পাথরের বুকে ফুল

পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 27

__________________
আজকের বিকেলটা সুন্দর!না খুব সুন্দর!এতো টুকুও কম বলা মনে হচ্ছে অরিত্রানের কাছে।তার মনে হচ্ছে আজকের বিকেলটাকে একটা সুন্দর নাম দেওয়া উচিঁত।খুব ভালো আখ্যা দিয়ে এর সৌন্দর্য্য বর্ননা করা উচিঁত।কবিতার সুরে বলা উচিঁত,ও হে বিকেল!আজ যে তোমাকে বড্ড সুন্দর লাগছে!প্রানবন্ত লাগছে!এতো সুন্দর কেনো লাগছে জানি না!তুমি কি প্রতিদিনি এতো সুন্দর হয়ে আসো?না কি শুধু আজই এতো সুন্দর লাগছে তোমাকে!ব্যস্ত শহরটাকেও আজ অরিত্রানের অসম্ভব সুন্দর মনে হচ্ছে।তার হঠাৎ কবি হতে ইচ্ছে করছে।একটু শব্দ করেই কাব্যিক কিছু বলতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু সে বলছে না।এটা তার রূপের সাথে বড্ড বেমানান।সে যদি এমন কিছু করে ওয়াসেনাত নিশ্চিত তাকে পাগল ভাববে।এটা মোটেও উচিঁত হবে না।বিশ্রী একটা ব্যাপার হবে।ভয়ংকর ব্যক্তিদের ভয়ংকর কাজেই মানায়।অরিত্রান গাড়ির ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিলো।ওয়াসেনাত চুপ মেরে বসে আছে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে ধরে বেধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।কিছুক্ষন আগের কথা ভেবে তার দু’পাশের গাল লাল হয়ে উঠছে কিছুক্ষন পর পর।অরিত্রান আড়চোখে তাকাচ্ছে ওয়াসেনাতের দিকে।ওয়াসেনাতের খুব ঘুম পাচ্ছে।ব্যাপারটা তার নিজের কাছেও অবাক লাগছে।কাল সারা রাত ঘুমায় নি বলেই তার এখন ঘুম আসছে।হ্যাই তুলছে সে।জানালা খোলা।হালকা হালকা বাতাস হচ্ছে।মিষ্টি বাতাস।সেই বাতাসে ভেসে আসছে মিষ্টি একটা গন্ধ।ওয়াসেনাত সিটের পিছনে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে।অরিত্রান আড়চোখে তাকিয়ে অবাক হয়ে ভাবে,ঘুমিয়ে পড়লো!!সামনে একটা গাড়ি দ্রুত আসার কারনে অরিত্রান গাড়ির মোড় ঘুড়ালো।গাড়ি ঝাঁকুনি দিয়ে হালকা নড়ে উঠেছে।তখনি ওয়াসেনাত নিজেও হালকা ঝাঁকি খায়।অরিত্রান মৃদু সুরে বললো,
—-“ আমার দোষ নেই!”

ওয়াসেনাত হুড়মুড়িয়ে উঠে নিজের জামা কাপড় ঠিক আছে কিনা দেখে।না সব ঠিক আছে। ওয়াসেনাত ভারী গলায় বললো,
—-“ আপনি তো পুরো ভয় পাইয়ে দিয়েছেন!!”
অরিত্রান হালকা ঠোঁট বাকাঁলো।কিন্তু কিছু বললো না।ওয়াসেনাত দীর্ঘস্বাস নিয়ে বাহিরে চোখ রাখে।তার এখন খুব মাথা ব্যথা করছে।কাঁচা ঘুম ভেঙে গেছে তাই।অল্প সময়ে তার প্রচন্ড ঘুম এসে পড়েছিলো।শহরে একটা সোনালি রং পড়ছে।বিকেলের সূর্য ডুবা রং এটা।একটা হালকা আলো এসে জমছে চারপাশে।ওয়াসেনাতের চোখে মুখে এসে বাড়ি খাচ্ছে সে সোনালি কিরণ।অরিত্রান একটু পর পর তাকিয়ে দেখছে ওয়াসেনাতকে সে আলোতে কতটা অদ্ভুত রূপবতী লাগছে।রূপবতীর ব্যাখা অরিত্রান জানে না।কিন্তু তবুও তার ওয়াসেনাতের কানের কাছে নিজের ঠোঁট জোড়া নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে,”তুমি গভীর রূপবতী!”
—-“ পরীজা!!”
ওয়াসেনাত জানালার বাইরে থেকে চোখ ঘুরিয়ে অরিত্রানের দিকে তাকালো।তারপর গলার কন্ঠে জোড়পূর্বক খানিকটা বিরক্তি মিসিয়ে বললো,
—-“ আপনি এমন একটা ভাব নিয়ে পরীজা ডাকেন যেনো মনে হচ্ছে আমি আপনার প্রেমিকা!!”
অরিত্রান সামনে তাকিয়ে হাসে।এই হাসি দীর্ঘ।হাসির তালে তার সাদা চকচকে কয়েকটা দাঁত দেখা যাচ্ছে।ওয়াসেনাত মুগ্ধ কাতর চোখে তাকিয়ে আছে সে হাসির দিকে।ওয়াসেনাতের মনে হচ্ছে এই ছেলের হাসি পৃথিবীর সব ছেলের হাসির চেয়ে সুন্দর।বড্ড বলতে ইচ্ছে করছে,আপনি এতো সুন্দর করে আর হাসবেন না!!আমার বুকে জ্বালা করে!!কিন্তু বলা হলো না।কিছু কিছু কথা মনের লুকোনো ডায়রির পাতায় বন্ধি থাকা ভালো।অরিত্রান মুখে হাসি রেখেই বললো,
—-“ ছেলে হিসেবে কি আমি খুব খারাপ??”
ওয়াসেনাত মাথা দু’বার কাত করে বললো,
—-“ না।কিন্তু মানুষ হিসেবে অদ্ভুত।”
অরিত্রান আবার হাসলো।ওয়াসেনাতের বেশ বিরক্ত লাগছে।সে বললো,
—-“ আপনাকে গম্ভীর লুকেই ভালো লাগে।কথায় কথায় হাসবেন না প্লিজ।”
অরিত্রান জহুরি চোখে ওয়াসেনাতের দিকে একবার তাকালো।সেই দৃষ্টি ওয়াসেনাত উপেক্ষা করে জানালার দিকে চোখ রাখলো।অরিত্রান ক্ষীন গলায় বললো,
—-“ কেউ একজন বলেছে হাসলে আমাকে খুব সুন্দর লাগে তার কথা রাখতেই আমি হাসি।আমার মত ব্যক্তির হাসাটা সত্যি বিরক্তিকর।তবুও আমি হাসবো।তার কথা রাখতে হাসবো।তোমার কথা রাখতে পারলাম না পরীজা।”
ওয়াসেনাত চট করে তাকালো।অরিত্রান আবার হাসলো।ওয়াসেনাত শান্ত চোখে তাকিয়ে বললো,
—-“ অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না।একটা গল্প শুনাবো।শুনবেন??”
অরিত্রান উৎসাহ দেখিয়ে বললো,

—-“ আমাকে এই জীবনে মাম্মা বাদে কেউ গল্প শুনাতে চায় নি।ইউ’আর দ্যা ফার্স্ট লেডি ট্যু ট্যাল মি এ স্টরি।সো হারি আপ।”
ওয়াসেনাত সোজা হয়ে বসলো।অরিত্রানের মুখের দিকে তাকিয়ে সে বলা শুরু করলো,
—-“ স্কুল লাইফে আমার এক বান্ধুবী ছিলো।আসলে বান্ধুবী বলা চলে না।ক্লাসমিট বলা ভালো।বুঝেন তো তার সাথে আমার বনিবনা নেই।এর মূল কারন আমি একটু বোকা টাইপের ছিলাম।যদিও এখনো আছি।”
অরিত্রান একটু গম্ভীর গলায় বললো,
—-“ এটা বলার অধিকার শুধু আমার।তুমি বলবে না।”
ওয়াসেনাত গল্পের মাঝে ঢুকে পড়েছে।তাই অরিত্রানের কথা উপেক্ষা করে সে বললো,
—-“ আরে আপনি গল্প শুনুন।বাকি সব পরে।তারপরের কাহিনী!!”
অরিত্রান মাঝ পথে থামিয়ে বললো,
—-“ পরের কাহিনী কি বলবে শুরুইতো করলে না।”
ওয়াসেনাত বিরক্ত ভঙিতে বললো,
—-“ আর বলবো না।যান আপনি ফালতু।”
অরিত্রান হেসে বললো,
—-“ আচ্ছা আচ্ছা আর বাধা দিবো না।বলো।”
ওয়াসেনাত গলা কেশে বললো,
—-“ সেই মেয়েটার মূল থিম কি ছিলো জানেন??”
অরিত্রান মাথা নাড়ালো।মানে সে জানে না।ওয়াসেনাত যেনো এতে আরো উৎসাহ পেলো।বললো,
—-“ কান্না!!সে কথায় কথায় কান্না করে দিতো।আমি নতুন ছিলাম।তাই তার কাহিনী ধরতে পারিনি।পরে রিমি বললো এই মেয়ে সেকেন্ডে দু’বার কাঁদে।সত্যি সত্যি প্রতি ক্লাসে সে চার পাঁচ বার কান্না করতো।সবাই তাকে কি নামে ডাকতো জানেন??”
অরিত্রান আবার মাথা দুলালো।সে জানে না।ওয়াসেনাত রশিকতার সুরে বললো,
—-“ ধনিয়া পাতা।”
ওয়াসেনাত হাসছে।অরিত্রান ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-“ কান্নার সাথে ধনিয়া পাতার সম্পর্ক কি??
ওয়াসেনাত শব্দ করে হেসে বললো,
—-“ ধনিয়া পাতা যেমন সব তরকারিতে দেওয়া যায় ঠিক তেমন ভাবে সব সময় মানে যে কোনো সময় ওর কান্না শুনতে এবং দেখতে পাওয়া যায়।”
—-“ আর এই কান্নার সাথে অতিরিক্তের কি সম্পর্ক??”
—-“ ও যে কোনো সময় কারনে অকারনে কান্না করতো।যখন ওর সত্যি মন খারাপ হয়।সত্যি সত্যি কান্না করে তখন কেউ আর তাকে শান্তনা দেয় না।সবাই ভাবে এটা প্রতি দিনের রুটিং।”
কথাটা বলেই ওয়াসেনাত একটা অচেনা ভঙ্গিতে হাসা শুরু করে।যে হাসিকে বলে খিলখিল হাসি।হাসির কারনে ওয়াসেনাতের চোখ বুজে আসছে।ফুলা গাল গুলো আরো ফুলে উঠছে।অরিত্রান গাড়ি চালানোতে মন দিতে পারছে না।চোখজোড়া বার বার ছুটে আটকা পড়ছে সেই হাসিতে।অরিত্রান আনমোনে বললো,
—-“ সুন্দর!!”
ওয়াসেনাত হাসি থামিয়ে দিলো না।সে হাসছে।হাসতে হাসতে নীলাভ চোখে পানি চলে আসছে।চোখগুলো পানিতে ভাসছে।অরিত্রান গাড়ির ব্রেক কসে।ওয়াসেনাত একটু ঝুঁকে পড়ে।অরিত্রান ব্যান্ডেজের ডান হাত বাড়িয়ে দেয় সামনে।ওয়াসেনাতের গলার কাছে এসে সে হাত লাগে।হাতের সাথে ধাক্কা লেগে ওয়াসেনাত পিছিয়ে যায়।মুহূর্তে হাসি থামিয়ে অরিত্রানের দিকে ভ্রুকুটি করে তাকায়।জিজ্ঞেস করে,
—-“ গাড়ি এভাবে থামালেন কেনো??”
অরিত্রান সে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললো,

—-“ তোমার হাসি বার বার আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।এতে আমার দোষ কি পরীজা??”
ওয়াসেনাত থতমত খেয়ে চুপ মেরে যায়।হঠাৎ করেই তার আবার লজ্জা লাগছে!খুব লজ্জা!একদম সাঙ্ঘাতিক টাইপের লজ্জা!!অরিত্রান আবার গাড়ি স্টার্ট দেয়।ওয়াসেনাত এবার নির্বাক হয়ে বসে আছে।তার আবার ঝিমুনি আসছে।এতো ঘুম কেনো পাচ্ছে সে জানে না।অরিত্রান গলাটা ভারী করে বললো,
—-“ কি ভয়ংকর করে হাসছিলে??আমি তো ভড়কে গেলাম।তাই তো গাড়ি থামিয়েছি।”
ওয়াসেনাত বিদ্রুপ করে বললো,
—-“ মোটেও না।আমার হাসি সুন্দর সবাই বলে।”
কথাটা বলে ওয়াসেনাত জানালার দিকে মুখ করে তাকালো।তার রাগ লাগছে।অতোটাও বাজে হাসি তার না।যতোটা অরিত্রান বলছে।অরিত্রান চড়া গলায় বললো,
—-“ সুন্দর!!আর তোমার হাসি!!এখন হাসলেই দোষ হবে পরীজা।তা না হলে হাসতাম।”
ওয়াসেনাত আহত চোখে তাকায়।মনে মনে ভাবে সত্যি কি তার হাসি বাজে!খুব কি বাজে!লোকটা তো আর রশিক মানুষ না যে তার সাথে রশিকতা করবে।আসলেই বিশ্রী মনে হয়।ওয়াসেনাত স্থির করে সে আর হাসবে না।একদম না।কথাটা স্থির করতে করতেই তার চোখজোড়া জ্বলজ্বল করে উঠে।অরিত্রান আড়চোখে তাকায়।ওয়াসেনাতের চোখে জল টলমল করছে।অরিত্রান ভারী অবাক হয়।ওয়াসেনাতের চোখে পানি!এই দৃশ্য অরিত্রানের কাছে বড্ড কষ্টের মনে হচ্ছে।তার বুক ব্যাথিত হয়।ভারী একটা নিঃশ্বাস নিয়ে অরিত্রান ধমকের সুরে বললো,
—-“ কাঁদবে না একদম।আমি তো মজা করলাম।তুমি কাঁদলে আমার কি যেনো হয়।ইচ্ছে করে সব ভেঙে গুড়িয়েদি।সব জ্বালিয়ে ছাই করে দি।আর সবচাইতে যেটা কষ্টের সেটা হচ্ছে জ্বালা!মনে হয় কেউ আমার হৃৎপিন্ডে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।”
ওয়াসেনাত খানিকটা চমকায়।আবাক চোখে তাকিয়ে থাকে।অরিত্রান ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,
—-“ তুমি একটা বাচ্চা মেয়ে।তা না হলে কেউ এতো ফালতু বিষয় নিয়ে কাঁদে।”
ওয়াসেনাত রাগে দাঁত কটমট করে বললো,
—-“ আমি বাচ্চা নই।”
অরিত্রান দুষ্ট করে একটা হাসি দেয়।ওয়াসেনাত ভড়কে যায়।অরিত্রান সে হাসি দীর্ঘ করে বললো,
—-“ বাচ্চারা নিজেকে কখনো বাচ্চা বলে না।”
ওয়াসেনাতের চোখ দু’টো কটোর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।অরিত্রান ঠোঁট কামড়ে হাসে।দুষ্টুমি ভরা সে হাসি।ওয়াসেনাতের মাথা ঘুরছে।এই লোকের হয়েছেটা কি?ওয়াসেনাত নিজেকে সামলে স্বাভাবিক গলায় বললো,
—-“ গম্ভীর মানুষকে গম্ভীর ভাবেই মানায়।তারা যদি অতি স্বাভাবিক আচরন করে তখন বিপরিত পাশের মানুষের সেটা অস্বাভাবিক লাগে।আমার এখন আপনার এই রূপ দেখে হার্ট অ্যাটাক করতে ইচ্ছে করছে।আচ্ছা বলে কয়ে কি হার্ট অ্যাটাক করা যায়??”
অরিত্রান কিছু বললো না।ওয়াসেনাত অরিত্রানকে দেখতে দেখতেই সিটের সাথে হেলে মাথা রাখে।অরিত্রান গাড়ির গতিতে মনোযোগ দেয়।কিছুক্ষন পরে ওয়াসেনাতের দিকে আড়চোখে তাকায়।ওয়াসেনাত চোখ বন্ধ করে গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে।অরিত্রান হা হয়ে যায়।কয়েক মিনিট আগেইতো কত কি বলছিলো।আর এখন ঘুম!কি সাঙ্ঘাতিক ঘুম পাগলী!অরিত্রান হাসে।খোলা জানালা দিয়ে শাঁ শাঁ করে বাতাস ঢুকছে।ওয়াসেনাতের হেজাব সরে যাচ্ছে বার বার।গালার ফর্সা একটু অংশ দেখা যাচ্ছে।অরিত্রান গাড়ি রাস্তার পাশে দাড় করায়।স্থির দৃষ্টি দিয়ে কিছু সময় তাকিয়ে থাকে ওয়াসেনাতের মুখের দিকে।মেয়েটার ঘুমও যেনো মুগ্ধ কর।মন কাড়া একটা দৃশ্য!যা দেখেই অরিত্রান এক জীবন পার করতে পারবে।অরিত্রান ওয়াসেনাতের গলার দৃশ্যমান অংশটা ডেকে দেয়।কি মনে করে নিজের ফোনটা বের করে।ওয়াসেনাতের ঘুমন্ত মুখের অনেক গুলো ছবি তুলে নেয় সে।অরিত্রানের মনের এক সত্তা জানান দেয়,
—-“ কারো ছবি চুরি করে তোলা উচিঁত না।আর অনউচিঁত কাজ অরিত্রান খান করে না।”
অরিত্রান সেই সত্তার বিরুদ্ধে গিয়ে আরো কয়েকটা ছবি তুলে নেয়।গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বিড়বিড় করে বলে,
—-“ আমি ,অরিত্রান খান চুরি করলাম!!”
পরক্ষনেই হেসে উঠে অরিত্রান।মাঝে মাঝে গন্ডির বাইরে গিয়ে নিষিদ্ধ কিছু করলে মন্দ হয় না।

____________________________
ওয়াসেনাতের ঘুম ভাঙে আধাঘন্টা পরে।অরিত্রান তীক্ষ্ন চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।ওয়াসেনাত পড়িমড়ি করে উঠে বসে।চোখ কচলাতে কচলাতে চারদিকে চোখবুলায়।ক্ষীন গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে,
—-“ কোথায় আমি??আমরা কি চলে এসেছি??”
অরিত্রান একটু ঝুঁকে বললো,
—-“ হুম ম্যাডাম।”
ওয়াসেনাত অবাক হয়ে বললো,
—-“ কখন এলাম??”
—-“ আধাঘন্টা আগে।”
ওয়াসেনাতের হুশ হয়।চারপাশে কৌতুহলি হয়ে চোখবুলিয়ে দেখে।সে তো গাড়িতে ছিলো।কিন্তু এখন একটা বেঞ্চিতে গাছের সাথে ঠেসে বসে আছে।অদ্ভুত জায়গা।সামনে লেক।মাথা ঘুরিয়ে পিছনে তাকিয়ে ওয়াসেনাত অবাক হয়ে বললো,
—-“ ওরা কারা??”
অরিত্রান সামনে থেকে এসে ওয়াসেনাতের পাশে বসতে বসেত বললো,
—-“ আমার গার্ডস!”
