তারে আমি চোখে দেখিনি

তারে আমি চোখে দেখিনি ! সিজনঃ-2 !! Part- 06

লাবন্য তার সান্ডপান্ডদের চিৎকার করে ডাকে।তারা আসলে তাদের প্রত্যেকের গালে ঠাসসসস! ঠাসসস! করে কষিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। আর বলে,

লাবন্যঃ আমার মেঘের সাথে তোরা ওই ঘুটঘুটে গেও মেয়েটাকে বন্দী করে রেখেছিস কেন? তোদের তো আমি…

সবাই লাবন্যর পায়ের কাছে বসে পরে।আর হাত জোড় করে ছরি বলে।লাবন্য রেগে মেগে তাদেরকে বলে,

লাবন্যঃ তোদের তো আমি পরে দেখে নেবো।এখন স্টোর রুমের চাবিটা দে?

চাবিটা দিলেই লাবন্য আর এক মুহূর্তও দেরি না করে স্টোর রুমের দিকে যায়।

ওদিকে স্টোর রুমে আয়াত তার বোরখাটা হাত দিয়ে খামচে শক্ত করে ধরে আছে।ভয়ে আয়াতের হাত, পা থরথর করে কাঁপছে। আর মেঘ লাবন্যর সাথে ফোনে কথা বলার পর আয়াতের দিকে এগিয়ে আসছে আয়াতকে বোঝানোর জন্য যে তার কোনো দোষ নেই।মেঘ কাছে আসতেই আয়াত পাশের বেঞ্চের থেকে একটা কলমদানী উঠিয়ে মেঘের কপালে জোড়ে মেরে দেয়।আর আঘাত পেয়ে মেঘের কপাল থেকে রক্ত ঝড়তে থাকে।এরই মধ্যে লাবন্য এসে স্টোর রুমের দরজাটা খুলে দেয়। আর দেখে মেঘের কপাল থেকে রক্ত ঝড়ছে।লাবন্য ছুটে মেঘের কাছে আসে।আর বলে,

লাবন্যঃ মেঘ তোমার এই অবস্থা কিভাবে হলো? পাশ ফিরে আয়াতের দিকে তাকিয়ে বলে, এই মেয়েটা তোমার কপাল ফাটিয়েছে তাই না?

কথাটা বলেই ঠাসসসস! করে কষিয়ে আয়াতের গালে একটা থাপ্পড় মেরে বসে লাবন্য। থাপ্পড়টা এতো জোড়ে হয় যে ছিটকে নিচে পরে যায় আয়াত।

মেঘ আয়াতকে উঠাতে যায় আর লাবন্য মেঘকে টেনে ধরে।আর মেঘের বুকে হাতের আঙুলটা নারিয়ে চারিয়ে বলে,

লাবন্যঃ কি আছে ওই ঘুটঘুটে গেও মেয়েটার মধ্যে যা আমার মধ্যে নেয়? তুমি ওই মেয়েটার কাছে গিয়েছিলে! কেন? একবার তো আমাকে ডাকতে পারতে! তুমি জানো না আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি?

আয়াত উঠে দাড়িয়ে লাবন্যকে এভাবে মেঘের সাথে কথা বলতে দেখে কোনকিছু না বলেই মুখটা ঘুরিয়ে স্টোর রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

আর মেঘ আয়াতের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।আয়াতকে কিছু বলতে যাবে কিন্তু পারে না।লাবন্য মেঘের শার্টের কলারটা টেনে ধরে মেঘের খুব কাছে চলে আসে।আর মুখটা এগিয়ে মেঘের ঠোঁটে কিস করতে যায়।অমনি মেঘ ধাক্কা দিয়ে লাবন্যকে দূরে সরিয়ে দেয়। আর লাবন্যের দুই গালে ঠাসসসস! ঠাসসসস! করে অনেকগুলো থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। তারপর বলে,

মেঘঃ আগে ভেবেছিলাম তুমি বড়লোকের আদর পাওয়া বিগড়ে যাওয়া মেয়ে।কিন্তু এখন দেখছি না তুমি একটা অসভ্য আর বজ্জাত মেয়ে। ছিঃ লাবন্য ছিঃ তুমি এতোটা বাজে সেটা আমি আগে কল্পনাও করতে পারিনি।

লাবন্যঃ তাই? আমাকে এসব বলছো? আর তুমি ওই মেয়েটার সাথে যেটা করছিলে সেটা ঠিক ছিলো?

মেঘঃ কিচ্ছু করিনি আমি।আয়াত ভুল বুঝছে আমাকে।এই সবকিছুই তোমার জন্য হয়েছে।আমি তখন তোমার প্লান শুনে নিয়েছিলাম।আমি জানতাম আয়াত আর আমি একসাথে আছি শুনলে তুমি এসে স্টোর রুমের দরজাটা খুলে দেবে তাই আমি আগে থেকেই এখানে এসে বসে আছি।

কথাটা বলে রেগে মেঘ বেড়িয়ে যায় স্টোর রুম থেকে। আর লাবন্য তার দুই গালে হাত রেখে আয়াতের প্রতি অনেক ক্ষোভ নিয়ে নিজে নিজেকে বলে,

লাবন্যঃ ওই ঘুটঘুটে গেও মেয়েটার জন্য তুমি আমার গায়ে হাত তুললে মেঘ? কাজটা তুমি ভালো করলে না। এর ফল ওই মেয়েটাকে দিতেই হবে।ওর মানসম্মান যদি আমি পুরো ভার্সিটির সকলের সামনে ধূলোয় না মিশিয়ে দিতে পারি তবে আমার নামও লাবন্য চৌধুরী নয়।
,
,
,
,

