তোকে চাই

তোকে চাই – Season 2 ! Part- 58

দুপুর দুটো। মায়ের সাথে ফোনে কথা বলে রুমের দিকে ফিরছিলাম। ঠিক তখনই দেখি আন্টি আই মিন চিত্রার মা মেজাজের ফালুদা বানিয়ে মুখ ফুলিয়ে বসে আছেন। মেয়ের বিয়ে নিয়ে যার এতো লাফালাফি সে কিনা মুখ ফুলিয়ে এভাবে চুপচাপ বসে আছে? আশ্চর্য! আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে আন্টির পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠলাম,
— কিছু হয়েছে আন্টি? আপনার শরীর খারাপ নয় তো?
আমাকে পেয়ে আন্টি যেন আস্ত একটা চাঁদ হাতে পেয়ে গেলেন। রাগে ফুসফুস করতে করতে বলে উঠলেন,
— রোদ! এই তুমিই একমাত্র সমস্যাটা বুঝবে। নয়তো এখানে আর সবাই তো এক একটা বলদ। এতো টাকা দিয়ে ওয়েডিং হাউজ ভাড়া করেছে অথচ রান্না ঘরে পিঁপড়ার ঝাঁক? কি সাংঘাতিক ব্যাপার বুঝতে পারছো? আমি কি এখন মেহমানদের পিঁপড়ার হালুয়া বানিয়ে খাওয়াবো?
আন্টির কথা শুনে বুঝলাম, উনি পিঁপড়া বিড়ম্বনায় ক্লিষ্ট। উনার এই বিড়ম্বনার সমাধান না করলে যে উনি এই বিয়ে বাড়িকেই পিষ্ট করে দিবেন তাও বুঝতে পারছি আমি। এই ক্লিষ্ট- পিষ্ট এর বেড়াজাল থেকে বের হতে হলে কিছু তো একটা করতেই হবে। কনে পক্ষ বলে কথা…মেহমানকে তো আর পিঁপড়ার হালুয়া খাওয়ানো যেতে পারে না। কথাগুলো ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আন্টিকে এই বলে আশ্বস্ত করলাম যে ” বিষয়টা আমি দেখছি। ” আন্টিকে শান্ত করে স্টাফ রুমের দিকে এগিয়ে যেতেই চোখে পড়লো একজন ওয়েটার। উনার দিকে এগিয়ে গিয়েই বলে উঠলাম,
— এক্সকিউজ মি?
— ইয়েস ম্যাম? কিছু লাগবে?
— আপনাদের মতো ওয়েলনোন একটা ওয়েডিং হাউজের সার্ভিস এতো খারাপ , ভাবতেই অবাক হচ্ছি আমি।
— সরি ম্যাম?এনি প্রবলেম?
— অবশ্যই প্রবলেম। রান্নাঘরে পিঁপড়া পাওয়া গিয়েছে। ১০ মিনিটের মধ্যে এই পিঁপড়া দূর করার ব্যবস্থা করুন প্লিজ।
— উই আর এক্সট্রেমলি সরি ম্যাম। এক্চুয়েলি আমাদের ম্যানেজমেন্টে একটু সমস্যা হয়েছে তাই এমনটা হচ্ছে। আমাদেরকে দু’ ঘন্টা সময় দিতে হবে ম্যাম!
দু’ঘন্টা!! এই ছেলে বলে কি? এই দু’ ঘন্টায় তো চিত্রার মা দুশোবারেরও বেশি হার্ট অ্যাটাক করবে। শুধু নিজে আট্যাক করে ক্ষান্ত হবেন না। নিজের সাথে সাথে আমাদের সবাইকে নিয়ে হার্ট অ্যাটাক করবেন। আচ্ছা? এই হার্ট অ্যাটাকের নাম কি দেওয়া যেতে পারে? গ্রুপ হার্ট অ্যাটাক? কথাটা ভেবে আবারও দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি। সামনে দাঁড়ানো ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলাম,
— আপাতত পিঁপড়া তাড়ানোর জন্য আপনাদের কাছে কোন বিষ হবে? পিঁপড়া মারা বিষ? বাজারে তো এমন অনেক ধরনের বিষ পাওয়া যায়। আপনি কি ম্যানেজ করে দিতে পারবেন?
এটুকু বলতেই কোথা থেকে ছুটে এলেন শুভ্র। আমার হাত টেনে ধরেই হাঁটা দিলেন উনি। আমি অবাক বিস্ময়ে বলে উঠলাম,
— আরে, আরে, টানছেন কেন? আমি একটা ইম্পোর্টেন্ট ডিসকাশন করছিলাম।
— চুপ! একদম চুপ। এসব স্টাফদের সাথে তোমার কিসের ডিসকাশন?ওদের সাথে কথা বলা বন্ধ। এখানে কি কথার বলার জন্য কম মানুষ আছে? ওদের সাথে কথা বলো….তা না স্টাফদের সাথে বিষ নিয়ে ডিসকাশনে নেমে গেছো। বাচ্চা মানুষ এতো বিষ টিষ নিয়ে ডিসকাশন কেন করবা? ডিসকাশন যদি করতেই হয় তাহলে ফুল, পাতা, চকলেট, আইসক্রিম এসব নিয়ে ডিসকাশন করবা।
উনার কথায় ভ্রু কুঁচকে এলো আমার। কি আশ্চর্য! আমি স্টাফদের সাথে ফুল, পাতা নিয়ে ডিসকাশন করতে যাবো কেন?
— আজব তো? আমি ওদের সাথে ফুল, পাতা নিয়ে গল্প করতে যাবো কেন? ছাড়ুন তো। ছাড়ুন!
— আচ্ছা ছাড়বো। আগে বলো স্টাফদের সাথে কোনোরকম কথা বলবে না।
— আচ্ছা বলবো না। ছাড়ুন!
— আর তোমা..
এটুকু বলতেই শিশির স্যার এসে হাজির। ড্রেস আপ নিয়ে কি একটা হেল্প লাগবে বলে শুভ্রকে ফোর্স করতে লাগলেন উনি। শুভ্রও বাধ্য ছেলের মতো উনার পিছু নিলেন। যাওয়ার সময় পেছনে ফিরে করুণ চোখে তাকিয়ে কিছু একটা বুঝালেন আমায়। আমি সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে পিঁপড়া তাড়ানোর পেছনে লেগে গেলাম৷ কি করা যেতে পারে? কি করা যেতে পারে? ভাবতে ভাবতেই রাতুল ভাইয়াকে চোখে পড়লো। উনি খুব মনোযোগ দিয়ে গেইম খেলছিলেন। আমি উনার সামনে দাঁড়াতেই উনি অসচেতন চোখে একবার আমার দিকে তাকিয়েই আবারও ফোনে মুখ গুঁজলেন। তারপর কি ভেবে সটান দাঁড়িয়ে পড়ে বলে উঠলেন,
— আসসালামু আলাইকুম ভাবি।
— ওয়ালাইকুমুস সালাম ভাইয়া।
— ককোনো দরকার ভাবি? মানে কিছু বলবেন?
— হুম বলবো। একটা হেল্প চাই। করবেন প্লিজ?
— কি হেল্প ভাবি?
— আশেপাশে কোনো শপ আছে? যেখানে বিষ পাওয়া যাবে। থাকলে একটু এনে দিবেন প্লিজ?
কথাটা বলা শেষ হতেই আবারও শুভ্র এসে হাজির। উনি এসেই আমার হাত টেনে ধরে রাগী চোখে তাকালেন। আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি। উনার সমস্যাটা কি বুঝতে পারছি না আমি। উনি গাল ফুলিয়ে একটা জোড়ে শ্বাস ফেলে বলে উঠলেন,
— আবারও শুরু করছো তুমি? আর তুই?(রাতুলের দিকে তাকিয়ে) যাহ্ ভাগ এখান থেকে। আগামী তিনদিন তোর ভাবির আশেপাশে আসবি না কথা তো দূরের কথা।
শুভ্রর কথায় করুণ চোখে তাকালেন রাতুল ভাইয়া। মাথা নিচু করে মিনমিন করে বলে উঠলেন,
— আমি আবার কি করলাম ভাই? ভাবি তো শুধু বিষের কথাটায় জিজ্ঞেস করছিলো।৷ আমি তো কিছু করি নি।
— তুই কিছু করিস নি ভাই। তবু তোর ভাবি থেকে দশহাত দূরে থাক। ভাবির প্রতি তোর অতি ভক্তিতে বিপদের আশঙ্কা আছে বুঝলি? তুই কি চাস তোর ভাইটা বউ হারিয়ে এতিম হয়ে যাক?
— না ভাই।
— তাহলে ওর থেকে দূরে থাক। আগামী তিনদিনের মধ্যে যদি দেখি ওর সাথে তুই কথা বলছিস তো খবর আছে। একদম হাড়গুঁড় ভেঙে ছাদের সাথে ঝুলিয়ে রাখবো। এখনো এক বছর হলো না বিয়ে করছি আর তোরা আমাকে বিধবা… ওহ সরি! এই রাতুল? বিধবার মেইল ফ্রম কি রে?
— জানি না ভাই। ( মাথা চুলকে)
— তা জানবি কেন?এটা জানলে তো ভালো কিছু একটা জেনে যাবি। তুই তো শুধু বিষ কোন দোকানে পাওয়া যায় সেটা জানবি। বলদ একটা! যাহ ভাগ।
রাতুল ভাইয়া দিলেন এক দৌঁড়। ভাইয়ের মেজাজ তার কাছে মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না । আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি।উনি আমাকে হাত ধরে টেনেটুনে রুমে এনে দরজা বন্ধ করে দিলেন। বিছানায় দু’হাতে মুখ ঢেকে বসে রইলেন কিছুক্ষণ। আমি ঘাড়টা হালকা কাত করে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি। উনি হঠাৎই সটান দাঁড়িয়ে গিয়ে আমাকে নিজের কাছে টেনে নিলে বললেন,
— কি শুরু করছো বলো তো? সবার কাছে গিয়ে বিষ চাইছো। আমি সরি বলেছি তো। তোমার কিছু হলে কি আমি বাঁচবো বলো? তখন তো ডিপ্রেশনে কি না কি বলে দিয়েছি সেটা ধরে বসে আছো তুমি? এটা কি ঠিক বলো?
আমি এতোক্ষণে বুঝলাম উনার মাথায় এক্চুয়েলি কি ঘুরছিলো। বিষ খাওয়ার ব্যাপারটা তো আমি এমনি বলে দিয়েছিলাম। উনি সেটাকে যে সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছেন বুঝতে পারি নি। এতো কিউট একটা হাজবেন্ড থাকতে সুইসাইড করতে যাবো কেন দুঃখে? উনার ছোঁয়ায় ঘোর কাটলো আমার। উনার দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালাম। উনি করুণ কন্ঠে বলে উঠলেন,
— এমন বিষ বিষ করো না। তোমার মুখে “বিষ” ওয়ার্ডটা শুনলেই হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অবস্থা হয় আমার। প্লিজ রোদপাখি।
এবার আমি ঝটকা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। রাগী গলায় বললাম,
— দূরে থাকুন। আগলা পিরিত দেখাবেন না বলে দিচ্ছি।
— আগলা পিরিত? কি সব ওয়ার্ড ইউজ করো তুমি রোদ?
— ওহ! এখন আমার বলা ওয়ার্ডেও প্রবলেম আপনার? হুহ! হবেই তো হবে না? এখন তো পুরাতন হয়ে গেছি। চারপাশে এতো সুন্দরী সুন্দরী রমনীর মিষ্টি বুলির ভীরে কি আর আমার কথা আপনার ভালো লাগবে? লাগবে না তো। বুঝি তো আমি। ( মুখ ফুলিয়ে)
— হোয়াট? পাগলের মতো কি সব বলছো তুমি রোদ?
