ধ্রুবতারা !! Part- 14
রাতে………..
ধ্রুব মাত্র বাড়িতে এসে পৌছালো।আজ অনেকটা কাজ করতে হয়েছে ধ্রুবকে। সব জংজাল শেষ হয়েছে। এখন শুধু কালকের অপেক্ষা। কালকেই সব সমস্যার সমাধান হবে আর তারাকেও সব বলতে পারবো।
এসব ভেবে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো ধ্রুব।
রুমে এসেই ধ্রুব অবাক রুমের লাইট অফ করা চারপাশ অন্ধকার।
ধ্রুবঃরুমের লাইট অফ কেনো?তারা কোথায়?তারা!!! তারা!!!!
ধ্রুব রুমের লাইট জ্বালালো।
ধ্রুবঃতারা কোথায় গেলো?
হটাৎ ধ্রুবর চোখ গেলো বারান্দার দিকে।
ধ্রুবঃতারা কি বারান্দায়??
ধ্রুব বারান্দায় গেলো।
যা ভেবেছিলো তাই। তারা বারান্দায় চেয়ারে বসে আছে।
ধ্রুব মুচকি তারার কাছে গিয়েই দেখলো তারা চেয়ারেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
ধ্রুবঃআরে এই মেয়ে তো এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছে। 😃😃পারেও বটে। এখানে কি করে ঘুমালো।কিংবা এভাবে চেয়ারে ঘুমালে তো সকাল হতে হতে হাতে পায়ে ব্যাথা হয়ে যাবে। খাটে নিয়ে যেতে হবে তারাকে। ধ্রুব তারাকে কোলে নিতে কাছে এসেই আবার থেমে গেলো।কেমন যেনো একটা সংকোচ হচ্ছে। কারণ তারা তো ধ্রুবকে তারার কাছে আসতেও মানা করেছে তাহলে কি করে……
ধ্রুবঃনা ধ্রুব তারাকে নিয়েই যেতে হবে এখানে থাকলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
ধ্রুব নিজের সব সংকোচ ঝেড়ে ফেলে তারাকে কোলে নিয়েই ফেললো।
ধ্রুব তারাকে রুমে আনলো আর খাটের উপর শোয়ালো।
তারাকে খাটে শোয়ানোর পর তারার গায়ে পাতলা কাঁথা জড়িয়ে দিলো।
এরপর ধ্রুব রুমের লাইট অফ করে দিলো। শুধু বেডসাইটের মৃদু লাইটগুলো জ্বলছে। ধ্রুব লাইট অফ করে চলে যেতে লাগলে হটাৎ চোখ পড়লো তারার দিকে। মৃদু আলোতে তারাকে অন্যরকম লাগছে। খোলাচুল,কপালের সাথে লেগে আছে। ফর্সা গালগুলোতে মৃদু আলোর ছোঁয়ায় আরো ফুঁটিয়ে তুলছে।
ধ্রুব কোনো এক অজানা মোহে তারার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ধ্রুব আস্তে আস্তে তারার কাছে আসলো। খাটের পাশে মেঝেতে বসলো ধ্রুব। ধীরে ধীরে তারার হাতটা ধরলো। নিজের আঙুলের মাঝে তারার আঙুলগুলোকে বদ্ধ করে ফেললো ধ্রুব। পলকহীনভাবে তারার দিকে তাকিয়ে আছে ধ্রুব। কি অপরূপ লাগছে তারাকে। স্নিগ্ধতা বিরাজ করছে সারা মুখে।আচ্ছা আমি কি তারাকে ভালোবাসি বলে সব রূপেই ওকে দেখে মুগ্ধ হই?নাকি ওর মাঝেই কোনো বিশেষ ক্ষমতা আছে যা আমাকে বার বার ওর কাছে টেনে নিয়ে যায়।জানা নেই তবে এটা বলা ভুল হবে না ওকে যতবার যে রূপেই দেখি ততবারই সব ভুলে যায়। আচ্ছা তারা তোমার মাঝে এমন কি আছে?
