তোকে চাই

তোকে চাই – Season 2 ! Part- 20

চোখ মিটমিট করে তাকালাম।।চোখের সামনে সাদা টাইলস করা ছাদ।ঘরে কোনো সারা শব্দ নেই। চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে মনে করতে চেষ্টা করছি এক্চুয়েলি কি ঘটেছিলো আমার সাথে।।কথাগুলো মনে হতেই শুভ্র ভাইয়াকে একটা থেংক্স করছে…একদম গ্রেন্ড থেংক্স।কাউকে তোয়াক্কা না করে এমন স্ট্যান্ড কজন নিতে পারে?উনার সবকিছুই ভালো লাগছে আজ।।আচ্ছা আমি কি উনার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি?কিন্তু চিত্রাকে পছন্দ করেন….এমনও তো হতে পারে যে উনি আমায় পছন্দ করেন।হতে পারে না কি??কথাটা ভাবতে ভাবতেই উত্তেজনায় এক লাফে উঠে বসলাম আমি।।শরীরটা দুর্বল কিন্তু উনার কথা চিন্তা করতেই মনে লাড্ডু ফুটছে ক্রমাগত।দরজার বাইরে কারো হাসি আর চাপা কথা শুনা যাচ্ছে।।কন্ঠটা পরিচিত…অসীম কৌতুহল নিয়ে দরজার কাছে যেতেই থমকে দাঁড়ালাম আমি।।চিত্রা আর শুভ্র ভাইয়া হাসাহাসি করছে।কি নিয়ে তাদের এতো আনন্দ??হাসিটা চেপে শুভ্র ভাইয়া বলে উঠলেন-
.
“ভালোবাসি” বলে ভালোবাসতে হয় না চিত্রা।।ভালোবাসাটা সত্যি হলে উপলব্ধিটা করেই নেওয়া যায়।।চেঁচিয়ে পুরো পৃথিবীকে বলতে হবে আমি তোমায় ভালোবাসি তবে তুমি মানবে এই উক্তিতে আমি বিশ্বাসী নই।।আমার ভালোবাসা সত্য হলে,,, আমি তোমায় সত্যি ভালোবাসলে তোমার কাছে সেই উপলব্ধিটা এমনি চলে আসবে।।আম আই রাইট মিস.চিত্রা?
.
ইয়েস মিষ্টার।ইউ আর ওলওয়েজ রাইট।
.
ইয়াহ আই নো।(ভাব নিয়ে)
.
আপনার স্মাইলটা কিন্তু জোস?একদম প্রেমে পড়ে যাওয়ার মতো।।(লাজুক ভঙ্গিতে)
.
যেভাবে লজ্জা পাচ্ছো আমিই তো তোমার প্রেমে…
.
এটুকু শোনার পরই উল্টো হেঁটে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম।। নিজের প্রতি ঘেন্না হচ্ছে,, ভয়ানক ঘেন্না।।নিজের বান্ধবীর পছন্দের মানুষের দিকেই আমার নজর কি করে গেলো?? ছিহ্।।আমি নিশ্চয় খুব বাজে মেয়ে,,খুব খুব বাজে মেয়ে।।ওই তো গল্প উপন্যাসে বিশ্বাসঘাতক বান্ধবীদের মতো যাদের দেখলে ঘৃনা লাগে ঠিক তেমন মেয়ে মনে হচ্ছে নিজেকে।নাহ্ এভাবে চলতে পারে না।।আই হেভ টু বি স্ট্রং বাট দিস ফিলিংস??এবারও সব দোষ শুভ্র ভাইয়ার ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে….কেনো করেন উনি আমার জন্য এত্তোকিছু??হুয়াই?? গ্রিলে রাখা হাতটা কেঁপে উঠছে আমার… কান্নাগুলো ভীর জমিয়েছে বুকে।।ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কান্না করি।।কেঁদে কেটে বন্যা বানিয়ে ফেলি।।আর সেই বন্যায় ভেসে যাক শুভ্র।।নিচ থেকে খাবার খাওয়ার ডাক পড়লো।।কাঁপা হাতে চোখে মুখে পানি দিয়ে শক্ত করলাম নিজেকে।।শুভ্র ভাইয়া থেকে দূরে থাকতে হবে আমায়…অনেক দূরে..
.
.
নাস্তার টেবিলে বসে আছি।এতোক্ষণে বুঝতে পারছি এখন সকাল।সবাই নিরবে খেয়ে চলেছে।।এদের নীরবতাও অসহ্য লাগছে আমার।।হঠাৎ করেই বলে উঠলাম আমি-

আমি বাসায় যাবো এবং এই মুহূর্তে যাবো…
.
আমার কথায় যেনো সবাই অবাক।।মামু শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন-
.
কি বলছিস?আমরা তো আরো পিকনিকে যাবো বলে ঠিক করেছি।।অরি,রুহি,রাদিন,রাহাত সবাই দুইদিন আমাদের বাসায় থাকবে।তারমধ্যে তুই বাসায় যাবি?
.
হ্যা যাবো।কে কোথায় থাকলো বা থাকলো না… আই ডোন্ট কেয়ার।।
.
তুই কি রেগে আছিস মা?আই এম সরি…আমি তোর হয়ে স্ট্যান্ড নিতে পারি নি।।
.
মামুর কথা শেষ না হতেই মামানি বলে উঠলেন-
.
রোদ?আদিব আর আপা তো চলে গেছে কাল রাতেই।সে আর তোমাদের ডিস্টার্ব করবে না।তাহলে বাসায় কেনো যেতো চাচ্ছো মা?
.
এমনি যাবো।আদিব ভাইয়াদের বলুন চলে আসতে।উনাদের জন্য আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না।।আমি নিজেই নিজের জন্য সমস্যা সো আই ওয়ান্ট টু গো ব্যাক।
.
মামু এবার অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলেন-
.
প্লিজ রোদমা যাস না।
.
মামু প্লিজ।তুমি আমায় রিকুয়েস্ট করো না।।তোমার রিকুয়েষ্ট ফেলতেও পারবো না আবার রাখতেও পারবো না।।সো প্লিজ স্টপ দিস…এন্ড আই এম গোয়িং…
.
কথাটা বলেই উঠে দাঁড়ালাম চেয়ার থেকে।।খাবার টেবিলে শুভ্র ছিলো না।।থেংক গড ছিলো না… নয়তো যে দম ফুরিয়ে আসতো আমার। এখন ভালোই ভালোই এখান থেকে বিদেয় হলে বাঁচি।।রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ গুছাচ্ছি তখনই মা রুমে এলো।।কোনোরকম বনিতা না করেই বলে উঠলো-
.
তুই যেতে পারবি না।
.
সব সময় তোমার কথা শুনতে হবে এমন কোনো কথা নেই মা!(ব্যাগ গুছাতে গুছাতে)
.
তোর মামু কতো আশা করে বললো…

মার কথায় কেনো জানি রাগ উঠে গেলো।।তাকে মাঝপথেই থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলাম-
.
সবসময় তোমাদের ইচ্ছা,আশা,ভালোলাগা দিয়ে চলবে না আমার।।আমার ভালো লাগে খারাপ লাগা তো তোমার চোখে পড়ে না কখনো।
.
এভাবে বড়দের মতো কথা বলছিস কেন??তোর বিহেভিয়ার দিন দিন খারাপ হচ্ছে..
.
বলেছো,??শেষ??এখন প্লিজ যাও এখান থেকে বিরক্ত লাগছে।।আমি প্রচুর রেগে আছি এখন উল্টো পাল্টা কিছু বলে দিলে তোমার ভালো লাগবে না।।সো প্লিজ লিভ।
.
আমি কথা বললেই কি তুই বিরক্ত হোস?
.
মা প্লিজ যাও…
.
.
.
রাস্তা ধরে হাঁটছি।।সকাল প্রায় ১০ টা।কর্মমুখর মানুষের ব্যস্ততা চারপাশে।। এভাবে উদ্দেশ্যহীন হাঁটায় বেশ মজা আছে।।ভীরের মধ্যে নিজেকে একটু একলা পাওয়া যায়।।হাজার মানুষের ভীরে কারো দিকে কারো তাকানোর সময় নেই…সবাি যার যার কাজ নিয়ে,,চিন্তা নিয়ে ব্যস্ত…এতো সময় কোথায় তাদের??ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে আছি নিচে বেগমান পানি।।আচ্ছা এখান থেকে লাফিয়ে পড়লে কি আমি মরে যাবো?ইশশ…জীবন দুবার পাওয়া গেলে আমি অবশ্যই একবার মরে দেখতাম।।মানুষ মরার পর মানুষের কতো রিয়েকশন হয়…আমি মারা গেলে সবার কেমন রিয়েকশন হবে জানার খুব ইচ্ছে।।আচ্ছা শুভ্র ভাইয়ার কি খারাপ লাগবে? উনি কি কাঁদবেন?এমা..ছি ছি!!উনি কাঁদতে যাবেন কেন??কি উদ্ভট চিন্তা আমার।ঠিক তখনই তুমুল হর্ন কানে এলো।।কেউ একজন ক্রমাগত হর্ণ বাজাচ্ছে।।ইচ্ছে করছে একটা চড় লাগায় লোকটার গায়ে।।অত্যন্ত বিরক্তি নিয়ে পেছনে ফিরে তাকালাম…, ভাইয়া বাইকের উপর বসে কিউট স্মাইল দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।।ভাইয়াকে দেখে ভালো লাগলেও মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে বলে উঠলাম-
.
কি চাই.?
.
তোকে চাই।
.
মানে??

বাইকে উঠে আয়।।আজ দুই ভাই বোনে এই শহর থেকে দূরের কোনো গ্রামে ঘুরে আসবো।।মন একদম ফ্রেশ হয়ে যাবে।।
.
আমি যাবো না তুই ফুট এখান থেকে।
.
চল না যাই..
.
না..তোর অফিস নাই? অফিসে যা না..জ্বালাচ্ছিস কেন?
.
আরে রুহির বিয়ের জন্য তো ছুটি নিয়েছি।।ছুটিতে অফিস যাবো কেন??বিয়ের ছুটি এমনি এমনি যেতে দিলে হয়??কাজে লাগাতে হবে বুঝেছিস?আজ আমরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে মেয়ে খুঁজবো।। মিশন পাত্রী খোঁজা বুঝলি?? এবার চলে আয় তো..ফাস্ট..
.
ঢাকায় মেয়ে কম পাওয়া যায় যে ওখান থেকে আনবি।
.
সেটা তুই বুঝবি না।।আয় তো…
.
.
#চলবে🍁