা মোটেও আমার পছন্দ না পরীজা।”
ওয়াসেনাত কিছু বললো না।কয়েক সেকেন্ড নীরব থেকে কথা ঘুরিয়ে বললো,
—-“ আমার নাম্বার কই পেলেন??আর ফোন তো নতুন কিনেছি আজ।বাবা নিয়ে এসেছে আপনি কিভাবে যানলেন??”
—-“ এটাও ম্যাজিক।কিছু ম্যাজিকের রহস্য গোপন থাকা ভালো।”
—-“ আচ্ছা রাখেন গোপন কিন্তু
আপনি বাসায় যাচ্ছেন না কেন??
—-“ যাবো না।”
—-“ কি আশ্চর্য!যাবেন না কেন?”
—-“ ইচ্ছে টাইপের একটা ব্যাপার হলে চলে যেতাম।কিন্তু এটা বন্দী টাইপের ব্যাপার।না ছাড়লে কিভাবে যাবো??”
ওয়াসেনাত ভারি অবাক হওয়া গলায় বললো,
—-“ কে বন্দী করলো আপনাকে??অরিত্রান খানকে বন্দী করার মত দুঃসাহস কার আছে??”
অরিত্রান ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে।তারপর বলে,
—-“ ছাদে আসবে??”
ওয়াসেনাত বিস্মিত হয়ে বললো,
—-“ কেন??তাও এত রাতে??”
—-“ আসতে বলেছি তাই!”
ওয়াসেনাত নির্লিপ্ত গলায় বললো,
—-“ পারবো না।”
—-“ কেন??”
ওয়াসেনাত গলার স্বর নামিয়ে বললো,
—-“ কেন!মানে কি??আমি কিন্তু আপনার সাথে প্রেম করছি না।সে হিসেবে প্রেমিক প্রেমিক টাইপের কথা বলবেন না।”
—-“ আচ্ছা বলবো না।আমার সাথে প্রেম করলে সমস্যা কোথায়??
ওয়াসেনাত হেসে বললো,
—-“ প্রেম মানেই ব্রেকাপ।আমি ব্রেকাপ করতে চাই না তাই প্রেম করবো না।”
ওয়াসেনাত নিজের কথায় নিজে খিলখিল করে হেসে উঠে।অরিত্রান কান খাড়া করে সেই হাসির শব্দ শুনে।কিছু সময় চুপ থেকে ওয়াসেনাত বললো,
—-“ বাসায় চলে যান।আর কতক্ষন দাড়িয়ে থাকবেন??”
—-“ বললাম তো আমি বন্দী।”
—-“ কে করেছে নাম বলেন??”
অরিত্রান মিনমিন করে বললো,
—-“ সে এখন বলা যাবে না।”
—-“ না বললে মুক্ত হবেন কিভাবে??”
—-“ আমি তো মুক্তি চাই না।আমি জীবনের তরে বন্দী হতে চাই।”অরিত্রানের ভাবলেশহীন জবাব।
—-“ আবার কিন্তু প্রেমিক হয়ে উঠছেন।”
—-“ প্রেম না করেও প্রেমিক হওয়া যায়।আমি প্রেম না করে প্রেমিক হবো পরীজা।”
ওয়াসেনাত চুপ করে থাকে।কিছু বলে না।অরিত্রান কোমল গলায় বললো,
—-“ ছাদে আসা কি যাবে না??”
ওয়াসেনাত কিছুক্ষণ ভাবে তারপর বলে,
—-“ যাবে তবে শর্ত আছে!!”
অরিত্রান হাসলো।সুর তুলে বললো,
—-“ তোমারে এক পলক দেখিবার লাগি কঠিন সব শর্তে আমি রাজী।”
ওয়াসেনাত আবার খিলখিল করে হেসে বললো,
—-“ বাপরে আপনি তো খুনি থেকে কবি হয়ে যাচ্ছেন।”
—-“ খুনি নিজেই খুন হয়েছে।কবি তো হতেই হতো।”
ওয়াসেনাত কৌতুহল নিয়ে বললো,
—-“ আপনি কি কবিতাও শিখেছেন??”
অরিত্রান গম্ভীর হয়ে বললো,
—-“ চেষ্টা অনেক করেছি এই কয়েক দিনে কিন্তু হয়নি।কয়েকটা সাধু ভাষাই আয়ত্তে নিতে পেরেছি।”
ওয়াসেনাত হাসতে হাসতে চুক চুক শব্দ করে বললো,
—-“ বেচাঁরা আপনি!!”
অরিত্রান বিরক্ত হলো।খানিকটা রেগে বললো,
—-“ শর্ত বলো।”
—-“ আমাদের ছাদে আসতে পারবেন না।একবার দেখেই বাসায় চলে যাবেন।তারপর খাওয়া দাওয়া করে ঘুম।”
অরিত্রান ক্ষীন গলায় বললো,
—-“ মাত্র একবার!!আচ্ছা।ঘুম আর হবে না।”
অরিত্রান বলার আগেই ধীর পায়ে ওয়াসেনাত ছাদে উঠে দাড়িয়ে পরে।তারপর বলে,
—-“ আপনি এতো সময় দাড়িয়ে কেন ছিলেন বলেন তো??”
অরিত্রান ওয়াসেনাতের বাসার সামনে এসে দাড়িয়েছে।দেওয়াল ঘেঁষে দাড়িয়ে সে বললো,
—-“ একটা কথা বলা হয়নি তাই।”
ওয়াসেনাত নিচের দিকে তাকায়।রাস্তার ধারে দাড়িয়ে অরিত্রান।পকেটে এক হাত গুঁজে দাড়িয়ে আছে সে।অপূর্ব মন মাতানো জ্যোৎস্নার ঝকঝক করা আলো পড়ছে অরিত্রানের গায়ে।নীল সাদা আলোয় মিশে আছে সে।চোখগুলো চকচক করছে।সবুজ চোখে চোখ পড়তেই লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয় ওয়াসেনাত।অরিত্রান মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে সে দিকে।চাঁদের উজ্জ্বল আলোয় অরিত্রানের মনে হচ্ছে ওয়াসেনাতের শরীর থেকেই রশ্নি বের হচ্ছে।চারপাশ নিশ্চুপ হয়ে আছে।কেউ কথা বলছে না।নিঝুম এই রাতে যেন ভালোবাসাই বিনিময় হচ্ছে।বাতাস বইছে হালকা হালকা।অরিত্রান এখনো চুপ করেই দাড়িয়ে দেখছে।ওয়াসেনাতের জ্বল জ্বল করা মুখের দিকে,নীল চোখজোড়ার দিকে।গালে এসে পড়া ছোট ছোট চুলের দিকে।ওয়াসেনাত ঠোঁট টিপে হেসে বললো,
—-“ আপনি কি আজ রাত এখানেই কাটিয়ে দিবেন??ঘোড়ার মত দাড়িঁয়ে থেকে ঘুমাবেন না কি??”
অরিত্রান চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে হাসলো।বললো,
—-“ তোমাকে সাদা টি-শার্টে একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগছে।”
বলেই অরিত্রান ঠোঁট কামড়ে হাসলো।ওয়াসেনাত চমকে নিজের দিকে তাকায়।স্কার্ট,আর লম্বা টি-শার্ট গায়ে।ঘুমিয়ে ছিলো তাই জামা চেঞ্জের কথা সে ভুলেই গিয়েছিলো।অরিত্রান বলায় এখন খেয়াল হলো।লজ্জায় সে লম্বা উড়নাটা আরো টেনে দিলো।অরিত্রান উচ্চ শব্দে হেসে দিলো।ওয়াসেনাত তাড়া দেখিয়ে বললো,
—-“ কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলেন আর যান!!”
অরিত্রান ঠোঁট বাঁকা করলো।তারপর বললো,
—-“ বার বার জান বলে আমাকে দিয়ে দেয়াল টপকাতে চাও।”
ওয়াসেনাত নাখঁচ করে বললো,
—-“ আমি মোটেও জান বলিনি যান বলেছি।মানে চলে যেতে।”
অরিত্রান কিছু বললো না।শুধু হাসলো।ওয়াসেনাত বিরক্ত গলায় বললো,
—-“ কথায় কথায় ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসেন কেন??”
—-“ এটা আমার স্টাইল তাই।”
ওয়াসেনাত রেলিং ঘেঁষে পা ঝুঁলিয়ে বসলো।অরিত্রান আতঙ্কিত হয়ে বললো,
—-“ এভাবে বসলে কেন??নিচে পরে যাবে তো!!”
—-“ তো কি করবো??দাড়িঁয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যথা করছে।”
অরিত্রান দ্রুত বললো,
—-“ নামো!!দ্রুত নামো।”
ওয়াসেনাত নামলো না।কানে ফোন রেখে পা নাচাতে শুরু করে।অরিত্রান রাগি চোখে তাকাতেই ওয়াসেনাত নেমে পরে।তারপর হাসে।অরিত্রানের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“ আপনিও ভয় পান??”
অরিত্রান কিছু বললো না।নিজেই বিড়বিড় করে বলে,
—-“ সত্যি আমি ভয় পাই??”
ওয়াসেনাত গলা উঁচিয়ে বললো,
—-“ কি হয়েছে।চুপ করে আছেন কেন??”
—-“ ভালোবাসি!!”
ওয়াসেনাত চমকে উঠলো।টিপটিপ চোখে অরিত্রানের দিকে তাকিয়ে থাকলো।অরিত্রান আর দাড়ালো না।সামনে হাঁটতে হাঁটতে বললো,
—-“ যাও বাসায়।”
ওয়াসেনাত বললো,
—-“ আপনি কিছু একটা বলবেন বলেছিলেন না বলে চলে যাচ্ছেন কেন??”
অরিত্রান দাড়ালো।মাথা ঘুড়িয়ে ওয়াসেনাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“ ভালোবাসি!!”
ওয়াসেনাত গভীর চোখে তাকালো।কথাটা যেন কানের পর্দা ভেদ করে একদম হৃৎপিন্ডে চলে যাচ্ছে।অরিত্রান আবার আগের জায়গায় এসে দাড়ায়।চোখের পাতা দু’বার ঝাপ্টে তাকিয়ে থাকে।ওয়াসেনাত মুখের উপর হাত দিয়ে বললো,
—-“ এত কি দেখেন??তখন থেকেই তাকিয়ে আছেন।”
অরিত্রান শব্দ করে হেসে উঠে।বলে,
—-“ তোমাকেই দেখি।”
—-“ কেন??আমাকে নতুন করে দেখার কি আছে??”
অরিত্রান জবাবে হাসলো।ওয়াসেনাত মুখের উপরে রাখা হাতটা একটু সরিয়ে বললো,
—-“ এভাবে হাসবেন না।”
অরিত্রান বললো,
—-“ এতেও সমস্যা!!”
—-“ হুম!”ওয়াসেনাতের কাট জবাব।
—-“ আচ্ছা।তাহলে যাই!!”
ওয়াসেনাত মন খারাপের সুরে বললো,
—-“ চলে যাবেন!!আচ্ছা যান।”
অরিত্রান ফোন কেঁটে দিলো।ওয়াসেনাত আর একবার শুনতে চেয়েছিলো সেই ভয়ংকর কথাটা।কিন্তু শুনা হলো না।কেনো যেন মন খারাপ হলো।সে ঘুরে চলে আসে ছাদের মাঝে।ঠিক তখনই অরিত্রান দুটি দেয়াল টপকে উপরে আসে।ওয়াসেনাত পিছনে ঘুরতেই অবাক হয়ে তাকালো।অরিত্রান বললো,
—-“ শর্ত ভেঙ্গে দিলাম এতে আমার দোষ নেই।তুমিই দায়ি।”
ওয়াসেনাত এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।এতো দ্রুত কিভাবে উঠলো সে ভাবছে।অরিত্রানের হাতের কনুই ছিলে গেছে।বিন্দু বিন্দু রক্ত দেখা যাচ্ছে।ওয়াসেনাত আতঙ্কিত হয়ে অরিত্রানের পাশে রেলিং ঘেঁষে দাড়ায়।বলে,
—-“ আপনি কি পাগল??হাত ছিড়ে ফেলেছেন তো!!পাগল একটা।”
অরিত্রান ঘুরে দাঁড়ায়।নিজের দু’হাত ওয়াসেনাতের দু’পাশে রেলিংয়ের উপর রাখে।ওয়াসেনাতের দিকে একটু ঝুকতেই ওয়াসেনাত ভ্রু কুঁচকে গোল গোল চোখে তাকায়।ডান হাতে উড়না টানে।অরিত্রান হাসে।আরো ঝুঁকতেই ওয়াসেনাত পিছনে হেলে যায়।অরিত্রান ওয়াসেনাতের মুখে ফুঁ দিয়ে ছোট চুলগুলো সরিয়ে দেয়।ওয়াসেনাত চোখ বন্ধ করে।অরিত্রান মাতাল কন্ঠে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
—-“ ভালোবাসি!”
ওয়াসেনাত চোখ খোলে ছোট করে বললো,
—-“ এটা বলার জন্য এই দাড়িঁয়ে থাকা!!লাফিয়ে ছাদে উঠা!!”
অরিত্রান জবাব দিলো না।চোখে একটা মুগ্ধতা মিশিয়ে সে তাকিয়ে আছে।ওয়াসেনাত ঠোঁট উল্টে বললো,
—-“ আপনার মনে হয়না আপনি মারাত্নক প্রেমিক হয়ে উঠছেন??”
অরিত্রান হাসলো।হাসতে হাসতে বললো,
—-“ তাই না কি!!”
ওয়াসেনাত অরিত্রানের চোখের দিকে তাকিয়ে আবেগ মাখানো কন্ঠে বললো,
—-“ আপনার চাহনিটা কেমন যেন!পাল্টে গেছে!চোখে যেন খুব নেশা।মিনিট খানেক তাকালেই আমি মাতালের খাতায় নাম লেখাবো মনে হয়!!”
অরিত্রান কোন জবাব দিলো না।রেলিং বেয়ে নামতে শুরু করলো।কিছুটা নেমে আসতেই ওয়াসেনাত ঘুরে বললো,
—-“ আপনি তো আমার উত্তর না যেনেই চলে যাচ্ছেন।আপনি কি জানতে চান না??”
অরিত্রান মাথা উঁচিয়ে বললো,
—-“ কিছু কথা মুখে বলতে হয় না,কলমের কালিতে লিখতে হয়ে না।সেই কথার গভীরতা এতটাই যে গভীর জিনিস বাদে বুঝা যায় না।মনের কথা বুঝতে গভীর মন লাগে।যা আমার তৈরি হয়ে গেছে মনে হয়।আমি তোমার ওই নীল চোখ পড়তে শিখেছি।কি আশ্চর্য কথা তাই না!!”
অরিত্রান নেমে পরেছে।নিচে নেমে আবার একবার তাকালো।তারপর হাঁটা দিলো সামনে।ওয়াসেনাত তাকিয়ে আছে।যত দুর দেখা যায় অবয়ব।ওয়াসেনাত মনে মনে ভাবে,লোকটা তাকে একটু বেশিই ভালোবাসছে না!!এত ভালোবাসা কি উচিঁত!!”
________________________
রিমিকে সোজিয়েছে ওয়াসেনাত।ওয়াসেনাত আজ বিকেলেই রিমিদের বাসায় এসে হাজির।আজ রিমি বেগুনি শাড়ি পড়েছে।চুল খোঁপা করেছে।গলায় ছোট গহনা পরেছে।একটু মেকআপ করেছে।ওয়াসেনাত কাজল লাগিয়ে দিয়ে বললো,
—-“ জোস লাগেরে দোস্ত!রিমন আজ জ্ঞান হারাবে সাথে মরেই যাবে।আমরা ও বাঁচাতে চাই না তাকে।”
বলেই খিলখিল করে হেসে উঠে।অরূপ মাত্র রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছেল।হাসির এমন মিষ্টি শব্দে সে রুমের দিকে আসে।ওয়াসেনাতের চোখ বুজে হাসিতে আটকে পরে চোখ।কিন্তু আজ সে ওয়াসেনাতের সাথে কথা বলবেনা।মেয়েটার তার প্রতি একটুও মনোযোগ নেই।আপন খেয়ালে সে মেতে আছে।একটু তার দিকে নজর দিলে কি হয়ে।ভেবেই মনটা খারাপ হয় অরূপের।নোড়া তাকিয়ে আছে অরূপের বিমুগ্ধ চোখের দিকে।ওয়াসেনাতের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে চোখ নামিয়ে ফেলে সে।চোখের কোটারে জমে বিন্দু বিন্দু পানি।ডান হাতের উল্ট পিঠ দিয়ে সে পানি মুছে নেয় সে।ওয়াসেনাত হাসির মাঝেই দৃশ্যটা দেখে ফেলে।উদ্বিগ্ন গলায় সে বলে,
—-“ নোড়া তুই কাঁদছিস কেন??”
