ধ্রুবতারা

ধ্রুবতারা !! Part- 02

ধ্রুব আর অপেক্ষা করতে পারলো না। তাই সে দরজাটা ভাঙার চেষ্টা করতে লাগলো। অবশেষে অনেক চেষ্টার পর দরজাটা ভাঙা গেলো। ভিতরে ঢুকেই ধ্রুবর হাত পা ঠান্ডা হওয়ার উপক্রম।তারা বাথরুমের ফ্লোরে পড়ে আছে। দ্রুতবেগে তারার শরীরে ঝরণার পানি পড়ছে। ধ্রুব শ্বাস আটকে আসতে চাইছে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
..
.
.
.
.

ধ্রুব বারান্দায় রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে। মাথা ভনভন করছে। তারা খাটে শুয়ে আছে। এখনো অজ্ঞান। ধ্রুবই তারাকে কোলে করে রুমে এনেছে। এরপর মুন্নি (বাড়ির কাজের মেয়ে)কে দিয়ে তারার কাপড় চেন্জ করালো। যদিও ধ্রুব তারার স্বামী কিন্তু তা হলে কি হবে তারা তো মানে না আর ধ্রুবও চাই না কোনো জোরপূর্বক অধিকার। ডাক্তারকে ডাকা হলো কিন্তু ফরিদ সাহেবের অগোচরে। ধ্রুব চায়,না তার বাবা আপাতত কোনো ধরনের মানসিক চাপ পাক। তাই ফরিদ সাহেবকে না ডেকেই খুব সাবধানতার সহিত ডাক্তার ডাকা হলো। ডাক্তার তারাকে ঔষধ দিয়েছে। সকালেই তারার জ্ঞান ফিরবে।
ধ্রুব বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। সকালের নীল আকাশটা এখন কালো চাদর মোড়ানো। নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে পরিবেশে কিন্তু ধ্রুবর মনে উথাল পাথাল হচ্ছে।
ধ্রুবঃ তারা আমাকে মাফ করে দাও। জানি তোমার আজকের এই অবস্থার জন্য আমি দায়ী কিন্তু আমার কিছু করার নেই। তোমাই ভালোবাসি বলে এসব করছি। হ্যা তারা তোমায় খুব ভালোবাসি। যা তোমাকে বলার আগেই…..
দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেললো ধ্রুব। ফিরে গেলো অতীতে। যখন থেকে হঠাৎ করেই ধ্রুবর মনে তৈরী হয়েছিলো তারার প্রতি এক বিশেষ অনুভূতি ।

অতীত………….

“হোটেল নূরজাহান গ্র্যান্ড “ এ এসে পৌছালো গাড়ি থামলো ধ্রুবদের। হোটেল দেখেই তারা মুগ্ধ। সিলেটের অন্যতম বিখ্যাত হোটেল এটা।
হোটেলের লবিতে আসতেই ধ্রুব বললো –
তুমি এখানে দাড়াও আমি রুমের চাবি নিয়ে আসছি৷
তারাঃ ওকে স্যার।
ধ্রুব যেতেই তারা হোটেল দেখতে শুরু করলো।

ধ্রুবঃ এই নাও চাবি। আজকের মতো রেস্ট নাও। কাল ৯টার মধ্যে হোটেলের লবিতে আমার সাথে দেখা করবে।
তারাঃ ওকে স্যার।

তারা আর ধ্রুবর রুম পাশাপাশি আর ওদের রুমের বারান্দাও।

তারা আর ধ্রুব দুজনেই রুমে ঢুকে ফ্রেশ হতে ওয়াসরুমে চলে গেলো।
তারা ওয়াসরুম থেকে বের হতেই ওর চোখ গেলো বারান্দার দিকে। তারা আর অপেক্ষা না করে বারান্দায় চলে গেলো। বারান্দায় গিয়ে তারা অবাক। অনেক সুন্দর একটা বারান্দা । সেখানে একটা মিডিয়াম সাইজের দোলনা রাখা দোলনার প্রতি আকর্ষন তারা ছোটবেলা থেকেই। তারা পা গুটিয়ে দোলনায় বসে পড়লো। দোলনায় দুলতে দুলতে তারা কখন যে চোখ লেগে আসলো তা সে নিজেই বুঝেনি।

