পাথরের বুকে ফুল

পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 06

রিমন নিজের রুমে বসে আছে।ফোনটা নিয়ে সে সত্যিই গুগলে সার্চ দিবে বলে ভাবে।পরক্ষনেই ভাবে কি লিখে সার্চ দিবে।”ছোঁয়া”??গুগল মামা তাকে নির্ঘাত পাগল ভাববে।এটা সে কিছুতেই হতে দিবে না।রিমন ফোন রেখে দিলো।বিছানা ছেড়ে উঠে কিছুসময় নিয়ে পাইচারি করে ভাবতে লাগলো অরিত্রান এটা কেনো বললো??দু’টি দুই মেরুর কথা।অরিত্রান কখনোই এই ছোট একটা ব্যাপার নিয়ে কথা বলার মানুষ না।তাহলে সে কেনো বললো??ছোঁয়া মানে তো টাচ!!মানে ধরা??আচ্ছা কে ধরেছে অরিত্রানকে??ভূতে??রিমন হায় আল্লাহ বলে বিছানায় বসে পরে।ভূতে ধরেছে বলেইত সে হৃৎপিন্ড কাঁপার কথা বলেছে।রিমন একরাশ আফসোস নিয়ে বসে বসে দোয়া করছে ভূত যাতে অরিত্রানকে ছেড়ে দেয়।ফোনে টুং করে শব্দ হয়।রিমন মনযোগ সরিয়ে ফোনের দিকে তাকায়।ফোনে মেসেজটা দেখেই তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।খুশিতে ডগমগিয়ে উঠে লাফিয়ে বিছানায় বসে।ফোনটা ধরতেও যেনো তার হাত কাঁপছে।মেসেজটা না পড়েই সে নামটার দিকে তাকিয়ে আছে।আরো কিছু টুং টুং শব্দ হয়।রিমন মেসেজ দেখা শুরু করে।এতক্ষণের খুশি বিলিন হয়েগেছে তার।মেসেজটা রিমির।আজ এত দিন পরে রিপ্লাই দিয়েছে। রিপ্লাইয়ে তাকে ইচ্ছা মত ঝাঁড়ছে সে।রিমির মেসেজে লেখা,
—” শালা কোন হারামিরে তুই??
আমি ঝুগরুটে??

শালা তোর চৌদ্দ গুষ্ঠি ঝুগরুটে।
আমারে আসছে উল্টাপাল্টা কথা বলতে।
ওই শালা এহন রিপ্লাই দেস না কা??
রিপ্লাই দে??”
রিমন হতবাক হয়ে বসে আছে।মনে মনে নিজেকেই ঝাড়ি দিলো আসলেই তার উঁচিত হয় নি ঝুগরুটে বলা।ইশশশ্ কেনো যে বললো।এখন নিজেই ঠেলা বুঝতেছে।রিমন কাপাঁ হাতে একটা মিথ্যা কথা লিখে দিলো।লিখলো,
—” স্যরি আসলে আর একজনকে মেসেজ দিতে গিয়ে ভুলে আপনাকে দিয়ে দিয়েছি!!আই এম ভেরী স্যরি।”
রিমির মেজাজ আরো বিগড়ে গেলো।রাগে সে কটমট কটমট করছে।ওয়াসেনাত পাশে বসে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে আর পড়ছে।হঠাৎ রিনির রণচণ্ডী মুখের দিকে সে মোড় ঘরিয়ে অবাক হয়ে বললো,
—” কি হয়েছে তোর??”
রিমি রাগে গিজগিজ করতে করতে বললো,
—” কি হয় নাই তাই বল।এই লোকটারে সামনে পাইলে জুতা পিটা করমু বলে দিলাম।সরি মারতে আসছে।”
—” মানে??”
—” পরে বলমু আগে ঝাড়ি দিয়ে নি।”
ওয়াসেনাত আবুল বনে গেলো।সে আবার বই পড়ায় মন দিলো।
রিমি রিপ্লাই দিলো,
—” আপনার সরি আপনার কাছে রাখেন।জীবনে যদি আর এই রকম কিছু ভুল করেও চলে আসে খুন করে দিবো বলে দিলাম।”
রিমন বিষম খেলো।তার মনে হচ্ছে মেয়েটা তাকে মেসেঞ্জারের ভিতরে এসে মেরে যায়।রিমন সাহস নিয়ে আবার বললো,
—” সরি বলেছি তো।আশা করি আপনি বড় হৃদয়ের মানুষ।”
—” মোটেও না।আমি এত ভালো মানুষ না।”
রিমন কথা বাড়ালো এরো কিছু সময়।রিমি তো মনে হচ্ছে রাগে শুধু আগুন হচ্ছে।অনেক সময় পরে রিমি ঠান্ডা হয়।রিমন আর মাথা গরম করতে চায় না।তাই কথা বেশি বাড়ায় না আর।ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে দিয়ে শান্তির একটা শ্বাস নেয়।কেমন যেনো ভালো লাগা কাজ করছে।মনে মনে ভাবে সে এই ঝুগরুটের প্রেমে পড়লো না তো??আবার মনে মনে বলে উঠে আরে না।প্রেমে কেনো পড়বো। আর আমি প্রেমে পড়লে তো মহা বিপদ।জীবনে বিয়েই করা হবে না।অরিত্রান খান বিয়ে না করলে যে আমিও করতে পারবো না।রিমন বিছানায় গড়াগড়ি করে।ঘুম যেনো চোখেই ধরা দিচ্ছে না।
_______________________

অরিত্রান রেলিং থেকে হাত সরিয়ে ফেলে।হঠাৎ তার ওয়াসেনাতের দেওয়া বইয়ের কথা মনে পড়ে।অরিত্রান নিজের রুমের দরজা খুলে বাহিরে বেড়িয়ে আসে।দ্রুত পায়ে পার্কিং সাইডে গিয়ে নিজের গাড়ি থেকে বইটা বের করে নিয়ে আসে।বিছানায় বসে বইটা নাড়িয়ে চাড়িয়ে দেখে।অদ্ভুত এক অনুভুতি হচ্ছে তার।কেনো যেনো বইটা খুলতে ইচ্ছে করছে না।বাবলি লেখাটার নিচে লেখা বুদ্ধদেব গুহ।এর আগে কখনোই সে এই লেখকের বই পড়ে নি।সে তো বই পড়েই না।যাও পড়ে তাও সব বিখ্যাত অর্থনীতিবীদদের বই।বিজন্যাসের বই।এসব আবার কেমন বই??এটাই সে ভাবছে।মনে মনে খুবই ইন্টেরেস্টিং মনে হচ্ছে। তাই বইটা উল্টে পড়া শুরু করে।কয়েক পাতা পড়েই তার অনিহা দেখা দিচ্ছে। তবুও পড়ছে কিন্তু মাঝ বরাবর আসতেই অরিত্রানের চোখ কপালে।এই ধরনের বই সে তার এই জীবনে আগে পড়েনি।রোম্যান্টিক বই।নায়ক নায়িকার কাছে আসার হালকা রোম্যান্স দেখেই অরিত্রান শিউড়ে উঠে বইটা টেনে দুই খন্ড করে ছুঁড়ে দিলো বেডের নিচে।চেঁচিয়ে বললো,
—” রাবিশ!!! ডিজগাস্টিং বুক!!কিভাবে পড়তে পারলাম আমি??হাউ??প্রেম??এগুলো আবার হয় নাকি??বাংলা লেখকদের আবেগ বেশি।তাই এসব লেখে আবেগে দুনিয়া চলে নাকি?আবেগে ভেসে যায় বলেই এরা জীবনে কিছুই করতে পারে না।হু।জাস্ট হোপার।”
অরিত্রান প্রচন্ড রাগে ওয়াসরুমে ডুকে পড়ে।শাওয়ার অন করে তার নিচে দাঁড়িয়ে পড়ে অরিত্রান।রাগে তার ইচ্ছে করছে ওয়াসেনাতের ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করে দিতে।কিভাবে সে অরিত্রান খানকে এমন বাজে একটা বই দিতে পারে।হাউ??
________________________

দিহান আর আরশি ওয়াসেনাতদের ক্লাস মিট।দু’জনের বেশ প্রেম চলে।দু’জনেই মাঠের একপ্রান্তে বসে প্রেম আলাপ করছে।তা দেখে ওয়াসেনাত আর রিমি মিটমিটিয়ে হাসছে।কিছুসময় পরে রিমি বেশ গম্ভীর হয়ে বললো,
—” ভার্সিটি থেকে পিকনিকে যাচ্ছে যাবি তো??না কি কলেজ লাইফের মত বাবা দিবে না বাবা দিবে না করে নাচবি??”
ওয়াসেনাত রাগি রাগি চোখে তাকালো।মুখ বাকিয়ে বললো,
—” যাবো না কেনো যাবো।বাবা দিলেই যাবো।”
রিমি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো,
—” তোর ওই হিটলার বাবা তোরে যাইতে দিবো বলে তোর মনে হয়??”
ওয়াসেনাতের চোখ বড় বড় হয়ে আসে।মেজাজ গরম হয়।এই মেয়েটা সুযোগ পেলেই তার বাবাকে হিটলার ডাকে।এটা কোনো কথা??পৃথিবীর কোনো মেয়েই তার বাবার নামের সাথে হিটলার নামটা সয্য করতে পারবে না।সেখানে রিমি সবসময় তার বাবাকে হিটলার বলে।রাগে শরীর রি রি করে উঠে তার।অদ্ভুত ভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,
—” একদম এমন আজেবাজে লোকের নাম বাবার সাথে লাগাবি না।বাবা তো বাবাই।আবার এই হিটলারের সাথে মিলানোর মানে কি রিমি??”
রিমি মুখে ভেঙ্গচি কেটে বললো,
—” সব বাবা আর জার্নালিস্ট বাবা এক হলো কেমনে??আর তোর বাবা তো সবচাইতে আলাদা।কথায় কথায় কল করলেই বলে ওয়াসেনাত এদিকে যাবে না, এটা করবে না, ওটা খাবেনা, ওদের সাথে কথা বলবে না,সব ছেলেদের সাথে মিশবেনা, ব্লা ব্লা ব্লা।মনে হয় তুই শিশু।আল্লাহ তোরে বহুত ধৈর্য দিছে দোস্ত তা না হলে এত কথা কেমনে শুনে চলছ!!”
—” বাবারা ভালো চায়।বুঝলি। আর আমি ভালো মেয়ে।তবে এবার বাবা যেতে দিবে।সাজেক যাওয়ার হচ্ছা আমার। বাবা বন্ধের কারনে নিতে পারে না।এবার তো একটা সুযোগ আছে তাই যাবো।”
___________________
অরিত্রান নিজের গোল চশমাটা ঠেলে দিয়ে গেটের ভিতরে প্রবেশ করছে।তার ডান পাশেই রিমন হেলে দুলে বিরক্তের সাথে হাঁটছে। ভার্সিটির গন্ডিত বহু আগেই শেষ করেছে সে তবুও ভার্সিটিতে আবার আসতে হচ্ছে। ভালো লাগে না তার এইসব।ক্লাসে বসে থাকা বকবক লেকচার শুনা।জাস্ট বিরক্তির একটা কারন।তাদের বয়স তো নেহাত কম নয়।অনেকই হয়েছে। এখন তো বিয়ে সাদি করে বাচ্চার বাবা হওয়ার সময়। এখন কি আর এই ভার্সিটির মোটা মোটা বই হজম করার দিন??কথাটা ভাবতেই রিমনের গোঁফ সহ মুখটা কালো হয়ে গেলো।তার উপর আবার এই গোঁফ।সব মিলিয়ে তার এখন চরম অসহ্য কর অবস্থা।গেট দিয়ে কিছুদূর যেতেই বেসামাল ভাবে অরিত্রানের কারো সাথে ধাক্কা লাগে।চশমাটা ঠিক করে সামনে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। ওয়াসেনাত মাঠের ঘাসের উপর পা গুটিয়ে বসে আছে।ওয়াসেনাতকে দেখেই তার বইয়ের কথা মনে পরে।সাথে রাগটাও চড়ে বসে।তার পাশে যে একজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে দিকে তার খবর নেই।মেয়েটা ভ্রুকুঁচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে।এত সুন্দর আর রূপবতী একটা মেয়ের দিকে সে চোখই দিচ্ছে না।ব্যাপারটা তার মোটেও পছন্দ হলো না।মনে মনে বিড়বিড় করে বললো,
—” কে এই ছেলে যে মাদৌলিকে দেখেও না দেখার ভান করছে!!”
