নতুন গল্প- ফাঁদ !! লেখাঃ মৃণালিনী মৃণাল
নতুন গল্প- ফাঁদ
“ছিহ,, এটা কি একটা কফি হয়েছে? মুখে দেওয়া যায়না! এতোদিনে সামান্য কফিটাও ঠিক করে বানাতে শেখোনি?”
একথা বলেই আদিত্য কফির কাপটা ছুঁড়ে দেয় তার স্ত্রী আহেলী’ র দিকে। কাপটা আহেলী ‘র গায়ে না লাগলেও গরম কফিটা এক ঝলক ওর বুকে এসে পড়ে। অজান্তেই চোখের কোণ বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু পড়তে থাকে।
” কি হয়েছে কি!! কি ভাঙ্গলো? এই মেয়েটা যেদিন থেকে এই বাড়িতে এসেছে শান্তি নেই। বাড়িটাকে যেনো কুরুক্ষেত্রের ময়দান বানিয়ে রেখেছে লক্ষীছাড়া মেয়েটা। ”
(বিঃ দ্রঃ “ নতুন গল্প- ফাঁদ !! লেখাঃ মৃণালিনী মৃণা ” গল্পের সবগুলো পর্ব একসাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন)
গজগজ করতে করতে আদিত্যর দাদী এলেন। আদিত্য কে রাগে বসে থাকতে দেখে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,,,
“ভাই কি হয়েছে? তুই রাগ করিসনা ভাই আমার! আমি তো জানি এই মেয়েটা তোকে শান্তি দেয়না। তোর মা আর মেয়ে খুঁজে পেলো না এই মেয়েকে তোর গলায় ঝুলিয়ে দিলো। আর এদিকে আমার নাতিটার মুখ শুকিয়ে গেলো। ”
(কাঁদো কাঁদো স্বরে )
আহেলী কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ধমকে উঠলেন।
“তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও খাবার ব্যবস্থা করো.জানো না তোমার স্বামীর অফিসের দেরী হয়ে যাচ্ছে ”
আহেলী ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,, যাচ্ছি দাদী,,
আদিত্য র প্লেটে খাবার দিলে আদিত্য প্লেটটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে যায়। আদিত্য চলে গেলে দাদী আহেলীর হাতটা চেপে ধরে,,
” তুমি কেমন মেয়ে? স্বামী কে খেতে দিলে না তো? আচ্ছা বজ্জাত মেয়ে… তুমি জানো তোমার স্বামী এখন রেগে আছে তা সত্ত্বেও তুমি খাবার দিলে কেনো? মা বাবা কি কিছুই শেখায় নি?”
“আপনি তো বললেন খাবার দিতে। আমি ছাড়া কে খাবার দিতো। আপনি তো দিতেন না তাই না! আর হ্যা সবসময় সব ব্যাপারে আমার মা বাবা কে টানবেন না বুঝেছেন। ”
কথাটা আহেলী খুব রাগ দেখিয়ে কেঁদে কেঁদে বলে ছুটে চলে গেল বেসিনের কাছে। বুকে কফিটা পড়ায় খুব জলছে,,, তাই বুকে পানি দিতে লাগলো।
/
/
/
অফিসের চেম্বারে বসে আদিত্য ফাইলের একটার পর একটা পাতা উল্টে যাচ্ছে।
“গুড মর্নিং মিস্টার আদিত্য চৌধুরী। তারপর কি ভাবলেন বলুন?”
আদিত্য ফাইল থেকে মুখটা তুলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন উক্ত কথাটি বলা ব্যক্তি টির দিকে। চেয়ার থেকে উঠে তার মুখোমুখি দাঁড়ালো। ভারী গলায় বললো,,
“তোকে আগেও বলেছি এখনো বলছি এইসব করা বন্ধ কর। তুই ভালো করেই জানিস আমি তোকে সাপোর্ট করবো না। ”
“ওফফফফ.. মাই ডিয়ার ব্রো… কাম ডাউন…রিল্যক্স,,, আমি যা করছি সেটা করবোই। আর তুইও আমাকে সাপোর্ট করবি,,, । কি বলতো এই তানভীর আহমেদ যা চায় তাই পায় এবং সে পেয়েও এসেছে। সো ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ,,, ”
তানভীর চলে গেলে আদিত্য রেগে গিয়ে হাত মুঠো করে টেবিলে সজোরে ঘুষি মারে। আদিত্যর হাতে কিছু না হলেও টেবিলের কাঁচটা চিড় ধরে যায়।
“নাহ এই তানভীর এর কিছু একটা করতেই হবে। আর না,, হাতের বাইরে চলে গেলে তখন মুস্কিল হবে।
নিজের সাথে কথাগুলো বলে আদিত্য গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। একটা পুরোনো বাড়ির সামনে গাড়ি থামায়। ভাঙা সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসে।
“আরে স্যার আপনি,,! আপনি কেনো কষ্ট করে আসতে গেলেন? আমায় বলতেন আমি আপনার কাছে,,, ”
কথাটি শেষ করতে দেয়না আদিত্য। সামনে একটা টুল টেনে বসে। হাতে তুলে নেয় মদের গ্লাস।”অনেক সময় নিজের কাজের প্রয়োজনে আসতে হয়। প্রয়োজন এখন আমার তাই আমাকেই আসতে হবে। ”
মদের গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে আদিত্য কথা গুলো বলে।
“কি যে বলেন স্যার। আপনি শহরের গণ্যমান্য লোক। আপনি চাইলে কি না করতে পারেন।”
আদিত্য সশব্দে হেসে ওঠে।
“আমি নিজেই যদি করতে পারতাম তাহলে তোমার কাছে কেন আসি।”?
“নাহ স্যার আমি তো এমনি বলছি। বলুন আমাকে কি করতে হবে। ড্যানি পারে না এমন কোন কাজ নেই। ”
“আই নো,,, তাই তো তোমার কাছে আসা। ড্যানি মাফিয়া। ”
আদিত্য ড্যানির পিঠ চাপড়ে বলে। তারপর নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে তানভীর এর ছবিটা ড্যানি কে দেখায়। আদিত্য ড্যানি কে কিছু বলতে গেলেই একজন বলে ওঠে,,,
“বস এই লোকটা তো…. ”
ড্যানি হাত দেখিয়ে থামিয়ে দেয়। আদিত্যর চোখে চোখ রাখে।
“স্যার এতো তানভীর আহমেদ,,, এক মাস আগে আমার কাছে এসেছিলো। ”
আদিত্য র কানে কানে ড্যানি তানভীর এর আসার কারণ বললে আদিত্য হাতের গ্লাস টা রাগে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বেরিয়ে আসে। গাড়ী ফুলস্পীডে তুলে চালাতে থাকে। হঠাৎ চোখ যায় ওর বাড়িতে থাকা গাড়িটাকে দেখে। সন্দেহ হল ওই গাড়ীতে কে যাচ্ছে। স্পীড কমিয়ে গাড়িটা থামাতেই ওই গাড়িটা থেকে কেউ নেমে আসে।” দাদী তুমি? কোথায় যাচ্ছ? ”
“আমি আমার বাড়ি চলে যাচ্ছি দাদুভাই। তোমার বিয়ে হয়েছে বৌ নিয়ে তুমি সুখে থাকো। আমি তোমার সংসারের বোঝা। আমার চলে যাওয়াটাই উচিৎ।”
আদিত্য হাত ধরে বলে,,,
“দাদী তুমি এইসব কি বলছো! তোমাকে কি আমি কখনো এসব বলেছি বলো? ”
“নাহ ভাই তুমি এসব বলতেই পারো না। তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো জানি। তোমার তো বিয়ে হয়েছে বৌ আছে,,, তুমি চাইলেই তো আমাকে রাখতে পারো না। তোমার বৌ এর তো একটা ইচ্ছা অনিচ্ছা থাকে। ”
“কিহ্হ্হ…. আহেলী তোমাকে এইসব কথা বলেছে,,, ও এতো সাহস কি করে পায়…?”
“আমাকে যেতে দাও,,, ভাই আমি আসি,,,। ”
চোখের পানি কাপড়ে মুছে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। আদিত্য আর দেরি না করে গাড়িতে উঠে চলে যায়।
পনেরো মিনিটে বাড়িতে পৌচ্ছায়। চাবি দিয়ে দরজা খুলে নিজের রুমে যায়। আহেলীকে ঘুমাতে দেখে আদিত্য র রাগ তিনগুণ বেরে যায়। ঘুমিয়ে থাকা আহেলীকে হাত ধরে টেনে বসায়। কোন কিছু না বলেই কষিয়ে চার পাঁচটা থাপ্পড় মারে গালে। আহেলী হঠাৎ এভাবে মার খেয়ে আদিত্য র দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আদিত্য এক হাতে চুলের মুঠি চেপে ধরে আর এক হাতে গাল চেপে ধরে।
“কি বলেছিস আমার দাদী এই সংসারের বোঝা! তোর এতো সাহস কোথা থেকে আসে রে,,, ? আমার দাদীকে নিয়ে তোর অনেক সমস্যা তাই না হুম,,, ”
আহেলীকে ছেড়ে দিলে আহেলী বেডে পড়ে যায়। আদিত্য কোমরের বেল্ট খুলে আহেলীকে দু ঘা মারলে আহেলী বেল্টটা হাতে ধরে ফেলে। হাত জোড় করে ফুঁপিয়ে কাঁদে।”বিশ্বাস করুন আমি দাদীকে কিছু বলিনি। শুধু বলেছিলাম সব কথায় আমার মা বাবা কে টানবেন না। আর একটা কথাও বলিনি বিশ্বাস করুন। দাদী ব্যাগ গুছিয়ে চলে যাচ্ছিল আমি দাদীর পা ধরে বলেছিলাম আমার কোন দোষ থাকলে আমাকে বলেন এভাবে চলে যাবেন না। উনি আমার কথা শোনেন নি উনি আমাকে পা দিয়ে ঠেলে চলে যান,, বিশ্বাস করুন,,, ।”
আদিত্য আরো বেশী রেগে যায়। আহেলীর চুলের মুঠি ধরে বেড থেকে টেনে ফ্লোরে ফেলে দেয়। আদিত্য প্রথমের থেকে এবার খুব জোরে জোরে বেল্ট দিয়ে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে। আদিত্যর মাথায় তানভীর এর কথা মনে এলেই আরো মারের জোর বাড়িয়ে দেয়। আহেলী বুঝতে পারে আর কিছু বলে লাভ হবে না। আদিত্য শুনবে না। কেউ বাঁচাতে পারবে না। প্রাণপাখিটা বেরিয়ে আসবে মনে হয়। দম বন্ধ হয়ে আসছে। হয়তো মেরেই ফেলবে। এটাই যদি ভাগ্যের লিখন হয় তবে তাই হোক,, মরে যাক ও। আর চিৎকার করে কাঁদে না নিশ্চুপ হয়ে যায় চোখ ঝাঁপিয়ে পানি পড়তে থাকে। মা বাবার মুখটা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। কিছুক্ষন পর আহেলীর নড়াচড়া একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। আদিত্য বেল্ট টা ছুড়ে ফেলে দিয়ে শার্ট এর হাতা ফোল্ট করতে করতে চলে আসে নিজের স্টাডি রুমে। কোন কিছুই ভালো লাগছে না,,স্টাডি রুম আগোছালো করে আবার গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে যায়।
/
/
/
/
এদিকে দাদী চলে আসে চৌধুরী ভিলায়। দাদীকে আসতে দেখে আদিত্যর খালাম্মা সোফায় বসায়।
“মা তুমি এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলে যে? ”
“কাজ হয়ে গেলো তো তাই”।
“কা,,জ,, কাজ,,কি মা! কি বলো কিছুই তো বুঝি না ?”
“বুঝবি,, বুঝবি,, সব বুঝতে পারবি,,। লোকে বলে সৃষ্টিকর্তা নাকি জীবনসাথী ওপর থেকে ঠিক করে পাঠায়। কিন্তু সেটাতো নীচে এসে ভেঙ্গেও যেতে পারে তাই না,,, হা হা হা,,, “।”মা তুমি ওদের সম্পর্ক ভেঙে দিতে চাইছে,?”
” আমি কোথায় ওদের সম্পর্ক ভাঙ্গছি! ওরা নিজেরাই ভাঙ্গছে,,।
আদিত্য র দাদী আর খালাম্মা দুজনেই এবার হেসে ওঠে।
” শোন আদিত্যকে ফোন দে,, আর বল তোর দাদীর পায়ে মোচড় লেগেছে তাড়াতাড়ি যেনো চলে আসে।”
“কিন্তু মা তোমার পায়ে কোথায় মোচড় লেগেছে? তুমি তো ভালোই হেঁটে এলে। তাহলে… ”
“ওফফফ তুই না বড্ড বোকা যা বলছি তাই কর,,, ”
“ওফফফ আচ্ছা ঠিক আছে,,, “।
দু তিনবার রিং হতেই আদিত্য ফোনটা রিসিভ করলো। খবর শুনে খুব দ্রুত চলে এলো চৌধুরী ভিলায়।
“দাদী কোথায়,,, দাদী,, দাদী…. ”
“এই আদি,,!”
“খালাম্মা দাদী কোথায়,, কেমন আছে এখন ?”
“তোর দাদী এখন ভালো আছে,, ডক্টর দেখে ঔষধ সাজেস্ট করেছে চিন্তার কোন কারণ নেই । এখন ঘুমাচ্ছে যা গিয়ে দেখে আয়। ”
আদিত্য উঁকি দিয়ে দেখে দাদী ঘুমাচ্ছে চলে আসতে গেলে দাদী ডেকে নেয়। হাত ধরে কিছুক্ষণ বসে থাকে। রাত হয়ে আসছে চলে আসতে গেলে খালাম্মা বলে ডিনার করে যেতে।
খাওয়ার টেবিলে আদিত্যর বড়ো ভাই বলেন,,
“দাদী তোদের কাছে বোঝা এমন কথাও শুনতে হলো। দাদী কতো আশা নিয়ে গেছিলো। ”
” দেবরজী কে বলে কি হবে তোমার ভাইয়ের বৌ টা ভালো না কি। কেন যে অমন একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দিলে। “আদিত্যর ভাবী কথাটা বললো। আদিত্যর ভাইয়া কিছু একটা ভাবলো তারপর তার পিঠে হাত চাপড়ে
বললো
“কিছু একটা ভুল হচ্ছে সামলে চলিস।”
আদিত্য খাওয়া শেষ করে বিদায় দিয়ে বেরিয়ে চলে এলো।
বাড়ি চলে আসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে। চোখ বন্ধ করতেই ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়।
সকালে ঘুম ভাঙলে আহেলী কে আগের অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে।
.
.
.
.
.
.
.
.
চলবে,,,