— পাগল? এখন আমি পাগল? কিছুক্ষণ পর নিশ্চয় বলবেন আমি এক্সপায়ার্ড হয়ে গেছি তাই না?
— হোয়াট? এক্সপায়ার্ড? মানুষ কখনো এক্সপায়ার্ড হয় নাকি? (ভ্রু কুঁচকে) কেমন উদ্ভট বিহেভ করছো তুমি রোদ।
— বিয়ের ৬ মাসের মাথায় আমি উদ্ভট? বাবা দেখে যাও কেমন ছেলের কাছে বিয়ে দিয়েছো আমায়!
কথাটা বলেই এগিয়ে গেলাম আমি। শুভ্র যেন বোকা বনে গেছেন। আমার এমন বিহেভিয়ার তার কাছে নতুন। আমি উনার কাছে গিয়ে পাঞ্জাবীর কলার চেপে ধরে কিছু একটা বলতে যাবো তার আগেই সাব্বির ভাইয়ার কন্ঠ কানে এলো,
— এই শুভ্র? তোর কাছে ক্যা….ওপস্ সরি বস! রং টাইমিং!
আমরা দুজনেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম। শুভ্র হতভম্ব ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছেন। আমি উনার কলার ছেড়ে দিয়ে সাব্বির ভাইয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। উনার হাত থেকে কোল্ডড্রিংকস্ এর বোতলটা নিয়ে বললাম,
— নতুন নাকি?
— জি ভাবি।

— ওহ্। আই ওয়ান্ট টু টেস্ট ইট। আমার বরের থেকে আরেকটা কিনে নিয়েন। বাই ভাইয়া।
কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম আমি। কোল্ডড্রিংকস্ খেতে খেতে ভাবতে লাগলাম এই পিঁপড়া সমস্যার সমাধানটা কি করে করা যায়? চিত্রার থেকে হেল্প নিবো? আর আধাঘন্টা পর ওর গায়ে হলুদ সেজেগুজে বসে আছে আধাঘন্টা যাবৎ নিশ্চয় মাথায় জ্যাম বেঁধে গেছে? পিঁপড়া সমস্যা নিয়ে চিন্তা করলে এই জ্যাম খুললেও খুলতে পারে। কথাটা ভেবে হুট করে ঢুকে গেলাম চিত্রার রুমে। কিন্তু রুমে গিয়ে যা দেখলাম তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি। কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকেই দিলাম এক চিৎকার। তাড়াতাড়ি মুখ চেপে ধরে নিজেকে শান্ত করে চোখ- মুখ কুঁচকে বলে উঠলাম,
— সরি! রোমান্স চলছিলো বুঝতে পারি নি।
আমার কথায় চিত্রা লালে লাল। শিশির স্যার পারেন তো দৌড়ে পালান। আমি নিজেও বেশ লজ্জা পেয়েছি তবু সেই লজ্জাটুকুকে পাত্তা না দিয়ে, ওদেরকে আরেকটু লজ্জা দেওয়ার ইচ্ছেই বলে উঠলাম,
— আপনারা চাইলে আবার কন্টিনিউ করতে পারেন। আমি এবার আর হুট করে রুমে ঢুকবো না৷ নক করে ঢুকবো। নো টেনশন, চালিয়ে যান। বাই।
কথাটা বলে একমুহূর্ত দাঁড়ালাম না আমি। কি একটা লজ্জাকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম। তবে শিশির স্যার আর চিত্রার মুখটার কথা মনে করে নিজের লজ্জার কথা ভুলে গিয়ে হাসিতে ভেঙে পড়তে ইচ্ছে করছে আমার। তবু নিজেকে সংযত করে আশেপাশে তাকালাম। চারপাশে মেহমানে ভর্তি। এতোসব মেহমানদের মধ্যে সবুজ পাঞ্জাবী পড়া রাতুল ভাইকে দেখতে পেলাম। হাতে একগাঁদা কোল্ডড্রিংক্সের বোতল। আমি উনার সামনে যেতেই উনি ঘুরে হাঁটা দিলেন। আমিও কম কিসে? আবারও উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। উনি আবারও কাটিয়ে যেতে গেলেন তো আবারও উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। রাতুল ভাইয়া অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। আমি ভ্রু নাঁচিয়ে বললাম,
— কি জনাব? পালান কেন?
— ভাই আপনার সাথে কথা বলতে মানা করছে। কথা বলবো না।
উনার কথায় হেসে উঠলাম আমি। হাসতে হাসতেই বললাম,
— আপনি তো কথা বলছেনই। এনিওয়ে একটা কোল্ডড্রিংক্স দিয়ে যান। নয়তো যেতে দিবো না।
রাতুল ভাইয়া একটা কোল্ডড্রিংক্সের জায়গায় দুটো দিয়ে গেলেন। আমি কোল্ডড্রিংক্স খাচ্ছি আর হাঁটছি। হঠাৎই কোথা থেকে এক ছেলে এসে সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো। আমার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলে উঠলো,
— হাই! আমি মিসির আহমেদ। শিশিরের ছোট ভাই। আর আপনি?
উনার কথায় ভ্রু কুঁচকালাম আমি। ঠোঁট উল্টিয়ে বললাম,
— মিসির? এটা আবার কেমন নাম? আপনার নামটা একটু অন্যরকম। এনিওয়ে আপনি শিশির স্যারের ছোট ভাই?
— জি।
— ওহ। তাহলে তো আপনার নাম কুয়াশা হওয়া উচিত ছিলো। শিশির আর কুয়াশা… জিনিস দুটো কিন্তু কাছাকাছি।
— আমার জানা মতে কুয়াশা মেয়েদের নাম।
— তাই নাকি? জানা ছিলো না তো। তাহলে একটা কাজ করবেন আপনার একটা বোন হলে তার নাম রাখবেন কুয়াশা।
কথাটা বলেই জিহ্বায় কামড় দিলাম। বুঝলাম ভুল কথা বলে ফেলেছি আমি। যে মহিলা ক’দিন পর নাতি নাতনীর পেছনে দৌঁড়াবে তার আবার মেয়ে কি করে হতে পারে? অদ্ভুত! নিজের ভুল বুঝতে পেরে মুখে হাসি টেনে নিয়ে বললাম,
— আই মিন টু ছে, শিশির স্যারের মেয়ের নাম কুয়াশা রাখলে বেশ হবে। বাপ শিশির, মেয়ে কুয়াশা! দারুন না?
— হুম দারুন। আচ্ছা আপনার নামটা তো বললেন না। কনেপক্ষ?
— জি কনেপক্ষ। আমার নাম নৌশিন আবরার রোদেলা।
— বাহ সুইট নেইম। আপনি দেখতে যেমন মিষ্টি আপনার নামটাও তেমন মিষ্টি।
— আই নো। আমার বরও তাই বলে।
আমার কথায় ছেলেটা অবাক হলো বলেই মনে হলো। কয়েকসেকেন্ড চুপ করে থেকে বলে উঠলেন,
— আপনি ম্যারেড? দেখে বুঝার উপায় নেই একদম। তবে ব্যাপার না। আপনার মতো রসগোল্লা টাইপ মেয়েদের দু তিনটা হাজবেন্ড থাকলেও ব্যাপার না। আপনারা অলওয়েজ প্রাণোবন্ত। এটা ২০২০ এখন ম্যারিড – আনম্যারিড ডাজেন্ট ম্যাটার রাইট?
— ইয়াহ্ অফকোরস্। আপনি তো দেখি খুব অত্যাধুনিক মন-মানুষিকতা পোষন করেন। আমার হাজবেন্ডের মন-মানুষিকতাও কিন্তু খুব আধুনিক। এক মিনিট দাঁড়ান…এখনি আসছি।
আমাদের থেকে কিছুটা দূরেই শুভ্র কয়েকজন লোকের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। আমি দৌঁড়ে উনার কাছে গিয়ে আঙ্গুল দিয়ে পিঠে গুঁতো দিলাম। উনি পেছন ফিরে আমাকে দেখেই অবাক হলেন। উনাদেরকে বিদায় দিয়ে আমাকে একটু দূরে সরিয়ে এনে বললেন,
— কি হয়েছে? এমন বাচ্চাদের মতো বিহেভ কেনো করছো?
— ওদিকে চলুন। একটা জিনিস দেখাবো।
— কি দেখাবে?( ভ্রু কুঁচকে)
— আহা! চলুন না।
কথাটা বলেই উনাকে টেনে মিসিরের সামনে এনে দাঁড় করালাম। মিসিরকে ইশারা করে বললাম,
— ইনি হলেন কুয়াশা। মিষ্টার কুয়াশা।(জিহ্বায় কামড় দিয়ে) ওপস্ উনার নাম কুয়াশা নয়…মিসির আলি। শিশির স্যারের ভাই। আর ইনি হচ্ছেন আমার বর। কিউট না?( মিসিরের দিকে তাকিয়ে)
শুভ্র মুচকি হাসলেন। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
— হ্যালো মিষ্টার মিসির। আমি আবরার আহমেদ শুভ্র।
মিসির কিছুক্ষণ শুভ্রর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে হাত মেলালেন। আমি শুভ্রর হাত ঝাঁকিয়ে বলে উঠলাম,
— জানেন? উনি না খুব আধুনিক মন-মানুষিকতা সম্পন্ন মানুষ।
— তাই নাকি? বাহ্ ভালো তো।( মিষ্টি হেসে)
— হুম। উনি বলছিলেন, আমার মতো রসগোল্লা আর মিষ্টি মেয়েদের দু তিনটা বর থাকতেই পারে এতে দোষের কিছু নেই। আজকালকার যুগে এসব কেই বা মানে?
এবার শুভ্রর চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। ভ্রু কুঁচকে মিসিরের দিকে তাকালেন । মিসির রীতিমতো ঘামছেন। কোনরকম ঢোকগিলে বলে উঠলেন,
— আমি আসছি।
মিসির চলে যেতেই ফিক করে হেসে উঠলাম আমি। শুভ্রকে দু’হাতে জড়িয়ে দিয়ে বলে উঠলাম,
— ভয় পেয়েছে।
শুভ্র ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলেন আমায়। ফিসফিস করে বলে উঠলেন,
— কি করছো? সবাই দেখছে তো।
— তাতে কি? দেখলে আমার কি?
— এই? তুমি এমন বিহেভ করছো কেন বলো তো? কিছু খেয়েছো নাকি?
শুভ্রর প্রশ্নে তুমুল উৎসাহ নিয়ে বলে উঠলাম আমি,
— হ্যা খেয়েছি তো।
— কি খেয়েছো?
— বিষ।
— কিহহহহ!
— নাহ নাহ্ বিষ খাইনি। মধু খেয়েছি।
— হোয়াটট?
— নাহ্ আমি মধুও খাই নি। (কাঁদো কাঁদো মুখে) কি খেয়েছি বলুন তো? বাহ্ আপনার গালগুলো তো খুব কিউট। আমি চুমু খাবো।
কথাটা বলতেই বিদ্যুৎ বেগে সরে দাঁড়ালেন শুভ্র।
আমার এসব অসংলগ্ন কথার কিছুই মাথায় ঢুকছে না উনার। একটা জোড়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেকে কিছুটা শান্ত করে নিয়েই আমার হাত ধরে হাঁটা দিলেন উনি। ইতোমধ্যে চিত্রা আর শিশির স্যারকে স্টেজে নেওয়া হয়েছে। ওদেরকে দেখেই লাফিয়ে উঠলাম আমি। শুভ্রর ডানহাতটা জড়িয়ে ধরে বললাম,
— ওই দেখুন চিত্রার বর।
— শিশিরকে আজ নতুন দেখছি না রোদ। চলো রুমে চলো।
— ইশশ দাঁড়ান না। চিত্রাকে অনেক কিউট লাগছে তাই না?
— হুম লাগছে।
— আপনি দেখে বলছেন নাকি না দেখে?
— না দেখে।

— ধেৎ। দেখুন বরটাও কি কিউট। কিন্তু আমার বরটা বেশি কিউট। তাই না?
শুভ্র এবার অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। আমি উনার হাতে ঝাঁকিয়ে দিয়ে বলে উঠলাম,
— বলুন না। ওই বরটার চেয়ে আমার বরটা অনেক অনেক অনেক বেশি কিউট তাই না?
— হুম তোমার বর অনেক বেশি কিউট। এবার রুমে চলো।
উনি আমাকে একরকম টানতে টানতেই রুমের দিকে নিয়ে গেলেন৷ হঠাৎ সাব্বির ভাইয়াদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন শুভ্র। ইশারায় ওদের সবাইকে কাছে ডাকলেন উনি। উনারা কাছে আসতেই দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন,
— শালা! আমার বউকে কি খাইয়েছিস বল। কি সব বিহেভ করছে।
সাব্বির ভাইয়া অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বলে উঠলেন,
— আমরা ভাবিকে কি খাওয়াবো আজব।
— সত্য বলবি? নাকি দিবো কানের নিচে লাগাইয়া?
সাব্বির ভাইয়া এবার মুখ কাঁচুমাচু করে বলে উঠলেন,
— আসলে,, শুভ্র? হয়েছে কি? ভাবি তখন যে কোলড্রিংক্সের বোতলটা নিলো ওটা বিয়ার ছিলো। একটা বিয়ারে নেশা টেশা হয় না বলে আমিও আর কিছু বলি নি। তারপর শুনলাম রাতুলের থেকেও দুটো নিছে। আমি জানতাম না রে দোস্ত সরি।
কথাটা শুনেই রাতুল ভাইয়ের দিকে রাগি চোখে তাকালেন শুভ্র। রাতুল ভাইয়া মুখ কাঁচুমাচু করে বলে উঠলেন,
— আসলে ভাই, আমিও জানতাম না ওইটা বিয়ার। নয়তো দিতাম না। সরি ভাই। ভাবি চাইলো তাই আর না করতে পারি নাই।( মাথা নিচু করে)
— তোরা আসলে কোনোদিন মানুষ হবি না।

— আরে দোস্ত। আমরা দশ বার ক্যান খেয়ে ফলি কিছুই তো হয় না। কোল্ডড্রিংক্স আর বিয়ারের মধ্যে কি এমন পার্থক্য বল? এখন এটা কমন….
— বিয়ার একজাতীয় মত সাব্বির। ওটা হারাম। যে জিনিসটা আমিই টাচ করি না সেটা তোরা রোদকে ধরতে দিলি? আধুনিকতারও একটা লিমিট আছে। ধর্মের বাইরে গিয়ে আধুনিক হওয়ার মাঝে কোনো বীরত্ব নেই। যা হারাম তা হারাম এখানে কমন আনকমনের কোনো দোহাই আসতে পারে না।
কথাটা বলে একরাঁশ রাগ নিয়ে আমাকে নিয়ে রুমে এলেন শুভ্র। উনি দেয়ালে ঠেস দিয়ে একপা দেয়ালে রেখে একহাতে মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি বিছানায় বসে গোলগোল চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি মুখ থেকে হাত সরিয়ে বলে উঠলেন,
— এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
— আপনি তো অনেক হ্যান্ডস্যাম!উফফ…একদম রসগোল্লা টাইপ।
উনি একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে করুণ চোখে তাকালেন। আমি আগের মতোই গালে হাত দিয়ে গোল গোল চোখে উনার দিকে তাকালাম।
#চলবে…