তোকে চাই

তোকে চাই – Season 2 ! Part- 21

নদীর পাড়ে কি জানি একটা গাছের তলায় বসে আছি।।ভাইয়া বলেছে এটা নাকি নামছাড়া গাছ।।এসব গাছের নাম হয় না।সত্যিই কি নাম হয় না??এইটা নিশ্চয় ভাইয়ার গাঁজাখুরি মতবাদ।।এমন নির্জন একটা স্থানে বসে থাকতে বেশ লাগছে।।মনটাও ভালো লাগছে অনেক।ভাইয়া ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো।।আমি অবাক চোখে তাকিয়েই বলে উঠলাম-
.
বিরিয়ানি??
.
হুম।সকালে তো না খেয়েই ওঠে এলি।।খাবারের সাথে তোর এতো কিসের রাগ বল তো??
.
কোনো রাগ নেই।(খেতে খেতে) আচ্ছা ভাইয়া??তুই না বললি গ্রামে গ্রামে ঘুরে পাত্রী খুঁজবো?তাহলে এখানে বসে আছি কেন??হুয়াই?

আরে পাগলী….তুই হয়তো জানিস না নদীর ধারই পাত্রী খোঁজার সবচেয়ে সুইটেবল জায়গা।
.
তাই নাকি?(ভ্রু কুচঁকে)
.
হুম একদম।এই দেখ কোমড় দুলিয়ে কলসি কাখে চারপাশের চারগ্রাম থেকেই মেয়েরা আসবে।।এমনি তো চারগ্রামে ঘুরতে হতো এখন একজায়গায় বসেই চারগ্রামের মেয়ে দেখা যাবে ভালো না??
.
মহা ভালো।।আরে আহাম্মক এখন আর মেয়েরা কলসি কাখে নদীতে আসে না।।সবার বাড়িতে কলঘর আছে।।বুঝিস না?সচেতন বাংলা!!তোর কপালে বুঝি আর বউ নাই রে।।তোকে চিরকুমারই থাকতে হবে।
.
চুপ।একদম বাজে বকবি না।চিরকুমার কেন থাকবো??হালি হালি বাচ্চার বাবা হবো ইনশাআল্লাহ!! নো কম্প্রোমাইজ বুঝলি??
.
ভাইয়ার কথায় হুহা করে হেসে উঠলাম আমি সাথে ভাইয়াও।।

তিনদিন যাবৎ শুভ্র ভাইয়াকে এবোয়েড করে চলছি।চোখে লাগার মতো এবোয়েড। খুব প্রয়োজন ছাড়া উনার সামনেই পড়া বন্ধ করে দিয়েছি এখন।ভার্সিটি যাই না তিনদিন হলো।ফোনের সিম চেঞ্জ করেছি।উনি বাসায় এলে দরজা লাগিয়ে বসে থেকেছি।।মোট কথা টপ লেভেলের এবোয়েড যাকে বলে।।একদম মুখদর্শন ও বন্ধ।।হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো… চিত্রা ফোন দিয়েছে…নাম্বার কেমনে পেলো কে জানে।ফোনটা ধরতেই উদ্ধিগ্ন কন্ঠে বলে উঠলো..
.
কি সমস্যা তোর?ক্লাসে আসিস না কেন?ফোনেও তো পাওয়া যায় না।।ঠিক আছিস তুই?
.
হুম ঠিক আছি।।কি বলবি তাই বল…আমার ঘুম পাচ্ছে।
.
সকাল ৮ টা ক্লাস টাইম এখন কিসের ঘুম?
.
মরার ঘুম।তোর যা বলার বল তো…কথা পেঁচাস না।
.
সেমিষ্টার তো চলে এলো।শীট,নোটস কিছুই তো নেসনি।।আজ স্পেশাল ক্লাস আছে আক্কাস স্যারের।।আজ তো এটলিস্ট ভার্সিটিতে আসিস….শুভ্র ভাই বারবার খুঁজ করে কিছু বলতে পারি না খারাপ লাগে।।
.
তোর শুভ্র ভাই আমার খোঁজ কেন করে?(অবাক হয়ে)
.
শুভ্র ভাই আমার কবে থেকে…
.
এটুকু বলতেই ফোনটা কেটে দিলাম আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।।ভার্সিটি যাওয়া উচিত,, এভাবে বাড়ি বসে থাকা যায় না।।তাই রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট করে চলে গেলাম ভার্সিটিতে।।ভার্সিটি গেইটে পা রেখেই কেমন অন্যরকম ফিলিং হলো যেনো কতোদিন পর আসছি সব যেনো অপরিচিত।। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাঁটা দিলাম।।কিছুক্ষণ পরই হাতে টান পড়লো।।তাকিয়েই শুভ্র ভাইকে দেখতে পেলাম।ইশশশ…কি অবস্থা করেছেন চোখ মুখের।মনে হচ্ছে কতরাত ঘুমোন না উনি। খুব মায়া লাগছে উনাকে দেখে কিন্তু আমার তো মায়া লাগলে চলবে না।।তাই বিরক্তি নিয়ে চোখ কপাল কুঁচকে হাতটা ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে বলে উঠলাম-
.
আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া….কোনো দরকার?পাব্লিক প্লেসে এভাবে হাত ধরলেন কেনো? নিশ্চয় কোনো দরকার ছিলো।।দেখুন কোনো দরকার হলে আমায় বলবেন এমন হুটহাট হাত ধরবেন না।।আমি আসি ক্লাস আছে।
.
কথাটা বলেই হাঁটা দিলাম সামনের দিকে।।উনি অবাক চোখে এখনও আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।।থাকলে থাকুক তাতে আমার কি??ক্লাস শেষে বের হয়ে কিছুটা সামনে এগুতেই কেউ টেনে ফাঁকা ক্লাসে দাঁড় করিয়ে দিলো আমায়।।শুভ্র ভাইয়া?? উনার চোখদুটো লাল টকটকে।খুব জিগ্যেস করতে ইচ্ছে করছে “কি হয়েছে আপনার?” কিন্তু জিগ্যেস করা হলো না।।উনি শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়েই বলে উঠলেন-

আমার সাথে কথা বলছো না কেনো??তিনদিন পর দেখা দিলে এসবের কারণ কি??
.
কেন?আপনার সাথে কোনো কন্ট্রাক্ট সাইন করা ছিলো যে প্রতিদিন আপনার সাথে কথা বলে সকাল সকাল আপনাকে মুখ দেখাতে হবে?
.
উনি পাশের বেঞ্চটাতে জোড়ে লাথি দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে উঠলেন-
.
মজা করো আমার সাথে?ফাজলামো পাইছো??আমাকে মানুষ মনে হয় না??আমি মরে যাচ্ছিলাম আর তুমি মজা নিচ্ছো?জানো তুমি??শ্বাস নিতে কতো কষ্ট হচ্ছিলো আমার।।আরেকটু হলে সত্যিই মরে যেতাম।।
.
.
চলবে🍁