না চাইলেও তুই আমার !! Part- 06
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে যায় কিন্তু মিরা ওর রুম থেকে বের হয় না। মিরা আজ অফিসে ও যায়নি। শুধু ভেবে যাচ্ছে কি করে মিহান নামক উটকো ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মিরা ডেনিকে মিহানের বিষয়ে খোজ নিতে বলেছে।নিরা সে সকাল থেকে মিরার কাছে আসতে চাচ্ছে কিন্তু তাকে কেউ আসতে দিচ্ছে না,কারন নিরা গিয়ে কি বলতে কি বলে দিবে তার ঠিক নেই।মিহান মিরার ফোন বন্ধ পেলে মিরার বাড়িতে ফোন করে সবকিছু জানে।এইমাত্র ডেনি মিহানের বেপারে সব খবর নিয়ে আসে।
ডেনি : মেম!
মিরা : সবকিছু জানতে পেরেছো?
ডেনি : হ্যা,মেম।
মিরা : তাহলে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? বলো সবকিছু।
ডেনি : মিহান স্যারের বাবার নাম আকাশ চৌধুরী, মায়ের নাম মায়া চৌধুরী। মিহান স্যারের ছোট একটা বোন আছে আরিশা চৌধুরী। ভালোবেসে সবাই অনু বলে ডাকে। চৌধুরী গ্রুপ অফ কোম্পানির ওনার তার বাবা। স্যারকে কলেজ লাইফে অনেক মেয়ে প্রপোজ করেছে কিন্তু স্যার কখনো এসব বিষয়ের মধ্যে যায়নি। কেউ স্যারের বেপারে বা তার পরিবারের বেপারে খারাপ কিছু বলেনি।
মিরা বেশ চিন্তিত হয়ে বলে।
মিরা : সবই তো বুঝলাম কিন্তু ঐ পাগল ডাক্তার আমার পিছনে পড়েছে কেনো?
মিরা কিছুক্ষণ ভেবে ডেনিকে বলে।
মিরা : গাড়ি বের করো। আমি রেডি হয়ে আসছি অফিসে কিছু কাজ আছে।
ডেনি মাথা নেড়ে চলে যায়। মিরা রেডি হয়ে নিচে দেখে হল রুমে কেউ নেই উকি দিয়ে দেখে সবাই লাঞ্চ করেছে আর কি নিয়ে আলোচনা করছে। কিছুক্ষণ আগে রুমা এসে মিরাকে খাবারের জন্য ডেকে গেছিল। কিন্তু মিরা খাবে না বলে। মিরা আর ওদিকে না তাকিয়ে ডেনিকে নিয়ে অফিসে চলে যায়।
এদিকে ডাইনিং টেবিলে বসে মিরার ফুপি মিরার দাদিকে বলে।
ফুপি : মা মিরা কি রাজি হবে বিয়ের জন্য?
দাদি : ফাহিম তো বলেছে ওকে রাজি করাবে।
অনামিকা : কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা।মিরা এত বছর পর দেশে ফিরেছে তাই ওর সাথে দেখা করার জন্য নিধির বাবা আমাদের সবাইকে ইনভাইট করছে আর তাছাড়া কাল বাদে পরশু ওর ভাই আর ভাবির বিবাহ বার্ষিকী।এখন রাজশাহী যাবার জন্য ওকে কি করে রাজি করাবো। ফাহিম ভাইয়া এখানে থাকলে না হয় একটা কথা ছিলো কিন্তু সে তার কাজ শেষ করে একবারে রাজশাহী যাবে।
এরমধ্যে রুমা এসে বলে।
রুমা : আম্মা আপা তো বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে।
অনামিকা : সে কি কখন ? ও তো কিছু খাওয়োনি।
রুমা : ছাদ থেকে শুকনো জামা কাপড় নিয়ে নামার সময় গাড়ির শব্দ পেয়ে নিচে তাকিয়ে দেখি আপা গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে।
নীলা : আপু বোধহয় অফিসে গেছে না হলে শপিং মলে গেছে।
নিঝুম : শপিং মলে কেনো?
নিধি : আরে বোঝো না কেনো? সকাল বেলা মিহান ভাইয়া আপুর রুমে ঢুকছিলো বলে পর পর দুইটা ফোন শহীদ হয়েছে তাই বোধহয় ফোন কিনতে গেছে।
নীলা : তোমরা এত চিন্তা করো না ডেনি তো আছে আপুর সাথে।
মিরা ফোন কিনে সোজা অফিসে চলে যায়। হঠাৎ ফোন বেজে উঠলে মিরা না তাকিয়ে ফোন রিসিভ করে।
মিরা : হ্যালো।
মিরা : হ্যালো কে বলছেন?
—-
মিরা : কথা বলবেন না ফোন রেখে দেবো?
– রাগ কমলো তা হলে?
মিরা : কে আপনি?
– তোমার হবু বর।
মিরা এবার ফোন নাম্বার টার দিকে তাকিয়ে বলে।
মিরা : মিহান!
মিহান : বাহ হবু বর বলতেই চিনে গেলে?
মিরা : আবার আপনি আমাকে ফোন করেছেন?
মিহান : তোমাকে ফোন করবো না তো কাকে ফোন করবো।শোনো সবে ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নিয়েছি। এখন খুব খিদে পেয়েছে কিছু খেয়ে হসপিটালে যেতে হবে সন্ধ্যায় কথা বলবো কেমন! এখন রাখি জান। I Love You আত্মাপাখি।
মিহান ফোন রেখে দিলে অবাক হয়ে একা একা বলে।
মিরা : আশ্চর্য আমি কি তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করছি না কি? নিজেই সবকিছু বলে দিলো। লোকটা কি পাগল না কি?
ঐদিক মিহান ওর ফোন থেকে মিরার ছবি বের করে বাঁকা হেসে মনে মনে বলে।
মিহান : আর খুব বেশি দিন না তারপর তুমি শুধু আমার। তুমি না চাইলেও তুমি আমার হবে। সব ব্যবস্থা করা হয়ে গেছে এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
মিরা ওর কেবিনে ডেনিকে ডেকে বলে।
মিরা : ঐ পাগল ডাক্তার টার বাড়ির ঠিকানা জানো?
ডেনি : হ্যা মেম কেনো?
মিরা : উনি যে পাগল তাই উনার বাড়ির লোকজনকে জানতে হবে।
ডেনি : ঠিক বুঝলাম না মেম?
মিরা : তেমন কিছু না। শুধু তার পাগলামি ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবো।
ডেনি মিরা কথা কিছু না বুঝে বিড়বিড় করে বলে।
ডেনি : মেম আবার তার রহস্যময় কথা শুরু করে দিয়েছে। ধুর তার এসব কথা তখনই আমার মাথায় ঢোকে না।
মিরা কাজ করতে করতে বলে।
মিরা : বিড়বিড় না করে লাঞ্চের ব্যবস্থা করো আর তুমি ও লাঞ্চ করে নাও।
ডেনি আর কিছু না বলে মাথা নেড়ে বেরিয়ে যায়।বিকালের দিকে মিরা ওর মামুকে ফোন করে।
মিরা : হ্যালো মামু কেমন আছো তুমি?
মামু : ভালো মামনি।তুই ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করছিস তো?
মিরা : আমাকে নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।তুমি যে কাজে গেছে মন দিয়ে সে কাজ করো।
মামু : তোকে নিয়ে ভাবো না তো কাকে নিয়ে ভাববো?
মিরা : ছারো সেসব কথা কবে ফিরছো তুমি?
মামু : কাজ শেষ হয়ে গেলে তাড়তাড়ি চলে আসবো।চিন্তা করিস না।
মিরা : ঠিক আছে।রাখি এখন।তুমি সাবধানে থেকো।
মামু : আচ্ছা মামনি।তুইও সাবধানে থাকিস।
মিরা ফোন রেখে ডেনিকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।অফিস থেকে বের হতে হতে ডেনি মিরাকে প্রশ্ন করে।
ডেনি : মেম আমরা কি এখন বাড়ি যাবো?
মিরা : না।
ডেনি : তাহলে?
মিরা : চৌধুরী বাড়ি।
ডেনি ছোট ছোট চোখ করে জিজ্ঞাসা করে।
ডেনি : কোন চৌধুরী বাড়ি?
মিরা : পাগল ডাক্তার মিহান চৌধুরীর বাড়ি।
ডেনি আর কিছু না বলে মিরার সাথে যায়।সূর্য অস্ত যায় যায় অবস্থায় মিরা চৌধুরী বাড়ি গিয়ে পৌছায়। ডোল বেল বাজালে মিহানদের বাড়ির কাজের লোক রিমি দরজা খুলে দিয়ে মিরাকে ভালো ভাবে একবার দেখে এক চিৎকার দিয়ে ডাক দেয়।
রিমি : কাকিমা দেখে যাও মিহান ভাইয়ার বউ এসে গেছে।
মিরা ভ্রু কুঁচকে তাকালে রিমি সেদিকে না তাকিয়ে মায়া চৌধুরীকে ঢেকে যাচ্ছে। মায়া চৌধুরী সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে বলে।
মায়া : এত চিৎকার করছিস কেনো?
রিমি : কাকিমা ভাইয়া কালকে যে মেয়েটার ছবি দেখিয়েছিল না সেই মেয়েটা এসেছে।
মায়া মৃদু চিৎকার করে উঠে বলে।
মায়া : কি?
রিমি : হ্যা কাকিমা।
মায়া আর কিছু না বলে দূত পায়ে দরজার দিকে যায়। মিরার দিকে কিছুক্ষন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মিরা সে দৃষ্টি উপেক্ষা করে বলে।
মিরা : আপনি ডাক্তার মিহান চৌধুরীর মা?
মায়া : হ্যা।
মিরা ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে।
মিরা : আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে!
মায়া মিরাকে বাড়ির ভিতরে ঢুকতে বাধা দিয়ে বলে।
মায়া : এই এই থামো থামো।
মিরা কপাল কুঁচকে মায়ার দিকে তাকিয়ে দেখে মায়া দূত রিমিকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে যাচ্ছে।মিরা বিরক্তিকর মুখ নিয়ে ওখানে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো কথা নেই বার্তা নেই দাঁড় করিয়ে দিয়ে কোথায় চলে গেছে। দশ মিনিটের মাথায় মায়া হাতে বরণডালা নিয়ে মিরার দিকে এগিয়ে আসে। মিরাকে কিছু বলতে না দিয়ে বরন শুরু করে দেয়। বরন শেষ করে মিরা হাত ধরে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যেতে যেতে বলে।
মায়া : আমার একমাত্র ছেলে বউ তাকে তো এমনি এমনি বাড়িতে ঢুকানো যায় না তাই না।
মায়া রিমিকে উপরে পাঠিয়ে দেয় অনুকে ঢেকে আনতে।মায়া মিরাকে সোফায় বসিয়ে মিষ্টি আনতে কিচেনে চলে যায়। মিরা হা হয়ে গেছে মায়ার কর্মকাণ্ডে দেখে।কোথা থেকে ঝড়ের গতিতে অনু দৌড়ে এসে ভাবী বলে এক চিৎকার দিয়ে মিরাকে জড়িয়ে ধরে। মিরা অনুকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে।
মিরা : আমি তোমার ভাবী নাই।
অনু কিছু বলবে তার আগে মায়া মিষ্টি রাখতে রাখতে বলে।
মায়া : হতে কতক্ষন।
মিরা দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে।
মিরা : আপনার ছেলে আমার ট্রিটমেন্ট করেছে তার খারাপ হোক আমি কখনো চাইবো না। আপনি আপনার ছেলের ভালো চাইলে আমার পিছনে ঘুরতে বারন করবেন।
মায়া মিরার কথা কানে না দিয়ে নিজের হাতের চিকন ডায়মন্ডের চুড়ি পরিয়ে দিয়ে বলে।
মায়া : বাহ তোমার হাতে চুড়িগুলো তো খুব সুন্দর লাগছে। আমার ছেলের বউ বলে কথা।তুমি বসে অনুর সাথে গল্প করো আমি তোমার জন্য কিছু রান্না করে আনি।
অনু জোর করে মিরাকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে তার রাজ্যের গল্প শুরু করে দেয়। মিরা বিড়বিড় করে বলতে থাকে।
মিরা : ওহ আল্লাহ এ আমি কোথায় এলাম? পাগল ডাক্তারের নামে বিচার দিতে এসে দেখি বাড়ি শুদ্ধো সবাই পাগল!
চলবে… 🍁