পাথরের বুকে ফুল

পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 28

হাসির তাল থামে বাতাসের তালে।বাতাস যখন একটু তীব্র হয় ওয়াসেনাত হাসি থামিয়ে দেয়।অরিত্রানের স্থির দৃষ্টি।সে শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে মেয়েটা আসলে কতটা হাসতে পারে।ওয়াসেনাতের হাসি যখন থেমে যায় অরিত্রান তখন হিট লাগিয়ে বললো,
—-“ থামলে কেনো??আরো হাসো।”
ওয়াসেনাত আর হাসলো না।অরিত্রানের মুখ বরাবর দৃষ্টি রেখে সে বললো,
—-“ হাসি আপাততো অফ।এবার নিজের আসল পরিচয়টা দিয়ে দেন।”
অরিত্রান নিজে এবার হাসলো।নিঃশব্দে হেসে সে বললো,
—-“ দিলাম তো আমার পরিচয়।আমি অরিত্রান খান।তোমার বাবার ভাষ্য মতে মনস্টার।”
ওয়াসেনাত আবার একটু হেসে বললো,
—-“ মজা করছেন কেনো??আপনি কি মনে করেছেন আমি ওই পরিত্রানের নাম শুনে ভয় পাবো??”
কথা থামিয়ে কিঞ্চিত ঠোঁট বাকাঁলো।তারপর আবার বললো,
—-“ আমি মোটেও ওই পরিত্রানকে ভয় পাই না।আর সবচাইতে বড় কথা সে হলে এতক্ষনে কি আমি বসে থাকতে পারতাম??”
অরিত্রান ভ্রু কুঁচকে বললো,

—-“ কেনো??ভয়ে দৌড়ে পালাতে??”
—-“ পালাতে যাবো কেনো??আমি মোটেও ভয় পাইনা তাকে।সে যতই মানুষ কুচি কুচি করুক তবুও ভয় পাই না।”ঠোঁট উল্টে বললো ওয়াসেনাত।
অরিত্রান নিজের গলা গম্ভীর করে।ভারী গলায় বলে,
—-“ আমি তোমার সাথে কোনো মজা করছি না।আমি সত্যি অরিত্রান খান।তুমি বিশ্বাস করলেও এটা সত্য আর না করলেও এটা সত্য।”
ওয়াসেনাত এবার খানিকটা ভড়কে যায়।বিচক্ষন চোখে অরিত্রানের দিকে তাকায়।অরিত্রান চোখ সরিয়ে সামনে তাকায়।ওয়াসেনাত কথা উড়িয়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে বললো,
—-“ আমি বিশ্বাস করিনা।আপনি কেনো শুধু শুধু ভয় লাগাচ্ছেন?”
অরিত্রান মাথার সিল্কি লম্বা চুলগুলো হাতের আঙ্গুল দিয়ে সরিয়ে দিতে দিতে বললো,
—-“ কিছুক্ষন আগে না বললে তুমি অরিত্রানকে মানে তোমার দেওয়া নাম পরিত্রানকে ভয় পাও না।”
ওয়াসেনাত থমথমে গলায় বললো,
—-“ পাই না তো!”
অরিত্রান ওয়াসেনাতের দিকে তাকালো।ওয়াসেনাতের চোখ পানিতে।সে ভাবছে আসলে কি সত্যি এই লোক অরিত্রান?আচ্ছা অরিত্রান হলে কি তাকে মেরে এই লেকেই ফেলে দিবে??একদম কুচি করে?ওয়াসেনাতের মুখের রং পাল্টে গেছে।তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে এক মুঠো রক্ত ছুটে এসে মুখটা লাল করে দিয়েছে।অরিত্রানের ইন্টারেস্টিং লাগছে।ভয় ধীরে ধীরে ওয়াসেনাতের চোখে মুখে ফুরে উঠছে।চেহারাটা হচ্ছে হাসার মতো।ওয়াসেনাত মিইয়ে যাওয়া গলায় বললো,
—-“ আপনি কি সত্যি পরিত্র স্যরি অরিত্রান??”
অরিত্রান ওয়াসেনাতের দিকে একবার তাকায়।নিজের গায়ের পাঞ্জাবীর উপরের কয়েকটা বুতাম খুলে ফেলে।হাতা টেনে সোজা করে।ওয়াসেনাত আড়চোখে অরিত্রানের কান্ড দেখে।লোকটা কি করছে??মাথায় ঢুকছে না!অরিত্রান ওয়াসেনাতকে চরম ভাবে অবাক করে দিয়ে দাড়িঁয়ে নিজের পাঞ্জাবীটা টেনে খুলে ফেলে।ওয়াসেনাত হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে আছে।কি সাঙ্ঘাতিক!এটা কি হলো!ওয়াসেনাত ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।চোখগুলো একদম বড় বড় হয়ে আছে।কটোর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম।সন্ধ্যা এখনো নামে নি।আকাশ হোল্দে হয়ে আছে।সেই হলুদ কিরণে অরিত্রানের ফর্সা শরীর চিকচিক করছে।ওয়াসেনাতের চোখের পাতাই পড়ছেনা।সে তাকিয়ে আছে অরিত্রানের বস্ত্রহীন বুকে।খাঁজ খাঁজ ভাগে বিভক্ত বুক।ফুলা ফুলা বাহু।সেই বাহুতে সবুজ কালো রঙের ট্যাটু।ওয়াসেনাত ভিমড়ি খায়।সে রিতিমতো ঘামচ্ছে।বুক কাঁপছে ভয়ংকর মাপে।অরিত্রান পাঞ্জাবীর আর একটা হাতা খুলে ওয়াসেনাতের দিকে তাকায়।চোখে চোখ পড়তেই ভয়ংকর লজ্জায় নিজের চোখ সরিয়ে ফেলে ওয়াসেনাত।অরিত্রান ভ্রু কুঁচকে তাকায়।ওয়াসেনাতের চোখ না চাইতেও বার কয়েক অরিত্রানের বুকের খাঁজে আটকা পরে।অরিত্রান প্রথমে ব্যাপারটা বুঝতে পারলো না।চোখ ছোট করে ওয়াসেনাতের দিকে তাকিয়ে সে দেখে বেঞ্চের উপরে থাকা ওয়াসেনাতের হাত কাঁপছে।অরিত্রানের হাসি পাচ্ছে।এক ভ্রু তুলে সে হাসলো।মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি চেপে বসলো।আর তা হলো ওয়াসেনাতকে আর একটু ভয় দেখালে কেমন হয়??অরিত্রান ওয়াসেনাতের দিকে তারিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে হাসে।কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই ওয়াসেনাত নিজের দু’পা বেঞ্চে তুলে চোখ বুজে বললো,
—-“ এই আপনি কি পাগল না কি??দুরে যান।একদম কাছে আসবেন না।”
অরিত্রান শব্দ করে হেসে উঠলো।ওয়াসেনাত এক চোখ বুজে আর এক চোখ খোলা রেখে অরিত্রানের দিকে তাকায়।অরিত্রানকে অদ্ভুত লাগছে তার কাছে।ভারী অদ্ভুত।ওয়াসেনাত অরিত্রানের খোলা বুক,দীর্ঘ গড়ন,প্রশস্ত বাহু,উজ্জ্বল গায়ের রং,রূপ দেখে আবার চোখ বুজে বিড়বিড় করে বলে,
—-“ আসতাগফিরুল্লাহ ! আসতাগফিরুল্লাহ !নাউজুবিল্লাহ!!লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজজলিমীন।”
অরিত্রানের কানে কথাগুলো আসতেই সে কোমড়ে হাত দিয়ে হাসা শুরু করে।রোদের তাপ তার একদম সহ্য হয় না।শরীর কেমন যানি লাল বর্ন ধারন করে।অরিত্রানের শরীর ঘামছে।সেদিকে তার খেয়াল নেই।ওয়াসেনাতের সম্পূর্ন মুখ লাল টকটকে হয়ে আছে।চোখ বন্ধ।সে কাঁপছে।থরথর করে সেই কম্পনের তালে বেঞ্চ দুলছে।অরিত্রান পা বাড়িয়ে ওয়াসেনাতের পায়ের কাছে বসে।ওয়াসেনাত দোয়া দুরুদ পড়তে ব্যস্ত।তার ঠোঁট কাঁপছে।অরিত্রানের হঠাৎ করেই মাথায় নিষিদ্ধ চিন্তা আসে।যা এই জীবনে আর কোনো মেয়েকে দেখে জাগেনি।অরিত্রান ভারী অবাক হয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।গভীর কিছু নিঃশ্বাস নেয় সে।এতো ভয়াবহ একটা আবেগ তার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে!ভাবতেই অবাক সে!!অরিত্রান নিজেকে দমিয়ে আরো কিছু নিঃশ্বাস ফেলে।ওয়াসেনাত চোখটা একটু খুলেই চেঁচিয়ে বললো,
—-“ আপনি এখনো জামা কেনো পড়েন নি??ছিঃ!তাড়াতাড়ি পরিধান করুন।”
অরিত্রান দমকা একটা হাসি গিয়ে বললো,
—-“ জামা গায়ে দিয়ে দিলে তো দেখাতে পারবো না!!”
ওয়াসেনাত ধাপ করে নিজের দু’চোখ খুলেই বেঞ্চ থেকে লাফিয়ে উঠে।ভয়ে, আতঙ্কে ,উঠে আরো দুরে দাড়িঁয়ে কাঁপা হাতে কপালের,মুখের ঘাম মুছে কম্পিত কন্ঠে বললো,
—-“ দুরো কি সব বলছেন!এমন করছেন কেনো?আপনার কি আসলেই মাথায় গন্ডোগোল আছে??”
অরিত্রান উঠে দাড়াঁয়।ওয়াসেনাত বিস্ময়ে হতবাক হয়ে ভাবছে এই লোকের কি অন্য সমস্যা আছে?হায় আল্লাহ!কিছু না ভেবে একা একটা ছেলের সাথে নাচতে নাচতে চলে আসার শাস্তি!অরিত্রান একটু কাছে আসতেই ওয়াসেনাতের কাঁদো কাঁদো অবস্থা।অরিত্রান পাশে থাকা গাছে হাত রেখে মনের মাধুরী মিশিয়ে কিছুসময় হাসে।ওয়াসেনাত ভ্রু কুঁচকে পানির দিকে তারায়।অরিত্রান পিছনে ঘুরে ওয়াসেনাতকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—-“ কাঁধের দিকে তাকাও।”
ওয়াসেনাত আতঁকে উঠে বললো,

—-“ এমা ছিঃ!!আমি ভালো মেয়ে।আপনি মনে হয় এখন মাতাল টাতাল হয়ে আছেন।আমি বরং যাই।”
ওয়াসেনাত পিছনে মুড়ে দৌড় লাগাতে চায়।অরিত্রান হাতটা টেনে ধরে।ওয়াসেনাত এবার সত্যি কেঁদে দিবে দিবে ভাব।অরিত্রানের বিরক্তি গলা।সে বললো,
—-“ তাকাতে বলছি মানে তাকাও।”
ওয়াসেনাত বার কয়েক চোখ নাড়িয়ে অরিত্রানের কাঁধে চোখ রাখে।কাঁধের পাশেই সবুজ রঙের খোঁদাই করা লেখা।বাকাঁ তেড়াঁ করে লেখা “অরিত্রান”।ওয়াসেনাত চমকে উঠে অচমকা হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিয়ে বিড়বিড় করে উচ্চারণ করে,
—-“ অরিত্রান!!!”
সেই ছোঁয়ায় অরিত্রানের নিজেরই কেমন শিরশির করে উঠে।অরিত্রান দ্রুত সরে আবার জায়গায় বসে পড়ে।ওয়াসেনাত শক্ট হয়ে দাড়িঁয়ে আছে।অরিত্রান বললো,
—-“ বসে পড়ো।”
ওয়াসেনাত বাধ্য মেয়ের মতো বসে পড়লো।ভয়ে তার কি অবস্থা হচ্ছে তা তার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।অরিত্রান পাঞ্জাবী পরতে পরতে বললো,
—-“ এবার বিশ্বাস হলো আমি কে??”
ওয়াসেনাত ঢোক গিলছে বার বার।অরিত্রান গার্ডকে ডেকে পানির বোতল নিয়ে আসতে বললো।ওয়াসেনাতের অবস্থা কাঁপা কাঁপি।ভয়ে মুখটা চুপসে গেছে।ভীতু ভীতু চোখে একবার অরিত্রানের দিকে তাকিয়ে দেখে অরিত্রান তার দিকেই তাকিয়ে আছে।দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয় সে।ডান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে সে নিজের ঘাম মুছছে।গলা শুকিয়ে কাঠ।বার বার পানি খেতে ইচ্ছে করছে।একবার ভাবছে অরিত্রানকে বলবে,আমাকে একটু পানি এনে দিবেন।” কিন্তু বলতে পারছে না।কথাগুলো দলা পাকিয়ে গলায় আটকে আছে।ভয়ে তার নিঃশ্বাস ভারী হচ্ছে।চোখের সামনে ভাসছে ছেলেগুলোর কাঁটা দেহ।ওয়াসেনাত আঁতকে উঠে।ভীতু হয়ে কুন্ডলী পারিয়ে ছোট হয়ে বসে।
—-“ পানি নেও!”অরিত্রানের শান্ত কন্ঠ।

ওয়াসেনাত এতেও চমকে উঠে।চোখ বড় করে তাকায়।অরিত্রান হাতের বোতলের ডাকনা খুলে এগিয়ে দেয়।ওয়াসেনাতের হাত কাপঁছে।ভয়ংকর রকমের কাঁপছে।হাত এগিয়ে বোতল নেয়।বাতাস হচ্ছে তীব্র।সেই বাতাসে আশেপাশের শুকনো পাতার মড়মড় শব্দেও কেঁপে উঠছে ওয়াসেনাত।চারপাশে তাকাচ্ছে কিছুক্ষন বাদে বাদে।অরিত্রান শান্ত চোখে সব দেখছে।হাতের তীব্র কম্পনের জন্য ওয়াসেনাত পানি খেতে পারলো না।বোতলটা ধপাস করে নিচে পরে গেলো।ওয়াসেনাতের কি হলো সে নিজেও জানে না।সে নাক টেনে টেনে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।অরিত্রান এবার থমকালো।নিস্তব্ধ চোখে ওয়াসেনাতের দিকে তাকালো।ওয়াসেনাত কেঁপে কেঁপে কাঁদছে।নিঃশ্বাস নিতে মনে হয় কষ্ট হচ্ছে।অরিত্রান ভেবে কুল পাচ্ছেনা কাঁদছে কেনো??ভয় পাচ্ছে!!ওয়াসেনাতের কান্নার গতি বারে।বাতাসের কারনে একটা ম্যাচ ম্যাচ শব্দ হচ্ছে।সেই শব্দে ওয়াসেনাতের কান্না মিশে ভারী একটা পরিবেশ তৈরি করছে।অরিত্রান গলার স্বর নামিয়ে বললো,
—-“ কাঁদছ কেনো??ভয় করছে??কী হয়েছে বলো??এনি প্রবলেম??”
ওয়াসেনাত নিশ্চুপ!সে ফুপাচ্ছে।অরিত্রান চোখ বড় করে।ধমকের সুরে বলে,
—-“ কী হয়েছে বলবে??”
ওয়াসেনাত অতিব মাত্রায় উত্তেজিত হয়ে পড়েছে।ভয়ে তার কান্না পাচ্ছে।মৃতদেহ চোখে ভাসছে।তার মনে হচ্ছে তাকেও ওই ভাবে কাঁটবে।নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।অরিত্রান কিছুই বুঝতে পারছে না।কোনো উপাই না পেয়ে দু’হাত বাড়িয়ে ওয়াসেনাতকে নিজের বাহুতে টেনে নেয়।মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।সান্ত্বনার সুরে বলে,
—-“ কুল!ভয় পাওয়ার মতো তো আমি কিছুই করিনি।তাহলে কেনো ভয় পাচ্ছ পরীজা!!”
ওয়াসেনাতের চোখ লাল,নাক লাল,সমস্ত মুখশ্রী লাল হয়ে আছে।দীর্ঘ করে শ্বাস নিতে চাইছে।কিন্তু পারছে না।অরিত্রান দ্রুত চেঁচিয়ে পানি নিয়ে আসতে বলে।পানি খেতে গিয়ে গলায় আটকে যায়।অরিত্রানের মনে হচ্ছে তার নিজের গলায় পানি আটকে গেছে।কষ্ট যেনো তারই হচ্ছে।এত ভয়ংকর অবস্থায় ওয়াসেনাত অরিত্রানের পাঞ্জাবী ভাসিয়ে প্রশ্ন করে,
—-“ আপনি কি আমাকেও কুচি কুচি করে কাটবেন??”
অরিত্রান হাসতেও পারলো না।আর কাঁদতে তো সে পারেই না।সে শুধু তাজ্জব চোখে তাকিয়ে বললো,
—-“ পরীজা তুমি আগে পানি পান করার চেস্টা করো।আর তোমার এমন আজেবাজে চিন্তা মাথায় কোনো আসছে বলো তো??
ওয়াসেনাত পানি গিললো।তার বুক জ্বালা করছে।নাক ও জ্বলছে।অরিত্রানের বাহুতে নিজেকে দেখে ঝাটঁকা মেরে সরে আসে।অরিত্রান মাথা দুলিয়ে হাসলো।
—-“ মেরে ফেলতে নিয়ে এসেছেন??”ওয়াসেনাতের ভীতু গলা।
অরিত্রান বিরক্ত গলায় বললো,
—-“ মারার হলে সেদিনই মেরে দিতাম।তখন তো আমি মারতে চেয়েও পারলাম না।এখনের ব্যাপার ভিন্ন।”
ওয়াসেনাত গটগট করে পানি খাচ্ছে।পানি খেয়ে দম নিয়ে বললো,
—-“ তাহলে আপনি সত্যি অরিত্রান খান??”
—-“ এখনো অবিশ্বাস হচ্ছে!আবার জামা খুলবো??
—-“ এই নানা!আসলে অবিশ্বাস হওয়ার কথা নয় কি??আপনি তো মানুষ কাটেন।আমাকে এখনো জীবিত রেখেছেন কেনো??”
অরিত্রান হাসলো।বললো,
—-“ তোমাকে মারার মত ওতো শক্তি অরিত্রান খানের নেই।কিন্তু তোমার বাবাকে মারতে চাই।”
ওয়াসেনাত আঁতকে উঠে।আর্তনাদ করে বললো,
—-“ আমার বাবাকে মানে??বাবা আপনার কি করেছে??আপনি এসব কি বলছেন??”
—-“ হুম ঠিক বলেছি!!”
ওয়াসেনাত ভয়ে আড়স্ট মুখে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
—-“ আমার বাবাকে কিছু করবেন না প্লিজ!প্লিজজ!”
ওয়াসেনাত কাঁদছে।অরিত্রান ধমকা গলায় বললো,
—-“ চুপ!কথায় কথায় কান্নার মানে কী??”
দু’হাতে মুখ চেপে ওয়াসেনাত বললো,
—-“ আমার বাবা আপনার কী ক্ষতি করেছে??”
অরিত্রানের চোখ লাল হয়ে আসে।রাগে হিস হিস করে সে বললো,
—-“ তোমার বাবা জানে আমার মা বাবার খুনি কে।তার কাছে ভিডিও আছে।কিন্তু সেটা আমাকে দিচ্ছে না।”
ওয়াসেনাত হা করে থেকে বললো,
—-“ আপনার বাবা মা খুন হয়েছে??কিন্তু কিভাবে??”
—-“ সেটাই জানতে চাচ্ছি আজ এতো বছর।কিন্তু পারছি না তোমার বাবার জন্য।তোমাকে তো সেদিই মেরে ফেলতাম।কিন্তু সব এলোমেলো হয়েগেছে।”
ওয়াসেনাত শান্তু চোখে তাকায়।শীতল কন্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
—-“ মারলেন না কেনো??”

অরিত্রানের ক্ষুদ্দ চোখ নেতিয়ে আসে।চোখের সবুজ মনি শান্ত হয়ে আসে।হঠাৎ করেই ওয়াসেনাতের একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নেয়।ওয়াসেনাত চমকিত হয়ে কেঁপে উঠে।কি উত্তপ্ত হাতের তালু!!এতো গরম কেনো??অরিত্রান গভীর গলায় বললো,
—-“ কারন আমি মরেছি তোমাতে!!”
একটু থেমে বললো,
—-“ আমি খুব নির্মম ভাবে মানুষ খুন করি।এই নিয়ে ১৩২ পর্যন্ত counting করেছি।বাকি গুলো মনে নেই।মানুষকে নির্মম ভাবে হত্যা করতে আমার ভালো লাগে।এই যেমন ,জীবিত অবস্থায় আঙ্গুল,হাত,পা,জিহ্বা সব আলাদা আলাদা করে মানুষকে মৃত্যু দিতে আমার সত্যি ভালো লাগে।এমন কি জীবিত রেখে কলিজা…!!”
ওয়াসেনাত চোখ বড় করে চিৎকার করে বললো,
—-“আমি আর শুনতে চাই না। চুপ প্লিজজজজজ!!আপনার কি দয়া মায়া হতো না??”
অরিত্রান বিকট শব্দে হেসে উঠে।ওয়াসেনাত নিজের হাত ছাড়াতে চায়।তার ভয় করছে।কেমন ভয়ংকর হাড় কাঁপানো হাসি।ভয়ে ওয়াসেনাতের সমস্ত শরীর শিরশির করছে।অরিত্রানের হাসির শব্দে চারপাশ কেমন ভুতুরে হয়ে উঠছে।ওয়াসেনাতের হঠাৎ করেই মনে হচ্ছে লোকটা মানুষ না!!অরিত্রান ওয়াসেনাতের হাত আরো টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।কানের একটু পাশে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,
—-“ পৃথিবীর সব পবিত্র সম্পর্ক সত্যের উপর নির্ভরশীল।সম্পর্ক শুরুটা সত্য দিয়ে হওয়া উচিঁত।তাই আমার ভালোবাসার শুরু হবে সত্য দিয়ে।আজ সব বলবো।আর তুমি শুনবে পরীজা।শুনতেই হবে।”
কথাগুলো শিরশির করে ওয়াসেনাতের কানে ঢুকছে।শরীরের লোম দাড়িঁয়ে যাচ্ছে।বুকে ধড়াস ধড়াস করছে।
#চলবে__________