ধ্রুবতারা

ধ্রুবতারা !! Part- 10

তারা ধীরে ধীরে চোখ খুললো।চোখ খুলতেই তারা সাদা দেওয়াল দেখতে পেলো যেখানে সাদা রং এর ফ্যান ঘুরছে।
তারা আস্তে আস্তে মাথা ঘুরিয়ে চারপাশ দেখার চেষ্টা করলো। কিছুক্ষনের মাঝেই তারা বুঝতে পারলো সে এখন হসপিটালে আছে। তারার মাথাটা কেমন যেনো ভারি ভারি লাগছিলো।তারা কপালে হাত দিলো। কপালে মোটা ব্যান্ডেজ করা।
তারা ভাবতে শুরু করলো ওর সাথে কি হয়েছিলো?
আর কিছুক্ষনের মাঝেই তারার সব মনে পড়ে গেলো।মনে পড়ে গেলো ধ্রুব ওকে কি করে অপমান করেছে।
তারা খুব জোরে একটা নিঃশ্বাস নিলো। আশেপাশে তাকিয়ে একটা ঘড়ির দিকে মজর গেলো। এখন রাত ৮টা বাজে। তার মানে অনেকটা সময় পর চোখ খুলেছি। যখন এক্সিডেন্ট হয়েছিলো তখন ১১ঃ৩০টা ছিলো।প্রায় সাড়ে ৯ঘণ্টা পর।
তারা এসব ভাবছিলো হটাৎ দরজা খোলার শব্দ পেলো তারা।
তারা দরজার দিকে মুখ ঘোরালো।
নিলয় রুমে এসেছে।
নিলয়ঃ ফাইনালি ম্যাডাম আপনার চোখ খুললো।
তারাঃ নিলয় তুমি??তুমি আমায় এনেছো?
নিলয়ঃজ্বি ম্যাডাম। আপনি তো আমার গাড়ির সামনেই এসে পড়েছিলেন।তো কি হলো প্রেমে কি ছ্যাকা খাইলেন যে আত্মহত্যা করার চিন্তা করতাসেন?😂😂
তারাঃ নিলয় আমি আত্মহত্যা করার জন্য যায়নি।😒😒😒
নিলয়ঃ তাহলে কি এমন হইলো?
তারাঃআমি রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম আর মাথায় অন্য চিন্তা ছিলো তাই গাড়ি খেয়াল করি নাই।
নিলয়ঃ তো তুমি কি এমন চিন্তা করছিলে?
তারা নিশ্চুপ রইলো।
নিলয় তারার হাত ধরে বললো- তারা কি হয়েছে বলো আমায়। আমি জানি আমার সাথে তোমার পরিচয় ১বছর এর বেশি নয়। কিন্তু আমরা তো ভালো বন্ধু তাই না?তুমি বলতে পারো আমায়।
তারা আর রইতে পারলোনা কান্নায় ভেঙে পড়লো।





ধ্রুব মাত্র বাড়িতে এসে পৌছালো। মন ভালো নেই ধ্রুবর। আজকের সারাদিনের কথা ভাবছে ধ্রুব।তারা কেবিন থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষন পর ধ্রুবও তারার খোজে বের হলো।ধ্রুব জানে না তারা নির্দোষ কি না। তবুও মন তো আর মস্তিষ্কের কথা মানে না।অগত্যা ধ্রুব গিয়েছিলো কিন্তু কোনো কাজ হলো না তারাকে পেলো না।
আজ সারাদিন ওকে খুজলো, বাড়িতেও নেই।

ধ্রুবর কেনো যেনো রুমে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না তাই সে বাগানে গেলো।
ধ্রুব বাগানের বেঞ্চিতে বসে রইলো মাথাটা কেমন যেনো অসস্তিকর ব্যাথা দিচ্ছে।
হটাৎ ধ্রুব ওর কাঁধে স্পর্শ অনুভব করলো। ধ্রুব ফিরে তাকালো। ফরিদ সাহেব দাড়িয়ে আছেন।
ধ্রুবঃবাবা??
ফরিদ সাহেব ধ্রুবর পাশে এসে বসলেন।
ফরিদ সাহেবঃ হুমম আমি।কি হয়েছে তোর মন খারাপ,নাকি?
ধ্রুবঃনা বাবা তেমন কিছু না। এমনেই…..
ফরিদ বাবাঃধ্রুব আমি তোর বাবা কোনো হিটলার নই ।আমাকে কি তোদের শাসক মনে হয়? তোর মাও আমাকে কিছু বলতো না আর তুই ও।।ধ্রুবঃবাবা তেমন কিছু না।
ফরিদ সাহেবঃতাহলে আমাকে তোর বন্ধু ভেবে বল কি হয়েছে।
ধ্রুব মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে রইলো। ফরিদ সাহেব উত্তরের অপেক্ষায় বসে আছে।
ধ্রুব বলতে শুরু করলো একে একে সব।
কাল রাতে ধ্রুব রুমে শুয়ে ভাবছিলো কি করে তারাকে মনের কথা বলবে। হটাৎ করেই একটা ম্যাসেজ এলো। তারাকে চাও তো?কিন্তু ওর আসল চেহারা কি জানো?

