পরিণয়ে পরিণতি !! Part- 03
মুনতাহা বুক থেকে সাইমুনের হাত টা সরিয়ে উঠে বসলো । এরমধ্যে সাইমুনের ঘুম ভেঙ্গে গেছে,,
— তোমরা ছেলেরা নিজেদের কি ভাবো?? যখন চাইবে বুকে টেনে নিবে যখন খুশি ছুড়ে ফেলে দিবে। মেয়েদের কি মন নেই?? নাকি মেয়েদের কষ্ট হয় না। নতুন বিয়ে করবে যেহেতু মন স্থির করে নিয়েছ আবার আমাকে কোন মুখে স্পর্শ করছ?? লজ্জা করে না। নাকি রাত বাড়লে পুরুষত্ব জেগে উঠে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারো না।
— দেখো তুমি যা ভাবছ আসলে তেমন কিছু না। আমি ঘুমের…
— থামো।।। কি ভাবছি বলো?? যা চোখে দেখছি তা কি ভুল।এত সহজে বদলে গেলে কিভাবে। একবার জানতে চেয়েছ আমার মনের ভিতর কি চলছে?? তোমার ভালোবাসা এতটাই ঠুনকো যে সামান্য বাতাসে তচনচ হয়ে গেলো। এত দিন আমার জন্য যা ছিলো সব কি মিথ্যে অভিনয়???
— সব সত্যি ছিলো কিছুই মিথ্যে না। আমরা দুইজন পরিস্থিতির স্বীকার। সেটা আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে।
— তোমাকে মানতে হচ্ছে!! নাকি শুধু আমাকে হাসি মুখে সব মেনে নিতে হচ্ছে । তুমি চাইলে তোমার ভালোবাসা কে জিতিয়ে দিতে পারতে না??
তুমি নিজে হেরে গেলে সাথে আমাকে মাঝ সমুদ্রে ছেড়ে দিলে। একবার ভাবলে না আমার কি হবে।
যে সাইমুনের ভালোবাসা আমার অহংকার ছিলো তুমি কি সেই সাইমুন!! আমার মনে হচ্ছে প্রতিনিয়ত আমি মারা যাচ্ছি। কিভাবে আমি আমার ভালোবাসার মানুষ কে অন্য কারো সাথে ভাগ করব বলতে পারো!!
মুনতাহা রাগের মধ্যে নিজের মাথা টা ওয়ালের সাথে বাড়ি দিলো,,
আল্লাহ আমায় কোন শাস্তি দিচ্ছ আমি যে আর নিতে পারছিনা। কেন ভুল মানুষকে আমার জীবনে পাঠালে। কেন আমাকে এ কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করে দিলে যে পরীক্ষার কোন উত্তর আমার জানা নেই।
— দেখো তুমি আমায় ভুল বুঝছ। আমি মায়ের জন্য সব করছি। আমি তো ইচ্ছে করে কিছু করছিনা।
মুনতাহে কষ্টে অভিমানে সাইমুনের টিশার্ট টেনে বলছে,,
— তুমি কি চাইলে বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে পারো না। এখন তো সময় বদলে গেছে নিত্যনতুন অনেক চিকিৎসা আবিষ্কার হচ্ছে। ভালো কোথাও থেকে চিকিৎসা করালে হয়ত সব ঠিক হয়ে যাবে। আল্লাহ চাইলে ঠিক আমাদের কোলে সন্তান আসবে।
— দেখো মুনতাহা বাচ্চাদের মত কেন কথা বলছ?? ডাক্তার বলেছে তোমার মা হবার চান্স নেই। তুমি কোনদিন মা হতে পারবে না। যদি সত্যি আশার আলো থাকতো সবার থেকে আমি বেশি খুশি হতাম।
আমি জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে। আমিও তো চেয়েছি তোমার সাথে সুখে দিন কাটাতে। কিন্তু যা হচ্ছে তা আমাদের নিয়তি তে লিখা ছিলো। এটাকে আমাদের মেনে নিতে হবে।
সাইমুন মুনতাহাকে জড়িয়ে ধরে,,
সব ঠিক হয়ে যাবে বউ। একটু ধৈর্য ধর। সময় টা পার করা কঠিন কিন্তু আমি জানি তুমি চাইলে মানিয়ে নিতে পারবে।
মুনতাহা মুখ চোখ মুছে শক্ত গলায়,,
— বাহ সাইমুন কত সহজে বলে দিলে কথা গুলো। সব সময় মেয়েদের কেন মানিয়ে নিতে হয়?
একটা রিপোর্ট আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিলো।
অবশ্য ঠিক বলেছ এটা আমাদের নিয়তি। কষ্টের সময় আপন মানুষের আসল পরিচয় পাওয়া যায়। আজ যদি আমার সমস্যা না হয়ে তোমার হত তাহলে কেমন লাগতো ভেবে দেখছ??
— মাঝরাতে এসব কি শুরু করছ মুনতাহা!! তুমি বুঝতে পারছ না আমি কেন করছি। বিয়ে কি আমি শখ করে করছি!!
— বুঝেছি তোমার গায়ে বিয়ের বাতাস লেগেছে। এখন আমার কথা তো তোমার বিরক্ত লাগবেই।
— দেখ মুনতাজা তুমি জানো মা ছোটবেলা থেকে আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। বাবা না থাকার পরেও কষ্ট করে আমাদের দুই ভাই বোন কে মানুষ করেছে। আজ আমি মায়ের অবাধ্য হতে পারব না। মায়ের বদ দোআ নেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। মায়ের মুখে হাসি দেখতে চাই বুঝার চেষ্টা কর।
— আমার বদ দোআ লাগবে না??আমার ভালোবাসার কোন মূল্য নেই?
— তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি। তুমি যদি আমায় না বুঝ কে বুঝবে বলো।
— এখন কি চাও তোমার বিয়েতে আমি দাঁত কেলিয়ে হাসতাম। সবাইকে বলতাম কি মজা আমার বরের বিয়ে তাই না।
–রাত অনেক হইছে এখন এসব ভালো লাগছে না। আমার কি খুব আনন্দ হচ্ছে বিয়ে করতে। ঘর ভর্তি মানুষ আছে সিনক্রিয়েট কর না প্লিজ।
সাইমুন বুঝতে পারছে না মুনতাহা কে কি বলে বুঝ দিবে। ও জানে মুনতাহার সাথে অন্যায় হচ্ছে। অনেক স্বার্থপর হয়ে গেছে আজকাল।
মা কে কথা দিয়েছে বিয়ে করবে। মুনতাহার কষ্ট ফিল করতে পারছে কিন্তু সাইমুন নিজেকে শক্ত করে নিয়েছে। সত্যি বলতে সন্তান ছাড়া বিবাহিত জীবন একসময় ফানসে হয়ে যায়!!
একটা সময় গিয়ে সংসারের সুখের জন্য বাচ্চার দরকার হয়। সাইমুন ও তো কত স্বপ্ন দেখেছে নিজের বাচ্চাকে নিয়ে। নিজেও চায় বিয়েটা হয়ে যাক হয়ত বিয়েটা সব দিক থেকে ভালো। মুনতাহা আস্তেধীরে ঠিক হয়ে যাবে। হঠাৎ ধাক্কা সামলিয়ে উঠতে কষ্ট হচ্ছে।
মুনতাহা অঝোরে কান্না করছে। সাইমুন ইচ্ছে করে ধরছে না। কাঁদুক মন ভরে কাঁদুক…
কাঁদলে ওর মনের কষ্ট কিছুটা হলেও কমবে….
মুনতাহা বুঝেছে সাইমুন ও চায় বিয়ে টা হোক। সময় আসলে সবাই নিজের জায়গায় স্বার্থপর হয়ে যায়।
ওর কি দোষ সবার শখ থাকে বাবা ডাক শুনার।
আচ্ছা দুনিয়াতে কত দম্পতি তো বাচ্চা না হলে দত্তক নেয় । আমরা চাইলে তো দত্তক নিতে পারতাম। যাদের স্বামী সন্তান হবে না জেনেও ২ য় বিয়ে করে
না তারা কতই না ভাগ্যবতী। সবাই দুনিয়াতে সব ভাগ্য নিয়ে আসে না। আমিও আসিনি সে ভাগ্য নিয়ে।
এ দুনিয়াতে খাঁটি ভালোবাসার ভীষণ অভাব।
নাকি আমি একটু বেশি স্বার্থপর হয়ে গেছি নিজের ভালোবাসা কে নিজের করে রাখার জন্য..
…
বিয়ের ১ বছর পরে মুনতাহার শাশুড়ী মা আকার ইংগিতে বুঝিয়েছে সংসারে নাতি পুতির দরকার। উনার একা একা সময় কাটে না। মুনতাহা সাইমুন ও চাচ্ছিলো এবার তাদের কোল জুড়ে সন্তান আসুক। কয়েক মাস চেষ্টা করার পরেও যখন কোন আশার আলো পাচ্ছে না তখন দুজন মিলে ডাক্তারের কাছে গেলো।
ডাক্তার পরীক্ষা করার পর রিপোর্ট হাতে পেয়ে যা বললো তার জন্য ওরা মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। ডাক্তার বলেছে মুনতাহা কোনদিন মা হতে পারবে না।
পলিসিস্টিক ওভারি তে অনেক সিস্ট হওয়ার কারণে মুনতাহা মা হবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে।
সেদিন থেকে মুনতাহার জীবন একটু একটু করে বদলে গেলো। মুনতাহার শাশুড়ী আগে মত ভালোবেসে কথা বলে না। কথার মধ্যে বিরক্তি ভাব। রাহির কথাবার্তার মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে।
যে মানুষ গুলো খুব কাছের ছিলো সে মানুষ গুলো একটা সময় দূরে সরিয়ে দিলো যেন মুনতাহা কোন খুনের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
ধীরে ধীরে মুনতাহা যেন ঘরের বোঝা হয়ে গেলো। সরাসরি না বললেও সবাই বুঝিয়ে দিচ্ছে এ সংসারে মুনতাহার প্রয়োজন শেষ । প্রথম দিকে সাইমুন পাশে থাকালেও পরে সংসারের ঝামেলাতে আর মা বোনের কথাতে মুনতাহার প্রতি আন্তরিকতা কমে যায়।
মুনতাহা বুঝতে পারলেও অবুঝ মন কোনভাবে সায় দিত না। ভেবেছে ডিপ্রেশনে আছে বলে এমনটা লাগছে। কিন্তু যখন বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেলো মুনতাহা বুঝে গেছে সাইমুনের মনের রাজ্যে মুনতাহার রাজত্ব শেষ। সেখানে রাজত্ব করার জন্য নতুন রানীর আগমন ঘটবে।
…
আজানের সুমধুর কন্ঠ মুনতাহার কানে ভেসে আসছে।
চোখ মেলে তাকাতেই দেখে দুজন দুজনের বুকে আপন মমতায় জড়িয়ে আছে…..
……চলবে……