পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 07
বেঞ্চের উপড় বসে আছে ওয়াসেনাত আর রিমি।দু’জনের চোখেমুখেই চিন্তার ছাপ।ওয়াসেনাত চিন্তিত মুখেই বললো,
—” আমার কি মনে হয় যানছ??”
—” না বললে যানবো কেমনে??আগে বল।”
ওয়াসেনাত বেঞ্চ ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। খুবই ব্যস্ত ভঙিতে হাত নাড়ায়।তারপর বলে,
—” এই যে নুহাশ আর মাহির আছে না!!এদের আমার মোটেও সুবিধার মনে হয় না।মনে হয় গভীর জলের মাছ।ধরতে চাইলেও ধরা যাবে না।”
রিমি চোখ ঘুরিয়ে বললো,
—” তোর হঠাৎ এটা মনে হচ্ছে কেনো??”
—” কারন ওই নুহাশ সাহেব টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলার সময় রিমন বলেছে যেখানে আমাদের জানা মতে তার নাম মাহির রাইট!!”
রিমি উতফুল্লু হয়ে বললো,
—” আরে বাচ এটা তো মাথাই এলো না।হ্যা তো।উনার নাম তো মাহির।কিন্তু রিমন কেনো বলা হলো??”
—” সেটাই দোস্ত।এদের কিন্তু মোটেও স্টুডেন্ট টাইপ লাগে না।কেমন গম্ভীর টাইপের ওই নুহাশ সাহেব।আকড়ু টাইপের।হাসা নেই, কথা নেই,চুপচাপ থাকে।অনেক রহস্য তার মধ্যে।একটা মানুষ এতটা রোবো টাইপ কেমনে হয় বল??”
—” হুম তা তো বটে।আমাদের কি করা উঁচিত এখন??”
ওয়াসেনাত ফস্ করে বললো,
—” ইনভেস্টিগেশন করা উঁচিত।”
—” মানে!!!”
—” হুম এদের ফলো করতে হবে।কোথায় যায়, কোথায় থাকে কি করে।ফ্যামিলি সম্পর্কেও যানতে হবে বুঝলি!!”
রিমি সংঙ্কিন্য হয়ে বললো,
—” তোর বাপ জার্নালিস্ট তাই তোর মাথাও এইসব আজাইরা ইনভেস্টিগেশন, রহস্য,সন্দেহ এগুলো ঘুরে।বাদ দে তো।এরা জা মন চায় তাই হক।আমাদের বাপের কি!!”
—” আমাদের অনেক কিছু দোস্ত।হতে পারে এরা বোমাবাজি করতে ভার্সিটিতে আসছে।দোস্ত অনুসন্ধান চালাতেই হবে।”
রিমি বিড়বিড় করে বলে,
—” আইছে যাসুস একটা।বাপ যেমন মেয়েও তেমন।সব কিছুতে সন্দেহ।”
ওয়াসেনাত ভ্রুকুঁচকে বললো,
—” কিছু বলছিস রিমি??”
রিমি হালকা হেসে বললো,
—” না না।আচ্ছা তা কিভাবে যাসুসি করবি বল।”
—” আগে বাসার ঠিকানা যোগাড় করতে হবে।আজকে ওদের ফলো করবো।তারপর কেল্লাফতে।”
ওয়াসেনাত একবিস্তিন্য হাসি হাসে।রিমি কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকে।তার মনে হচ্ছে ওয়াসেনাত ধরেই ফেলেছে ওরা দুজনেই বোমাবাজ,খারাপ,গুন্ডা টাইপের লোক।
____________________
অরিত্রান ফার্স্ট বেঞ্চে বসে আছে।তার ঠিক পাশেই রিমন বসে আছে।অরিত্রান লাইব্রেরী থেকে অর্থনীতিবিদের একটা বই নিয়ে এসেছে।চশমার গ্লাস ভেধ করে সে অধিক মনযোগী হয়ে বইটা পড়ছে।আর কিছুক্ষণ পর পর নাকের ডগায় চলে আশা চশমাটা ডান হাতের একটি আঙ্গুল দিয়ে উপরে তুলে ঠিক করছে।রিমন জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছে।তার এসব বই টই ভালো লাগেনা।সব বিরক্তির একটা বড় কারন তার কাছে।