ঐদিকে ধ্রুব কফির মগে চুমক দিতে দিতে বারান্দায় এলো। মাথাটা কেমন ব্যাথা করছে তাই কফি খাওয়াটা জরুরি ছিলো। বারান্দার রেলিং ধরে দাড়াতেই ধ্রুবর হটাৎ চোখ গেলো পাশের বারান্দায় । ধ্রুব ঐদিকে তাকিয়েই অবাক হলো। তারা দোলনায় শুয়ে আছে। ঘুমন্ত তারাকে দেখতে পুরো বাচ্চার মতো লাগছে ধ্রুবর কাছে। যদিও তারার স্বভাব বাচ্চার মতোই। হালকা ভিজে থাকা চুলগুলো তারার ফর্সা মুখের সাথে লেপ্টে আছে। একটু সময় পর সন্ধ্যা হবে। নীল আকাশটা হালকা লাল আভা ছড়াচ্ছে। সূর্য অস্ত যাওয়ার কোঠরে। এমন লাল আভাময় আলোতে তারার মুখটা আরো ঝলমল করছে। অনেকটা সময় ধ্রুব এক দৃষ্টিতে তারার দিকে তাকিয়ে ছিলো। ধোয়া উঠা কফির মগ থেকে ধোয়া উঠা বন্ধ হয়ে গেছে। তবুও ধ্রুবর চোখ ফিরছেনা। এক ধরনের আকর্ষন ধ্রুবকে গ্রাস করেছে। এটা কোনো রূপের আকর্ষন নয় অন্য এক আকর্ষন। মোবাইলের রিংটোন এর শব্দে ধ্রুবর ধ্যান ভাঙে। ধ্যান ভাঙতেই ধ্রুব অবাক হয়। কি করছিলো সে। একজন মেয়েকে এভাবে দেখতে থাকা তো চূড়ান্ত বেয়াদপির বিষয়। ভাগ্যিস তারা ঘুমিয়ে ছিলো না হলে তার সম্মানটা কোথায় যেতো। নিজের এমন কাজে ধ্রুব নিজেই অনুতপ্ত। ধ্রুব তাড়াতাড়ি বারান্দা থেকে বেরিয়ে পড়লো।

ধ্রুবর কেমন যেনো আজিব একটা অনুভূতি হচ্ছে যে অনুভূতি তার মগজকে প্রাধান্য না দিয়ে তার মনের বন্ধ দরজাকে বার বার কড়াঘাত করছে। কিন্তু এই কড়াঘাত আদো কি ধ্রুবর কান পর্যন্ত পৌছাচ্ছে??
.
.
.
.
.
.
.

সকালে……………………………

তারা এখনো বারান্দায় শুয়ে আছে। গাড়ির হর্নের বিকট শব্দে তারার ঘুম ভাঙে। তারা ধড়ফড় করে ঘুম থেকে উঠে পড়ে। চোখ খুলতেই তারা নিজেকে বারান্দায় আবিষ্কার করলো।
একটু সময় হতেই বুঝতে পারলো সে কেনো বারান্দায়।
রুমে এসে ঘড়িতে দেখলো এখনো ১ ঘণ্টা ১০ টা বাজার।
তারাঃ হায় আল্লাহ এতো লেট কেমনে হলাম। স্যার তো আমারে সাদা পলিথিনে ভরে পাহাড় থেকে ফালাই দিবে।😣😣
তারা জলদি জলদি রেডী হয়ে হোটেলের লবিতে এলো।

তারা লবিতে আসতেই। ধ্রুবকে দেখে ভয় পেলো।ধ্রুব যে হাইফাই রেগে আছে তা তারার বুঝতে কষ্ট হয়নি। তারা এগুচ্ছে ঢোক গিলতে গিলতে। আজ কপালে মরণ আছে।
তারা ধ্রুবর কাছে আসলো।
কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর তারা বললো-
তারাঃ স্যার আসলে….
তারা আর বলতে পারলো না ।
ধ্রুবঃ গাড়িতে আসো।
বলে ধ্রুব চলে গেলো।
তারা,কিছু বুঝতে পারলো না ধ্রুব এমন কেনো করলো।
😕😕😕😕
চলবে………

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *