না চাইলেও তুই আমার

না চাইলেও তুই আমার !! Part- 20

রাতের খাবার খেয়ে মিরা নিজের রুমে চলে যায়।মিরা কিছুক্ষন আগের অনুভূতি গুলো মনে করতে থাকে। মিহান কিছূক্ষন আগেও মিরাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে ছিলো, ভাবতেই অনুভূতি গুলো কেমন ধলা পাকিয়ে আসছে। নিঝুম এসে খাবার জন্য না ডাকলে হয়তো মিহান তাকে জড়িয়ে ধরে থাকতো এখনো!মিহান খাবার খেয়ে হল রুমে বসে নিঝুম, নীলা, নিধির সাথে গল্প করছে। বারোটার দিকে দিকে মিহান মিরার রুমে গিয়ে দেখে মিরা ঘুমিয়ে পড়ছে। তা দেখে মুচকি হেসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে, বারান্দার পর্দা গুলো সরিয়ে দিয়ে রুমের লাইট বন্ধ করে দেয়। চাঁদের এক ফালি আলো বারান্দায় উকি দিচ্ছে।মিহান আদ শোয়া হয়ে বসে মিরাকে আস্তে করে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ মিরার ঘুম ভেঙ্গে যায়। মিরা উঠতে গিয়ে দেখে ও উঠতে পারে না। মিহান এক হাত মিরার কোমরে আর এক হাত মিরার মাথায় দিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে। মিরা নড়াচড়া দেখে মিহান বলে।

মিহান : নড়ো না জান। চুপ করে শুয়ে থাকো?
মিরা মাথা তুলে মিহানের দিকে তাকিয়ে বলে।
মিরা : আপনি আমার রুমে কেনো? আর এভাবে জড়িয়ে ধরে আছেন কেনো?
মিহান : বউয়ের ঘরে থাকবো না তো কোথায় থাকবো। আর আমি তো শুধু জড়িয়ে ধরে আছি। আজ তো আমাদের বাসর রাত চাইলে আরো কিছু করতে পারি।
মিরা লাফ দিয়ে মিহানের বুকের উপর থেকে সরে যায়।
মিরা : কি বলছেন এসব?
মিহান হেসে আবার মিরাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে।
মিহান : যা সত্যি তাই বলছি।
মিরা : দেখুন আমি বিয়ে টা মেনে নিতে পারছি না আবার অস্বীকার ও করতে পারছি না।আপনি তো সবই জানেন আমার সম্পর্কে।আমি ভালোবাসা বিয়ে এসব সম্পর্কে কখনো জড়াতে চাইনি।তাই বারবার আপনাকে এভয়েট করে গেছি। আপনি হঠাৎ করে এসে আমার জীবনের সাথে আষ্ঠে পিষ্ঠে জড়িয়ে গেছেন। আমি বলছি না যে আমি এ সম্পর্ক মেনে নিতে পারবো না। আমাকে একটু সময় দিন আপনাকে বোঝার, আপনার সাথে মানিয়ে নেওয়ার। আমার জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষ আমার মামু। মামু যখন আপনার সাথে আমার বিয়ে দিয়েছে তাহলে মামু অনেক ভেবে চিন্তে এই কাজটা করেছে। প্লিজ আমাকে মানিয়ে নিতে একটু সময় দিন।

মিহান মিরা কথা শুনে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে।
মিহান : তুমি আমাকে বুঝতে চেয়েছো এটাই আমার জন্য অনেক। তুমি যা চাইবে তাই হবে জান।
মিরা : আপনার কাছে আমার একটা রিকোয়েস্ট আছে।
মিহান : এভাবে বলছো কেনো তোমার যা মনে আসে তাই তুমি আমাকে বলতে পারো। কি রিকোয়েস্ট?
মিরা : ডিনার টেবিলে আপনার পাপা বলছিল কিছুদিন পর আপনার চাচাতো বোন মিথির বিয়ে।তারপর আপনার আর আমার বিয়ে টা আবারো‌ বড় অনুষ্ঠান করে দিতে চায়।
মিহান : হ্যা। মিথির বিয়ের অনুষ্ঠান দুই দিন পর থেকে শুরু হয়ে যাবে। তোমাকে বলেছিলাম না আমি হসপিটাল থেকে ছুটি নেবো। এজন্যই আমি ছুটি নিয়েছি।
মিরা : আগে আমার কথাটা সম্পূর্ণ করতে দিন তারপর আপনি বলবেন।
মিহান : বলো।
মিরা : আমি বিয়ের সময় শর্ত দিয়েছিল মামুকে বিয়ে করতে হবে। মামু আমার জন্য সারা জীবন অনেক কষ্ট করেছে। মা বাবা ভাই বোন সবাইকে ছেড়ে আমাকে আপন করে নিয়েছে। আমার জন্য বিয়ে পর্যন্ত করেনি। আমি চাই আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে আগে একটা ভালো মেয়ে দেখে মামুর বিয়ে দিবো।মামু আর মামি মিলে আমাকে আপনার হাতে তুলে দিবে। তাই মামুর বিয়ের আগে আমি কোনো অনুষ্ঠান করতে পারবো না।
মিহান : ঠিক আছে মহারানী আপনার কথাই হবে। তবে আমি মনে হয় তোমাকে একটা হেল্প করতে পারি।
মিরা : কি হেল্প?
মিহান : তোমার মামু কলেজ লাইফে একজনকে ভালোবাসতো।
মিরা চমকে উঠে বলে।
মিরা : কি?
মিহান : হুম।
মিরা : আপনি কি করে জানলেন?
মিহান : আমি বলতে পারি কিন্তু তুমি মন খারাপ করে কান্না করতে পারে না।
মিরা : ঠিক আছে আপনি বলুন।

