না চাইলেও তুই আমার !! Part- 33
রাত দুটো পর্যন্ত সবাই আড্ডা দিয়ে যে যার মত ঘুমাতে চলে যায়।। পরেরদিন সকালে মিরা ঘুম থেকে উঠে দেখে মিহান এক দৃষ্টিতে মিরার দিকে তাকিয়ে আছে। মিরা মুচকি হেসে বলে।
মিরা : কখন ঘুম থেকে উঠছো? আর এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেনো?
মিহান মিরা কে আরো শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে।
মিহান : এই তো একটু আগে উঠছি আর আমি আমার বউকে দেখি।
মিরা : আর দেখতে হবে না এখন উঠো ঘুম থেকে।
মিহান : তুমি কি সত্যি চলে যাবে ওদের সাথে?
মিরা : হ্যা।
মিহান : তোমার আমার জন্য একটুও মন খারাপ করবে না?
মিরা উঠে মিহানের মাথা নিজের কোলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে।
মিরা : আমি তোমাকে কাল বলছিলাম না এই পনের দিন না তুমি আমার থেকে আলাদা থাকবে না আমি তোমার থেকে আলাদা থাকবো।
মিহান : কি করে সেটা তো বলনি।
মিরা : তুমি আজ হসপিটাল থেকে আমাদের বিয়ের জন্য ছুটি নিবে। তারপর তুমি আর আমি মিলে সারাদিন ঘুরবো, আর রাতে আগের বারের মত লুকিয়ে তোমার প্রিয় চায়ের দোকানে চা খেতে যাবো তারপর লং ড্রাইভে। চলবে তো?
মিরার কথা শুনে মিহান লাফ দিয়ে উঠে মিরার কপালে চুমু দিয়ে মিরার দুই কাঁধে দুই হাত রেখে বলে।
মিহান : চলবে মানে দৌড়াবে। বাহ! বাহ! আমার বউয়ের কত বুদ্ধি।
মিরা : দেখতে হবে না বউ কার। এখন উঠো ফ্রেশ হয়ে নিচে চলো।
মিহান : আচ্ছা চলো।
মিরা, মিহান ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করতে বসে। মিরা মামু মিরার বাবাকে বলে।
মামু : নিলয় আমি চাচ্ছি মিরা বিয়ে টা আমাদের বাড়ি থেকে হোক।
মিরার বাবা : আমার থেকে মিরার উপর তোর অধিকার বেশি। তুই মিরার ব্যপারে যা বলবি তাই হবে।
মামু : তাহলে মিরার বিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে হবে। মিরা তুই খেয়ে রেডি হয়ে নেয়।
মিহান : মামু আমি মিরা কে বিকেলে গিয়ে দিয়ে আসবো।
মামু : ঠিক আছে। নিলয় বিকেলের মধ্যে তোরা সবাই আমাদের বাড়িতে চলে আসবি। তোর মেয়ের বিয়ে বলে কথা।
মিরার বাবা : তা ঠিক।
আরও অনেক কথা বলে বিয়ের ব্যপারে সবাই। ব্রেকফাস্ট করে সবাই যে যার কাজে চলে যায়। মিহান মিরা রেডি হতে বলে নিজে রেডি হতে চলে যায়। মিরা শাড়ি পরে কুচি ঠিক করতে করতে মিহানকে বলে।
মিরা : আমাকে রেডি হতে যে বলছো এখন কোথায় যাবো?
মিহান : এখন তোমাকে নিয়ে হসপিটালে যাবো তারপর হসপিটাল থেকে ছুটি নিয়ে ঘুরতে যাবো।
মিরা : এখন তোমার সাথে হসপিটালে গিয়ে কী করবো? তার থেকে বরং আমি অফিসে যাই ,সব কাজ ম্যানেজার কে বুঝিয়ে দিয়ে আসি, এতদিন মামু অফিসে যেতে পারবে না আমি। তুমি হসপিটাল থেকে ছুটি নিয়ে সোজা অফিসে চলে আসবে কেমন?
মিহান : আচ্ছা তুমি অফিসে যাও, আমি দুই তিন ঘন্টার মধ্যেই চলে আসছি।
মিরা মিহানকে বলে অফিসে জন্য বেরিয়ে যায়। মিরা অফিসে ঢুকলে অফিসের সবাই হা করে মিরার দিকে তাকিয়ে থাকে। আজ মিরা প্রথম শাড়ি পরে অফিসে এসেছে। মিরা সে দিকে না তাকিয়ে নিজের কেবিনে চলে যায়। কিছুক্ষন পর ম্যানেজার কে ডেকে সব কিছু বুঝিয়ে দেয় মিরা। মিরা ডেনিকে ডেকে বলে।
মিরা : ডেনি কাল সকালে একবার এয়ারপোর্টে যেতে হবে।
ডেনি : কেনো মেম কেউ আসবে?
মিরা : প্রেম আর প্রিয়া আসবে।
ডেনি : তাহলে তো তারাই বাড়ি মাথায় তুলে নাচবে। অনেক দিন হয়েছে প্রেম স্যার আর প্রিয়া মেমের সাথে কথা হয় না।
মিরা ডেনির কথা শুনে হেসে বলে।
মিরা : কাল ওদের সাথে মন খুলে কথা বলো।
মিরা ডেনির সাথে কথা বলার সময় কে জেনো কেবিনের দরজা নক করে। মিরা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে মিহান।
মিরা : এসে গেছো? কিছু খাবে না এখনি বেরিয়ে যাবে?
মিহান : বাইরে কোনো রেস্টুরেন্টে খাবো চলো।
মিহান মিরাকে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। মিহান মিরাকে নিয়ে সারাদিন ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যার পর মিরাকে নিয়ে যায় ওর মামুর বাড়ি।এরমধ্যে খান বাড়ির সবাই এসে গেছে এ বাড়িতে।সবার সাথে অনেক মজা করে একসাথে ডিনার করে। মিহান বাড়ি ফেরার সময় মিরার কপালে চুমু দিয়ে দিয়ে মন খারাপ করে বলে।
মিহান : আসি তাহলে?
মিরা : হুম। আর কাল সকালে চলে এসো একটা সারপ্রাইজ আছে।
মিহান : ওকে মহারানি এখন আসি?
মিরা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।মিহান চলে গেলে মিরা ওর ভাই বোনদের সাথে কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে ঘুমতে চলে যায়।
পরেরদিন সকালে মিহান এসে দেখে মিরা এখনো ঘুমাছে। মিহান একা একা বিড়বিড় করে বলে।
মিহান : আমার ঘুম কেড়ে নিয়ে কি শান্তিতে ঘুমোচ্ছে। দাঁড়াও তোমার ঘুম আমি বের করছি।
মিহান গিয়ে মিরার উপর শুয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বলে।
মিহান : বউ! বউ! ও বউ! তুমি আমার ঘুম কেড়ে নিয়ে নিজে শান্তিতে ঘুমাচ্ছো।
মিরা পিটপিট করে চোখ খুলে মিহানকে দেখে মুচকি হেসে মিহানের গাল জড়িয়ে ধরে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে।
মিরা : তুমি এসে গেছো। এখন একটু ঘুমাতে দেও আমায়। কাল সারা রাত তোমার জন্য ঘুমাতে পারিনি। ভোরের দিকে চোখটা লেগে এসেছে।
মিহান : এখন আর ঘুমাতে হবে না ওঠো। আমাকে না কি সারপ্রাইজ দিবে?
মিরা : বাজে কয়টা?
মিহান : প্রায় দশটা বাজতে চললো। এবার উঠো।
মিরা : আচ্ছা তুমি নিচে যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
মিহান মিরার কপালে চুমু দিয়ে বলে।
মিহান : ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি এসো।
মিহান নিচে চলে গেলে মিরা উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসে। মিরাকে দেখে ওর ফুপি বলে।
ফুপি : চল ব্রেকফাস্ট করে নিবি। সবাই ব্রেকফাস্ট করে নিয়েছে। শুধু আমি, নিশু, নীলা, আর নিধি তোর জন্য বসে আছি।
সেজুথি আন্টি : যাও মিরা আর দেরি করো না। খেয়ে আসো।
মিরা : ফুপি তোমরা খেয়ে নাও। আমি কিছুক্ষণ পর খাবো।
ফুপি : সে কি কেনো?
মিরা : এমনি।
মিরা সবাইকে জোর করে খেতে পাঠিয়ে দিলো। মিরা সোফায় বসে কি জেনো ভাবছে তখন মিহান বলে।
মিহান : কী হলো খেতে গেলে না কেনো? আমি খেয়ে এসেছি। মম আমাকে জোর করে খাইয়ে পাঠিয়েছে।তুমি খেয়ে নাও।
মিরা : এইতো একটু পর খাবো। তুমি বসো।
মিরা মিহান কথা বলতে থাকে, হঠাৎ ডোর বেল বাজালে মিশু গিয়ে দরজা খুলে দেয়। মিরা সোফা থেকে উঠেলে ঝড়ের গতিতে একটা মেয়ে এসে মিরাকে জড়িয়ে ধরে।
মিরা : প্রিয়া ছাড় এবার না হলে দম আটকে মরে যাবো তো।
প্রিয়া : কেমন আছিস। আমাদের তো একেবারে ভুলে গেলি এখানে এসে। জিজু কই আমাদের?
মিরা : এসেই জিজু জিজু শুরু করে দিয়েছিস। প্রেম কোথায়?
প্রেম এসে মিরাকে জড়িয়ে ধরে চারদিকে ঘুরাতে ঘুরাতে বলে।
প্রেম : তোকে আমি কত মিস করছি জানিস তুই?
মিরা : বুঝছি ছাড় এবার।
প্রেম মিরার কথা মত ওকে ছেড়ে দেয়। বাড়ির সবাই হা করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে মিহানের রেগে চোখ লাল হয়ে গেছে। না জানি কখন কি হয়েছে যার।
চলবে… 🍁