তোমাকে ভোরের আলোতে স্নিগ্ধ কোমল লাগে, গ্রীষ্মের রোদের ঝলমল বরিতে সূযর্মুখীর ফুলের মতো লাগে, বর্ষাতে বৃষ্টির এক একটা বিন্দু যখন তোমার ত্বক স্পর্শ করে তখন মনে হয় তোমার অঙ্গজুড়ে মুক্তোর ঝরণা প্রবাহিত হচ্ছে,যখন তুমি নীল শাড়ি পড় তখন তোমাকে শরৎ এর বিস্তৃত নীল আকাশের মতো লাগে যেখানে নিজেকে উড়ে বেড়ানো সাদা মেঘের মতো লাগে। হেমন্তের স্বর্ণালী দুপুরে তোমার সাথে পুকুরপাড়ে বসে সময় কাটাতে মন চাই। তোমার অবাধ্য চুলগুলোর সাথে খেলতে মন চাই, শীতের তান্ডবে তোমার সাথে বসে আগুনের উষ্ণতা উপভোগ করতে চাই।আচ্ছা তারা আমি কি খুব বড় ভুল করেছিলাম। হয়তো করেছিলাম। কিন্তু কি করবো বল তোমাকে অন্য কারো সাথে দেখা আমার পক্ষে সম্ভব না। আচ্ছা তোমার তো উচিত ছিলো আমাকে একটা থাপ্পর মেরে আমার ভুল বুঝিয়ে দেওয়া কিন্তু তুমি তো চলে গেলে। এই কাজটি তুমি একদম ঠিক করোনি। জানো তারা তোমাকে ছাড়া দুইটা মাস আমার কেমন কেটেছে তোমার ধারণা নেই। বারবার নিজেকে শেষ করে দিতে মন চেয়েছিলো কিন্তু আবার নিজের মনকে শান্তনা দিতাম কারন তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। আমার অপেক্ষা সার্থক তোমাকে তো পেলাম। কিন্তু পুরোপুরিভাবে নয় তোমার মন জয় করার স্বার্থকতা আমার ভাগ্যে এলো না।
কিন্তু কালকের পর থেকে সব আবার ঠিক হয়ে যাবে। আর আমি তোমাকে আমার মনের কথা বলতে পারবো। জানি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি কিন্তু কাল সব কষ্টের অবসান হবে। আর আমি আমার তারাকে পাবো। ধ্রুবর তারাকে পাবো।
আচ্ছা তারা তোমার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিলে কি খুব একটা অপরাধ হয়ে যাবে?আর অপরাধও যদি হয় তাহলে এই অপরাধটা করতে কেনো যেনো মন সায় দিচ্ছে। কিছু কিছু অপরাধ আছে যা করতে কেনো যেনো ভালো লাগে। আমিও আজ এই অপরাধটা করতে চাই। আর বার বার করতে চাই।
ধ্রুব তারার কাছে গিয়ে ওর কপালে ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া দিলো।
আবার বসে পড়লো নিচে।
নিজের কাজেই ধ্রুব নিজেই হেসে ফেললো।
ধ্রুবঃ কি ঘুম রে বাবা!! এতো কথা বলছি তবুও ঘুম ভাঙছেনা। হাহাহা কি করেই বা ভাঙবে যে ঘুৃম কাতুরে। তাই তো প্রতি রাতে এভাবেই কথা বলতে হয়। কারণ সামনাসামনি তো কথা বলা যায় না। কথা বলতে গেলেই রেগে ফায়ার হয়ে থাকে। 😂😂😂কি ভাগ্য তোর ধ্রুব? তোর ভয়ে সবাই যেখানে থরথর কাঁপতো সেখানে আমি এই মেয়েকে ভয় পেয়ে কথা বলি না। হাস্যকর না??মানুষ ঠিকই বলতো ভালোবাসা মানুষকে পরিবর্তন করে দেয়। আমারও করলো।
“তোমাকে দেখতে দেখতে কাটে
আমার সমগ্ররাত
তোমার অপেক্ষায় থাকি
প্রত্যেকটা প্রভাত
তোমার কান্নায় মন ভাঙে
তোমার হাসিতে মন কাড়ে।
তোমার জন্য এক আকাশ ভালোবাসা
তুমি আমার তারা।
ধ্রুবরতারা
#ধ্রুবতারা -(নিলাঞ্জনা)
ধ্রুব মুচকি হেসে মেঝে থেকে উঠে পড়লো। আর আরেকবার তারাকে দেখে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।
ধ্রুবঃ তারা শুধু কালকের অপেক্ষা। জানি না কি হবে? সৃষ্টিকর্তার কাছে শুধু একটা জিনিসই চাই কাল যাই হোক না কেনো আমি যাতে আমার তারাকে ফিরে পাই।
আর কিছু চাই না আমি।
চলবে………..