পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 10
রিমি হন হনিয়ে রুমে প্রবেশ করে।অরিত্রান ভ্রুকুঁচকে পিছনে ঘুরে তাকায়।ওয়াসেনাত ও তার দিকে তাকিয়ে আছে।রিমি অরিত্রানকে দেখে যেন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছে।হন হন করে তার সামনে এসে দাঁড়ায়। অরিত্রান পূর্বের নেয় ভ্রুকুঁচকে তাকিয়ে আছে।রিমি নিজের হাতের ফোনটা কানের কাছে নিয়ে বললো,
—” আঙ্কেল আমি একটু পরে আপনাকে কল করে ওয়াসুর সাথে কথা বলিয়ে দিচ্ছি। চিন্তা করবেন না। এখন রাখি।”
রিমি কল কেটে অরিত্রানের দিকে তাকায়।অরিত্রানের খুব স্বাভাবিক ভঙ্গি।রিমি নাক মুখ কুঁচকে বললো,
—” আপনি এখানে কি করছেন??আবার মারতে এসেছেন বুঝি??আশ্চর্য লোক তো আপনি!!মানুষকে কি মানুষ মনে হয় না??না কি আপনি নিজে মানুষ না??হুম!!কোনটা??”
অরিত্রান জবাব দিলো না।ওয়াসেনাতের দিকে মোড় ঘুরিয়ে সে তাকায়।ওয়াসেনাত আগের মতই একবার রিমিকে দেখে আবার একবার অরিত্রানকে দেখে।তবে তার এখন আর ভয় করছে না।শত হক রিমি চলে এসেছে বলে কথা।রিমির রাগ লাগছে।লোকটা তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না।রিমি এ পাশ থেকে ঘুরে ও পাশে চলে যায়।অরিত্রানের দিকে আঙ্গুল তাক করে সে বললো,
—” মতলব কি বলবেন??আজব লোক তো আপনি??আমার তো মনে হয় নিশ্চিয়ই পাগল টাগল হবেন।উঠে যান এখান থেকে।রুমের বাহিরে যান।আপনাকে যাতে আর কখনো ওয়াসুর আশেপাশে না দেখি!!”
অরিত্রান নিচের দিকে তাকিয়ে রাগ নিয়ন্ত্রণ করছে।এই মেয়ে তাকে এত কথা শুনাচ্ছে?? সাহস তো কম না!!তার এখন ইচ্ছে করছে খুন করে দিতে এই মেয়েকে।তবে সে কিছুই করবে না।যা করতে এসেছে তাই করতে পারছে না।বাকি গুলো তো আপাতত বাদ।অরিত্রান মনে মনে আউড়ায়,” সেদিনের ব্যবহারের জন্য আমি দুঃখীত।” আবার নিজে নিজে বললো,”না এভাবে বললে হবে না।বরং” আই এম স্যরি ” এটা ঠিক আছে।কিন্তু তার তো মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।সে কিভাবে বলবে তাই ভাবছে।
এর মাঝেই রিমি রেগে গেলো।চেঁচিয়ে উঠে বললো,
—” ওয়াডবয়, ওয়াডবয়… কোথায় গেলো সব।”
রিমিকে এভাবে চেঁচাতে দেখে অরিত্রান বললো,
—” চিৎকার চেঁচামেচি না করলে হচ্ছে না??ডিজগাস্টিং গার্ল।”
রিমির রাগ এবার তুঙ্গে।রাগে কটমট করে সে বললো,
—” আপনার সাহস তো কম না।আমাকে বলেন ডিজগাস্টিং গার্ল??আপনি কি হ্যা!!আপনি তো আস্ত একটা ডিজগাস্টিং মানুষ।নিজেকে কি অরিত্রান খান মনে করেন??শুনেন ওর মত এটেটিউড দেখালে ও হওয়া যায় না।বের হন??গেট লস্ট!!”
অরিত্রান মনে মনে হাসে।রিমির কথা থেকে এটা বুঝা যাচ্ছে রিমি তার অনেক বড় ফ্যান।তবে মেয়েটা রাগি বেশি।নিজের মত নিজে হতে চাইবে এমন বোকা অরিত্রান নয়।কথাটা মনে মনে বলে একটু বাঁকা হাসে।রিমি ভ্রু কুঁচকে তাকায়।লোকটাকে তার খুব পরিচিত পরিচিত মনে হয়।কিন্তু কোথায় দেখেছে সেটা মনে করতে পারছে না সে।আর বড় কথা সে মনে করতে চাচ্ছে না।তার তো বিশাল রাগের ভাণ্ডার আছে এই লোকের বিরুদ্ধে।তাই লোকটাকে সামনে দেখেই তার রাগ আরো বাড়ছে।রিমি আবার চিৎকার দিয়ে বললো,
—” ওয়াডবয় কি মরে গেলো না কি??ওয়াডবয়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়”
ওয়াসেনাত নিজের কানে বাম হাত দিয়ে এক চোখ বন্ধ করে আর এক চোখ খুলে তাকিয়ে আছে অরিত্রানের দিকে।অরিত্রান শান্ত ভাবে বসে আছে।কিছুটা বিরক্ত সে রিমির কাণ্ডকারখানায়। তাই বললো,
—” গলাটা ফ্রিতে পেয়েছ, তাই এত চিৎকার করার সাহস হচ্ছে। গলা বন্ধ হয়েগেলে আর এমন বাজে বিহেভ করতে পারবে না তুমি।আমার মনে হয় রোগীর রুমে sound pollution করা তোমার উঁচিত হচ্ছে না। I hope you understand.”
—” কি আমি sound pollution করি??কত বড় অপমান??বের হন বলছি। এক্ষনি বের হন রুম থেকে।”
রিমি ওয়াডবয় বলে চেঁচাতে চেঁচাতে বেড়িয়ে গেল।অরিত্রান কপালে ভাঁজ ফেলে কিছুসময় সেদিকে তাকিয়ে থেকে ওয়াসেনাতের দিকে তাকাল।ওয়াসেনাত এখনও আগের মত বাম হাতে কান চেপে আছে।অরিত্রান তাকিয়ে থাকে ওয়াসেনাতের দিকে।ওয়াসেনাত একটু বিব্রতবোধ করে ঠিক হয়ে বসে।অরিত্রান চোখের পালক না ফেলে তাকিয়ে থাকে ওয়াসেনাতের দিকে।এত দেখার কি আছে তাই ওয়াসেনাত বুঝতে পারছে না।কিছুসময় সে নিজে ও তাকিয়ে থেকে মুখ কুঁচকালো।অরিত্রান চোখ সরিয়ে নেয়।হাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
—” হাত কি ভেঙেছে??”
ওয়াসেনাত ভগ্নহৃদয় নিয়ে ঠোঁট উল্টে বললো,
—” ভাঙ্গা টাই কি স্বাভাবিক নয়??আপনি কি রুডলি চেপে ধরেছিলেন। জান বেড়িয়ে যাওয়ার মত ব্যাথা হচ্ছিলো যানেন?? মনে হচ্ছিল আমার হাতটা কেটে ফেলা হচ্ছে। আচ্ছা আপনার হাত কি তুলা দিয়ে বানিয়ে লোহায় চুবিয়ে দেওয়া হয়েছে??এত নরম হাতে কত শক্ত ব্যাথা দিয়েছেন আপনি??ওহহ্!!”
