পাথরের বুকে ফুল

পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 26

বিছানায় শুয়ে আছে রিপা।চাদরটা গায়ের উপর খুব সর্তকের সাথে টেনে পাশ ফিরে তাকায় সে।তার পাশেই একুই চাদরের অপর প্রান্তে শুয়ে আছে ইহান।হাতে তার জ্বলন্ত সিগারেট।চোখ জোড়া শূন্যে।মেয়েদের শরীর এক রাতের জন্য খুব দামি চোখে দেখে ইহান।তারপরে আর এর তেমন মূল্য থাকেনা তার কাছে।কিন্তু বাম পাশের রিপা ভিন্ন।এই মেয়ের শরীর তার বেশ ভাল লাগে।মাঝে মাঝেই রিপার সাথে সে নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হয়।এতে রিপা বেশ খুশি।ইহানের মত হাইক্লাসের হেন্ডস্যাম ম্যান পাওয়া দায়।টাকার যেমন অভাব নেই রূপেরও কমতি নেই।বাকি মেয়েদের চেয়ে তাকে ইহান আলাদা চোখে দেখে এটাই অনেক।তবে সব কিছুর ঊর্ধ্বে ইহানের সাথে বেড পার্টনার হতে হতে ইহানকে সে ভালবেসে ফেলেছে।মনে প্রানে সে চায় ইহান তার হোক।তাকে বিয়ে করুক।ইহান যে আদো এটা করবে না রিপা বেশ ভালোই জানে।তবুও চায়।চাওয়ার মাঝে তো ক্ষতি নেই।
ইহান তিক্ত মেজাজে সিগারেট ফুঁকাচ্ছে।মাথাটা তার প্রচন্ড ধরে আছে।মেয়েটাকে এতো খুঁজলো কিন্তু পাচ্ছে না কেনো এটাই সে বুঝতে পারছে না।তবে এটা বেশ বুঝতে পেরেছে মেয়েটাকে না পেলে তার চলবে না।ইহান গায়ে জামা জড়িয়ে উঠে দাড়াঁয়।সামনে ঝুলে থাকা কাঁচের তাক থেকে মদের বোতল হাতে নিয়ে ডাকনা সরিয়ে গটগট করে গলা ভিঁজিয়ে ফেলে সে।তারপর আবার বিছানায় এসে বসে।রিপা চাদর ভালো ভাবে গায়ে জড়িয়ে ইহানের পাশ ঘেঁষে বসে।ইহার বিরক্ত গলায় বললো,
—-“ সমস্যা কি রিপা??গায়ের সাথে এতো ঘেঁষা ঘেঁষি করছো কেনো??”
রিপার মন ক্ষুন্ন হয়।মনে মনে ভাবে সারা রাত নিজেই ঘেঁষে ছিলো এখন আমি একটু ঘেঁষায় দোষ হয়ে গেলো!!!কিন্তু ঠোঁট অতিক্রম করে কথাগুলো আর বলতে পারলো না।মন খারাপ হওয়া গলায় বললো,

—-“ ঘেঁষেছি তো কি হয়েছে ইহান বাবু??”
ইহান সিগারেট টানে আর বলে,
—-“ কি হয়েছে বুঝতে না পারার মত মেয়ে তুমি না।তাই বেহুদা কথা বলবে না একদম।”
রিপা চুপ করে গেলো।কিছুসময় নীরব থেকে সে বললো,
—-“ তা এত সিগারেট খাচ্ছ কেনো??কেও কি ভেতর থেকে জ্বালিয়ে দিয়েছে??”
ইহান উদাসীন হয়ে পরে।ক্ষিণ স্বরে বলে,
—-“ হুম!জ্বালিয়েছে তো করুন ভাবে।ভয়ংকর আগুনের উত্তাপে জ্বালিয়ে গায়েব হয়ে গেছে।”
রিপা কৌতুহলি হয়ে উঠে।ইহান চৌধুরীর মুখে এমন কথা আগে কখনো শুনেনি সে।কৌতুহলি গলায় প্রশ্ন করলো,
—-“ কে সেই অগ্নি কন্যা??”
ইহান হেসে উঠে।নেশা নেশা গলায় বলে,
—-“ সে এক অদ্ভুত কন্যা।শুধু কি অগ্নি!!!না সাথে প্রচন্ড তেজ।”
ইহান নিজের গালে হাত দিয়ে ঘঁষে।তার এখনো মনে আছে তার গাল লাল করে ওয়াসেনাতের দেওয়া থাপ্পড়ের কথা।সেই লাল নীলাভ চোখ।মারাত্নক ভাবমুর্তি।ইহান আবার মদের বোতলে চুমুক দেয়।রিপা তাচ্ছিল্য করে বললো,
—-“ মদ দিয়ে গলা ভিজালে কি আর বুকের জ্বালা কমবে??”
ইহান হাসলো,বললো,
—-“ এ জ্বালা তাকে সারা জীবনের জন্য পেলেই মিটবে।”
রিপা অবাক গলায় বললো,
—-“ সারা জীবনের জন্য তোমার,ইহান চৌধুরীর কাউকে চাই??”
ইহান তীক্ষ্ন গলায় বললো,
—-“ চাই চাই!!তাকে চাই!!কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য কারনে সে আমার থেকে বহু দূরে আছে বুঝলে!!কাছেই যেতে পারছি না।কিন্তু কেনো তাও বুঝতে পারছি না।”
ইহান চিন্তায় ডুবে।রিপা ক্ষিপ্ত হয়ে ভাবে কে এই মেয়ে তাকে ইহানের আগে সে নিজে খুঁজে বের করবে।ইহান কিছু একটা ভেবে লাফিয়ে উঠে।পাশে থাকা ফোনটা নিয়ে কাউকে কল করে।ওপাশের কথা রিপার কানে আসে না।কিন্তু ইহানের কথা সে শুনতে পায়।ইহান উত্তেজিত গলায় বলছে,
—-“ কুঞ্জবাড়ির ফাইলটা দ্রুত আমার রুমে নিয়ে এসো।”
রিপা ভ্রুকুঁচকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে,
—-“ কুঞ্জবাড়ি কি ওই মেয়েটার??”
____________________
রিমি অরিত্রানের সামনে বসে আছে।রিমির প্রচন্ড ভয় করছে।অরিত্রান এতো সকালে তাকে কেনো নিজের বাসায় নিয়ে এসেছে??সেটাই মাথায় ডুকছে না।সে তো ওয়াসেনাতকে অরিত্রান সম্পর্কিয় কথা বলার জন্য তার বাসায় যাচ্ছিলো।কিন্তু মাঝ পথ থেকে অরিত্রান তাকে নিয়ে আসে।রিমন চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।অরিত্রান নিজের মুখ মুছতে মুছতে বললো,
—-“ রিমন মিথ্যা বলেছে।ওয়াসেনাতের জন্য আমি ভার্সিটিতে যাই নি।একজনকে খুন করার জন্য এতো নাটক।আর এ দেশে এসেছিও খুনের উদ্দেশ্যে।কিন্তু মাঝ পথে ওয়াসেনাতের কারনে সব বদলে গেছে।লক্ষ্য হারিয়ে ফেলেছি।ও মাঝে এসে সব এলোমেলো করে দিয়েছে।যাই হোক।মিথ্যা বলা আমার তেমন পছন্দ না।”
রিমির চোখ আগুন।কাল রিমন বলেছিলো,অরিত্রান ওয়াসেনাতকে ভালবাসে তাই এই রূপ পাল্টাপাল্টির নাটক করেছে।কিন্তু অরিত্রান সব বলে দিয়ে তাকে ফাঁসিয়ে দিবে এটা সে বুঝতে পারে নি।তার এখন ইচ্ছে করছে অরিত্রানের মাথাটা ফাটিয়ে দিতে।কিন্তু সে এটা করতে পারবে না সে জানে তাই চুপ করে আছে।রিমি রাগে ফঁসফঁস করছে।রিমন তাকে এভাবে ঢপ দিবে সে ভাবতে পারেনি।রিমির ভয়ও করছে খুব।অরিত্রান খান ডেঞ্জারাস সে জানে।কিন্তু এতোটা ডেঞ্জারাস জানা ছিলো না।ভীতু চোখে মাথা নিচু করে সে বসে আছে।মনে মনে বিড়বিড় করছে,রিমনকে কিভাবে সায়েস্তা করবে।অরিত্রান উঠে দাড়াঁলো।রিমি আড়চোখে তাকিয়ে দেখছে।এত সুন্দর বাড়ি রেখে অরিত্রান হোটেলে কেনো থাকে এটাই তার মাথায় আসছে না।রহস্য যেনো ঘিরে রেখেছে এই অরিত্রানকে।কিছুই বুঝতে পারছে না রিমি।অরিত্রান ঠোঁট বাকিয়ে হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।রিমনের করুন অবস্থা।রিমি উঠে দাড়িঁয়ে বললো,
—-“ আবার মিথ্যা বললা কেনো??”
—-“ আমি কি জানতাম যার জন্য বলবো সেই ফাঁসিয়ে দিবে।”
—-“ বেশ করেছে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।তোমাকে তো আজকে আমি!!”
রিমি আর কথা বললো না।দু’হাতে ইচ্ছামতো রিমনের বাহুতে কিল ঘুঁষি মারা শুরু করে।রিমন মার খেতে খেতে বললো,
—-“ আর জীবনেও মিথ্যা বলবো না।তাও থামো প্লিজজ।”
রিমি রেগে আরো জোড়ে মারা শুরু করে।অরিত্রান রুমে ঢুকে এই দৃশ্য দেখে আবার বেরিয়ে পরে।চোখ তার চড়ক গাছ।মেয়েরা কি এভাবেই বয়ফ্রেন্ডকে অত্যাচার করে??ওয়াসেনাত ও কি তাকে এভাবে মারবে??ও মাই গড!!অরিত্রান চিন্তিত হয়েই দেয়াল ঘেঁষে দাড়াঁয়।
________________________
ভালোবাসায় একটা আলাদা হওয়া আছে।আছে একটা গতিপথ।ভালোবাসা একবার ছুঁয়ে দিলে দুনিয়াটাই ভালোবাসাময় হয়ে উঠে।অরিত্রানের অবস্থা হয়েছে তেমন।সব কিছুই ভালো লাগছে তার।অফিসের সবাই অবাক হয়ে দেখছে তাকে।আগে কখনো তারা অরিত্রানের হাসি মুখ দেখেনি।কিন্তু আজ অরিত্রান হেসে অফিসে ঢুকেছে।গম্ভীর ,বদ রাগি লোকটাকে হঠাৎ করেই সবার খুব প্রানবন্ত লাগছে।কেমন যেনো অচেনা এক স্যারকে তারা দেখছে।কাজে ভুল হলেও বকে না।বুঝিয়ে বলে।একুই কাজে দু’বার ভুল হলেও মাফ করে দেয়।সবই যেনো চরম আশ্চর্যের বিষয়।বিকেলের একটু আগে অরিত্রান নিজের বাড়িতে আসে।তাকে দেখে চমকে উঠে অরহাম খান।কাজের মেয়ে টুশি কাঁপা কাঁপা হাতে পানি এগিয়ে দেয়।অরিত্রান ভ্রুকুঁচকাতেই ভয়ে এক দৌড় লাগায়।অল্প বয়সি টুশি অরিত্রানকে খুবই ভয় পায়।অরিত্রান পানির গ্লাস হাতে নিয়ে হাক লাগিয়ে ডাকে,
—-“ এই মেয়ে এদিকে এসো!!”
টুশি জোমে দাড়িয়ে আছে।বাসার সব কাজের লোকই অরিত্রানকে ভয় পায়।টুশি সবার ছোট।অরহামের সেফ রহমতের মেয়ে টুশি।টুশি এগিয়ে আসলো না।অরিত্রান আবার হাক লাগিয়ে বললো,
—-“ আমার সামনে এসে দাড়াঁও।”
টুশি কাঁপা কাঁপা পায়ে এগিয়ে এসে মাথা নিচু করে দাড়াঁলো।অরিত্রান গ্লাসের পানি টুকু খেয়ে গলা ভিঁজালো।বিনয়ী সুরে বললো,
—-“ নাম কি??”

টুশি ঘামছে।কাঁপছে।অরিত্রান হাসলো।আড়চোখে তাকিয়ে সে হাসি দেখে টুশি চমকালো।ক্ষিন গলায় অরিত্রান বললো,
—-“ কথা বলতে না পারলে যাও।”
টুশি সাহস করে বললো,
—-“ নাম আমার টুশি।”
অরিত্রান দাড়াঁতে দাড়াঁতে বললো,
—-“ আর কাজে যাতে না দেখি তোমাকে।লেখাপড়া করো যাও।তোমার সেলারি দিয়ে দেওয়া হবে।”
টুশি চমকিতো।সাথে বিমুগ্ধ হয়ে অরিত্রানের দিকে তাকায়।ইন্টারে পুড়ুয়া সে টাকার জন্য কাজে আসে।পড়ার বড্ড ইচ্ছে তবুও পড়তে পারে না।রহমত রান্না ঘর থেকে সব দেখে থমকে গেছে।অরহাম লাঠিতে টুক টুক শব্দ করে নিজের রুমের দিকে হাটা দেয়।
রিমনের প্রতি খুব বিরক্ত অরিত্রান।নিজের রুমের সোফায় বসে সে তাকিয়ে আছে বিছানার দিকে।রিমনের মন বেশ চঞ্চল।গার্লফ্রেন্ডের ক্যালানী খেয়েও কেউ এতটা উচ্ছাসিত থাকতে পারে জানা ছিলো না অরিত্রানের।রিমন বিছানার উপরে নীল পাঞ্জাবী রেখেছে।তার বক্তব্য আজ অরিত্রান নীল পাঞ্জাবী পরে ওয়াসেনাতের সাথে দেখা করতে যাবে।অরিত্রান জীবনে কখনো পাঞ্জাবী পড়েনি।তাহলে আজ কিভাবে পড়বে সেটাই ভেবে পাচ্ছেনা সে।রিমন নাছড়বান্দা।তার কথা পড়তে হবে মানে হবে।রিমনের বকবক আর টানাহেচড়ায় অরিত্রান নীল পাঞ্জাবী গায়ে জড়িয়েছে।অরিত্রান আয়নার সামনে দাড়িয়ে বললো,
—-“ প্রেম করতে চাই বলার চেয়ে বিয়ে করতে চাই বলাই উচিঁত।কি বলছ??”
রিমন হা করে তাকিয়ে আছে।চোখ বড় বড় করে সে বলে,
—-“ তুই ব্যাটা সব কিছুতেই আগে।”
অরিত্রান হাসলো।
____________________
ওয়াসেনাত গেটের বাহিরে পা দিতে চেয়েও দিচ্ছে না।কেমন যানি একটা ভয় ভয় কাজ করছে।একটা অজানা অনুভুতি কাজ করছে।তার মনে হচ্ছে আজ দেখা করতে নয় একদম বিয়ে করতে যাচ্ছে।ওয়াসেনাতের মনে হচ্ছে সে লজ্জা পাচ্ছে।কি আশ্চর্য!লজ্জা পাওয়ার কি আছে!লোকটা কে সে জানে না।হয় তো পরিচয় যানে না।সে যানে নুহাশ আর সবুজ চোখের মানব একুই।তবুও কেমন জানি লাগছে।কিন্তু এই লোকটাকেই সে ভালোবাসে।পরিচয় দিয়ে কি আসে যায়।ভালোবাসা প্রয়োজন।ওয়াসেনাত পা বাড়িয়ে বাহিরে যায়।কিন্তু যার জন্য আসা সে কই??ওয়াসেনাত মাথা এদিক সেদিক করে ঘুরিয়ে দেখে ।কিন্তু না নেই কেউ?লোকটা কি তাহলে আসলো না???ওয়াসেনাতের খুব মন খারাপ হয়।মাথা ঘুরিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়াবে তার আগেই রিমনের দেখা মিললো।রিমন ক্যাবলার মতো দাঁত বের করে একটা বেক্কেল মারকা হাসি দিয়ে বললো,
—-“ আচ্ছালামুয়ালাইকুম ভাবী!!”
ওয়াসেনাত ভারী অবাক হলো।ভাবী ডাকটা কি অদ্ভুত শোনাচ্ছে।কাকে ভাবী ডাকছে ??ওয়াসেনাত ঘাড় ঘুড়িয়ে বামে ডানে খুঁজে।না কেউ নেই??তাহলে ভাবী ডাকটা কি তার জন্য??রিমন আবার হেসে বললো,
—-“ যাকে খুঁজছেন সে এখানে নেই।ওই দিকে আছে।আপনাকে আমার সাথে আসতে বলেছে।চলেন ভাবী!!”
ওয়াসেনাত বিস্মিত হয়ে ভাবছে এই লোকটা কে??আর তাকে কেনো ভাবী ভাবী করছে।ওয়াসেনাত অবাক হওয়া গলায় বললো,
—-“ কে আপনি??আর গলাটা চেনা লাগছে!”
রিমন মাথা নতো করে বললো,
—-“ আমি রিমন।আর আপনার চেনা গোঁফা মাহির!!”
ওয়াসেনাত চোখ বড় করে বললো,
—-“ আপনিও নকল??”
রিমন আস্তে করে বলে,

—-“ হুম ভাবী!!”
ওয়াসেনাতের ভাবী ডাকটা কেমন যানি লাগছে।গা শিরশির করছে এই শব্দের কারনে।রিমন আবার বললো,
—“ ভাব…”
রিমনকে মাঝ কথায় থামিয়ে দিয়ে ওয়াসেনাত বললো,
—-“ ভাবী ভাবী করছেন কেনো??আমি কি আপনার ভাইয়ের বউ??কোন জন্মের ভাবী লাগি আপনার??”
রিমন হাসে।কিন্তু কিছু বলে না।অরিত্রান তাকে বলেছে আজ থেকে ওয়াসেনাতকে নাম ধরে ডাকলেই মাইর খাবে।তাই তো ভাবীর আবিষ্কার করেছে।ওয়াসেনাত ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-“ আপনার ওই বন্ধু কই??”
রিমন সামনে হাত বাড়িয়ে বললো,
—-“ চলেন ভাবী!!”
ওয়াসেনাত একবার মুখের দিকে তাকায়।রিমন দাঁত বের করে হেসে সামনে এগিয়ে হাটে।ওয়াসেনাত ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে যায়।অদ্ভুত একটা অনুভুতি হচ্ছে তার।আগে তো এমন হতো না??আচ্ছা লোকটা তার মনের কথা ধরে ফেলেছে কিভাবে??ওয়াসেনাতের হাত পা কাঁপছে।প্রতি ধাপে বুক ধকধক করে শব্দ করছে।নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে!!অপরিচিত বলে এমন ইচ্ছে না কি পরিচিত বলে এমন হচ্ছে??
রিমন পা বাড়িয়ে নিজের গাড়িতে বসে।ওয়াসেনাত তাজ্জব চোখে তাকিয়ে রিমনের কান্ড দেখে।মাথাটা বের করে রিমন উচ্চ শব্দে বললো,
—-“ ভাবী ওই দিকে তাকান।যাকে খুঁজছেন সে ওই দিকে।আমি আসি।”
রিমন কিছু শোনার অপেক্ষা না করে সাই সাই করে গাড়ি চালিয়ে দৃষ্টি সীমানার বাহিরে চলে যায়।ওয়াসেনাত ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে।একজন লোক মতো দাড়িঁয়ে আছে।কিন্তু পিছনে ঘুরে।নীল পাঞ্জাবী গায়ে।যার জন্য সে এসেছে সে তো পাঞ্জাবী পড়ে না।তাহলে এ কে??ওয়াসেনাতের খুব বিরক্ত লাগছে।এতো কাহিনীর মানে কি??রিমন কেনো তাকে নিতে গেটের সামনে গেলো??সে কেনো গেলো না??বিরক্তিতে ওয়াসেনাতের মন তেঁতো হয়ে উঠে।
ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে অরিত্রান পিছনে ঘুরে তাকায়।রাস্তার গলির মোড়ে আকাশি রঙের জামায় দাড়িঁয়ে আছে কেউ।অরিত্রান হাতা গুটাতে গুটাতে এগিয়ে আসে।ওয়াসেনাত গলির দিকে পা বাড়াতেই অরিত্রান গলা উঁচিয়ে ডাক দিলো,
—-“ পরীজা!!!”
ওয়াসেনাত সাথে সাথে মাথা কাত করে পিছনে তাকায়।কয়েক কদম পা ফেলে দ্রুত অরিত্রানের সামনে এসে দাড়াঁয়।অরিত্রানের চোখ আটকা পরে ওয়াসেনাতের মুখে!সূর্য়ের শেষ কিরণ পড়ছে ওয়াসেনাতের মুখে।মুখটা লালছে হয়ে আছে।চিন্তিত মুখ হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।অরিত্রানের দৃষ্টি স্থির।বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে ওয়াসেনাতের চোখে ,ওয়াসেনাতের লাল ঠোঁটে,গোলাপী আভার গালে,পুরোটাই ওয়াসুপরীতে আটকে আছে অরিত্রান।হঠাৎ করেই চেনা মুখটা অচেনা লাগছে।মনে হচ্ছে এই মেয়ে আসলেই ভয়ংকর রূপের অধিকারী।এটা তার প্রতিদিন নতুন করে মনে হলেও আজ অদ্ভুত লাগছে।রাতে ঘুমোয়নি বলে ওয়াসেনাতেন মুখটা ফুলে আছে সাথে হালকা লাল হয়ে আছে।তাই কি এমন লাগছে!!অরিত্রান জানে না।তার কেমন নেশা নেশা লাগে এই মেয়েকে দেখে।মারাত্নক নেশা!!
পাঞ্জাবীতে অরিত্রানকে দেখে বাকরূদ্ধ ওয়াসেনাত।নীল পাঞ্জাবী গায়ের সাথে ফিট হয়ে লেগে আছে।ঘামে ভেঁজে আছে অনেক অংশ।দু’হাতের কনুই পর্যন্ত পাঞ্জাবীর হাতা ভাঁজ করা।ফর্সা হাতে কালো,সোনালী লোম লেপ্টে আছে ঘামের কারনে।অনেক সময় থেকে দাড়িঁয়ে আছে মনে হয়।মাথার সিল্কি লম্বাটে চুল গুলো লেপ্টে আছে কপালে।মুখটা লাল।ওয়াসেনাতের ইচ্ছে করছে জিজ্ঞেস করতে,কেমন আছেন আপনি!!” কিন্তু করতে পারলো না।কোথায় যেন জড়তা কাজ করছে।ওয়াসেনাত অরিত্রানের চোখে চোখ রাখনেই বুকটা অদ্ভুত ভাবে কেঁপে উঠে।কি ভয়ংকর সবুজ চোখ!!!দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয় সে।আস্তে করে বলে,
—-“ এমন ভাবে সেজে এসেছেন কেনো??”
অরিত্রান অবাক হয়ে বললো,
—-“ আমি সেজেছি??”

ওয়াসেনাত মুচকি হেসে বললো,
—-“ তা নয় তো কি।তবে পাঞ্জাবীতে দারুন লাগছে আপনাকে।
অরিত্রান হাসে।এটা রিমনের দেওয়া দ্বিতীয় পাঞ্জাবী।ভাগ্যিস ২য় ছিলো।কারন আগেরটা পড়ে সে মাত্র একটা খুন করে এসেছে।রিমন একুই রকম দু’টি পাঞ্জাবী এনেছে।অরিত্রানের ইচ্ছে করছে একটা ধন্যবাদ দিতে রিমনকে !!সামনে থাকলে হয় তো দিতো।যা শোনে সে সেন্সলেস হয়ে পর তো।ওয়াসেনাত তিক্ষ্ন কন্ঠ বললো,
—-“ কে আপনি আজ তো বলবেন???”
অরিত্রান হেঁটে সামনে এগিয়ে বললো,
—-“ পরিচয় জানা কি খুব প্রয়োজন??”
—-“ অবশ্যই!” ওয়াসেনাতের দ্রুত কন্ঠ।
অরিত্রান গাড়ির দরজা খুলে বললো,
—-“ তাহলে বলবো।উঠো!!”
ওয়াসেনাতের পাশের সিটে অরিত্রান বসে আছে।অরিত্রানের এই প্রথম জড়তা কাজ করছে।তাকে কেউ ভালো চোখে দেখেনা।কথার ছলে ওয়াসেনাতও বলেছে অরিত্রান খানের সম্পর্কে তার চিন্তাধারা।সে নিজেই অরিত্রান এটা শুনে ওয়াসেনাত কি রিঅ্যাকশন দিবে কে জানে!!