অরিত্রান বইয়ের পাতা উলটাতে যাবে ঠিক সেই সময় ধপাস করে কেউ বইয়ের উপর ব্যাগ রেখে দেয়।বইয়ের পাতাটা শাই করে ছিঁড়ে খন্ডিত হয়।অরিত্রান শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মাথা তুলে উপরে তাকায়।লম্বাটে মুখের গড়নের, সাদা, চিকনা হ্যাঙ্গলা পাতলা রোগা একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।মুখে একটা ভয়ানক হাসি ঝুঁলিয়ে। অরিত্রান তাকে কিছু বললো না।ডান হাতে চশমার একপাশ ঠেলে।সে ব্যাগের নিচ থেকে ছিঁড়া বইটা বের করে নিলো।ব্যাগের উপরে রেখেই ছিঁড়া অংশের পরের পৃষ্টা থেকে মনযোগ দিয়ে আবার পড়া শুরু করলো।পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা মহা অবাক।সাথে কিঞ্চিৎ বিস্মিত হয়ে কিছুসময় দাঁড়িয়ে ভাবছে বইটার জন্য তো একে জরিমানা দিতে হবে।সেটা ভেবে একটু রাগও করলো না!!কেনো??এই কেনোটার জন্যই তার নিজের রাগ উঠে গেলো।রাগে ফঁসফঁস করতে করতে বললো,
—” এই ছোকড়া এটা আমার বেঞ্চ। তুই পিছনে যা।সামনে যাতে আর জীবনে বসতে না দেখি।উঠ!!”
অরিত্রান তাকালো না।সে নিজের মত নিচের দিকে তাকিয়ে বসে বসে বই পড়ছে।আশেপাশের মানুষের দিকে খেলায় রাখা অবশ্যই তার কাজ নয়!!তাই সে রাখছে ও না। তার এই নিরব ব্যবহার পাশের ব্যক্তিকে রাগানোর জন্য এনাফ ছিলো।সে রেগে টেবিলে হাত দিয়ে বাড়ি মেরে বললো,
—” ওই তোর কি আমার কথা কানে যায় না??বয়ড়া নাকি??শালা চুপ ক্যান??উঠে যেতে বলছিন না??উঠ।তুই জানছ না কার কথার অমান্য করছস এখানে বসে বসে?? রাতুল নাম আমার।ভার্সিটির ভিপি আমি।উঠ।”
অরিত্রান যেনো আরো শান্ত।রাতুল এবার রেগে অরিত্রানের শার্টের কলার ধরে তাকে টানতে শুরু করলো।তার সাঙ্গুপাঙ্গুও এপাশ ওপাশ থেকে দুই একটা থাপ্পড় পিঠে দিয়েই চলেছে। কিন্তু তাদের চোখে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো অরিত্রানকে একফোঁটা নাড়াতে পাড়লো না।আর রিমন তার পাশে বসেই আছে।তাকে বাচাতেও চাইছে না।কেনো??সবাই অবাক।কিন্তু রিমন মনে মনে এই ছেলেগুলোর জন্যই দোয়া করছে।কার গায়ে হাত দিয়েছে যানতে পাড়লে এখানে হার্টঅ্যাক করতো সব কয়টা।ঘটা করে মারতে হতো না।রাতুল যেই রেগে ঘুঁষি মারতে নিবে অমনি ক্লাসে প্রফেসর এসে হাজির।না পারতে ছেড়ে দিয়ে সে পিছনে চলে গেছে।যাওয়ার আগে চোখ রাঙ্গিয়ে শাসিয়ে বুঝায় যে সে একে দেখে নিবে।তবুও অরিত্রান শান্ত।রাগটা যেনো ভিতরেই জমে আছে।বাহিরে এর কোনো প্রভাবই পড়ছে না।অরিত্রান ছিঁড়া বইটা এপিট ওপিট করে সুন্দর ভাবে ভাঁজ করে রেখে দিলো।ছিঁড়া পাতাটাও মাঝে ডুকিয়ে রাখলো।রিমনের কপালে ভাঁজ পরে।সে অতি মনযোগী হয়ে অরিত্রানের হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে।
___________________________
কলেজ শেষে ওয়াসেনাত আর রিমি অরিত্রান আর রিমনের গাড়ির ব্যাকডেলাতে ডুকে পরেছে।চিকনাচাকনা গড়নের হওয়ায় দুজনেই ফিট হয়ে মাথা,পা বাঁকিয়ে শুয়ে পরে।রিমির প্রচন্ড বিরক্ত লাগলেও ওয়াসেনাত খুবই উত্তেজিত আর খুশি।বাবাকে সে ঝুঁকি নিয়ে অনেক কাজ করতে দেখেছে।বাবার মত হতে সে চায় না।কিন্তু ইনভেস্টিগেশনে তার আগ্রহের মাত্রা প্রবল।বিশেষ করে এই গোমড়া মুখ আকড়ু টাইপের নুহাশের প্রতি।তার কেনো যেনো খুবই রহস্যবান মানব বলেই মনে হয় এই নুহাশকে।তা না হলে এত রুডলি চলাফেরা কেনো করে সে??এটাই ওয়াসেনাতের মস্তিষ্ক জুড়ে বিচরন করছে।চলন্ত গাড়িতেই ওয়াসেনাতের ফোনটা টং টং করে বেজে উঠলো।ওয়াসেনাত দু’হাতে চেপে ধরে আছে ফোনটা।মুখের সামনে ফোনটা ধরতেই তাতে বাংলা অক্ষরে বাবা নামটা ভেসে উঠলো।সাথে একটা সাদা কালো ছবি যদিও ছবির রংটা ইডিট করে করা হয়েছে।বাবার বুকের দিকে হেলান দিয়ে ওয়াসেনাত হাসছে।আর তার পাশেই তার অতিসুন্দরী জননী তাকে এক হাতে জড়িয়ে তিনিও হাসছে।বাবা প্রতিবারের মত হালকা ঠোঁটজোড়া মেলে হাসছে।ওয়াসেনাতের সবচাইতে প্রিয় একটা ছবি।তার মতে বাবার সাথে যখনই কথা বলবে মনে হবে এই তো মা পাশেই আছে।আমরা তিনজনই এক সাথে আছি। এক সাথে কথা বলছি।ওয়াসেনাত ফোনটা রিসিভ করতে করতেই একবার কেটে গেলো।কিন্তু পরক্ষনেই আবার বেজে উঠলো।এই মুহূর্তে বাবার ফোন ধরলেই সে ফেঁসে যাবে।তাই ধরতে পারছে না।গাড়িটা এত দ্রুত চলছে তার মনে হচ্ছে শরীর সহ সব নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। ওয়াসেনাত না পারতে ফোনটা বন্ধ করে রাখে।সে জানে বাবা খুবই চিন্তা করবে।তবুও কিছু করার নেই।এটা বন্ধ করতে হতো।তা না হলে তার বাবা আরো বেশি চিন্তিত হয়ে পরতো।
গাড়ি কোথায় থেমেছে এটা ওয়াসেনাত জানে না।গাড়ির ডেকেটা উঁচিয়ে ওয়াসেনাত খুবই সাবধানে বেড়িয়ে আসে।অনেক্ষন কিছু জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলে সে।এত ভয়ংকর এটা কাজ সে করেছে ভাবতেই নিচে উঠছে তার মন।আর অল্প কিছু সময় পরেই সব রহস্য ফাশ হবে।কথাটা মনে করে ওয়াসেনাত খুশিতে গদগদ হয়ে চারপাশে চোখবুলিয়ে মহা অবাক।এটা তো হোটেল!!ফাইভস্টার হবে হয় তো।কিন্তু এটাতে এরা কি করবে??ওয়াসেনাত চারপাশে তাকিয়ে রিমিকে খুঁজে।কিন্তু রিমি কই??অনেক্ষন চোখবুলিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে অরিত্রান বা রিমন কারো গাড়ির পাশে ঠেস দিয়ে সে মাথার চুল টেনে হাপাঁচ্ছে।কে কার গাড়িতে উঠেছে জানে না তারা।ওয়াসেনাত রিমিকে নিজের হাত দিয়ে বাতাস করতে করতে বললো,
—” দোস্ত আর অল্প একটু দ্রুত চল না।প্লিজজ।ওদের পিছন পিছন না গেলে ডুকতে দিবে না। আর রুম নাম্বারও পাবো না।চল বোইন।”
রিমির তিক্ত মেজাজ।রাগে ঝলাং করে সে বললো,
—” তুই একটা পাগল আমারেও বানাইতে চাস পাগল।”
—” হ যা।এবার তো উঠ!!”
