তোকে চাই – Season 2 ! Part- 53
কি? সমস্যা আছে?
– অবশ্যই সমস্যা আছে। এই দূরে দাঁড়ান। মেয়ে দেখতে এসে শরীরের উপর পরে যাচ্ছেন কেনো শুনি? মেনারলেস লুচু ছেলে। সরুন বলছি….সরুন। আমি এসব লুচু ছেলেদের বিয়ে করবো না হুহ।
– ইশশ….কি করবো বলুন। আপনার মতো এমন রসগোল্লা টাইপ মেয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে কি আর দূরে দূরে থাকা যায়?আপনাকে দেখেই তো আমার সব সিস্টেম উলটপালট হয়ে যাচ্ছে। এতে আমি কি করতে পারি বলুন?(চোখ টিপে)
– আপনি তো ভয়ানক অসভ্য ছেলে। এমন একটা অসভ্য ছেলেকে আমি কখনোই বিয়ে করবো না । তাছাড়া…আমি না একটা ছেলেকে খুব ভালোবাসি। একদম হার্টবিট কাঁপা-কাঁপি টাইপ ভালোবাসি কিন্তু সমস্যা কি জানেন?(মুখ উল্টিয়ে)
– কি সমস্যা? (অবাক হয়ে)
– আমি ছেলেটাকে এত্তো এত্তো ভালোবাসি অথচ ছেলেটা আমায় একটুও ভালোবাসে না।(কাঁদো কাঁদো হয়ে)
– ওহ্ শিট! আপনার মতো একটা মেয়েকে ভালোবাসে না? এর জন্য তাকে সাজা দেওয়া উচিত। আর সাজা হিসেবে তাকে আমার সামনে দাঁড়িয়ে এক হাঁড়ি রসগোল্লা খেতে হবে। থেংক গড সে আপনাকে ভালোবাসে না…কষ্ট পাবেন না প্লিজ।এটা তো একটা সুখবর তাইনা? সে ভালোবাসে না তাতে কি? আমি তো বাসি….আই মিন ভাসবো। একদম মন- প্রাণ -দেহ উজার করে ভালোবাসবো। সো নো টেনশন বেবি।
কথাটা বলেই দাঁত কেলিয়ে আরো শক্ত করে কোমর জড়িয়ে ধরলেন উনি। আমি হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে উঠলাম,
– আরে ধুর! আপনি ভালোবাসলে হবে নাকি? আপনার নাম কি হ্যা? নিশ্চয় চেঙ্গিস খান টাইপ কিছু একটা? আর তার নামটা কি সুন্দর জানেন? “আবরার আহমেদ শুভ্র” ইশশ নামটা শুনলেই তো প্রেম প্রেম পায়। দেখতে না পুরোই চকলেট বয় টাইপ।সামনে এলেই খপ করে ধরে কামড়ে কুমড়ে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। গালগুলো তো গাল নয় যেনো সফ্ট কেক। আর চুলের কথা নাহয় বাদই দিলাম। হায়!! উনাকে দেখলেই আমার মধ্যে কেমন বিরহ্ বিরহ্ ফিলিংস কাজ করে।এই বিরহ নিয়ে কি আপনাকে বিয়ে করা সম্ভব?? নহে,, কখনোই নহে। আমাকে ক্ষমা করুন মহাশয়।
কথাটা বলে মুখ কালো করে উনার দিকে তাকালাম। দু’জনেই কয়েক সেকেন্ড চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎই হুহা করে হেসে উঠলাম। উনি হাসতে হাসতেই কপালের সাথে কপাল ঠেঁকিয়ে বলে উঠলেন,
– ভালোবাসি❤ আবরার আহমেদ শুভ্র আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসে ম্যাডাম।
কথাটা বলে কোমর ছেড়ে হুট করেই হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন উনি। বামহাতটা ধরে পকেট থেকে আংটিটা বের করে বলে উঠলেন,
– সারাটা জীবন বুকের সাথে জড়িয়ে রাখার অধিকার দিবে প্লিজ? ক্লান্ত দিনের শেষ অংশে উষ্ণ আদরে নিজেকে হারানোর সুযোগ দিবে প্লিজ? আমার “ভালোবাসি” র উত্তরে এক টুকরো লাজুক হাসির দায়িত্বটা নিবে প্লিজ? তোমার লম্বা চুলে বেলীফুলের মালা জড়ানোর ইচ্ছেটা পূরণ করতে দিবে প্লিজ? তোমার এই বাজে বরটাকে আবারও একবার বিয়ে করবে প্লিজ?
উনার কথায় অবাক হয়ে ডানহাতে মুখ চেপে ধরলাম আমি। খুশিগুলো যেনো চোখের জল হয়ে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে চলেছে অনবরত। আমি চোখে জল আর মুখে হাসি নিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম। উনি মিষ্টি হেসে রিং টা পড়িয়ে দিয়ে বললেন,
– হাফ এনগেজমেন্ট শেষ রোদপাখি। এবার তোমার পালা। আমার রিং কই?
– রিং! আমার কাছে তো রিং নেই। (মাথা নিচু করে)
আমার কথায় হাসলেন শুভ্র। হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে নিজের কাছে আনলেন উনি। কপালে চুমু দিয়ে হাতে একটা বক্স ধরিয়ে দিয়ে ইশারা করলেন। আমি লাজুক হেসে রিংটা পরিয়ে দিলাম উনার হাতে। উনি মুচকি হেসে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে মুখের দিকে ঝুঁকতেই দরজায় কড়া নড়ার শব্দ কানে এলো। ওপাশ থেকে অভ্র ভাইয়া বলে উঠলেন,
– ভাই রে। আমরা মেয়ে দেখতে এসেছি। মান- ইজ্জতটা রাখ। এতোক্ষণ রুমের ভিতর কি কথা বলিস? মহাভারত পড়ে শুনাচ্ছিস নাকি মেয়েটাকে?
শুভ্র একরাশ বিরক্তি নিয়ে আমাকে ছেড়ে দিয়ে দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। শুভ্র বের হতেই চিত্রা একরকম লাফিয়েই রুমের মধ্যে ঢুকে গেলো। সন্দেহী চোখে আমার দিকে তাকিয়েই বলে উঠলো,
– রোদু? বন্ধ দরজার পেছনে কি করলি তোরা? ” হাম তুম এক কামরে মে বান্ধ হে ” এমন টাইপ কিছু হচ্ছিলো নাকি? (চোখ টিপে)
– নাহ্। ” তুমি মোর জীবনের ভাবনা, হৃদয়ের সুখের দোলা ” টাইপ কাহিনী হচ্ছিলো। (দাঁতে দাঁত চেপে)
– মানে? (কনফিউসড হয়ে)
– মানে তোর মাথা। সর সামনে থেকে। এমন হ্যাবলাকান্তের মতো মাথার উপর এসে দাঁড়িয়েছিস কেন শুনি?
আমার কথায় দাঁত কেলিয়ে একটা হাসি দিলো চিত্রা। বিছানায় হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পা নাঁচাতে লাগলো। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি। ওর মতিগতি তেমন একটা সুবিধার মনে হচ্ছে না আমার। কিছুক্ষণ সটান শুয়ে থেকে উঠে বসলো সে। হাসিমুখে বলে উঠলো,
– দোস্ত? আমার না খুব হ্যাপি হ্যাপি লাগছে বুঝলি? আজ তোর বিয়ে আর ঠিক দু’দিন পর আমার বিয়ে। আজ আমি তোকে সাজাবো দু’দিন পর তুই আমাকে সাজাবি। আমিই প্রথম কণে যে কিনা বিয়ের আগের দিনও বেস্ট ফ্রেন্ডের ফিরতির অনুষ্ঠানে লাফ ধাপ পারবো
। এনিওয়ে তুই কি জানিস?আমার আর তোর বিয়ের ড্রেস সেইম।
– বিয়ের কথায় তো জানতাম না আবার ড্রেস! প্ল্যানিং না হয় করে ফেললো বাট এতো এরেঞ্জমেন্ট এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে?
– হোহহো। আমার দুলাভাইটা একদম অলরাউন্ডার বুঝলি? রাত তিনটায় ফোন দিয়ে আমাকে ঘুম থেকে তুলে সব ফ্রেন্ডদের ইনভাইট করার দায়িত্ব ঝুলিয়ে দিয়েছে। এক পরিচিত মল মালিককে ফোন করে মল খুলিয়ে….আন্টি আর রুহি আপুকে নিয়ে শপিং করেছে আর বাকিগুলো অনলাইন অর্ডার। বিয়ের যাবতীয় এরেঞ্জমেন্টের জন্য একদম নিউ একটা কোম্পানিকে হায়ার করেছে ডাবল টাকা দিয়ে..
তাতে অপেক্ষাকৃত টাকা যেমন কম লেগেছে তেমনি ভালো সার্ভিসও পাওয়া যাচ্ছে। ভাইয়ার ধারনা নতুনদের দায়িত্ব দিলে তারা অবশ্যই তাদের বেস্টটা দিবে। এনিওয়ে এসব কথা রাখ….দু’টো তো প্রায় বেজে গেলো। রেডি হবি চল। গায়ে হলুদটা পাশের কমিউনিটি সেন্টারে হবে….বিয়েটাও সেখানেই। বাড়ি সাজাতে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লাগবে তাই এই ডিসিশন। এবার চল… আমাকেও সাজতে হবে..
একমাত্র শালী বলে কথা! (দাঁত কেলিয়ে) বুঝলি রোদু? আমার না খুব মন খারাপ!
– কেনো?(ভ্রু কুঁচকে) আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে বলে?
– নাহ।( গাল ফুলিয়ে)
– তাহলে?
– শুভ্র ভাইয়ার সবগুলো বন্ধুরই একঝাঁক গার্লফ্রেন্ড আছে। আমি কার সাথে লাইন টাইন মারবো বল? বেস্টুর বিয়ে নিয়ে কতো স্বপ্ন ছিলো। কতো সাজবো! জামাইয়ের বন্ধুরা সহ বেস্টুর জামাইও “হা” করে তাকিয়ে থাকবে। কিন্তু হায় অনিষ্ট! শুভ্র ভাইয়ার মাথায় বন্ধুক ধরলেও তিনি তাকাবেন না। সে আশা তো বাদ….এবার তার বন্ধুগুলোর আশাও বাদ। একমাত্র সাহেল ভাইয়ায় ভরসা ছিলো কিন্তু তিনি তো মঙ্গল গ্রহে গিয়ে বসে আছেন। যত্তসব!! যদিও সাহেল ভাইয়াও আরেক এলিয়েন…. শুভ্র ভাইয়ার মতো তার নজরেও যেন স্টেপলার লাগানো। এদিক ওদিক কোথাও তাঁকায় না। তবে তোর দিকে কিন্তু ঠিকই তাকায়। বুঝি না…দুজনের নজর সব সময় একদিকে চলে কেন? হুয়াই? আমাকে দেখলেও তো পারে। তাহলে নেচে নেচে বিয়ে করে নিতাম। আহা! কি বেদনা দোস্ত…কি বেদনা। ” সে যে কেনো বুঝে না, কিছু ভালো লাগে না ” টাইপ ফিলিংস হচ্ছে বন্ধু। (চোখ টিপে)
ওর কথায় মুচকি হাসলাম আমি। ধীরে পায়ে ওর পাশে পা ঝুলিয়ে বসে ডান কাঁধে হাত রাখলাম। এক আঙ্গুলে কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে একটু ভাব নিয়ে বলে উঠলাম,
– ডার্লিং? শিশির স্যারকে বলি? উনি উনার চুমু থেরাপি শুরু করলে সব ভালো লাগতে শুরু করবে তোমার। ” আর কতো রাত একা থাকবো…” এই টাইপ ফিলিংস আসবে তখন। কি রে, বলবো? (চোখ টিপে)
চিত্রা আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বারকয়েক ঢোক গিলে নিয়ে করুণ গলায় বলে উঠলো,
– নননননননো।
চিত্রার চিৎকারে কয়েকসেকেন্ড চুপ করে বসে থেকে হঠাৎ করেই ভুবন কাঁপানো হাসিতে মত্ত হয়ে পড়লাম দুজনে।
হলুদের সাথে সবুজ পাড়ের শাড়ি পড়ানো হয়েছে আমায়। সারা গা জুড়ে তাজা ফুলের গহনা। নিজেকে একদম ফুলের দোকান মনে হচ্ছে আমার। চোখে গাঢ় কাজল আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক ছাড়া আর কোনো সাজ নেই মুখে। এটা নাকি শুভ্রর আদেশ…আর যায় করো না কেন? মুখে মেকাপ দিবে না একদম! এতোক্ষণে মেহমান আর ফ্রেন্ডে সারা বাড়ি ভরে একাকার। মা-বাবার কি ব্যস্ততা। চিত্রা,রুহি আপু সবাইকেই অসম্ভব সুন্দর লাগছে আজ। শিশির স্যার আর অভ্র ভাইয়া তো নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক
করবে আজ। আমাকে স্টেজে নেওয়া হবে ঠিক তখনই দৌঁড়ে এলো চিত্রা। হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
– এক মিনিট, এক মিনিট। পায়ে আলতা পড়ানো হয় নি। গাঢ় আলতা পড়ানোর হুকুম আছে। সো চুপচুপ বসে যা তো ভাই। নয়তো গেইটে টাকা পাবো না আজ।
আমি মুচকি হেসে সোফায় বসে পড়লাম। আলতা পড়ানো শেষে স্টেজে নিয়ে বসিয়ে দেওয়া হলো আমায়। আমি আড়চোখে চারপাশে তাকাচ্ছি। অল্প সময়ে বেশ মুগ্ধ হওয়ার মতো করেই সাজানো হয়েছে চারপাশ। সব মেয়েরাই সবুজ শাড়ি পড়েছে আর ছেলেরা পড়েছে বেগুনী রঙের পাঞ্জাবি। মুখে হাসি টেনেই শুভ্রকে খুঁচ্ছে আমার চোখ। হঠাৎ দরজার পাশে চোখে পড়লো সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটির মুখ। আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন উনি। মুখে মিষ্টি হাসি। সাদা পাঞ্জাবি আর তারওপর হলুদ কটিতে খুবই সতেজ লাগছে তার চোখ -মুখ। ফর্সা মুখে থুতনির কাছে ওই কালো তিল আর টোল পড়া আঁকাবাঁকা দাঁতের হাসি এতদূর থেকেও কতো স্পষ্ট আর মনোমুগ্ধকর!! উনি বুকে হাত দিয়ে জোড়ে একটা শ্বাস ফেলে মাথা হেলিয়ে দিলেন। আমি লাজুক হেসে মাথা নিচু করে আবারও আড়চোখে তাকালাম। উনি দাঁত বের করে হেসে দিয়ে কপালে পড়ে থাকা সিল্ক চুলগুলো ঠেলে দিলেন পেছনে। ডান চোখটা টিপে দিয়ে চলে গেলেন দরজার আড়ালে। আমি কিছুক্ষণ উঁকিঝুঁকি দিয়েও উনার দেখা না পেয়ে মুখ কালো করে বসে রইলাম চুপচাপ।
#চলবে..