—-“ আপনার গার্ডস ও আছে??”ওয়াসেনাতের ভারী গলা।
অরিত্রান কিছু বললোনা।অজানা কারনে তার অস্থির লাগছে।ইচ্ছে করছে নিজের পরিচয় গোপন করতে।খুব সাবধানে কয়েকটা মিথ্যা বলে দিতে।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় সে মিথ্যা তেমন বলতে পারে না।মিথ্যা কখনো ছোট করে বলে শেষ করা যায় না।বললে একের পর এক বলতে হয়।যেটা সে পারবে না।
ওয়াসেনাতের খুব ভালো লাগছে।জায়গাটা তার এতো পছন্দ হয়েছে বলে বুঝাতে পারবে না।চারপাশে গাছপালা।সামনে পানি থৈই থৈই করছে।সবুজ পানি।একদম সচ্ছ।ওয়াসেনাত লক্ষ করে দেখছে তাদের দু’জনেরই প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে।বাতাসে একটা তীব্র গন্ধ।স্নিগ্ধ সেই বাতাস।অসাধারন।ওয়াসেনাত ঠোঁট মেলে হাসে।অরিত্রান তাকিয়ে আছে।বুকে তার ঠকঠক শব্দ হচ্ছে।এতো অস্থির শেষ বার লেগেছিলো হার্বাট ইউনিভার্সিটির স্কলার্শিপের রেজাল্টের দিন।সেদিন তো অস্থিরতা আরো কম ছিলো।যা ছিলো তা ভয়।অরিত্রান এখন আর ভয় পেতে জানে না।কিন্তু অস্থিরতা হচ্ছে খুব।ওয়াসেনাত উৎসুক গলায় বললো,
—-“ ওয়াওও কি সুন্দর জায়গা না??”
অরিত্রান বসা গলায় জবাব দিলো,
—-“ হুম।”

ওয়াসেনাত এবার অরিত্রানের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“ এবার বলে ফেলেন আপনি কে??মানে নাম কি??পরিচয় কি??নুহাশ কেনো সেজেছেন??
অরিত্রান ক্ষীন স্বরে বললো,
—-“ পরিচয় জানা কি খুব প্রয়োজন??”
ওয়াসেনাত জহুরি চোখে তাকায়।ভ্রু নাচিয়ে বলে,
—-“ কাহিনী কি বলেন তো??পরিচয় জিজ্ঞেস করলেই এমন করেন??আচ্ছা শুধু নাম বলেন তাতেই হবে।কি নাম আপনার??”
অরিত্রান মনে মনে বিড়বিড় করে বলে,নামেই তো সব সমস্যা!
ওয়াসেনাত ভ্রু আরো কুঁচকে বললো,
—-“ নাম পরিচয় নিয়ে এমন একটা ভাব করছেন যেনো আপনি মানুষই না।মনস্টার টাইপের কিছু।”
ওয়াসেনাত ঠোঁট টিপে হাসে।অরিত্রান চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
—-“ আমি অরিত্রান!”
—-“ কি??”
—-“ আমার নাম অরিত্রান খান।”
ওয়াসেনাত কিছুক্ষন চমকিত চোখে তাকিয়ে থেকে হাসা শুরু করলো।অরিত্রান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে সে হাসি দেখছে।মেয়েটা কি শক্ট খেয়ে এমন করছে??ভারী অদ্ভুত তো!!ওয়াসেনাতের হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ার মতো অবস্থা।সে একবার হেসে অরিত্রানের গায়ে পড়ছে তো একবার গাছের সাথে হেলে হাসছে।মাঝে মাঝে গাছ জড়িয়েও হাসছে।অরিত্রান তাজ্জব হয়ে আছে।গার্ডসদের মনে কৌতুহল জাগে।পিছনে পিরে দেখতে চায়।কিন্তু অরিত্রানের ভয়ে পারছে না।ওয়াসেনাত পেট দুহাতে চেপে হাসি থামাতে চেষ্টা করছে।কিন্তু পারছে না।ব্যর্থ হয়ে হাসতে হাসতে বললো,
—-“ নাইস জোক্স!!না না শুধু নাইস না জোক্স অফ দ্যা ইয়ার!!!”
#চলবে_________