তোকে চাই

তোকে চাই – Season 2 ! Part- 59

— রোদ! রোদ চুপ করে দাঁড়াও। দাঁড়াচ্ছো কেন রে বাবা। এবার কিন্তু রাগ লাগছে আমার। দাঁড়াও বলছি।
— আমি তো দাঁড়াতে পারছি না৷ পা গুলো দৌঁড়াচ্ছে। আমি দৌঁড়াচ্ছি না।
— হোয়াট! বাচ্চামোরও একটা লিমিট আছে রোদ। বিয়ার খেয়েছো বলে দুই বছরের বাচ্চার মতো বিহেভ করবা তা তো হতে পারে না। চুপচাপ বিছানায় এসে বসো আর শরবত টুকু খাও। এখনও বাচ্চার বাপ হলাম না কিন্তু ধিঙ্গি একটা বাচ্চা সামলাতে হচ্ছে। ইয়া মা’ বুদ রক্ষা করো!
এবার কান্না পেয়ে গেলো আমার। আমার মনে হচ্ছে আমি থামতে পারছি না। পা’ দুটো অটোমেটিক দৌঁড়াচ্ছে। আচ্ছা? পা দুটো দৌঁড়ে দৌঁড়ে যদি মঙ্গল গ্রহে চলে যায় তখন? আমি পা কোথায় পাবো?
— শুভভভভ্র বাঁচাও…আমার পাগুলো চলে যাচ্ছে। ধরো ওদের….( কাঁদো কাঁদো গলায়)
— হোয়াট! কি সব আজগুবি কথা বলছো তুমি? চুপচাপ দাঁড়াও নয়তো কানের নিচে মারবো এক চড়।
কথাটা বলে এক লাফে সোফা ডিঙিয়ে আমাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরলেন উনি। পাঁজাকোলা করে বিছানায় নিয়ে বসালেন। শরবতের গ্লাসটা হাতে নিয়ে গম্ভীর মুখে বললেন,
— খাও!

— এটা কি? কেনো খাবো?
— আমি বলেছি তাই খাবে। চুপচাপ খাও।
আমি কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে গ্লাসটির দিকে তাকিয়ে থেকে গম্ভীর মুখে বলে উঠলাম,
— নাহ্ এটা ভালো দেখা যায় না। এটা খাবো না। আপনার গালগুলো ভালো দেখা যায়। আমি গাল খাবো।
— কিহ! পাগল হইছো তুমি? চড়াই দাঁত ফেলে দিবো। চুপচাপ শরবত খাও বলছি। হয়রান লাগে না তোমার? বিরক্ত করে ফেলছো তুমি। দুই ঘন্টা ধরে নিজেও দৌঁড়াচ্ছো আর আমাকেও দৌঁড় করাচ্ছো। শাড়িতে পা বেজে তিনবার ফ্লোরে পড়েছো। পা ছড়িয়ে কেঁদে কেটে আবার দৌঁড়, এসব কি? তুমি বাচ্চা নও। অনেক হয়েছে এবার আমি যা বলবো তাই হবে। শরবত খাও….
— নননননননা… আমি গাল খাবো। খাবোই খাবো।
— আল্লাহ! আমাকে ধৈর্য দাও, প্লিজ! (একটা জোড়ে শ্বাস নিয়ে) ওকেহ্ রোদ সোনা। তুমি গাল খাবে তাই তো?
উনার প্রশ্নের উত্তরে তুমুল গতিতে মাথা নাড়লাম আমি।যার অর্থ “হ্যা,খাবো!”
— আচ্ছা ঠিক আছে। তোমাকে গাল খেতে দিবো তার আগে এই শরবতটুকু খেতে হবে তোমায়।
— খেতেই হবে?(করুণ চোখে)
— হুম! খেতেই হবে। নাও খাও।
— আচ্ছা।
কথাটা বলেই গ্লাসটা নিয়ে খানিকটা শরবত মুখে নিয়ে মুখ কুঁচকে বলে উঠলাম,
— এটা পঁচা লাগে।
— পঁচা লাগে না তো। খুব ভালো লাগে। সম্পূর্ণ খাও এটা অনেক মজা।
আমি উনার দিকে মুখ ফুলিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই শরবতটুকু খেয়ে নিলাম। উনি আমার কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বলে উঠলেন,
— গুড গার্ল! বমি পাচ্ছে?
আমি তুমুল গতিতে মাথা নাড়িয়ে জানালাম , “হ্যা পাচ্ছে।” উনি আমায় কোলে তুলে নিয়ে ওয়াশরুমে ভেসিনের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললেন,
— বমি করো।
উনি বলার আগেই বমি করে ভেসিন ভাসালাম আমি। দু’বার বমি করার পর ঠোঁট উল্টিয়ে বলে উঠলাম,
— ওটা পঁচা ছিলো।
— না রোদপাখি। ওটা পঁচা ছিলো না। এর আগে যেটা খেয়েছো ওটা পঁচা ছিলো।
কথাটা বলে টেনে ভেসিনের সামনে থেকে সরিয়ে নিলেন আমায়। ভেসিনটা পরিষ্কার করে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। শাড়িটা খুলে পাশে রেখে ভালো করে হাতে মুখ ধুয়ে দিলেন উনি। আমি সম্পূর্ণটা সময় গোলগোল চোখে উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম মাত্র। হাত-মুখটা তোয়ালে দিয়ে মুছে দিয়ে আমাকে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতে নিতেই হাত দিয়ে শাড়িটা ইশারা করে বলে উঠলাম,
— ওটা আমার শাড়ি।
— হুম ওটা তোমার শাড়ি। এবার রুমে চলো।
— কিন্তু ওটা তো আমার শাড়ি।
— হ্যা ওটা তোমারই শাড়ি। কেউ নিবেনা তোমার শাড়ি। এখানে থাকুক। পরে নিয়ে যাবো।
কথাটা বলে একমুহূর্ত দাঁড়ালেন না উনি। আমাকে কোলে নিয়ে রুমে গিয়ে সোজা শুইয়ে দিলেন বিছানায়। এসির টেম্পারেচার ফুল করে আমার উপর কম্বল টেনে দিলেন উনি। নিজেও কম্বলের নিচে ঢুকে আমাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন,
— এখন চুপচাপ ঘুমাও তো। একদম বাচ্চামো করবে না।
আমি উনার কথাকে পাত্তা না দিয়ে উনার পাঞ্জাবীর কলার টেনে অবাক চোখে বলে উঠলাম,
— এটা কি পড়েছেন?
— পাঞ্জাবি পড়েছি, রোদপাখি।
— আমিও পড়বো।
— আশ্চর্য! তুমি কেন পড়বে? এটা মেয়েরা পড়ে না সোনা। ঘুমাও!
— না! আমি এটা পড়ে ঘুমাবো। নয়তো ঘুমাবো না। খুলুন,, এটা আমার।
উনি বাধ্য হয়ে পাঞ্জাবি খুলে আমাকে পড়িয়ে দিলেন। পাঞ্জাবি পেয়ে আমি মহাখুশি। খুশি হয়ে দৌঁড়ে বিছানা থেকে নামতে গেলেই বিছানার সাথে চেপে ধরলেন আমায়। চোখ রাঙিয়ে বলে উঠলেন,
— উঠার চেষ্টা করলেই মাইর। এখন আমরা ঘুমাবো। ঘুমানোর সময় নো দৌঁড়াদৌঁড়ি। ওকে?
— এখন কি রাত?
— হুম এখন রাত৷
আমি উনার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে হাত দিয়ে জানালা ইশারা করে বললাম,
— তাহলে ওখানে আলো কেন?
— ওখানে লাইট জ্বালানো তাই আলো।
— ওখানে লাইট জ্বালানো কেন?
— বাইরে তো ভূতেরা থাকে। লাইট অফ করে দিলে ভূতেরা ভয় পাবে তো। তাই লাইট জ্বালানো।
— ভূতেরা ভয় পেয়ে কান্না করে?
শুভ্র এবার চরম বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকালেন। হুট করেই নিজের সমস্ত ভর ছেড়ে দিলেন আমার ওপর। কম্বল দিয়ে মাথা পর্যন্ত ঢেকে নিয়ে শ্বাস নেওয়ার সব পদ্ধতিই বিনষ্ট করে ক্ষান্ত হলেন উনি।
ঘুমের মাঝেই বুঝতে পারছি মাথাটা খুব ব্যাথা করছে আমার। অনিচ্ছা সত্ত্বেও চোখ মেলে তাকালাম। ঘরে লাইট জ্বলছে। আমার পাশে বসেই ল্যাপটবে কিছু একটা করছেন শুভ্র। উনার গায়ে কালো রঙের টি-শার্ট। চুলগুলো হালকা ভেজা।বুঝা যাচ্ছে শাওয়ার নিয়েছেন উনি। আমাকে তাকাতে দেখেই মিষ্টি হেসে বলে উঠলেন,
— ম্যাডামের ঘুম ভেঙেছে?
— কয়টা বাজে?
— আটটা।
উনার কথায় কপাল কুঁচকে এলো আমার। একঝাঁক প্রশ্নভরা দৃষ্টি নিয়ে বলে উঠলাম,
— আটটা মানে? সকাল আটটা?
— না। রাত আটটা।
— আজ না চিত্রার গায়ে হলুদ ছিলো? আমি ঘুমোলাম কখন? গায়ে হলুদ কি হয়ে গেছে?
— জি ম্যাম। গায়ে হলুদ আরো তিন ঘন্টা আগে শেষ। তোমার জন্য আমিও এটেন্ট করতে পারি নি। আর আপনি মাত্র একঘন্টা ঘুমিয়েছেন। এতোক্ষণ জেগেই ছিলেন।
— আশ্চর্য! এক ঘন্টা আগে ঘুমোলে আমি চিত্রার হলুদ এটেন্ট করতে পারলাম না কেন?
— কারণ আপনি মাতাল ছিলেন এবং আপনার সাথে আমিও মাতাল ছিলাম। এবার দয়া করে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন মহারানী।
শরীরে কম্বল পেঁচিয়ে মাথা ধরে চুপচাপ বসে রইলাম আমি। সারাদিন যা যা করেছি তার সবকিছুই হালকা মাথায় আসছে আমার। চিত্রার হলুদ নিয়ে এতো প্ল্যান ছিলো আর সবটায় ভেস্তে গেলো ভাবতেই কান্না পাচ্ছে আমার। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন শুভ্র। ডানহাতে আমার বামহাতটা টেনে নিয়ে বলে উঠলেন,
— থাক মন খারাপ করে না। আমরা চিত্রা-শিশিরের আবার গায়ে হলুদ করবো।
— আমি বাচ্চা নয়। বাচ্চাদের মতো গাঁজাখোরি যুক্তি দিবেন না আমায়।
— একটু আগে তো বাচ্চায় ছিলে। আমাদের মেয়েটা তোমার মতো হলে কি যে হবে আল্লাহ জানে। তবে যায় ছিলে কিউট ছিলে। মদ হারাম না হলে আমি প্রতিদিন তোমায় খাওয়াতাম।এনিওয়ে সবাই ছাদে আড্ডা দিচ্ছে। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আমরাও যাবো। দেখবে মন ভালো লাগবে তোমার।
আমি মন খারাপ করে শরীরে কম্বলটা ভালো করে পেঁচিয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করেই বলে উঠলাম,
— না। আমি যাবো না। মাথা ব্যাথা করছে। ঘুমোবো।
— আরে ফ্রেশ তো হয়ে নাও। আর খাও নি তো কিছু। রোদ? এই রোদ?
শুভ্র ডেকে চলেছেন আর আমি নাক-মুখ ঢেকে চোখ -মুখ খিঁচে শুয়ে আছি। লজ্জায় উনার দিকে তাকানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি আমি। একে তো হলুদের সব এক্সাইটমেন্টে পানি তার ওপর সারাদিনে উনার সাথে কি কি করেছি ভাবতেই লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে আমার। ইশশ! কি লজ্জা!

আজ চিত্রার বিয়ে। হুমায়ূন স্যারের একটা উপন্যাস আছে। উপন্যাাটার নামও “আজ চিত্রের বিয়ে”। আগে উপন্যাসটা পড়ার সময় চিত্রাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বলতাম, ” চিতা বাঘ! এই চিতা বাঘ?আজ তোর বিয়ে আমায় তো দাওয়াত দিলি না। আহ কষ্ট! বুকটা চিৎকার করে বলছে সে কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। এই কাজটা তুই করতে পারলি? লুকিয়ে লুকিয়ে বরের সাথে হানিমুন সাড়তে পারলি? কি নির্দয় তুই! ” অবশেষে সেই দিনগুলো শেষ হতে চলেছে। চিত্রার বিয়েটা সত্যি সত্যিই হতে চলেছে। দুপুর ১১ টার দিকে চিত্রাকে পার্লার থেকে মেয়েরা এলো সাজাতে। বিয়ের সাজে চিত্রাকে অপ্সরীর মতো লাগলেও বাদ সাধলো তার চশমা। বিয়ের কনে চশমা পড়ে আছে ব্যাপারটা আমার কাছে মোটেও ভালো লাগছে না। কিন্তু আমাদের চিত্রা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ! সে চশমা খুলবে না। আমিও কম যাই না। সাথে সাথেই দিলাম এক চড়। চিত্রা অবাক চোখে বলে উঠলো,
— তুই এই বিয়ের দিনেও আমায় মারবি?
— অবশ্যই মারবো। চশমা খোল নয়তো আরো দু’টো খাবি।
চিত্রা মুখ ফুলিয়ে চশমা খুলে রেখে দিলো। আমিও দাঁত কেলিয়ে বেরিয়ে গেলাম। আজ খয়েরী রঙের একটা ভারি লেহেঙ্গা পড়েছি আমি। আর শুভ্র খয়েরী রঙের শেরওয়ানি। বরকে স্টেজে বসানো হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। আমি ধীর পায়ে হেঁটে শুভ্রর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। উনি ভার্সিটির স্যারদের সাথে গল্প করছিলেন। স্যাররা আমাকে দেখেই হাসিমুখে বলে উঠলেন,
— আরে রোদেলা যে, কেমন আছো?
— আলহামদুলিল্লাহ, ভালো স্যার। আপনারা কেমন আছেন?( মুচকি হেসে)
— ভালো।
পাশ থেকে পলাশ স্যার বলে উঠলেন,
— তো রোদেলা? আমরা তোমাকে কি বলে ডাকি বলো তো? ভাবি ডাকবো নাকি? শুভ্র স্যারের ওয়াইফ বলে কথা।
আমি লজ্জায় মাথা নিচু করলাম। শুভ্রও হাসছেন। হঠাৎই সবার চোখ লুকিয়ে উনার পায়ে পাড়া দিলাম আমি। উনি অবাক চোখে তাকালেন। ভাগ্য খারাপ রাহুল স্যারের চোখেও পড়ে গেলো ব্যাপারটা। উনি হাসতে হাসতে বলে উঠলেন,
— স্যার? চলুন না, আমরা ওদিকে যাই। শুভ্র স্যার আর ভাবিকে একটু একা ছেড়ে দিই। কি বলেন ভাববববি?
এবার আমার অবস্থা ” ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি!” লজ্জায় মাথায় উঠাতে পারছি না আমি। উনারা চলে যেতেই ফিসফিস করে বলে উঠলেন শুভ্র,
— এই? তোমার মদের নেশা কাটে নি এখনও?
আমি তার থেকেও ফিসফিস করে বলে উঠলাম,
— আপনি কোন পক্ষ?
আমার কথায় অবাক হলেন শুভ্র। ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলেন,
— মানে?
— মানে হলো, আপনি ভার্সিটির স্যার হিসেবে শিশির স্যারের সাইড থেকে এসেছেন? নাকি আমার হাজবেন্ড হিসেবে চিত্রার সাইড থেকে এসেছেন, কোনটা?
— দুটোই। আমাকে দু’জনেই দাওয়াত দিয়েছে। আমি দু’ পক্ষের।
— এটা কোনো কথা? দু’পক্ষের হওয়া যায় না। যেকোনো একটা সিলেক্ট করতে হবে। আপনার কাছে আমার থেকে শিশির স্যার বড় হলো?
— কই থেকে কই যাচ্ছো তুমি?
— এতো কই কই না করে বলুন আপনি কোন পক্ষ?
— আচ্ছা বাবা কনে পক্ষ। এবার বলো কি সমস্যা?
— আমার ওড়নার নিচে তাকান।
— হোয়াট! এই তোমার নেশা নামে নি তাই না?
উনার কথায় চোখ রাঙিয়ে তাকালাম। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলাম,
— অলওয়েজ নেগেটিভ ভাবেন কেন? লুচু ছেলে। আমার ওড়নার নিচে আমার হাত। আর হাতের মাঝে শিশির স্যারের জুতো। চুরি করেছি।
— ওহ্ মাই গড। আমার বউ এতো বড় চুর জানা ছিলো না তো। ওখানে এতোগুলোই পাহাড়া দিচ্ছে তারমধ্যে কেমনে পারলা তুমি?
— সেটা আপনাকে না জানলেও চলবে। এই জুতোগুলো ওই তাকের উপর যে ফুলের ঝুড়িটা আছে ওর পেছনে রাখবো। আমি অতটুকু লম্বা নই। আপনি রেখে দিন না প্লিজ।
— আহারে বাচ্চাটা! এজন্য বলি কমপ্লেইন খাও। শুনো না তো।
— আজব তো। আমাকে যদি বিয়ের পরও কমপ্লেইন-ই খেতে হয়। তাহলে আপনার মতো লম্বুকে বিয়ে করেছি কি ঘাস কাটতে?
— হোয়াট? তারমানে তুমি আজকের দিনে আমাকে ব্যবহার করার জন্য বিয়ে করেছো?
— ইশশ! এতো বেশি কথা বলেন কেন আপনি। তুলে দেন না। দেখে ফেলবে তো ওরা।
— আচ্ছা দিচ্ছি। এমনি তুললে দেখে ফেলবে। আগে একটা ওড়না আনো।
— ওড়না দিয়ে কি হবে? (ভ্রু কুঁচকে)
— আরে আনো তো।
আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে চিত্রার ছোট বোনকে দেখতে পেয়েই দিলাম ডাক। মেয়েটি একটু অস্থির টাইপ। সবসময় একধরনের অস্থিরতায় ভুগে সে। যেন কতো কাজ তার! এবারও তাই হলো একগুচ্ছ অস্থিরতা নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো সে,
— রোদাপু ডেকেছো? কিছু লাগবে? কিছু বলবে?
— হ্যাঁ বলবো। আচ্ছা চৈতি, তোমার কাছে ওড়না হবে? হলে ঝটপট রুম থেকে একটা ওড়না এনে দাও তো।
চৈতি আর কোনো প্রশ্ন না করে ছুঁট লাগালো রুমের দিকে। ওড়না দিয়ে কি করবো তা জানার বিন্দুমাত্র আগ্রহ তার মাঝে দেখা গেলো না। কয়েক মিনিটের মাঝেই ফিরে এসে একটা লাল ওড়না ধরিয়ে দিলো শুভ্রর হাতে। শুভ্র ওকে ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে বললো। একদম নড়াচড়া বন্ধ। হাত উঁচিয়ে তাক থেকে ফুলের ঝুড়িটা নিয়ে সাইডের কয়েকটা বেত নিজের ইচ্ছেতেই ভেঙে ফেললো সে। আমি আর চৈতি দুজনই অবাক চোখে তাকিয়ে আছি। ঝুড়ির বেশ কিছুটা ভেঙে নিয়ে একটু জোড়েই রাতুল ভাইকে ডাকলেন শুভ্র। বলতে গেলে সবাইকে শুনিয়েই ডাকলেন উনি। রাতুল ভাইয়া পাশে দাঁড়াতেই আগের মতো জোড়েই বলে উঠলো,
— এই রাতুল? এই ওয়েডিং হাউজের ম্যানেজারকে ডাক তো। কিসব কাজ করে এরা? রান্না ঘরে পিঁপড়া পাওয়া যায়। আর এখন এই ঢালাও ভাঙা। সব ফুলই তো পড়ে যাচ্ছে। এদের সার্ভিস এতো খারাপ কেনো?
শুভ্রর কথায় ছেলেপক্ষরাও ঘুরে তাকালো। ম্যানেজার ছুটে এসে বললো,
— সরি স্যার! এমনটা আর হবে না। আই থিংক কোনো স্টাফের ভুল ছিলো এটা।
— ইটস ওকে।ওদিকটার ডেকোরেশন দেখুন। এই ঢালিটা আপাতত এই ওড়না দিয়ে বেঁধে দিচ্ছি ফুলগুলো আর পড়বে না। দয়া করে দেখবেন ঢালিটা যেন কেউ নাড়া চাড়া না করে। এই ফুলগুলো বাসরের জন্য আনা হয়েছে। এটুকু তো পারবেন মিষ্টার?
— ইয়েস স্যার। অবশ্যই।

ম্যানেজার আর শুভ্রর কথায় সবাই আবারও যার যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ম্যানেজারও চললো অন্যদিকে। শুভ্র খুব মনোযোগ দিয়ে ঢালায় ওড়না পেঁচালেন। তারপর ঘুরে ঢালাটা উপরে রাখার আগে আমার হাত থেকে হুট করে জুতো জুড়ো নিয়ে ওড়নার ভাজের মাঝে ঢুকিয়ে দিলেন। যেদিকটায় জুতো রাখা হয়েছে সেদিকটা দেয়ালের দিকে মুখ করে রেখে দিলেন। আমি আর চৈতি শুধু চোখ বড় বড় করে দেখেই গেলাম। ঢালাটা রেখে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে চৈতীর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে বলে উঠলেন উনি,
— শালিকা নাম্বার ২। মুখ অফ।
চৈতি একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। আমি উনার আরেকটু কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বললাম,
— এতো কাহিনী করলেন কেন?
— তোমার জুতো সেইভ রাখতে। এমনি রাখলে ওরা চেইক করতোই। তাই সবাইকে জানিয়ে শুনিয়েই রাখলাম। সবাই জানবে ঢালিতে সমস্যা। ম্যানেজারও ওটা ধরতে দিবে না। তারপরও যদি চেইক করে তাহলে ঢালির ভেতরে ফুলের মাঝেই দেখবে। ওড়নায় পেঁচানো আছে কি না সেটা ভাববে না।
কথাটা বলেই রোহুন ভাইয়াদের দিকে এগিয়ে গেলেন উনি।৷ আমি সেখানেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছি। মাথায় কি বুদ্ধি রে বাবা। আজ মনে হচ্ছে কোনো রাজনৈতিক নেতাকে বিয়ে করছি। কি কূটনীতি রে বাবা!
#চলবে…..