অরিত্রানের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। মেয়েটাকে সে গভীর ভাবে দেখছে।ঠোঁটজোড়ার কারনে অনেক মায়া মায়া লাগছে।অরিত্রান কি মেয়ে জাতির উপরে আসক্ত হচ্ছে?? কথাটা ভেবেই সে চোখ সরিয়ে ফেলে।মেয়ে জাতির মায়ায় পড়লে সে কখনো তার লক্ষে পৌঁছাতে পাড়বে না।তার এই অনিশ্চয়তার জীবনে সে কারো মায়ায় জড়াতে চায় না।অরিত্রান নিজের ফোন বের করলো।হয় তো কোন ব্যক্তিকে কল করেছে।ফোন কানে ধরে সে বললো,
—” ডক্টর সাইম NSC হসপিটালে একজন রোগী আছে আপনি কাল সকালে এসে তাকে দেখে যাবেন।হাত ভেঙেছে মেবি।সম্পূর্ন সুস্থ হওয়া চাই।এবং দ্রুত।”
অরিত্রান জবাবের অপেক্ষা না করে ফোনটা কেটে দিল।ভাবলেশহীন ভাবে ওয়াসেনাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
—” যে আসবে তাকে সব খুলে বলবে??কোথায় কোথায় ব্যাথা, কতটুকু ব্যাথা।বেস্ট ডক্টর সে।Bone specialised.”
ওয়াসেনাত তিক্ত চোখে তাকিয়ে থাকে অরিত্রানের দিকে।সাথে যোগ হয় একরাশ বিরক্তি আর হতাশা।লোকটা এমন কেনো??কোথায় মায়া মায়া করে একটু কথা বলবে।সরি বলবে।দুঃখ প্রকাশ করবে।মাফ চাইবে তা না আসছে specialised নিয়ে। টং।অরিত্রান উঠে দাড়াঁতে দাড়াতে বললো,
—” আমি কি তা হয় তো তুমি জানো না!!তবে সাবধান। আমি মোটেও ভালো মানুষ নই।দূরত্ব বজায় রাখবে আমার থেকে।”
ওয়াসেনাত চোখ বাঁকিয়ে তাকায়।তার খুব রাগ লাগছে।তবুও চুপ করে আছে।এই লোকটাকে তার হঠাৎ ভয় লাগে।আবার হঠাৎ মনে হয় লোকটা অতটা ভয়ের মানুষ না যতটা সে পাচ্ছে।আসলে কি এই লোক??এমন অদ্ভুত সব চিন্তা ওয়াসেনাতের মাথায় মাঝে মাঝেই ভর করে।রিমি ওয়াডবয় নিয়ে হাজির।রাগ দেখিয়ে তাদের ইশারা করে বললো,
—” এই লোকটাকে বের করে দেও!!দ্রুত!!”
লোকগুলো ভারী অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।তারপর এগিয়ে আসতে নেয়।অরিত্রান নিজের ডান হাত তুলে ইশারায় থামতে বলে।হাত দেখিয়ে থামতে বলায় ওয়াডবয় থেমে যায়।অরিত্রান ওয়াসেনাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
—” সেদিনের ব্যবহারের জন্য আমি regretfully.”
অরিত্রান দ্রুতগতিতে পা ফেলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।ওয়াসেনাত রিমি সহ সবাই অবাক।তবে ওয়াডবয়রা কিছু বুঝতে পারছে না তাই অবাক হচ্ছে। আর ওয়াসেনাত ভাবতে পাড়েনি লোকটা” দুঃখিত”এ কথাটা প্রকাশ করবে।রিমি এটেটিউড দেখে অবাক।আশ্চর্য লোক।
_______________________
চারদিকে গভীর রাতের ঘন কালো অন্ধকার।সেই অন্ধকারকে ছাঁপিয়ে আকাশ জুড়ে থালার মত চাঁদ আর মিটিমিটি তারা।গভীর রাতের শীতল বাতাসে কাঁপছে গাছপালা। প্রকৃতি ঢালছে প্রেম।হালকা বাতাসের ঝংকারে শিরশির করে কাঁপছে গাছের ঘন পল্লব।ঘন অন্ধকারে বিশাল চাঁদ নিজের আলোতে সব আলোকিত করছে।সেই চমৎকার আলোর নিচে বসে আছে অরিত্রান।নিড়িবিলি চুপচাপ একটা পরিবেশ।অরিত্রান গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে আছে।দৃষ্টি স্থির। সামনে দিগন্তজুড়া মাঠ।শীত শীত লাগলে ও অরিত্রানের শরীর থেকে উত্তাপ বের হচ্ছে। জীবনে উচ্চস্তরে যাওয়ার তিব্র ইচ্ছে তাকে অনুভুতি হীন করে তুলেছে।তার মাঝে কোনো অনুভুতি এখন আর কাজ করে না।করে শুধু কঠোরতা।আজ অদ্ভুত ভাবে তার হৃদয়ের কোনো এক স্তরে শূন্যতা বিরাজ করছে।গুটিশুটি মেরে হৃদয়ে কিছু একটা জায়গা করতে চাচ্ছে।প্রশান্তি নামের যে একটা শব্দ আছে এটা বহু বছর পরে আজ তার মনে হচ্ছে। দুঃখিত কথাটায় কি আসলেই এত জোড় এত power আছে!!অরিত্রান দীর্ঘশ্বাস নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ তাকে শিক্ষা দেয়।সে শিক্ষা নেয়ও।কিন্তু এই দুঃখিত পদক্ষেপ থেকে সে কিছুই শিখতে পাড়লো না।মেয়েটাকে দেখার পরে সব রাগ কোথায় চলে যায় সে জানে না।তার কেনো যেনো বড্ড মায়া মায়া লাগে মেয়েটাকে।মনে হয় মেয়েটার কষ্টে তারও বুকটা কাঁপে।এত মডেল, সুন্দরী,মেয়েদের সে দেখেছে।তাদের দেখে তো তার একবারের বেশি দু’বার ঘুরে তাকাতে ইচ্ছে হয় নি।মনে হয়েছে সব এক।তবে কেনো আজ মনে হচ্ছে পৃথিবীর সকল প্রানীর ভিন্ন অস্তিত্ব আছে।ছোট একটা বোকা, বাচ্চা মেয়েকে দেখে তার এই চিন্তাশক্তি কাজ করছে!!তার তো আগে পিছে মেয়েদের লাইন লেগেই থাকে।তবে সবার তো তার স্টাইল,পার্সোনালিটি আর অর্থের প্রতি লোভ।এই মেয়ে ও কি তেমনই??দ্রুতই জবাব আসে” না”।এই ‘না’ শব্দদয় ভাবতে ভাবতেই অরিত্রান নিজের হোটেলের সামনে এসে পরে।
রিমন নিজের রুমে পাইচারি করছে।অরিত্রান নিজের রুমে নেই এটা সে জানে।তার চিন্তা হচ্ছে খুব।ছেলেটা এমন কেনো??নিশ্চুয়ই খুন করতে বা কারো মাথা কাটতে গিয়েছে।তা না হলে এত রাতে সে রুমে না থেকে গেলো কই??রিমন নিজের রুমের দরজা খোলা রেখেছে।অরিত্রান তার রুমের পাশ কেটে যাওয়ার সময় তার জুতোর শব্দ রিমনের কানে এসে বারি খায়।রিমন দ্রুত পা চালিয়ে অরিত্রানের সামনে এসে দাড়ায়।অরিত্রান পকেটে হাত দিয়ে ভ্রুজোড়াকে কিঞ্চিৎ বাঁকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে বললো,
—” ঘুমোস নি??”
রিমন সন্দেহ চোখে তাকিয়ে অরিত্রানের পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নেয়।তারপর বললো,
—” তুই আজ খুনখারাবি করছ নাই??শালা আমি তো ভয়ে শেষ।ভাবলাম তুই খুনটুন করে পেলছস।তোর তো এগুলোই ভালো লাগে তাই না!!কিন্তু রক্ত কই??”
অরিত্রান স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে থেকে বললো,
—” এমন কিছুই করিনি।তাই ফাউল কথা বন্ধ কর রিমন।তুই দিন দিন নিজের লেভেল ভুলে গোয়েন্দাগিরি করছিস কেনো??যা ঘুমাতে যা।”
রিমন চুপসে যায়।অরিত্রান সব কিছুতে এত স্বাভাবিক কেনো??নিশ্চুয়ই কিছু একটা হয়েছে।অরিত্রানের অতি স্বাভাবিকতা মানেই গোলমাল হে ভাই সাব গোলমালহে।রিমন একটু ঝুঁকে বললো,
—” এত রাতে কই গেলি দোস্ত বলবি??”
অরিত্রান সরু চোখে তাকাতেই রিমন দ্রুত বললো,
—” তা না হলে ঘুম হবে না দোস্ত।”
—” হসপিটালে।”
কথাটা বলেই অরিত্রান দ্রুত পা চালিয়ে রিমনকে ক্রস করে চলেগেলো।রিমন আহাম্মকের মত তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছে হসপিটালে কেনো গেলো???হোয়াই?? রহস্য রহস্য গন্ধ পাচ্ছে সে।
_____________________
সকাল ৮টা ছুঁই ছুঁই। মিষ্টি একটা রোদের প্রথম প্রলয়ে ঘুম ভেঙে গেলো ওয়াসেনাতের।কিছুক্ষণ বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে থাকলো সে।কাল সারা রাত তার তেমন ঘুম হলো না।মাথায় শুধু অরিত্রানের ঠান্ডা ঠান্ডা গলার মিষ্টি মিষ্টি কথা গুলো ঘুরছিলো।অরিত্রানকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে তার গভীর রাতটা হঠাৎ করেই ভোর হয়েগেছে। তবুও ঘুমের ছিটে ফোঁটা তার চোখের পাতায় ধরা দিলো না।অনেক পরেই অল্প ঘুম হলো।বালিশ থেকে মুখ তুলে ধীরে ধীরে উঠে বসলো সে।ঘড়িটা সামনেই ঝুঁলে আছে।যাতে এখনো ৮টা বাজে নি।ওয়াসেনাত চারপাশে চোখ বুলিয়ে রিমিকে খুঁজে।মাথাটা ভার ভার লাগছে এক কাপ গরম কফি পেলে ভালো হয়।কথাটা ভাবতে ভাবতেই বিছানা ছেড়ে নিজের ভাঙা হাত নিয়ে সে উঠতে চায়।ঠিক সেই মুহূর্তে একজন ডাক্তারের এ্যাফ্রোন পরিহিত ব্যক্তি রুমে ডুকে পরে।তার পিছনে পিছনে খবরের কাগজ হাতে রিমিও ডুকে পরে।ওয়াসেনাত চৌখা চোখে তাকিয়ে থাকে কিছুসময়। লোকটা টুল টেনে বেডের পাশে বসে পরে।চোখেমুখে গাম্ভীর্য ভাব ফুটিয়ে তিনি বললো,
—” আমি ডক্টর সাইদ।আমাকে কল করে আপনার চিকিৎসা করার কথা বলা হয়েছে।হাতটা একটু দেখান??”
ওয়াসেনাতকে দেখাতে বলে সে নিজেই হাত বাড়িয়ে হাতের প্লাস্টার কাঁচি দিয়ে কেটে দেখা শুরু করে।আকর্ষীক ভাবে সব ঘটছে দেখে ওয়াসেনাত রিমি দু’জনেই হা করে তাকিয়ে আছে একজন আর একজনের দিকে।ডক্টর খুব অভিজ্ঞ ভঙ্গিতে হাত এদিক ওদিক ঘুরিয়ে দেখছে আর কলম দিয়ে কাগজে কিসব লিখছে।ওয়াসেনাতের এখন অরিত্রানের উপর প্রচণ্ড রাগ লাগছে।লোকটা ইচ্ছে করে এই ডাক্তারকে এখানে আসতে বলেছে যাতে এই লোক তার হাতে আরো ব্যাথা দেয়।ওয়াসেনাত রাগে দাঁত মুখ খিঁচে বালিশে ঠেস দিয়ে বিড়বিড় করছে”খারাপ লোক একটা”
_________________________
রিভলভার হাতে দাড়িয়ে আছে অরিত্রান। রিভলভারের মাথা তাক করে রেখেছে আযমান শেখের মাথার মাঝ বরাবর।আযমান স্থির দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে অরিত্রানের সবুজ চোখের মাঝ বরাবর।অরিত্রান সত্যি অবাক।এই প্রথম তার মনে হচ্ছে কেউ তার মত দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে পারে,তার সাথে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা রাখে,সিংহের সাথে সিংহের যেমন লড়াই হওয়া উচিঁত তার এখন তেমনটাই মনে হচ্ছে। বেশ মজা লাগছে তার।দারূন অভিজ্ঞতা হচ্ছে তার।অরিত্রান বাঁকা হেসে বললো,
—” আমি মুগ্ধ আপনার পার্সোনালিটি দেখে।”
আযমান পাল্টা জবাব দেয়।বলে,
—” আমি বিরক্ত আপনাকে দেখে।বিনা অনুমতিতে আমার অফিসে এসে আমার মাথায় রিভলভার ঠেকানোর সাহস আপনি কোথায় পেয়েছেন??এটা কোন ধরনের ম্যানের্স??
অরিত্রান শব্দ করে হেসে বললো,
—” আমার কারখানার ডিজাইন করবেন না এটা কোন ধরনের ম্যানের্স মিস্টার শেখ??”
—” আমি প্রথমেই বলেছি আমি Immoral act করি না।”
অরিত্রান আবার ভয়ংকর হাসি দিয়ে বললো,
—” জীবনের বিনিময়েও না।”
—” না।ইঞ্জিনিয়ার আমি আপনার মত লোকের কাজ করার জন্য হয়নি।”
অরিত্রান এবার রেগে তাকালো।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
—” আপনি কি জানেন না আমি কে??”
আযমান স্বাভাবিক ভাবে পকেটে হাত রেখে গলা উঁচিয়ে বললো,
—” অরিত্রান খান।বিশাল মাপের মানুষ।সবই জানি।কিন্তু আপনি কোনো অনুমতি ছাড়া আমাকে দিয়ে ডিজাইন করাতে পারবেন না এটা আপনিও জানেন শুধু শুধু কেনো ঝামেলা ক্রিয়েট করছেন বলেন??”
অরিত্রান আগের মত তাকিয়ে থাকে।আযমান শেখ।নাম করা আর্কিটেকচার।সব উন্নতমানের ডিজাইন গুলো আযমান খুবি নিখুঁত এবং ভালো মানের করে তৈরি করে।তাই এর চাহিদা খুবই বেশি।অরিত্রানের একটা নতুন কারখানার ডিজাইন তাকে করতে বলা হয়েছে।কিন্তু আইনগত কোনো ডকুমেন্ট বা কোনো অনুমোদন না থাকায় আযমান ডিজাইন করবে না বলে তা রিজেক্ট করেছে।কথাটা অরিত্রানের কানে আসতেই অরিত্রান অবাক।এত বড় কলিজা কার যে অরিত্রানের প্রজেক্ট রিজেক্ট করে। তাই নিজ চোখে সে দেখতে চলে এসেছে কে এই আযমান শেখ??আশ্চর্য ভাবে সে সত্যি অবাক।এত বড় কলিজা তার নিজের আছে বলেই সে জানতো।কিন্তু তার ধারনা ভুল প্রমান করে আযমান এখনো রিভলভার নিজের মাথায় ঠেকানো অবস্থায়ও স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।কোনো ভয় তার চোখেমুখে নেই।অরিত্রান বহু আগেই বুঝতে পেরেছে এই লোক তার কথা কিছুতেই মানবে না।তাই shoot করে দিবে বলেই ঠিক করেছে সে।একটা জঙ্গলে দু’জন রাজা হয় না।রিভলভার চাপতে যাবে ঠিক সেই সময় তার কানে ভেসে এলো একটা মিষ্টি কোকিলের মত ডাক।ছোট গলার মিষ্টি সুরে কেউ বলছে,
—” বাবাই আমি চলে এসেছি।আমি চলে এসেছি।আম। আম নিয়ে। আ”
.
.
#চলবে_________