দৃষ্টির বাহিরে !! Part-06
আমি জানি তোমার মনে অনেক প্রশ্ন! আজ সব প্রশ্নের উত্তর দিবো।
হ্যাঁ বলো, আমি জানতে চাই।
জয়া যেদিন তোমাকে প্রথমবার হাসপাতালে দেখি সেদিনই প্রেমে পড়ে যাই। আমি তোমার মুখ তো দেখিনি সেদিন কিন্তু তবুও প্রেমে পড়ে যাই। নীলও তখন আমার সাথে ছিলো। কিন্তু তোমার সাথে দেখা করতে আসার সময় একজনের সাথে ধাক্কা খেয়ে আমার শার্টে কালি লেগে যায়, কিন্তু ওই অবস্থায় তোমার সামনে কিভাবে যেতাম সেটা ভেবে পাচ্ছিলাম না, তখন নীল ওর শার্টটা আমাকে দেয়। যেখানে নীলের লাগানো নেম প্লেটও ছিলো।
তোমার সাথে দেখা করার পর জানতে পারলাম তোমার বাবার অপোরেশনের জন্যে রক্ত লাগবে, কিন্তু তুমি কোথায়ও রক্ত পাচ্ছো না। আর তোমার বাবার রক্তের সাথে আমার রক্ত মিলে যাওয়ায় আমি তোমার বাবাকে রক্ত দেই।
তারপর তোমার সাথে কথা বলতে বলতে আমি আরও তোমার প্রেমে পড়ে যাই। কিন্তু সেদিন তুমি যখন আমার নাম জিজ্ঞেস করছিলে ঠিক সেই সময় আমি নীলের নেম প্লেট পড়ে ছিলাম। তুমি ভাবলে আমার নাম নীল। ভেবেছিলাম পরেরবার দেখা হলে সত্তিটা বলব! কিন্তু বলার কখনো সুযোগই হলো না।
তুমি আমাকে ভালোবাসতে? তাহলে বিয়ের পর এত অত্যাচার কেন করতে? তুমি তো চাইলে বলে দিতে পারতে তুমি নীল নয় ফয়সাল। কেন বলোনি?
তারপর জীবন কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল! নীল আমাকে মিমির সাথে ফাঁসিয়ে দিলো! আর সবাই আমাকে অবিশ্বাস করলো! এমনকি আমার বাবা-মাও। তারা আমাকে ঘৃণা করতে শুরু করলো! তাদের কাছে আমি বেঁচে থেকেও মৃত।
তারপর আমাকে পুলিশ নিয়ে যায়, ৬মাস জেল খাটার পর আমার এক মামা আমার জামিন করায়। কিন্তু আমি আমার বাবা-মার সামনে যেতে পারছিলাম না! এর থেকে বড় কষ্ট কি হবে?
তারমানে নীলের সম্পর্কে আমি যা যা পড়েছি ডায়রিতে, সব সত্যি?
হ্যাঁ সত্যি!
কিন্তু ডায়রিটা তুমি কোথায় পেলে?
নীলের বাসা থেকে চুরি করে নিয়ে এসেছিলাম!
কি!? কিন্তু কেন?
নিজেকে নির্দোষ প্রমান করার জন্যে আর নীল যে মিমির খুনি, মিমি আত্মহত্যা করেনি সেটা প্রমান করতে কিন্তু সেই ডায়রির কথায় কেউ বিশ্বাস করলো না, সবাই ভাবলো আমি দোষী!
তারপর ঠিক করলাম আমি নীলের সাথে দেখা করবো, ওকে সত্তিটা স্বীকার করাবো!
তারপর?
তারপর আমি নীলের সাথে দেখা করতে ওই অনুষ্ঠানে যাই যেখানে তুমিও ছিলে!
সেদিন আমাদের মধ্যে অনেক হাতাহাতি হয় আর আমি নিজেকে বাঁচাতে নীলকে খুন করে ফেলি। ঠিক সেই সময় সেই রুমে তুমি আসো, আর হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যাও!
কিন্তু সেদিন আমি তো তোমার সাথে আর কাউকে দেখিনি!
কারন আমি নীলের লাশ খাটের তোলায় লুকিয়ে রেগেছিলাম। আমি তোমাকে দেখে ভয় পেয়ে যাই! তোমাকে অজ্ঞান অবস্থায় কোলে করে আমি বিছানায় নিয়ে গিয়ে শুয়ে দেই, কিন্তু দরজাটা কে যেন বন্ধ করে দেয় বাহির থেকে! আর সবাই ভুল বুঝে আমার আর তোমার বিয়ে দিয়ে দেয়। যেহেতু আমি তোমাকে আগে থেকেই পছন্দ করতাম তাই বিয়েতে আপত্তি করিনা।
আমাকে ভালোই যদি বাসতে আমার থেকে সত্যি কেন লুকিয়ে আমার চোখে নীল হয়ে থাকলে??
কারন হঠাৎ করে আমার মনে পড়ে তোমার মাধ্যমেই আমি সবার চোখে নীলের প্রতি ঘৃণা তৈরি করতে পারবো। আর নীল যে অপরাধি সেটাও সবার সামনে আসবে।
আমি আমার প্লান অনুযায়ী, সেদিন তোমাকে নিয়ে নীলের বাসায় যাই, তারপর আনকেলকে বলি নীল তোমাকে বিয়ে করেছে কিন্তু আপনাদের সামনে আসছে না। আনকেল আন্টিকে আমি নীলের ব্যাপারে রাগিয়ে দেই! তাই উনারা তোমাকে মেনে নিতে পারে না তাই তোমাকে আর আমাকে বের করে দেয়, আর আমাকে বলে আমি যেন নীলকে বলে দেই নীল যেন কখনো তাদের সামনে না আসে!
আমি আমার প্রথম প্লানিং এ সফল হই।
সব বুঝলাম কিন্তু তুমি এটা কেন বলছো না আমার ওপর কেন অত্যাচার করতে?
নীলের জন্যে।
মানে?
তুমি সারাদিন নীল নীল করতে যেটা আমার সহ্য হতো না! আমি তোমার চোখে নীল নামটার প্রতি ঘৃণা দেখতে চেয়েছিলাম, সে জন্যে সেদিন রাগে তোমার পেটে ছুরি চালিয়ে দেই নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে, তারপরও তুমি নীলকে ভালোবাসো। আর আমি তোমাকে শাড়ি পড়তে দিতাম না কারন তোমাকে শাড়ি পড়লে একদম আমার মায়ের মতো লাগে! তখন আর আমি তোমাকে অত্যাচার করতে পারতাম না।
কিন্তু আমি তো নীল নামটাকে না! আমার স্বামীকে ভালোবাসতাম। তুমি নীল প্রতি আমার চোখে ঘৃণা দেখতে চেয়েছিলে কিন্তু তুমি এটা একবারও ভাবোনি আমার কাছে নীল মানে তুমি।
আমি ক্ষমা করে দিও জয়া! আমি তোমার স্বামী হওয়ার যোগ্য নই।
কে বলছে? তুমিই আমার স্বামী! কিন্তু একটা কথা বলো ডায়রিতে যে মেয়েটার সাথে তুমি আর নীল ছিলে ও কে?
ওই মিমি। অনেক ভালো মেয়ে ছিলো, সবাইকে আপন করে নিতে পারত একদম তোমার মতো।
আমি তোমার আলমারি থেকে নীলের ডায়রিটা পাই। প্রথমবার আমি নীলের ডায়রি পুরোটা পরিনি। যখন পুরো ঘটনাটা জানতে পারি আমি নীলকে ঘৃণা করতে থাকি আর তোমাকে ছেড়ে চলে যাই।
তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ায় আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো, যখন আমি তোমার লেখা চিঠিটা পাই তখন মনে হচ্ছিলো নিজেকে শেষ করে দেই!
আমাকে ক্ষমা করে দিও। যতবার আমি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি ততবার আমি কেঁদেছি। তুমি চলে যাওয়ার পর আমি তোমাকে অনেক খুঁজেছি। অনেকবার কল করেছি কিন্তু তুমি কল রিসিভ করোনি!
আমি তোমার ওপর রেগে নেই। কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর আমি প্রথমে মিরার বাসায় যাই তারপর আমি যাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রান বাঁচিয়েছিলাম তাদের বাসায় আশ্রয় পাই।
তুমি সেদিন যাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলে তুমি জানো উনি কে?
কে?
আমার বাবা।
কি? আনকেল তোমার বাবা?
হ্যাঁ।
আনকেল আর আন্টি তো তোমাকে ভুল বুঝেছে। আমাদের উনাদের কাছে যাওয়া উচিত। আর সত্তিটা জানানো উচিত।
ঠিক এই সময় ইরফানি রুমে চলে এলো।
ইরফানি তুমি?
আশা করোনি নিশ্চই আমি এখানে আসবো? অবশ্য না করারই কথা।
আপনি এখানে কেন এসেছেন?
প্রতিশোধ নিতে।
কিসের প্রতিশোধ?
আমার নীলের মৃত্যুর। আমি সব শুনেছি তোমাদের কথা!
দেখো ইরফানি নীল অপরাধি ছিলো! আর ওর মতো মানুষের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।
ফয়সাল তোমার থেকে আমি এসব শুনবো না। তুমি আমার নীলকে মেরে ফেলেছো! তোমাকে আমি খুন করে ফেলবো! না না, তোমাকে না! তোমার বউ, তোমার ভালোবাসা জয়াকে খুন করবো! তোমাকেও তো বোঝাই ভালোবাসা ছাড়া বাঁচতে কেমন লাগে!
না তুমি এটা করবে না! তুমি আমার জয়াকে কিছু করবে না।
ইরফানি কোনো কথা না শুনে একটা ছুরি বের করে আমাকে মারতে এলো, ঠিক এই সময় ফয়সাল ইরফানির মাথায় একটা ভারি ফুলদানি দিয়ে আঘাত করলো, সঙে সঙে ও ফ্লোরে পরে গেলো!
আমি ফয়সালকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম!
ফয়সাল আমাকে বলল, ইরফানিকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে।
আমরা ইরফানিকে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম।
আনকেল আন্টিকে সত্তিটা জানানোর পর উনারে খুব খুশি হলেন। উনারা কখনো ভাবতেই পারেন নি আমি উনাদের ছেলে ফয়সালের বউ। কিন্তু উনারা চান আমার আর ফয়সালের আবার বিয়ে দিতে।
আজ আমাদের গায়ে হলুদ! হঠাৎ ফয়সালের ফোনে একটা কল এলো। ফয়সাল আমাকে এসে বলল, জয়া!
হাসপাতাল থেকে কল করেছিলো! ইরফানিকে কেউ খুন করেছে!
চলবে?