না চাইলেও তুই আমার

না চাইলেও তুই আমার !! Part- 31

মিরা মিহানকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় বারবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে উঠছে। মিহান মিরাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মিরার চোখ মুছে দিয়ে বলে।

মিহান : কাঁদছো কেনো? আমি বকছি?

মিরা মাথা নেড়ে না বলে।

মিহান : তাহলে কাঁদছো কেনো?

মিরা : এটা আমার জীবনের সবথেকে বেষ্ট সারপ্রাইজ। তাই খুশিতে কান্না করছি।

মিহান মিরার দুই হাত তুলে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে।

মিহান : সারপ্রাইজ শেষ হয়নি এখনো আছে।

মিরা কিছু বলার আগে কাকে যেনো ফোন করে, কিছুক্ষন পর একটা লোক এসে কিছু বক্স দিয়ে যায় মিহানের হাতে। মিহান ফুলের পাপড়ির উপর বসে মিরাকে বলে।

মিহান : আমার পাশে এসে বসো।

মিরা মিহানের কথা মত ওর পাশে বসতে গেলে মিহান মিরার হাত টান দিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়। মিরা ভয় পেয়ে মিহানের শার্ট খামচে ধরে।মিরার মুখে আসা চুলগুলো যত্ন সহকারে সরিয়ে দেয়। মিহান মিরার পরে থাকা কানের দুল খুলে পাশের বক্স থেকে ডায়মন্ডের দুল বের করে পড়িয়ে দেয়, একে একে ডায়মন্ডের গলায় হার, হাতে চুড়ি, সিম্পল বেলি চেইন পড়িয়ে দেয়। মিহানের ছোঁয়ায় মিরারা বারবার কেঁপে উঠছে। মিরা কে একটা আংটি পরিয়ে দিয়ে হাতে চুমু দিয়ে, মিরার কপালে কপাল ঠেকিয়ে আছে। মিরা দুই হাত মিহানের দুই গালে রেখে বলে।

মিরা : তোমার বউয়ের জন্য এতকিছু কখন করলে?

মিহান একটু হেসে, মিহানের গালে মিরার হাতের উপর হাত রেখে বলে।

মিহান : তুমি যখন রাজশাহীতে গেছিলে তখন আমি নিজে পছন্দ করে এই সব কিছু কিনি। বাসর রাত তোমাকে উপহার দেবো বলে। কিন্তু তখন আর দেওয়া হয়নি। তোমার জন্য নোস পিনও কিনেছি কিন্তু তুমি তো নাক ফুটাও নি তাই সেটা যত্ন করে রেখে দিয়েছি।

মিরা হেসে মিহানের বুকে মাথা রাখে।

চৌধুরী বাড়ির হল রুমে আছে খান বাড়ি আর মিরার মামুর বাড়ির সবাই। মিহানের পাপা জরুরি ফোন করে সবাইকে ডেকে এনেছে। বাড়ির বড়রা একপাশে বসে কথা বলছে আর ছোটোরা অন্যপাশে।

মামু : অনেক তো কথা হলো কিন্তু কি জন্য আমাদের এত জরুরি তলব আকাশ?

পাপা : মিরা মিহানের বিয়েটা তো কোনো রকম ভাবে হয়ে গেছে। আমি আর মিহানের মম চাচ্ছি ওদের বিয়েটা দুমদাম করে দিতে। এখন তোমাদের মতামতের জন্য ডাকা।

মিরার বাবা : সে তো ভালো কথা। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

মামু : আমিও চাই আমার মামনির বিয়ে দুমদাম করে হোক।

মামা : তাহলে তারিখ কবে ঠিক হবে?

পাপা : পনের দিন পর মানে সামনের পাঁচ তারিখ ঠিক করলে কেমন হয়?

মামু : মাত্র পনের দিনে কি করে সব কিছু মেনেজ করতে পারবো? আমার মনে হয় কম পক্ষে এক মাস সময় লাগবে।

মিহানের পাপা একটু হেসে বলে।

পাপা : মিহান পনের দিনের জন্য মিরাকে ছাড়ে না কি সেটা দেখো। আর তুমি চাচ্ছো এক মাস সময়। তাহলে বুঝতে পারছো কি হবে?

মিহানের পাপার কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। ছোটোরা একসাথে কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে নীলা জিজ্ঞাসা করে।

নীলা : আপু আর জিজুকে দেখছি না তারা কোথায় গেছে?

অনু বলার আগে মিশু বলে।

মিশু : জিজু আপুকে কোথায় যেনো নিয়ে গেছে বললো কি না কি সারপ্রাইজ দিবে।

নিধি : কি সারপ্রাইজ দিবে?

মিথি : ভাইয়া কে জিজ্ঞাসা করছিলাম ভাইয়া কিছু বলেনি!

অনু ফোন টিপতে টিপতে বলে।

অনু : ভাইয়া আজ ভাবীকে প্রপোজ করবে।

সবাই অবাক হয়ে বলে।

সবাই : কী?

নিশু : জিজু আগে আপুকে প্রপোজ করেনি?

অনু ফোন থেকে মুখ তুলে বলে।

অনু : আমার মনে হয় না।

নিঝুম : তুই কি করে জানলি?

অনু : ভাইয়া বিকালে বাড়ি এসে রেডি হয়ে কি কি জিনিস নিয়ে কার রেখে ওর বাইক নিয়ে চলে যায়। ওর রেডি হওয়ার সময় আমি একবার ওর রুমে গেছিলাম তখন জিজ্ঞাসা করি এত সেজে গুজে কোথায় যাচ্ছে? তখন ভাইয়া বলে ভাবীকে প্রপোজ করতে যাচ্ছে।

নিশু : আজ আপু আর জিজু এলে ভালো করে চেপে রাখতে হবে।আর জিজুর থেকে তো ট্রিট নিতে হবে। আজ আর ছাড়ছি না।

নিশুর কথা শুনে সবাই জোরে হেসে উঠে।

মিহান ফুলের পাপড়ির উপর শুয়ে আছে আর মিরা মিহানের বুকের উপর মাথা রেখে এক হাত দিয়ে মিহানের বুকের উপর আকি বুকি করছে। মিহান আকাশে দিকে তাকিয়ে বলে।

মিহান : বাড়ি যাবে না?

মিরা : উহু।

মিহান : কেনো?

মিরা : এখানে তোমার সাথে থাকতে ভিশন ভালো লাগছে।

মিহান হেসে বলে।

মিহান : আচ্ছা তোমার গিফটগুলো পছন্দ হয়েছে?

মিরা মাথা তুলে মিহানের বুকের উপর দুই হাত রেখে তার উপর থুতনি রেখে বলে।

মিরা : খুব পছন্দ হয়েছে।

মিহান : আচ্ছা শোনো তোমার হাতের রিং আর বেলি চেইন এই দুটো কখনো খুলবে না। কেমন?

মিরা : কেনো?

মিহান : রিং টা হলো আমাদের Engagement ring আর বেলি চেইন টা হলো,,,

মিরা : কি থামলে কেনো বেলি চেইন টা কি?

মিহান : বেলি চেইন টায় তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাই ওটা কখনো খুলবে না।

মিরা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বলে।

মিরা : ধ্যাত তুমিও না।

মিহান মিরার মাথায় চুমু দিয়ে বলে।

মিহান : সত্যি বলছি জান। ইচ্ছে করছে,,,

মিহানকে বলতে না দিয়ে মিহানের মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে।

মিরা : এই তুমি চুপ করবে। আমাকে লজ্জায় না ফেললে তোমার হয় না।

মিহান হাত সরিয়ে বলে।

মিহান : আচ্ছা এখন আর লজ্জায় ফেলবো না চলো বাড়ি যাই না হলে মম চিন্তা করবে।

মিরা : কিন্তু এই ফুলের পাপড়ি, মোমবাতি গুলোকে পরিষ্কার করবে কে?

মিহান : তুমি চিন্তা করো না আমি ফোন করে দিচ্ছি লোক এসে পরিষ্কার করে যাবে তুমি চলো।

মিহান ফোন করে সব পরিষ্কার করতে বলে। মিরাকে কোলে তুলে নেয়। মিরা আজ কিছু না বলে মিহানের গলা জড়িয়ে ধরে মিহানের দিকে তাকিয়ে আছে। মিহান বাইকে বসে মিরাকে বসতে বলে।

মিহান : কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেনো বসো।

মিরা : আমি তোমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতে পারবো না।

মিহান : তাহলে?

মিরা মিহানের দিকে তাকিয়ে আছে, মিহান কিছুক্ষণ পর মিরার কথা বুঝতে পেরে মাথা চুলকে বোকা বোকা হেসে মিরার হাত ধরে সামনে বসিয়ে দেয়। মিরা অবাক হয়ে মিহানকে বলে।

মিরা : তুমি বুঝলে কি করে?

মিহান মিরার নাক টিপ দিয়ে বলে।

মিহান : তুমি যে আমার আত্মাপাখি। তোমাকে বুঝবো না তো কাকে বলবো।

মিরা হেসে মিহানকে জড়িয়ে ধরে বুকের মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে বলে।

মিরা : আস্তে বাইক চালাবে কিন্তু।

মিহান : ওকে মহারানী। আগে সেলফি তুলে অনুকে পাঠিয়ে দেই না হলে ও আমাকে আস্তো রাখবে না।

মিরা : অনুকে ছবি পাঠাতে হবে কেনো?

মিহান : ও জানে আজ আমি তোমাকে প্রপোজ করবো। ও বলছিল তুমি হ্যা বললে তখন কিছু ছবি তুলে ওকে পাঠিয়ে দিতে কিন্ত তখন মনে ছিলো না। তাই।

মিরা : তাই বলে আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে আছি, আর তুমি এইভাবে ছবি তুলে ছোট বোনকে পাঠাবে?

মিহান : তো কি হয়েছে? আমি যখন তোমার প্রপোজ করছি তখন দুজন লোক আমাদের এই মুহুর্তেগুলোর ভিডিও করছে আর ছবি তুলছে। ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই ছবিগুলো আর ভিডিওগুলো আমার ফোনে পাঠিয়ে দিবে, আর এখন তুমি চুপচাপ বসো আমাকে সেলফি তুলতে দেও। তারপর সব ছবি একবারে অনুকে পাঠিয়ে দিবো।

মিরা অবাক হয়ে বলে।

মিরা : তুমি যখন আমাকে এসব গয়না পরিয়ে দিচ্ছিলে তখনো কি ছবি তুলছে?

মিহান : তোমাকে যখন আমার কোলে বসাই তখন ওদের ফোনে মেসেজ করে চলে যেতে বলি। এবার বুঝলে মহারানী?

মিরা মাথা নেড়ে হ্যা বলে। মিহান ফোন টিপতে টিপতে বলে।

মিহান : এই দেখো সব ছবি পাঠিয়ে দিয়েছে। দাঁড়াও আর কিছু সেলফি তুলে অনেক পাঠিয়ে দেই।

মিরা আর কিছু না বলে চুপ করে বসে থাকে আর মিহান বিভিন্ন স্টাইলে সেলফি তুলতে থাকে। মিহান ছবি তুলে অনুকে কিছু ছবি পাঠিয়ে দিয়ে বাইক চালানো শুরু করে। মিরা মিহানের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে থাকে। মিরা সময়টা উপভোগ করতে থাকে।

অনু হঠাৎ করে সবার মাঝে দাঁড়িয়ে বলে।

অনু : আমি যদি ভাইয়া ভাবীকে প্রপোজ করছে তা তোমাদের দেখতে পারি তাহলে তোমরা আমাকে কি দিবে?

সবাই কম বেশী অবাক হয় অনুর কথায়। মিথি অনুকে বলে।

মিথি : কি বলছিস কিছুই তো বুঝতে পারছি না।

অনু : ধরো ভাইয়া ভাবীকে যে প্রপোজ করছে তার ভিডিও বা ছবি যদি দেখাই তাহলে?

আরিফ : তাহলে তুমি আমাদের যার কাছে যা চাইবে তাই পাবে।

অনু : সত্যি?

আরিফ : একদম সত্যি।

অনু : মিথি আপু তুমি গিয়ে মহিলা পার্টিকে ডেকে নিয়ে এসে আর পাপারা যেনো না আসে।

মিথি : আচ্ছা আমি যাচ্ছি।

মিথি সবাইকে ডেকে আনলে অনু টিভির সাথে ওর ফোনের সাথে কানেক্ট করে মিহানের প্রপোজের ভিডিও টা চালু করে দেয়। ভিডিও শেষ হলে মম বলে।

মম : এটা কোনো প্রপোজ হলো, আগে জানলে প্রপোজটা আমি শিখিয়ে দিতাম।

মিহানের মমের কথা শুনে সবাই হা হয়ে যায়।

অনু : মম তুমি মজা পরে করো। এখন তোমরা শোনো আমার একটা খরগোশের বাচ্চা লাগবে কে এনে দিবে সেটা বলো।

জারিফ : তুমি আমাদের এত সুন্দর একটা ভিডিও দেখালে যাও আমি তোমাকে খরগোশের বাচ্চা এনে দেবো।

অনু : সত্যি ভাইয়া?

জারিফ : সত্যি।

মিথি : দেখলি অনু ভাইয়া টা কি ফাজিল ভাবীকে কোলে বসানোর পরের ভিডিও টা তোকে দিলো না।

ফুপি : তোরা তোদের বড় বোনের প্রেম নিয়ে এতো টানা টানি করছিস কেনো? ও না তোদের বড়ো?

নিঝুম : মা তুমি জানো না বড় ভাই বোনের গোপন প্রেম উদ্ধার করার মজাই আলাদা।

সবাই এতক্ষণ মুখ টিপে হাসলেও নিঝুমের কথায় জোরে হেসে দেয়।

চলবে… 🍁