,,,,,মির্জা প্যালেসে,,,,
মায়ার কোমড়টা জড়িয়ে ধরে রেখে ওভাবেই বলে যায় মাহির।
মাহিরঃ খুব সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটি অচেনা।আবার এক পলকে খুব বেশি আপন মনে হওয়া মানুষটিও হারিয়ে যায়। আসলেই তো জীবনটা এমন হয়।

কথাটা বলার সাথে সাথেই মাহিরের বুকে মায়া হুমড়ি খেয়ে পরে।আর মাহিরকে ঝাপটে ধরে শব্দ করে কাঁদে।মায়াকে কাঁদতে দেখে মাহির মায়ার মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে রাখে।তারপর বলে,

মাহিরঃ আমি আর কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবো না মায়া।তুমি জানো না আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি? প্লিজ আর কেঁদও না।তোমাকে এভাবে কাঁদতে দেখলে আমার যে খুব কস্ট হয়।

মায়া কাঁদতে কাঁদতে মাহিরের বুকে মাথা রেখে হিচকি তুলে বলে।

মায়াঃ খুব খারাপ আপনি অনুভব। ২০ টা বছর আপনার কাছ থেকে আমাকে দূরে রেখেছেন।খুব কেঁদেছে আমি আপনার জন্য।প্রতিটা রাতে আপনাকে কাছে না পাওয়ার যন্ত্রণা আর আপনার স্মৃতি মনে করে কেঁদেছি।জানেন, আজও এই আমি আপনার স্মৃতি মনে করে সেই ডায়েরিটা লিখি।আমি জানতাম আপনি আর ফিরে আসবেন না।তবুও চাইতাম আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে আর তাকে বলতাম আপনাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে।

মাহিরঃ এইতো দেখও আমি ফিরে এসেছি।তোমার খুব কাছে আছি।আর হারাবো না। প্লিজ কেঁদো না।

মায়াঃ হুমমম! আপনি আমার। সব ওই স্নিগ্ধা ডাইনিটার জন্য হয়েছে।নিজেও মরেছে আর আমাদেরকেও আলাদা করে দিয়ে গেছে।এতোটা দূরে রেখে গেছে যে চাইলেও আমরা দুজন দুজনের কাছে আর আসতে না পারি।
,
,
,
,
,,,ভার্সিটিতে,,,
আয়াত ছুটে ওয়াশরুমে গিয়ে ভেতর থেকে দরজাটা লক করে দেয়।এমনটা আয়াতের সাথে আগে কখনো হয়নি।আয়াত আয়নার সামনে দাড়িয়ে নেকাবটা তুলে দেখে লাবন্যর দেওয়া থাপ্পড়ের দাগটা মুখে স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে। লজ্জায়, কস্টে আয়াত পানি ছেড়ে দিয়ে মুখে বারবার পানির ছিটা দিচ্ছে। আর মুখ ঘষে থাপ্পড়ের দাগটা তোলার চেস্টা করছে।আয়াত জানে তার মাম্মাম এই দাগটা দেখলে খুব কস্ট পাবে।তাই আয়াত চেস্টা করছে এ দাগ তোলার।ওদিকে মেঘ কাটা কপালটাই ব্যান্ডেজ করে আয়াতকে পুরো ভার্সিটিতে খুঁজে বেড়াচ্ছে।কিন্তু পাচ্ছে না।অনেক খোঁজার পরও আয়াতকে না পেয়ে মেঘ ধরে নেয় আয়াত বাড়িতে চলে গেছে। তাই মেঘ আয়াতকে আর না খুঁজে ক্লাসরুমের মধ্যে ঢোকে।যেহেতু আজ প্রথমদিন তাই প্রথম ক্লাসে সকল স্টুডেন্টের পরিচয় নিচ্ছে। এমন সময়ে আয়াত এসে ক্লাস রুমের সামনে দাড়ায়। আর মেঘকে দেখেই আয়াত ক্লাসরুমের বাইরে থেকে মুখটা ঘুরিয়ে চলে যায়। মেঘ একপলক আয়াতকে দেখে ছুটে আয়াতের পিছনে আর আয়াতকে ডাকতে থাকে।কিন্তু আয়াত মেঘের কোনো ডাকে সাড়া দেয় না।আয়াত জোড়ে হেঁটে ভার্সিটির মাঠের মাঝখানে চলে আসে।এমন সময়ে মায়ার হাঁটা অবস্থায় পাশ থেকে এক বালতি কাঁদা কেউ আয়াতের গায়ে ছুড়ে মারে।পাশে দাড়িয়ে লাবন্য জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে কারণ তার কথায় তার সান্ডপান্ডরা আয়াতের গেয়ে কাঁদা ছুড়েছে।মেঘ দেখেই আয়াতের হাত ধরে এক হেঁচকা টান দেয়।আয়াত এসে মেঘের বুকে আবার হুমড়ি খেয়ে পরে। আর লাবন্য হাসতে হাসতে থেমে যায়।চেয়ে দেখে এক বালতি কাঁদা ছুটে তার গায়ে এসে পড়েছে।লাবন্যর সাড়া শরীর কাঁদা লেগে ভূতের ন্যায় দেখতে লাগছে।

চলবে,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *