তোকে চাই

তোকে চাই !! Part- 03

উনাকে ডাকার সাহস করে উঠতে পারলাম না।।যদি রেগে যান?উনাকে আমি বরাবরই ভয় পাই,,,,সেই তো প্রথম দিনের কথা,,,,


ফ্ল্যাসব্যাক,,,,,

বিয়ে পর্ব শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরই মা আমাকে রুমে পাঠালেন, তার ফোনটা নাকি রুমেই ফেলে এসেছে,,,,আমিও নাচতে নাচতে চলে গেলাম ফোন আনতে।।।হঠাৎ শাড়ির আচঁলে টান পড়ায় পেছনে তাকিয়ে দেখলাম শাড়ির আচঁলটা গেস্টরুমের দরজায় আটকে আছে।।।নিজের মনে বকবক করতে করতে যেই না দরজাটা হালকা খুললাম,,,আমার চোখ যেনো বেরিয়ে আসার উপক্রম।।। এমন কিছুর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি।।।মনে হচ্ছিলো হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে,,,কিছু না ভেবেই চোখ বটে দিলাম এক চিৎকার,,সাথে সাথেই ভারী গলায় ধমক দিয়ে উঠলো কেউ,,,,
এই মেয়ে?? চেচাঁচ্ছ কেন??একদম চুপপপপপ

আমি ভয় পেয়ে মুখে হাত চেপে চুপপ হয়ে গেলাম।।চোখ দুটো হালকা খুলে যা দেখলাম তাতে মনে হলো পুরো বাঁশঝার টাই আমার মাথায় ফেলে দেওয়া হয়েছে।।।ছি ছি একি,,, এ তো শুভ্র ভাইয়া,,,আপুদের ক্রাশ।।উনি এসব কি করছিলেন??ছিহ,,ছিহ,,,থেংক গড বেশি ক্রাশ খাইনি,,নয়তো আমার কচি হার্ট টা আজই ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেতো,,,হুহ।।আল্লাহ বাচাঁয়ছে।।।দাড়িয়ে দাড়িয়ে এসবই ভাবছিলাম,,,আমার ভাবনার ঘোর কাটলো ওনার আরেক ধমকে,,,,
শুভ্রঃ এই মেয়ে,,,তোমার মাথায় কি সমস্যা আছে??এভাবে দাড়িঁয়ে আছো কেন??

আমি ভয়ে ভয়ে কোনোরকম বললাম,,,আ,,আপনারা এ,,এখানে ক,,কি করছিলেন??

কেনো দেখতে পাওনি??রোমান্স করছিলাম।।।আর তুমি আমাদের ডিস্টার্ব করছো(চোখ গরম করে আমার দিকে তাকিয়ে)

উনার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার তো যায় যায় অবস্থা।গলা তো রীতিমতো বিদ্রোহ শুরু করে দিয়েছে কোনোরকমে একটা ঢোক গিলে বললাম,৷ স,,,সরি ভা,,,ইয়া।।আ,,,আমি ইচ্ছা করে ডিস্টার্ব করিনি।।আসলে,,,

চুপপপপপপপ একদম চুপপ,,,(উনার ধমকে আমি রীতিমতো কেঁপে উঠলাম,,মুখটা কাঁদো কাদোঁ করে দাড়িয়ে আছি ,,,মনে হচ্ছে এখনই কান্না দেবীর আগমন ঘটবে,,,,ঠিক তখনি পেছনে থেকে কেউ বলে উঠলো,,,,

শুভ্র?? শুধু শুধু বাচ্চা মেয়েটাকে বকছো কেন??

নীলি তুমি চুপ করো,,,দোষ যখন করেছে,, ওকে তো শাস্তি পেতেই হবে।।

আমি শাস্তির কথা শুনে এবার কেঁদেই দিলাম,,,,কাঁদো কাদোঁ গলায় বললাম,,,ভাইয়া প্লিজজজ আমায় মারবেন না,,,আমি আর জীবনেও কাউকে ডিস্টার্ব করবো না,,,,,আর কাউকে বলবোও না যে আপনা…

আমাকে থামিয়ে দিয়ে উনি আবার ধমক দিয়ে উঠলেন,,,
এইই,,,চুপপ।।খবরদার কানবা না,,,কান্না করলে আরো কঠিন শাস্তি দিবো,,,হুহ।।।

আমি এবার চুপ হয়ে ফুফাতে ফুফাতে বললাম,,,,ক,,,কি শা,,শাস্তি দ,,,দিবেন আমায়???

তোমার শাস্তি হলো,, ১৫ মিনিট দরজার বাইরে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকবে।।

কথাটা শুনে আমি বিস্ফারিত চোখে তাকালাম ওনার দিকে,,,ব্যাটা লুচু বলে কি??এতো জায়গা থাকতে দরজার বাইরে দাড়িয়ে থাকতে যাবো কেনো আজিব।।।তাই ভয়ে ভয়ে বললাম,,,ক,,কেন???

কারন তুমি আমার রোমান্টিক টাইম স্পয়েল করেছো সো,,এখন তুমি বাইরে দাড়িয়ে পাহাড়া দিবে,,,যেনো অন্য কেউ ডিস্টার্ব করতে না পারে গট ইট???

আমি অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম।।পাশের আপুটা বলে উঠলো,,,,শুভ্র তুমি না দিনদিন শেমলেস হয়ে যাচ্ছো,,বাচ্চা মেয়েটার সামনে কি বলছো এসব,,,চলো তো সবাই খুঁজবে,,,,

নাহ জান,,,,আমার পাওনা রয়ে গেছে তো।।।বলে উনার দিকে এগিয়ে গিয়েও হঠাৎ থেমে গেলেন,,,,আমার দিকে তাকিয়ে একটা রাম ধমক দিয়ে বাইরে গিয়ে দাড়াতে বললেন,,,,আমিও বাধ্য মেয়ের মতো দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে বাইরে দাড়িয়ে পড়লাম।।।আর বিরবির করে উনার চৌদ্দপুরুষ উদ্ধার করতে লাগলাম।।ব্যাটা রোমান্স করবি ভালো কথা,,দরজায় যে লক নামক একটা জিনিস আছে সেটা কি জানিস না নাকি,,,আবার আমাকে বকে,,যত্তোসব আবাল জনগন,,,হুহহ,,,৷ সেটাই ছিলো উনার সাথে আমার প্রথম কথা বলা,,,,

দরজায় কড়া নড়ায় আমার ভাবনার সুতো কাটলো।।।মামানি আমায় ডাকছে,,,,,ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৭ঃ৩০ বেজে গেছে।।এতো সময় কিভাবে চলে গেলো বুঝতেই পারি নি।।তাই আর দেরি না করে,,, উনার ঘুমন্ত মুখটাকে একটু ছোঁয়ে দেওয়ার অদম্য ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে,,, একটা দীর্ঘশ্বাসকে সঙ্গী করে নিচে চলে এলাম।।।মা আর আপু কিচেনেই ছিলো।।মামানি আমাকে দেখেই বুকে টেনে নিলেন।।এতোক্ষণে আমার বিক্ষিপ্ত মনটা যেনো একটু ঠান্ডা পরশ পেলো।।আপু তো রীতিমতো বড় বউয়ের দায়িত্ব কাধেঁ নিয়ে নিয়েছে।।নেবেই না বা কেনো, সে তো বরাবরই শান্ত-শিষ্ট,, সংসারী মেয়ে।।আর আমি ঠিক তার উল্টো।।।আপুকে সবসময় মজা করে বলতাম,,,আপু বিয়ে তো তোর দেবরকেই করবো।।।নয়তো শশুর বাড়িতে ঝামেলা করলে বাচাঁবে কে আমায়???আপু জবাবে শুধু মিষ্টি হাসতো।।।নিয়তির খেলায়,,আজ আমি সত্যিই আপুর দেবরের বউ।।।কিন্তু এই নিয়তিটাই যে আমার জীবনের কাল হবে কেই বা জানতো।।মামানি আর আপু টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে,,আমি শুধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছি,,,এখানেও বাসার মতোই আদর পাচ্ছি,,ছোট বাচ্চাটার মতো,,কিন্তু যাকে পাওয়ার তাড়না আমায় কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে সে তো আমায় সহ্যই করতে পারে না।।মামানির ডাকে ফিরে তাকালাম,,,এক কাপ কফি হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,,
যা মা,,, শুভ্রকে কফিটা দিয়ে,,,চটপট নিচে আসতে বল।।।

ভয় মাখা ধুরুধুরু বুক নিয়ে এগিয়ে গেলাম রুমের দিকে।।উনি এখনো একইভাবে ঘুমোচ্ছেন।।কয়েকবার ডাকার পরও যখন শুনলেন না,,তখন কিছুটা বিরক্ত হয়ে উনাকে হালকা ধাক্কা দিতেই চোখ খুললেন,,,কিছুক্ষণ ভ্রু কুচঁকে আমার দিকে তাকিয়ে থেকেই,,,ঝট করে উঠে বসলেন।।।উনার চোখে রাগটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।।ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,,,আ,,,আপনার ক,,,,কফি,,মা,,,,,আর কিছু বলার সুযোগ আমি পেলাম না,,,তার আগেই গরম কফিতে জলসে গেলো আমার হাত।।।বাবা,,মা,,আপু আর ভাইয়ার আদরের পরীটি ছিলাম আমি,,,ফুলের টোকাও পড়তে দেয়নি আমার গায়ে,,,আর আজ??আমি উনার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছি,,,চোখ থেকে পানি পড়ছে অবিরল।।মানুষ…
#চলবে..