তোকে চাই

তোকে চাই – Season 2 ! Part- 45

গেইট থেকে দৌঁড়ে বেরিয়েই রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম।আশেপাশে রিক্সার টিকিটারও দেখা মিললো না আমার।বাসা থেকে সিটি হসপিটাল প্রায় ১ ঘন্টার পথ।সেখানে হেঁটে যাওয়া মানেই ডাবল টাইম।তবুও কি ভেবে দৌড়াতে লাগলাম আমি।।বুকে দামদুম শব্দ করছে ক্রমাগত….নিশ্বাসটা এই বুঝি আটকে যাবে আমার।।কতোক্ষণ দৌঁড়েছি জানি না হয়তো ১৫ মিনিট হবে।।প্রায় ১৫ মিনিট পর একটা সিএনজির দেখা মিললো আমার….আকাশের অবস্থা খুব খারাপ।ঝড় হওয়ার পূর্বাভাস স্পষ্ট… এমন একটা আবহাওয়ায়,,, সিএনজি ড্রাইভার কিছুতেই এতোদূর যেতে রাজি নয় …অবশেষে আমার কাঁদোকাঁদো চেহারা আর ডাবল ভাড়ার লোভে পড়ে রাজি হলো সে।।দম আটকে বসে পড়লাম সিএনজিতে….সাথে সাথেই শুরু হলো তুমুল ঝড়…বাতাসের ধাক্কায় যেনো সিএনজি এগেনোয় দায়।।ড্রাইবার আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন –
.
ম্যাডাম! সিএনজি কোথাও থামাই…ঝড় একটু কমলে আবার স্টার্ট দিমু।এমনে তো এক্সিডেন্ট হইতে পারে।

নাহ প্লিজ মামা চলেন।।আমার স্বামী হসপিটালে একা।দরকার পড়লে তিনডবল ভাড়া দিবো আপনাকে…..আমায় একটু পৌঁছে দিন।।প্লিজ!!
.
ড্রাইভার কিছু একটা বলতে গিয়েও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারলো না।।মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ গাড়ি চালাতে লাগলো সে।।গলা শুকিয়ে কাঠ,,, বুকের মাঝেও ঝড় হচ্ছে তুমুল গতিতে,,,প্রতিটি সেকেন্ডকে একদিন পরিমান লম্বা লেগেছিলো আমার।।কখন পৌঁছাবো আমি?কখন দেখবো তাকে?মনের মধ্যে অচেনা এক ভয় কড়া নাড়ছিলো বারবার।নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে অসহায় লাগছে আমার…..আজ শুভ্র আমার পাশে থাকলে হাসিমুখে বলে উঠতো-” এই রোদপাখি?মুখটা এমন কালো করে রেখেছো কেন বলো তো?আমি তো আছি….. এতো চিন্তা কিসের,, সব চিন্তা আমায় দিয়ে দাও তো…” কথাটা ভেবেই ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমি,,না নেই।আজ আপনি নেই আমার পাশে।।আপনার রোদপাখি কাঁদছে আর আপনি তার পাশে নেই…. আমি কক্ষনো কথা বলবো না আপনার সাথে.. খুব রাগ করেছি আমি,, খুব।এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আপনাকে ছাড়া কিভাবে চলবে আমার??আমার কান্নার শব্দে ফিরে তাকালো ড্রাইবার।অবাক কন্ঠে বলে উঠলেন উনি-
.
ম্যাডাম আপনি ঠিক আছেন?

জি আমি ঠিক আছি।আআপনি চালান….
.
কিছুক্ষণ পরেই সিএনজি হসপিটালের সামনে এসে দাঁড়ালো ।ড্রাইভারকে ভাড়া টা দিয়েই দৌড়ে গেলাম ভেতরে।।কি করবো,,কোথায় যাবো,,কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না আমি।।শুভ্রর ফোনে আবারও ফোন দিতেই ফোনটা বন্ধ পেলাম।।এখন কি হবে?ডক্টর রাহিম আলমকে কিভাবে খুঁজে পাবো আমি??একটা ঢোক গিলে রিসেপশনের দিকে এগিয়ে গেলাম।।ভয়ে আত্মা কাঁপছে আমার….কোনোরকম ভাঙা গলায় বলে উঠলাম -“এক্সকিউজ মি?” রিসেপশনিস্ট মেয়েটা অবাক চোখে আমার দিকে তাকালো।।অবাক হওয়ারই কথা…আমার গায়ে টি-শার্ট আর ঢোলা প্লাজু….তারওপর ওড়নাটা কোনোরকম পেঁচিয়ে রেখেছি আমি।চুলগুলো কোনোরকম খোঁপায় আটকানো….কাপড়গুলোও ভিজে একাকার…পায়ে বাসায় পড়া স্লিপার।।চোখদুটো ফুলে লাল হয়ে আছে…..মেয়েটা কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলো –
.
হাও ক্যান আই হেল্প ইউ ম্যাম?
.
এবার যেনো গলায় কথা আটকে আসছে আমার। শুভ্রর নামটা কিছুতেই গলা থেকে বেরুচ্ছে না ।।অনেক চেষ্টায় শেষমেষ বলে উঠলাম আমি-
.
এএক্সিডেন্ট পপপেশেন্ট….শশুভ্র কোথায়?
.
কাল রাতে এক্সিডেন্ট হয়েছে? শুভ্র আহমেদ?
.
আমি তুমুল গতিতে মাথা নাড়িয়ে বললাম জি!!এবার মেয়েটির মুখে তীব্র বেদনার ছাপ ফুটে উঠলো।।মুখ কালো করে বললো -“আপনি কে হোন উনার?মিসেস শুভ্র?”
.
আমি আবারও টলমলে চোখে মাথা নাড়লাম।এবার মেয়েটি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো-
.
ফর্মটা পূরণ করে দিন মেম।ডেডবডি রেডি আছে…ফর্মটা পূরণ করলেই সব ফর্মালিটিস শেষ…আপনি উনাকে নিয়ে যেতে পারেন।।উনার কাছে একটা রিং বক্স ছিলো… সেটা আমাদের কাছে আছে…আপনি যাওয়ার সময় মনে করে নিয়ে যাবেন ম্যাম।

মেয়েটার মুখে “ডেড বডি” কথাটা শুনেই ফ্রিজড হয়ে গেলাম আমি।।কি বলছে এসব?পাগল হয়ে গেছে নাকি এই মেয়ে?শুভ্র আর ডেডবডি?এরা কি মজা করছে আমার সাথে?এটা কি করে হতে পারে?বললেই হলো নাকি?আমার শুভ্র এতোটা সেলফিশ হতেই পারে না …তার রোদপাখিকে মাঝপথে,, এতোটা অসহায় করে দিয়ে চলে যেতে পারে না সে।।আমি তো প্রতি নামাযে একটাই দোয়া করে এসেছি প্রতিনিয়ত যেন তার আগে মৃত্যু হয় আমার….আমার এই দোয়া ব্যর্থ হতে পারে না।কখনো না….মেয়েটা আমার সামনে একটা প্যাকেট রাখলো…..হাতে ফর্ম নাচিয়ে কিছু একটা বলছে…কিন্তু কিছুই কানে আসছে না আমার।।সবকিছু কেমন ঝাপসা ঘোলাটে লাগছে….কেন হচ্ছে এমন??হাতের ফোনটা কাঁপছে….তার থেকেও বেশি কাঁপছে আমার শরীর।।শূন্য চোখে ফোনের দিকে তাকিতেই স্ক্রিনে “সাহেল ভাইয়া” নামটা ভেসে উঠলো।শরীরে কোনো শক্তি পাচ্চি না আমি।।হাত থেকে খসে পড়লো ফোন।।ফ্লোরে আছাড় খেয়েই ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো প্রতিটি টুকরো।।আমি ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে আছি….শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে ক্রমাগত।।হয়তো মরে যাচ্ছি আমি….হারিয়ে যাচ্ছি অতল গহ্বরে…. সেখানেই হয়তো আছে জীবনের শেষ অধ্যায়…জীবনের শেষ সত্য!!
.
#চলবে🍁