তোকে চাই

তোকে চাই – Season 2 ! Part- 26

এএএই তুই আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন??আর এই বালতি ভরা পানিই বা কেনো??
.
তোকে কিছু প্রশ্ন করবো। না পেঁচিয়ে স্ট্রেট আন্সার দিবি।।আর পেঁচাইলেই এই পানি তোর মাথায় ঢালবো।।বুঝতে পারছিস?
.
ককি এমন প্রশ্ন করবি?(অবাক হয়ে)
.
প্রথম প্রশ্ন…শুভ্র ভাইয়ের সাথে তোর রিলেশন চলে?
.
কিহহ??পাগল নাকি।।উনার সাথে আমার রিলেশন কেন চলবে। আরে উনি তো তোকে পছন্দ করেন।

তাহলে তোর কোমরে হাত রেখে রোমান্সের মানে কি?(রাগী গলায়)
.
রোমান্স?কি বলছিস তুই?কিসের রোমান্স??(অবাক হয়ে)
.
ঠাডিয়ে দিবো একটা।ওয়াশরুমের দরজার চিপাই দাঁড়িয়ে তোরা কি মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করছিলি নাকি??(দাঁতে দাঁত চেপে)
.
আরে… ওটা তো ভাইয়ার পা স্লিপ করেছিলো তাই।তুই যখন ওয়াশরুমে ঢুকলি তখনই ভাইয়া এলো।।উনি কিছু একটা বলতে এসেছিলেন আমায়।কিন্তু কিছু বলে উঠার আগেই পা টা স্লিপ কেটে একদম আমার উপরে এসে পড়লেন।।উনি যদি আমার উপরে পড়তেন তাহলে আমার মাথাটা একদম দেয়ালে লেগে যেতো।।অনেক কষ্টে একহাতে দেয়াল ধরে নিজেকে আটকে নিয়েছেন উনি।।আর অন্যহাতে আমার কোমর ধরেছেন যেনো আমি দেয়ালে ধাক্কা না খাই।।এটুকুই…(মুখ গোমরা করে)
.
এইটুকুই?
.
হুম এইটুকুই…
.
চিত্রা এটুকু বলার সাথে সাথেই বালতির পানিটুকু ঢেলে দিলাম ওর মাথায়।চিত্রা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে….
.
এটা কি হলো?আমি তো প্রশ্নের উত্তর দিলামই তাহলে পানি কেন?
.
লেইট করে দিয়েছিস তাই।।তোর কোনো ধারনা আছে এই তিনটা দিন কিভাবে কেটেছে আমার??তিনদিন মানে বুঝিস তুই??তিনদিন মানে হলো ৭২ টা ঘন্টা….তারমানে কতো জানিস?৪৩২০ মিনিট….মাই গড…
.
চিত্রা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে…. কিন্তু সেদিকে আমার খেয়াল নেই বললেই চলে।। আমি তো ভাবছি শুভ্র ভাইয়াকে নিয়ে।ইশশ…না জেনে উনাকে কতো কথা শুনিয়ে দিলাম।।এবার উনাকে সরি বলবো কিভাবে?সামনে যেতেই তো আত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে আমার।।
.
🍁
.
রুমের দরজা বন্ধ করে বিছানার উপর উঠে লাফালাফি করছি।আর চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে গাইছি… “উফফ মেরি দিলমে থুরি খালি ছি জাগা থি…উফফ তোনে আকে বিন কিরায়ে এ জাগা লি।।কোচ কেহবি না ছাকি…..” শুভ্র ভাইয়া আমাকে পছন্দ করে শুধু এবং শুধুই আমাকে ভালোবাসে…. ইশশ কি সুখ।।হঠাৎই জানালা ভেদ করে একটা কাগজ এসে লাগলো গায়ে।।আমার রুমটা দু’তলায়।নিচ থেকে কেউ দোতালার জানালা দিয়ে কি করে কাগজ ছুড়ঁতে পারে বুঝতে পারছিলাম না।।কিছুক্ষণ নীরব দৃষ্টিতে কাগজটির দিকে তাকিয়ে থেকে বিছানায় পা ছড়িয়ে বসলাম।।কাগজটা হাতে নিয়ে মোচরানো কাগজটা সোজা করে দেখলাম…কিছু একটা লেখা আছে তাতে….
.
❤
এই মিষ্টি হাসি,

এতো রাগ কেনো তোমার?এতো জেদ?এই ছোট্ট একটা শরীরে এতো জোড় কিভাবে?? তোমার হাতের চড়টা বেশ শক্ত ছিলো সাথে মিষ্টিও ছিলো।।জীবনের প্রথম কোনো মেয়ের হাতে চড় খেয়েছি আর সেই মেয়েটা হলে তুমি।।তোমার হাতের চড়টা গালে পড়ার পর মনে হয়েছিলো আরেকটা চড় যদি পড়তো আমার গালে তাহলে ব্যাপারটা মন্দ হতো না।।কারো হাত এতোটা নরম কি করে হয় বলো তো?আচ্ছা তুমি কি তিন বেলা তুলো খাও?কালকে তোমার শরীরের ওই গোলাপী শাড়িটা যে কি মারাত্মক সুন্দর ছিলো তা কি তুমি জানো?তোমার সাথে বেশ মানিয়েছিলো রংটা সাথে তোমার গালে ছিলো রাগের ওই গোলাপী আভা।।ইচ্ছে তো করছিলো….থাক বলি না লজ্জা পাবে তুৃমি।।কথাগুলো তোলা থাকুক…কোনো একদিন আমার সামনে বসিয়ে এই লজ্জামাখা কথাগুলো শুনাবো তোমায় আর তুমি লজ্জায় লাল হয়ে মুখ লুকাবে আমার বুকে….আর আমি প্রাণ ভরে দেখবো।।সেদিন তোমার চোখে ভালোবাসাটা দেখতে চাই শ্যামলতা,,ঘৃণাটা নয়।তোমার চোখে আমার জন্য ঘৃণাটা যে আমায় মৃত্যু যন্ত্রণা দেয় প্রতিটি মুহূর্তে। তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করছে রোদপাখি…. নীল শাড়ি..হাতে নীল চুরি,, চোখে গাঢ় কাজল লাগিয়ে বাতাসে চুল উড়িয়ে দাঁড়াবে কি ছাঁদের কোনে?জানি দাঁড়াবে না…তবু অপেক্ষা করে চলেছি দিনরাত।।তোমার পায়ে নিজ হাতে আলতা লাগানোর খুব শখ আমার….একদিন সুযোগ দিও প্লিজ!!শুধু একটিবার…ভালোবাসা মাখা চোখে তাকিও….তোমার সেই চাহনীতেই তো আমি কুপোকাত…..
.
তোমার একরাশ ঘৃণা💔
.
চিঠির উপর দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।।মনটা বলে উঠলো নিঃশ্বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে ভালোবাসি ভালোবাসি।।ঝটপট উঠে আলমারি থেকে নীল শাড়ি বের করেই জড়িয়ে নিলাম শরীরে….. হাত ভরে চুরি আর চোখে কাজল লাগিয়ে অগোছালো চুল গুলো খুলে দিয়েই দৌড়ে চলে গেলাম ছাঁদে।।ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছি,দৃষ্টি রাস্তার দিকে….কোথায় তিনি?উনি কি চলে গেছেন?কথাটা ভেবেই কান্না পাচ্ছে আমার।।ঠিক তখনই পেছন থেকে আপু বলে উঠলো-
.
কাউকে খুঁজচ্ছিস?
.
ন..নাহ তো…কাকে খুঁজবো??
.
তাহলে এভাবে ছটফট করছিস কেন?কাঁদছিস?
.
আরে না…বাতাসে বালি উড়ে চোখে পড়েছে।তাই হয়তো…এনিওয়ে তুমি এখানে?কিছু বলবে?
.
হুম….মা আমাদের তৈরি হতে বললো।মামুদের ওখানে যাবো।বিয়ের ডেইট ফিক্সড করবে আজ।(লাজুক চাহনিতে)
.
আপুর কথাটা শুনেই মনটা খুশি হয়ে গেলো।।নিশ্চয় ওখানে গিয়ে ওনাকে খুঁজে পাবো।ইশশ…কথাটা ভেবেই আপুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেই এক দৌড়ে নিচে চলে গেলাম।।আনন্দে সাড়া বাড়ি নেচে বেড়াতে ইচ্ছে করছে আমার।।
.
🍁
.
বাড়িতে ঢুকে মামু আর মামানির সাথে দায়সারা কথা বলেই চারদিকে চোখ ঘুরাতে লাগলাম।কিন্তু মহাশয়ের দেখা মিললে তো।।কাউকে কিছু জিগ্যেসও করতে পারছি না।।না জানি কি ভাববে সবাই।।কিছুক্ষণ বসে থেকে মুখ কাঁচুমাচু করে উঠে গেলাম।।ধীর পায়ে দু’তলায় উঠেই উঁকি ঝুঁকি দিতে লাগলাম চারপাশে যদি দেখা পাই।।হঠাৎ কেউ একজন আমার হাত টেনে দেয়ালে চেপে ধরে ঠিক আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়লো।।এমন একটা কাজ শুভ্র ভাইয়া ছাড়া আর কারো হতেই পারে না।।লজ্জায় আমি মাথা তুলে তাকাতেই পারছি না যেনো।এতোক্ষণ যাকে এতো খুঁজাখুঁজি তাকে সামনে পেয়েও তাকাতে পারছি না।।উনি আমার চুলগুলো হাতের আঙ্গুল দিয়ে আচঁড়ে দিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দিলেন।।কানের কাছে ঠোঁট এনে নরম স্বরে বলে উঠলেন-
.
আলতা লাগানোর অধিকারটা কি দেবে আমায়?
.
উনার কন্ঠে আমি কেঁপে উঠলাম।কাঁপা কাঁপা গলায় কিছু বলতে যাবো তার আগেই পেছন থেকে কেউ একজন কেঁশে উঠলো।।যাকে বলে নোটিশেবল কাঁশি।।কাঁশির শব্দ কানে যেতেই আমাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো শুভ্র।অভ্র ভাইয়া পকেটে হাত দিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলেন-
.
কাহিনী কি?কি চলে এখানে??
.
ইশ,, কি লজ্জা..কি লজ্জা।।এতোক্ষণ যে হারে লজ্জা পাচ্ছিলাম সেই লজ্জার হার মুহূর্তেই দশগুণ বেড়ে গেল এবার।।ইচ্ছে হচ্ছিলো মাটি ফাঁক করে তার ভেতর ঢুকে যাই আমি।শুভ্র ভাইয়া এবার পাঞ্জাবীর কলার ঠিক করতে করতে বলে উঠলেন-
.
কি আবার চলে?তোর একমাত্র শালীকে আপ্যায়ন করছিলাম আরকি।।বোনের হবু শশুড়বাড়ি বলে কথা।আদর যত্ন না করলে চলে?তাই আদর করছিলাম।(চোখ টিপে)

তাই নাকি?নিচে আমার হবু শশুড়,শাশুড়ী, শালা সবাই বসে আছে তাদের আপ্যায়ন না করে তুই আমার ছোট্ট শালীর উপরই এতো কর্তব্যবোধ দেখাচ্চিস কেন বুঝতে পারছি না।।এতো আদর কি শুধু তার জন্যই?(বাঁকা হেসে)
.
আব..তোর একটু শালী বেশি ছোট কিনা…হারিয়ে টারিয়ে গেলে তো আবার সমস্যা তাই না??তাই ভাবলাম একটু গার্ড দিই আরকি…বাচ্চা মেয়ে বুঝিসই তো!!
.
বাহবা….ছোট মিয়া কাহিনী কি?আমার শালী নিয়ে তোমার এতো চিন্তা? সন্দেহজনক ব্যাপার…ব্যাপক সন্দেহজনক ব্যাপার।
.
ভাই বারবার শালী না বলে মাঝে মাঝে ভুল করে আমার বউ ও তো বলতে পারিস।।তাহলেই তো এতো প্রশ্ন আসে না।(শয়তানী হাসি দিয়ে)
.
ওওহহো…তাই বুঝি এখানে দাঁড়িয়ে বা…
.
আমি আর একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে দৌড়ে চলে এলাম সেখান থেকে।দুই ভাই মিলে আমাকে কি ভয়ানক লজ্জার মধ্যেই না ফেলতে যাচ্ছিলো।।অসভ্য কোথাকার!!
.
#চলবে….