তোকে চাই

তোকে চাই – Season 2 ! Part- 27

আপুর বিয়ের ডেইট ফিক্সড করা হয়েছে আজ থেকে ১৫ দিন পর।মামু ঘরের লক্ষী ঘরে আনতে দেরী করতে চান না একদম।।মামানিও তাই। তাই আর দেরী না করে ১৫ দিনের মাথায় বিয়ে।গার্ডেন সাইডে দাঁড়িয়ে আছি.. মালিচাচা ফুল চেনাচ্ছেন আমায়।। কতো অদ্ভুত ধরনের ফুল চারপাশে।।অদ্ভুত হলেও সব কটায় অসম্ভব সুন্দর।মালিচাচা বেশ মিশুক টাইপের লোক।।কয়েক দিনেই আমায় বেশ আপন করে নিয়েছেন উনি।গ্রামে নাকি আমার বয়সী একটা মেয়ে আছে উনার… মেয়েটার নাম সিতারা।তার স্ত্রী নাকি সংগীত প্রেমী..বেশ ভালো গান করে তাই মেয়ের নাম রেখেছে সীতারা।মালি চাচার সাথে ঝুঁকে ঝুঁকে গাছ দেখছিলাম হঠাৎ কেউ একজন পেছন থেকে চুল টেনে ধরলো।।পেছন দিকে তাকিয়েই অবাক হলাম… শুভ্র ভাইয়া!!এটা কোন ধরনের অসভ্যতা শুনি??আমি উনার দিকে রাগী চোখে তাকালাম…কিন্তু সেদিকে মহাশয়ের খেয়াল থাকলে তো?তিনি অমায়িক হেসে চাচাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন-
.
হ্যালো ওল্ড ম্যান!!কেমন আছেন?
.
জি ভালো ছোট বাবা।(মুচকি হেসে)
.
আচ্ছা চাচা?বাগানে কি এখন বকুল ফুল পাওয়া যাবে??
.
না ছোট বাবা এখন তো বকুল ফুল হবে না।
.
তাহলে লাল গোলাপ?একদম টকটকে লাল গোলাপ হবে চাচা?
.
হ্যা তা হবে…
.
তাহলে ১৯ টা লাল গোলাপ এনে দেন না চাচা প্লিজ।
.
আইচ্ছা বাজান আপনি দাঁড়ান আমি এখনই আনছি।।
.
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি।। সব রেখে ১৯ টা ফুল দিয়ে উনি কি করবেন কে জানে?অদ্ভুত তো…উনি তো ২০ টা ফুলও চাইতে পারতেন ১৯ টায় কেনো চাইলেন??আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে আবারও চুল ধরে টেনে দিলেন।আমি ঠোঁট উল্টে মুখ কালো করে তাকাতেই বলে উঠলেন উনি-
.
এই মেয়ে?খেয়েছো তুমি?খাওয়া-দাওয়া না করে এতো ঘুরাঘুরি কিসের শুনি?
.
খাবো না আমি।তাতে আপনার কি??ডু ইউর ওউন বিজনেস।(মুখ ভেঙিয়ে)
.
তাই বুঝি?
.
কথাটা বলেই আমার চুলের গোছা ধরে নিজের কাছে টেনে আনলেন উনি।।ভয়ে আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা….তার সাথে ব্যাথাও লাগছে খুব।।অবাকের চরম সীমা অতিক্রম করে ভয় ভয় গলায় বলে উঠলাম-
.
কি করছেন??
.
উনি হালকা হেসে বা চোখটা টিপে দিয়ে বলে উঠলেন,, “ইটস নট ইওর বিজনেস” আমি বুঝতে পারছিলাম উনি ভয়ংকর কিছু করতে চলেছেন।ঠিক তখনই গেইটের কাছে সাহেল ভাইয়াকে দেখতে পেলাম।উনার পায়ে জোড়ে একটা পাড়া দিয়ে বলে উঠলাম-“হি ইজ সো কিউট ইয়ার…আই এম ক্রাশড অন হিম।।উফফ লাল পাঞ্জাবীতে মারাত্মক লাগছে…” আমার কথায় উনি ভ্রু কুঁচকে চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে পেছন ফিরে তাকালেন।।সাহেল ভাইয়া আমাদের দিকেই এগিয়ে এলেন।।ঠোঁটে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠলেন-

কেমন আছো সানশাইন?
.
আলহামদুলিল্লাহ ভালো… আপনি?
.
বেশ ভালো।তবে তোমার থেকে একটা হেল্প পেলে আরও ভালো হয়ে যেতাম।
.
হেল্প?কেমন হেল্প।
.
হেল্পটা খুবই কঠিন।।বাট তোমার জন্য ইজি হবে বলেই আমার ধারনা।(মুচকি হেসে)
.
তো আপনার সেই সহজ কঠিন হেল্প টা কি জানতে পারি?
.
মার জন্য একটা শাড়ি কিনবো।এর আগে কখনো কিনি নি।।খুবই কনফিউজড আমি।তোমার শাড়ির কালেকশন ভালো।মাঝে মাঝেই শাড়ি পড়ো।।আর শাড়িগুলোতে তোমায় মানায়ও বেশ।।সো…আই থিংক তুমি শাড়িটা ভালল পছন্দ করতে পারবে।।একদম চমকে দেওয়া সুন্দর কোনো শাড়ি কি আমায় পছন্দ করে দেবে তুমি?
.
অবশ্যই।।এই কথাটার জন্য এতোকিছু?তবে আমার একটা শর্ত আছে।(ভাব নিয়ে)
.
শর্ত?কেমন শর্ত?(ভ্রু কুচঁকে)
.
আমাকে আইসক্রিম খাওয়াতে হবে।।ইটস মাই ফি…
.
আমার কথায় হাসলেন উনি।।পকেটে হাত ডুকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েই বলে উঠলেন…
.
যতো চাও ততো দিবো।।এবার হ্যাপি??
.
একদম..(এক্সাইটেড হয়ে)
.
উনি আবারও হালকা হেসে মামানির সাথে দেখা করে আমায় নিয়ে বের হবেন বলে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলেন।সাথে সাথেই আমার হাতটা চেপে ধরলেন শুভ্র ভাইয়া।।এতো জোড়ে যেনো এখনি গুঁড়ো হয়ে যাবে হাত।আমি উনার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম।উনি রাগী চোখে তাকিয়ে আছেন।আমি কিছু বলার আগেই বলে উঠলেন উনি-
.
যাবে না তুমি।
.
কেনো যাবো না?অবশ্যই যাবো।সাহেল ভাইয়া বলেছে আর আমি যাবো না হতেই পারে না।।
.
কেন কি আছে ওর মধ্যে?? (দাঁতে দাঁত চেপে)
.
অনননননেক কিছু।।কত্তো কিউট উনি,,কত্তো কিয়ারিং… এটলিস্ট আপনার মতো এগ্রেসিভ তো নয়।।
.
কথাটা বলার সাথে সাথে আমাকে নিজের সাথে চেপে ধরলেন উনি।।চোখে রাগের আগুন জ্বেলে বলে উঠলেন…
.
আমি এগ্রেসিব না??হলে হলাম এগ্রেসিব… আই ডোন্ট কেয়ার বাট নেক্সট টাইম সাহেলকে নিয়ে এতো মাতামাতি করলে খুন করে ফেলবো।।ওহ গড…তোমার জন্য..জাস্ট তোমার জন্য আমায় সাহেলের উপরও জেলাসি হচ্ছে ।।
.
আপনাকে আমি জেলাস হতে বলেছি?আমি তো আপনার বউ না তো জেলাস হতে যান কেন শুনি…??আই এম লাইক ইউর সিস্টার…বোনের জন্য এতো জেলাসি হতে হয় নাকি??আমি তো সাহেল ভাইয়াকে আপনার মতো ভাইয়ের নজরে দেখি না।। আমি তো….
.
শাট আপ!!কিসের ভাইয়া হ্যা?? কিসের ভাইয়া?আবার ভাইয়া ডাকলে খবর আছে।আর সাহেলকে ভাইয়ের নজরে কেন?চাচার নজরেও দেখা,যাবে না।।ওকে কোনো নজরেই দেখবা না তুমি।।(আমার মুখ ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে) তোমার নজর শুধু এইদিকেই থাকা চায়..শুধু এবং শুধুই এইদিকে।।
.
আমি বোকা বোকা ফেস নিয়ে বলে উঠলাম-“কেনো ভাইয়া?” উনি তো রেগে আগুন।উনার চোখ দেখে মনে হচ্ছে যেকোনো টাইম গিলে খাবেন আমায়….কিন্তু রিস্কটা নেবে কে শুনি?তার আগেই তো আমি হাওয়া!!!
.
🍁

বিছানায় বসে পা নাচাচ্ছি আর ফোন ঘাটছি।হঠাৎ মা এসে বসলেন আমার পাশে।।বেশ কিছুক্ষণ পরও উনার যাওয়ার কোনো লক্ষ্মণ না দেখে ফোনটা পাশে রেখে তার দিকে তাকালাম।।মার সামনে বসে ফোন ঘাঁটা খুবই অস্বস্তির বিষয়।।আমাদের জেনারেশনে মা-বাবার সামনে ফোন চাপা মানে মহাপাপ।।টিভি দেখতে দেখতে টিভির মধ্যে ঢুকে যাও তবু মেনে নিবে তারা… কিন্তু ফোন হাতে??নো ইম্পসিবল!! হাতে ফোন মানেই বাবা-মার মাথা নষ্ট…মেয়ে তার মহাপাপ করছে… এটা তিনি নিজ চোখে দেখছেন তা তো হতে পারে না।।এই পাপ.. এই মহাপাপ তাদের রোধ করতেই হবে…এমনই মনোভাব থাকে তাদের।।আমি আপাতত এই মহাপাপে পাপী হতে চাচ্ছি না।।তাই ফোনটা পাশে রেখে মার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালাম। মা মুখ কাঁচুমাচু করে বলে উঠলেন-
.
বিয়ে করবি রোদ?
.
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি।।মার মুখে হঠাৎ এমন কথা শুনে আমি স্তব্ধ।।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে একটু নড়চড়ে বলে উঠলাম-
.
মানে?
.
মানেটা খুব সিম্পল। বিয়ে করবি কি না জিগ্যেস করছি।।করবি??
.
হুম অবশ্যই করবো।।বিয়ের বয়স হলে অবশ্যই করবো।।বাট এই সময়ে এই কথা কেনো বলছো মা?(ভ্রু নাঁচিয়ে)
.
না মানে…আহান কে চিনিস না?ওইযে ফর্সা করে ছেলেটা…
.
মা দুনিয়াতে বহুত ফর্সা করে ছেলে আছে আমার নিজের ভাইও তো ফর্সা মা।।তুমি কার কথা বলছো বলো তো?
.
ওই যে মহিলাটা… আমাদের সাথে যে গল্প করছিলো।।ছেলে ডাক্তার।।
.
ওহ..ওই মহিলা??তো সেই মহিলার ছেলে ডাক্তার তার সাথে আহান নামের ছেলের কি সম্পর্ক?? আর সে কথা তুমি আমাকেই বা কেনো শুনাচ্ছো??
.
ওই মহিলার ছেলের নামই আহান।ছেলেটা খুব সুন্দর বুঝলি।।তোকে খুব পছন্দ করেছে।।দিনে তিনবার ফোন করছে বিয়ে করবে বলে।।বুঝতে পারছি না কি বলবো।এতো ভালো ছেলে হাতছাড়াও তো করা যায় না।।দেখ,বিয়ে তো একদিন করতেই হবে।তাই বলছিলাম কি তুই রাজি হয়ে যা মা।
.
আশ্চর্য!! একদিন বিয়ে করতে হবে বলে আমি ওই ডাক্তার বা ফাক্টারকে বিয়ে করে ফেলবো??মা?তুমি এমন টিপিক্যাল বাঙালী মায়ের মতো বিহেভ কেনো করছো ?তোমার ভাব দেখে মনে হচ্ছে এই ব্যাটাকে বিয়ে না করলে বাংলাদেশে আমার জন্য আর কোনো ছেলে খুঁজে পাওয়া যাবে না।।আমায় চিরকুমারী থাকতে হবে।।
.
এভাবে বলছিস কেন?আমি যা বলছি তোর ভালোর জন্যই বলছি।।আমি তোর বাবাকে ঠিক রাজি করিয়ে নিবো দেখিস।।ছেলেটা কি ভদ্র!! এমন ছেলে সহজে পাওয়া যায় বুঝলি??শোন…আমি উনাদের “হ্যা” বলে দিচ্ছি।।আমার কথায় শেষ কথা।।তুই তো আমায় আগেই বলে রেখেছিলি যেখানে আমি বলবো সেখানেই বিয়ে করবি… তাহলে এখন এমন করছিস কেন?

মা!! তাই বলে এখন?ইম্পোসিবল…. কিছুতেই না।
.
আচ্ছা রুহির বিয়েতে ছেলেটা আসছে।।তখন না হয় তার সাথে পরিচিত হয়ে নিবি।।অনেক লক্ষ্মী একটা ছেলে।।তোর পছন্দ হবেই হবে।
.
হুম..আমার পছন্দ হলেও তোমার ভাতিজার পছন্দ হবে না মা।এ কথা শোনার পর উনি এই ডাক্তারের যে হাল করবে তা তোমারও মোটেও পছন্দ হবে না।।(বিরবির করে)
.
#চলবে..