অরিত্রান আবার হাটা শুরু করে।যার সাথে ধাক্কা লেগেছে সেদিকে তার বিন্দুমাত্র ইন্টেরেস্ট নেই।মাদৌলি গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে ভাবে।শ্যামবর্ণের হাবলার মত দেখতে একটা ছেলের মাঝে এত এটেটিউড?? কিভাবে সম্ভব??মাদৌলির অনেক আগ্রহ জাগে।মাথা ঘুরিয়ে শুধু তাকিয়ে থাকে অরিত্রানের দিকে।সামান্যের মাঝেও যেনো অসামান্য ব্যক্তিত্ব এই ছেলের।তাহলে কি শেষমেশ একটা শ্যামবর্ণের চিপচিপে বলিষ্ঠ দেহের হাবলার মত চাশমিশ ছেলের উপর মাদৌলি ক্রাশ খেয়েছে??কথাটা ভেবেই যেনো অবাক মাদৌলি।অরিত্রান খানের মত লোক রেখে সে এই ছেলের উপর ক্রাশ কেনো খেতে যাবে??দেখতে কেমন??চোখেমুখে গম্ভীর ভাব।কোনো স্মার্ট নেস নাই।শার্টটাও ইন করে নাই।সস্তা একটা শার্ট গায়ে।হাতের ঘড়িটাও কমদামী। এমন সস্তা টাইপের ছেলের দিকে মাদৌলি তাকালো কি ভাবে???কথা গুলো আপন মনে বিড়বিড় করে মাদৌলি সামনে হেঁটে যায়।

অরিত্রানকে মাঠের দিকে আসতে দেখেই ওয়াসেনাত লাফিয়ে দাঁড়িয়ে পরে।দ্রুত দৌড়ে অরিত্রানের সামনে এসে দাঁড়ায়। ওয়াসেনাতের এত তাড়াহুড়া দেখে অরিত্রান কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে।ওয়াসেনাতকে দেখে মনে হচ্ছে তার মহা মূল্যবান সম্পদ অরিত্রান চুরি করে পালিয়ে যাচ্ছে। যা সে কখনোই হতে দিবে না।অরিত্রান নিজের ফোন পকেট থেকে বের করে স্ক্রল করছে।সে যানে এই মেয়ে সামনে টপকে পড়েছে মানেই শুরু করবে কথার ঝুঁলি। ওয়াসেনাত কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আড়চোখে অরিত্রানকে দেখে নেয়।তার খুব রাগ লাগছে।অরিত্রান তার দিকে একবারও চোখ তুলে তাকালো না।সে নিজের মত ফোন নিয়ে বিজি।তাকে দেখে মনে হচ্ছে ফোন স্ক্রল করার মত গুরুত্বপূর্ণ আর মহান কাজ এই পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই।তার আশেপাশে ওয়াসেনাত নামের কোনো মেয়েও নেই,এমন কি কেউ নেই।ওয়াসেনাত রাগে ফুঁসছে। এমন ভাবলেশহীন ভাবে থাকার মানে কি??রিমন পাশে দাঁড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো,
—” কেমন আছো ওয়াসেনাত?? ”
ওয়াসেনাত চোখ বাঁকিয়ে একবার রিমনকে দেখে নিলো।তারপর বললো,
—” ভালো। আপনি কেমন আছেন গোঁফা মাহির??”
—” ভালো।বেশ ভালো।”
দাঁতে দাতঁ চেপে কথাটা বললো রিমন।সাথে হাসি হাসি মুখটা কালো করে ফেললো।তার এখন এই মুহূর্তে অরিত্রানের সকল পরিকল্পনায় পানি ফেলে এই গোঁফটা ছুঁড়ে দিতে ইচ্ছে করছে।তার ওয়াসেনাতকে দেখাতে ইচ্ছে করছে সে আসলে কতটা সুদর্শন।এই মারাত্মক বিশ্রী গোঁফটা তার না।কিন্তু চাইলেও সে এটা করতে পারবে না।তাই নিঃশব্দে কিছু দীর্ঘশ্বাস গোপন করে মনে মনে অরিত্রানকে গালা গাল করা শুরু করে।একজন সুন্দরী তরুণীর মুখে নিজের এই বিশ্রী নামটা নিতান্তই নেওয়ার মত না।তাই সেও পারছে না।ওয়াসেনাত অনেক্ষন তাকিয়ে থাকার পরেও অরিত্রান মাথা তুলে তাকালো না।সে নিজের মত কাজ করে চলেছে।ওয়াসেনাত রেগে কটকট করে বলে উঠলো,
—” আমার বইটা কই??নিয়ে যে গায়েব হলেন হাতে করেও তো নিয়ে আসলেন না।কোথায় রেখেছেন??”
কথাটা বলেই উত্তরের আশায় তাকিয়ে রইলো ওয়াসেনাত। এবারও চোখ তুলে তাকালো না অরিত্রান।নিচের দিকে তাকিয়ে অধীর মনযোগী সে।ওয়াসেনাত আবার বললো,
—” কথা বলতে পারেন না বুঝলাম।ইশারাও কি করতে পারেন না??ইশারা করে দেখিয়ে দেন আমি নিয়ে আসবো।কই রেখেছেন??”
রিমন এক ধাপ আগ্রহ দেখিয়ে বললো,
—” কিসের বই??”

ওয়াসেনাত মনে জোর পেলো।একজন তো জবাব দিয়েছে এতেই হবে।তাই ইনিয়ে বিনিয়ে রচনার মত বললো,
—” কাল আমি লাইব্রেরীতে যাওয়ার সময় উনাকেও নিয়ে গিয়েছিলাম।অনেক বই তো আর উনার তো সেই মাশআল্লাহ্ বডি তাই উনার হাতে তুলে দিলাম।বিনিময়ে একটা রোম্যান্টিক উপন্যাস পড়তে দিয়েছি আজ ফিরত দেওয়ার কথা।কিন্তু তার হাতে তো কোনো বই নেই।কোথায় রেখেছে বলেন তো গোঁফা মাহির??”
ওয়াসেনাতের চিন্তিত ভঙ্গি।রিমন আর দাঁড়ালো না।ধপ করে নিচে বসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বিড়বিড় করে বললো,
—” রোম্যান্টিক!! তার উপর বই!!তার উপর অরিত্রান খান!!তার উপর বহন করিয়েছে!!আল্লাহ আবার নাকি পড়তেও দিয়েছে!!এই মেয়ে বাঁচবে না।কিছুতেই না।নিজের মরার বন্ধাবস্থা নিজে করতে এই প্রথম দেখলাম।আল্লাহ বাঁচাও। বাচ্চা মেয়ে।গোঁফা ডাকটাও মাফ করে দিলাম তাও বাঁচাও।”
ওয়াসেনাত বেশ বিরক্ত। মাথার উপের সূর্যের তাপ তার চোখেমুখে পড়ছে। গাল গুলো লাল হয়ে উঠছে মুহূর্তেই।সাথে কপালে একরাশ ঘাম।রাগ,বিরক্ত একসাথে তার এখন বাজে অবস্থা।এই বোবা লোকের সাথে কথা বলা আর কলাগাছের সাথে কথা বলা তার কাছে এক মনে হচ্ছে। লোকটা এমন রোবটের মত কেনো??কোনো কিছুতেই যেনো তার পাত্তা নেই।একাই একশ টাইপের ভাব।ওয়াসেনাত প্রকাণ্ড রাগ নিয়ে বললো,
—” আমার বই কোথায়??”
—” ছিড়ে ফেলেছি।”
অরিত্রানের স্বাভাবিক কন্ঠ।ওয়াসেনাত সহ উপস্থিত বাকি দুজনও অবাক।বাকরুদ্দ। হতভম্ভ হয়ে অরিত্রানের দিকে তাকালো।যা শুনছে সব মিথ্যা মনে হচ্ছে। রিমন ভেবেছে অরিত্রান বোবার রোলটাই করবে কিন্তু না এত পুরা ব্লান্ডার।ওয়াসেনাতের নাকে শিরশির করে বাজে অরিত্রানের বলা কথাটা।সাথে আতঙ্কে তাকিয়ে ওয়াসেনাত ভাবে আচ্ছা সে যা শুনেছে সত্যি কি তাই বলেছে??নাকি সে ভুল শুনেছে??হতেই পারে এটা স্বপ্ন!!তা না হলে কিছুক্ষণ আগ পর্যন্তও যাকে বোবা ভেবে ছিলো হঠাৎ সে কথা বলছে!!কি আশ্চর্য!!অদ্ভুত!!ভারী অদ্ভুত!! ওয়াসেনাত হয় তো বইয়ের চিন্তাই এমন আজেবাজে শুনছে সেটা ভেবেই সে হাত বাড়িয়ে অরিত্রানের হাতে একটা মৃদু ধাক্কা লাগালো।অরিত্রন অবাক হয়ে বললো,
—” হোয়াট!!??”
ওয়াসেনাত উত্তোজনা সাথে মহা অবাকতা আর বিস্ময় নিয়ে বললো,
—” ওহ্ মাই আল্লাহ্!!আপনি কথা বলতে পারেন??মানে বোবা নন??হাউ ক্যান দিস পসিবল??”
অরিত্রান জবাব দিলো না।এতক্ষণ পরে সে চোখ তুলে ওয়াসেনাতের পাশের দিকে তাকালো।এই দিক দিয়েই সেই লোকটা গিয়েছে।অরিত্রান চোখ ছোট করে খুবই তীক্ষ্ণ ভাবে তাকিয়ে লোকটির চলে যাওয়া দেখলো।তার চোখে একটা হিংস্র ভাব ফুঁটে উঠলেও তা কেউ দেখলো না।চশমার আড়ালে আর কালো লেন্সের কারনে তা ডেকে আছে।লোকটাকে তার এখনই কুচি কুচি করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সে পারবে না।অনেক ইনফরমেশন নিতে হবে এর থেকে।খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই লোক তার জন্য।ওয়াসেনাত বিকট শব্দে চেঁচিয়ে বললো,
—” আপনি কথা বলতে পারেন এটা আমাদের বলেননি কেনো??আর এই যে গোঁফা মাহির আপনি তো সব যানতেন।সব বুদ্ধি গোঁফের পিছনে না দিয়ে সত্যিটা বললে কি হতো।মিথ্যা কেনো বললেন হু??”
রিমিও তাল মিলিয়ে বললো,
—” ওয়াসু তোরে আগেই বলছি এই লোকের মাঝেই বড় গাফলা।দেখ কেমন ভিলেনের মত গোঁফ।দেখেই গুন্ডা গুন্ডা লাগে।”
রিমন বিড়বিড় করে হতাশ গলায় বললো,
—” যত দোষ নন্দঘোষ।”
—” এই কি বললেন?? কি বললেন??” রিমিরকড়া গলা।
—” কিছু না।আসলে আমি তো বলেছি ও শুনতে পায়, বলতে পারে না এটা তো বলিনি।তোমরাই ধরে নিয়েছ।এতে আমার কি দোষ।”
ওয়াসেনাত খুদ্দ চোখে তাকিয়ে আছে অরিত্রানের দিকে।সাথে নিজের দোষ নিয়েও সে চিন্তিত।একটা লোক কথা বলতে পারে কি না এটাই ধরতে পারলো না।শত্রু কিভাবে চিনবে।ওয়াসেনাত শক্ত গলায় বললো,
—” কথা যখন বলতে পারেন তখন মুখটাকে এমন করে রাখেন কেনো??যেনো সবাই বোবা বলে??জবাব দিতে পারেন না।ঠং।যতসব। আমার বই দেন।”
—” ছিঁড়ে ফেলেছি কয়বার বলবো।”
—” ছিঁড়ে ফেলেছেন মানে কি??পড়তে দিয়েছি ছিঁড়তে না।”
অরিত্রান সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ফোন পকেটে ডুকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,
—” আই থিংক বইটার দাম ৩০০-৪০০ হবে।সো ওই বইয়ের টাকা রিমন দিয়ে দিবে।এত চিৎকার চেঁচামেচির কিছু হয় নি।”
ওয়াসেনাত অবাক।লোকটার ভাবখানা এমন যেনো বই ছিঁড়ে মহান কাজ করেছে সে।ওয়াসেনাত তিক্ত সুরে বললো,
—” নো থ্যাংক্স। দরকার নেই আপনার মত এমন আকড়ু টাইপের লোকের থেকে বইয়ের টাকা নেওয়ার।একটা কিনতে পারলে আর একটাও পড়াবো। তবে আমার বই ছিঁড়ার প্রতিশোধ তো নিবো।”
—” নিও।রিমন তোমাকে টাকা দিয়ে দিবে।লেট হিম ডু দিস।ক্লিয়ার।”
—” দরকার নেই মানে দরকার নেই।আপনার মত লোকের সাথে আমি আর কথাই বলবো না।কিভাবে আপনি আমার বই ছিঁড়লেন??বাই।চল রিমি।একটা ফালতু লোক।”
অরিত্রান চোখ তুলে ওয়াসেনাতের দিকে তাকায়।তাকাতেই চোখ পরলো ওয়াসেনাতের লাল হওয়া মুখের দিকে।ঘামে ভিঁজে তেলতেলে হয়ে আছে মুখটা।ঠিক ওই দিনের মত।যেদিন সে নিজের বাহুতে করে তুলে এনেছিলো তাকে।লাল দু’গাল, নাকটাও রাগে ফঁসফঁস করছে।লাল হয়ে আছে।কপাল চুয়ে ঘামের বিন্দু বিন্দু জল।আর পানিতে ভাসমান চোখজোড়া। অরিত্রানের চোখগুলো খানিকের জন্য আটকে গেলো ওয়াসেনাতের ঘামে ভেঁজা মুখের উপড়।ওয়াসেনাত রাগে রণচণ্ডী হয়ে মাথা ঘুরিয়ে হেজাবের একটা অংশ পিছনের দিকে ছুঁড়ে দিলো।অরিত্রানের মনে হয়েছে হেজাবের সে অংশ তার নিজের গালেই পড়েছে।ওয়াসেনাত চোখের নিমিষেই বিলিন হয়েগেলো।অরিত্রান ছোট কিছু নিঃশ্বাস ফেলে রিমনের দিকে তাকালো।সে আগের নেয় মাঠে পা গুটিয়ে বসে বসে ঘাস ছিঁড়ছে। আর বিরক্ত ভঙ্গিতে বিড়বিড় করছে।অরিত্রান সব ঝেড়ে ফেলে আবার নিজের পরিকল্পনায় মন দিলো।কিন্তু মনের কোনো এক খাঁজে আটকে আছে ওয়াসেনাতের ঘামে ভেঁজে সেই মুখ।আজকের এই মুখ তাকে ওই দিনের গুটিশুটি মেরে তার বুকে লেপ্টে থাকা সেই দৃশ্যকে জীবন্ত করে তুলছে।যেনো খুবই মিষ্টি আকুতি ভরা আবেগ নাড়াচাড়া করছে তার মনের কোটারে।
.
.
#চলবে___________________
পাথরের বুকে ফুল গল্পটার চরিত্র গুলো আগের সিজনের মত।সেই হিসেবে ওয়াসেনাত আর অরিত্রানের রূপ এবং গুনগত দিক একুই রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে পূর্বেই।তাই তাদের চোখ নীল আর সবুজ থাকাটাও স্বাভাবিক। আমার সবচরিত্রের নায়ক নায়িকার চোখ নীল আর সবুজ কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়।যারা তুমি হলেই~চলবে গল্প পড়েছে তারা আশা করি বুঝবে।এখন সব লেখকরা যদি কালো চোখ নিয়ে লেখে, কেউকি একটু ভিন্ন হতে পারে না??আমি না হয় একটু ভিন্ন।এর মানে এই নয় আমি মিশরীয় মানুষকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছি।বাংলাদেশে কি ১৮ কোটির কারো এমন চোখ নেই??হয় তো আছে।আর মিশরীয়দের না তুর্কিদের চোখ সাধারন এমন হয় তাও গভীর ভাবে দেখলে।গল্পে ভিন্নতা থাকবে স্বাভাবিক। সবাই এক নয়।কালো চোখে প্রবলেম বিন্দুমাত্র নেই।তাই কালো চোখের নায়ক নায়িকাও আমার গল্পে আছে।আশা করি বুঝতে পেরেছেন।তবুও যদি সবুজ চোখ নিয়ে আর নীল চোখ নিয়ে প্রবলেম থাকে তাহলে এড়িয়ে চলুন।মূল কাহিনী রেখে বাহ্যিক সৌন্দর্যকে বেশি গুরুত্ব দিলে গল্পের থিম বুঝা মুশকিল।
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন _______🍂
®হাফসা_________________