না চাইলেও তুই আমার

না চাইলেও তুই আমার !! Part- 02

মিহান চলে গেলে ডেনি মিরার সাথে কথা বলতে এলে মিরা ডেনিকে বলে হসপিটালে বিল পরিশোধ করে দিতে।ডেনি টাকা জমা দিয়ে এলে মিরা হসপিটালের কাউকে কিছু না বলে ডেনিকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
খান বাড়িতে মিরার বাবা নিলয় খান যায় মিরার মামুর রুমে তার সাথে কথা বলতে।
নিলয় খান : ফাহিম মিরার এই অবস্থার জন্য আমি আর ওর মা দাই তাই না রে?
মামু : তোর থেকে আমার বোনের বেশি দোষ ছিলো।ও কখনো তোর সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেনি।
নিলয় খান : তোর মত একটা বন্ধু পাশে ছিলো বলেই আমার মেয়েটা তোর কাছে ভালো আছে।
মামু : কোন যে কলেজে লাইফে আমার বোনের সাথে প্রেম করতে গেলি। না হলে তোর আর মিরার জীবনটা এমন হতো না।
নিলয় খান : ছাড় না ওসব কথা ভালো লাগছে না।

নিলয় আর ফাহিম কলেজ লাইফের বন্ধু ছিলো। নিলয় ফাহিমের বোন নিতু কে ভালোবাসতো।তারা বিয়ে করলে কিছু দিন পর মিরা জন্ম নেয়।মিরার পাঁচ বছর বয়সে তারা আলাদা হয়ে যায়। নিলয় অনেক চেষ্টা করেছে নিতুর সাথে থাকার কিন্তু নিতু নিলয়ের সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেনি। ফাহিম অনেক বোঝায় ওর বোনকে কিন্তু সে বোঝে না। এরপর থেকে ফাহিম আর ওর বোনের সাথে যোগাযোগ করেনি। নিলয়ের সাথে মাঝে মধ্যে যোগাযোগ করতো। এরপর নিলয়ের ছোট ছেলের বিয়েতে ফাহিম আর মিরাকে আসতে বলে উদ্দেশ্য ছিলো তার মেয়েকে দেখবে কেমন দেখতে হয়েছে তার মেয়েটা। কিন্তু মিরা আসেনি বিয়েতে।পরে কোনো ভাবে খবর পায় ফাহিম অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাই সে আর থাকতে না পেরে বাংলাদেশ চলে আসে।
মিরা খান বাড়িতে এসে ডোর বেল বাজালে এবারো রুমা দরজা খুলে আম্মা বলে জোরে চিৎকার দেয়।মিরা বিরক্ত হয়ে বলে।
মিরা : এই চুপ চিৎকার করছো কেনো? চিৎকার না করে মামুকে ডেকে আনো।
কে শুনে কার কথা চিৎকার করে ডেকে হল রুমে সবাইকে উপস্থিত করে।মিরা এই অবস্থায় দেখে মামু,দাদি,ফুপি হন্তদন্ত হয়ে এসে একেরপর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে।
মামু : মা তোর কি হয়েছে?তোর শার্টে এত রক্ত কেনো? মাথায় ব্যান্ডেজ হাতে ব্যান্ডেজ?
ফুপি : পরি কি হয়েছে তোর?
দাদি : কি হয়েছে বল।
মিরা ঠোঁটে কোনে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে তুলে বলে।
মিরা : অহহ,, মামু তুমি এত উত্তেজিত হচ্ছো কেনো? শোনো না কি হয়েছে। আমি অফিস থেকে বেরিয়ে রাস্তায় মামি কে দেখি।মামি তো আমাকে চিনে না তাই তাকে ফলো করি।কি করে হঠাৎ করে এক্সিডেন্ট হয়ে যায় টেরই পাইনি।
মামু সন্দেহের চোখে জিজ্ঞাসা করে।
মামু : এই তুই মামি পেলি কই আমি তো বিয়ে ই করিনি?ডেনি তুমি বলো কি হয়েছিল?
মিরা : ও কি বলবে? আমি তো তোমার জন্য পাত্রি খুঁজতে গিয়েছিলাম।
ডেনি : স্যার মেম মিথ্যা কথা বলছে।
মিরা ভয়ংকর চোখে ডেনির দিকে তাকালে ডেনি মাথা নিচু করে বলে।

ডেনি : মেম এরকম করে তাকিয়ে লাভ নেই। আমি আপনার ভালো চাই। আপনার জন্য জীবন দিতেও পিছ পা হবো না।স্যার মেম অফিস থেকে বেরিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা দেখে খুব রেগে যায়।ড্রাইভারে কাছ থেকে চাবি নিয়ে বেরিয়ে যায়। আমি অন্য গাড়ি নিয়ে মেমকে ফলো করি।মেম এর গাড়ির যখন কাছাকাছি চলে যাই তখন দেখি মেম ইচ্ছে করে তার গাড়ি একটা গাছের সাথে ধাক্কা মারে। আমি তাড়াতাড়ি করে মেমকে বের করে নিয়ে হসপিটালে চলে যাই।ডাক্তার আজকের রাত হসপিটালে থাকতে বলেছিল। কিন্তু মেম কারো কথা না শুনে চলে আসে।
মামু সোফায় বসে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে। একথা শুনে সবার আত্মা শুকিয়ে যাবার মত অবস্থা।কি মেয়েরে বাবা নিজের এক্সিডেন্ট নিজে করায়। এমন ভাবে দাড়িয়ে আছে যেনো তার কিছুই হয়নি।মিরা গিয়ে মামুর পাশে বসে।

মিরা : মামু রাগ করছো?

মামু : —-

মিরা : মমমমামু।

মামু : —-

মিরা : মমমমমমমামু।

মামু : —-

হঠাৎ মিরা মাথায় হাত দিয়ে বলে।

মিরা : উফ মাথাটা কি ব্যাথা করছে!

মামু উত্তেজিত হয়ে বলে।

মামু : কই কই দেখি কি হয়েছে?

মিরা মামু দুই গাল টেনে হেসে দিয়ে বলে।

মিরা : ও মামু তোমাকে মামু বানানো কত সোজা।

মিরার কথায় বাড়ি শুদ্ধ সবাই ফিক করে হেসে দেয় আর মামু গোমড়া মুখ করে বলে।

মামু : যা তোর সাথে আমি কথা বলবো না।

মিরা : আচ্ছা সরি। এবার বলো কি করলে তোমার রাগ ভাঙবে?

মামু : সত্যি?

মিরা : হুম।

মামু : আমি চাই তুই আর আমি কিছুদিন বাংলাদেশ থাকবো।

মিরা : বেস এইটুকু ঠিক আছে রেডি হয়ে নেও।

মামু : কেনো?

মিরা : কেনো আবার আমাদের বাংলাদেশ যে বাড়িটা আছে সেখানে থাকতে হবে না।

মামু : না কোথাও যেতে হবে না। আমরা এই বাড়িতে থাকবো।

মিরা দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

মিরা : আমি এখানে থাকবো না।

মামু : তাহলে আমিও তোর সাথে কথা বলবো না।

মিরা রেগে ওর মামুর দিকে তাকালে হেসে দিয়ে বলে

মামু : যা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। একটু পর একসঙ্গে ডিনার করবো।

মিরা সোফা থেকে উঠে পাশে রাখা একটা ফুলদানি ডেনির দিকে ছুঁড়ে মারে।ডেনি সরে গেলে দেওয়ালের লেগে ফুলদানিটা টুকরো টুকরো হয়ে যায়।মিরা রেগে চিৎকার করে বলে।

মিরা : তুই আমার সামনে থেকে সর নাইলে তোকে আজ খুন করে ফেলবো।

মিরা চলে গেলে মামু ডেনিকে বলে।

মামু : ডেনি আজ ভুলেও মিরার সামনে পরো না তাহলে কিন্তু তোমার কপালে অশেষ দুঃখ আছে।

ডেনি মাথা নেড়ে চলে গেলে।একে একে সবাই এসে মামুর সামনে বসে। মামু অনামিকা খানকে বলে।

মামু : আপু মিরা সকালের ব্রেকফাস্ট করে আর কিছু খায়নি। তুমি এখন খাবার রেডি করো।

অনামিকা খান : ঠিক আছে ভাইয়া।

নীলা : মামা আপু তো রেগে আছে। তুমি বরং গিয়ে আপুর রাগ ভাঙিয়ে নিয়ে আসো।

মামু : পাগল না কি এখন যে যাবে তোদের আপুর কাছে কাউকে আস্তা রাখবে না ও। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝড় শুরু হবে ওয়েট কর।

জারিফ : কি বলছো তুমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

মিরা ওর রুমে গিয়ে দেখে বেশ কিছু আগের মত আছে আর নতুন নতুন কিছু জিনিস আছে।বেড সাইডে দেওয়ালে মিরার বাবা মা আর ওর ছবি লাগানো আছে।মিরা ছবিটা নামিয়ে ছবিটায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আবার ছোট বেলার কথা মনে পড়ে যায়। ছবিটা সজোরে আছাড় মারে ফ্লোরে। এরপর রুমের মধ্যে ভাংচুর শুরু করে দেয়।

নিচে বসে মামু ওদের হেসে দিয়ে বলে।

মামু : এবার বুঝতে পরলি আমি কেনো যাই নি।

ফুপি : কিন্তু ও আগে এমন ছিলো না।

মামু : ওর যখন বাবা মায়ের উপর রাগ উঠে তখন এমন করে নয়তো নিজের ক্ষতি করতে চায়।আজ হয়তো অফিস থেকে বেরিয়ে এমন কিছু দেখছে তাতে ওর বাবা মার কথা মনে করিয়ে দেয় তাইতো ইচ্ছে করে নিজের গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে। এরজন্য ডেনিকে ওর সাথে থাকে ছায়ার মত।বড় কোনো বিপদ হওয়ার আগে ডেনি ওকে বাঁচিয়ে নেয়।

দাদি,ফুপি, নীলা,নিধি আর অনামিকার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

মামু : তোমরা খাবার রেডি করো আমি মিরাকে নিয়ে আসছি।

চৌধুরী বাড়ির সবাই ডিনার করছে কিন্তু মিহান হাতে চামচটা নিয়ে নাড়াচাড়া করছে আর মিটমিট করে হাসছে।অনু বিষয়টা লক্ষ করে বলে।

অনু : ভাইয়া কি হয়েছে তোর? খাবার রেখে হাসিস কেনো?

মিহান কিছু বলবে তার আগে ওদের মম বলে।

মম : দেখো গিয়ে তোমার ভাই হয়তো প্রেমে পড়েছে!

পাপা : তোমার ছেলে আর প্রেম তাহলেই হয়ে গেছে!

মিহান : সত্যি বোধহয় এবার প্রেমে পড়েছি আমি পাপা।

পাপা : মেয়েটা কে শুনি?

মিহান : নাম জানি না।আজ এক্সিডেন্ট করে হসপিটালে অ্যাডমিট হয়েছে। যেখানে সব মেয়েরা মিহান চৌধুরী বলতে পাগল উল্টো সে আমাকে ঝাড়ি দিয়ে তার কেবিন থেকে বের করে দেয়।সে অন্য সব মেয়েদের থেকে সবথেকে আলাদা।

সব শুনে মিহানের মম হেসে দিয়ে বলে।

মম : তাই আমার ছেলে তার প্রেমে পড়েছে।

অনু : ভাবি মনে হয় একদম আমার মনের মত হয়েছে তোকে কথায় কথায় ঝাড়ি মারবে।উফ আমি যে কি ইনজয় করবো না তোকে বলে বোঝাতে পারবো না ভাইয়া।

অনুর কথা শুনে সবাই হেসে দিলে।মিহান অনুর দিকে চোখ গরম করে তাকায়।

পাপা : শোন তোর যে মন চুরি করেছে সে কি করে কোথায় থাকে কাল সবকিছু জেনে নিস তারপর না হয় আমরা ওদের বাড়ি বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো।

মিহান মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।

মামু মিরাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে খাবার টেবিলে নিয়ে আসে।মিরার জন্য সবাই অপেক্ষা করছিল।মিরা একবার খাবারের দিকে তাকিয়ে পরে ওর ফুপির দিকে তাকিয়ে বেশ শান্ত গলায় বলে।

মিরা : আমি এসব খাবার খাই না।

দাদি আর ফুপি বেশ অবাক হয় মিরার কথায়।দাদি চিন্তিত হয়ে বলে।

দাদি : কিন্তু এগুলো সবকিছুই তোর পছন্দের খাবার দিদিভাই।

মিরা : আমি এগুলো খাবো না।যদি পারো আমার জন্য বৈলেদ ফুড নিয়ে এসে।

ফুপি : কি তুই সিদ্ধ খাবার কবে থেকে খেতে শুরু করেছিস?

মিরা : অনেক বছর! তুমি পারবে না হলে আমি যাই।

মিরা চেয়ার থেকে উঠতে গেলে অনামিকা তাড়াতাড়ি করে বলে।

অনামিকা : না! না তুমি বসো। আমি এখনি নিয়ে আসছি।

অনামিকা কিছুক্ষণ পর কিছু বৈলেদ ফুড তৈরি করে নিয়ে এলে মিরা চুপচাপ খেয়ে নিজের রুমে চলে যায়।ফুপি মিরার মামুর দিকে তাকিয়ে বলে।

ফুপি : ফাহিম ভাইয়া ওতো আগে এমন ছিলো না?কি করে এতটা বদলে গেলো।

মামু : এইসব খাবার খেলে বা ছোট বেলা থেকে যেসব জিনিস প্রিয় ছিলো ঐ সব দেখলে তোমাদের কথা মনে পড়ে যায় নিলিমা।তাই আসতে আসতে এসব ওর জীবন থেকে বাদ দিয়ে দেয়।আর কয়েক বছর ধরে ওর হেলথের জন্য এসব বৈলেদ ফুড খায়।

এসব কথা শুনে সবার দৈর্ঘ্য শ্বাস ফেলে। বেশকিছু পর হঠাৎ করে দাদি বলে উঠে।

দাদি : বিয়ে দিয়ে দিলে বোধহয় ও আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে।

মামু : হুম আমিও সেই চেষ্টায় আছি। এমন কাউকে চাই যে আমার থেকেও বেশি আমার মাকে ভালোবাসে।ওর সব পাগলামিগুলো‌ হাঁসি মুখে সহ্য করবে। এখন আল্লাহ যা চাইবেন তাই হবে।

এরকম আরো অনেক কথা বলে খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে যায়।সবাই শুধু এখন অপেক্ষা করে আছে নতুন এক ভোরের। না জানি কাল কি হয়?

চলবে… 🍁