পরিণয়ে পরিণতি !! Part- 04
সারার_গল্পকথা (কাজী সারা)
দুজনের বুকে দুজন চুপটি মেরে লুকিয়ে আছে। মুনতাহার তো এটুকু চাওয়া ছিলো সারাজীবন সাইমুনের বুকে মাথা রেখে পরম মমতায় চোখ বন্ধ করে কাটিয়ে দিবে।
সাইমুনের হৃদপিন্ড চিৎকার করে বলবে ” আমি কেবল তোমাকে ভালোবাসি বউ” তোমাতে আমার বসবাস তোমার জন্য পৃথিবীতে আমার আগমন…
মুনতাহা সাইমুনের বুকে মাথা রেখে ভাববে এর
চেয়ে সুখের আশ্রয় আর কোথায় আছে!! স্বামীর ভালোবাসার থেকে দামী রত্ন এ পৃথিবীতে কিছু
আছে নাকি!!
মানুষের জীবন পরিকল্পনার অনেক বাইরে। পরিকল্পনা দিয়ে জীবন চললে সে জীবনে কষ্ট নামক শব্দের কোন অস্তিত্ব থাকতো না। জীবন কেবল সুখের ঠিকানায় হাবুডুবু খেত। সকল পরিকল্পনার মালিক আল্লাহ আমরা কেবল সে পরিকল্পনায় পরিচালিত।
আজ সব অতীত।। এ বুকে থাকার অধিকার আমি অনেক আগে হারিয়ে ফেলেছি। এ বুকে বাসা বাঁধতে চলেছে অন্য কোন পাখি।
আচ্ছা তখন কি সাইমুনের আমার কথা মনে পড়বে? নাকি নতুন কারো স্পর্শ ওর শরীরে শিহরণ জাগাবে। আর সে স্পর্শে সাইমুন বার বার মাতাল হয়ে যাবে। উফফ ভাবতে পারছিনা মাথা ব্যাথা করছে।
আপন বলতে এ পৃথিবীতে আমার কিছুই রইলো না। যার স্বামী থাকতে নেই তার যে কিছুই নেই।
মুনতাহার শাশুড়ী বলেছিলো ডিভোর্স এর কথা। মুনতাহা চায়নি ওদের ডিভোর্স হোক। তখন মেনে নিয়েছিলো সাইমুনের ২য় বিয়ের কথা। অন্তত সাইমুন কে চোখের দেখাতো দেখতে পারবে। কিন্তু এখন যখন বিয়ের সময় ঘনিয়ে আসছে মন কে কিছুতেই বুঝাতে পারছেনা।
এ সমাজে কারো ২য় বউ হয়ে থাকার চেয়ে ডিভোর্সি হয়ে বেঁচে থাকা অনেক কঠিন।
ডিভোর্সের পরে মেয়েদের দোষ থাকুক আর থাকুক সব দোষ ডিভোর্সি মেয়েটার ঘাড়ে গিয়ে পড়বে।
মুনতাহা কে ডিভোর্স দেয়া নিয়ে সাইমুন আপত্তি করেছে। মা কে বলেছে মুনতাহা কে সে ডিভোর্স দিতে চায় না। তার জন্য মুনতাহা সাইমুনের কাছে কৃতজ্ঞ। এটুকু সহানুভূতি তো দেখিয়েছে।
মুনতাহা শাড়ী ঠিক করে নিজেকে সামলে নিলো। সাইমুন কে ঘুমন্ত অবস্থায় বেশ পবিত্র লাগে। মুনতাহার খুব ইচ্ছে করছে কপালে চুমু খেতে। কিন্তু মন সায় দিচ্ছে না। বিবেক তাচ্ছিল্যের সুরে উপহাস করে বলছে,,
কাকে আদর করবি যা কখনো তোর ছিলো না।
যার জীবনে তোর কোন মূল্য নেই। দেখছিস তো তোর সাইমুন এখন নতুন বিয়ের স্বপ্নে বিভোর।
তোর ভালোবাসা তোর স্বপ্ন আজ তোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলে গেছে। ভালোবাসা বলে কিছুই নেই পৃথিবীতে সব হচ্ছে মরিচীকা। আমরা সবাই প্রতিনিয়ত মরিচীকার পিছনে ছুটি।
যে আমাদের সাথে থাকে আমরা তাকে নিয়ে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। কতজন তো বলে ভালোবাসার মানুষ কে না পেলে বাঁচবে না আবার তারাই দিব্বি আরেকজন কে নিয়ে সংসার করে কাটিয়ে দেয়।
একসময় সাইমুনের মুনতাহাকে জড়িয়ে না ধরলে ঘুম আসতো না। সাইমুনের আবদার ছিলো মুনতাহা রোজ সকালে ওকে আদর করে জাগিয়ে তুলবে। সাইমুন যখন তখন জড়িয়ে ধরার জন্য বাহানা করত।।
আজ পাশে থেকেও অনেক দূরে। কেউ কারো মনের সন্ধান পাচ্ছে না।
চোখ থেকে দুফোটা জল সাইমুনের গালে পড়লো। আজ মুনতাহার মনের আহাজারি কান্না সাইমুনের মন পর্যন্ত পৌছাবে না।
…..