_______________________
অরিত্রান আর রিমনের পিছন পিছন এলেও তাদের ধরতে পারে না তারা।ওয়াসেনাত আর রিমিকে আটকে ধরে কিছু গার্ডস। ওয়াসেনাত মুখে নিষ্পাপ ভঙ্গি এনে বললো,
—” উনাদের সাথে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।এখন না গেলে রেগে যাবে।পরে তো আপনাদেই জবাবদীহি করতে হবে না??শত হোক গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে কথা।”
অরিত্রানের একজন নতুন গার্ড সিদ্ধার্থ খুবই তীক্ষ্ণ ভাবে ওয়াসেনাতকে পর্যবেক্ষণ করছে।মনে মনে ভাবছে স্যারের পিছন পিছনইত এসেছে তা হলে হয় তো খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেউ হবে।আর এত নিষ্পাপ দেখতে একটা মেয়ে আর যাই হোক ভয়ংকর কিছু করবে না বলেই তার মনে হয়।তবুও অরিত্রানের ব্যাপারে গার্ডস হিসেবে তারা খুবই সেনসিটিভ। হ্যা অরিত্রান খান ভয়ংকর দানব। সবার কাছে হলেও তাদের মত দুস্থ মানুষের কাছে অরিত্রান মানেই গুচ্ছ গুচ্ছ ভালোবাসা।তাই তার কিছু হোক এটা তারা স্বপ্নেও চায় না।বেগুনী রং এর গাউন পরনে।সাথে আবার হিজাব।হিজাব পরিহিত মেয়েদের সে খুবই সম্মান দেয়।হিন্দু হয়েও তার এই জিনিসটা ভালো লাগে।কেমন মায়া মায়া ব্যাপার।তবুও তার সন্দেহ হচ্ছে। সোজাসাপ্টা, ভদ্র নিষ্পাপ টাইপের মেয়েদের মাঝেই যত সমস্যা।এত সময় সে রিমিকে দেখলেও তার তাকে বেশি সন্দেহের মনে হচ্ছে না।অনেক্ষন দেখে তার অরিত্রানের রাগের কথা মনে পড়তেই সে এদের যেতে দিতে চাইলো।কিন্তু কি মনে করে বললো,
—” স্যারকে একটা কল করে আপনাদের ব্যাপারে জানাবো।আপনাদের নাম কি??বলেন আমি স্যারকে জিজ্ঞেস করে নি।”
ওয়াসেনাত রিমির মুখ চাওয়া চায়ি করছে।ভয়ে দু’জনেরই আত্না উড়ে যায় যায় ভাব।ঘামছে দু’জনেই।যদি একবার নুহাশশ নামের লোকটা তাদের কথা শুনে ফেলে তাহলে তো আর রুমেই যেতে দিবে না।রুমে না গেলে ভিতরে কি আছে কিভাবে জানবে??কিভাবে বোমা টোমা খুজে বের করবে??সে নিশ্চিত যে তারা অবসর সময়েই এগুলো করে।ভার্সিটি থেকে এসেই নিশ্চুই এগুলো করবে।যেহেতু হোটেলে এসেছে।ওয়াসেনাতের মতে হোটেলে তো আর তারা থাকে না।এই কাজ গুলো করার জন্যেই আশা।গার্ডস কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে যেই কিছু বলতে যাবে তখনই অরিত্রানের কল আসে।গার্ডের ধারনা এদের জন্যই সে কল করেছে।তাই কাঁপাকাঁপি করে কল রিসিভ করেই বললো,
—” সিদ্ধার্থ স্পিকিং স্যার।স্যরি স্যার ভুল হয়েগেছে। এখনি পাঠিয়ে দিচ্ছি স্যরি স্যার।”
সিদ্ধার্থ ভয়ের চটে পুরো কথা শুনলো না।কেটে দিলো কল।ওয়াসেনাতদের উদ্যেশে বললো,
—” রুম নাম্বার ২০১ হলো নুহাশ স্যারের আর ২০২ হলো মাহির স্যারের।”
ওয়াসেনাত আর রিমিকে আলাদা কীকার্ড দেওয়া হলো।দুজনেই একটু অবাক হলো।কীকার্ড কেনো দিবে??আর কে কল করেছে??কি এমন বলেছে যে তাদের যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলো??”নানা চিন্তার ভাজঁ থেকেও ওয়াসেনাত কার্ড গুলো নিলো।মনে মনে বিড়বিড় করে “একটা নুহাশের আর একটা গোঁফা মাহিরের” রুম হিসাব করলো।রিমিকে ফিসফিস করে বললো,
—” তুই গোঁফা মাহিরের রুমে যা।ওই মিস্টার আকড়ুরে আমি দেখে নিচ্ছি।”
রিমি ঠোঁট উল্টে বললো,
—” ওই মাহিরের গোঁফ দেখলেই রাগ লাগে।তবে তাও চলবে মনে হয় ইচ্ছা মত থাপড়াইলেও কিছু বলতে পারে না।কিন্তু ওই নুহাশরে আমার সিংহের মত লাগে।খুবই ভয়ংকর প্রানী।এত সহজে ওর রুমে ডুকবি এটা মানতে পারছি না।ভয় লাগছে যদি কিছু করে দেয়।ছেলেরা কিন্তু মোটেও ভালো হয় না।চরিত্র এদের মারাত্মক ডেঞ্জারাস হয়।তার উপর এই লোক তো অতিবমাত্রায় নিশ্চুপ সাথে ঠান্ডা মাথার মনে হয়।ভয় লাগে দোস্ত।আঙ্কেল যদি একবার জানতে পারে তবে কিন্তু আমাকেও মারতে ভুলবে না।”
ওয়াসেনাত জোড়ে কিছু শ্বাস ফেলে বললো,
—” চুপ করবি তুই??রুম চলে এসেছে।যা তুই।তবে ভাই হোটেল তো নয় যেনো মহল একটা এত আলো কেন আল্লাহ মালুম। অন্ধ মানুষও এই আলোতে সব দেখবে বলে মনে হয়।”
—” হুম।আমারও তাই মনে হয়।”
রিমি রিমনের দরজা খুলতে পারলো না।তাই কার্ড দিয়ে খুলতে হলো।রুমে আলো জ্বালানো।নিশ্চুই রিমন রুমে আছে।রিমি কাঁপা পায়ে এগিয়ে যেতে যেতে রুমে একবার চোখবুলিয়েই দেখলো।কই বোমা, টোমা, রাইফেল বা ড্রাগসও দেখলো না।খুবই সুন্দর গোছালো রুম।যদিও জামা কাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।তবে মনে হচ্ছে এই গোঁফা মাহির এই রুমেই দীর্ঘদিন থাকছে।এর কি বাড়িঘর নেই??রিমি তাকাতে তাকাতেই ওয়াসরুমের দিকে চলে আসে। রিমন উল্টা ঘুরে জামা চেঞ্জ করছে।ওয়াসরুমের দরজা খোলা।তাকে এভাবে দেখেই চোখবুজে কান চেঁপে চিৎকার করে উঠলো রিমি।মুখে বললো,
—” আহহহহহহ্ একদম জামা খুলবেন না।প্লিজজজ প্লিজজজজ।”
রিমন চট করেই পিছনে ঘুরে হতবম্ভ হয়ে তাকিয়ে থাকলো কিছুসময়। চোখবুজে মুখ কুঁচকে আছে রিমি।খোঁপা করা চুলগুলোর ভাজঁ থেকে কিছু চুল খুলে খুলে সামনে এসে পরেছে।চোখেমুখে তার আতঙ্কের ছড়াছড়ি।রিমি আরো একটু চেঁচিয়ে বললো,
—” জামা কি খুলে ফেলেছেন??ছিহ্হ্!! আল্লাহ্!!মান সম্মান সব গেলো গেলো!!সব তোর জন্য ওয়াসুর বাচ্চা!!এখন আমি কি করমু!!হায় হায়!!আমার তো আর বিয়ে হবে না!!আমার সব ইজ্জত শেষ।আমি তো আর কুমারীই রইলাম না।এ্যা এ্যা এ্যা।”
এতক্ষণে রিমনের টনকনড়ে। রিমি তার রুমে কি করছে??আর এই মেয়ে এগুলো কি বলছে??সে কি আদো কিছু করেছে নাকি??হঠাৎ করেই রিমনের নিজের গোঁফের কথা মনে পরে।ওটা তো খুলে রেখেছে।এখন যদি একবার রিমি দেখে??আহ্ আল্লাহ্!!এবার তো মনে হচ্ছে সে নিজেই লুটগেয়া টাইপের অবস্থা।ধরা খাইলে অরিত্রানের হাতে খুন হবে সে।রিমন টিশার্টের ভিতরে মাথা ডুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মুখ লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা তার।ধরা পড়লে চলবে না।কিছুতেই না।