ধ্রুব অবাক হয়ে গেলো ।কি বলছে এসব আর তারাকে ভালোবাসে এটা কি করে জানলো?আর তারার কিসের আসল চেহারা?ধ্রুবর মোবাইল আবার শব্দ করে উঠলো।ধ্রুব মোবাইল চেক করে যা দেখলো তাতে ওর চোখ লাল হয়ে উঠলো তারার কিছু ছবি।যাতে কোনো এক ছেলের সাথে তারা খুব ক্লোজভাবে ছবিগুলো তুলেছে। ধ্রুবর মাথায় রাগ চেপে উঠলো।
আবার ম্যাসেজ আসলো। কি হলো? দেখলেন তো তারার আসল চেহারা। ও কেমন মেয়ে? আর যদি কিছু জানার থাকে তাহলে তারা থেকে জেনে নিবেন।বাই!!!

ধ্রুব ম্যাসেজটি পড়ার সাথে সাথে ঐ নম্বর এ কল দিলো। কিন্তু বন্ধ পেলো।
ধ্রুব কিছু বুঝতে পারছেনা। সারারাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলো।চোখে তো ঘুম আসছেনা।সকালে নাস্তা না খেয়েই বেরিয়ে পড়লো ধ্রুব।
গাড়ি একটা সিগন্যালে গিয়ে থামালো হটাৎ একটা বাচ্চা মেয়ে গাড়ির জানালায় টোকা দিলো।ধ্রুব জানালা খুলতেই ধ্রুবর হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
ধ্রুব বার বার ডাকার পরও শুনলো না। তাই ধ্রুব খামটি নেড়ে চেড়ে দেখলো। আর খামটা খুলে দেখলো। আর খাম খুলে দেখলো আবার সেই ছবি যা কাল দেখেছিলো। ধ্রুবর আবার মাথা গরম হয়ে পড়লো। ছবিগুলো গাড়িতে রেখে গাড়ি চালাতে শুরু করলো। গাড়ি চালানোর সময় হটাৎ ধ্রুবর নজর গেলো রাস্তায়।তারা কারো সাথে কথা বলছে। তারা একটা ছেলের সাথে কথা বলছে। ধ্রুব ছেলেটার চেহারা খেয়াল করে দেখলো এটা ঐ ছেলেটা নয় কিন্তু তাহলে তারা ওর সাথে এভাবে কথা বলছে এভাবে হাসছে। তাহলে কি ঐ ম্যাসেজগুলোই সত্যি?এটা তারার আসল চেহারা??
এরপর ধ্রুব একটা ছবি তুলে নিলো। আর চলে গেলো। এরপর এর কাহিনী সবাই জানে।

.
.
.

সব শুনেই ফরিদ সাহেব চুপ করে রইলেন।
ধ্রুবও কিছু বলছে না।
ফরিদ সাহেব অবশেষে তার মুখ খুললেন।

ধ্রুব তুই সব সময় বলস আমি কেনো তারাকে এতো দেখতে পারি কেনো ওর সাইড নি।
ধ্রুব চুপ করে রইলো।
জানিস বিনা কারণে কোনো কিছু হয় না। তারাকেও আমি বিনা কারণে পছন্দ করতাম না। দুই বছর আগে আমি ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বাসায় যাচ্ছিলাম। প্রায় ২৫লাখ টাকা ছিলো। হটাৎ আমার বুকে ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। আমি রাস্তায় পড়ে যায়।সেদিন ড্রাইভার ও ছিলো না। রাস্তায় অনেক মানুষ ছিলো কিন্তু সবাই দৃশ্য দেখছিলো কেউ এগিয়ে আসছিলো না। হটাৎ তারা কোথা থেকে আসলো আর আমাকে একা নিজ দায়িত্বে হসপিটালে নিয়ে গেলো আমার খেয়াল রাখলো সব করলো। আমি ঠিক হওয়ার পর ও আমাকে আমার টাকা ফেরত দে। ওকে জিজ্ঞেসা করলাম ও কি করে?উত্তরে বললো কিছু না চাকরি খুজছে। আমি ওকে চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব দি কিন্তু ও রাজি হয় না বলে আপনাকে সাহায্য করেছি বলে সেই অযুহাতে চাকরি আমার চাই না আমার কোয়ালিফিকেশনে আপনি চাকরি দিবেন। আমি সেদিন মুচকি হেসেছিলাম।এরপর নিজের কাজেই তারা এতোটুকু এসেছিলো। আর তুই….
ধ্রুব বুঝতে পারছেনা কি বলবে।

জানিস ধ্রুব একবার তোর দাদির একটা স্বর্নের দুল পাওয়া যাচ্ছিলো না। তখন আমাদের বিয়ের মাত্র ৭দিন। সবাই বললো তোর মা এই কাজ করেছে। সবাই ওকে বকা দিচ্ছিলো কিন্তু আমার মন কেনো যেনো মানতে চাচ্ছিলো না তোর মা এমন করতে পারে। কারন সেই ৭দিনে তোর মাকে আমি চিনে গিয়েছিলাম। তাই সবার বিরুদ্ধে গিয়ে আমি ওর পক্ষ নিয়েছিলাম। সবাই বললো আমি বৌ পাগলা হয়ে পড়েছি। কিন্তু আমি তোর মাকে ছাড়িনি আর অবশেষে প্রমাণ করেই ছাড়লাম তোর মা নির্দোষ।

ধ্রুব মনোযোগ দিয়ে সব শুনছিলো।
ফরিদ সাহেব একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলো-তুই তারাকে ৭মাস ধরে চিনিস কিন্তু এখনও চিন্তে পারলি না? কি আর ভালোবাসলি?
ধ্রুব ফরিদ সাহেবের দিকে অবাক হয়ে তাকালো
ফরিদ সাহেবঃ কি ভাবছিস কি করে বুঝলাম?.আমি তোর বাবা তোর মা তোকে ৯মাস গর্ভে ধরেছে তাই সব ও জানবে কিন্তু তোর মায়ের সাথে ৯মাস আমিও তোর সাথে ছিলাম। তুই যখন জন্ম নিলি আমিই প্রথম তোকে কোলে নিয়ে ছিলাম। আর তোর মনের খবর জানবো না?তারার ব্যাপারে এমন খবর জেনে তুই যেভাবে কষ্ট পাচ্ছিস তা অন্য কারোর ব্যাপারে পেলে এমন কষ্টা পাওয়ার কথা না।
ধ্রুব নিশ্চুপ।
ফরিদ সাহেব আবার বলতে শুরু করলো -ধ্রুব সব সম্পর্ক বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে। বিশ্বাস থাকলে ৭দিনের সম্পর্কেও ভালোবাসা বেঁচে থাকে। আর না থাকলে ৭বছরের ভালোবাসাও কম পড়ে যায়।
তোর কি মনে হয় তারা এমন মেয়ে??
নিজের মনকে একবার জিজ্ঞেসা করিস। উত্তর আপনাআপনি পেয়ে যাবি। ফরিদ সাহেব চলে গেলেন।

ধ্রুবর মাথা থেকে এখন সব ধোয়াশা দূর হয়ে গেছে। তারাকে নিয়ে যে কত বড় একটা ভুল করেছে তা ধ্রুব বুঝতে পেরেছে কালকেই তারার সাথে কথা বলবো আর আমাকে বের করতে হবে কে এমন কাজ করছে তাও খুব জলদি।

.
নিলয়ঃ ওয়াট!!!তারা কি বলছো এসব? ধ্রুব এরকম কি করে করতে পারলো?আর এতো জঘন্য কথা কিভাবে বললো?ওকে তো আমি…
একজন এমপ্লোয় এর পারসোনাল লাইফে ইন্টেফেয়ার করার মানে কি?আমি ও তো বস আমি তো এমন করিনি কারো সাথে। আমি এখনই ওর কাছে যাবো..
তারাঃ না তুমি যাবো না
নিলয়ঃ তারা?
তারাঃ না নিলয় কিছু বলবেনা। যদি কিছু করতেই চাও তাহলে একটা কাজ করতে পারবা?
নিলয়ঃ কি কাজ?
তারাঃ আমাকে একটা কলম আর কাগজ এনে দাও। নিলয় তারাকে কাগজ কলম এনে দিলো।
তারা কিছু একটা লিখলো আর কাগজটা নিলয়কে দিয়ে বললো এটা মি.ধ্রুবকে দিয়ে আসবে। আর আমার সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে বলবেনা। শুধু এই কাজটা করে দাও আমার প্লিজ।
নিলয়ঃ প্লিজ বলা লাগবে না। আমি করে দিবো।তুমি ঘুমাও কাল রিলিজ করা হবে তোমায়। আংকেল আন্টিকে জানিয়েছি একটু আগে ওনারা আসতে চেয়েছিলেন আমি মানা করেছি। কাল সকালে আমি তোমায় বাসায়,নিয়ে যাবো। এখন রেস্ট করো। বাই।

নিলয় চলে গেলো।
তারা শুয়ে পড়লো। চোখের জলগুলো বড় বেইমান যখন তখন পড়তে শুরু করে কথা শুনে না।

চলবে………

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *