পাথরের বুকে ফুল

পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 11

___________________
দুই কি তিন বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।গায়ে সাদা রঙের ফ্রক।গোল গোল কালো মনির একজোড়া চোখ ঘন পল্লবে ডাকা।হাত ভর্তি অসংখ্য রাশি রাশি ছোট সাদা চুড়ি।পায়ে সাদা জুতো।হাতের মুঠোয় একটা টকটকে হলুদ আম।দুই হাত দিয়ে নিজের বুকের সাথে চেপে রেখেছে সে আমটিকে।ঝুঁলো ঝুঁলো গাল গুলো হালকা দুলতেই নোড়ে উঠে।সিল্কি চুলগুলো দুই পাশে ঝুঁটি করা।ছোট ছোট অসংখ্য সিল্কি চুল কপালে এসে পড়েছে।সাদা পুতুলের ক্লিপ লাগানো ঝুঁটির পাশে।কিছুক্ষণ পর পর সে দু’পাশে দুলছে।সাথে তাল মিলিয়ে ঝুঁটিগুলো দুলছে।অরিত্রান মুগ্ধ হয়ে দেখছে।কত কিউট বাবু??লাল ঠোঁটজোড়ার বেশির ভাগ অংশ মুখের ভিতরে আছে।হা করে আবার লাল ঠোঁটজোড়া দিয়ে চেপে হা বন্ধ করছে সে।চোখগুলো উপরের দিকে নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে অরিত্রানের দিকে।পায়ে একজোড়া ছোট নুপুর আছে।গলায় ঝুলছে আয়াত নামের লকেট।অরিত্রান ভ্রুকুঁচকে তাকালো।অদ্ভুত ভাবে বাচ্চাটাও ভ্রু কুঁচকালো।ছোট ছোট আঙ্গুল গুলো দিয়ে আমটা ধরে রাখতে তার বেশ কষ্ট হচ্ছে।দেখতে একদম আযমানের মত লাগছে।তবে গায়ের রং লাল গোড়া। বড় চোখগুলো হয় তো মায়ের মত হয়েছে। অরিত্রান ঘুরে তাকালো।আযমানের কপাল থেকে রিভলভার সরিয়ে তার দিকে তাকালো।আশ্চর্য কান্ড!! আযমান ঘামছে!!চোখেমুখে তার ভয়ের ছড়াছড়ি। এসি চলছে তবুও ঘামছে।হাত পা কেমন যানি হালকা হালকা কাঁপছে।চোখগুলো বড় বড় হয়ে এসেছে।ভীতু চোখে বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে বললো,
—” আম্মুন সোনা তুমি বাহিরে যাও বাবাই আসছি।যাও।”
বাচ্চাটা বাবার বাদ্ধ মেয়ে। দেখেই বুঝতে পেরেছে অরিত্রান। বাবার কথা মত সে সামনে ঘুরে ছোট ছোট পা ফেলে কিছু দূর এগিয়ে যেতেই অরিত্রান বললো,
—” বেবি যেও না।দাড়াও।”
বাচ্চাটা থামলো না।পিছনেও ঘুরে তাকালো না।অরিত্রান সে দিকে রিভলভার তাক করতেই আযমান চেঁচিয়ে উঠলো।বললো,
—” আম্মুন দাড়াও।”
বাবার কথা কানে যেতেই সে আবার ঘুরে তাকালো।তাকিয়ে থাকলো বাবার মুখের দিকে ।আযমানের জান যাচ্ছে যাচ্ছে অবস্থা।ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে তার।তার একমাত্র কলিজার মেয়ে আয়াত।এর কিছু হলে তার বউ শেষ।হঠাৎ করেই আযমানের মনে পরে আয়ানা!!ও নিশ্চুয়ই এসেছে।কথাটা ভেবেই সে চোখবুজে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বললো,

—” ও নো।”
অরিত্রান আযমানকে দেখছে।তার বেশ মজা লাগছে।এতক্ষণ যাকে সিংহ মনে হয়েছে এখন তাকে অরিত্রানের বিড়ালো মনে হচ্ছে না।ভয়ে আযমানের বুক কাপঁছে। হৃৎপিন্ড ধাক ধাক করছে।সে জানে অরিত্রান তাকে বাদে তার কাছের মানুষের ক্ষতি করবে।আয়ানা সাপ্তাহে তিনদিন আযমানের জন্য খাবার নিয়ে আসে অফিসে।বাকি দু’দিন আযমান বাসায় যায় খেতে।আজো খাবার নিয়েই এসেছে।অরিত্রান এত দ্রুত এসেছে যে আযমান কিছু বলতে বা নিষেধ করতেই পারলো না।আযমান মনে মনে দোয়া করছে আয়ানা যাতে রুমে না আসে।অরিত্রান বাঁকা হাসছে।এক হাতের আঙ্গুল দিয়ে কপালের চুলগুলো পিছনে ঠেলে সে বললো,
—” আপনাকে সিংহ মনে করেছিলাম।ভেবে ছিলাম এক জঙ্গলে দুই সিংহ কিভাবে থাকতে পারে??অদ্ভুত ভাবে এটাও ভেবেছি আপনি আমার মত।কিন্তু এটা সত্য নয়।তার কারন এই ভীতূ চেহারা।”
কথাগুলো বলে অরিত্রান শরীর দুলিয়ে হেসে উঠে।তার হাসি দেখে আযমানের মেয়েও সামনের হাত বের করে হেসে উঠে।হাসার তালে তার নরম ঝুলন্ত গাল গুলো আরো ঝুলতে শুরু করে।অরিত্রান হাসি থামিয়ে দিলো।তাকিয়ে থাকলো আয়াতের দিকে।কি মিষ্টি করে হাসে মেয়েটা।অরিত্রানের ইচ্ছে করছে কাছে গিয়ে কপালের চুলগুলো ছুঁয়ে দিতে।অরিত্রান কয়েক পা এগিয়ে যেতেই আযমান চেঁচিয়ে উঠলো, ধরা গলায় বললো,
—” মিস্টার অরিত্রান আমার মেয়ের দিকে যাবেন না।একদম না।”
অরিত্রান থমকে দাড়ালো।আযমানের দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো।ভয়ে তার অবস্থা করুন।কাঁপছে থরথর করে।সাদা শার্ট ভিঁজে গেছে।হাত বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে।কপালের চুলগুলোর খাঁজে খাঁজে ঘাম।সে ঘামের কারনে তার চুলগুলো ভেঁজে একাকার অবস্থা।ভয়ে মুখটা ছোট হয়ে এসেছে।জিহ্বা দিয়ে বার বার শুকনো ঠোঁটজোড়া ভিঁজিয়ে চলেছে সে।অরিত্রানের এবার হাসি ফেলো না।অদ্ভুত লাগতে লাগলো।বাবারা বুঝি এমনই হয়!!কিছুক্ষণ আগে নিজের জীবন ঝুঁকিতে ছিলো।তখন তো গলা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।আর এখন মেয়ের বেলায় এত ভীতূ!!অরিত্রান ঠোঁটের উপর হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
—” আপনার আর আমার মাঝে পার্থক্য কি যানেন??”
আযমানের ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আসছে।এত যানার ইচ্ছে তার নেই।সে মেয়েকে কোলে নিতে পারলেই বাঁচে।কিভাবে নিবে সেটাই ভাবছে সে।অরিত্রান আবার বললো,
—” আপনার দূর্বলতা আছে।কিন্তু আমার নেই।বাচ্চাটা কি আসাধারন কিউট।তাই না??”
আযমান ভয়ে ভয়ে ঢোক গিলে বললো,
—” দেখুন আপনার সাথে আমার সমস্যা।দু’জনে বুঝাপড়া করবো।আমার বাবুকে এর মাঝে একদম টানবেন না।প্লিজজজ।আমার মেয়েকে যেতে দিন।”
—” নো নেভার। ও এখানেই থাকুক।আই লাইক দিস বেবি গার্ল।”
আযমান বুঝতে পেরেছে অরিত্রান কেনো এমন করছে।অরিত্রানকে সে খুব ভালো করেই চিনে।না জানি এখন কি করে??যদি shoot করে দেয়??নো।আযমান আল্লাহকে ডাকছে।ভয়ে তার কলিজা শুকিয়ে আসছে।মনে মনে দোয়া করছে আয়ানা যাতে এখন না আসে।অরিত্রান আবার মাথা ঝাঁকিয়ে হেসে উঠে।তারপর বললো,
—” ভয় লাগছে না??”
—” দেখুন ভালো হবে না কিন্তু।আমার মেয়েকে যেতে দিন।”
—” খারাপ কি হবে দেখি??”
ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো অরিত্রান। আযমান কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজার দিক থেকে কেউ বলে উঠলো,
—” আয়ুপাখি মাম্মামকে রেখে চলে এলে??ত…”
আয়ানা কথাটা বলতে বলতেই থমকে দাড়ায়।অরিত্রানকে দেখে সে লাজুক একটা হাসি দিয়ে আবার বললো,
—” সরি সরি।আপনারা কি বিজি??আসলে এখন তো লাঞ্চ টাইম।তাই চলে এসেছি। সরি।আয়ুপাখি চলো বাবাই বিজি।”
আয়াত মায়ের কথায় এগিয়ে গেলো না।বাবাই বলেছে দাড়াতে তাই সে দাঁড়িয়ে আছে।আয়ানা আরো দু’পা এগিয়ে যায়।অরিত্রানের হাতে রিভলভার দেখে আৎকে উঠে আয়ানা।ভয়াত্নক চোখে উচ্চশব্দে বলে উঠে,

—” কে আপনি??”
অরিত্রান জবাব দিলো না।পাশে থাকা বিশাল সাদা সোফায় সে বসে পড়লো। পায়ের উপর পা দিয়ে রিভলভার ঘুরাতে শুরু করলো।আয়ানা আয়াতের কাছে আসতে চাইতেই অরিত্রান বললো,
—” মিসেস আযমান যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন সেখানেই থাকেন।এক পা ও এদিক সেদিক না।আর আযমান শেখের তো একটা না দু, দুটো বিশাল দূর্বলতা আছে দেখছি।বউ আর বাচ্চা!!গুড ভেরী গুড।”
অরিত্রান নিচের দিকে তাকিয়ে রিভলভার ঘুড়াচ্ছে আর কথা গুলো বলছে।আয়ানার দিকে সে একবারো তাকায়নি।আযমান পরেছে মহা বিপদে।এতক্ষণ মেয়ে ছিলো এখন বউ ও চলে এলো।দু’জনকে একসাথে কিভাবে বাঁচাবে?? কথাটা ভাবছে সে।আযমান নিজের চুলগুলো দু’হাতে পিছনে টেনে ধরলো।আয়ানা কেঁদে দিলো।ভয়ে তার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।অশ্রু সিক্ত চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে সে।মেয়ে তো গভীর ভাবে বাবাকে দেখছে।তার আর কোনো দিকে তেমন মনোযোগ নেই।অরিত্রান আয়ানার কান্ডে প্রচণ্ড রকমে চমকায়।সাথে বিরক্তি ফুটে উঠে তার চোখেমুখে।আয়ানাকে উদ্দেশ্য করে সে বলে উঠে,
—” কান্নার কিছু হয়েছে এখনো??এমন কান্না কেনো করছেন??আপনারা মেয়েরা কি কান্না ছাড়া কিছু পারেন না নাকি!!জাস্ট ডিজগাস্টিং।যখন তখন ন্যাকামি শুরু। ওহ গড।মেয়ে জাতিকে আসলে কি দিয়ে তৈরি করেছেন??”
আয়ানা থামলো না।কান্না করতে করতেই বললো,
—” আপনি কে??রিভলভার নিয়ে কেনো এসেছেন??আমাদের ছেড়ে দেন।”
—” আমি কে তা জানার প্রয়োজন নেই।রিভলভার এনেছি shoot করতে।তাও আবার আপনার husband কে।তবে এখন মনে হচ্ছে তাকে মেরে লাভ নেই।আপনাকে বা এই বেবি গার্লকে উড়িয়ে দিলেই কাজ হয়ে যাবে।আই এম রাইট মিস্টার আযমান শেখ!!”
অরিত্রান বাঁকা ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালো আযমানের দিকে।অরিত্রানের কথা শুনে বুক কেঁপে উঠেছে আয়ানার।আযমান ভেবে পাচ্ছে না কি করবে।আয়াত অনেকসময় নিয়ে সবাইকে গভীর ভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছে।সব কিছুর উর্ধ্বে তার রিভলভারটা পছন্দ হয়েছে।কালো রিভলভারের মাথার দিকে শোনালি কারুকাজ করা।তার কাছে এটা খেলার সামগ্রী মনে হচ্ছে। খুশিতে তার চোখমুখ চকচক করে উঠেছে।ছোট ছোট পা ফেলে সে অরিত্রানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আয়ানা কেঁদে কেঁদে তাকে থামাতে চাচ্ছে কিন্তু নিজের জায়গা থেকে নড়লে যদি shoot করে দেয় সে ভয়ে এগিয়ে যেতে পারছে না।আযমান নিজের ফোনটা চোখবুলিয়ে খুঁজছে।পুলিশকে কল করলে ভালো হতো।আয়াত অরিত্রানের সামনে এসে
নিজের আমটা তার দিকে এগিয়ে দিলো

।অরিত্রান বিস্ময়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।আয়াত দাতঁ বের করে হেসে বললো,
—” এটা নিয়ে আমাকে ওটা দেও।”
অরিত্রান নিজের রিভলভারের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে আয়াতের দিকে তাকালো।কিছু একটা ভেবে রিভলভার নিজের প্যান্টের পিছনে গুঁজে রেখে দিলো।আযমান অবাক।মহা আবাক হয়ে সে তাকিয়ে আছে অরিত্রানের দিকে।সে জানে অরিত্রান দয়ামায়া হীন মানুষ।সে হিসেবে তার এখন অন্যকিছু করার কথা।কিন্তু সে কি করছে??রিভলভার লুকানোর ব্যাপারটা তার কাছে অদ্ভুত লাগছে।অরিত্রান এবার চোখ তুলে আযমানের দিকে তাকালো।আযমান এখনো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।আয়ানা কালো লালের সংমিশ্রণের শাড়ি পড়েছে।মাথায় কালো হেজাব।চোখ ভর্তি পানি।অরিত্রানের হঠাৎ করেই দুইজন নারীর কথা মনে পড়ে গেছে।একজন তার মা।আর একজন তার কেউ না।তবুও তার প্রতিচ্ছবি তার চোখে ভেসে উঠেছে।ফুফিঁয়ে ফুফিঁয়ে সেই কান্না মাখা মুখশ্রী
অরিত্রান চোখ ফিরিয়ে উঠে দাড়ালো।পুরোনো কথা মনে পরেগেছে তার।বুকের ভেতরে কিছু একটা জ্বলে উঠেছে।অরিত্রান বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে আযমান প্রচণ্ড ভাবে অবাক।বাচ্চাটা ঠোঁট উল্টে দাঁড়িয়ে আছে।অরিত্রান কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে এসে হাটুগেড়ে বসে পড়ে আয়াতের সামনে।আয়াত খিলখিল করে হেসে উঠে।সে হাসি দেখে অরিত্রানের ঠোঁটেও হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠে।অরিত্রান ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে আয়াতের কপালের ছোট চুলগুলো সরিয়ে দিলো।আয়াত আমটা নিচে ফেলে ফ্রকে নিজের হাত মুছে নিয়ে অরিত্রানের চুলগুলো ছুঁয়ে দিলো।হেসে অরিত্রান বেড়িয়ে যেতে নেয়।আযমান বললো,
—” আপনার ডিজাইনটা আমি করবো।”
অরিত্রান মাথা ঘুরিয়ে বললো,
—” আইনগত অনুমতি নিয়ে কাল আমার লোক আপনার কেবিনে আসবে।আশা করি এর পরে আর সমস্যা হবে না।”
অরিত্রান বেরিয়ে গেলো।কিছু দীর্ঘশ্বাস সঙ্গে নিয়ে।বাবা মা আর মেয়ে।তারাও বাবা মা আর সে ছিলো।তিন তিন কত মিল।আজ এদের কাউকে মেরে দিলে সত্যি ওই দু’জনের কাছে সে অপরাধী হয়ে যেতো।অরিত্রান চমকে ভাবছে তার মাঝে অনুভুতিরা হঠাৎ কাজ কেনো করছে??অদ্ভুত ভাবে সে অবাক।তারা কত ভয় পাচ্ছিলো।তবে নিজের জন্য নয়।একে অপরের জন্য।ভালোবাসা থাকলে বুঝি ভয়টাও থাকে??এটাই কি ভালোবাসা??ভয়ের অপর নাম কি ভালোবাসা??
আযমান মেয়েকে কোলে তুলে নিলো।অসংখ্য চুমু দিলো তার গালে।মেয়েও বাবাইকে চুমু দিলো।আয়ানার অবস্থা খারাপ।ভয়ে তো সে শেষ।বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে।আযমান হেসে তাকালো তার দিকে।বললো,
—” কান্না করছ কেনো আয়ুজান??কিছু হয় নি আমাদের।”
আয়ানা কেঁদে কেঁদে বললো,
—” আমি তো খুব ভয় পেয়েগেছি। আগে ও একবার এক লোককে আপনার দিকে রিভলভার তাক করতে দেখেছি।ভয়ে আত্না কেঁপে উঠেছে আমার।তখন না হয় পুলিশ এসে পড়েছিলো।এখন কি করতাম।আর আয়ুপাখি ছিলো সেটার জন্যে ভয় লাগছিলো তিব্র।”
আয়ানা আবার কেঁদে দেয়।আযমান আয়ানাকে একহাতে টেনে মেয়েকে বাম হাতের ভাঁজে নিয়ে ডান হাতে আয়ানার চোখমুছে দেয়।আয়াত ও এগিয়ে নিজের হাত বাড়িয়ে মায়ের চোখের পানি মুছে দেয়।সাথে খিলখিল করে হেসে উঠে।পৃথিবীর সব কিছুই তার মজা লাগে।বাবা ভক্ত সে।বাবা যা করে সেও তাই করে।বাবা যা করতে বলে গুড গার্লের মত সে তাই করে।বাবা বলতে অজ্ঞান সে।আযমান সোফায় বসে।মেয়েকে পাশে বসিয়ে আম কাটে।ছোট একটা টুকরো আয়াতের হাতে দেয়।আয়ানাকেও দেয়।তবে সে খাবে না।মাথা ঘুরিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন সে।আয়ানা বললো,

—” কত খারাপ লোক সে।অন্যায় ভাবে আপনাকে দিয়ে ডিজাইন করাতে চাচ্ছে। পুলিশে রিপোর্ট করতে হবে।আপনি এখনই করেন।কল করেন।”
—” লাভ নেই।”
আয়ানা ভ্রুকুঁচকে বললো,
—” কেনো??”
—” অরিত্রান খান সে।পুলিশকে পকেটে নিয়ে ঘুরে।”
—” মানে??”
—” তুমি বুঝবে না।তবে অদ্ভুত ব্যাপার কি জানো??আমি উনার সম্পর্কে যা শুনেছি আজ কেনো যেনো মিথ্যা মনে হচ্ছে সে কথাগুলো।”
—” কি শুনেছেন??”
—” দয়ামায়াহীন মানুষ সে।অনুভুতি শূন্য সে।আসলে কিন্তু আমার তা মনে হচ্ছে না।”
—” আমার তো তাই মনে হচ্ছে। তা না হলে রিভলভার নিয়ে আপনার মাথায় তাক কেনো করেছিলো??”
—” তুমি সব দেখোনি।আমি দেখেছি।যতটা রাগ নিয়ে আমাকে মারতে এসেছিলো ততটা রাগ নিয়ে সে বেড়িয়ে যায় নি।আর অরিত্রান খান কাউকে ছেড়েদেয় না।সেখানে আমাদের ক্ষতি না করেই চলেগেলো??সব খারাপ মানুষের মাঝেই একজন ভালো মানুষ লুকিয়ে থাকে।সব আহাম্মকের মাঝে একজন বীর থাকে।লোকটাকে সবাই যতটা খারাপ ভাবে ততটা সে না।তা না হলে রিভলভার লুকিয়ে ফেলতো না।”
—” ওটা তো আয়ুপাখি চেয়েছে তাই লুকিয়ে ফেলেছে।”
—” সেটাই তো।আয়ুপাখি বাচ্চা তাই সে রিভলভার লুকিয়েছে।এর থেকে প্রমাণিত সে অতটা নির্দয় নয়।পাথরের আড়ালে যেমন কোমল মাটি ডাকা পড়ে ঠিক একুই ভাবে অরিত্রান খানের কোমলতাও ঢেকে পড়েছে।”
আয়ানা ভাত প্লেটে নিতে নিতে বললো,
—” আমি অতশত বুঝি না।আমার লোকটাকে মোটেও ভালো লাগে নি।সৌন্দর্যে মণ্ডিত হলে কি হবে চেহারায় কেমন যেনো হিংস্র ভাব।মনে হয় এই বুঝি উড়িয়ে দিবে।ভয়ে তো আমি শেষ।”

আযমান মেয়েকে কোলে নিয়ে বসলো।তারপর বললো,
—” ভয় তো আমিও পেয়েছি।এমন কিছু করবে ভাবি নি।তবে আমার কাছে লোকটাকে খুবই ইন্টেরেস্টিং লেগেছে।অদ্ভুত ব্যক্তিত্ব।শুনে যতটুকু ফালতু মনে হয়েছে দেখে ততটুকু ইন্টেরেস্টিং মনে হচ্ছে।”
—” রাখেন আপনার ইন্টেরেস্ট।আপনি নিজের হাতে খান।সাথে আপনার মেয়েকেও খাওয়ান।আমি পারবো না আজ।”
আযমান তাকিয়ে থাকে আয়ানার দিকে।কি মনে করে মেয়ের কানে কানে কিছু বলে।তারপর বাবা মেয়ে একসাথে বলে,
—” তাহলে আমরা খাবো না।”
আয়ানার রাগ লাগছে।এত বড় ছেলেকে নিজের হাতে খাওয়াতে হচ্ছে তার।তবে দুপুরের খাবার সে নিজের হাতে বাপ মেয়েকে খাইয়ে দেয়।আর রাতে আযমান তাকে আর আয়ুপাখিকে খাইয়ে দেয়।এটাই তাদের ছোট পরিবারের নিয়ম।আযমান আর আয়ুপাখি মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।আয়ানা বিরক্তির সাথে ভাত নিয়ে আযমানের মুখের সামনে ধরে।আযমান একগাল হেসে বলে,
—” ভালোবাসি আয়ুজান।”
আয়াতের মুখে ভাত দিতেই সেও বলে উঠে,
—” ভালোবাসি আয়ুজান।”
তারপরে বাবার সাথে মিলে খিলখিল করে হেসে উঠে।আর বাবার খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে ঠোঁট গোল করে ভ্রুকুঁচকে বললো,
—” ওহ্ লাগে বাবাই।”
আযমান হাসে।মেয়ের জন্য তাকে দাড়ি shaven করতে হয়।আযমানের চাপা দাড়ি আয়ানার খুবই প্রিয়।তাই সে দাড়ি shaven করতে চায় না।তবুও মেয়ের হাতে ব্যাথা লাগে তাই আয়ানা নিজে করে দেয়।যেদিন করে আয়ুপাখি সেদিন নিজের গাল বাবার সাথে ঘষে আর খিল খিল করে হাসে।আযমান মেয়ের হাত নিয়ে নিজের ঠোঁটের উপর রাখে।একটা চুমু দিয়ে বললো,
—” এবার আর ব্যাথা লাগে আম্মুন সোনার??”