নোড়া চোখ তুলে তাকায় না।তার বড্ড ইচ্ছে করছে ওয়াসেনাতকে বলতে,তোর জন্যই কাঁদছি।”কিন্তু বলা হয় না।ওয়াসেনাতের কথায় অরূপ আর রিমি তাকায় তার দিকে।ওয়াসেনাত নোড়ার পিঠে হাত রাখে।নোড়ার ভালো লাগছে না।ওয়াসেনাতের সাথে তাল মিলিয়ে রিমি অরূপও একুই প্রশ্ন করে।ওয়াসেনাত বুঝতে পারছে না।আজ আসার পর থেকে অরূপ আর নোড়া তার সাথে তেমন কথা বলছে না।কিন্তু কেন??এটাই সে বুঝতে পারছে না।নোড়া এবার বললো,
—-“ চোখে কিছু একটা পরেছে।”
বলেই সে চোখ কচলাতে লাগলো।ওয়াসেনাত একটু একটু বুঝতে পেরেছে অরূপ তেমন পাত্তা দেয় না দেখেই নোড়ার মন খারার।তাই সে বললো,
—-“ অরূপ ভাইয়া একটু দেখেন না কি পড়েছে চোখে।”
অরূপ চোখ রাঙিয়ে তাকায়।বলে,
—-“ তুমি নিজেই দেখে নেও।আর মেয়ে মানুষের এত কাছে ঘেঁষা উঁচিত হবে না।”
বলেই সে চলে যেতে চাইলো।মনে মনে ওয়াসেনাতকে অনেক বোকলো।মেয়েটা এমন কেন??যেচে বিপদে ফেলার ধান্দা।ওয়াসেনাত দ্রুত অরূপের হাত টেনে ধরে।অরূপের শরীর যেন হিম শীতল হয়ে গেলো।রাগ অভিমান উড়ে গেলো।ওয়াসেনাত হাত ধরে বললো,
—-“রিমিকে সাজানো অনেক বাকি আছে।আপনি একটু হেল্প করেন প্লিজজজজ।”
অরূপ কিছু বললো না।শুধু তাকিয়ে থাকলো চোখের দিকে।ওয়াসেনাত হাত ছেড়ে দিলো।আবার বললো,
—“ আরে ভাইয়া তাকিয়েই থাকবেন না কি কিছু করবেন??”
অরূপ চমকে উঠে।নিজেকে সামলে বলে,
—-“ আচ্ছা দেখছি।
অরূপ ওয়াসেনাতের দিকে তাকাতে তাকাতেই নোড়ার চোখের দিকে তাকায়।তার একদম নোড়ার চোখে তাকাতে ইচ্ছে করে না।মেয়েটার চোখে কেমন আকুলতা আছে।ভালোবাসা পাওয়ার হাহাকার আছে।কিন্তু সে নিরুপায়।এক সাথে কি দু’জনকে ভালোবাসা যায়??হৃৎপিণ্ড তো একটাই ।যা বহু আগেই আর একজনের কাছে সমর্পণ করেছে।ওয়াসেনাত রিমির কানে কানে কিছু বললো।তারপর দু’জনেই মিটমিটিয়ে হেসে কয়েকটা ছবি তুলে নিলো।ওয়াসেনাতের নতুন ফোনে ওদেরই প্রথম ছবি।নোড়া লাল লাল চোখে তাকিয়ে আছে।অরূপ হাত দিয়ে গাল ধরলো না।বললো,
—-“ চোখ খলা রাখ।আমি ফুঁ দিচ্ছি।”
নোড় চোখ খুললো।অরূপ ফুঁ দিতেই আবেশে চোখ বুজে নিলো সে।ওয়াসেনাত আর রিমির হাসির শব্দে সেই চোখ খুলে দেখে অরূপ নেই।এটা স্বপ্ন ভাবতেই পাশ থেকে ওয়াসেনাত বললো,
—-“ তুই পাক্কা ১০ মিনিট চোখ বুজে ছিলি।বেচারা ভাইয়া বিরক্ত হয়ে চলে গেছে।”
আবার হাসি শুরু।
#চলবে__________