Childhood marriage

Childhood marriage 3 !! Part- 20

বেলা গড়িয়ে আসছে,সূর্য অলরেডি পশ্চিম আকাশে গড়িয়ে পড়েছে,সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলো বলে।ট্রাভেল ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে তাসনিয়ার দিকে এগিয়ে গেলো সায়ন,তাসনিয়া তখন দীঘির ধারের সেই গাছটার গুড়িতে বসে কি যেন ভাবছে
সায়নঃ আমি এখন চলে যাবো।সন্ধ্যা হয়ে আসছে,আই থিঙ্ক তোমারও রওনা দেওয়া উচিত
তাসনিয়াঃ ওহ হ্যাঁ আমিও একটু পরেই…
সায়নঃ কোথায় যাবে?
তাসনিয়াঃ ভেবেছিলাম বাড়ি ফিরে যাবো কিন্তু এখন আর যাবো না,ভাবছি সরাসরি ক্যাম্পাসেই…
সায়নঃ কিভাবে যাবে?
তাসনিয়াঃ কোন একটা উপায় বের করে নিব
সায়নঃ বাইকে উঠো
তাসনিয়াঃ আপনি যান,আমি বরং…ডোন্ট ওয়ারি,আমি ঠিক চলে যাবো
সায়নঃ I have got married…
তাসনিয়াঃ কথাটা শুনে চমকে উঠলাম তারপরই নিজেকে সামলে নিলাম।কংগ্রাচুলেশনস…
সায়নঃ থ্যাঙ্কস…তো এখন কি আমার বাইকে উঠা যায়?
তাসনিয়াঃ লাগবে না,আমি একাই চলে যেতে পারবো
সায়নঃ এখান থেকে চলে গেলেই আমাদের রাস্তা এমনিতেও আলাদা হয়ে যাবে সেই পর্যন্ত নাহয়…আর তাছাড়া আমাদের সাতদিনের এগ্রিমেন্টের একটা দিন কিন্তু এখনও বাঁকি,এই জার্নিটাকেই নাহয় সেটার রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে…
তাসনিয়াঃ কিন্তু আমিতো…
সায়নঃ রেজাল্ট যাই হোক ওয়াদাতো রাখতেই হবে তাইনা?আর তাছাড়া এই সময় রখান থেকে কোন বাস পাবে বলে মনে হয় না আর As a respected citizen of Bangladesh একা একটা মেয়েকে এভাবে বিপদের মাঝে ফেলে আমিতো আর যেতে পারি না তাই বলছি…
তাসনিয়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে চলুন…

ভোরের আলো এখনও ঠিকভাবে ফুটতে শুরু করেনি,রাস্তাঘাটে এখনও আবছা অন্ধকার,কিছুক্ষণের মধ্যেই ফজরের আজান দেবে,আজান হয়নি তাই রাস্তাঘাটে মানুষের আনাগোনাও নেই,হঠাৎ হঠাৎ অবশ্য দুই একটা ভোরের পাখির মিষ্টি কণ্ঠে ডেকে উঠছে,এর বাইরে আর ভোরের কোন আলামত দেখা যাচ্ছে না।কে বলবে এই নিরিবিলি এলাকাটায় একটু পরে একেবারে কর্মচাঞ্চল্যে ভরে উঠবে!
চারতলা বাড়িটার সামনের রাস্তার একপাশে বাইকটা দাঁড় করিয়ে তার উপর বসে আছে সায়ন।বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেছে ওরা পৌঁছে গেছে কিন্তু সায়ন এখনো ওভাবেই বসে আছে কারণটা হচ্ছে তাসনিয়া,প্রায় সারারাত জেগে কাটানোর পর এই শেষরাতের দিকে সায়নের পিঠে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে মেয়েটা।ওর ঘুমটা ভেঙ্গে দিতে ইচ্ছে করছে না তাই সায়নও বাইক থেকে নামতে পারছে না আর তাছাড়া ঘুম ভেঙ্গে গেলেইতো ওদের ফেয়ারওয়েল তাই…
দূরে কোন এক মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসতেই চোখ মেলে তাকালো তাসনিয়া,সিচুয়েশনটা একবার বুঝে উঠতেই চুপচাপ বাইক থেকে নেমে দাঁড়ালো
তাসনিয়াঃ আমরা কখন পৌঁছেছি?
সায়নঃ বেশিক্ষণ না,মাত্রই…তুমি যে আসছো কাউকে জানিয়েছো?আই মিন দরজা খোলার একটা ব্যপার আছে না…
তাসনিয়াঃ আমার কাছে এডিশনাল ডোর কি আছে
সায়নঃ ওহ
তাসনিয়াঃ তাহলে এখন…লিফটের জন্য থ্যাঙ্কস আর নতুন জীবনের জন্য অল দ্য বেস্ট
সায়নঃ থ্যাঙ্কস
তাসনিয়াঃ আমাকে উইশ করবেন না?
সায়নঃ উইশ!কেন?
তাসনিয়াঃ ওহ সরি,আপনাকেতো বলাই হয়নি আপনার মতো আমিওতো এখন ম্যারিড…
সায়নঃ মনে হলো বুকের ভেতর কেউ আস্ত ছুরি চালিয়ে দিয়েছে,অনেক কষ্ট সামলে নিলাম।ও হ্যাঁ অল দ্য বেস্ট,আশা করি নতুন জীবনে অনেক সুখে থাকবে…
তাসনিয়াঃ তাহলে এখন…বাই…
(তাসনিয়া ভেতরে চলে গেলো,একবারও পেছন ফিরে তাকালো না হয়তো সায়নকে আর ফেস করতে পারছিলো না।সায়নও আর দেরি করলো না,তাসনিয়া ভেতরে ঢুকতেই বাইকে স্টার্ট দিলো,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে চলে যেতে হবে নাহলে হয়তো…)

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলেছে,বাসার সামনে বাইকটা পার্ক করে ভেতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো সায়ন।ভোরের দিকে পৌঁছলেও এখনও কারো সাথে দেখা করেনি,কাউকে যাতে ফেস করতে না হয় তাই ইচ্ছে করেই সময়ে বাসায় ফিরছে।কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয় আরকি,ভেতরে ডুকতেই দেখলো ওর পুরো গ্যাঙ ওর জন্যই ওয়েট করছে আর শুধু ওয়েটই না একেবারে পার্টির প্রিপারেশন নিয়ে বসে আছে!সায়ন ভেতরে ঢুকতেই রাকিব এক রকম ছুটে এসে ওর গলায় একটা বরণমালা পরিয়ে দিলো আর তারসাথে সেই বিখ্যাত গান
রাকিবঃ Congratulation and celebration…
(প্রায় সাথে সাথে সব কয়টা একেবারে মৌমাছির মতো ওকে ঘিরে ধরলো)
দীপুঃ কংগ্রাচুলেশনস দোস্ত কিন্তু কাজটা কি ঠিক হলো?
সায়নঃ মানে!কোন কাজটা?
তানিঃ না দোস্ত,তুই কিন্তু কাজটা একদম ঠিক করিসনি।আমাদের না জানিয়ে তুই…
সায়নঃ আরে বাবা কি করেছি বলবিতো?
আসিফঃ শালা ডুবে ডুবে এতো জল খেয়ে ফেললি আর এখন এমন ভাব ধরছিস যেন ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে পারিস না!আনবিলিভেবল…
সায়নঃ কি যা-তা বলছিস বলতো,আরে বাবা আমি কি করেছি সেটাতো আগে বলবি…
রাকিবঃ বুঝতে পারছিস না তাইতো?শালা আর কতো নাটক করবি!বলি বিয়েটা কি আমি করেছি নাকি তুই?আরে বাবা,দাওয়াত নাহয় নাইবা করলি বাট একবার আমাদের বলতেতো পারতি…
সায়নঃ ওহ
আসিফঃ ওহ মানে!এতো বড় একটা সুখবর আর তুই এমন দুঃখী দুঃখী মুখ করে আছিস!
তানিঃ আরে বাবা,যেই মেয়ের জন্য পাগল হতে বসেছিলি তাকেতো পেয়েই গেছিস,এখন আর কিসের চিন্তা?জাস্ট চিল ইয়ার…লেটস সেলিব্রেট…
সায়নঃ মানে!এবার কিন্তু আমি সত্যিই কিছু বুঝতে পারছি না…
দীপুঃ আমারতো বিশ্বাসই হচ্ছে না,দেখ দোস্ত,তোকে কিন্তু এতো সহজে ছাড়ছি না পার্টি কিন্তু চাইই চাই।আফটার অল তোর আর তাসনিয়ার আই মিন তাসনিয়া ভাবির বিয়ে বলে কথা…

সায়নঃ হোয়াট!তাসনিয়া!আই থিঙ্ক তোদের কোথাও ভুল হচ্ছে,আমার সাথেতো ছোঁয়ার…
(সায়ন কথা শেষ করার আগেই এক ঘুষিতে দূরে ছিটকে গেলো,বলা নেই কওয়া নেই কোথা থেকে মারুফ ছুটে এসেই ওকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি মারতে শুরু করেছে)
মারুফঃ কোথায়?লাটসাহেবটা কোথায়?আমাকে বিপদে ফেলে ফুর্তি করে বেড়ানো হচ্ছিলো!আজকেতো তোকে আমি মেরেই ফেলবো…
সায়নঃ আরে দোস্ত,কি করছিস?আরে বাবা লাগছেতো…
মারুফঃ লাগার জন্যইতো মারছি,তোর কি মনে হয় আমি ফাযলামি করছি?
সায়নঃ তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেন?ওকে থামা না…
রাকিবঃ উহু আমরা কেউ এসবের মধ্যে নেই,তুই যা করেছিস তার জন্য এটুকুতো তোর প্রাপ্য
মারুফঃ শালা হারামি,বিয়ে করলি তুই বিপদে ফেলে গেলি আমাকে!জানিস খালা খালুকে ম্যানেজ করতে আমাকে বানিয়ে বানিয়ে কত কি বলতে হয়েছে?
সায়নঃ সরি ইয়ার…আমি আসলে বুঝতে পারছিলাম না কি করব তাই…
মারুফঃ তা বুঝবি কেন,বিয়েটা কি আমি করতে বলেছিলাম?শালা তোরা দুটোই ত্যাদোড়,তুইতো তাও আমাকে বলে পালিয়েছিলি তোর বউতো আরও এক ডিগ্রী বেশি,কাউকে কিছু না বলে জাস্ট একটা চিঠি লিখে ভোর রাতেই পালিয়ে গেল!
সায়নঃ কিহ!ও আবার এসব করেছে?

মারুফঃ তাছাড়া আর কি করবে?তুইতো পালিয়েই খালাস,একবার ভেবে দেখেছিস
মেয়েটা সারারাত একা একা বাসরঘরে কিভাবে…আর সকাল হলেইতো ওর উপর প্রশ্নের বৃষ্টি নামতো,আমারতো মনে হয় এই জন্যই ও…
সায়নঃ কি বলবো?বলার মতো কিছু খুঁজেই পাচ্ছি না…
মারুফঃ ভাগ্যিস চিঠিটা আমার হাতে পড়েছিল তাইতো সময় মতো সামলে নিতে পেরেছিলাম।ঝড় যা যাওয়ার সব আমার উপর দিয়েই গেছে বাট এখন সব ঠিক আছে
সায়নঃ থ্যাঙ্কস দোস্ত
মারুফঃ এখন থ্যাঙ্কস দিয়ে আমাকে উদ্ধার করা হচ্ছে!শালা তোরা স্বামী-স্ত্রী মিলে মজা করলি আর মাঝখান থেকে খেটে মরলাম আমি।তুই বন্ধু নাকি শত্রু রে?
সায়নঃ সরি দোস্ত,ভুল হয়ে গেছে
মারুফঃ এখন সরি বলে কি হবে?বলি আমার কথা নাহয় নাইবা ভাবলি,এটলিস্ট তাসনিয়ার কথাতো একবার ভাবতে পারতি…
সায়নঃ এখানে আবার তাসনিয়া কোথা থেকে আসলো?
মারুফঃ তো আর কি করব?তোর কথা উঠলেতো ওর কথাও তুলতে হবে
সায়নঃ কেন?ওর সাথে আবার আমার কিসের সম্পর্ক?
মারুফঃ সম্পর্ক নেই?ও যে তোর বিয়ে করা বউ ভুলে গেছিস?
সায়নঃ মারুফ তুইও!তোদের সবারই মাথাটা গেছে,আরে বাবা ওরা নাহয় কিছু জানে না বাট মারুফ,তুইতো আমার বিয়েতে ছিলি।এটলিস্ট তুইতো জানিস সত্যিটা কি তাহলে শুধু শুধু তাসনিয়াকে আমার সাথে কেন জড়াচ্ছিস!তুইতো জানিস আমার সাথে তাসনিয়ার না ছোঁয়ার…
মারুফঃ ওহ আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম তুইতো আবার এসবের কিছুই…ওই গাধা,বউয়ের পুরো নামটা জানিস?
সায়নঃ কি করে জানবো,কখনও কি জানতে চেয়েছি?
মারুফঃ শালা তুইতো দেখি আস্ত একটা ঢেঁড়স।বিয়ের আসরে খুবতো বড় মুখ করে বললি কনের নাকি সবকিছুই তোর জানা,তা এই তার নমুনা?পুরো নামটা পর্যন্ত জানিস না!

সায়নঃ কিন্তু এসবের সাথে তাসনিয়ার কি সম্পর্ক?তুই ঠিক কি বলতে চাইছিস বলতো
মারুফঃ বলছি,ভাবীর আই মিন তোর বউয়ের পুরো নাম তাসনিয়া আশরাফ ছোঁয়া,এখন অবশ্য তাসনিয়া মাহবুব ছোঁয়া…
সায়নঃ নামটা শুনে চমকে উঠলাম,তবে কি…
মারুফঃ শালা খাটাশ,কাজী সাহেবকে যদি ঠিকমতো বিয়েটা পড়াতে দিতি তাহলেইতো সব ক্লিয়ার হয়ে যেতো।শুধুমাত্র তোর জন্য এতো ভেজাল লাগলো,তোকেতো…
সায়নঃ এ..এই মারুফ,তারমানে কি তাসনিয়া আর ছোঁয়া…না মানে ছোঁয়া আর তাসনিয়া…আসলে আমি বলতে চাইছি…
মারুফঃ থাক থাক আর কিছু বলতে হবে না।বেটা গাধা,এখনও মানে মানে করছিস!বাঁচতে চাইলে এখনই দৌঁড় দে,বউয়ের মান ভাঙাতে হবে তো নাকি…
সায়নঃ তাইতো,থ্যাঙ্ক ইউ দোস্ত,লাভ ইউ উম্মা…
মারুফঃ ইশ রে,সব শেষ করে দিলো রে…আমাকে কিস করলি কেন?পারলে নিজের বউকে কর না…
সায়নঃ সেতো করবই,কিন্তু তার আগে তোর উপর এক্সপেরিমেন্ট করলাম আর কি
মারুফঃ তাই বলে আমাকে!ইশ কি ডিসগাস্টিং,এখন তোর ভাবি কে মুখ দেখাবো কি করে?
সায়নঃ ও আমি লোপাকে ঠিক ম্যানেজ করে নিব।এখন টাটা আগে বউটাকেতো সামলাই তারপর সব দেখে নিব।ডিয়ার বউ,আর একটু ওয়েট করো,আমি আসছি তোমার কাছে…
চলবে…
নোটঃ শরীরটা একটু বেশিই খারাপ তারসাথে মনও,নেক্সট পার্ট কবে দিতে পারবো নো আইডিয়া…