আয়াত দাঁত বের করে শুধু হাসে।গাল নড়ে তার।বাবা মেয়ের কান্ড দেখে আয়ানা ও হাসে।

________________________________🍁🍁🍁
অরিত্রান শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে আছে।শাওয়ারের পানি টপটপ করে তার মাথা বেয়ে শরীর ছুঁয়ে গড়িয়ে পরছে।তাদেরও ছিলো ছোট পরিবার।ছিলো বট গাছের মত বাবা,মমতাময়ী মা,আর সে।তাদেরও সুখি পরিবার ছিলো।ছিলো অভাব।কিন্তু তার মাঝেও ছিলো অফুরন্ত ভালোবাসা।আবেগ অনুভুতিতে ভরা সংসার।মায়ের কোমল হাত ছিলো মাথায়।বাবার কোল ছিলো মাথা রাখার মত।অর্থ ছিলো না।কিন্তু ভালোবাসা ছিলো।কথাগুলো ভেবেই অরিত্রান চোখ খুলে তাকায়।কাঁচের তৈরি ওয়াসরুমের চারপাশে ঝাপসা হয়ে আছে।একটা গ্লাসে অরিত্রান হাত দিয়ে ঝাপসা ভাব সরিয়ে নিজেকে দেখে।নিজের চোখে চোখ রেখে সে বলে,
—” টাকা ছাড়া দুনিয়া চলে নাকি??চলে না।এসব আবেগ অনুভুতি,ভালোবাসার কোনো দাম নেই টাকার কাছে।ভালোবাসা দিয়ে পেট ভরে না।পেট ভরাতে খাবার লাগে।টাকা, অর্থ,সম্পদ,ক্ষমতায়ই দুনিয়া।
কিছু দীর্ঘশ্বাস নিজের মাঝে লুকিয়ে অরিত্রান বেড়িয়ে আসে।মাথার চুল মুছতে মুছতে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে রিমন বসে আছে।মুহূর্তেই ভ্রুজোড়া কুঁচকে আসে তার।চুল মুছতে মুছতে প্রশ্ন করে,
—” তুই আমার রুমে??”
রিমন মুখ গোমড়া করে বললো,
—” এখন কি তোর রুমে আসতে হলেও আমাকে অনুমতি নিতে হবে??তুই কি এখন আমার সামনেও অরিত্রান খান হয়ে থাকবি।”
অরিত্রান বুঝতে পেরেছে রিমন কোনো কারনে প্রচণ্ড রেগে আছে।তাই তার পাশে বসে বললো,
—” কুল। এই জীবনে তো তুই একমাত্র বন্ধু আমার।তোর সামনে অরিত্রান খান না শুধু অরিত্রান আসে।তা এত মাথা গরম কেনো তোর??অফিসে ঝামেলা হয়েছে কি??”
—” আজ থেকে আমি তোকে আপনি ডাকবো আর তুই আমাকে তুমি রাজি হলে বল??”
রাগটা তুঙ্গে।অরিত্রান বিরক্তি মুখে বললো,
—” ঠিক আছে রাজি।তা বলো কি হয়েছে??”

রিমন নড়েচড়ে বসে অরিত্রানের দিকে তাকালো।মনে মনে ভাবলো ছেলেটা কি বুঝলো না সে রেগে আছে??আশ্চর্য!! সে রাগি গলায় বললো,
—” ওয়াসেনাতের হাতটা ভেঙে দিয়েছেন কেনো??আপনি জানেন তার হাত কতক্ষানি ভেঙেছে??”
ওয়াসেনাত!! নামটা শুনেই অরিত্রান থমকে যায়।আজ সারা দিনে তার খবর নেওয়া হয় নি।ডাক্তারের সাথেও কথা হয় নি।পরক্ষনেই ভাবে সে কে যে তার খবর রাখবে সে??অরিত্রান যত এড়িয়ে চলতে চায় মেয়েটা তার মাথায় তত জায়গা করে নেয়।মেয়েটার নাম শুনলেই বুকের একপাশ কাঁপে তার।আচ্ছা তার কি কোনো রোগ হয়েছে??সে কি অসুস্থ?? বুকে কি কোনো সমস্যা হয়েছে??ডাক্তার দেখাতে হবে।ভালো নাম করা cardilologists দেখাতে হবে।তা না হলে এমন বুক কাঁপাকাঁপি নিয়ে হার্টঅ্যাক করবে নিশ্চিত।
.
.
#চলবে____________________