ওয়াসেনাত সিট বেল্ট লাগায় নি।অরিত্রান লাগিয়ে দেওয়ার জন্য এগিয়ে যেতেই ওয়াসেনাত পিছনে ঘেঁষে বসে।অরিত্রান মৃদু হাসে।বেল্ট লাগিয়ে অরিত্রানের সরে যাওয়ার কথা কিন্তু সে সরলো না।জানালার কাঁচে হাত রেখে সে ওয়াসেনাতের দিকে তাকায়।ওয়াসেনাত চোখ ছোট করে বলে,
—-“ কিছু বলবেন???”
অরিত্রান ঘোর লাগা চোখে জবাব দেয়,
—-“ হুম!!”
ওয়াসেনাত ঢোক গিলে।তার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে।বিড়বিড় করে বলে,
—-“ নিজের সিটে বসেও বলতে পারেন।একটু দুরে যান।”
অরিত্রান হাসে।আর একটু এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বললো,
—-“ কেনো??যদি আরো কাছে এসে বলি ক্ষতি কি??”
ওয়াসেনাত লজ্জায় কুঁকড়ে যায়।অদ্ভুত শিহরনে কাঁপতে থাকে শরীর।মাথা নত করে ফেলে।দু’হাতে জামা খামচে ধরে আরো চেপে বসে।ওয়াসেনাতের জামার একটা লম্বা অংশ গাড়ির দরজায় আটকে আছে।অরিত্রান আর একটু কাছে যেতেই ওয়াসেনাত চোখ বন্ধ করে চেঁচিয়ে বললো,
—-“ দুরে যান প্লিজজজ।আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।”
অরিত্রান জামা নিচ থেকে টেনে ঠিক করে দেয়।ওয়াসেনাতের হাত পা কাঁপছে।অরিত্রান এই দৃশ্য দেখে অনেকক্ষন একা একা হাঁসে।ওয়াসেনাত চোখমুখ খিচে আছে।অরিত্রান ওয়াসেনাতের মুখে একটা ফুঁ দেয়।ওয়াসেনাত সাথে সাথে চোখ খুলে তাকায়।দু’জনের চোখাচোখি হয়।অরিত্রান একটু দুরে সরেছে।কিন্তু এখনো আগের মতো।অরিত্রান মায়াবী গলায় কোমল করে বললো,
—-“ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে পরীজা!!”
ওয়াসেনাত অবাক হয়।মাথা নামিয়ে বিড়বিড় করে বলে,
—-“ এতটা আবেগ!!!এতোটা নেশা!!”
ওয়াসেনাতের সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে।ওই লোক যে এতোটা আবেগী কথা বলতে পারে তার জানাছিলো না।ওয়াসেনাতের ঠোঁট কাঁপছে।মুখশ্রী লাল হয়ে আছে।মনে হচ্ছে এক স্তুপ রক্ত এসে জমাট বেধেঁছে তার মুখে।অরিত্রান সরে যায়।নিজের সিটে হেলান দিয়ে বিড়বিড় করে,
—-“ পাগল হলেও কম হয়েছি!!!আমার তো মরে যাওয়া উঁচিত!!!”
ওয়াসেনাত চোখ ছোট করে কাঁপা গলায় বললো,
—-“ কেনো??”

অরিত্রান চোখ খুলে তাকায়।দীর্ঘ করে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,
—-“ এতো লজ্জা!!!
থেমে থেমে আবার বলে,
—-“ এত লজ্জায় লাল হওয়া কি খুব জড়ুরি??এতোটুকু মুখ,তার সবজুড়ে এতো লজ্জা কই পাও!!!এতো লজ্জায় আমাকে ডুবিয়ে মারতে চাও বুঝি!!”
ওয়াসেনাত বরফের মতো জমে মাথা নামিয়ে কাঁপা কাঁপা শীতল কন্ঠে বললো,
—-“ আপনার হঠাৎ এতো আবেগ আসলো কোথা থেকে?”
অরিত্রান আবার ঝুঁকে ওয়াসেনাতের কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,
—-“ সব জমানো ছিলো পরীজা!!ভালোবাসায় তো সবই আবেগ!এই দীর্ঘ জীবনে এসে ভালোবাসা আমাকে পাল্টে দিয়েছে।আটাশ বছরের জীবনে আমি এখন আবেগময়!!!
#চলবে__________