ধ্রুবতারা

ধ্রুবতারা !! Part- 13

পার্লারে সাজানো হচ্ছে তারাকে। আজ ওর বিয়ে। পুতুল এর মতো বসে আছে তারা। আজ তারার বিয়ে কিন্তু তারার মনে কোনো অনুভূতি কাজ করছে না।পাথরের মতো শক্ত হয়ে আছে তারা। কান্না আসতে চাইছে কিন্তু কান্না করার জো নেই।
…ম্যাডাম আপনার সাজ কমপ্লিট। একবার আয়না দেখুন।
পার্লারের মেয়েটার কথায় তারার ধ্যান ভাঙে । নিজেকে একবার আয়নায় দেখে তারা।নিজেকে দেখে নিজেই বিমোহিত হয়। অপূর্ব লাগছে। আচ্ছা মেক আপ দিয়ে কি সব দুঃখ কষ্ট আড়াল করা যায়?যায় হয়তো তা নাহলে কেনো কেউ বুঝতে পারলো না এই হাসির মাঝে লুকানো কান্না।তুই সফল তারা, তুই সফল। সবাইকে তুই বোকা বানাতে পারলি। সবাই তোর জন্য খুশি।

আচ্ছা নিজেকে কি করে বোকা বানানো যায়?সেই পদ্ধতি জানা নেই। তা না হলে সবাই নিজেকে বোকা বানাতো।
তারা জোরে একটা নিঃশ্বাস নিলো।
.
.
.
.
.
বিয়ের আসরে…….

তারা চুপচাপ বসে আছে নিজের রুমে।পার্লার থেকে এসেছে অনেকটা সময় হয়েছে।এতক্ষনে বিযেটা হয়ে যাওয়ার কথা তাহলে এখনো হচ্ছে না কেনো?আর বাইরে,কিসের এতো শোরগোল হচ্ছে।নিলয় কি এখনো আসেনি?তারা কিছু বুঝতে পারছেনা কি হচ্ছে বাইরে।

হটাৎ দরজার খোলার শব্দ পেলো।দরজা খোলার শব্দে তারা পিছনে তাকালো। বাবা এসেছে।
তারাঃ বাবা তুমি??
বাবাঃ হ্যা মা আমি৷ তোর সাথে কিছু কথা ছিলো।।
তারাঃ কি কথা বাবা।
বাবাঃ মা… নি..নিলয়
তারাঃ কি হয়েছে বাবা?
বাবাঃ মারে,নিলয় আসেনি।
তারাঃ আসেনি মানে?কি বলছো বাবা?
বাবাঃ হ্যা রে মা। নিলয়,আসেনি শুধু এই চিঠি পাঠিয়েছে। আর বলেছে…..
তারাঃ কি বলেছে বাবা??
বাবাঃ বলেছে সে তোকে বিয়ে করতে চাই না।
তারা কিছু সময়ের জন্য নিশ্চুপ হয়ে পড়লো। তারার চারপাশ ঘুরছে।সব কিছু উলট পালট লাগছে। মনে হচ্ছে সে মারা যাবে।আবার ধোকা,আবার অপমান। কেনো? নিলয় এমন কেনো করলো?তারা তো নিলয়ের কাছে যায়নি। তারা তো বিয়ের প্রস্তাব দেইনি। নিলয় তো এসেছিলো তারার কাছে। ভালোবাসার দাবিতে বিয়ে করতে চেয়েছিলো তাহলে আজ এমন কেনো করলো? কেনো করলো নিলয় এমন?তারার খুব কান্না পাচ্ছে। খুব কান্না করতে মন চাইছে। কিন্তু কান্না করা সম্ভব না। বাবা ভেঙে পড়েছে আমাকে এভাবে দেখলে আরো ভেঙে পড়বে। নিজেকে সামলা তারা। কন্ট্রোল!!.। নিজের ভাগ্যে নিজেই হাসছে তারা। কি ভাগ্য তার সব সময় ধোকা দেয় এই ভাগ্য।
বাবাঃতারা!!
বাবার ডাকে ফিরে আসে তারা।
বাবাঃতুই ঠিক আছিস তো মা?
তারাঃহ্যা বাবা আমি ঠিক আছি
বাবাঃমারে তোর সাথে আমি বড় অন্যায় করে ফেলেছি পারলে ক্ষমা করে দিস।
তারাঃএই কি করছো বাবা?,কি হয়েছে?
বাবাঃমারে তোর বিয়ে ভাঙার কারণে সকলে তোকে অপয়া, অলক্ষী অনেক কিছুই বলছিলো। আমি সইতে পারছিলাম না। সবাই যখন তোকে খারাপ কথা বলতে মগ্ন হটাৎ একটা ছেলে আসলো আর আমার কাছে তোর হাত চাইলো। আমিও না করতে পারি নি। তাই আজ ওর সাথে তোকে বিয়ে দিতে রাজি হয়েছি।
তারা কিছু বলছে না কিবা বলবে? নিজের ভাগ্যে হাসি পাচ্ছে তারার। লাইফটা একটা সিরিয়াল হয়ে গেছে যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হতে পারে।।
বাবাঃমারে তুই কি??
তারাঃআমি রাজি বাবা। কিন্তু তার আগে আমি ঐ মানুষটার সাথে ১০মিনিট কথা বলতে চাই।।
বাবাঃআলহামদুলিল্লাহ আমি এখনি ওকে ভিতরে আসতে বলছি তুই ওর সাথে কথা বল।

.
.
.
তারা রুমে বসে আছে। নিজেকে কেমন যেনো অসহায় লাগছে।বুকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছে।

আমি কি আসতে পারি?
পরিচিত গলার স্বর ভেসে উঠলো তারার কানে।গলার স্বরটা কেমন যেনো পরিচিত লাগছে। কে হতে পারে?
তারা পিছনে না তাকিয়েই বললো আসুন।
দরজা বন্ধ করার শব্দ পেলো তারা। তার মানে তিনি ঢুকেছেন।
তারাঃআপনাকে নতুন করে কিছু বলার নেই। আপনি সবই জানেন শুধু একটা কথা জিজ্ঞেসা করবো কেনো আমাকে বিয়ে করতে চান?
..কারণটা অজানায় থাক।
আবার সেই পরিচিত গলা।না এবার আর না তাকিয়ে পারলো না তারা।
সামনে তাকিয়েই তারা অবাক।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা তারা।ধ্রুব তার সামনে দাড়িয়ে আছে।
তারাঃআপনি এখানে???
ধ্রুবঃহুমম আমি।কেনো কোনো সমস্যা?
তারাঃআপনি কেনো এসেছেন এখানে?কি চান আপনি?আবার অপমান করতে এসেছেন। চলে যান এখান থেকে।আই সে গেট আউট।
ধ্রুবঃআমি তো যাবো কিন্তু তোমাকে নিয়েই যাবো। তোমায় বিয়ে করবো বলে কথা। তাই না?
তারাঃনা আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।
ধ্রুবঃতা তো দেখায় যাবে।আমি বাইরে ওয়েট করছি। বিয়ের জন্য রেডি হও। চুপচাপ বিয়ের পিরিতে বসবে আর তা না হলে তোমার জন্য ভালো হবে না বলে দিলাম।আমি রুমের বাইরে আছি৷ লেহেঙা ঠিক করে বাইরে আসো৷ ওকে জানু😙😘
বলে ধ্রুব চলে গেলো।
তারা কিছু বুঝতে পারছেনা। কি হচ্ছে এসব? ধ্রুব কেনো এসেছে আর কেনোই বা বিয়ে করতে চাই।
আমি তো বেরও হতে পারবো না। বাইরে দাড়িয়ে আছে। আর বের হতে না পারলে আমার বিয়ে হয়ে যাবে আর আমি ঐ লোকটাকে কখনোও বিয়ে করবো না। কোনোমতেই না।
তারা কিছু কিছু একটা ভাব জলদি!!ঐ তো পেয়েছি। জানালা দিয়ে বের হয়ে যায়। বাকিটা পরে দেখা যাবে। কিন্তু আমি এই মানুষটাকে বিয়ে করবো না।
তারা জানালা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো।আর দৌড়াতে শুরু করলো।
তারা জলদি দৌড়া আজ তোকে এই বিয়ে যে করেই হোক বন্ধ করতে হবে।সরি বাবা। তুমি যদি অন্য কাউকে আমার জন্য দেখতে তাহলে বিয়েতে আমার আপত্তি ছিলো না কিন্তু ঐ মানুষটাকে আমি কখনোও বিয়ে করবো না। ঐ লোকটা কেনো এসেছে আবার আমার লাইফে?কেনো? এখন আমার কাছে সময় নেই বাবা মা তোমাদের কিছু বলার কিন্তু আমি ফিরে এসে তোমাদের সব বলবো।এখানে থাকলে ঐ লোক আমাকে বিয়ে করবে। আমি করবো না।
তারা দৌড়াচ্ছে আর এসব ভাবছে। এমন সময় হটাৎ কোথা থেকে একটা গাড়ি আসলো আর তারার সামনে এসে থেমে গেলো।
তারাও থেমে গেলো।
তারাঃএসবের মানে কি রাস্তার মাঝখানে গাড়ি থামানোর😡😡😡😡
ধ্রুবঃকি করবো হবু বৌ যদি এভাবে দৌড়াদৌড়ি করে তাহলে জামাইকে তো এভাবে গাড়ি চালাতে হবে।(গাড়ি থেকে নামতে নামতে)
তারাঃআপনি আবার।কেনো এসেছেন?ভালো হবে না বলে দিচ্ছি। যান এখান থেকে।
তারা আবার দৌড়াতে চাইলে ধ্রুব তারার হাত ধরে ফেলে।
তারাঃহাত ছাড়ুন। ছাড়ুন বলছি।
ধ্রুব ঃওকে।
বলে তারার মুখে কিছু একটা স্প্রে করলো।
আর তারা বেহুশ হয়ে গেলো।




তারা ধীরে ধীরে চোখ খুললো।
মাথাটা কেমন ভারি হয়ে আছে। তারা পুরোপুরি চোখ খুললো। সামনেই দেখতে পেলো ধ্রুব বসে আছে।
আরো দু একজন।
তারাঃআমি এখানে কেনো?.ধ্রুবঃওহহহ উঠে পড়েছো। তুমি এখানে কারণ আজ আমাদের এখানে বিয়ে।
তারাঃমানে কি আমি বিয়ে করবো না।
ধ্রুবঃঠিক আছে বিয়ে কইরো না তার আগে এই ভিডিওটা দেখো।
তারার মোবাইলের দিকে চোখ গেলে তারার আপনাআপনি মুখ থেকে চিৎকার বেরিয়ে যায়। নাহহহহহ।প্রবল!!!!
হ্যা ধ্রুব প্রবলকে দেখাচ্ছে। একটা লোক প্রবল এর দিকে নজর দিচ্ছে।
ধ্রুবঃএই যে প্রবল এর পিছনে লোকটা দেখছো ও হলো আমার লোক তুমি যদি বিয়েতে রাজি না হও তাহলে প্রবল এর কি হবে ভেবে দেখেছো?
তারার চোখ থেকে অনবরত জল পড়ছে।
ধ্রুবঃ তো কি ডিসিশন নিলা কি করবা?
তারাঃ আমি রাজি।
ধ্রুবঃ সত্যি?
তারাঃ হুমমমম
ধ্রুবঃ তাহলে শুরু করা যাক।
কাজী বিয়ে পড়াতে শুরু করলো আর তারা মূর্তির মতো বসে রইলো।







কি করলি এটা তুই?
তারাঃ….
বাবাঃ বল তারা। আমরা তো তোর বিয়ে দিচ্ছিলাম ওর সাথে তাহলে কেনো পালালি?আর পালিয়ে ওকেই বিয়ে করলি!!
বল উত্তর দে আমায় কেনো এমন পাগলামি করলি?তোর সাথে তো ধ্রুবরই বিয়ে হচ্ছিলো তাহলে কেনো তুই পালালি আবার ওকেই বিয়ে করলি?বল!!!!.
তারা কি বলবে বুঝতে পারছেনা। কিইবা বলবে তারার নিজের কাছেই তো সব কিছু উলট পালট লাগছে।
তারা কিছু বলছে না।
বাবাঃ তারা বল!!!!
তারা বাবার চিৎকারে ভয় পেয়ে গেলো।
ধ্রুবঃ দেখুন আংকেল এখানে তারার কোনো দোষ নেই আমি বলছি।আসলে আমি আর তারা একে অপরকে ভালোবাসতাম কিন্তু আপনাদের ভয়ে তারা বলতে পারেনি আর আপনাদের সুখের জন্য তারা বিয়ের জন্য রাজি হয়।আর নিলয়কে আমি বলেছি বিয়েতে না আসতে কিন্তু তারা জানতো না। আজকে নিলয়,না আসায় আপনি যখন৷ আমার সাথে বিয়ে ঠিক করলেন এসব প্লান ছিলো। তারা জানতো না। নিলয়ও জানে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি। তাই ও আমাদের সাহায্য করেছে। আর আমি যখন তারার সাথে দেখা করতে আসছিলাম তখন তারা আমাকো না দেখেই ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলো আমি গিয়ে ওকে নিয়ে আসি। তারাকে সব বলি। বলার পরও তারা ভয় লাগছিলো আপনি হয়তো সত্যি জানার পর আমাদের মেনে নিবেন না তাই বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি।
তারা অবাক হয়ে দেখছে এভাবে মানুষ মিথ্যা বলতে পারে?
বাবাঃ তারা কি বলছে এসব?তুই কি আমাদের এতো নিচু ভাবিস?তোর অমতে আমরা তোকে বিয়ে দিতাম?নিলয়টা আসলেই ভালো তা না হলে তোর এমন ধোকাতেও তোকে সাহায্য করলো। তোকে আমার মেয়ে বলতে কষ্ট হচ্ছে।বেরিয়ে যা আর তোকে দেখতে চাই না আমি যা বেরিয়ে যা।
তারাঃবাবা!!!
বাবাঃ যা বলছি।

ধ্রুবঃতারা চল।
তারাঃ বাবা…..

বর্তমানঃ
অতীত থেকে ফিরে আসলো তারা।ভয়ংকর অতীত ছিলো। মনে করলেই কান্না পায়।সব কিছুর জন্য দায়ী ধ্রুব।আচ্ছা নিলয় কোথায়? নিলয় কি জানে?নাকি ধ্রুব……..

চলবে……

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *