তোকে চাই – Season 2 ! Part- 54
হলুদ শেষ করে রুমে ঢুকতেই দরজা বন্ধ করার শব্দ কানে এলো। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম চিত্রার বদলে দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্র। আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে এগিয়ে এসেই জড়িয়ে ধরলেন আমায়। কোমরে ঠান্ডা পরশ পেয়ে নড়ে উঠলাম আমি। হাতটা টেনে সামনে এনে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। উনার দু’হাত ভর্তি হলুদ। আমি অবাক চোখে একবার উনার হাতের দিকে তাকিয়ে আবারও নিজের কোমরের দিকে তাকালাম। কোমরের দু’পাশেই হলুদ দিয়ে ল্যাপ্টে দিয়েছেন উনি। আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকাতেই ঘাড়ে হাত দিয়ে কাছে টেনে নিলেন উনি। কপাল থেকে শুরু করে পুরো গলা হলুদে মাখামাখি করে ক্ষান্ত হলেন। দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলেন,
— বাহ্। আমি হলুদ লাগাতেই একদম রসগোল্লার মতো লাগছে তোমায়। এই? এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? আমায় হলুদ লাগাবে না?
কথাটা বলেই হলুদ হাতে পকেট থেকে ফোন বের করলেন উনি। আমার গালের সাথে গাল ঘষে হলুদের সাথে কয়েকটা ছবিও তুলে নিলেন ঝটপট। মাথায় একটা চুমু খেয়েই বেরিয়ে গেলেন চুপচাপ। আমি হ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছি। উনি আইলার মতো এসে ঘূর্নিঝড়ের মতো চলে গেলেন। আর আমি এক হ্যাবলাকান্ত, যে কি না কিছুই বুঝতে পারলাম না। ঠোঁট উল্টিয়ে বিছানায় গিয়ে বসতেই আম্মু,আপু, চিত্রা আর কয়েকজন আন্টি এলেন। তারা নাকি গোসল করাবেন আমায়। আমি বিস্মিত গলায় বলে উঠলাম,
— আশ্চর্য! আমি কি ছোট নাকি যে আমায় গোসল করাবে? আমি একা গোসল করতে পারি মা।
কিন্তু কে শুনে কার কথা? বিয়ের গোসলে নাকি দুবলা ঘাস, পাথর, তেল কি কি লাগে আর সাথে লাগে বড়দের আশীর্বাদ। মুসলিমদের ভাষায় দোয়া। মার কথার বাইরে যাওয়া মানেই সবার সামনেই ইজ্জতের ফালুদা বানানো। তাই সেই রিস্ক না নিয়ে চুপচাপ ঢুকে গেলাম ওয়াশরুমে আর আমার সাথে ঢুকলো আরো চারজন।হায় অনিষ্ট! এই দিনটাও দেখার ছিলো? সাড়ে ছয়টা নাগাদ গোসল সেড়ে বেরিয়ে এলাম। গায়ে টি-শার্ট আর থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট। বিয়ের দিন কোনো বিয়ের কনেকে এমন ড্রেস পড়তে দেখলে মুরব্বি সকল নিশ্চয় হার্ট অ্যাটাক করতো। কিন্তু আমার ভাগ্য ভালো দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ। তোয়ালেটা সোফায় ছুড়ে ফেলেই গা এলিয়ে দিলাম আমি। উদ্দেশ্য জবরদস্ত একটা ঘুম দিবো। বিয়ে মানে যে এতো ঝামেলা সেটা আগে জানলে শুভ্রকে বলতাম, “ওহে স্বামী,প্রয়োজনে আমাকে নিয়ে পলায়ন করুন তথাপি পুনরায় বিবাহ করতে চাহিবেন না! না! না! ” কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখটা একটু লেগে আসতেই দরজায় তুমুল আন্দোলন শুরু হলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও দরজা খুলতে হলো আমায়। আমার ড্রেস আপ দেখে তারা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেও তেমন কিছু বললো না। চিত্রা কোথা থেকে দৌড়ে আমার ঠিক সামনে এসে দাঁড়ালো। হাতে লাল বেনারসী আর গহনার বাক্স। ওগুলো নিয়েই দুষ্টু হাসি দিয়ে লাফাতে লাগলো ও। আমার কাঁধের সাথে কাঁধ লাগিয়ে বলে উঠলো,
— “লাল টুকটুক পুতুল আমার যাবে শশুড় বাড়ি….” কি রে? লাড্ডু ফুটে?( চোখ টিপে)
— না জানু। ঘুম ফুটে। ঘুমোতে দে আমায়।
আমার কথায় যেনো মস্ত আকাশটা ভেঙে পড়লো ওর মাথায়। চোখ বড় বড় করে বলে উঠলো,
— পাগল নাকি? ক’টা বাজে দেখেছিস? সাতটা বেজে পাঁচ মিনিট। আর বিয়ে কয়টায়? পুরো আটটায়। আমাদের হাতে মাত্র পঞ্চান্ন মিনিট আছে। সো ঘুম টুমকে বাই বাই বলে চুপচাপ সাজতে বসে যা, বুঝলি?
আমি ঘুমু ঘুমু চোখে বসে আছি আর ওরা সাজাচ্ছে আমায়। সারাজীবন যে বিয়ে নিয়ে এক্সাইটমেন্ট কাজ করে সেই বিয়েতে মেয়েদের ঘুমই পায়, নয়তো তারা বিরক্ত হয়, এটাই নিয়ম। আটটা বাজার ঠিক একমিনিট আগে সাজ কমপ্লিট হলো আমার। এতো তাড়াতাড়ি বউ সাজিয়ে ফেলেছে দেখে পার্লারের মেয়েদের গর্বের শেষ নেই। সবাই বেরিয়ে গেলে লাজুক চোখে আয়নার দিকে তাকালাম। কেনো যেনো নিজেকেই ভীষণ লজ্জা লাগছে আজ। চিত্রা পাশেই দাঁড়ানো ছিলো। আমাকে লজ্জা পেতে দেখে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে গেয়ে উঠলো,
— “আয়নায় এই মুখ দেখবে যখন
চারদিকে শুভ্র ভাইয়ের মুখ পড়বে চোখে।” হিহিহি মাশাআল্লাহ খুব সুন্দর লাগছে তোকে। আজ রাতে যে কি হববববে….ওহহো ওহহো।
— শাট আপ।
— আজ রাতে থামতে মানা বেবি। সো আজ নো শাট আপ। মুখটা মাষ্টারনীর মতো না করে একটু রোমান্টিক হ বুঝলি?
চিত্রার কথাটা শেষ হতে না হতেই বাবার সাথে রুমে এলো মাঝবয়স্ক কাজি সাহেব। আবারও এলো কবুল বলার পালা। প্রথমবার ঘোরের মাঝে থাকলেও এবার যেনো হাজারো কথা ঘুরতে লাগলো মাথায়। মনে হতে লাগলো এই কবুল বলা মাত্রই হয়তো বাবার মুখের প্রিন্সেস নামটা থেমে যাবে, ভাইয়ার সাথে ঝগড়া, কথাকথায় মরামারি সব যেনো এখানেই থমকে যাবে, বিনা কারণে আম্মুর থেকে খাওয়া বকুনি আর বকুনি খাওয়ার পর ভাইয়ার সাথে খিলখিল করে হেসে ওঠা সবটায় যেন নিঃশেষ হয়ে যাবে। চোখ ফেটে বেরিয়ে এলো জল। পাশ থেকে চিত্রার বলা কথা, “এই রোদু কবুল বল!” কথাটা শুনেই ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমি। মনে হলো এই বুঝি আদর মাখা দিনগুলো শেষ হলো সব। এই বুঝি অবাধ্য আবদারগুলো হারিয়ে গেলো দূর অজানায়….
#চলবে….