মিহান : তোমার বাবা,মা, মামু যে কলেজে পড়তো সেই কলেজে তোমার মামুর দুই ব্যাচ জুনিয়র ছিলো আমার মম।কলেজের সিনিয়রদের সবাই চিনতো তাই মম ও তাদের চিনতো। তোমার মা বাবার ভালোবাসার কথা কলেজের সবাই জানতো। তোমার মামু সেজুথি নামে একটা মেয়েকে ভালোবাসতো।সেজুথি মমের ফ্রেন্ড ছিলো। সেজুথি সেও নাকি তোমার মামুকে খুব ভালোবাসতো। কলেজ শেষে হওয়ার আগেই তোমার বাবা মা বিয়ে করে নেয়।মামু নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল কিন্তু সেজুথির বড় ভাই সিরাজের জন্য তোমার বাবা মার মধ্যে ঝামেলা শুরু হয় তখন মামু সেজুথিকে বুঝেছে যেনো তোমার বাবা মার জীবন থেকে সিরাজ যেনো সরে যায়।মামু তখন ব্যবসার জন্য মালয়েশিয়া চলে যায়। ফিরে এসে দেখে তোমার বাবা মা আলাদা হয়ে গেছে যে যার মত বিয়ে করে নিয়েছে। তোমাকে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার আগে কলেজে গিয়ে সবার সামনে সেজুথিকে অনেক অপমান করে।মামু মনে করে তার আর তার ভাইয়ের জন্য তার আদরের ভাগ্নির এই অবস্থা।সেখানেই তার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে তোমাকে নিয়ে মালয়েশিয়া চলে যায়।এতে সেজুথির কোনো দোষ ছিলো না।কলেজ শেষ করার পর মমের সাথে তার আর যোগাযোগ হয়নি। এসব কথা আমি মমের কাছ থেকে জেনেছি। মম তোমার মামুকে দেখেই চিনে পারে পরে আমাদেরকে সব কিছু বলে।

মিহান এইটুকু বলে থামে।অনুভব করে তার বুকের উপর মিরার চোখের পানি পড়ছে। মিহান মিরার মাথা তুলে দেখে সত্যি মিরা কান্না করছে। কোনো শব্দ হচ্ছিল না শুধু চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।মিহান মিরা চোখের পাতা মুছে দিয়ে বলে।

মিহান : কি হয়ছে কান্না করছো কেনো? আমি তোমাকে কি বলেছিলাম একটু আগে?

মিরা : মামু আমার জন্য তার ভালবাসার মানুষ টা কে পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছে? আসলে আমার ভাগ্য ই ভালো না। যেখানে যাবো সেখানেই অশুভ কিছু হবে।

মিহান : দেখো আমার রাগ উঠাবা না এখন। কে বলেছে তুমি অশুভ। তুমি অশুভ হলে বিজনেসে এত সাফল্য অর্জন করতে পারতে না।এখন এসব কথা ছাড়ো।মিথির বিয়ের পর আমরা মামুর সেজুথিকে খুঁজে বের করবো। সেও যদি মামুর মত বিয়ে না করে থাকে। যদি এখনো মামুর জন্য পথ চেয়ে অপেক্ষা করে থাকে। আমাদের তাকে খুঁজে বের করতে হবে মিরা।

মিরা : জানেন নানা নানুর প্রথম সন্তান মামু। তারপর নানুর মেয়ে। সবার ছোট পিচ্ছি মামা মানে নবীন মামা। নবীন মামাও আমাকে খুব ভালোবাসতো। পরিবারের প্রথম সন্তানের সাথে অনেক অনুভূতি জড়িয়ে থাকে। মামুর বেলায়ও তাই। মামুকে নানু অনেক ভালোবাতো। মামু আমার জন্য তার পরিবারের সবাইকে ছেড়ে আমাকে নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যায়। আমি অনেকবার মামুকে বলেছি নানা নানুর সাথে যোগাযোগ করতে। কিন্তু মামুর ঐ এক জেদ তার অবর্তমান তার বোনকে ডিভোর্স করিয়ে আবার বিয়ে দিয়েছে তাকে একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি। মামুও নানুর জন্য কষ্ট পায়।আমি কখনো কাউকে এসব কথা বলেনি কিন্তু আপনাকে কেনো জানি বলতে ইচ্ছে করছিল, আপনার বুকে মাথা রেখে খুব শান্তি পাচ্ছি।আগে কখনো এমন হয়নি। আপনি পারবেন সব কিছু ঠিক করে দিতে? মামুকে তার বাড়ি তার ভালবাসার মানুষ ফিরিয়ে দিতে পারবেন?

মিহান : তুমি আমার সাথে থাকলে আমি সব পারবো।

অনেক রাত পর্যন্ত মিরা আর মিহান কথা বলে। কখন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে টেরই পায়নি কেউ।

সকালে চেঁচামেচির আওয়াজে মিরার ঘুম ভেঙ্গে যায়। মিরা উঠতে গিয়ে দেখে মিহান এক হাত কোমরে আর এক হাত পিঠে দিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে। নিজের এই অবস্থা দেখে মিরা মুচকি হেসে দেয়। আস্তে করে মিহানের হাত সরিয়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।মিরা নিচে গিয়ে দেখে সবাই কি নিয়ে আলোচনা করছে। মিরা মামুকে বলে।

মিরা : মামু বাইরে এত চেঁচামেচি কিসের?

মামু : মিডিয়ার লোকজন এসেছে। তোর বিয়ের খবর কোনো ভাবে জেনে গেছে।

মিরা : ডেনি কিভাবে এসব হয়েছে?

ডেনি : মেম আপনার বিয়ের ছবি নিধি মেম, নিঝুম মেম, অনু মেম সোশাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিয়েছে। সেখান থেকেই খবর পেয়েছে মিডিয়ার লোকজন।

মিরা একবার নিধি আর নিঝুমের দিকে তাকায়। ভয়ে ওদের গলা শুকিয়ে যাবার মত অবস্থায়।

মিরা : সব যখন যেনে গেছে। তাহলে এভাবে চেঁচামেচি করে কি হবে তাদের চলে যেতে বলো।

ডেনি : বলেছি মেম কিন্তু তারা আপনার সাথে কথা না বলে যাবে না।

মিরা : আচ্ছা ভিতরে নিয়ে এসো।

মিডিয়ার লোকজন ভিতরে এসে এক ঘাধা প্রশ্ন করতে থাকে মিরাকে। মিরা সব সামলে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে দেখে মিরা রেডি হচ্ছে। মিরাকে দেখে একটা হাসি দিয়ে বলে।

মিহান : রেডি হয়ে নেও। একটু পরে আমরা বেরিয়ে যাবো। আজ শাড়ি পরো প্রথম শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে বলে কথা।

মিরা : আমি আরো একবার আপনাদের বাড়ি গেছিলাম। আপনার নামে বিচার দিতে।

মিহান মিরার পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে।

মিহান : জানি আমি। মম সেদিন তোমাকে তার হাতের চুড়ি পড়িয়ে দিয়েছিল।

মিরা : আপনি কি করে জানেন?

মিহান : তোমার হাতে মমের চুড়ি দেখে চিনে যাই। পরে মম সবকিছু বলছে।

মিরা : অহহহ।

মিহান : শোনো আমি আর তুমি আজ রাতে চাঁদপুরের জন্য বেরিয়ে যাবো।পরশু মিথির বিয়ে। অনু যেতে পারবে না ওর ক্লাস টেস্ট চলছে। মম আর পাপা ওকে ছেড়ে যাবে। আবার কেউ না গেলে খারাপ দেখায় তাই মম তোমাকে আর আমাকে যেতে বলেছে। কল গায় হলুদ, পরশু বিয়ে। দুটো দিন থাকতে হবে চাঁদপুরে। শোনো অল্প কিছু ড্রেস নিলেই হবে।মিথির বিয়েতে পরে যাবার জন্য ড্রেসগুলো আমি আগেই কিনে রেখেছি তোমার জন্য।

মিরা : ঠিক আছে। আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি।

মিহান মিরাকে ছেড়ে দিলে মিরা রেডি হতে চলে যায়।

চলবে… 🍁