না চাইলেও তুই আমার

না চাইলেও তুই আমার !! Part- 34

মিরা প্রেম আর প্রিয়ার সাথে কথা বলতে শুরু করলে ফুপি অবাক হয়ে মিরাকে বলে।

ফুপি : ওরা কে? ওদের তো চিনলাম না মিরা।

মিরা : তোমাদের বলেছিলাম না আমার দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড আছে। এরা হলো আমার সেই বেস্ট ফ্রেন্ড প্রেম আর প্রিয়া।

প্রেম : আমরা সবার সাথে পরিচয় করে নেবো। সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। এখন বল আমাদের জিজু কই?

মিরা মিহানের কাছে গিয়ে এক হাত জড়িয়ে ধরে বলে।

মিরা : এই হলো আমার বর ডাক্তার মিহান চৌধুরী।আর মিহান এই দুই বাঁদর হলো আমার ছোট বেলার বন্ধু।

প্রিয়া এসে মিহানের অন্য হাত জড়িয়ে ধরে বলে।

প্রিয়া : জিজু তোমাকে কি কিউট দেখতে। এজন্যই আমাদের মিরা তোমার জন্য পাগল হয়েছে।

মিরা : ঐ গাধি আমি পাগল হয়নি তোদের জিজু পাগল হয়েছে আমার জন্য।

প্রিয়া ভেংচি দিয়ে বলে।

প্রিয়া : জানা আছে কে কার জন্য পাগল হয়েছে।

মিহান মুচকি হেসে বলে।

মিহান : থাক আর ঝগড়া করতে হবে না এখন।

মিরা : প্রেম তুই কিছু বলবি প্রিয়াকে?

প্রেম : এই প্রিয়া তুই এসেই ঝগড়া শুরু করে দিয়েছিস। আর মিরা মামু কই?

মিরা : কাজে গেছে মামু। যা তোরা ফ্রেশ হয়ে আয় একসাথে ব্রেকফাস্ট করবো।

প্রিয়া : সে না হয় করলি কিন্তু আয়ান কই?

মিরা : আয়ানো এসেছে তোদের সাথে?

প্রেম : হ্যা। কিন্তু কই গেলো?

আয়ান : এইতো আমি ভাইয়া। মাম্মা ফোন করছিল তার সাথে কথা বলছিলাম। আপু কেমন আছো তুমি?

মিরা আয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে।

মিরা : আমি ভালো আছি। তুই কেমন আছিস ভাই? এই ছাগল দুটোই কেউ আমাকে বলেনি তুই আসবি।

আয়ান : আমি বারন করছি তাই বলেনি। তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।

মিরা : বুঝেছি! পরে কথা বলবো আগে ফ্রেশ হয়ে আয়। তারপর যত কথা।

মিরা বাড়ির কাজের লোকদের বলে ওদের রুম দেখিয়ে দিতে। কিছুক্ষন পর ওরা ফ্রেশ হয়ে এলে মিরা ওদের নিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে বসে। ব্রেকফাস্ট শেষ করে মিরা সবাইকে নিয়ে হল রুমে বসে। মিরা বাড়ির সবার সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দেয়। নীলা কনফিউজড হয়ে বলে।

নীলা : আপু এদের মধ্যে কে তোমার বন্ধু কে তোমার ভাই আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। একটু পরিষ্কার করে বলবে আমায়।

মিরা একটু হেসে বলে।

মিরা : প্রথমে আমাদের কেউ দেখলে কনফিউজড হয়ে যায়। আমি ক্লিয়ার করে দিচ্ছি। প্রেম আর প্রিয়া আমার ছোট বেলার বন্ধু, আর আয়ান প্রিয়ার ছোট ভাই। এবার সব ক্লিয়ার?

নীলা : এবার সব বুঝছি।

মিরা : এবার তোমাদের আর একটু কনফিউজড করে দেই।

মিশু : মানে?

মিরা : মানে প্রেম আর প্রিয়া Husband And Wife.

সবাই অবাক হয়ে বলে।

সবাই : কী?

মিহান : ওদের দেখে তো বোঝা যায় না ওরা Husband And Wife?

মিরা হাসতে হাসতে বলে।

মিরা : তাহলে আর বলছি কি আমাদের দেখে প্রথমে সবাই কনফিউজড হয়ে যায়।

প্রেম : জিজু তুমি চিন্তা করো না। আমরা তোমাকেও আমাদের মত করে দেবো।

সেজুথি আন্টি : ওরা তো একজন আর একজনকে তুই করে বলে।

মিরা : আমি তোমাকে সব কিছু ক্লিয়ার করে দিচ্ছি। আমরা মালয়েশিয়ার যেখানে থাকি সেখানে প্রথমে প্রেমেদের বাড়ি, মাঝে আমাদের বাড়ি, তারপর প্রিয়াদের বাড়ি। ছোট বেলা থেকে একসাথে বেড়ে ওঠা। প্রিয়ার জন্য নতুন ফোন কিনলে আমার আর প্রেমের জন্যও নতুন ফোন কিনবে প্রিয়ার বাবা মা। প্রেমের জন্য গাড়ি কিনলে আমার আর প্রিয়ার জন্য নতুন গাড়ি কিনবে। আর মামু আমার জন্য কিছু কিনলে সেম জিনিস ওদের জন্য কিনতো। প্রেম আর প্রিয়ার বাবা মা আমাকে ওদের থেকেও বেশি ভালোবাসে। প্রিয়ারা দুই ভাই বোন প্রিয়া আর আয়ান। প্রেমের কোনো ভাই বোন নেই। তাই প্রেমের মা মানে আমার বড় মাম্মা সব সময় চাইতো আমার আর প্রিয়ার মধ্যে কাউকে ছেলের বউ করবে। আমি তো আগে ভালোবাসা, বিয়ে এসবে বিশ্বাস করতাম না তাই প্রেমের মা মানে বড় মাম্মা আর প্রিয়ার মা মানে ছোট মাম্মাকে বলে ওদের বিয়েটা দিয়ে দেই। বিয়ের পরও ওরা একজন আরেকজনকে তুই করে বলে। আবার একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকতেও পারে না। প্রায় সাড়ে আট মাস হতে চললো ওদের বিয়ের বয়স। এবার সব কিছু ক্লিয়ার?

নিধি হেসে বলে।

নিধি : হ্যা সব ক্লিয়ার। একদম পানির মত।

অনামিকা : কিন্তু ওদের বাবা মা আসবে না তোমার বিয়েতে?

মিরা : বড় মাম্মারা আর ছোট মাম্মার বিয়ের এক সপ্তাহ আগে আসবে।

প্রিয়া : ঐ তুই থাম এবার। আমাদের টা তো খুব বললি। এবার তোদের লাভ স্টোরি টা শুরু কর।

মিরা আড়চোখে মিহানের দিকে একবার তাকিয়ে বলে।

মিরা : আমাদের টা আবার কি? আমি কী প্রেম করে বিয়ে করছি যে আমার লাভ স্টোরি বলবো। পাগল ডাক্তারই তো আমাকে জোর করে বিয়ে করছে।

আয়ান : মানে?

মিথি : বাকিটা আমরা বলি।

মিথি, নিশু, মিশু, নিঝুম, নিধি আর নীলা মিলে ওদের মিরা আর মিহানের বিয়ের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছু বলে। সব শুনে প্রেম বলে।

প্রেম : তোদের বিয়েটা তো একদম সিনেমার মত হয়েছে।

আয়ান : তা যা বলেছো ভাইয়া।

এরপর সবাই মিলে আড্ডা দিতে থাকে, এরমধ্যে মামুরাও চলে আসে বাড়িতে। মামু ওদের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে ফ্রেশ হতে চলে যায়। দুপুরের খাবার খেয়ে মিরা আর মিহান নিজেদের রুমে চলে যায়। মিহান মিরার সাথে কথা না বলে মুখ গোমড়া করে শুয়ে পড়ে। মিরা মিহানের পাশে বসে বলে।

মিরা : কি হলো শুয়ে পড়লে যে?

মিহান কোনো কথা না বললে মিরা বলে।

মিরা : তুমি কি আমার উপর রাগ করছো?

মিহান : প্রেম তখন তোমাকে জড়িয়ে ধরছিল কেনো?

মিরা হেসে বলে।

মিরা : তুমি যা ভাবছো তা না। প্রেম আমার ভাইয়ের থেকেও বেশি। তাই ভাই হিসেবে আমাকে জড়িয়ে ধরতেই পারে।

মিহান : ভাই হিসেবে ধরলে ঠিক আছে। না হলে আমি কি করবো নিজেও জানি না।

মিরা : আচ্ছা পাগল এবার ঘুমাও। বিকেলে ঘুরতে যাবো তাই না। আমি মম ফোন করে সন্ধ্যায় আসতে বলছি প্রিয়াদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো বলে।

মিহান মিরাকে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে।

মিহান : ওকে মহারানী।

বিকেলে ঘুম থেকে উঠে মিরা, মিহান, প্রেম আর প্রিয়া মিলে ঘুরতে বের হয়। মিহান ওদের সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছে। সন্ধ্যার পর কিছুক্ষণ ঘুরে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসে। সবাই হাসাহাসি করতে করতে বাড়িতে ঢুকে। হল রুমে এসে আস্তে আস্তে মিরার মুখের হাসি মুছে যায়। হল রুমে সামনা সামনি সোফায় মিরার মা,বাবা আর অন্যেরা বসে আছে। আজ কত বছর পর মিরার বাবা মাকে একসাথে দেখলো। না চাইতেও মিরার চোখ দিয়ে বিন্দু বিন্দু পানি গড়িয়ে পড়ে। নিজের চোখ মুছে মিরা আর কিছু না বলে উপরে চলে যায়। মিরার পিছন পিছন মিহানও চলে যায় মিরার কাছে। মিরা নিজের রুমে না গিয়ে ছাদে গিয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। মিহান এসে মিরাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে থাকে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। মিরা আকাশের তারা দেখায় ব্যস্ত আর মিহান মিরাকে বোঝার চেষ্টায় ব্যস্ত। অনেকক্ষণ হয়ে গেলেও মিরা কিছু না বললে মিহান মিরাকে বলে।

মিহান : তোমাকে শক্ত হাতে হবে জান। এভাবে মন খারাপ করে থাকলে চলবে না। একটু পরেই তো মম আর পাপা আসবে তখন যদি তোমার মন খারাপ দেখে তাহলে তাদের মনের অবস্থা কি হবে বুঝতে পারছো। সেসব কথা ছেড়ে দেও আমাকে কতগুলো বকা শুনতে হবে তুমি তো জানোই। তাই নিজেকে শক্ত করো।

মিহান মিরাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে সামনের চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে মিরার গালে হাত রেখে বলে।

মিহান : তুমি কি চাচ্ছো আমি মমের হাতে কান মলা আর অনুর কাছে মার খাই।

মিহানের কথা শুনে মিরা একটু হেসে বলে।

মিরা : তুমি আমাকে এত ভালোবাসো কেনো?

মিহান : কই আমি তো তোমাকে ভালোবাসি না। আমি আমার বউকে ভালোবাসি।

মিরা মুচকি হেসে বলে।

মিরা : ঠিক আছে এবার তোমার বউকে কোলে করে রুমে নিয়ে যাও, না হলে আমি মমের কাছে তোমার নামে বিচার দিবো।

মিহান হেসে মিরাকে কোলে তুলে নেয়। মিরা মিহানের গলা জড়িয়ে ধরে, মিহানের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে থাকে।

মিহান মিরাকে নিয়ে রুমে এসে ফ্রেশ হতে বলে। মিহান সোফায় বসে ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে থাকে। মিরা ফ্রেশ হয়ে এসে তোয়ালে টা বেডে রেখে সোজা গিয়ে মিহানের কোলে বসে পড়ে। মিহান হেসে এক হাত দিয়ে মিরার কোমরে রেখে আর একহাত দিয়ে মিরার মাথা নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। মিরা মিহানের শার্টের বোতামগুলো খুতিয়ে খুতিয়ে দেখছে। প্রায় বেশ খানিকটা সময় এইভাবে কেটে গেলে মিহান মিরার মাথা তুলে কপালে চুমু দিয়ে বলে।

মিহান : কি হলো আমার বউ যে আজ এত রোমান্টিক মুডে আছে! ঘটনা কি?

মিরা মিহানের দুই কাঁধে দুই হাত রেখে হাসি মুখে বলে।

মিরা : কেনো আমার বুঝি ইচ্ছে হয় না আমার বরের সাথে রোমান্স করার।

মিহান : তাই! এখন আমারও তো ইচ্ছে করছে কিছু একটা করতে। তার কি হবে?

মিরা : তোমাকে কিছু করতে হবে না। শুধু আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকো তাহলেই হবে।

মিহান হেসে মিরাকে জড়িয়ে ধরে বলে।

মিহান : ওকে মহারানী।

চলবে… 🍁