______________________
ওয়াসেনাত রুমের দরজায় হালকা ধাক্কা দিতেই তা খুলে গেলো।ভয়ে তার বুক ধুকধুক করে কাঁপছে।দরজা খোলা কেনো??আশ্চর্য ব্যাপার তো!!তাহলে কি নুহাশশ সাহেব রুমে নেই??কথাটা ভাবতে ভাবতেই ওয়াসেনাত এক পা এক পা করে ভিতরে ডুকে পরে।সারা রুম অন্ধকার হয়ে আছে।তবে হালকা হালকা আলো আসছে রুমে উপরের কিছু ছোট লাইট থেকে।কেউ কি নেই??নুহাশশশশ নামের লোকটা কই গেলো??তার মানে কি লোকটা রুমে একদমই নেই??কথাটা ভেবেই ওয়াসেনাত খুশি হলো।সাথে ভয়টাও হালকা চলেগেছে। ওয়াসেনাত রুমের মাঝে ডুকে পরে।সামনে একটা রুম যেখানে সোফা আর টিটেবিল আছে।এই রুমের সামনেই একটা বিশাল দরজা।তার ভিতরেই আর একটা রুম।ওয়াসেনাত খুবই মনযোগী হয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব দেখে।তার মনে হচ্ছে লোকটা ইচ্ছে করেই তাকে এখানে আসতে সাহাস্য করেছে।তা না হলে সব কি করে কাকতালীয় হয়!!বডিগার্ডস ছেড়ে দিলো!!কার্ড দিয়ে দিলো!!দরজা খোলা!!সব মুহূর্তেই পরিষ্কার হয়ে উঠলো তার কাছে।ওয়াসেনাত এবার প্রচন্ড ভীতূ হয়ে উঠে।হার্টবিড বাড়ছে তার খুবই দ্রুত হারে।মারাত্মক গর্তে সে নিজেই পরেছে বলে তার মনে হচ্ছে। ভয়ে সে এখনি মারা যাবে বলে তার মনে হচ্ছে। না ওয়াসুর দ্বারা এটা হবে না!!কিছুতেই না!!কথা গুলো ভেবেই সে আবার রুমের বাহিরে পা রাখতে যায়।ঠিক তখনই হঠাৎ হাতে হেচকা টান পরে।কেউ খুবই রুডলি তার চিকন মসলিন হাতটা টেনে তাকে ভিতরে নিয়ে আসে।দেয়ালের সাথে চেপে ধরে ভয়ংকর ভাবে।ওয়াসেনাত চোখবুজে নেয় মুহূর্তেই।অসহায়ের মত হাত ছাড়াতে ছটফট করে সে।ভয়ে, ব্যথায় তার মরো মরো অবস্থা।দুশ্চিন্তা ভর করছে কলিজার খাঁজে খাঁজে।মনে মনে খুব গালি দেয় নিজেকে।কে বলেছে যাসুস হতে??এখন কি করবে সে??এই লোক কি তাকে মেরে দিবে??এটাই করতে পারে সে??কি সাংঘাতিক মুখের ভাবমূর্তি!! সবসময় একরকম থাকে!হাসেও না!!ওয়াসেনাতের মনের সব সাহস উবেগেছে। মনে মনে বলছে,বাবার কলটা যে কেনো ধরলো না??ধরলেও হতো।শেষবার একটু কথা বলে নেওয়া যেত।আচ্ছা তার কিছু হলে বাবার কি হবে??তারা কি জীবনেও আর একসাথে কথা বলতে পারবে না??তার সাথে কি রিমিকেও মেরে দিবে??আহ্ বেচারি তার জন্য মরবে এটা সে কিছুতেই হতে দিবে না।শেষ ইচ্ছে জানতে চাইলে বলবে রিমিকে ছেড়ে দিতে আর বাবার সাথে কথা বলতে দিতে।আচ্ছা লোকটা কি তাকে দুটো ইচ্ছে পুরোন করতে দিবে??ওয়াসেনাতের মনে হলো গলায় ধাড়ালো কিছু বিঁধছে। চোখবুজেই সে বুঝতে পারছে এটা ছুড়ি।তাহলে আজই জীবনের ইতি হবে।কারো থেকেই বিদায় নেওয়া হলো না।কথাগুলো মনে করেই ওয়াসেনাতের চোখ ভিঁজে গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।হাতের ব্যথাটা তিব্র থেকে তিব্র হচ্ছে। তার মনে হচ্ছে তার হাতের প্রতিটা হড্ডি মড়মড় করে ভাঙ্গছে।আর গলায়ও মনে হচ্ছে ছুড়িটার ছাপ পড়ছে।মৃত্যুর আগে মানুষ কি তার মতই আতংকিত থাকে??
.
.
#চলবে___