মাথাটা ঝিমঝিম করছে। ঘুমের ঔষধ খেয়েও সারারাত ঘুম হয়নি।
নামাজ পড়ে রান্নাঘরে যেতেই মুনতাহার শাশুড়ী কাশি দিয়ে বললেন,,
— যাক অবশেষে ঘুম ফুরালো। তো চা নাস্তা কি কপালে জুটবে।
— হুম মা। আপনি রুমে যান আমি চা বানিয়ে আনছি।
— গলা টা ব্যাথা করছে। চায়ে লেবু, আদা কুচি, তেজপারা, দারুচিনি, এলাচ দিও।
মুনতাহা তাড়াহুড়ো করে চা পরাটা বানিয়ে শাশুড়ীর রুমে গেলো,,
মা আপনার চা…
গ্যাস্ট্রিক এর ঔষধ খেয়েছেন??
– হুম।
যে মুনতাহা চলে আসতে যাবে। মুনতাহার শাশুড়ী মা পিছন থেকে ডাক দিলেন,
— মুনতাহা তোমার সাথে কথা আছে।
— হুম মা বলুন।
— জানই বিয়ের আর কয়েক দিন বাকি কালকে থেকে মেহমান আসা শুরু করবে। তুমি যদি সাইমুনের রুমে থাকো মানুষ নানা কথা বলবে। তখন আমি কাকে কি জবাব দিব। তুমি নাহয় কিছু দিনের জন্য তোমার বাবার বাড়ি ঘুরে আসো।
— মা আপনি ভাববেন না। আমি আজকে ওই ঘর থেকে সব গুছিয়ে অন্য রুমে চলে যাব। দয়াকরে আমাকে বাবার বাসায় যেতে বলবেন না। বিশ্বাস করুন আমি বিয়েতে কোন সমস্যা বাঁধাবো না।
মুনতাহার শাশুড়ী কাছে এসে হাত ধরে,,
— তুমি আমাকে কথা দিচ্ছ তো??
— হুম..ম… মা….
— আমি তোমার কথাতে স্বস্তি পেলাম। তুমি এভাবে মুখ কালো করে ঘুরে বেড়ালে আমার ছেলেটা বিয়ে করে শান্তি পাবে না।
— না মা আর মন খারাপ করব না। যার পুরো পরিবার সাথে আছে তার কি শান্তির অভাব হবে?? দেখবেন অবন্তিকা ওকে খুব সুখে রাখবে। যে সুখ আমি দিতে পারিনি সেটা অবন্তিকা ঠিক দিতে পারবে।
আপনি আমার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। মানুষ নিজের জিনিস হারালে কাঁদে। যা কখনো আমার ছিলো না তা হাজার চেষ্টা করলেও আমার থাকবে না।
আমি ঠিক আছি আপনারা বিয়ে নিয়ে ভাবুন।
কথা গুলো শুনে মুনতাহার শাশুড়ী ইতস্তত হয়ে
— আমি চাই তোমার কথা সত্যি হোক। অবন্তিকা যেন এ সংসারে সুখ শান্তি নিয়ে আসতে পারে। ওরা কাল বাসায় গিয়ে কল করেছে। যত দ্রুত সম্ভব শুভ কাজটা সেরে ফেলতে চায়। তাই আগামী শুক্রবার বিয়ের তারিখ ঠিক করেছে।
মুনতাহা এক মুহুর্ত সেখানে দাঁড়ালো না।
….
মুনতাহার শাশুড়ীর খুব খারাপ লাগছে। মুনতাহার প্রতি এখনও একটা সফট কর্ণার রয়ে গেছে । জানে তার আচরণে মুনতাহা কষ্ট পাচ্ছ কিন্তু কিছু করার নেই। অনেকটা ইচ্ছে করে এইরকম আচরণ করছে। যাতে কষ্ট পেতে পেতে মুনতাহা নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারে। কোনভাবে যেন অতীত কে আঁকড়ে না ধরে।
মুনতাহার শাশুড়ী চায় না মুনতাহা এ সংসারে পড়ে থাকুক। চোখের সামনে স্বামী কে অন্য নারীর সাথে দেখলে মনে হিংসা বিদ্বেষ কাজ করতে পারে। যদি মুনতাহা ঝোঁকের বশে নতুন বউয়ের ক্ষতি করে বসে। নানান চিন্তা মুনতাহার শাশুড়ীর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। জোর করেও মুনতাহা কে তাড়িয়ে দিতে পারছে না।
….
মুনতাহা রুম থেকে সকল জিনিস এক এক করে গোছাচ্ছে। হঠাৎ চোখ গেলো দেয়ালে ওদের বিয়ের ছবির দিকে। সাইমুন মুনতাহার দুপাশে শাশুড়ী, রাহি বসে আছে। সবার মুখে মুচকি হাসি। যে হাসির মাঝে কোন রাগ অভিযোগ নেই আছে বুক ভরা ভালোবাসা।
কয়েকদিন পরে এখানে আরেকটা ফ্রেমের বাধাঁ ছবি ঝুলবে। সবাই ঠিক থাকবে শুধু মুনতাহার জায়গায় থাকবে অবন্তিকা।
….
অবন্তিকা রেজাউল করিমের একমাত্র মেয়ে। ২ ভাইয়ের একমাত্র বোন। বিয়ে বাড়িতে হৈচৈ করছে সবাই। রেজাউল করিম মেয়ের বিয়ে নিয়ে খুব ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
চারদিকে বিয়ের জমজমাট প্রস্তুতি চললেও অবন্তিকার বিয়ে নিয়ে তেমন মাথা ব্যাথা নেই।
আবার বিয়েতে আপত্তি ও নেই। বিয়ের জন্য না করতে করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছে।
যখন দেখছে সাইমুন কে সবার বেশি পছন্দ হয়েছে তখন এক পলক দেখে বিয়ের জন্য হ্যাঁ করে দিয়েছে। মূলত নিজের বাবাকে শাস্তি দেয়ার জন্য বিয়েতে রাজি হয়েছে।
যদিওবা অবন্তিকার চাচা সাইমুনের মা কে বড় মুখ করে বলে এসেছে তাদের মেয়ে সাইমুনের আরেকটা বিয়ের কথা জানেনা। কারণ মেয়ের আগে বিয়ে হয়নি। কিন্তু সত্যি কি তাই!!
মেয়ের প্রথম বিয়ে হলে এত তাড়াহুড়ো কিসের একবারও সেটা কারো চোখে পড়লো না। চোখে পড়ার কথা না সবাই নিজের দোষ লুকাতে ব্যাস্ত।
অবন্তিকার দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই জাহিদ বিয়ে করেছে। জাহিদের বউ সামিহা ভীষণ শান্ত প্রকৃতির। পুরো সংসার টিকে আছে সামিহার অবদানে। সামিহা পুরো পরিবার টাকে এক সুতোয় বেঁধে রেখেছে।
জাহিদ সামিহা কে বলছে,,
কয়েক দিন পর অবন্তিকার বিয়ে ওর হবু বরের নাম্বার টা দিয়ে আসো কথা বলার জন্য
— আমি দিলে কি কথা বলবে ?? সারাক্ষণ খুব রাগী মুডে থাকে।
— তুমি কল দিয়ে ধরিয়ে দিবা৷ এখন কথা না বললে কখন ফ্রি হবে নাহয় পরে সমস্যা বাড়বে কমবে না।
সামিহা নাম্বার নিয়ে অবন্তিকাকে গিয়ে বলছে,,
— অবন্তী তুমি ফ্রি আছ??
— হুম কিছু বলবা ভাবী।।
যাক মনে হয় মুড ভালো আছে।।
সাইমুন ভাইয়ের নাম্বারে কল যাচ্ছে নাও কথা বল
— আমাকে জিজ্ঞেস না করে কল কেন দিলে।।
— আরে কথা বল লজ্জা পেতে হবে না।
……চলবে….